চিত্রকূটের এই পবিত্র মাটিতে বিপুল সংখ্যায় আগত আমার ভাই ও বোনেরা, চিত্রকূটে শ্রীরামচন্দ্র তাঁর ভাই লক্ষ্মণ এবং সীতাজীর সঙ্গে বসবাস করতেন। মর্যাদা পুরুষোত্তম রামের এই তপভূমিতে আমি আপনাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাই।
এই ভূমিতে অনেক বীরের জন্ম হয়েছে, এই ভূমি তাঁদের অনেকের কর্মভূমিও। তাঁদের সকলকে আমার প্রণাম।
ভাই ও বোনেরা,
আমি সবার আগে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইবো। কারণ, আমি হেলিকপ্টার থেকে দেখেছি, যতজন মানুষ ভেতরে রয়েছেন, তারচেয়ে অনেক বেশি মানুষ বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁরা ভেতরে আসার চেষ্টা করছেন কিন্তু আসতে পারছেন না। এই অসুবিধার জন্য আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। কিন্তু এত বিপুল সংখ্যায় এখানে আসার মানে হ’ল উন্নয়ন ও সরকারি প্রকল্পগুলির প্রতি আপনাদের গভীর আস্থার প্রকাশ। গোস্বামী তুলসীদাস বলেছেন –
চিত্রকূট’কে ঘাটপর ভই সন্তন কী ভীর।
অর্থাৎ, চিত্রকূটের ঘাটে থাকে অসংখ্য সাধুপুরুষের ভিড়। আজ আপনাদের সবাইকে দেখে আপনাদের এই সেবকের মনেও এমনই কিছু অনুভূতি হচ্ছে। চিত্রকূট শুধু একটি স্থান নয়, ভারতের পুরাতন সমাজ জীবনের সংকল্প-স্থল, তপোভূমি। এই ভূমি ভারতীয়দের মনে মর্যাদার নতুন শিষ্টাচার গড়ে তুলেছে। এখান থেকে ভারতীয় সমাজ নতুন আদর্শ পেয়েছে। প্রভু শ্রীরাম আদিবাসী তথা অরণ্যবাসী অন্যান্য কাজে অরণ্যে এসে পৌঁছনো অন্যান্য বন্ধুদের দ্বারা কিভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন, তার অসংখ্য কাহিনী রয়েছে।
বন্ধুগণ,
পুরনো ঐতিহ্যকে সময়ের প্রয়োজনে পরিবর্তনের মাধ্যমে জীবন্ত রাখার প্রয়োগও ভারতবাসী এই মাটি থেকে শিখেছেন। ভারতরত্ন রাষ্ট্রঋষি নানাজী দেশমুখ এখানে বসেই ভারতকে সাবলম্বনের পথে নিয়ে যাওয়ার বিশেষ প্রচেষ্টা শুরু করেছিলেন। দু’দিন আগেই তাঁর জন্মদিনে দেশবাসী তাঁর স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
ভাই ও বোনেরা,
আমাদের সকলের সৌভাগ্য যে, নানাজী যে গ্রামোদয় থেকে রাষ্ট্রদয়ের সংকল্প নিয়ে আজীবন কাজ করে গেছেন, আজ তা বাস্তবায়নের জন্য চিত্রকূটের পবিত্র মাটিতেই হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের শিলান্যাস কিংবা উদ্বোধন হ’ল।
বুন্দেলখন্ডের উন্নয়নকে এক্সপ্রেসওয়ে’তে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই বুন্দেলখন্ড এক্সপ্রেসওয়ে গোটা এলাকার জনজীবনে বিপুল পরিবর্তন আনবে। প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে নির্মীয়মান এই এক্সপ্রেসওয়ে এখানে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। আর এখানকার সাধারণ মানুষকে বড় বড় শহরের মতো পরিষেবা প্রদান করবে। কিছুক্ষণ আগে এখানে দেশের কৃষকদের আয় বৃদ্ধির জন্য, তাঁদের ক্ষমতায়নের জন্য ১০ হাজার কৃষক উৎপাদক সংগঠন গড়ে তোলার প্রকল্পও উদ্বোধন করা হয়েছে। অর্থাৎ, কৃষকরা এতদিন উৎপাদক তো ছিলেনই, এখন তাঁরা ‘ফার্মার প্রডিউসার অর্গানাইজেশনস্ (এফপিও)’র মাধ্যমে বাণিজ্যও করবে। এখন কৃষক ফসলও উৎপাদন করবে আর দক্ষ ব্যবসায়ীদের মতো দরদাম করে নিজেদের ফসল সঠিক দামে বিক্রি করতে পারবেন। আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ এই কর্মসূচির পর তাড়াহুড়ো করে চলে যাবেন না। এখানে সারা দেশের সফল এফপিও-দের প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। এই প্রদর্শনী দেখে আমার বুক গর্বে ভরে উঠেছে। আপনারাও, অবশ্যই দেখবেন এবং বোঝার চেষ্টা করবেন। এই এফপিও-গুলি নিজের নিজের রাজ্যে কত অসাধারণ কাজ করেছে। এই গোটা অভিযানে আগামী পাঁচ বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হবে। এইসব উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আমার বুন্দেলখন্ডে কৃষক ভাইবোন ও নাগরিকদের, উন্নয়নের এই প্রতিযোগিতায় সামিল হওয়ার জন্য সমগ্র দেশবাসীকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
বন্ধুগণ,
আমাদের দেশে কৃষক সংক্রান্ত যত নীতি ছিল, আমাদের সরকার সেই নীতিগুলিকে নিরন্তর নতুন লক্ষ্য প্রদান করে সেগুলিকে কৃষকদের আয়ের সঙ্গে যুক্ত করেছে। যাতে কৃষকরা কম বিনিয়োগে ফলন বাড়াতে পারেন এবং তাঁরা ফসলের সঠিক দাম পান – তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। সেজন্যে বিগত পাঁচ বছরে বীজ থেকে বাজার পর্যন্ত প্রত্যেক পর্যায়ের অনুকূল অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ন্যূনতম শায়ক মূল্য বৃদ্ধি থেকে শুরু করে সয়েল হেলথ কার্ড, ইউরিয়াকে ১০০শতাংশ নিম আচ্ছাদনযুক্ত করা, কয়েক দশক ধরে অসম্পূর্ণ থাকা সেচ প্রকল্পগুলি সম্পূর্ণ করা – প্রতিটি পর্যায়ে সরকার কাজ করেছে। কৃষকদের আয়বৃদ্ধির অভিযানের আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। আজ এখানে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধির বর্ষপূর্তি সমারোহ পালন করা হচ্ছে। আমার মনে পড়ে, এক বছর আগে আমরা যখন এই প্রকল্প উদ্বোধন করেছিলাম, তখন এটা নিয়ে জনমনে কত ধরনের আশঙ্কা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু এত কম সময়ে দেশের প্রায় ৮ কোটি কৃষক পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ জমা হয়েছে। আপনারা কল্পনা করতে পারেন, মাত্র এক বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা! তাও আপনাদের ব্যাঙ্কের খাতায় কোনও দালাল, সুপারিশ কিংবা বৈষম্য ছাড়াই!
বন্ধুগণ,
বিগত তিন দশক ধরে আপনারা সেই দিনও দেখেছেন, যখন বুন্দেলখন্ডের নামে এবং কৃষকদের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হ’ত, কিন্তু তা দিয়ে কৃষকদের কোনও লাভ হ’ত না। এখন দেশবাসী সেই দিনগুলি পেছনে ফেলে এসেছে। এখন দিল্লির রাজকোষ থেকে প্রদত্ত প্রতিটি পয়সা সুবিধাভোগীদের হাতে পৌঁছচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় আজ কিষাণ সম্মাননিধি প্রকল্পের পরিধিকে আরও বিস্তারিত করা হ’ল। এখন যাঁরা এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী, তাঁরা যাতে ব্যাঙ্ক থেকে সহজে ঋণও পেতে পারেন, সেজন্য সকল কৃষকদের ক্রেডিট কার্ড পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। আমাদের গরিব ও ক্ষুদ্র কৃষকদের যাতে সুদখোর মহাজনদের কাছে না যেতে হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে তাঁদের জন্য এই ক্রেডিট কার্ড পরিষেবা চালু করা হচ্ছে।
ভাই ও বোনেরা,
পিএম কিষাণ যোজনার সমস্ত সুবিধাভোগীদের এই কিষাণ ক্রেডিট কার্ড পরিষেবা প্রদানের চেষ্টা করা হচ্ছে। এখনও প্রায় ১ কোটি ৭৫ লক্ষ সুবিধাভোগী এই পরিষেবা থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছেন। তাঁদেরকে এই পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করার জন্য এই মাসে ১৫ দিনের একটি বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে, ৪০ লক্ষেরও বেশি কৃষককে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করা গেছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন বন্ধুর হাতে কিছুক্ষণ আগে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড তুলে দেওয়া হয়েছে।
ভাই ও বোনেরা,
পিএম কিষাণ যোজনার সুবিধাভোগীদের পিএম জীবন জ্যোতি বিমা এবং পিএম জীবন সুরক্ষা বীমার সঙ্গেও যুক্ত করা হচ্ছে। এর ফলে, কৃষক বন্ধুদের সঙ্কটের সময় ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিমার টাকা পাওয়া সুনিশ্চিত হবে।
বন্ধুগণ,
সম্প্রতি সরকার প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা সংশ্লিষ্ট আরও একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হওয়াকে ঐচ্ছিক করে দেওয়া হয়েছে। আগে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ গ্রহণকারী বন্ধুদের এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হতেই হ’ত। কিন্তু এখন কৃষকরা নিজের ইচ্ছায় যুক্ত হতেও পারেন আবার নাও পারেন। নিজের ইচ্ছাতেই এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হওয়া কৃষকদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হওয়া কৃষকদের জন্য অত্যন্ত লাভজনক হয়ে উঠেছে। তিন বছরে ১৩ হাজার কোটি টাকা প্রিমিয়াম জমা হয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই কৃষকদের ৫৬ হাজার কোটি টাকার দাবি নিষ্পত্তি হয়েছে। অর্থাৎ, সঙ্কটের সময় এই প্রকল্প এ ধরনের কৃষকদের জন্য বরদান-স্বরূপ হয়ে উঠেছে।
বন্ধুগণ,
চলতি বছরের বাজেটেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেগুলি কৃষকদের উপকারে লাগবে। কৃষকদের আয় বৃদ্ধির জন্য একটি ১৬ দফা কর্মসূচি রচনা করা হয়েছে।
গ্রামে শস্য মজুত করার জন্য আধুনিক গুদামঘর নির্মাণ, পঞ্চায়েত স্তরে হিমঘর নির্মাণ, গৃহপালিত পশুদের খাদ্য সরবরাহের জন্য একটি বড় প্রকল্প রচনা করা হয়েছে।
এছাড়া, গ্রাম থেকে কৃষক ও পশুপালকরা কিভাবে সুরক্ষিতভাবে ফল, সবজি, দুধ, মাছের মতো দ্রুত পচনশীল পণ্য বাজারগুলিতে নিয়ে যাবেন, সেদিকে লক্ষ্য রেখে কিষাণ রেলের মতো পরিষেবা চালু করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
ভাই ও বোনেরা,
আমাদের দেশে গ্রামীণ বাজার থেকে শুরু করে নিকটবর্তী বড় হাট, পাইকারি বাজার ও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে কৃষকদের যুক্ত করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সেজন্য সরকার গ্রামীণ খুচরো কৃষি বাজার সম্প্রসারণের কাজ করছে। দেশে ২২ হাজার গ্রামীণ হাটের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর উন্নয়ন করা হচ্ছে। সরকার চায়, কৃষকরা তাঁদের ফসলের ক্ষেত থেকে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে এমন পরিষেবা পান, যা তাঁদের দেশের যে কোনও বাজারের সঙ্গে যুক্ত করতে পারে। আগামী দিনে এই গ্রামীণ হাট কৃষি অর্থনীতির নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠবে। সেজন্য গ্রামীণ হাটগুলিকে বড় বাজার কিংবা এপিএমসি-গুলির সঙ্গে যুক্তকরণের মাধ্যমে বিশ্ব বাজারের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। আমাদের কৃষকদের যাতে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে অনেক দূরে যেতে না হয়, সেজন্য এই প্রচেষ্টা। এই প্রচেষ্টার ফলে ইউপি সহ সারা দেশের হাজার হাজার গ্রামীণ হাট-কে এপিএমসি এবং ই-ন্যামের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
এই ই-ন্যাম মঞ্চ রাষ্ট্রীয় বাজারের মাধ্যমে মোবাইল ফোন কিংবা কম্প্যুটার ব্যবহারকারী কৃষকরা তাঁদের ফলন সারা দেশের যে কোনও জায়গায় বিক্রি করতে পারছেন। এই ব্যবস্থার জনপ্রিয়তা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যেই ইউপি-তে ১০০টিরও বেশি বাজারকে এই মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই রাষ্ট্রীয় মান্ডির মাধ্যমে সারা ভারতে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে। দেশের কৃষকরা প্রযুক্তির সাহায্যে সরাসরি ১ লক্ষ কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে।
বন্ধুগণ,
গোষ্ঠী থেকে শক্তি পাওয়া যায়। আর এই সামগ্রিক শক্তির মাধ্যমে কৃষকদের আরও সমৃদ্ধি হবে। কৃষকরা যাতে ন্যায্য দাম পান, তা সুনিশ্চিত করতে এখন কৃষকদেরই সামূহিক শক্তিকে প্রয়োগ করা হবে। আজ চিত্রকূটে যে নতুন এফপিও চালু হয়েছে, তার পেছনেও এই ভাবনাই কাজ করছে। এই ভাবনা দেশের ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র, প্রান্তিক কৃষকদের জন্য লাভদায়ক – যাঁদের সংখ্যা এদেশে সর্বাধিক। একজন কৃষকের স্থানে যখন গ্রামের অনেক কৃষক একসঙ্গে বীজ থেকে বাজার পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, তখন তাঁদের ক্ষমতা নিশ্চিতভাবেই অনেক বৃদ্ধি পাবে।
একবার ভাবুন, গ্রামের কৃষকরা একসঙ্গে যদি সার কিনে আনেন, তা হলে তাঁদের পরিবহণ খরচ কত কমে যাবে। এভাবে কিনলে বেশি ছাড়ও পাওয়া যায়। ফসল উৎপাদনের পর বাজারে নিয়ে যাওয়ার সময়ও যদি এরকম চেষ্টা করা হয়, তা হলে সকলেরই সাশ্রয় হবে। মান্ডিতে ব্যবসায়িক ক্রেতাদের সঙ্গে আপনারা আরও ভালোভাবে দরদাম করতে পারবেন।
ভাই ও বোনেরা,
বিগত কয়েক বছরে এই এফপিও-গুলির সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে এগুলির অভূতপূর্ব বিস্তার ঘটানো হচ্ছে। কৃষক ও উৎপাদকদের এই গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমে কৃষি ফলনের অধিক রপ্তানির উপযোগী পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। যেমন – আলু কিংবা এখানকার অরণ্যে যেসব ফসল উৎপাদিত হয়, সেগুলির দাম খুব কম থাকে। কিন্তু যদি সেগুলির চিপস্ বানিয়ে ভালো মোড়কজাত করে বাজারে পাঠানো যায়, তা হলে অনেক গুণ বেশি দাম পাওয়া যায়। এই এফপিও-গুলির মাধ্যমে এ ধরনের উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার প্রত্যেক এফপিও-কে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সাহায্যের ব্যবস্থা করেছে। যেমন – এখানে যোগীজীর সরকার ‘এক জনপদ, এক ফলন’ প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পের সঙ্গেও এই সংগঠনগুলিকে যুক্ত করা হচ্ছে। আদিবাসী অঞ্চল ও চিত্রকূটের মতো দেশের শতাধিক উচ্চাকাঙ্খী জেলার এফপিও-গুলিকে অধিক উৎসাহ প্রদানের জন্য সরকার সচেষ্ট। প্রত্যেক ব্লকে নিদেনপক্ষে একটি এফপিও অবশ্যই গড়ে তুলতে হবে। এর মাধ্যমে আদিবাসী অঞ্চলগুলির বন্য ফলনের মূল্য সংযোজন আরও গুরুত্ব পাবে। চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে অধিক সংখ্যক বোনেরা এই সংগঠনগুলির সঙ্গে যুক্ত হন।
বন্ধুগণ,
যে অভিযানের মাধ্যমে বুন্দেলখণ্ডসহ গোটা ভারতের মানুষ উপকৃত হবেন –তা হল জল জীবন মিশন। এখন দেশের প্রত্যেক মানুষকে জলযুক্ত ও খরামুক্ত করার সংকল্প নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। আগামী পাঁচ বছরে দেশের প্রায় ১৫ কোটি পরিবারে বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার সংকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এক্ষেত্রেও উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এটা এমন প্রকল্প, যা আপনাদেরকেই পরিচালনা করতে হবে, প্রত্যেক গ্রামবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার আপনাদের হাতেই তহবিল তুলে দেবে, কাজ আপনাদের করতে হবে। কোথা দিয়ে পাইপ যাবে, কোথায় জল জমা করা হবে, সেই জল কিভাবে সংরক্ষণ ও দূষণমুক্ত রাখা যাবে, তা গ্রামবাসীকে ঠিক রাখতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের বোনেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। এটাই সাবলম্বন, এটাই গ্রাম ক্ষমতায়নের ভাবনা, এটাই গান্ধীজীর গ্রাম স্বরাজের পরিকল্পনা। আর এই উদ্দেশ্য সিদ্ধ করতেই নানাজী দেশমুখ নিজের জীবন সমর্পণ করেছেন।
বন্ধুগণ,
উত্তর প্রদেশের কৃষক, ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোগীদের দ্রুত বিকাশ এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। সেজন্য যোগীজী এবং তাঁর সরকার এক্সপ্রেস গতিতে কাজ করছে। বুন্দেলখন্ড এক্সপ্রেসওয়ে, পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ে কিংবা প্রস্তাবিত গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। উত্তর প্রদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম করার পাশাপাশি, কর্মসংস্থানের অনেক সুযোগ গড়ে তুলবে। আগে শুধু দিল্লি, মুম্বাইয়ের মতো বড় শহরেই এক্সপ্রেসওয়ে দেখা যেত, এখন চিত্রকূট, বান্দা, মহোবা, হামিরপুর, জালৌন, ঔরাইয়ার মানুষও এমন আধুনিক এক্সপ্রেসওয়ে-তে যাতায়াত করবেন। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আধুনিক সড়ক নির্মাণ হয়ে গেলে আপনারা অত্যন্ত কম সময়ে সরাসরি লক্ষ্ণৌ ও দিল্লি পৌঁছতে পারবেন।
ভাই ও বোনেরা,
এই আধুনিক পরিকাঠামো এখানকার নতুন শিল্পগুলি এবং নতুন শিল্পোদ্যোগগুলিকে বিকশিত করবে। কাকতালীয়ভাবে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ঝাঁসিতে ইউপি ডিফেন্স করিডর শিলান্যাস করতে এসেছিলাম। আর এ বছর বুন্দেলখন্ড এক্সপ্রেসওয়ের শিলান্যাস হচ্ছে। এ বছরের বাজেটে ইউপি ডিফেন্স করিডরের জন্য ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই দুটি প্রকল্পের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বুন্দেলখন্দ এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে ইউপি ডিফেন্স করিডরের কাজের গতিও বাড়বে।
বন্ধুগণ,
একটা সময় এই অঞ্চল থেকে ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীরেরা জন্মেছেন। আর আগামী দিনে এই অঞ্চল ভারতের যুদ্ধ সরঞ্জাম উৎপাদনে আত্মনির্ভর করে তোলা অঞ্চল রূপে পরিচিত হবে। এই বুন্দেলখন্ড ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র বড় কেন্দ্র হয়ে উঠতে চলেছে। এখানে নির্মিত যুদ্ধ সরঞ্জাম সারা পৃথিবীতে রপ্তানি হবে। যখন এখানে বড় বড় কারখানা চালু হবে, তখন চারপাশে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগগুলিও লাভবান হবে, এখানকার কৃষকরাও লাভবান হবেন। এভাবে অনেক অভূতপূর্ব কর্মসংস্থানের সুযোগ গড়ে উঠবে এবং প্রত্যেক পরিবারের আয় বাড়বে।
ভাই ও বোনেরা,
যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন পরিকাঠামো এখানকার পর্যটন শিল্পকেও উন্নত করবে। চিত্রকূটে যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে, তেমনই অনেক আধ্যাত্মিক কেন্দ্রও রয়েছে। প্রভু রামের চরণ, যেখানে যেখানে পড়েছে, সেগুলিকে যুক্ত করে রামায়ণ সার্কিট রূপে বিকশিত করা হয়েছে। চিত্রকূট, এর একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। রামায়ণ সার্কিট ভ্রমণ, দেশি-বিদেশি পর্যটক ও ভক্তদের সুবিধার্থে রামায়ণ এক্সপ্রেস নামক বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়েছে। আগামী দিনে যখন পরিকাঠামো গড়ে উঠবে, এখানে ভক্তদের আনাগোণা বৃদ্ধি পাবে। ফলে, স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থানের নতুন নতুন সুযোগ গড়ে উঠবে।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, চিত্রকূট তথা বুন্দেলখন্ড মাধ্যমে, ইউপি তথা সমগ্র ভারতের আশা-আকাঙ্ক্ষা এক্সপ্রেস গতিতে এগিয়ে যাবে। সাধনা, তপস্যার তেজে পবিত্র এই মাটি নতুন ভারতের স্বপ্নগুলি বাস্তবায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠবে। এই আশা নিয়েই এখানকার সমস্ত নাগরিকদের, আপনাদের সবাইকে উন্নয়ন প্রকল্পগুলির জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আমার কৃষক ভাইবোনেদেরও অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। এই বুন্দেলখন্ড শুধু নিজের নয়, ভারতের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
ভারতমাতা কী জয়
ভারতমাতা কী জয়
জয় জওয়ান, জয় কিষাণ
জয় জওয়ান, জয় কিষাণ
ডিফেন্স করিডর – এই জওয়ান
এফপিও-র সূত্রপাত – এই কিষাণ
জয় জওয়ান, জয় কিষাণের মন্ত্র নিয়ে বুন্দেলখন্ড যাতে এগিয়ে যায়, এই শুভেচ্ছা জানিয়ে অনেক অনেক ধন্যবাদ।