অর্ণব গোস্বামীজি, রিপাবলিক মিডিয়া নেটওয়ার্কের কর্মীবৃন্দ, দেশ ও বিদেশে রিপাবলিক টিভি-র দর্শকগণ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ! আপনাদের কিছু বলার আগে আমার ছোটবেলায় শোনা একটি রসিকতা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। এক অধ্যাপক ছিলেন। তাঁর মেয়ে আত্মহত্যা করেন। তবে তার আগে একটি কাগজে লিখে যান যে জীবনে তিনি বড় ক্লান্ত এবং তাঁর আর বাঁচার কোনও ইচ্ছে নেই। তিনি আরও লেখেন যে তিনি কিছু পান করে কাঙ্কারিয়া সরোবরে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুবরণ করবেন। পরেরদিন সকালে অধ্যাপক দেখেন যে তাঁর মেয়ে বাড়িতে নেই। তিনি তাঁর মেয়ের ঘরে গিয়ে দেখেন যে সেখানে একটি চিঠি পড়ে রয়েছে। চিঠি পড়ে তিনি ভীষণ রেগে যান। তিনি বলেন যে “আমি একজন অধ্যাপক। আমি এত বছর ধরে এত পরিশ্রম করেছি তা সত্ত্বেও আত্মহত্যার চিঠিতে সে কাঙ্কারিয়া নামের বানানটাই ভুল লিখেছে।” আমি খুশি যে অর্ণব এখন অনেক ভালো হিন্দি বলতে শিখেছেন। আমি শুনিনি তিনি কি বলেছেন, তবে আমি অত্যন্ত নজর দিতাম যে তাঁর বলা হিন্দি ঠিক হচ্ছে না ভুল। মুম্বাইয়ে থাকার পর থেকে হয়তো আপনার হিন্দিটা অনেকটা উন্নত হয়েছে।
বন্ধুগণ,
আজ আপনাদের মধ্যে উপস্থিত থেকে আমি খুশি। আগামী মাসে রিপাবলিক টিভি-র ছ’বছর পূর্ণ হবে। ‘দেশ সর্বাগ্রে’ - এই পথ থেকে যে আপনারা সরে আসেননি, সেজন্য আমি আপনাদেরকে অভিনন্দন জানাতে চাই। যাবতীয় বাধা-বিঘ্ন সত্ত্বেও আপনারা আপনাদের কর্তব্যপথে অবিচল থেকেছেন। কখনও কখনও অর্ণবের গলা ধরে যায় আর অনেকেই তাঁর সেই গলা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু চ্যানেলটিকে বন্ধ করা যায়নি। এই চ্যানেল থেমেও যায়নি, ক্লান্তও হয়ে পড়েনি।
বন্ধুগণ,
যখন আমি ২০১৯ সালে রিপাবলিক আয়োজিত শিখর সম্মেলনে আসি, সেই সময় বিষয় ছিল – ‘ভারতের মুহূর্ত’। এই বিষয়ের প্রেক্ষাপটে দেশের মানুষের কাছ থেকে প্রাপ্ত রায় প্রতিফলিত হয়েছিল। বহু দশক পর ভারতের মানুষ একটি স্থায়ী সরকারকে দ্বিতীয়বারের জন্য ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে নির্বাচিত করেন। দেশ বুঝেছিল যে অবশেষে ভারতের সময় উপস্থিত। আজ চার বছর পর এই সম্মেলনের বিষয় হল – ‘রূপান্তরের সময়’, যা বস্তুতপক্ষে এই রূপান্তরের পিছনে যে বিশ্বাস তা প্রতিফলিত হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
পরিবর্তনের এই দিক নির্ণয়ের একটি দিক হল, দেশের অর্থনীতির বৃদ্ধি ও প্রসার। তিন ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠতে ভারতের প্রায় ৬০ বছর সময় লেগেছে। ৬০ বছর! ২০১৪ সালে আমরা ২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিলাম। এই ২ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে পৌঁছতে সাত দশক লেগেছে! কিন্তু আজ ভারত ৩.৫ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে আমাদের সরকার গঠনের মাত্র ৯ বছরের মধ্যে। বিশ্ব অর্থনীতিতে ১০ নম্বর থেকে পঞ্চম বৃহত্তর অর্থনীতির দেশে এসে পৌঁছনো এক বড় উল্লম্ফন। শতবর্ষের সবথেকে বড় সঙ্কটের মধ্যেও এটা সম্ভব হয়েছে। বিশ্বের সমস্ত বড় অর্থনীতি যখন ঝুঁকছে, ভারত সেই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
বন্ধুগণ,
আপনারা নিশ্চয়ই নীতি নির্ধারকদের কাছ থেকে একটি কথা শুনে থাকবেন – প্রথম নির্দেশের প্রভাব। যে কোনও নীতিরই এটাই হল প্রথম এবং স্বাভাবিক ফলশ্রুতি। প্রথম নির্দেশের প্রভাব যে কোনও নীতিরই প্রথম লক্ষ্য এবং এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয় খুব অল্প সময়ের মধ্যে। কিন্তু, যে কোনও নীতিরই দ্বিতীয় ও তৃতীয় নির্দেশেরও অনেক প্রভাব রয়েছে। এই প্রভাব অনেক গভীর ও সুদূরপ্রসারী। তবে, তা মেলে ধরতে সময়ের দরকার। এর তুলনামূলক সমীক্ষা করতে এবং বিস্তারিতভাবে বুঝতে আমাদের কয়েক দশক পিছিয়ে যেতে হবে। টেলিভিশন জগতের মানুষের দুটি জানালা রয়েছে - তখন এবং এখন। আজ আমি অনুরূপ একটা কিছু করতে যাচ্ছি। ফলে অতীতের বিষয়টি নিয়ে আগে আলোচনা করা দরকার।
বন্ধুগণ,
স্বাধীনতা-উত্তর লাইসেন্স রাজের অর্থনীতির সময় সরকার নিজেই ছিল নিয়ন্ত্রক। প্রতিযোগিতার বাতাবরণ ধ্বংস করা হয় এবং বেসরকারি শিল্প ও ক্ষুদ্র, অণু ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ (এমএসএমই)-কে মাথা তোলার জায়গা দেওয়া হয়নি। এর প্রথম নেতিবাচক প্রভাব হল অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমরা পিছিয়ে পড়ে ক্রমান্বয়ে গরীব হতে থাকি। এইসব নীতির দ্বিতীয় নির্দেশের প্রভাব আরও করুণ। বিশ্বের তুলনায় ভারতের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি অত্যন্ত নিম্নমুখী থেকে যায়। ফলশ্রুতি হিসেবে নির্মাণক্ষেত্র রুগ্ন হয়ে পড়ে এবং বিনিয়োগের সুযোগ হারাই আমরা। এই নীতির তৃতীয় প্রভাব হল উদ্ভাবনের যে পরিমণ্ডল তা ভারতে গড়ে উঠতে পারল না। এমতাবস্থায় উদ্ভাবনী উদ্যোগ ক্ষেত্র তৈরি হল না, বেসরকারি কাজের ক্ষেত্রও সৃষ্টি হল না। যুব সম্প্রদায় সরকারি কাজের ওপর নির্ভরশীল হতে থাকল। দেশের অনেক প্রতিভা এই কাজের পরিমণ্ডলের অভাবে দেশ ছেড়ে বাইরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নীতিগত এই অচলাবস্থার দরুন দেশের উদ্ভাবনী সক্ষমতা, উদ্যোগ এবং কঠোর পরিশ্রমের যে বাতাবরণ তা সম্পূর্ণ ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।
বন্ধুগণ,
রিপাবলিক টিভি-র দর্শকরা নিশ্চয়ই উন্মুখ হয়ে আছেন যে ২০১৪ সালের পর আমাদের সরকার কি নীতি গ্রহণ করেছিল তা জানতে। আমি এখন আপনাদের তাই বলছি। প্রাথমিক সুবিধার বিষয়গুলিতেই কেবল যত্নশীল হওয়া নয়, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় নির্দেশের ফলশ্রুতির ক্ষেত্রেও অনুরূপ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। রিপাবলিক টিভি-র ২০১৯-এর সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীন পাঁচ বছরে ১.৫ কোটি গৃহ নির্মাণের উল্লেখ করেছিলাম আমি। এই সংখ্যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.৭৫ কোটিতে। এইসব বেশিরভাগ বাড়িরই মালিকানা মা এবং বোনেদের নামে। আজ আপনারা জানুন যে প্রত্যেকটি বাড়ির মূল্য কয়েক লক্ষ টাকা। আমি আজকে অত্যন্ত সন্তোষের সঙ্গে বলতে চাই যে আমাদের গরীব বোনেরা এখন লাখপতি দিদি হয়ে উঠেছেন। হয়তো এর থেকে বড় আর কোনও রক্ষাবন্ধন হয় না। এটাই প্রথম ফল। দ্বিতীয় ফল হল, এই প্রকল্পে গ্রামাঞ্চলে লক্ষাধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে কারোর নিজের বাড়ি অর্থাৎ চিরস্থায়ী বাড়ি থাকলে তা আস্থা এবং ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা অনেকখানি বেড়ে যায়। তাঁর স্বপ্ন তখন আকাশ ছুঁতে চায়। ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ দেশের গরীব মানুষের আস্থাকে নতুন সীমায় পৌঁছে দিয়েছে। ‘মুদ্রা’ যোজনা কয়েকদিন আগেই আট বছর পূর্ণ করেছে। এই প্রকল্প চালু করার পেছনে অণু ও ক্ষুদ্র উদ্যোগপতিদের আর্থিক সাহায্য প্রদানই ছিল মূল উদ্দেশ্য। ‘মুদ্রা’ যোজনায় ৪০ কোটিরও বেশি ঋণ প্রদান করা হয়েছে যার ৭০ শতাংশই পেয়েছেন মহিলারা। এই প্রকল্পের প্রথম প্রত্যক্ষ ফল হল স্বনিযুক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া। ‘মুদ্রা’ যোজনাই হোক, মহিলাদের জন ধন অ্যাকাউন্ট খোলাই হোক অথবা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির প্রসারই হোক – এইসব প্রকল্পের মধ্য দিয়ে আজ দেশে বিরাট সামাজিক পরিবর্তন আমরা প্রত্যক্ষ করছি। এইসব প্রকল্প আজকের পরিবারগুলিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মহিলাদের একটি শক্তিশালী জায়গা দিয়েছে। আজ ক্রমেই বেশি সংখ্যক মহিলা কর্মসৃষ্টিকারী হয়ে উঠছেন এবং দেশের আর্থিক প্রসারে শক্তি যোগাচ্ছেন।
বন্ধুগণ,
‘প্রধানমন্ত্রী স্বামীত্ব যোজনা’তেও আপনারা দেখবেন প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রভাবের পৃথক ফল। এতে সম্পত্তি কার্ড অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে গরীবদেরকে দেওয়া হচ্ছে যা সম্পত্তি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তাঁদেরকে নিশ্চয়তা দিয়েছে। এই প্রকল্পের একটি প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যায় ড্রোন ক্ষেত্রে যেখানে চাহিদা এবং প্রসার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ‘প্রধানমন্ত্রী স্বামীত্ব যোজনা’ শুরুর প্রায় ২-২.৫ বছর হল। এটি খুব যে একটা সময় তা নয়, তবে এর সামাজিক প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। এই সম্পত্তি কার্ডের ফলে পারস্পরিক বিবাদের সম্ভাবনার জায়গা কমে আসছে। এর ফলে পুলিশ এবং বিচার ব্যবস্থার ওপরও ক্রমবর্ধমান চাপ অনেকটাই কমবে। গ্রামের দিকে যাঁদের সম্পত্তির কাগজ রয়েছে তাঁরা ব্যাঙ্ক থেকে আর্থিক সাহায্য পাবেন। গ্রামের এই সম্পত্তির মূল্য অনেকখানি বেড়ে গেছে।
বন্ধুগণ,
প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় নির্দেশের অনেকগুলি কেস সমীক্ষা আমার কাছে রয়েছে। এসব করতে গেলে আপনাদের টিভি-র ‘রান-অর্ডার’ অচল হয়ে পড়বে এবং বহু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরকেই ধরা যাক। এতে গরীবদেরকে বিদ্যুৎ, জল এবং শৌচালয়ের সুবিধা দেওয়া হয়েছে যা তৃণমূলস্তরে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এইসব প্রকল্পগুলি দরিদ্রতম মানুষদের সুরক্ষা এবং সম্মানের জায়গা করে দিয়েছে। যাঁদের এত দশকের পর দশক ধরে বোঝানো হয়েছিল যে দেশের কাছে তাঁরা এক বোঝাস্বরূপ, আজকে তাঁরাই দেশের উন্নয়নে গতি সঞ্চার করছেন। সরকার যখন এসব প্রকল্পের সূচনা করে কিছু কিছু মানুষ তখন আমাদেরকে এই নিয়ে উপহাস করেছেন। কিন্তু এই প্রকল্পগুলিই ভারতের দ্রুত উন্নয়নের জায়গা করে দিয়েছে এবং উন্নত ভারত নির্মাণের সোপান তৈরি করেছে।
বন্ধুগণ,
দরিদ্র থেকে শুরু করে দলিত, অবহেলিত, পিছিয়ে পড়া শ্রেণী, আদিবাসী, সাধারণ শ্রেণী অথবা মধ্যবিত্ত শ্রেণী - গত ৯ বছরে তাঁদের জীবনে পরিবর্তনের প্রভাব প্রত্যক্ষ করছেন। আজ দেশ নির্দিষ্ট লক্ষ্য ধরে সুসমন্বিত ব্যবস্থার মাধ্যমে এগিয়ে চলেছে। ক্ষমতায় যাঁরা রয়েছেন তাঁদের মানসিকতারও পরিবর্তন ঘটিয়েছি আমরা। পরিষেবা দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করেছি। গরীবদের কল্যাণকে আমরা আমাদের মাধ্যম করে তুলেছি। পরিতোষ বিধানের পরিবর্তে সন্তোষ বিধানকে আমরা আমাদের ভিত্তি করেছি। এটা গরীব এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ক্ষেত্রে একটা সুরক্ষা কবচ তৈরি করেছে। এই সুরক্ষা কবচ দেশের গরীবদের অধিকতর গরীব হওয়া থেকে রক্ষা করেছে। আপনাদের মধ্যে হয়তো অল্প সংখ্যকই জানেন যে ‘আয়ুষ্মান যোজনা’ দেশের গরীবদের ৮০ হাজার কোটি টাকা খরচের হাত থেকে বাঁচিয়েছে। এইসব প্রকল্পগুলি যদি না থাকত, তাহলে তাঁদের পকেট থেকে এই টাকা খরচ হত। সঙ্কটের মুহূর্তে এটাই একমাত্র প্রকল্প হয়ে দেখা দেয়নি, বরং কোটি কোটি পরিবার এই প্রথম মূল্যসাশ্রয়ী ওষুধ, নিখরচায় টিকাকরণ, ডায়ালিসিস, দুর্ঘটনাজনিত বিমা এবং জীবনবিমার সুবিধা পেয়েছেন। এই সমস্ত প্রকল্পের ফলে করোনা অতিমারীর সঙ্কটকালে গরীবদেরকে খালি পেটে ঘুমোতে হয়নি। ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ অথবা আমাদের জ্যাম ত্রিমূর্তি - এই সমস্ত কিছুই সুরক্ষা কবচ হিসেবে কাজ করেছে। আজ দরিদ্রতম মানুষ এটা জেনে নিশ্চিত যে তাঁদের যা প্রাপ্য তা তাঁরা পাবেন এবং এটাকে আমি প্রকৃত অর্থেই সামাজিক ন্যায়বিচার বলে মনে করি। এরকম আরও অনেক প্রকল্প রয়েছে যা ভারতের দারিদ্র্যের বোঝা কমাতে বিরাট প্রভাব বিস্তার করেছে। কিছুদিন আগে আমি আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (আইএমএফ)-এর একটি রিপোর্ট দেখি। তাতে বলা হয়েছে যে করোনা অতিমারী সত্ত্বেও এইসব প্রকল্পের সুবিধাগত কারণে ভারতের চরম দারিদ্র্য একেবারেই শেষের পথে। একেই বলে রূপান্তর। এছাড়া রূপান্তর আর কি হতে পারে?
বন্ধুগণ,
আপনারা মনে করে দেখতে পারেন যে এমজিএনআরইজিএ-কে আমি কংগ্রেস সরকারের এক ব্যর্থতার চরম নিদর্শন হিসেবে দেখিয়েছিলাম। ২০১৪-র আগে এমজিএনআরইজিএ-কে নিয়ে অনেক অভিযোগ ছিল। আমাদের সরকার এ নিয়ে সমীক্ষা করে। এই সমীক্ষায় উঠে আসে যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে একদিনের কাজকে ৩০ দিনের উপস্থিতি হিসেবে দেখানো হচ্ছে। অন্য অর্থে বলতে গেলে, কেউ নিশ্চয়ই এই অর্থ তছরূপ করছিল। কারা কাজ হারাচ্ছিলেন? দরিদ্র এবং শ্রমিকরাই কাজ হারাচ্ছিলেন। আজও আপনারা গ্রামে গেলে জিজ্ঞাসা করবেন ২০১৪-র আগের এমজিএনআরইজিএ-এর কি প্রকল্প এখনও হয়ে চলেছে। আপনারা একটাও হয়তো দেখতে পাবেন না। আগে এমজিএনআরইজিএ-এর টাকায় স্থায়ী সম্পত্তি নির্মাণের ক্ষেত্রে বস্তুতপক্ষে কোনও নজরই দেওয়া হত না। আমরা এই পরিস্থিতির বদল ঘটিয়েছি। এমজিএনআরইজিএ-এর বরাদ্দ আমরা একদিকে যেমন বাড়িয়েছি, অন্যদিকে তেমনই তার স্বচ্ছতা বিধানও করেছি। সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পৌঁছে দেওয়া শুরু করেছি আমরা এবং গ্রামে সম্পদ নির্মাণ করেছি। ২০১৪-র পর গরীবদের জন্য লক্ষ লক্ষ পাকা বাড়ি, ইঁদারা, খাল, পশুদের মাথার ওপর চালা প্রভৃতি এমজিএনআরইজিএ-র অধীন নির্মাণ করা হয়েছে। এমজিএনআরইজিএ-এর টাকা ১৫ দিনের মধ্যেই এখন দিয়ে দেওয়া হয়। ৯০ শতাংশ এমজিএনআরইজিএ কর্মী আধার সংযুক্তিকরণ ঘটানো হয়েছে। এর ফলে জব কার্ডে বেনিয়ম কমিয়ে আনা গেছে। আমি আপনাদের আরও একটি পরিসংখ্যান দিচ্ছি। এমজিএনআরইজিএ-তে ভুয়ো লোকের হাত টাকা চলে যাওয়া আটকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে। এখন এমজিএনআরইজিএ-এর টাকা সরাসরি কর্মী এবং শ্রমিকদের কাছে গিয়ে পৌঁছচ্ছে। গরীবদের প্রতি এই অবিচারের সমাপ্তি ঘটিয়েছে আমাদের সরকার। রূপান্তরের পথে এই যাত্রা সমকালীন ও দূরদর্শী। আগামী কয়েক দশকের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। ভারতে অতীতে যে সমস্ত প্রযুক্তি এসেছে, বহু দশক পেরিয়ে যাওয়ার পর তা ভারতে এসে পৌঁছেছে। গত ৯ বছরে এই মানসিকতার পরিবর্তনসাধন করা হয়েছে। ভারত তিনটি কাজ পাশাপাশি করে গেছে। প্রথমত, প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলিকে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ভারতের প্রয়োজনের ভিত্তিতে প্রযুক্তি নির্মাণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে এবং তৃতীয়ত, ভবিষ্যতের প্রযুক্তির নির্মাণ এবং গবেষণার ক্ষেত্রে সময় বেঁধে এগোনো হচ্ছে। আজ আপনারা দেখছেন যে ৫জি কত দ্রুত এ দেশে এগিয়ে চলেছে। বিশ্বে দ্রুততম গতিতে আমরা এগিয়ে চলেছি। ৫জি-র ক্ষেত্রে ভারত যে গতি প্রদর্শন করেছে, প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারত যে পথ নির্মাণ করেছে, বিশ্বের সর্বত্র তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
করোনা অতিমারীর সময়ে টিকার বিষয়টি কেউ ভোলননি এখনও। পুরনো মানসিকতা এবং চিন্তাধারার লোকেরা ভারতে তৈরি টিকার প্রয়োজন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মানসিকতা ছিল, অন্য দেশ যখন টিকা তৈরি করছে তখন আজ না হয় কাল, তারা আমাদেরকে টিকার যোগান দেবে। তবে, এই সঙ্কটের সময়কালে ভারত তার এই আত্মনির্ভরতার পথকেই বেছে নেন এবং তার যা ফলশ্রুতি তা আমরা সকলেই আজ প্রত্যক্ষ করছি। বন্ধুগণ, আমরা আজ খুশি। আপনারা সেই অবস্থার কথা ভাবুন যখন বিশ্ব বলছিল যে আমাদের টিকা আপনারা নিন এবং লোকেদের এটা বলতে দেখা গেছে যে যথেষ্ট পরিমাণ টিকার মজুত ছাড়া আমাদেরকে মৃত্যুর পথে হাঁটত হবে। সম্পাদকীয় এবং টেলিভিশন বিতর্কে এই আসন্ন বিপদটিকে তুলে ধরা হচ্ছিল। বন্ধুগণ, আমার দেশের জন্য আমাকে এক বিরাট রাজনৈতিক ও আর্থিক ঝুঁকি নিতে হয়েছিল। অন্যথায় আমিও বলতে পারতাম, আমি আমার দেশের অর্থভাণ্ডারকে ব্যবহার করে টিকা আমদানি করব। একবার লোকেদের টিকা দেওয়া হলে খবরের কাগজ বিজ্ঞাপনে ভরিয়ে দেব এবং তাতেই সব শেষ হবে। কিন্তু বন্ধুরা, আমরা সে পথ নিইনি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট এবং সর্বাপেক্ষা কার্যকরি টিকা আমরা তৈরি করেছি। আমরা দ্রুততার সঙ্গে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং সবথেকে সফল টিকার প্রচারাভিযান চালু করি। আপনাদের হয়তো মনে থাকবে যে ভারতে করোনা ছড়াতে শুরু করে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে এবং মে মাসেই ভারত এই টিকাকরণ নিয়ে টাস্ক ফোর্স তৈরি করে। ভবিষ্যতের প্রয়োজন কি সেদিকে তাকিয়ে আমরা অগ্রিম পরিকল্পনা রচনা করি এবং দেখা গেছে এই সময়েও বেশ কিছু মানুষ ভারতে তৈরি টিকা নিতে নারাজ ছিলেন। এক্ষেত্রে কি জাতীয় শব্দই না ব্যবহার করা হয়েছে। আমি জানিনা কার চাপে এগুলি করা হচ্ছিল এবং আমি এটাও জানিনা বিদেশি টিকা আমদানির প্রচার করছিলেন যাঁরা, সেসব মানুষেরা কাদের স্বার্থ চরিতার্থ করছিলেন।
বন্ধুগণ,
আমাদের ‘ডিজিটাল ভারত’ প্রচারাভিযান নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা হচ্ছে। সম্প্রতি আমি বালি-তে জি-২০ শিখর সম্মেলনে অংশ নিতে যাই। এমন কোনও দেশকে আমি সেখান খুঁজে পাইনি যারা আমার কাছ থেকে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র বিস্তারিত জানতে চায়নি। ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’কে এক সময় বিপথে চালনা করারও চেষ্টা হয়েছে। অতীতে দেশ ‘ডেটা বনাম আটা’ - এই নিয়ে বিতর্কেও জড়িয়েছে এবং টিভি-মিডিয়ার লোকেরা এ নিয়ে খুব আনন্দও করে থাকেন। তাঁরা দুটি শব্দ ব্যবহার করেন – ‘ডেটা চাই না আটা চাই’। জন ধন-আধার-মোবাইল এই ত্রিমূর্তি বন্ধ করতে সংসদ থেকে আদালত, কোনরকম চাতুর্য করতে তাঁরা বাকি রাখেননি। যখন আমি দেশবাসীকে ২০১৬-তে বলি যে আমাদের ব্যাঙ্ক আমাদের হাতের আঙুলের মধ্যে আসবে, তখন তা নিয়ে তাঁরা আমাকে উপহাস করতেও ছাড়েননি। কিছু ছদ্মবেশী বুদ্ধিজীবী আমাকে বলতেন – “মোদীজি আপনি আমাকে বলুন, দরিদ্ররা কি করে আলু এবং টোম্যাটো ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে কিনবেন?” এইসব লোকেরা পরবর্তীকালে কি বলছেন? গরীবদের সৌভাগ্য নির্মাণে আলু আর টোম্যাটোর জায়গা কোথায়। এই জাতীয় মানুষেরা রয়েছেন। তাঁরা এমন কথাও বলেন যে গ্রামে যে মেলা হচ্ছে সেই মেলায় লোকেরা ডিজিটাল মাধ্যমে টাকা মেটাবেন কি করে। আজ আপনারা নিজেরাই প্রত্যক্ষ করুন যে আপনাদের এই ফিল্ম সিটিতে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে লিট্টি-চোখার ঠেলাগাড়িতে পর্যন্ত ডিজিটাল মাধ্যমে টাকা মেটানো যাচ্ছে না যাচ্ছে না। আজ ভারত হল সেই দেশ যেখানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ডিজিটাল লেনদেন সংগঠিত হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
আপনারা হয়তো অবাক হবেন, সরকার কেন এত কাজ করছে এবং তৃণমূলস্তরের মানুষ কি এতে সত্যিই উপকৃত হচ্ছেন? তবে কিছু সংখ্যক মানুষ আছেন যাঁদের মোদীকে নিয়ে সমস্যা রয়েছে এবং গণমাধ্যমেও তা অনুসৃত হয়। তবে এর কারণ কি তা আমি এই রিপাবলিক টিভি-র দর্শকদের বলছি। এই যে রাগ, এই যে ভুল বোঝানো তার কারণ হল মোদী কিছু মানুষের কালো টাকা আয়ের রাস্তাকে বন্ধ করে দিয়েছে। আজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনও মধ্যপন্থা বলে কিছু নেই। এখন সুসংহতভাবে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এর মোকাবিলা করা হচ্ছে। এটাই হল আমাদের দায়বদ্ধতা। এখন আপনারা আমাকে বলুন, যাঁদের এই কালিমালিপ্ত সম্পত্তি উপার্জনের পথ বন্ধ হয়েছে তাঁরা আমাকে গালি ছাড়া আর কি দেবেন? তাঁদের লেখায় খুব স্বাভাবিকভাবেই বিষোদগার প্রদর্শিত হবে। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে জ্যাম ত্রিমূর্তির মাধ্যমে সরকারি প্রকল্পে ১০ কোটি ভুয়ো সুবিধাভোগীকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই সংখ্যাটা কিন্তু খুব কম নয়। এই ১০ কোটি ভুয়ো সুবিধাভোগী, যাদের কোনও অস্তিত্বই নেই, অথচ সরকারি টাকা তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছচ্ছে। আপনারা কল্পনা করুন যে কংগ্রেস সরকার এই টাকা বিপুল পরিমাণ সুবিধাভোগীকে দিচ্ছিল যার পরিমাণ দিল্লি, পাঞ্জাব ও হরিয়ানার জনসংখ্যার থেকেও বেশি। আমাদের সরকার যদি এই ব্যবস্থা থেকে ১০ লক্ষ ভুয়ো নামকে বাদ না দিত তাহলে পরিস্থিতি আরও বেশি খারাপ হতে পারত। বন্ধুরা, এই কাজটা করা কিন্তু খুব সহজ বিষয় নয়। আধারকে আমরা সর্বপ্রথম সাংবিধানিক মর্যাদা দিই। এই লক্ষ্যে ৪৫ কোটিরও বেশি জন ধন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের মাধ্যমে ২৮ লক্ষ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের অর্থ কোনও মধ্যস্বত্বভোগী নেই, কালো টাকা তৈরির কোনও লোক নেই। প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের অর্থ, টাকা তছরূপ এবং কমিশনের পথ বন্ধ। এই একটা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে কয়েক ডজন প্রকল্প এবং কর্মসূচিতে স্বচ্ছতা বিধান করা সম্ভব হয়েছে।
বন্ধুগণ,
দেশের সরকারি সংগ্রহকে দুর্নীতির এক প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হত। এক্ষেত্রেও এখন এক রূপান্তর এসেছে। সরকারি সংগ্রহ এখন জেম-এর মাধ্যমে সরাসরি করা হয়। জেম অর্থাৎ, সরকারি ই-বাজার পোর্টাল। সংবাদপত্রগুলি কর সমস্যা নিয়ে একচেটিয়া লিখে গেছে। তারা এটা কি করল? আমরা এই ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ মুখাবয়নহীন করে দিয়েছি। কর আধিকারিক এবং করদাতার মধ্যে কোনও সরাসরি যোগাযোগ থাকবে না, সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। জিএসটি-র ফলে কালো টাকার ক্ষেত্রগুলি বন্ধ হয়ে গেছে। সৎ কাজ যখন হবে, খুব সহজভাবে কিছু মানুষের তাতে সমস্যা হবে এবং যাঁদের সে সমস্যা হবে, তাঁরা লোককে রাস্তায় গাল-মন্দ করবে। বন্ধুরা, দুর্নীতিগ্রস্তদের এখন কাজের অসুবিধা হচ্ছে। দেশের সৎ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে তাঁরা কসুর করছেন না।
বন্ধুগণ,
তাঁদের লড়াইটা যদি কেবলমাত্র মোদীর সঙ্গে হত তাহলে অনেকদিন আগেই তাঁরা জয়লাভ করতেন। কিন্তু তাঁরা অসৎ কর্মে সফল হতে পারছেন না কারণ তাঁরা জানেন না যে তাঁদের এই লড়াইটা দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে। এই অসৎ মানুষদের জোট যত বড়ই হোক না কেন, তাঁরা যতই একই মঞ্চে অবতীর্ণ হোন না কেন, যতই বংশানুক্রমিক সদস্যরা একই মঞ্চে জড়ো হন, মোদী পিছনে হাঁটার লোক নয়। আমার লড়াই দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের বিরুদ্ধে এবং তা চলবে। আমি এমন একজন লোক যে দেশকে এই সমস্ত অসদাচারের হাত থেকে মুক্ত করার শপথ নিয়েছি। আমি আপনাদের আশীর্বাদ চাই।
বন্ধুগণ,
স্বাধীনতার এই অমৃতকাল আপনাদের সকলের প্রচেষ্টার দিকে তাকিয়ে। প্রত্যেক ভারতবাসীর শৌর্য এবং সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে উন্নত ভারতের স্বপ্ন পূরণ করতে পারব আমরা। আমি স্থির নিশ্চিত, রিপাবলিক নেটওয়ার্ক তাদের এই আবেগকে আরও বেশি শক্তিশালী করে তুলবে। অর্ণব এখন বললেন যে তাঁরা এখন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে চলেছেন। ফলে ভারতের কন্ঠ নতুন শক্তি পাবে। তাঁর প্রতি আমার শুভেচ্ছা রইল। এখন সততার সঙ্গে দিনযাপন করা লোকেদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহান ভারতের ক্ষেত্রে এ এক নিশ্চয়তার বার্তা বহন করে। আমার দেশবাসী এক মহান ভারতের নিশ্চয়তাবাহক। আমি আপনাদেরকে স্থির নিশ্চয়তা দিতে চাই যে আমি এতে বিশ্বাস করি। আরও একবার আপনাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!
প্রধানমন্ত্রী মূল ভাষণটি হিন্দিতে দিয়েছিলেন