স্বাধীনতার ৭৫তম বছরটিতে বিভিন্ন লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়ণের কাজে সরকার উদ্যোগী হয়েছে। কর্মসূচিগুলির বাস্তবায়নের সুবাদে ভবিষ্যতে এক বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে চলেছে আমাদের দেশে। ‘অমৃতকাল’-এ দেশে অগ্রগতির যে ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে তা আমাদের উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে নানাভাবে সাহায্য করবে। দেশের দরিদ্র ও কৃষক সাধারণের জন্য যে কর্মসূচির কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সমস্ত দেশবাসী এবং গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে।
গুজরাটে প্রাকৃতিক কৃষি সম্মেলনে ভাষণদানকালে রবিবার একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশের ৫৫০টি পঞ্চায়েত থেকে ৪০ হাজারেরও বেশি কৃষক সম্মেলনে সমবেত হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেন তিনি। শ্রী মোদী বলেন, এই সম্মেলনের মাধ্যমে যে কর্মসূচির সূচনা হতে চলেছে তা প্রত্যেক কৃষকের মধ্যে এক গভীর আস্থা ও আত্মবিশ্বাসের জন্ম দেবে বলে তিনি মনে করেন। সুরাটের এই প্রাকৃতিক কৃষিকর্ম সম্পর্কিত কর্মসূচির মডেল সারা দেশের কাছেই এক আদর্শ হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসী যখন কোনও একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের কাজে সঙ্কল্পবদ্ধ হন তখন তাতে কোনও কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণে যখন কোনও বড় ধরনের কাজ শুরু করা হয় তখন তার সাফল্য নিশ্চিত ও সন্দেহাতীত। ‘স্বচ্ছ ভারত’ কর্মসূচির মতো এক ব্যাপক ও বিশাল কর্মকাণ্ড সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এর কৃতিত্ব অবশ্যই প্রাপ্য আমাদের দেশের গ্রামবাসীদের। একইভাবে, ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশন’ও একথা প্রমাণ করে দিয়েছে যে গ্রাম-জীবনে পরিবর্তন আনা কোনও দুঃসাধ্য কাজ নয়। এইভাবেই এক জন-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিক কৃষিকর্ম সম্পর্কিত কর্মসূচি বিশেষভাবে সফল হয়ে উঠবে বলেই তিনি মনে করেন।
শ্রী মোদী বলেন, দেশের কৃষি ব্যবস্থা হল আমাদের জীবন, স্বাস্থ্য ও সমাজের এক মেরুদণ্ড বিশেষ। প্রাকৃতিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে ভারত বরাবরই একটি কৃষি নির্ভর দেশ বলে সুপরিচিত। সুতরাং, দেশের কৃষি ও কৃষক সাধারণের অগ্রগতির মধ্যেই নিহিত রয়েছে দেশের সার্বিক অগ্রগতির বিষয়টিও। প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কৃষিকর্ম শুধুমাত্র একটি অর্থনৈতিক সাফল্যই নয়, বরং মাতা বসুন্ধরার প্রতি আমাদের সেবা প্রদর্শনের এক বিশেষ মাধ্যম। মাতা বসুন্ধরাকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন আমাদের মূল্যবোধেরই অন্তর্ভুক্ত। আমরা যখন প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কৃষিকর্মের উদ্যোগ গ্রহণ করি তখন কৃষিকর্মের মধ্য দিয়েই প্রয়োজনীয় সহায় উপকরণ আমরা সংগ্রহ করি। এর ফলে একদিকে যেমন কৃষিকর্ম ব্যয়সাশ্রয়ী হয়ে ওঠে, অন্যদিকে তেমনই দেশের গবাদি পশুপালনও আয় ও উপার্জনের একটি অতিরিক্ত উৎস হয়ে ওঠে। প্রাকৃতিক কৃষিকর্মের মধ্য দিয়ে আমরা মাটি, জমি এবং তার উৎপাদনশীলতার মান আরও উন্নত করে তোলার চেষ্টা করি ও কৃষির প্রয়োজনেই গো-মাতাকে সেবা করার সুযোগও আমাদের সামনে উপস্থিত হয়। শুধুমাত্র সুরাটেই ৪০-৪৫টি গোশালাকে ব্যবহার করা হবে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কৃষিকর্মের প্রয়োজনে। বিষাক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সারমুক্ত শস্য ফলনের মাধ্যমে দেশের কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্যকেও যে সুরক্ষিত রাখা যাবে, একথারও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য পুরোপুরি নির্ভর করে উন্নতমানের খাদ্য গ্রহণের ওপর। প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত শস্য সেই প্রয়োজন মেটাতে পারে। আর এইভাবেই একজন সুস্থ মানুষই পারে দেশকে আরও ভালোভাবে সেবা করতে।
শ্রী মোদী বলেন, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার ওপর সমগ্র বিশ্বই এখন বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করছে এবং এই বিশেষ ক্ষেত্রটিতে ভারতের রয়েছে হাজার হাজার বছরের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা। একথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে বহু শতক ধরেই ভারত এই বিষয়টিতে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে। গত আট বছরে কেন্দ্রীয় সরকার প্রাকৃতিক কৃষি পদ্ধতির ওপর গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করে এই ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। পরম্পরাগত কৃষি বিকাশ যোজনার মাধ্যমে এবং ভারতীয় প্রাকৃতিক কৃষি পদ্ধতির মধ্য দিয়ে দেশের কৃষকদের সহায়সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধাদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় ৩০ হাজার গুচ্ছ সমিতি গড়ে তোলা হয়েছে যার মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন দেশের লক্ষ লক্ষ কৃষক বন্ধু। ‘পরম্পরাগত কৃষি বিকাশ যোজনা’র আওতায় নিয়ে আসা হবে দেশের ১০ লক্ষ হেক্টর জমিকে। প্রাকৃতিক কৃষি পদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পটিকেও এর সঙ্গে আমরা যুক্ত করেছি। প্রাকৃতিক কৃষি পদ্ধতির বিষয়টিকে একটি পৃথক অভিযান হিসেবে চিহ্নিত করতে গঙ্গার তটবর্তী অঞ্চলগুলিতে আমরা কাজে নেমে পড়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক কৃষি পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষকদের সুস্থ ও সুখী জীবনই শুধু নিশ্চিত হবে না, অভ্যুদয় ঘটবে এক নতুন ভারতের। সুরাটের এই উদ্যোগ প্রাকৃতিক কৃষিকর্মের ক্ষেত্রে সারা দেশের কাছে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করেন তিনি।