দেশের অর্থনৈতিক এবং আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধির প্রতিফলন ঘটেছে কর্ণাটকে। ভারতের সুপ্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলার মধ্য দিয়ে ২১ শতকের জন্য গৃহীত সংকল্পের বাস্তবায়ন যে সম্ভব তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হল এই রাজ্যটি। ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার সমন্বয় আমরা লক্ষ্য করি মাইশূরুতে। এই কারণেই আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উদযাপনের এক অন্যতম স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে এই শহরটিকে।
কর্ণাটকের মাইশূরুতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সূচনাকালে এই মত ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, কর্ণাটকে আমরা বহু মনীষী ও মহান ব্যক্তিত্বের সন্ধান লাভ করেছি। সাধারণ মানুষের জীবনে কিভাবে সুযোগ-সুবিধার প্রসার ঘটানো যায় এবং তাদের আত্মসম্ভ্রম বৃদ্ধি করা যায় সে সম্পর্কে আমরা শিক্ষালাভ করেছি ঐ মনীষী ও মহান ব্যক্তিদের কাছ থেকে। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াস’ এই মন্ত্রের বাস্তবায়ন আমরা লক্ষ্য করেছি মাইশূরুতে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান বছরটি হল দেশের ৭৫তম স্বাধীনতা উদযাপনের বছর। গত ৭ দশকে কর্ণাটকে বহু সরকারই ক্ষমতায় এসেছে এবং প্রত্যেক সরকারই দরিদ্র, দলিত, বঞ্চিত, অনগ্রসর শ্রেণী, কৃষক, নারী এবং সর্বোপরি সমস্ত গ্রামবাসীর কল্যাণের কথাই উচ্চারণ করেছে। কিন্তু কাজ হয়েছে অতি সামান্যই। ২০১৪ সালে দেশ সেবার সুযোগ পেয়ে আমরা বহু প্রাচীন ব্যবস্থা ও পদ্ধতির পরিবর্তন সাধন করেছি। প্রতিটি সাধারণ মানুষ যাতে সরকারি কর্মসূচির সুফল ভোগ করতে পারেন তা নিশ্চিত করার জন্য সচেষ্ট হয়েছি আমরা। গত ৮ বছরে দরিদ্র মানুষের কল্যাণে বহু কর্মসূচিরই আমরা প্রসার ঘটিয়েছি। আমরা বাস্তবায়ন ঘটিয়েছি ‘এক জাতি, এক রেশন কার্ড’ কর্মসূচির। গত দু-বছর ধরে কর্ণাটকের সাড়ে চার কোটিরও বেশি মানুষ বিনামূল্যে রেশনের পণ্য সামগ্রী পেয়ে আসছেন। অন্য রাজ্যে গেলেও ঐ একই রেশন কার্ডের সাহায্যে সেখানে তারা এই সুবিধা লাভ করতে পারবেন। ‘আয়ুষ্মান ভারত’ কর্মসূচির সুফল পৌঁছে গেছে দেশের প্রতিটি প্রান্তে। এর আওতায় কর্ণাটকের ২৯ লক্ষ গরিব রোগী বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগ লাভ করেছেন। এরফলে দরিদ্র মানুষের মোট সাশ্রয় ঘটেছে ৪ হাজার কোটি টাকার। আমি এও লক্ষ্য করেছি যে দূর্ঘটনায় মুখ বিকৃতির শিকার একজন তরুণও আয়ুষ্মান কার্ডের সাহায্যে চিকিৎসার সুযোগ পেয়ে নতুন জীবন লাভ করেছে।
শ্রী মোদী বলেন, গত ৮ বছরে সরকারি কর্মসূচি রূপায়ণের ক্ষেত্রে যে বিষয়টিকে আমরা বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছি তা হল, এর সুফল যাতে দেশের প্রতিটি প্রান্তের মানুষের কাছে সাফল্যের সঙ্গে পৌঁছে যায়। স্টার্টআপ নীতির আওতায় একদিকে যেমন আমরা দেশের তরুণ ও যুব সমাজকে প্রচুর সুযোগ-সুবিধা দিয়েছি অন্যদিকে তেমনি প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধির অর্থ পৌঁছে গেছে ৫৬ লক্ষ ক্ষুদ্র কৃষকের কাছে। মুদ্রা যোজনায় কিষাণ ক্রেডিট কার্ড সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প ও কর্মসূচি রূপায়নের সুবাদে ক্ষুদ্র কৃষক, রাস্তার দোকানদার এবং অন্যান্যরা সহজ শর্তে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ গ্রহণের সুযোগ লাভ করেছেন। মুদ্রা যোজনার আওতায় কর্ণাটকের লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগী ১ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণের সুযোগ পেয়েছেন। সামাজিক ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন আমাদের সাফল্যের আর একটি নিদর্শন। সাধারণ দরিদ্র মানুষের ক্ষমতায়ন ঘটেছে এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজাদি কা অমৃতকাল’-এ দেশের প্রত্যেক নাগরিক যাতে জাতির উন্নয়নে অংশগ্রহণ করতে পারেন তা সুনিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সকল রকম পদক্ষেপই গ্রহণ করা হচ্ছে। আমাদের দিব্যাঙ্গ ভাই-বোনদের একসময় শারীরিক অপটুতার কারণে পদে পদে বিপদের সম্মুখীন হতে হত। কিন্তু কেন্দ্রের বর্তমান সরকার তাঁদের এই কষ্ট অনেকাংশে লাঘব করার চেষ্টা করেছে। এমনকি দেশের মুদ্রা ব্যবস্থায় দিব্যাঙ্গদের সুবিধার জন্য বিশেষ কয়েন চালু করা হচ্ছে। দেশের কোটি কোটি দিব্যাঙ্গ ভাই-বোনদের সহায়ক সাজ-সরঞ্জামও বিনামূল্যে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিব্যাঙ্গ ভাই-বোনদের জন্য অনেক কিছুই করার রয়েছে দেশের স্টার্টআপ সংস্থাগুলিরও। তাই স্টার্টআপ সংস্থাগুলিকে আমরা উৎসাহিত করেছি দিব্যাঙ্গদের জন্য উদ্ভাবনী কিছু করে দেখানোর জন্য।
প্রধানমন্ত্রীর মতে, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা এবং বাণিজ্যিক কাজকর্মকে সহজতর করে তোলার পিছনে আধুনিক পরিকাঠামোরও এক বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং কর্ণাটকের রাজ্য সরকার একযোগে বিশেষ কাজ করে চলেছে এই লক্ষ্যে। এই রাজ্যটির ৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ জাতীয় সড়কের উন্নয়নে কেন্দ্রের তরফে মঞ্জুর করা হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। ব্যাঙ্গালোরে ৭ হাজার কোটি টাকার জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্পের শিলান্যাস ছাড়াও ৩৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হবে কর্ণাটকে হাজার হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে। গত ৮ বছরে কর্ণাটকে রেল সংযোগও উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসার লাভ করেছে। উন্নয়নের এই গতি রাজ্যে অপ্রতিহতভাবে এগিয়ে চলবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা ব্যক্ত করেন।