“দ্রুত উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে সরকার এই বাজেটে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে”
“এমএসএমই-কে শক্তিশালী করতে আমরা অনেকগুলি মৌলিক সংস্কারসাধন করেছি এবং নতুন নতুন প্রকল্পের সূচনা করেছি। এই সংস্কারগুলির সাফল্য তাদের শক্তিশালী আর্থিক সংস্থানের উপর নির্ভরশীল”
“আমাদের আর্থিক ক্ষেত্রকে উদ্ভাবনমূলক অর্থের সংস্থান এবং ভবিষ্যৎ চাহিদার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বিভিন্ন উদ্ভাবন সংক্রান্ত স্থিতিশীল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে”
“প্রাকৃতিক ও জৈব চাষের সঙ্গে ভারতের উচ্চাকাঙ্খা যুক্ত রয়েছে”
“পরিবেশ-বান্ধব প্রকল্পগুলির কাজে গতি আনা জরুরি। পরিবেশ-বান্ধব অর্থ সংস্থানের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বাস্তবায়ন সহ নতুন নতুন দিকগুলির বিষয়ে ভাবনাচিন্তার সময় এসেছে”

নমস্কারজি!

আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সকল সঙ্গী, ফিনান্স এবং ইকনমির সঙ্গে যুক্ত সমস্ত বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!

সবার আগে আপনাদের সবাইকে আন্তর্জাতিক মহিলা দিবস উপলক্ষে অনেক অনেক শুভকামনা। এটি অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে আমরা যখন আজ দেশের বাজেটের প্রেক্ষিতে আলোচনা করছি, তখন ভারতের মতো বিশাল দেশের অর্থমন্ত্রীও একজন মহিলা, যিনি এবার দেশকে অত্যন্ত প্রগতিশীল বাজেট উপহার দিয়েছেন।

বন্ধুগণ,

গত ১০০ বছরের সবচাইতে বড় মহামারীর মধ্যেও ভারতের অর্থনীতি আরও একবার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে চলেছে। এটা আমাদের সরকারের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলি এবং আমাদের দেশের অর্থনীতির শক্তিশালী ভিত্তির প্রতিবিম্ব। এবারের বাজেটে সরকার দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধির এই মোমেন্টাম বা দ্রুত গতি বজায় রাখার জন্য অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ‘ফরেন ক্যাপিটাল ফ্লো’ বা এক কথায় বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট’ বা পরিকাঠামোগত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে করের হার কম করে, এনআইআইএফ, গিফট সিটি এবং নতুন নতুন ডিএফআই-এর মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে আমরা দেশের ‘ফিনান্সিয়াল ইকনমি গ্রোথ’কে দ্রুত গতি প্রদানের চেষ্টা করেছি। ফাইনান্সের ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার ক্ষেত্রে দেশের দায়বদ্ধতা এখন পরবর্তী পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। ৭৫টি জেলায় ৭৫টি ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং ইউনিট চালু করা থেকে শুরু করে ‘সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সি’ প্রবর্তন – এগুলি আমাদের দূরদৃষ্টিকে প্রতিবিম্বিত করে।

বন্ধুগণ,

একবিংশ শতাব্দীর ভারতের উন্নয়নকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের নিজেদের সমস্ত অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে ‘ফিনান্সিয়াল ভায়াবেল মডেল’গুলিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আজ দেশের যত প্রত্যাশা, দেশ যে উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলি নিয়ে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত, যে দিশায় এগিয়ে যেতে চায়, দেশের যত অগ্রাধিকার রয়েছে – এইসব ক্ষেত্রে আমাদের জন্য ‘ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন’বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির অংশীদারিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজ দেশে আমরা ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’ শুরু করেছি। আমাদের দেশের নির্ভরতা যেন অন্য দেশের ওপর না থাকে, এই বিষয়টি লক্ষ্য রেখে প্রকল্পগুলির ফাইন্যান্সিংকে কিভাবে নানা ধরনের মডেলে তৈরি করা যেতে পারে, এ সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা ও মন্থন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এর একটি উদাহরণ – ‘প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান’। এর সঙ্গে প্রকল্পগুলির সাফল্যে আপনাদের মুখ্য ভূমিকা রয়েছে। দেশের ভারসাম্যপূর্ণ বিকাশের লক্ষ্যে ভারত সরকারের যত প্রকল্প যেমন – ‘অ্যাসপিরেশনাল ডিস্ট্রিক্টস প্রোগ্রাম’বা উন্নয়নে আগ্রহী জেলাগুলির উন্নয়ন প্রকল্প - যাতে দেশের ১০০টিরও বেশি জেলাকে বেছে নেওয়া হয়েছে, যেগুলি তাদের রাজ্যের গড় উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে রয়েছে …। তো আমি যা বলছিলাম! আমাদের এই ‘ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন’ বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি; এগুলির সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট যে কোনও প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা আমাদের এই ‘অ্যাসপিরেশনাল ডিস্ট্রিক্ট’গুলি, যে জেলাগুলি পিছিয়ে আছে, সেগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলতে পারি। তেমনই আমাদের দেশের, যদি অর্থনৈতিক দৃষ্টি থেকে দেখি, তাহলে দেখব যে আমাদের পশ্চিম ভারতে অনেক অর্থনৈতিক গতিবিধি দেখা যায়। কিন্তু তুলনামূলকভাবে পূর্ব ভারতে সমস্ত রকম প্রাকৃতিক উৎস থাকা সত্ত্বেও আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিকাঠামো অনেক উন্নত করা যেতে পারে। আমাদের পূর্ব ভারতের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে। একইরকমভাবে আমি গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের কথা বলব, সেখানকার উন্নয়নের কথা বলব। ওই এলাকার ভৌগোলিক পরিস্থিতির দিকে যদি আমরা তাকাই, আমাদের এই রাজ্যগুলিকে অগ্রাধিকার দিতেই হবে। এই রাজ্যগুলিতে আপনাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে চিন্তাভাবনা করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আজ ভারতের যত প্রত্যাশা আমাদের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির শক্তিশালী হয়ে ওঠার সঙ্গে জড়িত। সেজন্য দেশের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলিকে শক্তিশালী করে তুলতে আমরা অনেক ‘ফান্ডামেন্টাল রিফর্মস’ বা মৌলিক সংস্কার এনেছি আর নতুন নতুন সঙ্কল্প রচনা করেছি। এই সংস্কারগুলির সাফল্য এগুলিকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করার ওপর নির্ভরশীল।

বন্ধুগণ,

‘ইন্ডাস্ট্রি ৪.০’! আমরা যেমন চাই, তেমন ফল পেতে অনেকটা সময় লাগতে পারে। এই সময় বাঁচানোর জন্য আমাদের কী করতে হবে? বিশ্ব এখন যে ‘ইন্ডাস্ট্রি ৪.০’র কথা বলছে, আমরা যদি সেটা চাই তাহলে এদের যে মূল স্তম্ভগুলি, সেগুলি হল ‘ফিনটেক’ বা অর্থনৈতিক প্রযুক্তি, ‘এগ্রি-টেক’ বা কৃষি প্রযুক্তি, ‘মেডি-টেক’ বা চিকিৎসা প্রযুক্তি আর এই সমস্ত ক্ষেত্রের উপযোগী দক্ষতা উন্নয়ন। অর্থাৎ, ‘৪.০ স্কিল ডেভেলপমেন্ট’-এর প্রয়োজন রয়েছে। এই যে মূল স্তম্ভগুলি, এই স্তম্ভগুলিকেও ‘ইন্ডাস্ট্রি ৪.০’-র আলোকে উন্নীত করার জন্য আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি কিভাবে অগ্রাধিকার দিতে পারে! এরকম ক্ষেত্রগুলিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির সাহায্যে ‘ইন্ডাস্ট্রি ৪.০’-র আবহে ভারতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

বন্ধুগণ,

আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে, যখন কোনও খেলোয়াড় অলিম্পিকে স্বর্ণ পদক জিতে আনেন, তখন বিশ্বমঞ্চে দেশের নাম কত উজ্জ্বল হয়। তখন দেশবাসীর মনে কত প্রত্যয় জেগে ওঠে! একজন ব্যক্তি তাঁর ব্যক্তিগত ক্রীড়া নৈপূণ্যের মাধ্যমে পদক জিতে আনেন, কিন্তু তাঁর সাফল্য গোটা আবহকে বদলে দেয়। আমরা কি এই অভিজ্ঞতা থেকে দেশের উন্নয়নের কথা ভাবতে পারি? আমরা কি আটটি বা দশটি এমন ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করতে পারি, যেগুলিতে আমরা যদি জোর দিই তাহলে ভারত দ্রুত সেসব ক্ষেত্রে বিশ্বে প্রথম তিনটি স্থানের মধ্যেই নিজেকে নিয়ে যেতে পারবে। এই অগ্রগতি দেশের বেসরকারি ক্ষেত্রের অংশীদারিত্বের মাধ্যমেই করতে হবে। যেমন, এখন ভারতে যত কনস্ট্রাকশন কোম্পানি রয়েছে, সেগুলির মধ্যে এমন কোনও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি কি হতে পারে না যার নাম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ তিনটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানির মধ্যে নেওয়া হবে? এভাবেই আমাদের স্টার্ট-আপগুলিও এগোতে পারে। স্টার্ট-আপ-এর সংখ্যার দিক থেকে তো আমরা এগিয়েছি, কিন্তু তাদের উৎপাদিত যত পণ্য ও পরিষেবা, সেগুলির উৎকর্ষ, সেগুলির ‘ইউনিকনেস’ বা স্বাতন্ত্র, সেগুলির যে ‘টেকনলজিক্যাল বেস’ বা প্রযুক্তিগত ভিত্তি তা কি আমাদের কয়েকটি ‘ইন্ডিভিজ্যুয়াল স্টার্ট-আপ’কে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ তিনটি স্টার্ট-আপ-এর মধ্যে স্থান করে নিতে সাহায্য করবে? সম্প্রতি আমরা ড্রোন সেক্টরকে বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করেছি, স্পেস সেক্টরকেও উন্মুক্ত করেছি, জিও-স্পেশিয়াল সেক্টরকেও উন্মুক্ত করেছি। এগুলি অত্যন্ত বড় মাপের নীতিগত সিদ্ধান্ত, যা এক প্রকার গেম চেঞ্জার বা আমূল পরিবর্তনের দ্যোতক হয়ে উঠতে পারে। এর ফলে কি ভারতের নতুন প্রজন্মের যুবক-যুবতীরা মহাকাশ ক্ষেত্রের দিকে বেশি আকর্ষিত হচ্ছেন? ড্রোন ক্ষেত্রের দিকে বেশি মনোযোগী হচ্ছেন? তাহলে কি আমরা এই ক্ষেত্রগুলিতে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ তিনটি দেশের মধ্যে স্থান করে নেওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারি? সেজন্য কি আমাদের সমস্ত প্রতিষ্ঠান সাহায্যকারীর ভূমিকা পালন করতে পারে? কিন্তু এসব কিছু হওয়ার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হল, যে কোম্পানিগুলি, যে শিল্পোদ্যোগগুলি এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে, তাদেরকে আমাদের ‘ফাইনান্সিয়াল সেক্টর’-এর সহযোগী হতে হবে আর সেক্ষেত্রে তাদের পক্ষ থেকেও প্রো-অ্যাক্টিভ বা সক্রিয় সহযোগিতা পেতে হবে। আমাদের কাছে দক্ষতা ও বিশেষজ্ঞতা যেমন চাই, তেমনই এ ধরনের প্রয়োজন পূরণের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষমতাকে কিভাবে আমরা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারি সেটাও দেখতে হবে, না হলে ভবিষ্যতে দেখা যাবে তারা হয়তো কিছু নিয়ে এল, কিন্তু নানা কারণে আমরা আগে যা করতাম, সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষিত হল না। আমাদের কোম্পানিগুলি, আমাদের স্টার্ট-আপগুলির সম্প্রসারণ তখনই সম্ভব যখন সেই ‘আন্ত্রেপ্রেনিওরশিপ ইনিশিয়েটিভস’ বা নতুন শিল্পোদ্যোগগুলির উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাব, আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের ওপর জোর দেব, নতুন নতুন প্রযুক্তি, নতুন নতুন বাজার খুঁজব, নতুন নতুন ব্যবসায়িক ভাবনার ওপর কাজ করব। এত কিছু করার জন্য যাঁরা এগুলির পেছনে বিনিয়োগ করবেন, তাঁদেরও এই ভবিষ্যৎমুখী ভাবনাগুলির প্রতি একটি গভীর উপলব্ধি থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। আমাদের আর্থিক ক্ষেত্রকেও নতুন নতুন ভবিষ্যৎমুখী ভাবনা আর উদ্যোগের জন্য ‘ইনোভেটিভ ফিনান্সিং’ এবং ‘সাসটেনেবল রিস্ক ম্যানেজমেন্ট’ নিয়ে আমাদের ভাবনাচিন্তা করতে হবে।

বন্ধুগণ,

এটা আপনারা সবাই খুব ভালোভাবেই জানেন যে আজ দেশের অগ্রাধিকার - ভারতের সমস্ত প্রয়োজনীয়তা পূরণে আত্মনির্ভরতা এবং এর পাশাপাশি রপ্তানির দিকে কিভাবে আমরা বেশি করে এগোব, তার ওপর নির্ভর করছে। রপ্তানিকারকদের আর্থিক প্রয়োজন বিভিন্ন রকম হয়। এই প্রয়োজন অনুসারে আপনারা কি নিজেদের পণ্য এবং পরিষেবাগুলিকে উন্নীত করতে পারেন যাতে রপ্তানিকারকদের চাহিদা পূরণ করা যায়। আপনারা এই বিষয়গুলিকে যদি অগ্রাধিকার দেন, তাহলে এগুলির শক্তি বৃদ্ধি পাবে। যখন এগুলির শক্তি বৃদ্ধি পাবে, তখন দেশ রপ্তানি ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে যাবে। এখন যেমন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ভারতের গমের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধির খবর আসছে। তাহলে গমের রপ্তানি যাতে বৃদ্ধি পায় সেদিকে কি আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি আরও গুরুত্ব দেবে? আমাদের আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত বিভাগগুলি কি সেদিকে নজর দেবে? আমাদের যে ‘শিপিং ইন্ডাস্ট্রি’ বা জাহাজ পরিবহণ শিল্প রয়েছে, সেগুলি কি এই বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা ভাবছে? মানে আমি বলতে চাইছি এক প্রকার ‘কমপ্রেহেন্সিভ’ প্রচেষ্টার কথা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আমাদের গমের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন যে নতুন সুযোগ এসেছে, আমরা কি সেইসব দেশে গম রপ্তানির আগে আমাদের গমের উৎকর্ষ সুনিশ্চিত করা এবং সেই গম রপ্তানি প্রক্রিয়ায় উন্নত পরিষেবা প্রদান করা সুনিশ্চিতকরতে পারি? করতে পারলে ধীরে ধীরে এই চাহিদা ও রপ্তানির প্রক্রিয়া স্থায়ী হয়ে উঠবে।

বন্ধুগণ,

ভারতের অর্থনীতির বড় ভিত্তি হল গ্রামীণ অর্থনীতি। সেজন্য বলব, গ্রামীণ অর্থনীতিকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না, নস্যাৎ করতে পারি না, আর গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত্তি এত ব্যাপক যে অল্প অল্প করে যখন ‘কমপাইল’ বা একে অপরের সঙ্গে সঙ্কলিত হতে থাকে, তখন অনেক বড় হয়ে ওঠে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য ছোট মাত্রায় চেষ্টা করলেই হয়, কিন্তু পরিণাম অনেক বড় হয়। সেজন্য দেশের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে উৎসাহ যোগাব? আমরা কি প্রো-অ্যাক্টিভ হয়ে বা স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি, ফিনান্স, টেকনলজি, মার্কেটিং–এ উন্নতির মাধ্যমে একটি বড় ‘কমপ্রিহেন্সিভ হেল্প’বা ব্যাপক সাহায্য করতে পারি? এখন যেমন দেশে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড বিতরণের কাজ চলছে। আমরা কি মিশন মোডে কৃষকদের হাতে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড পৌঁছে দিতে পারি? আমরা কি দেশের সমস্ত মৎস্যজীবীদের হাতে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড দ্রুত পৌঁছে দিতে পারি? আমরা দেশের পশুপালকদের হাতে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড পৌঁছে দিতে পারি? আমার অনুরোধ, আমরা যেন এই কাজটি অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে করি। দেশে আজ হাজার হাজার এফপিও বা কৃষক উৎপাদক সংস্থা গড়ে উঠছে, আর তারা বড় বড় উদ্যোগও নিচ্ছে। বেশ কয়েকটি রাজ্যে খুব ভালো পরিণাম পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমরা সবাই কি সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে পারি? এখন যেমন কৃষিক্ষেত্রে, আগে আমাদের দেশে কৃষিক্ষেত্র মধুর উৎপাদনের দিকে বেশি লক্ষ্য দেওয়া হত না। এখন আমাদের দেশে মৌ-চাষ ও মধু উৎপাদনের ক্ষেত্রে কাজ চলছে, কিন্তু তার আন্তর্জাতিক বাজার পাওয়ার জন্য তার ব্র্যান্ডিং, মার্কেটিং এবং রপ্তানিযোগ্য করে তোলার জন্য আর্থিক সহায়তা – এই সকল ক্ষেত্রে আমরা কিভাবে কাজ করব? তেমনই আজ দেশের লক্ষ লক্ষ গ্রামে যে কমন সার্ভিস সেন্টারগুলি তৈরি করা হচ্ছে, এগুলিকেও আমরা আমাদের নীতিতে অগ্রাধিকার দিয়েছি যাতে এগুলির মাধ্যমে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। একভাবে দেখতে গেলে এই কমন সার্ভিস সেন্টারগুলির মাধ্যমে সবচাইতে বেশি লাভবান হচ্ছেন আজকের গ্রামের মানুষেরা। তাঁদের মোবিলিটি বাড়ছে। যেমন রেলওয়ে রিজার্ভেশন করতে হলে কৃষককে আর রেল স্টেশনে যেতে হচ্ছে না, গ্রামের কমন সার্ভিস সেন্টারে গেলেই চলে। সেখানেই রিজার্ভেশনের কাজ হয়ে যাচ্ছে। আপনারা জানেন যে আজ আমরা দেশের গ্রামে গ্রামে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক বিছিয়ে দ্রুতগতিতে ব্রডব্যান্ড যোগাযোগ ব্যবস্থা পৌঁছে দিচ্ছি। সরকার একভাবে ডিজিটাল হাইওয়েকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। আমি সরল ভাষায় এটিকে বলি ডিজিটাল সড়ক। এই ডিজিটাল সড়ক বলার কারণ হল, এগুলির মাধ্যমে আমাদের ডিজিটাল প্রযুক্তিকে গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দিতে হবে। সেজন্যই আমরা এখন ডিজিটাল সড়কপথ নির্মাণ করছি। আমরা বড় বড় ডিজিটাল হাইওয়ের কথা তো বলেই থাকি, কিন্তু আমাদের গ্রামের দিকে যেতে হবে, সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে আর সেজন্য এই ডিজিটাল সড়ক সম্প্রসারণের এই অভিযানকে আমরা জোর দিচ্ছি। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের বিভিন্ন প্রোডাক্টকে কি আমরা গ্রামে গ্রামে নিয়ে যেতে পারি? এভাবে কৃষিক্ষেত্র থেকে শুরু করে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, ওয়্যারহাউজিং, এগ্রি-লজিস্টিক্স-এর সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজ ভারতের প্রত্যাশাগুলি প্রাকৃতিক চাষ ও জৈব-চাষের সঙ্গে যুক্ত। যদি কেউ এক্ষেত্রে নতুন নতুন কাজ করতে এগিয়ে আসতে চান, তাহলে আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি তাঁদেরকে কিভাবে সাহায্য করবে তা নিয়ে চিন্তা করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

বন্ধুগণ,

আজকাল হেলথ সেক্টরেও অনেক কাজ হচ্ছে। হেলথ ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ক্ষেত্রে সরকার প্রভূত বিনিয়োগ করছে। আমাদের দেশে ‘মেডিকেল এডুকেশন’ বা চিকিৎসা-শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত বাধাগুলি দূর করার জন্য আরও বেশি মেডিকেল ইনস্টিটিউশন্স বা চিকিৎসা-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা অত্যন্ত প্রয়োজন। আমাদের দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি কি, আমাদের ব্যাঙ্কগুলি কি তাদের বিজনেস প্ল্যানিং-এ এই ক্ষেত্রগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে পারে?

বন্ধুগণ,

আজকের তারিখে বিশ্ব উষ্ণায়ন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে। এই বিশ্ব উষ্ণায়নকে প্রতিহত করতে ভারত ২০৭০ সালের মধ্যে ‘নেট জিরো কার্বন প্রতিসরণ’-এর লক্ষ্য রেখেছে। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য দেশে কাজ শুরু হয়ে গেছে। এই কাজগুলিকে গতি প্রদান করতে পরিবেশ-বান্ধব প্রকল্পগুলি চালু করা এবং সেগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। ‘গ্রিন ফিনান্সিং’ বা পরিবেশ-বান্ধব বিনিয়োগের নতুন নতুন উপায় নিয়ে গবেষণা করা আর সেগুলির বাস্তবায়ন আজ সময়ের চাহিদা। সৌরশক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারত যেমন অনেক কিছু করছে, এর পাশাপাশি আমাদের দেশে ‘ডিজাস্টার রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ বা বিপর্যয় প্রতিরোধী পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। আমাদের দেশে ‘হাউজিং সেক্টর’-এ ছয়টি লাইটহাউজ প্রোজেক্টের কাজ চলছে। এক্ষেত্রেও আমরা বিপর্যয় প্রতিরোধী পরিকাঠামোকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এক্ষেত্রে যত কাজ হচ্ছে সেগুলিতে আপনাদের সহযোগিতা কাম্য। এক্ষেত্রে এখন একটি লাইটহাউজ প্রোজেক্ট মডেল প্রকল্প রূপে গড়ে উঠছে, কিন্তু এ ধরনের কাজে যাঁরা এগিয়ে আসবেন, তাঁরা যদি আপনাদের কাছ থেকে যথাযথ আর্থিক সহযোগিতা পান, তাহলে তাঁরা এই মডেলের এমন রেপ্লিকা তৈরি করবেন আর সেগুলিকে ছোট ছোট শহরগুলিতে নির্মাণের চেষ্টা করবেন। দেশে আধুনিক গৃহ নির্মাণ প্রযুক্তি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে সম্প্রসারিত হওয়া শুরু হবে। কাজের গতি বাড়বে, আর আমি মনে করি এ ধরনের আর্থিক সহযোগিতার অনেক তাৎপর্য রয়েছে।

বন্ধুগণ,

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা সবাই এই বিষয়গুলি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা, আলাপ-আলোচনা ও মন্থন করবেন আর এই ওয়েবিনারের মাধ্যমে ‘অ্যাকশনেবল সলিউশন্স’বা কর্মযোগ্য সমাধান খুঁজবেন। শুধু ‘আইডিয়াজ’ নয়, শুধু বড় বড় ভিশন নয়, ২০২৩-এর বাজেট নির্ধারণের কাজও আপনাদেরকে করতে হবে না। আজ আমাদের ২০২২-২৩-এর মার্চ মাসে যে বাজেট এসেছে, তাকে কিভাবে বাস্তবায়িত করব, তার দ্রুত বাস্তবায়ন কিভাবে সম্ভব, তার ফল কিভাবে দ্রুত পাব, আর সরকারের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে আপনাদের যে দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা তা থেকে কিভাবে উপকৃত হব – এই বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। আমাদের ফাইলগুলিতে ‘ফুলস্টপ, কমা’ এদিক-ওদিক হওয়ার ফলে আগে যেভাবে ৬-৭ মাস ধরে সিদ্ধান্ত ঝুলে থাকত তা যেন আমাদের ক্ষেত্রেও না হয়। এই প্রক্রিয়াকে আমরা কিভাবে দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করব, তা নিয়ে আমরা আগে থেকে আলোচনা করলে প্রত্যেকেরই সুবিধা হবে। এই দ্রুততার কথা ভেবেই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। আমি যে ‘সবকা প্রয়াস’-এর প্রয়োজনীয়তার কথা বলি, সেই ‘সবকা প্রয়াস’-এরই একটি উদাহরণ হল ভারতের সাম্প্রতিক বাজেট প্রক্রিয়া। আমরা বাজেট আনার আগে একবার আপনাদের সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করি। তেমনই বাজেট পেশ করার পরও আপনাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করি। দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আলাপ-আলোচনা করি। এভাবে সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের কথা ভাবা গণতন্ত্রের একটি উদ্ভূত প্রয়োগ। আর্থিক বিশ্বে এ ধরনের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চেষ্টা করা, সংশ্লিষ্ট সকলকে সঙ্গে নিয়ে মিলেমিশে কাজ করা, এটাই আমাদের বাজেটের সবচাইতে বড় বৈশিষ্ট্য। এটাই আমাদের শক্তি। সবাই এই শক্তিরই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু এই প্রশংসা শুনে আমাদের থেমে থাকলে চলবে না। এবারের বাজেট নিয়ে সর্বস্তরে প্রশংসা হয়েছে, কিন্তু তা শুনে আমাদের থেমে থাকলে চলবে না। প্রতিটি পদক্ষেপে আমার আপনাদের সাহায্য চাই। আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ চাই। আমি তো রাজ্য সরকারগুলিকেও অনুরোধ করব, এই প্রক্রিয়াকে দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করতে তাঁদের যত নীতিগত প্রক্রিয়া রয়েছে, যেভাবে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, যেভাবে তাঁরা নীতি-নির্ধারণ করেন, সেই প্রক্রিয়াও কি ১ এপ্রিলের আগে সম্পন্ন হতে পারে? আপনারা যত দ্রুত বাজারে পণ্য ও পরিষেবা নিয়ে আসবেন, তত বেশি মানুষ আপনাদের রাজ্যে বিনিয়োগ নিয়ে আসবে। তাহলে আপনার রাজ্যের লাভ হবে। রাজ্যগুলির মধ্যেও পারস্পরিক একটি প্রতিযোগিতা থাকতে হবে। এবারের বাজেট থেকে সবচাইতে বেশি লাভবান কোন রাজ্য হতে পারে? কোন রাজ্য এমন ‘প্রোগ্রেসিভ পলিসি’বা প্রগতিশীল নীতি আনতে পারে, যাতে সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বসে থাকা ব্যক্তিরা সেই রাজ্যগুলির প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগ করার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এভাবে আমাদের একটি বড় প্রগতিশীল ইকো-সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে। সর্বস্তরে নতুন কিছু করার মেজাজ আমাদের গড়ে তুলতে হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা সবাই অভিজ্ঞ মানুষ, দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলি সম্পর্কে আপনারা অবহিত, দৈনন্দিন প্রতিকূলতাগুলির সম্ভাব্য সমাধান সম্পর্কেও আপনারা জানেন, আজও আপনারা এই ধরণের সমস্যাগুলি সমাধানের জন্যই একসঙ্গে বসেছেন। সেজন্য আমি চাই যে এবারের বাজেট নিয়ে বাজেট পরবর্তী আলোচনায় বাস্তবায়নের বিষয়ে চিন্তাভাবনাকে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হোক। এই ওয়েবিনারে আমি আপনাদের কাছ থেকে বাস্তবায়ন নিয়ে পরামর্শ চাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনাদের অবদান দেশকে অনেক উপকৃত করবে। অনেক অনেক ধন্যবাদ!

অনেক অনেক শুভকামনা!

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
India’s Biz Activity Surges To 3-month High In Nov: Report

Media Coverage

India’s Biz Activity Surges To 3-month High In Nov: Report
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
PM to participate in ‘Odisha Parba 2024’ on 24 November
November 24, 2024

Prime Minister Shri Narendra Modi will participate in the ‘Odisha Parba 2024’ programme on 24 November at around 5:30 PM at Jawaharlal Nehru Stadium, New Delhi. He will also address the gathering on the occasion.

Odisha Parba is a flagship event conducted by Odia Samaj, a trust in New Delhi. Through it, they have been engaged in providing valuable support towards preservation and promotion of Odia heritage. Continuing with the tradition, this year Odisha Parba is being organised from 22nd to 24th November. It will showcase the rich heritage of Odisha displaying colourful cultural forms and will exhibit the vibrant social, cultural and political ethos of the State. A National Seminar or Conclave led by prominent experts and distinguished professionals across various domains will also be conducted.