গুজরাটের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্রভাই প্যাটেল, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী শ্রী ভূপেন্দ্র যাদবজী, শ্রী অশ্বিনী চৌবেজী, বিভিন্ন রাজ্য থেকে আগত পরিবেশ মন্ত্রীগণ, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সমস্ত আধিকারিকগণ, অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ, ভদ্র মহিলা ও ভদ্র মহোদয়গণ।
আপনাদের সকলকে এই জাতীয় পর্যায়ের সম্মেলনে, বিশেষ করে একতা নগরে স্বাগত ও অভিনন্দন জানাই। একতা নগরে এই জাতীয় সম্মেলনটিকে আমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছি। আমরা যদি অরণ্যের কথা ভাবি, আমাদের বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীর ভাই-বোনদের কথা ভাবি, আমরা যদি বন্যপ্রাণীর কথা ভাবি, আমরা যদি জল সংরক্ষণের কথা ভাবি, আমরা যদি পর্যটনের উন্নতি নিয়ে চিন্তাভাবনা করি, আমরা যদি প্রকৃতি ও পরিবেশের উন্নয়ন নিয়ে ভাবি – তা হলে এই একতা নগরে যে একপ্রকার সমন্বয়ধর্মী সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে, তা একটি বার্তা বহন করে, তা সকলের মনে বিশ্বাসের জন্ম দেয় যে, অরণ্য ও পরিবেশের জন্য আমরা এখনও অনেক কিছু করতে পারি। সেজন্য অরণ্য ও পরিবেশের নিরিখে আজ একতা নগর একটি তীর্থ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আপনারা সকলে, এই বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত মন্ত্রী ও আধিকারিকরা এখানে একত্রিত হয়েছেন। আমি চাই যে, একতা নগরে আপনারা যতটা সময় কাটাবেন, সমস্ত বিষয়কে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করুন, যাতে পরিবেশের প্রতি, আমাদের বিভিন্ন জনজাতি সমাজের প্রতি, আমাদের বন্যপ্রাণীদের প্রতি কতটা সংবেদনশীলতা নিয়ে কাজ করা হয়েছে, কিভাবে ভারসাম্য যুক্ত পরিবেশ-বান্ধব নির্মাণ কার্য হয়েছে, যা ভবিষ্যতে দেশের অনেক প্রান্তে অরণ্য সম্পদ রক্ষা করে উন্নয়নের পথে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে – এই বিষয়ে অনেক কিছু দেখা ও বোঝার সুযোগ আপনারা এখানে পাবেন।
বন্ধুগণ,
আমরা এমন সময়ে মিলিত হয়েছি, যখন ভারত ২৫ বছরের অমৃতকালের জন্য নতুন নতুন লক্ষ্য স্থির করে চলেছে। আপনাদের সকলের প্রচেষ্টায় পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রেও আমাদের লক্ষ্য স্থির করতে সুবিধা হবে এবং ভারতের উন্নয়নও ততটাই দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে।
বন্ধুগণ,
আজকের নতুন ভারত, নতুন ভাবনা, নতুন নতুন দৃষ্টিকোণ নিয়ে এগিয়ে চলেছে। আজ ভারত দ্রুতগতিতে উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠেছে। আর নিরন্তর নিজের বাস্তু ব্যবস্থাকেও শক্তিশালী করে তুলছে। আমাদের দেশে অরণ্যের প্রসার ঘটেছে আর জলাভূমিগুলির পরিধিও দ্রুতগতিতে বাড়ছে। আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি যে, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমাদের গতি ও পরিমাণ অতুলনীয়। আন্তর্জাতিক সৌর সংঘ স্থাপন ও তার নেতৃত্ব দান থেকে শুরু করে কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা ‘লাইফ’ অভিযান; বড় বড় সমস্যার মোকাবিলায় ভারত আজ বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমাদের নিজেদের দায়বদ্ধতা পূরণের ট্র্যাক রেকর্ড দেখে বিশ্ববাসী আজ ভারতের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। বিগত বছরগুলিতে বাঘ, সিংহ, হাতি, এক শৃঙ্গ গন্ডার এবং নেকড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। একটু আগেই ভূপেন্দ্রভাই বলছিলেন যে, কিছুদিন আগে মধ্যপ্রদেশে চিতা প্রত্যাবর্তনের ফলে একটি নতুন উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেক ভারতবাসীর শিরা-ধমনীতে শিষ্টাচারে জীবের প্রতি দয়া এবং প্রকৃতিপ্রেম কতটা গভীর, তা এই চিতাগুলিকে স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে দেশবাসীর উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখে আন্দাজ করা যায়। ভারতের প্রত্যেক প্রান্তে এই উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়েছে। যেন আমাদের বাড়িতে প্রিয় অতিথিরা এসেছে। এটাই আমাদের দেশের অন্যতম শক্তি। প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষার এই প্রচেষ্টা আমরা সর্বদাই জারি রেখেছি। আগামী প্রজন্মের মধ্যেও আমরা এই শিষ্টাচারকে সঞ্চারিত করে যাব। এই সংকল্প নিয়ে ভারত ২০৭০ সাল পর্যন্ত ‘নেট জিরো’ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এখন আমাদের হাতে প্রায় পাঁচ দশক আছে। এখন দেশের প্রধান লক্ষ্য হ’ল ‘গ্রিন গ্রোথ’। যখন আমরা গ্রিন গ্রোথ বা পরিবেশ-বান্ধব উন্নয়নের কথা বলি, তখন দেশে পরিবেশ-বান্ধব কর্মসংস্থানেরও অনেক সুযোগ তৈরি হবে। আর এই সকল লক্ষ্য প্রাপ্তির জন্য প্রত্যেক রাজ্যের পরিবেশ মন্ত্রককে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
বন্ধুগণ,
পরিবেশ মন্ত্রক তা কেন্দ্রীয় সরকারের হোক কিংবা রাজ্য সরকারের, তাদের দায়িত্বের বিস্তার অপরিহার্য। আমাদের সঙ্কুচিত পরিধির মধ্যে থাকলে চলবে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সময়ের সঙ্গে আমাদের ব্যবস্থায় যত পরিবর্তন আসা উচিৎ ছিল, তা হয়নি বলে পরিবেশ মন্ত্রক নিছকই নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে চলেছে। আমি মনে করি, পরিবেশ মন্ত্রকের কাজ রেগুলেটরি বা নিয়ন্ত্রক থেকে অনেক বেশি করে পরিবেশ উন্নয়নকে উৎসাহ প্রদানের যেসব পদক্ষেপ নিলে পরিবেশ রক্ষা সুনিশ্চিত হয়, সেইসব পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে আপনাদের মন্ত্রককে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। এখন এটা সার্কুলার ইকোনমির বিষয় হয়ে উঠেছে। এই সার্কুলার ইকনমি কিন্তু আমাদের পরম্পরার অংশ ছিল। ভারতীয়দের কখনও সার্কুলার ইকনমি শেখাতে হয়নি। আমরা কখনই প্রকৃতির শোষক ছিলাম না। আমরা ছিলাম, পারম্পরিকভাবে প্রকৃতির পোষক। আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন শুনেছি যে, মহাত্মা গান্ধী যখন গত শতাব্দীর গোড়ার দিকে সবরমতী আশ্রমে থাকতেন, তখন সবরমতী সবসময়ে জলে ভরা থাকতো। তা সত্ত্বেও গান্ধীজী যদি কাউকে জল নষ্ট করতে দেখতেন, তা হলে তিনি অবশ্যই তাঁকে বাধা দিতেন। তখন এত জল থাকা সত্ত্বেও বাপুজী জলের অপচয় হতে দিতেন না। আমরা চাইলে আজও আমরা প্রত্যেক বাড়িতে জামা-কাপড়, খবরের কাগজ ইত্যাদিকে পুনর্ব্যবহার করতে পারি। আমাদের দেশে এই পুনর্ব্যবহারের চল রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিনষ্ট না হয়ে যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রতিটি জিনিসকে কোনও না কোনওভাবে ব্যবহার করার শিষ্টাচার আমাদের রয়েছে। এটা কিন্তু কৃপনতা নয়, এটা প্রকৃতির প্রতি সচেতনতা। আজ এখানে আমাদের যত পরিবেশ মন্ত্রী এসেছেন, তাঁদের প্রতি আমার অনুরোধ যে, আপনারা নিজেদের রাজ্যে এই সার্কুলার ইকনমি বা বৃত্তাকার অর্থনীতিকে যত বেশি সম্ভব উৎসাহ প্রদান করুন। স্কুল পড়ুয়াদের বলুন যে, তারা যেন নিজেদের বাড়িতে বৃত্তাকার অর্থনীতি বজায় রাখার চেষ্টা করে। সচেতনতা বাড়লে কাকে বৃত্তাকার অর্থনীতি বলে সে সম্পর্কে জানলে, এর ফলে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আর একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হবে। এর জন্য আমাদের সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত, অন্যান্য স্থানীয় প্রশাসন, সমস্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলিকে উৎসাহিত করতে হবে। তাদেরকে সঠিক পথ দেখাতে হবে, তাদের জন্য দিক-নির্দেশ তৈরি করে দিতে হবে।
বন্ধুগণ,
বৃত্তাকার অর্থনীতিকে গতি প্রদানের জন্যই গত বছর কেন্দ্রীয় সরকার ভেহিকেলস্ স্ক্র্যাপিং পলিসি বাস্তবায়িত করেছে। এখন রাজ্যগুলিতে এই ভেহিকেলস্ স্ক্র্যাপিং পলিসি কার্যকর করার জন্য যথাযথ পরিকল্পনা কি রচিত হয়েছে? এর জন্য বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে যে পরিমাণ বিনিয়োগ চাই, তাদের যতটা জমি চাই, যাতে এই স্ক্র্যাপিংকে কার্যকর করতে পারে – সেদিকটা আপনারা দেখুন। তেমনই কেন্দ্রীয় সরকার তার স্ক্র্যাপিং নীতি কার্যকর করার জন্য যে গাড়িগুলি তাদের নির্দিষ্ট বয়স ও নির্দিষ্ট পরিমাণ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে, সেই গাড়িগুলিকে আগে স্ক্র্যাপ করতে হবে। প্রত্যেক রাজ্যের পরিবেশ মন্ত্রক তাদের রাজ্যে এই দিকটি দেখুন। পুরনো গাড়িগুলিকে স্ক্র্যাপ করলে, তার জায়গায় নতুন গাড়ি আসবে। এতে জ্বালানী বাঁচবে এবং পরিবেশ সুরক্ষিত হবে। দেখুন, দেশের সমস্ত পরিবেশ মন্ত্রককে কেন্দ্রীয় সরকারের জৈব জ্বালানী নীতি অনুসরণ করে দ্রুতগতিতে কাজ করতে হবে। এর প্রয়োজন রয়েছে। আপনারা লক্ষ্য করে থাকবেন যে, সারা দেশে জৈব জ্বালানীর ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু যদি রাজ্যগুলি এই উদ্যোগ নেয় এবং সমস্ত গাড়িকে জৈব জ্বালানী মিশ্রণকে সুনিশ্চিত করে, তা হলে দেশে একটি প্রতিযোগিতার আবহ তৈরি হবে। আজকাল দেশ ইথানল মিশ্রণে নতুন নতুন রেকর্ড স্থাপন করছে। রাজ্যগুলি এক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিলে আমরা আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে পারবো। আমার মতে, ইথানল উৎপাদন এবং ইথানল মিশ্রণের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা হওয়া উচিৎ। প্রত্যেক বছর একবার আপনাদের সাফল্য বিচার করা যেতে পারে। এর ফলে, আমাদের কৃষকরা অনেক লাভবান হবেন। কৃষি ক্ষেত্রে বর্জ্য থেকে সম্পদ সৃষ্টি করে তাঁদের রোজগার বাড়বে। আমাদের এই স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করতে হবে। এই স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা আপনাদের রাজ্যের মধ্যে শহরগুলিতেও চালু করতে পারেন। দেখবেন, এতে আমাদের পরিবেশ রক্ষার সংকল্প বাস্তবায়নে গণঅংশীদারিত্বের শক্তি যুক্ত হবে। তখন আজ যত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সব অনায়াসে দূর হয়ে যাবে এবং আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উন্নয়নের নতুন দিগন্ত অতিক্রম করতে পারব। এখন দেখুন, আমরা সকলে জেনে গেছি যে, এলইডি বাল্ব কতটা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, কার্বন নিঃসরণ কমায় এবং অর্থ সাশ্রয় করে। আমাদের প্রত্যেক রাজ্যের পরিবেশ মন্ত্রকগুলি যদি রাস্তায় এই এলইডি বাল্ব লাগায়, তা হলে আরও অর্থ ও বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। এক্ষেত্রে আপনারা ও আপনাদের বিভাগ নেতৃত্ব দিতে পারেন। এতে আপনাদের সম্পদও অনেক সাশ্রয় হবে। তেমনই জলের অপচয় হ্রাস করাটাও অনেক বড় কাজ। সম্প্রতি আমরা স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে প্রত্যেক জেলায় ৭৫টি করে অমৃত সরোবর নির্মাণের যে অভিযান শুরু করেছি, তা বাস্তবায়নেও কি প্রত্যেক রাজ্যের পরিবেশ মন্ত্রক এবং বন বিভাগ নেতৃত্ব প্রদান করতে পারে? জল সংরক্ষণের পাশাপাশি, পরিবেশ মন্ত্রক এবং কৃষি মন্ত্রক যৌথভাবে ‘প্রতি বিন্দুতে অধিক শস্য’ উৎপাদনের জন্য ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পে জোর দিতে পারে। অর্থাৎ পরিবেশ মন্ত্রক একটি এমন মন্ত্রক, যা প্রত্যেক মন্ত্রককে পথ দেখাতে পারে, প্রেরণা যোগাতে পারে, কাজে গতি সঞ্চার করতে পারে এবং দ্রুত পরিণাম আনতে পারে। আজকাল আমরা লক্ষ্য করছি, যে রাজ্যগুলিতে জলের প্রাচুর্য ছিল, ভূ-গর্ভস্থ জলস্তর উপরে ছিল – আজ সেই রাজ্যগুলিতেও জল সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। জলের জন্য ১০০০-১২০০ ফুট মাটির নীচে যেতে হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
এই সমস্যা শুধুই জল সংক্রান্ত বিভাগগুলির নয়, পরিবেশ মন্ত্রককেও সমস্যাকে ততটাই বুঝতে হবে। আজকাল আপনারা দেখছেন যে, দেশের প্রত্যেক জেলায় অমৃত সরোবর অভিযান চলছে। একটু আগেই আমি এই কথা বলছিলাম। এখন এই অমৃত সরোবরগুলি জল সুরক্ষার পাশাপাশি, পরিবেশ সুরক্ষারও সমাধান হয়ে উঠছে। তেমনই সম্প্রতি আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, আমাদের কৃষকরা রাসায়নিক মুক্ত কৃষি, প্রাকৃতিক কৃষির পথ বেছে নিচ্ছেন। এই প্রেক্ষিতে আমি নিশ্চিত যে,কৃষি মন্ত্রকের সঙ্গে যদি পরিবেশ মন্ত্রক মিলেমিশে কাজ করে, তা হলে প্রাকৃতিক কৃষি ভারতকে নতুন শক্তি যোগাবে। কারণ, প্রাকৃতিক কৃষি পরিবেশ রক্ষার কাজ করে। আমাদের ধরিত্রী মাতাকে রক্ষা করাও একটা বড় কাজ। সেজন্য আমি বলি, পরিবর্তিত সময়ে পরিবেশ মন্ত্রক যেন অংশগ্রহণকারী এবং সমন্বয়ধর্মী দৃষ্টিকোণ নিয়ে কাজ করে। যখন পরিবেশ মন্ত্রকের দৃষ্টিভঙ্গী বদলাবে, নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির হবে, তখন পথও নির্ধারিত হয়ে যাবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস বন্ধুগণ, তা হলে প্রকৃতিও উপকৃত হবে।
বন্ধুগণ,
পরিবেশ সুরক্ষার আরেকটি দিক হ’ল – গণসচেতনতা, গণঅংশীদারিত্ব ও জনসমর্থন। কিন্তু, এটা শুধুই তথ্যপ্রযুক্তি, সূচনা এবং শিক্ষা বিভাগের কাজ নয়, আপনারা সকলে খুব ভালোভাবেই জানেন যে, এখন দেশে যে নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি চালু হয়েছে, তা আপনাদের সহায়ক, এমনকি আপনাদের বিভাগের জন্যও এক্ষেত্রে একটি বিষয় হ’ল অভিজ্ঞতা-ভিত্তিক শিক্ষা। এই অভিজ্ঞতা-ভিত্তিক শিক্ষার উপর জোর দিতে হবে। পরিবেশ মন্ত্রক এ বিষয়ে শিক্ষা বিভাগের সঙ্গে কথা বলে পড়ুয়াদের কোন কোন স্থানীয় গাছপালা নিয়ে বিশেষভাবে সচেতন করতে হবে, কোন কোন বাগানে তাদের শিক্ষামূলক ভ্রমণে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে, গাছপালার সঙ্গে পরিচয় করানো যেতে পারে, তা নিয়ে শলাপরামর্শ করুন। তবেই এই পড়ুয়াদের মনে পরিবেশের প্রতি স্বাভাবিক সচেতনতা আসবে, এবং এর মাধ্যমে তাদের মনে জৈব বৈচিত্র্যের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে আর পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য তাদের মস্তিষ্কে এমন বীজ বপন করা যেতে পারে, যা আগামী দিনে তাদের প্রত্যেককে পরিবেশ সুরক্ষার সৈনিক করে তুলবে। একইভাবে, সমুদ্রতট সন্নিকটস্থ জেলাগুলির ছেলেমেয়েরা বা নদীর পারে অবস্থিত স্কুলগুলির পড়ুয়াদের নদী বা সমুদ্রের পারে নিয়ে গিয়ে তাদের জলের গুরুত্ব বোঝানোর পাশাপাশি সমুদ্র ও নদীর বাস্তুতন্ত্র কেমন হয় – তা হাতে-কলমে শেখানো যেতে পারে। পরিবেশে মাছের কী গুরুত্ব, মাছ কিভাবে পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক হয়ে ওঠে – এই সমস্ত বিষয়ে যদি পড়ুয়াদের বোঝান, তা হলে শিক্ষা বিভাগের সহযোগিতায় পরিবেশ বিভাগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে পারবে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পরিবেশের প্রতি সচেতন করার পাশাপাশি, তাদের সংবেদনশীলও করে তুলতে হবে। সেজন্য প্রত্যেক রাজ্যের পরিবেশ মন্ত্রক শিক্ষা বিভাগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই অভিযান শুরু করুন, পরিকল্পনা রচনা করুন। স্কুলে কোনও একটি ফলের গাছ থাকলে পড়ুয়াদেরকে সেই গাছ সম্বন্ধে লিখতে বলুন, কোনও ঔষধি বৃক্ষ-গুল্ম থাকলে সেগুলি সম্পর্কে তাদের প্রবন্ধ লিখতে বলুন, প্রতিযোগিতা আয়োজন করুন। আমাদের প্রত্যেক রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারগুলিতেও ‘জয় অনুসন্ধান’ মন্ত্র অনুসরণ করে পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত উদ্ভাবনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। পরিবেশ রক্ষার জন্য আমাদের যত বেশি সম্ভব প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। নিকটবর্তী অরণ্যের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ক্রমাগত অধ্যয়ন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এক্ষেত্রে আমরা মহাকাশ প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে নিয়মিত আমাদের অরণ্যগুলিকে তদারকি করতে পারি। যে কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনকে তৎক্ষণাৎ চিহ্নিত করে সেগুলিকে শুধরাতে পারি।
বন্ধুগণ,
পরিবেশের আরেকটি বড় শত্রু হ’ল দাবানল। সারা পৃথিবীতেই দাবানলের ঘটনা বাড়ছে। আর ভারতের মতো দেশে দাবানল ছড়িয়ে পড়লে সহজে নেভানোর মতো আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের কাছে নেই। আপনারা হয়তো টিভিতে দেখেছেন, বিশ্বের সমৃদ্ধ দেশগুলিতে, যেমন – পশ্চিম আমেরিকা, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় বিগত দিনে যে ভয়ানক দাবানল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল, এতে পরিবেশের কত সর্বনাশ হয়েছে; অসংখ্য বন্য পশু অসহায়ভাবে মারা গেছে, দাবানলের ছাই ও ধোঁয়া অনেক দূর পর্যন্ত মানুষের জীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে। দাবানলের কারণে আন্তর্জাতিক কার্বন নিঃসরণে ভারতের অংশীদারিত্ব নগণ্য প্রায়। কিন্তু তবুও আমাদের সচেতন থাকতে হবে। এখন থেকেই সুপরিকল্পিতভাবে প্রত্যেক রাজ্যে অরণ্য অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করে তুলতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তেমনই দাবানলের কারণগুলি অনুসন্ধান করে স্থানীয় মানুষদের সচেতন ও সতর্ক করতে হবে। অরণ্যের যত বর্জ্য পদার্থ রয়েছে, যেমন – শুকনো পাতা ইত্যাদিকে স্থানীয় মানুষেরা যাতে বৃত্তাকার অর্থনীতির উপযোগী করে তুলতে পারেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে। আজকাল তো এই বর্জ্য থেকে জৈব সারও তৈরি হচ্ছে। এমনকি, কৃত্রিম কয়লাও তৈরি হচ্ছে। আপনাদের এলাকায় কৃত্রিম কয়লা তৈরির মেশিন বসিয়ে এতে উৎপাদিত কয়লা দেশের কারখানাগুলিতে সরবরাহ করা যেতে পারে। এতে অরণ্যও বাঁচবে, আমাদের পরিবেশ-বান্ধব শক্তি উৎপাদনও বাড়বে। অর্থাৎ, দাবানল নিয়ে আমাদের সচেতনতা স্থানীয় মানুষদের উপার্জনের ব্যবস্থা আমাদের সরকারের ‘বন ধন নীতি’কে বাস্তবায়িত করবে। এভাবে আমরা অরণ্যকে দাবানল থেকে বাঁচাতে পারবো। এ বিষয়ে আমাদের ফরেস্ট গার্ডদের নতুনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নের নতুন নতুন দিকগুলিকে যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আজকের পরিস্থিতিতে আমাদের আর পুরনো কালের বিটগার্ড দিয়ে চলবে না।
বন্ধুগণ,
আমি আপনাদের সঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই। আপনারা খুব ভালোভাবেই জানেন যে, আধুনিক পরিকাঠামো ছাড়া দেশের উন্নয়ন সাধন কিংবা দেশবাসীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা দেখেছি যে, পরিবেশ ছাড়পত্র শংসায়নের নামে কিভাবে দেশের আধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণকে প্রতিহত করা হয়। আপনারা যে জায়গায় বসে আছেন, এই একতা নগর এক্ষেত্রে সকলের চোখ খুলে দিয়েছে। কিভাবে শহুরে নকশালরা, উন্নয়ন বিরোধীরা এই এত বড় প্রকল্পটিকে, সর্দার সরোবর বাঁধের কাজকে বছরের পর বছর আটকে রেখেছিল। অথচ, এর শিলান্যাস করেছিলেন পণ্ডিত নেহরু স্বয়ং; দেশ স্বাধীন হওয়ার কিছুদিন পর সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিলেন। কিন্তু, সমস্ত শহুরে নকশালরা মাঠে নেমে পড়ে, বিশ্বের অনেক জায়গা থেকে তারা সমর্থন পায়, বলা হয় যে এটা পরিবেশ বিরোধী প্রকল্প – আর এইভাবে এই প্রকল্পের কাজ বারবার প্রতিহত হয়। যে কাজ নেহরুজী শুরু করেছিলেন, তা অবশেষে সম্পূর্ণ হয় আমি আসার পর। বলুন তো, দেশের কত টাকা নষ্ট হয়েছে। অথচ, আজ সেই একতা নগর পরিবেশ উন্নয়নের একটি তীর্থ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ, কত মিথ্যা অপপ্রচার করা হয়েছিল। এই শহুরে নকশালরা আজও চুপ করে বসে নেই, আজও তারা নিজেদের মতো করে অনেক খেলা খেলছে। কিন্তু, তাদের মিথ্যে ধরা পড়ে গেছে – এটা তারা মানতে চায় না। আর কিছু রাজনৈতিক সমর্থনও তারা পেয়ে যায়।
বন্ধুগণ,
ভারতের উন্নয়নকে প্রতিহত করতে অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও অনেক ফাউন্ডেশন তাদের মনের মতো বিষয় ঠিক করে ঝড় তুলে দেয়। আর আমাদের শহুরে নকশালরা তাদেরকে মাথায় নিয়ে নাচতে থাকে। এভাবে আমাদের উন্নয়নের গতি শ্লথ হয়। পরিবেশ সুরক্ষার সঙ্গে কোনও রকম সমঝোতা না করে ভারসাম্য যুক্ত উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য। কিন্তু তারা পরিবেশের দোহাই দিয়ে বিশ্ব ব্যাঙ্ককেও প্রভাবিত করে ফেলে। এমনকি, বড় বড় বিচারকদেরও প্রভাবিত করে ফেলে। আমি চাই, আমরা সকলে এ বিষয়ে সমন্বয়ধর্মী দৃষ্টিকোণ নিয়ে এগিয়ে যাই।
বন্ধুগণ,
অকারণে পরিবেশ সংরক্ষণের নামে যাতে জনগণের ‘ইজ অফ লিভিং’ এবং ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’ – এর পথে কোনও বাধা না সৃষ্টি হয়, আমাদের সেই চেষ্টা করে যেতে হবে। কিভাবে বাধা সৃষ্টি হয়, তার একটা উদাহরণ আমি দিতে চাই। গুজরাটে সবসময়েই জল সঙ্কট থাকে। প্রতি ১০ বছরে ৭ বছরই খরাক্রান্ত থাকে। এই সমস্যা সমাধানে আমরা চেক ড্যাম অভিযান শুরু করি। আমরা চাইছিলাম যে, অরণ্যেও জলের ব্যবস্থা রাখতে আর অরণ্যের নীচু জায়গাগুলিতে ডাইনিং টেবিলের মতো ছোট ছোট পুকুর খনন করতে। মনে করুন ১০ ফুট লম্বা, ৩ ফুট চওড়া এবং ২ ফুট গভীর। কিন্তু আমার এই প্রস্তাব বন মন্ত্রকই নাকচ করে দেয়। আমি বন মন্ত্রীকে বলি যে, আরে ভাই, জল থাকলেই তো তোমার অরণ্য বাঁচবে। এরপর, আমি বন বিভাগকেই টাকা দিয়ে চেক ড্যাম বানানোর ব্যবস্থা করতে বলি। জল সংরক্ষণ করুন – অরণ্যকে বাঁচান। আমরা পরিবেশের নামে যদি অরণ্যের মধ্যেই জলের ব্যবস্থা না করতে পারি, তা হলে কিভাবে চলবে। আমার এই কথা শুনে তবেই বন দপ্তর এই কাজ করতে রাজি হয়।
বন্ধুগণ,
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, যত দ্রুত পরিবেশ দপ্তরের ছাড়পত্র পাওয়া যাবে, উন্নয়ন তত তাড়াতাড়ি হবে। পরিবেশের কোনও রকম ক্ষতি না করেই এটা করা যেতে পারে। আমাকে বলা হয়েছে যে, দেশের সমস্ত রাজ্যে আজকের তারিখেও আপনাদের মন্ত্রকগুলিতে ৬ হাজারেরও বেশি উন্নয়নমূলক প্রকল্প পরিবেশের ছাড়পত্রের অপেক্ষায় রয়েছে। একইরকমভাবে, বন দপ্তরের ছাড়পত্রের অপেক্ষায় আরও ৬ হাজার ৫০০ উন্নয়ন প্রকল্প অপেক্ষা করছে। বন্ধুগণ, আজকের আধুনিক যুগেও যদি কোনও ছাড়পত্র পেতে তিন মাসের বেশি লাগে, তা হলে এর কারণ পরিবেশ নয়, অন্য কিছু। আমাদের নির্দিষ্ট প্যারামিটার ঠিক করে নিতে হবে। আর নিরপেক্ষভাবে পরিবেশ সুরক্ষা সুনিশ্চিত করে দ্রুতগতিতে ছাড়পত্র দিতে হবে। আমাদের উন্নয়নে বাধা দিলে চলবে না। কারণ উন্নয়ন প্রকল্পকে বাধা দিলে জনগণের সমস্যা বাড়তে থাকে। প্রকল্পের খরচ বাড়ে, সমস্যাগুলিও বাড়তে থাকে। সেজন্য আমাদের কাজের পরিবেশেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। পরিবেশ সুরক্ষার জন্য যত কথাই বলি না কেন, কাজের পরিবেশ না বদলালে উন্নয়ন সম্ভব নয়। পরিবেশ ও অরণ্যের ছাড়পত্র যথাসময়ে না পাওয়ার ফলে অনেক কেন্দ্রীয় প্রকল্পও থমকে আছে। আমি বিভিন্ন বিভাগ থেকে নিয়মিত চিঠি পাই। সেজন্য আমি আপনাদের অনুরোধ করছি যে, আমরা সকলে মিলে যদি কাজ করি তা হলে কেন্দ্র, রাজ্য, স্থানীয় প্রশাসন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রক, রাজ্য মন্ত্রক, কেন্দ্রীয় বিভাগ, রাজ্য বিভাগ – সবাইকে মিলেমিশে সংহত দৃষ্টিকোণ নিয়ে কাজ করতে হবে, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। আপনারা সকলে হয়তো পরিবেশ পোর্টাল দেখেছেন। সম্প্রতি এই পরিবেশ পোর্টাল পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্ত ধরনের ছাড়পত্রের জন্য এক জানালা মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এটি অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়া। আর এর মাধ্যমে অনুমোদন পেতে অনেক কম দৌড়ঝাপ করতে হয়। ৮ বছর আগে পর্যন্ত পরিবেশের ছাড়পত্র পেতে যেখানে গড়ে ৬০০ দিনেরও বেশি লাগতো, আজ প্রযুক্তির সাহায্যে আগের তুলনায় অনেক বেশি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাত্র ৭৫ দিনের মধ্যে ছাড়পত্র পাওয়া যাচ্ছে। এই পরিবেশের ছাড়পত্র প্রদানের নিয়মগুলি মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট এলাকার উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, এতে অর্থনীতি এবং বাস্তুতন্ত্র উভয়েই লাভবান হচ্ছে। আমি আপনাদের আরেকটি উদাহরণ দিচ্ছি। সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহ আগেই কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লিতে প্রগতি ময়দান সুড়ঙ্গ জাতির উদ্দেশে সমর্পন করেছে। এই সুড়ঙ্গের ফলে দিল্লির যানজট কমেছে। এই সুড়ঙ্গের মাধ্যমে প্রতি বছর ৫৫ লক্ষ লিটারেরও বেশি জ্বালানী সাশ্রয় হবে। এটি পরিবেশ সুরক্ষার পক্ষে অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় ১৩ হাজার টন কার্বন নিঃসরণ হ্রাস পাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করতে ৬ লক্ষেরও বেশি পূর্ণবয়স্ক গাছের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ, এই উন্নয়ন প্রকল্প পরিবেশ-বান্ধব। এর মানে যত উড়ালপুল, মহাসড়ক, এক্সপ্রেসওয়ে এবং রেল প্রকল্প গড়ে উঠছে – এগুলি সবই কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সেজন্য এগুলিকে ছাড়পত্র দেওয়ার সময় আমাদের বিলম্ব না করাই উচিৎ।
বন্ধুগণ,
পিএম গতিশক্তি ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান চালু করার পর পরিকাঠামো প্রকল্পগুলির বাস্তবায়নে ভারসাম্য অনেক বেড়েছে। রাজ্যগুলিও খুশি। কারণ, এই প্রকল্পগুলির দ্রুতগতি রাজ্যগুলির উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছে। পাশাপাশি, পরিবেশ রক্ষায়ও অভূতপূর্ব সহায়ক হয়েছে। আমাদের এটাও দেখতে হবে যে, যখনই রাজ্যে কোনও পরিকাঠামো নির্মাণ কাজ হয়, তা যেন পরিবেশকে বিনষ্ট না করে – এটা আমরা সুনিশ্চিত করছি। অর্থাৎ, পরিবেশ-বান্ধব উন্নয়ন হবে এমন পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। এটাও দেখতে হবে যে, এই পরিকাঠামো যেন বিপর্যয় মোকাবিলার সহায়ক হয়। পরিবেশের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলার পাশাপাশি, আমাদের অর্থনীতির প্রতিটি সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার মিলেমিশে পরিবেশ-বান্ধব শিল্প অর্থনীতির লক্ষ্যে এগোতে হবে।
বন্ধুগণ,
আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, এই দু’দিনে আপনারা পরিবেশ রক্ষার অনুকূলে ভারতের প্রচেষ্টাগুলিকে আরও শক্তিশালী করে তুলবেন। আপনাদের মাথায় রাখতে হবে যে, পরিবেশ মন্ত্রক নিছকই রেগুলেটরি নয়, জনগণের আর্থিক ক্ষমতায়ন এবং কর্মসংস্থানের নতুন নতুন পথ খুলে দেওয়ারও অনেক বড় মাধ্যম। একতা নগরে আপনারা দেখার জন্য এবং শেখার জন্য অনেক কিছু পাবেন। গুজরাটের কোটি কোটি মানুষ, রাজস্থানের কোটি কোটি মানুষ, মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশের কোটি কোটি মানুষের জীবনে সর্দার সরোবর বাঁধ বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে অনেক ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। এই ৪টি রাজ্যের জীবন ও জীবিকাকে প্রভাবিত করেছে। সর্দার সরোবর বাঁধ রাজস্থান ও গুজরাটের কচ্ছের ঊষর ভূমিতে জল ও বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। এই ৪টি রাজ্যেই বিদ্যুতের যোগান বাড়িয়েছে। সর্দার সাহেবের এত বিশাল মূর্তি আমাদের প্রতিনিয়ত একতার শপথ নিতে প্রেরণা যোগাচ্ছে। বাস্তুতন্ত্র এবং অর্থনীতিতে কিভাবে একসঙ্গে উন্নয়ন করা যায়, কিভাবে পরিবেশ সুরক্ষা সুনিশ্চিত করেও সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যেতে পারে, কিভাবে জৈব বৈচিত্র্য, কিভাবে ইকো টুরিজম বৃদ্ধির বড় মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে, কিভাবে আমাদের অরণ্য সম্পদ, আমাদের বিভিন্ন জনজাতি ভাই-বোনদের সম্পদ বৃদ্ধি করতে পারে – এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর, এই সমস্ত সমস্যার সমাধান, এই কেউরিয়াতে, এই একতা নগরে আপনারা পাশাপাশি দেখতে পাবেন। একতা নগর ডিক্লারেশন স্বাধীনতার অমৃত কালের জন্য উন্নত সমাধান নিয়ে আসবে – এই বিশ্বাস নিয়ে আপনাদের সকলকে শুভকামনা জানাই। আর বন্ধুগণ, আমি কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবেশ মন্ত্রকের সমস্ত আধিকারিকদের ও মন্ত্রী মহোদয়গণকে তাঁদের এত সুন্দর আয়োজনের জন্য শুভেচ্ছা জানাই। আপনাদের সকলের প্রতি আমার অনুরোধ, যত বক্তৃতা হবে, আলাপ-আলোচনা হবে, সেগুলি তো গুরুত্ব দিয়ে শুনবেনই, পাশাপাশি এই দু’দিন পরস্পরের অভিজ্ঞতা বিনিময় করুন। প্রত্যেক রাজ্যে কিছু না কিছু সুফলদায়ক প্রয়োগ হয়েছে, ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলি সম্পর্কে অন্যরা জানুন, অন্যদের কাছ থেকে ইতিবাচক ভাবনাগুলিকে গ্রহণ করুন। অর্থাৎ, এই দু’দিন যেন আপনার জীবনে অনেক বড় প্রেরণার কারণ হয়ে ওঠে। আপনারা প্রত্যেকেই পরস্পরের প্রেরণার কারণ হয়ে উঠুন। এই আবহ নিয়ে এই দ্বি-দিবসীয় আলাপ-আলোচনা, ভাবনার মন্থনকে দেশের উন্নয়নের জন্য, পরিবেশ সুরক্ষার জন্য এবং আগামী প্রজন্মকে পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীল করে তোলার জন্য সঠিক দিক-নির্দেশ দিতে, সঠিক বিকল্প তুলেদ ধরার ক্ষেত্রে একটি নিশ্চিত রোডম্যাপ নিয়ে আমরা সকলে এগিয়ে যাব। এই প্রত্যাশা নিয়ে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভকামনা, অনেক অনেক ধন্যবাদ।