নমস্কার!
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহযোগী শ্রী পীযূষ গোয়েলজি, শ্রী মনসুখ মাণ্ডব্যজি, শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবজি, শ্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালজি, শ্রী পুরুষোত্তম রুপালাজি, শ্রী জি.কিষাণ রেড্ডিজি, শ্রী পশুপতি কুমার পারসজি, শ্রী জিতেন্দ্র সিং-জি, শ্রী সোম প্রকাশজি, সারা দেশ থেকে এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া স্টার্ট-আপ বিশ্বের সমস্ত সফল ব্যক্তিগণ, আমার নবীন বন্ধুগণ, অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ আর আমার ভাই ও বোনেরা,
আমরা সবাই ভারতীয় স্টার্ট-আপ-এর সাফল্য দেখেছি আর সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের প্রেজেন্টেশনও দেখেছি। আপনারা সবাই খুব ভালো কাজ করছেন। এই ২০২২ সালটিতে আপনারা ভারতীয় স্টার্ট-আপ ইকো-সিস্টেমের জন্য আরও নতুন নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছেন। স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পূর্তি উৎসবের অঙ্গ হিসেবে ‘স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া ইনোভেশন উইক’ বা উদ্ভাবন সপ্তাহের এই আয়োজন আরও গুরুত্বপূর্ণ। যখন ভারত স্বাধীনতার শতবর্ষ পূরণ করবে, সেই সুন্দর ভারতের নির্মাণের ক্ষেত্রে আপনাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
দেশের সেই সকল স্টার্ট-আপগুলিকে, সমস্ত উদ্ভাবক যুবক-যুবতীকে আমি অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই; আপনারা স্টার্ট-আপ-এর বিশ্বে ভারতের পতাকাকে উঁচুতে তুলে ধরেছেন। স্টার্ট-আপ-এর এই সংস্কৃতি দেশের দূরদুরান্তে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ১৬ জানুয়ারি দিনটি আমরা এখন থেকে ‘ন্যাশনাল স্টার্ট-আপ ডে’ বা জাতীয় স্টার্ট-আপ দিবস রূপে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বন্ধুগণ,
‘স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া ইনোভেশন উইক’ বিগত বছরের সাফল্যগুলিকে উদযাপন করার জন্য আর ভবিষ্যতের রণনীতি নিয়ে চর্চা করার জন্য আয়োজন করা হয়েছে। এই দশককে ভারতের ‘টেকেড’ বা টেকনলজিক্যাল ডিকেড বলা হচ্ছে। এই দশকে উদ্ভাবন, আন্ত্রেপ্রেনিওরশিপ এবং স্টার্ট-আপ ইকো-সিস্টেমকে মজবুত করার জন্য সরকার অনেক বড় বড় পরিবর্তন আনছে। এর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা রয়েছে –
প্রথমত, আন্ত্রেপ্রেনিওরদের উদ্ভাবন এবং আন্ত্রেপ্রেনিওরশিপকে সরকারি প্রক্রিয়ার জাল থেকে বা ‘ব্যুরোক্র্যাটিক সিলোস’ থেকে মুক্ত করা। দ্বিতীয়ত, উদ্ভাবনকে উৎসাহ যোগানোর জন্য ‘ইনস্টিটিউশনাল মেকানিজম’ বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া গড়ে তোলা আর তৃতীয়ত, নবীন উদ্ভাবকদের, নবীন শিল্পোদ্যোগীদের ‘হ্যান্ড হোল্ডিং’ করা, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো। ‘স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া’, ‘স্ট্যান্ড-আপ ইন্ডিয়া’ – এই ধরনের প্রোগ্রাম এই প্রচেষ্টারই অঙ্গ।
‘এঞ্জেল ট্যাক্স’-এর সমস্যাগুলি সমাপ্ত করা এবং ট্যাক্স ফাইলিংকে সরল করা, ‘অ্যাক্সেস টু ক্রেডিট’কে সহজ করা আর হাজার হাজার কোটি টাকার সরকারি ফান্ডিং-এর ব্যবস্থা করা – এই সমস্ত সুবিধা আমাদের দায়বদ্ধতাকে তুলে ধরে। ‘স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া’র মাধ্যমে স্টার্ট-আপগুলিকে নয়টি শ্রম আইন এবং তিনটি পরিবেশ আইন সংশ্লিষ্ট কমপ্লায়েন্সেসকে ‘সেলফ সার্টিফাই’ বা স্ব-শংসায়নের সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
প্রয়োজনীয় নথিপত্রের স্ব-প্রত্যায়নের মাধ্যমে সরকারি প্রক্রিয়াগুলিকে আরও সরল করে তোলার যে প্রক্রিয়া আমরা শুরু করেছিলাম তা আজ ২৫ হাজারেরও বেশি কমপ্লায়েন্সেসকে সমাপ্ত করার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। স্টার্ট-আপগুলি যাতে সরকারকে নিজেদের পণ্য কিংবা পরিষেবা সহজেই দিতে পারে তা সুনিশ্চিত করতে গর্ভনমেন্ট ই-মার্কেট প্লেস বা জিইএম প্ল্যাটফর্মে ‘স্টার্ট-আপ রানওয়ে’ও খুব ভালো কাজে লাগছে।
বন্ধুগণ,
নিজেদের নবীন প্রজন্মের সামর্থ্যের ওপর ভরসা, তাঁদের সৃষ্টিশীলতার ওপর আস্থা যে কোনও দেশের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হয়। ভারত আজ তার নবীন প্রজন্মের এই সামর্থ্যকে চিনে নিয়ে নানা নীতি প্রণয়ন করছে, নানা সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়িত করছে। ভারতে ১ হাজারেরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, ১১ হাজারেরও বেশি স্ট্যান্ড-অ্যালোন ইনস্টিটিউশন রয়েছে, ৪২ হাজারেরও বেশি কলেজ রয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ স্কুল রয়েছে। এগুলি ভারতের অনেক বড় শক্তি।
দেশে ছাত্রছাত্রীরা যাতে ছোটবেলাতেই উদ্ভাবনের প্রতি আকর্ষিত হয়, আমরা সেরকম আবহ গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। উদ্ভাবনকে প্রাতিষ্ঠানিক করে তোলার চেষ্টা করছি। আজ দেশের স্কুলগুলিতে ৯ হাজারেরও বেশি অটল টিঙ্কারিং ল্যাবস শিশুদের উদ্ভাবনের পথে এগিয়ে যাওয়ার, নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে। অটল ইনোভেশন মিশনের মাধ্যমে আমাদের নবীন প্রজন্মের মানুষেরা তাদের উদ্ভাবক ভাবনাগুলি নিয়ে কাজ করার নতুন নতুন প্ল্যাটফর্ম পাচ্ছেন। তাছাড়া সারা দেশের স্কুল ও কলেজগুলিতে হাজার হাজার গবেষণাগারের নেটওয়ার্ক প্রত্যেক ক্ষেত্রে উদ্ভাবনকে উৎসাহ যোগাচ্ছে। দেশের সামনে উপস্থিত প্রতিকূলতাগুলির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রেও আমরা উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি-ভিত্তিক সমাধানের ওপর জোর দিচ্ছি। আমরা অনেক হ্যাকাথনের আয়োজন করেছি। সেগুলিতে নবীন প্রজন্মের অসংখ্য যুবক-যুবতী অংশগ্রহণ করেছেন আর তাঁরা আমাদের রেকর্ড সময়ের মধ্যে অনেক বেশি উদ্ভাবক সমাধান দিয়েছেন।
এটা আপনারাও হয়তো অনুভব করছেন যে সরকারের নানা বিভাগ, ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রক কিভাবে তরুণদের উৎসাহ যোগায়, আর যাঁরা স্টার্ট-আপ-এর সঙ্গে সম্পর্কে রাখে তাঁদের নতুন নতুন ভাবনাগুলিকে উৎসাহ যোগায়! নতুন ড্রোন আইন প্রণয়ন থেকে শুরু করে নতুন মহাকাশ নীতি, যত বেশি সম্ভব নবীনদের উদ্ভাবনের সুযোগ দেওয়া যায় তা সুনিশ্চিত করাই সরকারের অগ্রাধিকার।
আমাদের সরকার আইপিআর রেজিস্ট্রেশন সংশ্লিষ্ট যে নিয়মগুলি ছিল সেগুলিকেও অনেক সরল করে দিয়েছে। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি মিলেমিশে আজ একযোগে দেশের শত শত ইনকিউবেটরগুলিকে সাহায্য করছে। আজ দেশে ‘আই-ক্রিয়েট’-এর মতো সংস্থা ইনোভেশন ইকো-সিস্টেমকে উন্নত করতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ‘আই-ক্রিয়েট’, অর্থাৎ ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর আন্ত্রেপ্রেনিওরশিপ অ্যান্ড টেকনলজি। এই সংস্থা অনেক স্টার্ট-আপকে শুরুতেই মজবুত করে তুলছে। উদ্ভাবনকে উৎসাহ যোগাচ্ছে।
আর বন্ধুগণ,
সরকারের এই প্রচেষ্টাগুলির প্রভাবও আমরা দেখতে পাচ্ছি। ২০১৩-১৪ সালে যেখানে ৪ হাজার পেটেন্ট স্বীকৃত হয়েছিল, সেখানে গত বছর ২৮ হাজারেরও বেশি পেটেন্ট স্বীকৃত হয়েছে। ২০১৩-১৪ সালে যেখানে প্রায় ৭০ হাজার ট্রেডমার্ক রেজিস্টার হয়েছিল, ২০২১-এ সেখানে ২ লক্ষ ৫০ হাজারেরও বেশি ট্রেডমার্ক রেজিস্টার করা হয়েছে। ২০১৩-১৪ সালে যেখানে মাত্র ৪ হাজার কপিরাইট গ্র্যান্ট করা হয়েছিল, গত বছর এর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৬ হাজার পেরিয়ে গেছে। উদ্ভাবন নিয়ে ভারতে যে অভিযান চলছে তার প্রভাবে গ্লোবাল ইনোভেশন ইন্ডেক্সেও ভারতের র্যাঙ্কিং অনেক উন্নত হয়েছে। ২০১৫-তে এই র্যাঙ্কিং-এ ভারত ৮১ নম্বরে আটকে ছিল। এখন ইনোভেশন ইন্ডেক্সে ভারত ৫০ ধাপ এগিয়ে ৪৬ নম্বরে রয়েছে।
বন্ধুগণ,
ভারতের স্টার্ট-আপ ইকো-সিস্টেম আজ বিশ্বে নিজের বিজয় পতাকা উড়িয়েছে। ভারতের স্টার্ট-আপ ইকো-সিস্টেমের শক্তি হল এর প্রতি তরুণ প্রজন্মের আবেগ, নিষ্ঠা এবং ঐকান্তিকতা। ভারতের স্টার্ট-আপ ইকো-সিস্টেমের শক্তি হল ক্রমাগত নিজেকে আবিষ্কার ও পুনরাবিষ্কার। ক্রমাগত সংস্কারের মাধ্যমে নিজের শক্তিকে বাড়িয়ে চলা। ভারতের এই স্টার্ট-আপ ইকো-সিস্টেম ক্রমাগত একটি ‘লার্নিং মোড’-এ রয়েছে, ‘চেঞ্জিং মোড’-এ রয়েছে। নতুন নতুন পরিস্থিতি অনুসারে নিজেকে তৈরি করছে। আজ ভারতের ইকো-সিস্টেম ৫৫টি ভিন্ন ভিন্ন শিল্পোদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। এটা আমাদের প্রত্যেকের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে, পাঁচ বছর আগে দেশে যেখানে ৫০০টি স্টার্ট-আপও ছিল না, আজ সেখানে ৭ হাজারেরও বেশি স্টার্ট-আপ কাজ করছে। আপনাদের উদ্ভাবনের শক্তি রয়েছে, আপনাদের নতুন নতুন ভাবনা রয়েছে, আপনারা নবীন প্রজন্মের প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ আর আপনারা ব্যবসার সমস্ত আদবকায়দাই বদলে দিচ্ছেন। আমাদের স্টার্ট-আপগুলি সম্পূর্ণ ব্যবসার নিয়মই বদলে দিচ্ছে। সেজন্য আমি মনে করি, এই স্টার্ট-আপগুলি নতুন ভারতের মেরুদণ্ড হয়ে উঠবে।
বন্ধুগণ,
নতুন শিল্পোদ্যোগ বা আন্ত্রেপ্রেনিওরশিপ থেকে শুরু করে ক্ষমতায়ন বা এমপাওয়ারমেন্টের এই প্রাণশক্তি আমাদের দেশে উন্নয়ন থেকে শুরু করে নানা আঞ্চলিকতার সমস্যা এবং লিঙ্গ বৈষম্যের সমস্যাগুলিরও সমাধান করছে। আগে যেখানে বড় বড় শহরে বা মেট্রো শহরগুলিতেই বড় বড় ব্যবসা ফুলে-ফেঁপে উঠত, আজ সেখানে দেশের প্রত্যেক রাজ্যে ৬২৫টিরও বেশি জেলাতেই ন্যূনতম একটি করে স্টার্ট-আপ রয়েছে। আজ প্রায় অর্ধেক স্টার্ট-আপ টিয়ার-২ এবং টিয়ার-৩ শহরগুলিতে রয়েছে। এই স্টার্ট-আপগুলি সামান্য গরীব পরিবার থেকে উঠে আসা যুবক-যুবতীদের ভাবনাচিন্তাকেও ব্যবসায় সুফলদায়ক করে তুলছে। এই স্টার্ট-আপগুলি আজ লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতীকে কর্মসংস্থান যোগাচ্ছে।
বন্ধুগণ,
যে গতি এবং যে মাত্রায় আজ ভারতের নবীন প্রজন্ম স্টার্ট-আপ তৈরি করছে তা বিশ্বব্যাপী মহামারীর এই সঙ্কটকালেও ভারতবাসীর প্রবল ইচ্ছাশক্তি এবং সঙ্কল্পশক্তি প্রমাণ। আগে যখন সময় খুব অনুকূল ছিল, তখনও একটা-দুটো কোমানিই নিজেদেরকে বড় করে তুলতে পারত। কিন্তু গত বছরে আমাদের দেশে ৪২টি ইউনিকর্ন গড়ে উঠেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা লাভের মুখ দেখা এই কোম্পানিগুলি আত্মনির্ভর হয়ে ওঠা আত্মবিশ্বাসী ভারতের পরিচয় বহন করছে। আজ ভারত দ্রুতগতিতে ইউনিকর্ন-এর সেঞ্চুরি করার দিকে এগিয়ে চলেছে। আমি মনে করি, এখন ভারতে স্টার্ট-আপ-এর স্বর্ণযুগ শুরু হতে চলেছে। ভারতের যে বৈচিত্র্য রয়েছে, এটাই আমাদের সবচাইতে বড় শক্তি। আমাদের বৈচিত্র্যই আমাদের আন্তর্জাতিক পরিচিতির ভিত্তি।
আমাদের ইউনিকর্নগুলি এবং স্টার্ট-আপগুলি এই বৈচিত্র্যেরই বার্তাবাহক। ‘সিম্পল ডেলিভারি সার্ভিস’ থেকে শুরু করে ‘পেমেন্টস সলিউশনস’ এবং ‘ক্যাব সার্ভিস’ পর্যন্ত, আপনাদের কোম্পানিগুলির সম্প্রসারণ অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। আপনাদের আজ ভারতের মধ্যেই নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ বাজার, নানা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র এবং সেগুলির মধ্যে কাজ করার অনেক বড় অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেজন্য ভারতের স্টার্ট-আপগুলি সহজেই নিজেদের বিশ্বের অন্যান্য দেশে পৌঁছে দিতে পারে। সেজন্য আপনারা নিজেদের স্বপ্নগুলিকে শুধুই লোকাল না রেখে গ্লোবাল করে তুলুন। এই মন্ত্রটি মনে রাখবেন! আসুন, আমরা ভারতের জন্য উদ্ভাবন করি, ভারত থেকে উদ্ভাবন করি।
বন্ধুগণ,
স্বাধীনতার অমৃতকালে এটা সবার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার সময়। এটা সকলের প্রচেষ্টাতেই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলার সময়। আমি একথা জেনে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি যে, একটি গ্রুপ পিএম গতি শক্তি – ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে আমাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছে। এই গতি শক্তি প্রকল্পগুলির মধ্যে যে ‘এক্সট্রা স্পেস’ আছে, তার ব্যবহার ইভি চার্জিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার নির্মাণের জন্য করা যেতে পারে। এই মাস্টার প্ল্যানের মধ্যে আজ ট্রান্সপোর্ট, পাওয়ার, টেলিকম সহ সম্পূর্ণ ইনফ্রাস্ট্রাকচার গ্রিডকে ‘সিঙ্গল প্ল্যাটফর্ম’-এ আনা হচ্ছে। মাল্টি-মডেল এবং মাল্টি-পারপাস অ্যাসেট নির্মাণের এই অভিযানে আপনাদের অংশীদারিত্ব অত্যন্ত জরুরি।
এর মাধ্যমে আমাদের ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে নতুন নতুন চ্যাম্পিয়ন গড়ে তোলার শক্তি পাব। ডিফেন্স ম্যানুফ্যাকচারিং, চিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, ক্লিন এনার্জি এবং ড্রোন টেকনলজি সংশ্লিষ্ট অনেক ক্ষেত্রে দেশের উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনাগুলি আপনাদের সামনে রয়েছে।
সম্প্রতি নতুন ড্রোন পলিসি চালু হওয়ার পর দেশ এবং বিশ্বের অনেক বিনিয়োগকারী ড্রোন স্টার্ট-আপগুলির পেছনে লগ্নি করছেন। আর্মি, নেভি এবং এয়ারফোর্সের পক্ষ থেকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার অর্ডার ড্রোন কোম্পানিগুলি পেয়েছে। সরকার ‘স্বামীত্ব যোজনা’র জন্য বড় মাত্রায় গ্রামের সম্পত্তির মানচিত্রায়নের কাজে আজ ড্রোন ব্যবহার করছে। এখন তো ওষুধের হোম ডেলিভারি এবং কৃষিতেও ড্রোনের ব্যবহারের পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। সেজন্য এক্ষেত্রেও অনেক অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।
বন্ধুগণ,
দ্রুতগতিতে নগরায়ন আমাদের আরও একটি বড় অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। আজ আমাদের বর্তমান শহরগুলিকে ডেভেলপ করার পাশাপাশি নতুন নতুন শহর গড়ে তোলার জন্য অনেক বড় স্তরে কাজ চলছে। আর্বান প্ল্যানিং বা নগরোন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। এই কাজের মধ্যেও আমাদের এমন ‘ওয়াক টু ওয়ার্ক’ কনসেপ্ট এবং ইন্টিগ্রেটেড ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট নির্মাণ করতে হবে যেখানে শ্রমিকদের জন্য, মজুরদের জন্য উন্নত ব্যবস্থাপনা থাকবে। আর্বান প্ল্যানিং-এর নতুন সম্ভাবনাগুলি আপনাদের অপেক্ষায় রয়েছে। যেভাবে এখানে একটি গ্রুপ বড় শহরগুলির জন্য ‘ন্যাশনাল সাইক্লিং প্ল্যান’ এবং ‘কার-ফ্রি জোনস’-এর প্রস্তাব রেখেছে। এই প্রস্তাব শহরগুলিতে ‘সাস্টেনেবল লাইফস্টাইল’কে প্রোমোট করার জন্য অত্যন্ত জরুরি। আপনারা হয়তো সকলেই জানেন যে আমি যখন সিওপি-২৬ শীর্ষ সম্মেলনে গিয়েছিলাম, তখন আমি একটি ‘মিশন লাইফ’-এর কথা বলেছিলাম। আর এই লাইফের আমার যে ধারণা সেটা হল – ‘লাইফস্টাইল ফর এনভায়রনমেন্টস’। আমি মনে করি, আমাদের উচিৎ এই সমস্ত প্রযুক্তিতে জনগণকে কিভাবে অভ্যস্ত করব তা ভেবে দেখা। যেমন, ‘পি-থ্রি মুভমেন্ট আজ অনিবার্য। ‘পি-থ্রি’ মানে হল ‘প্রো-প্যানেট পিপল’। ‘পি-থি’ মুভমেন্ট মানে পরিবেশ-বান্ধব জনগণ। যতদিন পর্যন্ত আমরা সাধারণ মানুষকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন না করে তুলতে পারব, যতদিন পর্যন্ত বিশ্ব উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে যে লড়াই, সে লড়াইয়ের যোদ্ধা করে না তুলতে পারব, ততদিন আমরা এই লড়াই জিততে পারব না। সেজন্য ‘ভারত মিশন লাইফ’কে নিয়ে অনেক দেশকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করার কাজ করছে।
বন্ধুগণ,
স্মার্ট মোবিলিটির মাধ্যমে শহরগুলির জীবনযাপনের মান আরও সরল হবে এবং কার্বন নিঃসরণের জন্য আমাদের যে লক্ষ্য তা পূরণের ক্ষেত্রেও অনেক সহায়ক হবে।
বন্ধুগণ,
বিশ্বের সবচাইতে বড় মিলেনিয়াল মার্কেট হিসেবে নিজেদের পরিচয়কে ভারত ক্রমাগত শক্তিশালী করে তুলছে। মিলেনিয়াল আজ নিজেদের পরিবারের সমৃদ্ধি, আর দেশের আত্মনির্ভরতা উভয়েরই ভিত্তি। গ্রামীণ অর্থনীতি থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রি-৪.০ পর্যন্ত আমাদের প্রয়োজনগুলি এবং আমাদের সম্ভাবনা উভয়েই অসীম। ফিউচার টেনলজি সংশ্লিষ্ট গবেষণা এবং উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ আজ আমাদের সরকারের অগ্রাধিকার। কিন্তু, শিল্পোদ্যোগগুলিও যদি এক্ষেত্রে নিজেদের অবদান রাখে এবং তাদের পরিধি বাড়ায়, তাহলে খুব ভালো হয়।
বন্ধুগণ,
একবিংশ শতাব্দীর এই দশকে আপনাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে। দেশে এখন ক্রমে অনেক বড় বাজার খুলছে। আমাদের ডিজিটাল লাইফস্টাইল সবে হাটি-হাটি পা-পা করে চলতে শুরু করেছে। এখন আমাদের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যাই অনলাইন হতে পেরেছে। যে গতিতে, যে মাত্রায়, যে মূল্য দিয়ে আজ গ্রামে গ্রামে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর মানুষের কাছে সরকার ডিজিটাল অ্যাক্সেস প্রদানের কাজ করছে, তার ফলে অত্যন্ত কম সময়ে ভারতে প্রায় ১০০ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হবে।
যেভাবে দূরদুরান্তের এলাকাগুলিতে ‘লাস্ট মাইল ডেলিভারি’ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়ে উঠছে, যেভাবে গ্রামীণ বাজার এবং গ্রামীণ মেধার বড় সেতু গড়ে উঠছে, তার ভিত্তিতেই আমার ভারতের স্টার্ট-আপগুলির প্রতি অনুরোধ যে আপনারা এগুলিকে গ্রামের দিকে নিয়ে যান। এটা যেমন প্রতিকূলতা, তেমনই সুযোগও। মোবাইল ইন্টারনেট, ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি থেকে শুরু করে ফিজিকাল কানেক্টিভিটি সর্বত্র ক্ষেত্রে গ্রামের আকাঙ্ক্ষাগুলি আজ আরও বেশি করে বাস্তবায়িত হচ্ছে। গ্রাম এবং আধা-শহর এলাকা সম্প্রসারণের নতুন ঢেউয়ের অপেক্ষায়।
স্টার্ট-আপ সংস্কৃতি নতুন চিন্তাভাবনাকে যেভাবে গণতন্ত্রীকরণ করেছে, তার ফলে মহিলারা এবং স্থানীয় ব্যবসাকে ক্ষমতায়িত করা হয়েছে। আচার, পাপড় থেকে শুরু করে হস্তশিল্পের বিভিন্ন পণ্যের পরিধি ও বাজার আজ ব্যাপক রূপে বৃদ্ধি পেয়েছে। সচেতনতা বাড়ানোর জন্য সকলেই ক্রমে লোকালের জন্য ভোকাল হয়ে উঠছেন। একটু আগেই আমাদের জয়পুরের বন্ধু কার্তিক লোকালের জন্য গ্লোবাল নিয়ে কথা বললেন, আর তিনি ভার্চ্যুয়াল ট্যুরিজম নিয়েও কথা বললেন। আমার অনুরোধ, আপনারা যেভাবে বন্ধুদেরকে নিয়ে স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পূর্তি পালন করছেন, সেভাবেই আপনারা কি দেশের স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারেন, যাতে তারা নিজের নিজের জেলায়, প্রত্যেক শহরে স্বাধীনতার সঙ্গে যুক্ত যত ঘটনা রয়েছে, যত স্মারক রয়েছে, ইতিহাসের যত পাতা রয়েছে তা ভার্চ্যুয়াল ক্রিয়েটিভ কাজ করতে পারে? আর আপনাদের মতো স্টার্ট-আপ সেগুলির কমপ্লায়েন্স করুন আর স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে ভার্চ্যুয়াল ট্যুরের জন্য দেশকে নিমন্ত্রণ জানান। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে স্টার্ট-আপ বিশ্বের একটি অনেক বড় অবদান থাকবে। কাজেই আপনাদের ভাবনা খুব ভালো। সেই ভাবনাকে কিভাবে বাস্তবায়িত করা যায়, তা নিয়ে যদি আপনারা ভাবনা-চিন্তা করেন, সূত্রপাত করেন, আমি মনে করি একে আরও বেশি করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
বন্ধুগণ,
কোভিড লকডাউনের সময় আমরা দেখেছি যে স্থানীয় স্তরে কিভাবে ছোট ছোট উদ্ভাবক মডেল মানুষের জীবনকে সহজ করে তুলেছে। ছোট ছোট স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোলাবোরেশনের একটি অনেক বড় সুযোগ আপনাদের মতো স্টার্ট-আপগুলির কাছে রয়েছে। স্টার্ট-আপগুলি এই স্থানীয় ব্যবসাগুলিকে যতটা ক্ষমতায়ন করতে পারবে, ততটাই দক্ষ করে তুলতে পারবে। এই ছোট ব্যবসাগুলি দেশের উন্নয়নের চালিকাশক্তি আর আজ স্টার্ট-আপগুলি হল ‘গেম চেঞ্জার’। এই জোটবদ্ধতা আমাদের সমাজ এবং অর্থনীতি উভয়ে রূপান্তর ঘটাতে পারে বিশেষ করে, নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এগুলি অনেক বেশি অবদান রাখতে পারে।
বন্ধুগণ,
এখানে কৃষি নিয়ে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পর্যটন সহ প্রত্যেক ক্ষেত্রে সরকার এবং স্টার্ট-আপগুলির অংশীদারিত্ব নিয়ে পরামর্শ এসেছে। যেমন একটা পরামর্শ এসেছে, আমাদের দোকানদারদের যে ক্ষমতা রয়েছে তাঁরা তার ৫০-৬০ শতাংশই ব্যবহার করতে পারে। তাঁদের জন্য একটি ডিজিটাল সমাধান দেওয়ার পরামর্শ এসেছে যার মাধ্যমে তাঁরা জানতে পারবেন যে তাঁদের কোন পণ্য শেষের পথে, কোনটা শেষ হয়ে গেছে, কোনটা আবার আনতে হবে ইত্যাদি। আপনাদের এই পরামর্শের সঙ্গে আমি একটা পরামর্শ জুড়তে চাই। সেটি হল আপনারা সেই দোকানদারের যত গ্রাহক রয়েছে তাঁদেরকেও যদি ডিজিটাল সমাধানের সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন, তাতে দোকানদাররা গ্রাহকদেরকে বার্তা পাঠাতে পারেন যে আপনাদের বাড়িতে কোন জিনিসটির আগামী তিনদিনের মধ্যে প্রয়োজন পড়বে বা আগামী পাঁচদিনের মধ্যে প্রয়োজন পড়বে। সেই বার্তা পেয়ে গ্রাহকদেরও রান্নাঘরে গিয়ে খুঁজে দেখতে হবে না যে কোন জিনিসটা আছে, আর কোন জিনিসটা নেই। এটাও দোকানদাররা তাঁদেরকে মেসেজ পাঠিয়ে জানিয়ে দেবেন। আপনারা এভাবে এটাকে একটা বড় প্ল্যাটফর্ম রূপে রূপান্তরিত করতে পারেন। শুধু দোকানদারদের দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, প্রত্যেক পরিবারের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে আপনারা এই ব্যবস্থাকে সাজাতে পারেন যাতে গ্রাহকদেরকেও মাথা ঘামাতে না হয়। আপনাদের বার্তা চলে যাবে যে আপনি এক মাসের জন্য হলুদ নিয়ে গিয়েছিলেন, তিনদিন পরেই তা শেষ হতে চলেছে। এভাবে আপনারা অনেক বড় এগ্রিগেটরের ভূমিকা পালন করতে পারেন, অনেক বড় সেতু হয়ে উঠতে পারেন।
বন্ধুগণ,
আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে তরুণদের প্রতিটি পরামর্শ, প্রতিটি ভাবনা, প্রতিটি উদ্ভাবনকে সরকার পূর্ণ সমর্থন জানাবে। দেশকে স্বাধীনতার ১০০তম বছরের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই ২৫ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুগণ, আর আপনাদের জন্য তো সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা উদ্ভাবন অর্থাৎ, নানা ভাবনাচিন্তা, শিল্পোদ্যোগ এবং বিনিয়োগের নতুন যুগ। আপনাদের শ্রম ভারতের জন্য। আপনাদের শিল্পোদ্যোগ ভারতের জন্য। আপনাদের সম্পদ সৃষ্টি ভারতের জন্য। আপনাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ভারতের জন্য।
আমি আপনাদের সঙ্গে মিলেমিশে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তরুণ প্রজন্মের প্রাণশক্তিকে দেশের প্রাণশক্তিতে রূপান্তরিত করার জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়বদ্ধ। আপনাদের পরামর্শ, আপনাদের ভাবনা-চিন্তা আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এখন একটি নতুন প্রজন্ম উঠে আসছে, তারা সবকিছুই নতুনভাবে ভাবার শক্তি রাখে। এই নতুন ভাবনা, সমস্ত আধুনিক ব্যবস্থাকে বোঝা ও স্বীকার করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই সাতদিনের আলাপ-আলোচনা ও মন্থন থেকে যা বেরিয়ে এসেছে, সরকারের সমস্ত বিভাগকে এগুলি নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে কিভাবে সরকারের নানা কাজে এগুলিকে ব্যবহার করা যায়। সরকারের নীতিগুলিতে এগুলির প্রভাব কতটা হবে, সরকারের নীতির মাধ্যমে সমাজ জীবনে কিভাবে এগুলির প্রভাব পড়তে পারে, কিভাবে এই সমস্ত বিষয় থেকে আমরা লাভবান হতে পারি! আমি সেজন্য আপনাদের সবাইকে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য, আপনাদের অমূল্য সময় দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই কারণ আপনারা নতুন ভাবনা-চিন্তার অধিকারী। সেজন্য আপনারা ইতিবাচক ভাবনা-চিন্তা নিয়েই থাকেন আর এই ভাবনাগুলির মাধ্যমে সবাইকে ঋদ্ধ করেন। এটাও অনেক বড় কাজ।
আমি আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। মকর সংক্রান্তির পবিত্র উৎসব চলছে। এখন আকাশে-বাতাসে সেই আবহ রয়েছে। এর মধ্যে আপনাদের করোনা থেকেও সতর্ক থাকতে হবে, নিজেদের রক্ষা করতে হবে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!