এখনও কিছু শোনার বাকি রয়েছে?
আপনারা সবাই কেমন আছেন?
কিছুটা ‘ওয়াইব ও চেক’ করতে পারি?
এই কর্মসূচিতে উপস্থিত আমার মন্ত্রিসভার সদস্য শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবজি, আজকের জুরি সদস্য ভাই প্রসূন যোশীজি, রূপালী গাঙ্গুলীজি, দেশের নানা প্রান্ত থেকে এখানে উপস্থিত হয়েছেন যত ‘কন্টেন্ট ক্রিয়েটর’ এবং দেশের নানা প্রান্তে বসে এই আয়োজন দেখছেন যত নবীন বন্ধু ও অন্য সমস্ত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ - আপনাদের সকলকে স্বাগত, সবাই অভিনন্দন!
আপনারা সেই বিশেষ মানুষ, যাঁরা নিজেদের জায়গা তৈরি করেছেন। আর সেজন্যই আজ ঐ জায়গায় আপনারা রয়েছেন – ভারত মণ্ডপম। আর বাইরের প্রতীক চিহ্নটিও সৃষ্টিশীলতার ফসল। এখানে এলেই মনে পরে, যেখানে জি-২০ দেশগুলির সমস্ত রাষ্ট্রপ্রধানরা একত্রিত হয়েছিলেন। আর ভবিষ্যতের পৃথিবীকে কিভাবে গড়ে তোলা হবে, তা নিয়ে আলোচনা করছিলেন। আর আজ আপনারা এসেছেন, যাঁরা ভারতের ভবিষ্যৎ কিভাবে গড়ে তোলা হবে, তা নিয়ে আলোচনা করতে।
বন্ধুগণ,
যখন সময় বদলায়, নতুন যুগের সূচনা হয়, তখন এর সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে চলাটাই দেশবাসীর দায়িত্ব। আজ ভারত মণ্ডপম – এ দেশ সেই দায়িত্ব বাস্তবায়িত করছে। প্রথম ‘ন্যাশনাল ক্রিয়েটর্স অ্যাওয়ার্ড’ অর্থাৎ এই আয়োজন নতুন সৃষ্টিশীল প্রজন্মকে সময়ের আগে পরিচয় প্রদানের আয়োজন। কেউ কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে, আপনার এই সাফল্যের রহস্য কী? আমি সকলকে জবাব দিই না। কোনও রেস্টোরেন্ট ওয়ালা নিজের কিচেনের রহস্য বলেন কি? কিন্তু, আপনাদের আমি বলছি। ঈশ্বরের কৃপায় আমি সময়ের আগে সময়কে মাপতে পারি। আর সেজন্য প্রথম ‘ন্যাশনাল ক্রিয়েটর্স অ্যাওয়ার্ড’ এমনই একটি পুরস্কার, যা সম্ভবত আগামী দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করবে। এটি এই নতুন যুগকে উজ্জীবিত করে তোলা আপনাদের মতো যুবক-যুবতীদের সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে সমাজের দৈনন্দিন জীবনের প্রতি যে সংবেদনশীলতা আমাদের মনে জাগে, তাকে সম্মান জানানোর এই সুযোগ সৃষ্টিশীলতাকে সম্মানিত করছে। ভবিষ্যতে এই পুরস্কার কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য অনেক বড় প্রেরণা হয়ে উঠবে। আজ যাঁরা ন্যাশনাল ক্রিয়েটর্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, তাঁদেরকে তো আমি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি-ই, কিন্তু যাঁরা উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে এতে অংশগ্রহণ করেছেন, তাঁদের হাতে অনেক কম সময় ছিল, আমরা খুব বেশি এর প্রচারও করতে পারিনি। কারণ, আমি চাইছিলাম না যে, এর জন্য আর সময় নষ্ট না করি। কিন্তু, এত তাড়াহুড়োর মধ্যেই দেড় লক্ষেরও বেশি সৃষ্টিশীল মনকে একসঙ্গে যুক্ত করার মাধ্যমে এই প্রথম ‘ন্যাশনাল ক্রিয়েটর্স অ্যাওয়ার্ড’ আমার দেশের একটি পরিচয় গড়ে তুলেছে।
আজ আরেকটি পবিত্র সংযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রথম ‘ন্যাশনাল ক্রিয়েটর্স অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠান মহাশিবরাত্রির দিনে আয়োজিত হচ্ছে। আমার কাশীতে শিবজী ছাড়া কিছুই চলে না। মহাদেব, ভগবান শিব ভাষা, কলা ও সৃষ্টিশীলতার জনক। আমাদের শিব নটরাজ। শিবের ডমরু থেকে মাহেশ্বর সূত্র প্রকট হয়েছে। শিবের তান্ডবলয় সৃজনের ভিত্তি স্থাপন করেছে। সেজন্য এখানে যত সৃষ্টিশীল মানুষ রয়েছেন, তাঁদের জন্য নতুন নতুন বিষয় তৈরি হবে। মহাশিবরাত্রির দিনে এই আয়োজন আমাকে আনন্দ দিয়েছে। আমি আপনাদের সকলকে এবং দেশবাসীকে মহাশিবরাত্রির অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুগণ,
আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। কিন্তু আমি দেখছি যে, প্রথমবার পুরুষেরা হাততালি দিচ্ছেন। অন্যথা তাঁদের মনে হয় যে, আমাদের জন্য তো কোনও দিবস আসে না। আজ যাঁরা পুরস্কার পাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যেও অনেক মেয়েরা রয়েছেন। আমি তাঁদেরকে শুভেচ্ছা জানাই। যামি দেখতে পাচ্ছি যে, একই বিশ্বে আমাদের দেশের মেয়েরা কত দ্রুত অন্যদের ছাপিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের এই সাফল্য দেখে আমি অত্যন্ত গর্বিত। আমি দেশের সমস্ত মহিলাদের আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। এই তো আজই একটু আগে, আপনারা সবাই এখানে বসে আছেন, আমি রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ১০০ টাকা কমিয়ে এসেছি।
বন্ধুগণ,
যে কোনও দেশের অগ্রগতির যাত্রায়, যে কোনও নীতিগত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অথবা কোনও অভিযানের কিরকম বহু-গুণীতক প্রভাব হয়, এটা আপনাদের সকলকে দেখলে বোঝা যায়। ১০ বছর আগে যে ‘ডেটা’ বিপ্লব হয়েছিল, সেখান থেকে শুরু করে সস্তা মোবাইল ফোন, ডিজিটাল ইন্ডিয়ার মাধ্যমে আজ ‘কন্টেন্ট ক্রিয়েটর’দের একটি নতুন দুনিয়া আপনারা গড়ে তুলেছেন। আর প্রথমবার এমন হয়েছে যে, কোনও ক্ষেত্রের যুবশক্তি সরকারকে প্রেরণা দিয়েছে আর সরকার পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। সেজন্য আপনাদের শুভেচ্ছা জানাতে হয়। আজকের এই প্রথম ‘ন্যাশনাল ক্রিয়েটর্স অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানের কৃতিত্ব যদি কাউকে দিতে হয়, তা হলে আমার ভারতের যুব মনকে, প্রত্যেক ডিজিটাল কন্টেন্ট ক্রিয়েটরকে দিতে হয়।
বন্ধুগণ,
ভারতের প্রত্যেক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এখন আরেকটি বিষয় তুলে ধরছেন যে, আমাদের নবীন প্রজন্ম যদি সঠিক দিক-নির্দেশ পায়, তা হলে তারা কী না করতে পারে! আপনারা তো আর কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের কোনও কোর্স করেননি। এমন কোনও কোর্সই নেই যে আপনারা করবেন। যখন পড়াশোনা করতেন, তখন পেশা বেছে নেওয়ার সময় কখনও ভাবেননি যে আপনারা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর জাতীয় কিছু হবেন। কিন্ত্য, আপনারা ভবিষ্যতকে কল্পনা করতে পেরেছেন এবং আপনাদের মধ্যে অধিকাংশই ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। এই যে শ্রদ্ধা আমাদের মধ্যে বসে আছেন, তিনি নিজেই মোবাইল নিয়ে বসেন, নিজের প্রোজেক্টে নিজেই রাইটার, নিজেই ডায়রেক্টর কিংবা প্রোডিউসার কিংবা এডিটর – সব কাজ একাই করেন। অর্থাৎ, একসঙ্গে এত প্রতিভা এক জায়গায় একত্রিত হলে যা প্রকট হয়ে ওঠে, তার সামর্থ্য কতটা হতে পারে, তা কল্পনা করা যায়। আপনারা ভাবনার সূত্র থেকে উদ্ভাবন করেন। আর সেগুলিকে পর্দায় জীবন্ত করে তোলেন। আপনারা বিশ্বকে শুধু নিজের ক্ষমতার সঙ্গে পরিচয় করাননি, অন্যদেরকে বিশ্বের সঙ্গে পরিচয়ও করিয়েছেন। আপনাদের সাহসই আপনাদের এখানে পৌঁছে দিয়েছে। দেশবাসী বড় আশা নিয়ে আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। আপনাদের সৃষ্টি আজ গোটা দেশে অসাধারণ প্রভাব সৃষ্টি করছে। একভাবে বলতে গেলে, আপনারা ইন্টারনেটের এমভিপি। ঠিক বলছি? একটু ভাবুন, যখন আপনাদের এমভিপি বলছি, তার মানে আপনারা ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল পার্সন’ হয়ে উঠেছেন।
বন্ধুগণ,
আপনারা সবাই জানেন যে, যখন ‘কন্টেন্ট’ বা বিষয়বস্তু এবং ‘ক্রিয়েটিভিটি’ বা সৃষ্টিশীলতা পরস্পরের সঙ্গে ‘কোলাবোরেশন’ বা যৌথভাবে কাজ করে, তা হলে এর মাধ্যমেই তো এনগেজমেন্ট বা কাজ করার স্পৃহা বাড়ে। কন্টেন্টের সঙ্গে যখন ‘ডিজিটাল’ যৌথভাবে কাজ করে, তখন ‘ট্রান্সফরমেশন’ বা রূপান্তরণ ঘটে। আর বিষয়বস্তু যখন উদ্দেশ্যের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে, তখন এর প্রভাব দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। আর আজ যখন আপনারা এখানে এসেছেন, তখন আমিও আপনাদেরকে এরকম অনেক যৌথভাবে কাজ করার বিষয় নিয়ে অনুরোধ জানাতে চাই।
বন্ধুগণ,
একটা সময় ছিল, যখন আমরা ছোটখাটো খাবার দোকানে দেখতাম লেখা রয়েছে যে, এখানে টেস্টি বা সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। কেউ যদি জিজ্ঞেস করতেন, ওখানে কেন খাবেন, তা হলে জবাব আসতো, ওখানে সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। কিন্তু, আজ সময় বদলে গেছে। আজ আর কেউ সুস্বাদু খাবারের বিজ্ঞাপন দেন না। আজ ‘হেলদি ফুড’ বা স্বাস্থ্যকর খাদ্যের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এই পরিবর্তন কেন এসেছে? কারণ, সমাজে মানুষের ভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। সেজন্য সৃষ্টিশীলতার বিষয়বস্তু এমন হওয়া উচিৎ, যা মানুষের মনে কর্তব্যভাব জাগিয়ে তোলে। আপনাদের সৃষ্টিশীলতার বিষয়বস্তুতে যে সরাসরি এই বার্তাই দিতে হবে, তার কোনও মানে নেই। কিন্তু, একটি বিষয়বস্তু রচনার সময় এই দিকটা মাথায় রাখলে পরোক্ষভাবে এই বার্তার ঝলক দেখা যাবে। আপনাদের হয়তো মনে আছে যে, আমি লালকেল্লার প্রাকার থেকে জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে মেয়েদের অপমান নিয়ে কথা বলেছিলাম। আমি বলেছিলাম যে, আপনার মেয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে এলে একথা জিজ্ঞেস করেন যে, দেরী কেন হ’ল, তাড়াতাড়ি কেনো আসোনি। কিন্তু, কোনও বাবা-মা তাঁর ছেলেকে এ ধরনের প্রশ্ন করেন? দেরী কেন হ’ল, তাড়াতাড়ি কেনো আসোনি। কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের কাছে আমার আবেদন যে, এই বিষয়টিকে কিভাবে সৃষ্টিশীলতার সঙ্গে তুলে ধরা যায়, এমন আবহ কিভাবে তৈরি করা যায় যে, ছেলে-মেয়ে উভয়েরই সমান দায়িত্ব রয়েছে। মেয়ে দেরীতে বাড়ি ফিরলে ভূমিকম্প এসে যাবে আর ছেলে ফিরলে বলা হবে – কিছু খেয়েছিস? কেন ভাই? আমার বলার উদ্দেশ্য হ’ল – আপনাদের কাজের মাধ্যমে সমাজের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলিকেও তুলে ধরতে হবে। যত সৃষ্টিশীলভাবে আপনারা এগুলি তৈরি করবেন, তত দ্রুত সমাজকে সচেতন করতে পারবেন। দেখুন, আজ নারী দিবস কিভাবে আপনারা এই সংকল্পকে বাস্তবায়িত করতে পারেন।
আমাদের দেশের নারী শক্তির সামর্থ্য কতটা, তা আপনাদের কন্টেন্টে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠতে পারে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি যে, আপনারা যদি সৃষ্টিশীল মন নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আপনার মা কী কী করেন, শুধু তা রেকর্ড করে এডিট করে রাখেন, তা হলে দেখবেন, যে কোনও পরিবারের শিশুরা চমকে উঠবে, আচ্ছা – মা একসঙ্গে এত কাজ করেন। অর্থাৎ, আপনাদের কাছে একটা শক্তি আছে, আপনারা তাকে কিভাবে তুলে ধরবেন। একই রকমভাবে গ্রামের মহিলারা যত ধরনের অর্থনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাকে সঠিকভাবে তুলে ধরা! পাশ্চাত্য জগতে এই ভাবনা রয়েছে যে, ভারতে ‘ওয়ার্কিং উইমেন’ নেই। আরে ভাই, ওয়ার্কিং উইমেন ছাড়ো, ভারতে মহিলারা রয়েছে বলেই সংসারগুলি চলছে। গ্রামে গ্রামে মহিলারা অনেক অর্থনৈতিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, জনজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে যদি যান, তা হলে দেখবেন যে, সেইসব পাহাড়ি এলাকায় অধিকাংশ অর্থনৈতিক কাজকর্ম করেন, আমাদের মা ও বোনেরাই। সেজন্য আপনাদের উচিৎ নিজেদের সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে দেশের বাইরে আমাদের দেশ সম্পর্কে যত ভ্রান্ত ধারণা আছে, সেগুলি বদলে কিভাবে সঠিক চিত্রটি তুলে ধরা যায়, তার চেষ্টা করা। গ্রামের মেয়েদের জীবনচক্রের একটি দিনকে যদি সঠিকভাবে তুলে ধরা যায়, তা হলে আমাদের পশুপালক, কৃষক কিংবা শ্রমিক মহিলারা কিভাবে কাজ করেন, কতটা পরিশ্রম করেন, তা বিশ্ববাসীর মনে স্পষ্ট হবে।
বন্ধুগণ,
আমাদের ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ – এর সাফল্যের সঙ্গে আপনারা সকলে পরিচিত। আপনাদের সকলের সহযোগিতার মাধ্যমেই এই সাফল্য এসেছে। কিন্তু, এই গণআন্দোলন নিরন্তর চালিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রেও আপনাদের ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। যেমন – সম্প্রতি আমি একটি রিল দেখেছি যে, একটি বাঘ জল খেতে গেছে, সেখানে প্লাস্টিকের বোতল দেখেছে, তখন বাঘটি মুখ দিয়ে প্লাস্টিকের বোতল জল থেকে তুলে অন্যত্র ফেলতে যাচ্ছে। এই দৃশ্য কিভাবে অসংখ্য মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে! আমি কী বলতে চাইছি – তা নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পারছেন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমি আপনাদের বলতে চাই বন্ধুগণ। অনেক ছোট ছোট বিষয় আমার মনকে ছুঁয়ে যায়। আমার ইচ্ছে করে যে, আপনাদের মতো সৃষ্টিশীল মনের মানুষদের কাছে তা খুলে বলি। সেজন্য আজ আমি কোনও ভাষণ দিচ্ছি না বন্ধুগণ। যেমন – মানসিক স্বাস্থ্য একটি অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী বিষয়। এমনিতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অনেক কন্টেন্ট হাস্য-বিদ্রূপের সঙ্গে যুক্ত হয়। কিন্তু, অনেক বিষয়বস্তু আবার গম্ভীর বিষয় নিয়েও হয়। আমি দেখছি যে, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে (আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা).... আমি একথা বলছি না যে, আপনারা তৈরি করেন না, আমি একথা বলতেই পারি না। আমার দেশের প্রতিভার উপর আমার অনেক ভরসা। আমার দেশের মানুষের সংবেদনশীলতার উপর অনেক আস্থা। তবুও আমি বলছি যে, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যাঁরা সৃষ্টিশীলভাবে কাজ করছেন, তাঁর খুব ভালো কাজ করছেন। কিন্তু, এখন আমাদের এই বিষয়ে আরও বেশি কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে। আর তা হওয়াটাও উচিৎ সমস্ত স্থানীয় ভাষায়। কোনও গ্রামের যে কোনও বাড়িতে যদি একজনও এরকম শিশু থাকে, তাদের জন্য কী করা যায়। বড় শহরগুলিতে ফাইভ স্টার দুনিয়ায় এরকম অনেক আছে। কারণ, তাঁদের জীবনের জটিলতা। সেখানে শিশুদের মনে উদ্বেগ ও উত্তেজনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কে কিভাবে ভাবনার স্রোতে অতল তলে তলিয়ে যাচ্ছে – তা আমরা বুঝতেও পারি না। আগে আমাদের যৌথ পরিবার ছিল। শিশুদের কখনও দাদু-দিদা, মামা-মামি আবার কখনও ঠাকুরদা-ঠাকুমা, পিসি, কাকু-কাকিমা, বৌদি ও দাদারা সামলে নিতেন। এখন মাইক্রো পরিবারে দু’জনেই কাজে চলে যান, শিশু থাকে আয়ার কাছে। না জানি কত ধরনের উদ্বেগ তাকে অস্থির করে তোলে – তা কেউ ঠিক সময়ে জানতেও পারেন না। যেমন – পরীক্ষার সময়ে ছাত্রছাত্রীদের মনে ফল নিয়ে চিন্তা বেড়ে যায়। ফল প্রকাশের দিন যত এগিয়ে আসে, অনেক শিশু দুশ্চিন্তায় শ্বাসকষ্ট বা জ্বরের শিকার হয়। আমি ১২ – ১৫ বছর আগে একটি ছোট সিনেমা দেখেছিলাম, সেই সময় ভিডিও এতটা জনপ্রিয় ছিল না। কিন্তু, আমি সর্বদাই মানুষের মনকে বোঝার জন্য এসব দেখতাম। সেই ভিডিও-র মূল বক্তব্য ছিল যে কোনও ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে উন্নত জীবনযাপন করা বেশি সহজ। ঐ ভিডিও-তে শিশুটির সামনে পরীক্ষা ছিল। সে ভাবতো আমি ভালো ফল করতে পারবো না, সেজন্য সে আত্মহত্যার কথা ভাবে। সেই ভিডিও-র যাঁরা শ্রষ্টা, তাঁদের হয়তো পুরো ঘটনাটা মনে আছে, আমার পুরোটা মনে নেই। কারণ, আমি বহু বছর আগে দেখেছি। বাচ্চাটি ভাবতো যে, আমি দড়ি টাঙিয়ে ফাঁসিতে ঝুলবো। সেজন্য সে দড়ি কিনতে যায়। দোকানদার তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, কত ফুট লম্বা দড়ি চাই। ছেলেটি ভাবে ফুট আবার কী। সে বাড়ি ফিরে বই পড়ে জানে। তারপর, সে দোকানদারকে গিয়ে বলে, এরসঙ্গে একটা হুক-ও চাই। দোকানদার জিজ্ঞেস করে, লোহা না কোন ধাতুর হুক। সে বাড়ি ফিরে আবার পড়ে। পড়তে পড়তে তার মনে হয়, আরে ভাই মরার থেকে তো পড়া অনেক সহজ। কত ভালো সিনেমা ছিল সেটা! মাত্র ৭-৮ মিনিটের। এই যে বাচ্চাদের মনের আত্মহত্যার প্রবণতা নিয়ে তাঁরা কাজ করলেন, তা অসংখ্য অভিভাবক-অভিভাবিকা ও কিশোর-কিশোরীদের নতুন পথ দেখালো। আপনারা জানেন যে, আমি ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ নামক একটি অনুষ্ঠান করি। এ নিয়ে অনেকেই হাসি-বিদ্রুপ করেন। প্রধানমন্ত্রী হয়ে বাচ্চাদের সঙ্গে পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা অহেতুক সময় নষ্ট। আমিও এসব কথা জানি বন্ধুগণ। কিন্তু, কোনও সরকারি সার্কুলার নীচে থেকে এসে শিশুদের জীবন তৈরি করতে পারে না। তাদের সঙ্গে আমাদের যুক্ত হতে হবে। খুব ভালোভাবে তাদের মনের কথা জানতে হবে। আর সেই সময় অর্থাৎ যদি বৃষ্টির পর কৃষক ক্ষেতে কাজ করেন, তবেই ফসল ভালো হয়। পরীক্ষার দিনগুলির অনেক শক্তি থাকে। সেজন্য প্রত্যেক বছর নিয়মিত আমি এই অনুষ্ঠান করি। আমি ভাবি যে, এই পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে মন খুলে কিছু কথা বললে, হয়তো তাদেরকিছু প্রেরণা যোগাতে পারবো। তাদের বাবা-মা ও শিক্ষক-শিক্ষিকারাও বুঝতে পারবেন, কিভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানো যায়।
বন্ধুগণ,
আমি তো আপনাদের মতো রিল বানাতে পারি না। কিন্তু, সময় পেলে এই ধরনের কাজ করি। আপনারা রিল বানাতে পারেন। আপনারা কি এই ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে বেশি করে কাজ করতে পারেন, যাতে নবীনদের মনে ড্রাগস - এর কুফল নিয়ে সচেতনতা বাড়ে। আপনারাই সৃষ্টিশীলভাবে তাঁদেরকে সবচেয়ে ভালোভাবে বোঝাতে পারেন যে, ‘ড্রাগস ইস নট কুল ফর ইয়ুথ’। নবীনদের জন্য ড্রাগস কখনই ভালো কিছু হতে পারে না!
বন্ধুগণ,
এক্ষেত্রে আপনাদের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ, আপনারা তাঁদের ভাষায় কথা বলে সহজেই তাঁদেরকে সচেতন করতে পারেন।
বন্ধুগণ,
আর কিছুদিন পরই লোকসভা নির্বাচন হবে। আপনারা এটা ভাববেন না যে, সেদিকে তাকিয়েই আজকের অনুষ্ঠান আয়োজন হয়েছে। আমি আপনাদের গ্যারান্টি দিচ্ছি যে, সম্ভব হলে আগামী শিবরাত্রি বা যে কোনও দিনে আমি আবার এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করবো। এখানে আমি লোকসভা নির্বাচনের কথা সেভাবে তুলে ধরিনি। কারণ আমি জানি যে, আমার জন্য আপনাদের মনে কী রয়েছে! আপনারা আমাকে ভালোবাসেন। কারণ, আমি আপনাদের জন্যই বাঁচি। আমি যেহেতু নিজের জন্য বাঁচি না, তাই আমার জন্য অনেকেই মরতে রাজি। এটা মোদীর গ্যারান্টি নয়, ১৪০ কোটি দেশবাসীর গ্যারান্টি। এটা সত্যি যে, এটাই আমার পরিবার।
বন্ধুগণ,
আমি যে লোকসভা নির্বাচনের কথা বলছিলাম, এক্ষেত্রেও আপনারা অনেক কিছু করতে পারেন। বিশেষ করে, যে নবীনরা এ বছর প্রথমবার ভোট দেবেন, তাঁরা যেন বুঝতে পারেন যে, ভোট দেওয়া মানে কাউকে জেতানো বা হারানো নয়। ভোট দেওয়ার মানে হ’ল – এত বড় দেশের স্বার্থে কী কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেই প্রক্রিয়ার অংশীদার হয়ে ওঠা। দেশের ভবিষ্যৎ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে ওঠা। তাই, কাকে ভোট দেবেন – একথা বলার প্রয়োজন নেই। তাঁরা যাতে নির্ভয়ে সঠিক প্রার্থীকে ভোট দেন, এ ব্যাপারে তাঁদেরকে সচেতন করতে অনেক কিছু করতে পারেন। বিশ্বের যে দেশ যত সমৃদ্ধ, তাদের সমৃদ্ধি বৃদ্ধির সঙ্গে ভোটিং প্যাটার্ন ব্যস্তানুপাতিক। তবেই ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থায় সমৃদ্ধি বাড়ে আর তারপর তা গণতন্ত্রের পথে হাঁটে। ভারত ১০০ শতাংশ গণতন্ত্রের অভিজ্ঞতা নিয়ে সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হয়ে ওঠার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলেছে আর বিশ্বের জন্য একটি মডেল হয়ে উঠতে চলেছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তর মডেল। কিন্তু, তা সম্ভব আমার দেশের নবীন প্রজন্মের যথার্থ অংশীদারিত্বের মাধ্যমেই। ১৮, ১৯, ২০, ২১ বছর বয়সীদের অংশীদারিত্ব চাই।
বন্ধুগণ,
আমরা যদি চারপাশে দেখি, যত দিব্যাঙ্গ জনেরা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যেও অনেক প্রতিভা রয়েছে। আপনারা তাঁদের অগ্রগতির জন্যও একটি বড় মাধ্যম হয়ে উঠতে পারেন, তাঁদের সাহায্য করতে পারেন, তাঁদের মধ্যে যে সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে, তা জাগ্রত করার মাধ্যমে দেশের শক্তি হিসেবে তুলে ধরার প্রয়োজন রয়েছে।
বন্ধুগণ,
আরেকটি বিষয় হ’ল – ভারতের প্রভাবকে দেশের বাইরে বাড়ানো। এক্ষেত্রে আপনাদের মধ্যে যাঁরা আজ বিশ্ববাসীর সামনে পরিচিত হয়ে উঠছেন, যাঁরা আজ ভারতের ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকার গর্ব ও পরাক্রমের প্রতীক হয়ে উঠেছেন অথবা যাঁরা বিদেশে ভারতীয় পাসপোর্টের গৌরব বৃদ্ধি করেছেন, তাঁদের গুরুত্ব অপরিসীম। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে, যুদ্ধ আক্রান্ত ইউক্রেন থেকে ছাত্রছাত্রীরা যখন বাইরে বেরিয়ে আসছিলেন, তখন ভারতীয় জাতীয় পতাকা দেখালে বিবদমান দু’দেশের কোনও পক্ষের সেনারাই বাধা দিচ্ছিলেন না। এই সামর্থ্য এমনি এমনি তৈরি হয়নি বন্ধুগণ। এর পেছনে মিশন মোড – এ অনেক কাজ করতে হয়েছে। বিশ্বে আজ আবহ বদলেছে। কিন্তু, তাকে আরও ভারতের অনুকূল করে তুলতে ভারত সম্পর্কে বিশ্ববাসীর ধারণাকে আরও বদলাতে হবে। আমার মনে আছে যে, একবার কোনও দেশ সফরে গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে যিনি দো-ভাষী ছিলেন, তিনি ছিলেন পেশায় কম্প্যুটার ইঞ্জিনিয়র। তিনি সেদেশের সরকারি কর্মচারী ছিলেন। ৩-৪ দিনের সফরে তাঁর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা হয়ে যায়। এরপর একদিন তিনি আমাকে বলেন - সাহেব, আপনি যদি কিছু মনে না করেন, তা হলে একটি প্রশ্ন করতে চাই। আমি জিজ্ঞেস করি কী? তিনি বলেন, থাক, জিজ্ঞেস করবো না। আমি বললাম, না, প্রশ্ন করুন। তখন তিনি জিজ্ঞেস করেন, এখনও কি আপনাদের দেশে সাপ, সাপুড়ে, জাদু-টোনা এসব চলে? আমি বলি, আগেকার দিনে আমাদের দেশের মানুষ অনেক শক্তিশালী ছিলেন, তখন সাপ-টাপ তাঁদের বাম হাতের খেলা ছিল। এখন আমাদের শক্তি অনেক কমে গেছে। এখন ধীরে ধীরে আমরা ‘মাউস’ - এ এসে গিয়েছি। এখন ‘মাউস’ দিয়েই আমরা গোটা বিশ্বকে নাচাই।
বন্ধুগণ,
আমাদের দেশের এই যে সামর্থ্য তা যদি আমরা বিদেশে বসে কাউকে বোঝাতে চাই যে, আমাদের সামর্থ্যের প্রতি আকর্ষিত করতে চাই, তা হলে তাঁদেরকে আমাদের দেশে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে কী ধরনের কন্টেন্ট ক্রিয়েট করবো! আপনারাই গোটা বিশ্বে ভারতে ডিজিটাল রাজদূত বন্ধুগণ। আমি মনে করি, এটা অনেক বড় শক্তি। আপনারা এক সেকেন্ডেরও অনেক কম সময়ে বিশ্বে পৌঁছে যেতে পারেন। আপনারাই ‘ভোকাল ফর লোকাল’ – এর সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার। আমি গতকাল শ্রীনগর গিয়েছিলাম। সেখানে এক নবযুবকের সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল। আমি অবাক হয়ে শুনি যে, তিনি শুধু মধু নিয়ে কাজ করেন, মউ পালন করেন আর আজ গোটা বিশ্বে তিনি তাঁর ব্র্যান্ড পৌঁছে দিয়েছেন শুধুমাত্র এই ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে।
আর সেজন্য বন্ধুগণ,
আসুন, আমি অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি। আর আপনাদের কাছে এই প্রত্যাশা করি যে, আমরা একসঙ্গে মিলে একটি ‘ক্রিয়েট অন ইন্ডিয়া মুভমেন্ট’ শুরু করবো। আসুন, আমরা ভারতের গল্প, ভারতের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্য ও পরম্পরাগুলিকে গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরি। আসুন, একসঙ্গে মিলে একটি ‘ক্রিয়েট অন ইন্ডিয়া মুভমেন্ট’ শুরু করি। এমন সব কন্টেন্ট তৈরি করুন, যাতে বিশ্ববাসী আপনাদের পাশাপাশি, আপনাদের দেশ, আমাদের দেশকে সবাই বেশি ‘লাইক’ দেন। সেজন্য আমাদের আন্তর্জাতিক দর্শক ও শ্রোতাদের ‘এনগেজ’ করতে হবে। বিশ্বের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি, নবীনদেরকেও যুক্ত করতে হবে। আজ গোটা বিশ্ব ভারত সম্পর্কে জানতে চায়। আপনাদের মধ্যে অনেকেই অনেক বিদেশি ভাষা জানেন। যদি না জানেন, তা হলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে কাজ হতে পারে। তবে, যাঁর যে বিদেশি ভাষা ভালো লাগে, তা শিখে নেওয়াটাই ভালো। আপনারা যত বেশি কন্টেন্ট জার্মান, ফ্রেঞ্চ ও স্প্যানিশের মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত ভাষাগুলিতে তৈরি করবেন, ততই ভারতের ‘রীচ’ বাড়বে। এর পাশাপাশি, প্রতিবেশী দেশগুলির ভাষায় যদি আমরা কন্টেন্ট তৈরি করি, তা আমাদের একটি ভিন্ন পরিচয় গড়ে তুলবে। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে, বিগত দিনে আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিছুদিন আগেই বিল গেটস্ - এর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম। তখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো কিছু বিষয় নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আমরা করেছি। এগুলি সম্পর্কে আপনারা কিছুদিন পর অবশ্যই জানতে পারবেন। কিন্তু, গতকাল আমি একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি মনে করি যে, ভারত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে কী কী করবে, তার অপেক্ষায় বিশ্ববাসী আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। কারণ, তাঁরা মনে করেন, এক্ষেত্রে ভারত নেতৃত্ব দেবেন। এই আত্মপ্রত্যয় নিয়েই এগিয়ে যান বন্ধুগণ। কারণ, আমি আপনাদের প্রতিভার উপর ভরসা রেখেই এই কথাগুলি বলছি। এছাড়া, সেমিকন্ডাক্টরের ক্ষেত্রেও ভারত আন্তর্জাতিক স্তরে এগিয়ে চলেছে। টু-জি, ফোর-জি’র ক্ষেত্রে আমরা অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি যে, ফাইভ-জি’র ক্ষেত্রে আমরা নেতৃত্ব দিচ্ছি। ঠিক একইভাবে আমরা দ্রুত সেমিকন্ডাক্টরের ক্ষেত্রেও বিশ্বে নিজেদের স্থান তৈরি করে নেব বন্ধুগণ। আর দ্রুত সবাইকে ছাপিয়ে যাব। এই সাফল্য মোদীর জন্য আসবে না, এই সাফল্য আসবে দেশের নবীন প্রজন্মের মেধার ফসল হিসেবে। মোদী শুধু সুযোগ তৈরি করে দেয়, পথের কাঁটা দূর করে যাতে আমাদের দেশে নবীন ছেলেমেয়েরা দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে পারে। সেজন্য আমি চাই, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলির ভাষা শিখে যত বেশি আমরা তাঁদের কাছে তাঁদের ভাবনার অনুকূল বিষয়বস্তু তুলে ধরবো, তত বেশি তাঁদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নিবিড় হবে। এই সৃষ্টিশীল জগৎ খুব ভালোভাবে আমাদের দর্শন ও চিন্তাভাবনাকে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে প্রভাব সৃষ্টি করতে পারবে। আপনারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শক্তি সম্পর্কে অবহিত। এই যে আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, কিছুক্ষণ পরই ভারতের ৮-১০টি ভাষায় আমার কথা পৌঁছে যাবে। কারণ, আমি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করি। আপনাদের সঙ্গে এখানে আসা-যাওয়ার সময় আমার যে ছবি উঠেছে, তাও আপনারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারেন। নমো অ্যাপ – এ ফটো বুথ- এ গেলে আপনারা সহজেই আমার সঙ্গে আপনাদের ছবি পাবেন। পাঁচ বছর আগের ছবিও পাবেন – এটাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শক্তি। এটাই আমাদের দেশের নবীন প্রজন্মের শক্তি। সেজন্য আমি বলছি বন্ধুগণ, ভারতের যে সামর্থ্য রয়েছে, এই সামর্থ্যকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই আর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের ছবিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে চাই। আপনারা এই কাজ নিজেদের সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে করে দেখাতে পারেন। কেউ মুম্বাইয়ের কোনও বিখ্যাত বরাপাও – এর দোকানে কিংবা কোনও ফ্যাশন ডিজাইনারের কাছে গিয়ে যখন রিল তৈরি করবেন, তখন জিজ্ঞেস করবেন যে, ভারতীয় রান্না বা ভারতীয় বস্ত্র শিল্পীদের কী কী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। একজন প্রযুক্তি বিষয়ক ক্রিয়েটর গোটা বিশ্বকে একথা জানাতে পারে যে, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মাধ্যমে আমরা কী কী নির্মাণ করছি আর ভারতে উদ্ভাবন প্রক্রিয়া কিভাবে এগিয়ে চলেছে। একজন গ্রামে বসে থাকা ট্রাভেল ব্লগারও বিদেশে বসে থাকা কোনও ব্যক্তিকে নিজের ভিডিও পাঠিয়ে তাঁকে ভারতে বেড়াতে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। আমাদের ভারতে তো ভিন্ন ভিন্ন ধরনের মেলা আয়োজিত হয়। প্রত্যেক পর্বে একটি নিজস্ব গল্প থাকে। আর বিশ্ববাসী সেই গল্প জানতে চায়। যাঁরা ভারতকে জানতে চান, ভারতের প্রতিটি প্রান্তকে জানতে চান, আপনারা তাঁদেরকেও অনেক সাহায্য করতে পারেন।
বন্ধুগণ,
এতসব প্রচেষ্টার মাধ্যমে আপনাদের শৈলী, আপনাদের উপস্থাপনা, আপনাদের পণ্য, আপনাদের ‘ফ্যাক্টস্’ বা বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি অবহিত। সত্য ঘটনা এবং বিষয়ের ক্ষেত্রে কখনও কম্প্রোমাইস করবেন না। তা হলেই দেখবেন যে, একটি অভিনব মাত্রায় আপনারা এগিয়ে যাবেন! এখন দেখুন, প্রত্নবস্তু তো অনেক থাকে! প্রত্নতত্ত্ববিদরা অনুসন্ধান করে অনেক কিছুই বের করে আনেন। কিন্তু, যাঁরা ভিস্যুয়ালজি বা দৃষ্টিনন্দনতত্ত্ব জানেন, তাঁরা সেগুলি দেখে যখন সেগুলির আদলে শিল্প সৃষ্টি করেন, তা দেখে আমরা সেই যুগে পৌঁছে যাই। ৩০০ বছর পুরনো কোনও বস্তু দেখলে মনে হয় যে, সেই সময়েই বুঝি বেঁচে আছি। সৃষ্টিশীলতার শক্তি এমনই হয় বন্ধুগণ। আর আমি চাই যে, আমার দেশের মধ্যে যত সৃষ্টিশীলতা রয়েছে, আপনারা সেগুলিকে আমাদের দেশের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য অনুঘটক হিসেবে ব্যবহার করুন। এই ভাবনা নিয়েই আজ আপনাদের সঙ্গে মিলিত হয়েছি। আপনাদের সকলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আপনারাও অত্যন্ত কম সময়ে অনেক কিছুই করে দেখিয়েছেন। আজকের জুরি সদস্যদের, বিচারকদেরও আমি ধন্যবাদ জানাই। কারণ, দেড় লক্ষেরও বেশি প্রস্তুতকারককে, শিল্পকর্মকে খুঁটিয়ে দেখা সহজ কাজ নয়। আশা করি, আগামী দিনে এই কাজ আরও বেশি ভালোভাবে, আমরা আরও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে করতে পারবো। আমি আরেকবার আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ।