হর হর মহাদেব! জয় শ্রী মহাকাল মহারাজের জয়!
মহাকাল মহাদেব, মহাকাল মহাপ্রভু।
মহাকাল মহারুদ্র, মহাকাল নমস্তুতে।।
উজ্জয়িনীর পবিত্র পুণ্যভূমিতে আয়োজিত এই অবিস্মরণীয় কর্মসূচি উপলক্ষে সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাগত মাননীয় সাধু-সন্ন্যাসীগণ, মধ্যপ্রদেশের মাননীয় রাজ্যপাল শ্রী মঙ্গুভাই প্যাটেল, ছত্তিশগড়ের মাননীয় রাজ্যপাল ভগিনী অনুসূয়া উইকেজি, ঝাড়খন্ডের মাননীয় রাজ্যপাল শ্রী রমেশ বৈন্সজী, মধ্যপ্রদেশের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ভাই শিবারজ সিং চৌহানজী, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী বন্ধুগণ, রাজ্য সরকারের মন্ত্রীগণ, বিধায়কগণ, উপস্থিত সাংসদগণ, ভগবান মহাকালের সমস্ত কৃপাধন্য ভক্তজনেরা, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ, জয় মহাকাল!
উজ্জয়িনীর এই প্রাণশক্তি, এই উৎসাহ অবন্তিকার এই আভা, এই অদ্ভুত সৌন্দর্য্য এই আনন্দের উৎস মহাকালের এই মহিমা এই মাহাত্ম। ‘মহাকাল লোক’ – এ লৌকিক কিছুই নেই। শঙ্করের সান্নিধ্যে কোনও কিছুই সাধারণ নয়, সবকিছুই অলৌকিক, অসাধারণ, অবিস্মরণীয় এবং অবিশ্বাস্য। আমি আজ অনুভব করছি যে, আমাদের তপস্যা ও ভক্তি যখন মহাকালকে প্রসন্ন করে, তখন তাঁর আশীর্বাদেই এমনসব অনিন্দ্য সুন্দর স্বরূপ গড়ে ওঠে। আর মহাকালের আশীর্বাদ যখন আমরা পাই, তখন কালের রেখা মিটে যায়, সময়ের সীমা সঙ্কুচিত হয়। আর অনন্তের অখন্ড অবসর প্রস্ফুটিত হয়। অন্ত থেকে অনন্ত যাত্রা শুরু হয়। মহাকাল লোক – এ এই অনিন্দ্যও সময়ের সীমার ঊর্ধ্বে উঠে অনেক প্রজন্মকে অলৌকিক দিব্যতা দর্শন করাবে, ভারতের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক চেতনাকে প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ করে তুলবে। আমি এই অদ্ভুত মুহূর্তে রাজাধিরাজ মহাকালের চরণে শত শত প্রণাম জানাই। আমি আপনাদের সকলকে দেশ ও বিশ্বের সমস্ত মহাকাল ভক্তদের হৃদয় থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। বিশেষ করে, আমি শ্রদ্ধেয় শিবরাজ সিং চৌহান এবং তাঁর সরকারকে হৃদয় থেকে অভিনন্দন জানাই, যাঁরা ক্রমাগত এত সমর্পণভাব নিয়ে এই সেবাযজ্ঞে কাজ করে চলেছেন। পাশাপাশি, আমি মহাকাল মন্দির ট্রাস্টের সঙ্গে যুক্ত সকলকে, সমস্ত সন্ন্যাসী ও বিদ্বানদেরও ধন্যবাদ জানাই – যাঁদের সহযোগিতা আজকের এই আয়োজনকে সফল করে তুলেছে।
বন্ধুগণ,
মহাকালের নগরী উজ্জয়িনী সম্পর্কে আমাদের শাস্ত্রে লেখা রয়েছে ‘প্রলয়ো ন বাধতে তত্র মহাকালপুরী’ অর্থাৎ ‘মহাকালের এই নগরী প্রলয়ের প্রহার থেকেও মুক্ত’। হাজার হাজার বছর আগে যখন ভারতের ভৌগোলিক পরিস্থিতি আজের থেকে ভিন্ন ছিল, তখন থেকে এটা মনে করা হয় যে, উজ্জয়িনীর অবস্থান ভারতের কেন্দ্রস্থলে। একদিক থেকে জ্যোতিষ গণনায় উজ্জয়িনী শুধু ভারতের কেন্দ্র নয়, এটি ভারতের আত্মারও কেন্দ্র। এটি সেই নগর, যা আমাদের পবিত্র ৭টি পুরীর অন্যতম। এটি সেই নগর, যেখানে ভগবান কৃষ্ণ স্বয়ং এসে শিক্ষালাভ করেছিলেন। এই উজ্জয়িনী মহারাজা বিক্রমাদিত্যের সেই প্রতাপ দেখেছে, যিনি ভারতের নতুন সুবর্ণ যুগ শুরু করেছিলেন। উজ্জয়িনীর ইতিহাসের প্রতিটি মুহূর্তে, প্রত্যেক পলে, প্রতিটি ধূলিকণা আধ্যাত্ম সম্পৃক্ত আর প্রতিটি প্রান্তে ঐশ্বরিক প্রাণশক্তি সঞ্চারিত। এখানে কালচক্রের ৮৪টি কল্পের প্রতিনিধিত্ব করে ৮৪টি শিবলিঙ্গ। এখানে রয়েছেন ৪ মহাবীর, ৬ বিনায়ক, ৮ ভৈরব, অষ্ট মাতৃকা, ৯ নবগ্রহ, ১০ বিষ্ণু, ১১ ইন্দ্র, ১২ আদিত্য, ২৪ দেবী আর ৮৮ তীর্থ। এইসবের কেন্দ্রে রাজাধিরাজ কালাধিরাজ, মহাকাল বিরাজমান। অর্থাৎ, একদিক থেকে আমাদের সম্পূর্ণ ব্রহ্মান্ডে প্রাণশক্তিকে আমাদের ঋষি-মুনিরা এই উজ্জয়িনীতে প্রতীক-স্বরূপ স্থাপন করেছেন। সেজন্য উজ্জয়িনী কয়েক হাজার বছর ধরে ভারতের সম্পন্নতা এবং সমৃদ্ধি জ্ঞান ও গরিমার, সভ্যতা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছে। এই নগরী নির্মাণে বাস্তু কেমন ছিল, বৈভব কেমন ছিল, শিল্প কেমন ছিল, সৌন্দর্য্য কী রূপ ছিল, এর দর্শন আমরা পাই মহাকবি কালিদাসের বর্ণনায় ‘মেঘদূতম্’ কাব্য গ্রন্থে। বানভট্টের মতো কবিদের কাব্যে আজও আমরা এখানকার সংস্কৃতি ও পরম্পরার বর্ণনাকে উপভোগ করতে পারি। শুধু তাই নয়, মধ্যযুগের লেখকরাও তাঁদের গ্রন্থাবলিতে এখানকার স্থাপত্য এবং বাস্তুশিল্পের গুণগান করেছেন।
ভাই ও বোনেরা,
কোনও রাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক বৈভব এত বিশাল তখনই হয়ে ওঠে, যখন তার সাফল্যের জয় পতাকা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উড্ডীয়মান হয় আর সাফল্যের শিখর পর্যন্ত পৌঁছতে দেশকে তার সাংস্কৃতিক উৎকর্ষ স্পর্শ করতে হয়, নিজের পরিচয় নিয়ে গর্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হয়। সেজন্য স্বাধীনতার অমৃতকালে আজকের নতুন ভারত দাসত্বের মানসিকতা থেকে মুক্তি আর নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করার জন্য ‘পঞ্চপ্রাণ’ – এর আহ্বান করেছে। সেজন্য আজ অযোধ্যাতে অনিন্দ্য সুন্দর রাম মন্দির নির্মাণ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। কাশীতে বিশ্বনাথ ধাম, ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী গৌরব বৃদ্ধি করছে। সোমনাথে উন্নয়নের কর্মধারা নতুন কীর্তি স্থাপন করছে। উত্তরাখন্ডে বাবা কেদারের আশীর্বাদে কেদারনাথ – বদ্রীনাথ তীর্থ ক্ষেত্রে উন্নয়নের নতুন অধ্যায় লেখা হচ্ছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথমবার চার ধাম প্রকল্পের অধীনে আমাদের চারটি ধামকে ‘অল ওয়েদার রোড’ – এর মাধ্যমে যুক্ত করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার পর প্রথমবার করতারপুর সাহিব করিডর উন্মুক্ত হয়েছে, হেমকুন্ড সাহিবকে রোপওয়ের মাধ্যমে যুক্ত করা হচ্ছে। তেমনই ‘স্বদেশ দর্শন’ এবং ‘প্রসাদ’ যোজনার মাধ্যমে সারা দেশে আমাদের আধ্যাত্মিক চেতনার অনেক কেন্দ্রের গৌরবকে পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে। আর এভাবেই আজ এই অনিন্দ্য সুন্দর ‘মহাকাল লোক’ ও অতীতের গর্ব নিয়ে ভবিষ্যতকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হয়েছে। আজ যখন আমরা উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত, পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত আমাদের প্রাচীন মন্দিরগুলির দিকে তাকাই, তখন তাদের বিশালতা, তাদের বাস্তুশিল্প আমাদের আশ্চর্যচকিত করে তোলে। কোণারকের সূর্য মন্দির থেকে শুরু করে মহারাষ্ট্রের ইলোরার কৈলাশ মন্দির – এই প্রাচীন মন্দিরমালা বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের বিস্মিত করে তোলে। কোণারকের সূর্য মন্দিরের মতোই গুজরাটের মোধেরাতেও সূর্য মন্দির রয়েছে। যেখানে সূর্যের প্রথম কিরণ সরাসরি গর্ভগৃহ পর্যন্ত প্রবেশ করে। একই রকমভাবে তামিলনাডুর তাঞ্জোরে রাজারাজ চোল নির্মিত বৃহদেশ্বর মন্দির কাঞ্চিপুরমের বরদরাজা পেরুমল মন্দির রামেশ্বরমে রামনাথস্বামী মন্দির, বেলুরের চন্নকেশওয়া মন্দির, মাদুরাইয়ের মীনক্ষী মন্দির, তেলেঙ্গায় রামপ্পা মন্দির, শ্রীনগরের শঙ্করাচার্য মন্দিরের মতো কত অসংখ্য অনুপম অতুলনীয় মন্দির রয়েছে, তা কক্লপনাতীত। এগুলি সব ‘ন ভুতো ন ভবিষ্যতি’ – এর জীবন্ত উদাহরণ। এখন যখন আমরা সেই মন্দিরগুলিকে দেখি, তখন ভাবতে বাধ্য হই যে, সেই সময়ে সেই যুগে কোন প্রযুক্তির মাধ্যমে এই অসাধারণ নির্মাণ কার্যগুলি সম্পন্ন হয়েছে। আমরা নিজেদের মনে এই প্রশ্নগুলির উত্তর না পেলেও এই মন্দিরগুলি আধ্যাত্মিক সাংস্কৃতিক বার্তা আমাদের ততটাই স্পষ্টতার সঙ্গে আজও জবাব দিতে থাকে। যখন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমাদের জনগণ এই ঐতিহ্যকে দেখে, এর বার্তাগুলি শোনেন, তখন একটি সভ্যতা রূপে এটি আমাদের নিরন্তরতা এবং অমরতার মাধ্যম হয়ে ওঠে। মহাকাল লোক – এর এই পরম্পরা ততটাই কার্যকর রূপে কলা ও শিল্পের মাধ্যমে উৎকীর্ণ হয়েছে। এই সম্পূর্ণ মন্দির প্রাঙ্গণ শিব পুরাণের বর্ণনার ভিত্তিতে গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে এলে আপনারা মহাকাল দর্শনের পাশাপাশি, মহাকালের মহিমা ও মাহাত্ম্যকেও অনুভব করবেন। পঞ্চমুখী শিব, তাঁর ডমরু, সর্প, ত্রিশূল, অর্ধচন্দ্র এবং সপ্তঋষি তাঁদের মূর্তিকেও ততটাই সুন্দরভাবে গড়ে এখানে স্থাপন করা হয়েছে। এই বাস্তুর সঙ্গে জ্ঞানের এই সমাবেশ এই মহাকাল লোক’কে তার প্রাচীন গৌরবের সঙ্গে যুক্ত করেছে, তার সার্থকতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ভাই ও বোনেরা,
আমাদের শাস্ত্রে বলা হয় ‘শিবম্ জ্ঞানম্’ অর্থাৎ ‘শিবই জ্ঞান’ বা ‘জ্ঞানই শিব’। শিবের দর্শনই ব্রহ্মাণ্ডের সর্বোচ্চ দর্শন। আর দর্শন মানেই শিবের দর্শন। আমি মনে করি, আমাদের জ্যোতির্লিঙ্গগুলির এই বিকাশ ভারতের আধ্যাত্মিক জ্যোতির বিকাশ, ভারতের জ্ঞান এবং দর্শনের বিকাশ। ভারতের এই সাংস্কৃতিক দর্শন আরেকবার শীর্ষে পৌঁছে বিশ্বকে আলোকবর্তিকা দেখাতে প্রস্তুত হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
ভগবান মহাকালই একমাত্র এমন জ্যোতির্লিঙ্গ, যিনি দক্ষিণমুখী। এই শিবের এমন স্বরূপ হওয়ায় তাঁর ভস্ম-আরতী সারা বিশ্বে প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে। প্রত্যেক ভক্ত তাঁর জীবনে অন্তত একবার এই ভস্ম-আরতী দর্শন করতে চান। এই ভস্ম-আরতীর ধার্মিক মাহাত্ম্য এখানে উপস্থিত আপনাদের মতো সাধু-সন্ন্যাসীরা অনেক বেশি গভীরতার সঙ্গে বলতে পারবেন। কিন্তু আমি এই পরম্পরায় আমাদের ভারতের অমরত্ব এবং জীবন্তভাব দর্শন করি। আমি এতে ভারতের অপরাজেয় অস্তিত্বকে অনুভব করি। কারণ, যে শিব ‘সোয়ং ভূতি বিভূষণঃ’ অর্থাৎ, ভস্ম ধারণকারী, তিনিই ‘সর্বাধিপঃ সর্বদা’ও। অর্থাৎ, তিনি অনশ্বর ও অবিনাশীও। সেজন্য যেখানে মহাকাল রয়েছেন, সেই কালখন্ডের সীমা নেই। মহাকালের স্মরণে বিষের মধ্যেও স্পন্দন সৃষ্টি হয়। মহাকালের সান্নিধ্যে সমস্ত অবসানেও পুনরুজ্জীবন সম্ভব। অন্ত থেকেও অনন্তের যাত্রা শুরু হয়। এটিই আমাদের সভ্যতার সেই আধ্যাত্মিক আত্মবিশ্বাস, যার সামর্থে ভারত অনেক হাজার বছর ধরে অজর অমর হয়ে রয়েছে। এখনও পর্যন্ত আমাদের আস্থার এই কেন্দ্রটি জাগ্রত, ভারতের চেতনা জাগ্রত, ভারতের আত্মা জাগ্রত। অতীতে আমরা দেখেছি যে, অনেক প্রচেষ্টা হয়েছে, পরিস্থিতি বদলেছে, শাসন ক্ষমতা বদলেছে, ভারতের শোষণও হয়েছে, দেশ পরাধীনও হয়েছে। ইলতুতমিসের মতো আক্রমণকারীরা উজ্জয়িনীর প্রাণশক্তিকেও নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু, আমাদের ঋষি-মুনিরা বলে গেছেন, ‘চন্দ্রশেখরম্ আশ্রয়ে মম্ কিম করিষ্যতি বৈ যমঃ’? অর্থাৎ, মহাকাল শিবের চরণে এলে মৃত্যুও আমাদের কিছুই করতে পারবে না। আর সেজন্য ভারত তার আস্থার এই প্রামাণ্য কেন্দ্রগুলি প্রাণশক্তি দিয়ে আবার পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। আমরা আরেকবার আমাদের অমরত্বের ধারণাকে তেমনভাবেই বিশ্বব্যাপী তুলে ধরেছি। ভারত আরেকবার মহাকালের আশীর্বাদে কালের কপালে কালাতীত অস্তিত্বের শিলালিপি লিখে দিয়েছে। আজ আরেকবার স্বাধীনতার এই অমৃতকালে অজর অমর অবন্তিকা ভারতের সাংস্কৃতিক অমরত্বের ঘোষণা করছে। হাজার হাজার বছর ধরে উজ্জয়িনী যেভাবে ভারতীয় কাল গণনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল, সেটি আজ আরেকবার ভারতের অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে ওঠার একটি নতুন কালখন্ড ঘোষণা করছে।
বন্ধুগণ,
ভারতের জন্য ধর্মের অর্থ হ’ল – নিজেদের কর্তব্যগুলির সামগ্রিক সংকল্প। আমাদের সংকল্পগুলির উদ্দেশ্য হ’ল – বিশ্ব কল্যাণ এবং প্রত্যেক মানুষের সেবা। আমরা শিবের আরাধনাতেও বলি – ‘নমামি বিশ্বস্য হিতে রতম্ তম, নমামি রূপাণি বহুনি ধত্তে’ অর্থাৎ আমরা সেই বিশ্বপতি ভগবান শিবকে প্রণাম জানাই, যিনি অনেক রূপে গোটা বিশ্বের হিতে কাজ করে চলেছেন। এই ভবনা সর্বদা ভারতের সমস্ত তীর্থস্থল, মন্দির, মঠ এবং আস্থা কেন্দ্রগুলিতেও বিরাজমান। এখানে এই মহাকাল মন্দিরে গোটা দেশ ও বিশ্বের মানুষ আসেন। এখানে আয়োজিত হয় সিংহস্ত কুম্ভমেলা। সেই মেলায় লক্ষ লক্ষ মানুষ আসেন। অসংখ্য বৈচিত্র্যের মধ্যেও ঐক্যের মন্ত্র। এক সংকল্প নিয়ে একসঙ্গে যুক্ত হন। এরচেয়ে বড় উদাহরণ আর কি হতে পারে। আমরা জানি যে, কয়েক হাজার বছর ধরে আমাদের কুম্ভমেলার পরম্পরা শুরু হয়েছে। অত্যন্ত সামগ্রিক মন্থনের পর যে অমৃত বেরিয়ে আসে, তা থেকে সংকল্প নিয়ে ১২ বছর পর্যন্ত তাকে ক্রিয়ান্বিত করার পরম্পরা ছিল। আবার ১২ বছর পর যখন কুম্ভ হয়, তখন আরেকবার অমৃত মন্থন হয়। আরেকবার সংকল্প নেওয়া হয়। এরপর, ১২ বছরের জন্য সবাই বেরিয়ে পড়েন। বিগত সিংহস্ত কুম্ভে আমার এখানে আসার সৌভাগ্য হয়েছে। মহাকাল ডাকলে তাঁর এই সন্তান কিভাবে না এসে থাকবে! সেই সময় কুম্ভে যে কয়েক হাজার বছরের পুরনো পরম্পরা, সেই সম্পর্কে আমার মন ও মস্তিষ্কে যত মন্থন চলছিল, যত ভাবনা প্রবাহ চলছিল, মা শিপ্রার তটভূমিতে অনেক ভাবনা দিয়ে আমি বেষ্টিত ছিলাম। তখনই মনে হ’ল – কিছু শব্দ এসে গেছে। নাজানি কোথা থেকে এসেছে, কিভাবে এসেছে। কিন্তু, তা থেকে আমার মনে এমন একটা পবিত্র ভাব জেগে উঠেছিল, যা সংকল্পে পরিণত হয়েছিল। আজ সেই সংকল্পকে আমরা আমাদের সামনে সৃষ্টি রূপে দেখতে পাচ্ছি বন্ধুগণ। যাঁরা সেই সময় আমার মনের সেই ইচ্ছেকে চরিতার্থ করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে তা বাস্তবায়িত করে দেখিয়েছেন, সেই বন্ধুদের আমি অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। তাঁদের সকলের মনে শিব ও শিবত্বের জন্য সমর্পণ, সবার মনে মা শিপ্রার জন্য শ্রদ্ধা, জীব এবং প্রকৃতির জন্য সংবেদনশীলতাই এত বড় জনসমাগমকে বাস্তবায়িত করেছে। বিশ্বহিতের জন্য কত না কাজ করার প্রেরণা আমরা এখান থেকে পেতে পারি!
ভাই ও বোনেরা,
আমাদের এই তীর্থগুলি শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরে দেশকে বার্তা ও সামর্থ দিয়েছে। কাশীর মতো আমাদের আস্থার কেন্দ্র, ধর্মের পাশাপাশি, জ্ঞান, দর্শন এবং শিল্পকলারও রাজধানী ছিল। আমাদের উজ্জয়িনী নগরী তেমনই ভূ-বিজ্ঞান, মহাকাশ বিদ্যার বড় বড় গবেষণার শীর্ষ কেন্দ্র ছিল। আজ যখন নতুন ভারত তার প্রাচীন মূল্যগুলি নিয়ে এগিয়ে চলেছে। তখন আস্থার পাশাপাশি, বিজ্ঞান ও গবেষণার পরম্পরাকেও পুনরুজ্জীবিত করে তুলছে। আজ আমরা মহাকাশ বিদ্যায় বিশ্বের বড় বড় শক্তির সমকক্ষ হয়ে উঠেছি। আজ ভারত অন্যান্য দেশের মহাকাশ যানকেও মহাকাশে উৎক্ষেপণ করছে। মিশন চন্দ্রযান ও মিশন গগনযানের মতো অভিযানের মাধ্যমে ভারত মহাকাশে সেই সাফল্যগুলি অর্জনের জন্য প্রস্তুত, যেগুলি আমাদের নতুন নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে। আজ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও ভারত সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে আত্মনির্ভরতার দিকে এগিয়ে চলেছে। তেমনই আজ আমাদের নবীন প্রজন্ম, দক্ষতা উন্নয়ন, ক্রীড়া, স্টার্টআপ এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে নতুন নতুন স্টার্টআপ নিয়ে, নতুন নতুন ইউনিকর্ন গঠন করে প্রত্যেক ক্ষেত্রে ভারতের প্রতিভার দামামা বাজাচ্ছে।
ভাই ও বোনেরা,
আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে, যেখানে উদ্ভাবন রয়েছে, সেখানে পুনর্নির্মাণও রয়েছে। আমরা দাসত্বের কালখন্ডে যা যা হারিয়েছি, আজ ভারত তা পুনরুদ্ধার করছে। পুনর্নির্মাণ করছে নিজেদের গৌরবের, পুনঃস্থাপন করছে নিজেদের বৈভবের। আর এর মাধ্যমে শুধু ভারতের জনগণ নয়, মহাকালের চরণে বসে থাকা বন্ধুগণ বিশ্বাস করুন, এর দ্বারা সমগ্র বিশ্ব তথা মানবতা লাভবান হবে। মহাকালের আশীর্বাদে ভারতের অনিন্দ্যতাকে গোটা বিশ্বের জন্য বিকশিত করতে নতুন নতুন সম্ভাবনার জন্ম নেবে। ভারতের দিব্যতা গোটা বিশ্বের জন্য শান্তির পথ প্রশস্ত করবে – এই বিশ্বাস নিয়ে আরেকবার ভগবান মহাকালের চরণে মাথানত করে প্রণাম জানাই। আমার সঙ্গে সম্পূর্ণ ভক্তিভাব নিয়ে বলে উঠুন – জয় মহাকাল! জয় জয় মহাকাল, জয় জয় মহাকাল, জয় জয় মহাকাল, জয় জয় মহাকাল, জয় জয় মহাকাল, জয় জয় মহাকাল, জয় জয় মহাকাল।