ভারতমাতার জয়!
ভারতমাতার জয়!
সকল কর্ণাটকবাসীকে জানাই আমার আন্তরিক অভিনন্দন!
মঞ্চে উপবিষ্ট পূজ্য স্বামীজি, কর্ণাটকের রাজ্যপাল শ্রী থাওয়ার চাঁদ গেহলটজি, রাজ্যের লোকপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বাসবরাজ বোম্মাইজি, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ইয়েদুরাপ্পা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মীবৃন্দ, রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রীগণ, সাংসদ, বিধায়ক, অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং এখানে বিরাট সংখ্যায় সমবেত আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা।
আজ এই বিশেষ দিনটিতে বেঙ্গালুরুতে আসার সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত। কর্ণাটকের দুই কৃতী সন্তানের আজ জন্মবার্ষিকী। সন্ত কনক দাসজি আমাদের সমাজে পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। অন্যদিকে, ওনাকে অবাভভাজি দেশের গর্ব ও সংস্কৃতির সংরক্ষণে কাজ করে গেছেন। এই দুই ব্যক্তিত্বের উদ্দেশে আমি আরও একবার প্রণাম জানাই।
বন্ধুগণ,
এই মহানুভবদের শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানোর এই শুভক্ষণে কর্ণাটক তথা বেঙ্গালুরুর ঐতিহ্য রক্ষায় এবং উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করে তুলতে আমরা বর্তমানে বিশেষভাবে সচেষ্ট হয়েছি। আজ কর্ণাটকে সূচনা হল ভারতেই নির্মিত ‘বন্দে ভারত’ ট্রেনের। এই ট্রেনটি সংযোগ রক্ষা করবে স্টার্ট-আপ-এর রাজধানী নগরী হিসেবে খ্যাত বেঙ্গালুরুর সঙ্গে চেন্নাই ও ঐতিহ্য নগরী মাইসুরুর। ‘ভারত গৌরব কাশী দর্শন’ ট্রেনটিতে কর্ণাটকের যাত্রীরা অযোধ্যা, প্রয়াগরাজ ও কাশী পরিদর্শনের সুযোগ লাভ করবেন। এই ট্রেনটিও আজ থেকে চালু হল। সেইসঙ্গে আজ উদ্বোধন হল কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দ্বিতীয় টার্মিনালটির। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বিমানবন্দরের কিছু ছবিও আমি সকলের সামনে তুলে ধরেছিলাম। কিন্তু আজ যখন আমি বিমানবন্দরটি পরিদর্শন করলাম, তখন অনুভব করলাম যে নির্মিত এই নতুন টার্মিনালটি ছবির থেকেও বাস্তবে আরও অনেক বেশি সুন্দর, আরও আধুনিক এবং আরও নয়নাভিরাম। এই বিমানবন্দরটির জন্য বেঙ্গালুরুবাসী বহুদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাঁদের সেই দাবি আমাদের সরকার আজ পূরণ করল।
বন্ধুগণ,
নাদপ্রভু কেম্পেগৌড়াজির ১০৮ ফুট দীর্ঘ মূর্তিটির আবরণ উন্মোচনের সুযোগও আমি আজ গ্রহণ করেছি। সেইসঙ্গে, তাঁর ‘জলাভিষেক’ অনুষ্ঠানও সম্পন্ন করলাম। নাদপ্রভু কেম্পেগৌড়ার এই বিশাল মূর্তিটি আমাদের নিরলসভাবে এবং ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা নিয়ে কাজ করে যাওয়ার আগ্রহকে অনুপ্রাণিত করবে। বেঙ্গালুরু তথা সারা দেশের স্বার্থেই এই কাজে আমরা উদ্বুদ্ধ হব।
ভাই ও বোনেরা,
পূজ্য স্বামীজির আশীর্বাদ আমাদের ওপর বর্ষিত হয়েছে। তিনি আন্তরিকভাবেই তাঁর আবেগ আমাদের সামনে প্রকাশ করেছেন। এজন্য তাঁকে জানাই আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
বন্ধুগণ,
ভারত বর্তমানে তার স্টার্ট-আপ কর্মসূচির জন্য সমগ্র বিশ্বেই স্বীকৃতি লাভ করেছে। ভারতের এই পরিচিতিকে সুদৃঢ় করার পেছনে বেঙ্গালুরুর এক বিরাট ভূমিকাও রয়েছে। স্টার্ট-আপ হল কতকগুলি সংস্থা মাত্র নয়, বরং স্টার্ট-আপ হল নতুন কিছু চিন্তা করার এবং নতুন কিছু করে দেখানোর এক বিশেষ আবেগ যা সাধারণ প্রচেষ্টার থেকেও আরও গভীর। স্টার্ট-আপ হল এক ধরনের আস্থা ও বিশ্বাস যা দেশের সামনে উপস্থিত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সমাধানসূত্র খুঁজে বের করে। তাই বেঙ্গালুরুর রয়েছে স্টার্ট-আপ গড়ে তোলার শক্তি ও দক্ষতা যা ভারতকে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের থেকে এক বিশেষ স্বাতন্ত্র্য এনে দিয়েছে।
ভাই ও বোনেরা,
আজকের এই কর্মসূচিগুলির মধ্য দিয়ে বেঙ্গালুরুর নতুন নতুন শক্তির প্রতিফলন ঘটেছে। আজ যে ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’ ট্রেনটির এখানে সূচনা হল তা শুধুমাত্র একটি নতুন ট্রেনই নয়, বরং তা হল নতুন ভারতের এক নতুন পরিচিতি। একুশ শতকে ভারতীয় রেল কোন মাত্রায় উন্নীত হতে চলেছে তারই এক ঝলক পরিচয় পাওয়া যায় এই ট্রেনটিতে। ভারত যে অচলাবস্থার দিনগুলি কাটিয়ে উঠতে পেরেছে তারই একটি প্রতীক হল এই ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’। ভারত এখন দ্রুততার সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে চলতে আগ্রহী। এই লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য সম্ভাব্য সকল রকমভাবেই আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বন্ধুগণ,
আগামী ৮-১০ বছরের মধ্যে ভারতীয় রেলকে এক রূপান্তর প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য। চারশোরও বেশি নতুন ‘বন্দে ভারত’ ট্রেন এবং ভিস্টাডোম কোচ ভারতীয় রেলের এক নতুন পরিচয় বহন করবে। ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের মাধ্যমে পরিবহণের গতি যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনই সাশ্রয় ঘটবে সময়ের। রেল মানচিত্রে আরও নতুন নতুন অঞ্চলকে রূপান্তর প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে ব্রডগেজ রেলপথের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এই ব্যাপক কর্মপ্রচেষ্টার মধ্যে আবার দেশের রেল স্টেশনগুলিকেও আরও আধুনিক করে গড়ে তোলা হচ্ছে। এখন যদি আপনারা বেঙ্গালুরুর স্যার এম বিশ্বেশ্বরাজি রেল স্টেশনে যান তাহলে আপনারা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের এক অনুভূতি লাভ করবেন। এইভাবেই দেশের বড় বড় রেল স্টেশনগুলিকে আরও আধুনিক করে গড়ে তোলার লক্ষ্য আমরা স্থির করেছি। এরই ফলশ্রুতি হিসেবে কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু ক্যান্টনমেন্ট এবং যশবন্তপুর রেল স্টেশন দুটিকে আরও নতুন করে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
দেশের শহরগুলির মধ্যে সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রসারের মধ্য দিয়ে উত্থান ঘটবে এক উন্নত ভারতের। এই মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন দেশের বিমানবন্দরগুলির সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা ছড়িয়ে দেওয়া। বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালটিতে যাত্রী সাধারণের জন্য নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধার প্রসার ঘটানো হয়েছে। আকাশপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভারতের বাণিজ্যিক প্রচেষ্টা এখন বিশ্বের মধ্যে বৃহত্তম। দেশ যেমন ক্রমশ অগ্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে, দেশের বিমানবন্দরগুলির যাত্রী সংখ্যাও তেমনই উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই চাহিদার কথা স্মরণ করেই দেশজুড়ে নতুন নতুন বিমানবন্দর তৈরির কাজে আমরা হাত দিয়েছি। ২০১৪ সালের আগে পর্যন্ত দেশে বিমানবন্দরের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭০টি, কিন্তু বর্তমানে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪০-এরও বেশি। অর্থাৎ, অঙ্কের হিসেবে যা কিনা দ্বিগুণ। নতুন নতুন বিমানবন্দর স্থাপিত হওয়ার ফলে শহরগুলিতে বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে এবং এই পথ ধরে দেশের তরুণ ও যুবকদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে আরও নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধার।
বন্ধুগণ,
ভারতে বিনিয়োগ করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন উন্মুখ। ভারতের ওপর অভূতপূর্ব এই আস্থা ও বিশ্বাসের বাতাবরণে উপকৃত হচ্ছে কর্ণাটক রাজ্যটিও। গত তিন বছরে কর্ণাটকে বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৪ লক্ষ কোটি টাকা। এটি সম্ভব হয়েছে এমনই একটি সময়কালে যখন সমগ্র বিশ্বকেই কোভিডের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে। গত বছর প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর্ণাটক ভারতকে পথ দেখিয়েছে। এই বিনিয়োগ শুধুমাত্র তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না। জীবপ্রযুক্তি থেকে প্রতিরক্ষা উৎপাদন সহ প্রায় সবক’টি ক্ষেত্রেই বিনিয়োগের প্রসার ঘটেছে। দেশের বিমান ও মহাকাশযান শিল্পে কর্ণাটকের অংশীদারিত্বের মাত্রা বর্তমানে ২৫ শতাংশ। দেশের সেনাবাহিনীর জন্য প্রায় ৭০ শতাংশ বিমান ও হেলিকপ্টার উৎপাদিত হয় এই রাজ্যটিতে। এমনকি, বৈদ্যুতিক যান নির্মাণের ক্ষেত্রেও কর্ণাটক এখন অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। ‘ফরচুন’ বলে চিহ্নিত ৫০০টি সংস্থার মধ্যে ৪০০টিরও বেশি এখন কর্মপরিচালনার স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে কর্ণাটককে। এই তালিকা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে উত্তরোত্তর। সবকিছুই সম্ভব হয়ে উঠেছে এই কারণে যে এখন কর্ণাটকের নেতৃত্বে রয়েছে এক ডবল ইঞ্জিন সরকার।
ভাই ও বোনেরা,
সরকারি প্রশাসন ও পরিচালন, ব্যবহারিক ও ডিজিটাল পরিকাঠামো নির্মাণ – প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারত কাজ করে চলেছে স্বতন্ত্র এক নতুন মাত্রায়। ভারতের নিজস্ব ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা - ‘ভিম ইউপিআই’-এর কার্যকারিতায় বিস্মিত বিশ্বের অন্যান্য দেশ। আজ থেকে আট বছর আগে এই ধরনের পরিস্থিতির কথা কখনও কল্পনায় আসেনি। সেই সময় মানুষের চিন্তাভাবনার মধ্যেই ছিল না যে ভারতের নিজস্ব ৫জি প্রযুক্তি চালু হবে সারা দেশে। এই সমস্ত উদ্যোগ ও সম্ভাবনার পেছনে এক বড় ভূমিকা পালন করেছে বেঙ্গালুরুর তরুণ পেশাদাররা। ২০১৪ সালের আগে ভারতে এই ধরনের প্রচেষ্টার কথা কল্পনাই করা যেত না কারণ, পূর্ববর্তী সরকারগুলির সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল প্রাচীন মান্ধাতা আমলের। তাদের কাছে গতি ছিল এক ধরনের বিলাসিতা মাত্র। উন্নয়নকে তারা একটি ঝুঁকি বলেই মনে করত। এই ধারণার আমরা আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছি। গতিকে আমরা মনে করি ভারতের আশা-আকাঙ্ক্ষার এক বিশেষ প্রতীক। অন্যদিকে, উত্তরোত্তর অগ্রগতির বিষয়টিকে আমরা মনে করি ভারতের এক বিশেষ শক্তি। সুতরাং, ‘প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি জাতীয় মাস্টার প্ল্যান’-এর আওতায় দেশে আজ নতুন নতুন পরিকাঠামো গড়ে উঠছে। অতীতে আমরা লক্ষ্য করেছি যে পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজটি সমন্বয়ের অভাবে হয়ে উঠেছিল একটি বড় ধরনের সমস্যা। দপ্তর এবং এজেন্সির সংখ্যা যত বৃদ্ধি পাবে, ততই বিলম্ব ঘটবে নির্মাণ সংক্রান্ত কর্মসূচির। এই দিকটির লক্ষ্য রেখে প্রতিটি বিষয়কে একটিমাত্র মঞ্চের আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করেছিলাম। ‘প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি জাতীয় মাস্টার প্ল্যান’-এর আওতায় বর্তমানে ১,৫০০-রও বেশি স্তর ও পর্যায়কে আমরা সরাসরি এজেন্সিগুলির সঙ্গে যুক্ত করতে পেরেছি। কেন্দ্র ও রাজ্যস্তরের অনেকগুলি মন্ত্রক ও দপ্তরই এই মঞ্চে যোগ দিয়েছে। ‘জাতীয় পরিকাঠামো পাইপলাইন’-এর আওতায় ১১০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা আমাদের রয়েছে। বহু উদ্দেশ্যসাধক পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজে দেশ এখন তার সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। কারণ আমাদের লক্ষ্য হল প্রতিটি পরিবহণ মাধ্যম যেন পরস্পরের সঙ্গে কাজের সূত্রে যুক্ত থাকে এবং একে অপরের সহযোগী হয়ে ওঠে। কিছুদিন আগে দেশে সূচনা হয়েছে ‘জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি’র। এই নীতির আওতায় পরিবহণ ব্যয় যেমন হ্রাস পাবে, অন্যদিকে তেমনই পরিবহণ ব্যবস্থা ও পদ্ধতি হয়ে উঠবে আরও উদ্ভাবনী।
বন্ধুগণ,
ভারতকে এক উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে আমাদের প্রয়োজন ব্যবহারিক পরিকাঠামোর প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে দেশের সামাজিক পরিকাঠামোকেও আরও শক্তিশালী করে তোলা। একথা জেনে আমি খুবই আনন্দিত যে কর্ণাটকের ডবল ইঞ্জিন সরকার সমান গুরুত্ব দিয়েছে সামাজিক পরিকাঠামোর প্রসারেও। গত আট বছরে দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে প্রায় ৩.৫ কোটি বাসস্থান। কর্ণাটক রাজ্যটিতেও দরিদ্র মানুষের কল্যাণে মঞ্জুর করা হয়েছে ৮ লক্ষ পাকা বাড়ি তৈরির নির্মাণ প্রকল্প। ‘জল জীবন মিশন’-এর আওতায় সারা দেশে পাইপলাইনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ জলের সুযোগ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ৭ কোটি গৃহস্থ বাড়িতে। কর্ণাটক রাজ্যটিতে এই প্রথম ৩০ লক্ষেরও বেশি গ্রামীণ বাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ শুরু হয়েছে। ‘আয়ুষ্মান ভারত’ কর্মসূচির আওতায় দেশের ৪ কোটি দরিদ্র মানুষ হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগ লাভ করেছেন। কর্ণাটকের ৩০ লক্ষেরও বেশি দরিদ্র রোগী উপকৃত হয়েছেন এই কর্মসূচির আওতায়। আমি আনন্দিত যে আমাদের মা-বোনেরা এবং কন্যাসন্তানরা এই সুযোগ-সুবিধাগুলির সুফলগ্রহীতা তথা বৃহত্তম অংশীদার।
ভাই ও বোনেরা,
দেশের ক্ষুদ্র কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, মৎস্যজীবী এবং ফুটপাতের হকার ও দোকানদাররা এই প্রথম দেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টার মূলস্রোতের অংশ হয়ে উঠতে পেরেছেন। ‘প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি’র আওতায় ১০ কোটিরও বেশি কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে হস্তান্তরিত হয়েছে প্রায় ২.২৫ লক্ষ কোটি টাকা। এই কর্মসূচির আওতায় কর্ণাটকের ৫০ লক্ষেরও বেশি ক্ষুদ্র কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে হস্তান্তরিত হয়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। ‘প্রধানমন্ত্রী স্বনিধি কর্মসূচি’র আওতায় দেশের ৪০ লক্ষেরও বেশি ফুটপাতের হকার ও দোকানদাররা আর্থিক সহায়তা লাভ করেছেন। কর্ণাটকে এই কর্মসূচির আওতায় উপকৃত হয়েছেন ২ লক্ষেরও বেশি ফুটপাতের হকার ও দোকানদার।
বন্ধুগণ,
এ বছর ১৫ আগস্ট লালকেল্লার প্রাকার থেকে ভাষণদানকালে দেশের ঐতিহ্যে গর্বিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে আমি আলোচনা করেছিলাম। আমাদের ঐতিহ্য একইসঙ্গে সাংস্কৃতিক তথা আধ্যাত্মিক। ‘ভারত গৌরব রেল যাত্রা’র মধ্য দিয়ে ভারতের বিভিন্ন ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক স্থানে যাতায়াত আরও সুগম হয়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ কর্মসূচির শক্তি সুদৃঢ় হয়ে উঠেছে। বর্তমান বছরে এ পর্যন্ত এই ট্রেনের মাধ্যমে নয়টি যাত্রাসূচির আয়োজন করা হয়। শিরডি মন্দির যাত্রা, শ্রী রামায়ণ যাত্রা অথবা দিব্য কাশী যাত্রা – প্রতিটি যাত্রাসূচিতেই যাত্রীরা এক অনাস্বাদিতপূর্ব অভিজ্ঞতার শরিক হয়েছেন। আজ সূচনা হল কর্ণাটক থেকে কাশী, অযোধ্যা ও প্রয়াগরাজ ভ্রমণের যাত্রাসূচি। এর মাধ্যমে কর্ণাটকবাসী কাশী ও অযোধ্যা পরিদর্শনের সুযোগ লাভ করবেন।
ভাই ও বোনেরা,
ভগবত-ভক্তি এবং সামাজিক ক্ষমতা – এই দুটির সঙ্গে সমাজকে কিভাবে যুক্ত করা যেতে পারে, সেই শিক্ষা ও প্রেরণা আমরা লাভ করেছি সন্ত কনক দাসজির কাছ থেকে। একদিকে তিনি যেমন ‘কৃষ্ণ-ভক্তি’র পথ বেছে নিয়েছিলেন, অন্যদিকে তেমনই বর্ণে বর্ণে বৈষম্য দূর করার বার্তাও তিনি দিয়েছিলেন। মিলেট, অর্থাৎ এক ধরনের দানাশস্যের উপকারিতার বিষয়টি আজ সারা বিশ্বেই এক আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সন্ত কনক দাসজি তাঁর সময়কালেই এর গুরুত্ব সকলের সামনে তুলে ধরেছিলেন। ‘রাম ধন্য চরিত’ নামে একটি গ্রন্থও তিনি রচনা করে গেছেন। কর্ণাটকের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় খাদ্যশস্য মিলেটের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে সামাজিক অসাম্য দূর করার তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ভাই ও বোনেরা,
নাদপ্রভু কেম্পেগৌড়াজির চিন্তাদর্শকে অনুসরণ করে বেঙ্গালুরু শহরটিকে আরও নতুনভাবে গড়ে তুলতে আমরা সচেষ্ট হয়েছি। এই শহরটি কেম্পেগৌড়াজির কাছে অনেকাংশেই ঋণী। এই শহরটির পত্তনকালে তিনি যেভাবে এ সম্পর্কে যত্নবান হয়েছিলেন, সেই কাহিনী যেমন বিস্ময়কর, তেমনই অতুলনীয়। বহু শতাব্দী আগেই বেঙ্গালুরুবাসীর জন্য বাণিজ্য, সংস্কৃতি এবং সুযোগ-সুবিধা প্রসারের এক পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন। তাঁর সেই দূরদৃষ্টির সুফল আজও ভোগ করে চলেছেন বেঙ্গালুরুর অধিবাসীরা। বর্তমান যুগে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি-প্রকৃতি হয়তো অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু ‘পেতে’ এখনও বেঙ্গালুরুর একটি বাণিজ্যিক জীবনরেখা হিসেবে অক্ষুণ্ণ রয়েছে। বেঙ্গালুরুর সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির জন্য নাদপ্রভু কেম্পেগৌড়া এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। বিখ্যাত গাভী-গঙ্গাধরেশ্বর মন্দির কিংবা বাসবনগুড়ি মন্দির – যাই হোক না কেন, বেঙ্গালুরুর সাংস্কৃতিক চেতনাকে চিরকালের জন্য সজীব ও সপ্রাণ রেখে গেছেন কেম্পেগৌড়াজি। এই শহরটিতে বসবাস যেভাবে স্বতন্ত্র এবং তুলনাহীন হয়ে উঠেছে তার জন্য বেঙ্গালুরুবাসী কেম্পেগৌড়াজির কাছে সর্বদাই ঋণী হয়ে থাকবেন।
বন্ধুগণ,
বেঙ্গালুরু আজ হল এক আন্তর্জাতিক নগরী। আধুনিক পরিকাঠামো দিয়ে এই শহরকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলতে হবে। সংরক্ষণ করতে হবে আমাদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের। ‘সবকা প্রয়াস’ অর্থাৎ, সমবেত প্রচেষ্টার মধ্য দিয়েই এর বাস্তবায়ন সম্ভব। আমি আরও একবার নতুন নতুন প্রকল্পগুলির জন্য আপনাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সর্বজনশ্রদ্ধেয় সন্তদের প্রতি জানাই আমার কৃতজ্ঞতা। তাঁরা আজ এখানে উপস্থিত রয়েছেন আমাদের আশীর্বাদ করার জন্য। উৎসাহী ও উদ্যোগী তরুণ ও যুবক, মা ও বোনেরা এবং কর্ণাটকের কৃষকরা যাঁরা দূরদুরান্ত থেকে এক বিরাট সংখ্যায় এখানে সমবেত হয়েছেন আমাদের আশীর্বাদ করার জন্য, তাঁদের সকলকেও জানাই আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
ধন্যবাদ!