নমস্কার! পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহোদয়া, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য শ্রী মনসুখ মাণ্ডব্যজি, শ্রী সুভাষ সরকারজি, শ্রী শান্তনু ঠাকুরজি, শ্রী জন বার্লাজি, শ্রী নীতিশ প্রামাণিকজি, রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শ্রী শুভেন্দু অধিকারীজি, কলকাতার চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট-এর গভর্নিং বডি-র মাননীয় সদস্যগণ, স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত কর্মঠ বন্ধুগণ, অন্যান্য মাননীয় ব্যক্তিবর্গ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!
দেশের প্রত্যেক নাগরিকের কাছে উত্তম স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার যে জাতীয় সঙ্কল্প, তাকে আরও শক্তিশালী করার প্রক্রিয়ায় আজ আমরা আরও এক কদম এগিয়েছি। চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের এই দ্বিতীয় ক্যাম্পাস, পশ্চিমবঙ্গের অনেক নাগরিকের জন্য অত্যন্ত সুবিধা নিয়ে এসেছে। এর ফলে বিশেষভাবে, সেই গরীব, সেই মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষেরা উপকৃত হবেন যাঁদের পরিবারের কেউ না কেউ ক্যান্সারের মোকাবিলা করছেন। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যে চিকিৎসা, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শল্যচিকিৎসা এবং প্রাসঙ্গিক থেরাপিগুলি এখন কলকাতায় এই আধুনিক হাসপাতাল গড়ে ওঠায় আরও সুলভ হবে।
বন্ধুগণ,
আজই দেশবাসী আরও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় অতিক্রম করেছে। বছরের শুরুতেই যেমন দেশে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের জন্য টিকাকরণ চালু হয়েছিল, তেমনই আজ বছরের প্রথম মাসের প্রথম সপ্তাহেই ভারত ১৫০ কোটি বা ১.৫ বিলিয়ন টিকার ডোজ দেওয়ার ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করছে। ১৫০ কোটি টিকার ডোজ, তাও এক বছরেরও কম সময়ে। এটি পরিসংখ্যানের হিসাবে অত্যন্ত বড় লক্ষ্য। বিশ্বের অধিকাংশ বড় বড় দেশের জন্য এটি আশ্চর্য সৃষ্টিকারী একটি পরিসংখ্যান, কিন্তু ভারতের জন্য এটি ১৩০ কোটি দেশবাসীর সামর্থ্যের প্রতীক। ভারতের জন্য এটি একটি নতুন ইচ্ছাশক্তির প্রতীক যা অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য যে কোনও কিছু করে ফেলার সাহস রাখে। ভারতের জন্য এটি আত্মবিশ্বাসের প্রতীক, আত্মনির্ভরতার প্রতীক, আত্মগৌরবের প্রতীক। আমি আজ এই সাফল্যের জন্য সমস্ত দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুগণ,
এই বারবার পোশাক বদলে আসা, এই বহুরূপী করোনা ভাইরাস যতটা মারাত্মক, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের এই টিকাকরণ অভিযান ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। আজ আরও একবার বিশ্ব করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আমাদের দেশেও এই নতুন ভেরিয়েন্টের কারণে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বাড়ছে। সেজন্য ১৫০ কোটি টিকার ডোজের এই সুরক্ষাকবচ আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজ ভারতের বয়স্ক জনসংখ্যার ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ কমপক্ষে টিকার একটি ডোজ পেয়েছেন। মাত্র পাঁচদিনের মধ্যেই দেশে ১ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি কিশোর-কিশোরীকে টিকার ডোজ দেওয়া হয়েছে। এই সাফল্য গোটা দেশের। এই সাফল্য প্রত্যেক সরকারের। আমি বিশেষভাবে এই সাফল্যের জন্য দেশের বৈজ্ঞানিকদের, টিকা উৎপাদনকারীদের, আমাদের স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত সর্বস্তরের বন্ধুদের অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। প্রত্যেকের প্রচেষ্টার ফলেই দেশ সেই সঙ্কল্পকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছে, যার সূত্রপাত আমরা শূণ্য থেকে করেছিলাম।
বন্ধুগণ,
১০০ বছরের সর্ববৃহৎ মহামারীর মোকাবিলায় সকলের সমবেত প্রচেষ্টাই দেশকে শক্তিশালী করে তুলছে। কোভিডের বিরুদ্ধে লড়তে বেসিক এবং ক্রিটিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা অত্যধুনিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা থেকে শুরু করে বিশ্বের সর্ববৃহৎ, সবচাইতে দ্রুত বিনামূল্যে টিকাকরণ অভিযান পরিচালনার শক্তি আজ চারিদিকে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এতটা ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক বৈচিত্র্যসম্পন্ন আমাদের দেশে টেস্টিং থেকে শুরু করে টিকাকরণ পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে এতবড় পরিকাঠামো আমরা যত দ্রুত বিকশিত করতে পেরেছি তা আজ গোটা বিশ্বের সামনে একটি উদাহরণ হয়ে উঠছে।
বন্ধুগণ,
অন্ধকার যত ঘন হয়, আলোর গুরুত্ব ততটাই বেড়ে যায়। প্রতিকূলতা যত বড় হয়, সাহস ও বুক চিতিয়ে লড়াই করার মানসিকতা ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই লড়াই যত কঠিন হবে, অস্ত্রশস্ত্র ততই প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে। কেন্দ্রীয় সরকার এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গকেও বিনামূল্যে টিকাকরণের জন্য করোনার টিকার প্রায় ১১ কোটি ডোজ পাঠিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকর পশ্চিমবঙ্গকে ইতিমধ্যেই ১,৫০০-রও বেশি ভেন্টিলেটর, ৯ হাজারেরও বেশি নতুন অক্সিজেন সিলিন্ডারও দিয়েছে। ইতিমধ্যেই ৪৯ পিএসএ নতুন অক্সিজেন প্ল্যান্টও এই রাজ্যে অক্সিজেন উৎপাদন শুরু করেছে। এই সাফল্য করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পশ্চিমবঙ্গের জনগণের উপকারে লাগবে।
বন্ধুগণ,
চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যাম্পাস ইনস্টিটিউট-এর ক্যাম্পাসে নির্মিত দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসজি এবং মহর্ষি সুশ্রুতের মূর্তিও আমাদের সকলের জন্য অনেক বড় প্রেরণা। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসজি বলতেন, “আমি এ দেশে বারবার জন্মগ্রহণ করতে চাই যাতে আমি এ দেশের জন্য বাঁচতে পারি, এ দেশের জন্য কাজ করতে পারি।”
মহর্ষি সুশ্রুত, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পুরাতন ভারতীয় জ্ঞানের আধার ছিলেন। তাঁর দর্শনে ভারতীয় জ্ঞানের প্রতিবিম্ব প্রতিফলিত হয়। এ ধরনের প্রেরণা থেকে বিগত বছরগুলিতে দেশবাসীর স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্ট সম্পূর্ণ সমাধানের জন্য হলিস্টিক পদ্ধতিতে সংহত কাজ হয়েছে। সকলের প্রচেষ্টার ভাবনা থেকেই আজ দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে, হেলথ প্ল্যানিং বা স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিকল্পনাকে ইন্টিগ্রেট বা সমন্বিত করে তুলে জাতীয় সঙ্কল্পের সঙ্গে যুক্ত করার কাজ দ্রুত হচ্ছে। আমরা আজ স্বাস্থ্যক্ষেত্রে যত প্রতিকূলতা রয়েছে, সেগুলি সমাধানের পাশাপাশি ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করে তোলার জন্যও ক্রমাগত কাজ করে চলেছি। যেসব কারণে মানুষ রোগগ্রস্ত হন, বিভিন্ন রোগের যে কারণগুলি, সেগুলি দূর করার প্রচেষ্টা জারি রয়েছে। অসুস্থ হলে যাতে মানুষের সহজে এবং সস্তায় চিকিৎসা করা যায়, তা সুনিশ্চিত করতে আমাদের সরকার চেষ্টা করছে। এর পাশাপাশি, চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ক্ষমতা বিস্তারিত করে স্বাস্থ্য পরিষেবাকে উন্নত করার হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
সেজন্য আমাদের স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে রূপান্তরণের জন্য দেশ আজ ‘প্রিভেন্টিভ হেলথ, অ্যাফোর্ডেবল হেলথ কেয়ার, সাপ্লাই সাইড ইন্টারভেনশন’ এবং মিশন মোডে বিভিন্ন অভিযানকে গতি প্রদান করছে। ‘প্রিভেন্টিভ হেলথকেয়ার’কে যোগ, আয়ুর্বেদ, ‘ফিট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট’, ইউনিভার্সাল ইমিউনাইজেশন ইত্যাদি অভিযানের মাধ্যমে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ আর ‘হর ঘর জল’-এর মতো জাতীয় প্রকল্পগুলির মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে গরীব পরিবারগুলিকে অনেক রোগ থেকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে সুবিধা হচ্ছে। আর্সেনিক এবং অন্যান্য কারণে যে জল দূষিত হয়ে যায়, সেগুলি দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ক্যান্সারেরও একটা বড় কারণ। ‘হর ঘর জল’ অভিযানের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের দেশে গরীব এবং নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলি থেকে বঞ্চিত ছিল, কারণ, আমাদের দেশে আধুনিক চিকিৎসা সুলভ ছিল না বা অন্যভাবে বলা যায় আধুনিক চিকিৎসা ছিল অত্যন্ত খরচসাপেক্ষ। কোনও গরীব ব্যক্তি যদি কঠিন রোগে আক্রান্ত হতেন, তখন তাঁর সামনে দুটি মাত্র বিকল্প থাকত। একটা বিকল্প হল সুদখোর মহজনদের থেকে ঋণ নেওয়া, বাড়ি কিংবা জমি বিক্রি করা আর অন্যটা হল চিকিৎসার ভাবনা ভুলে রোগের যন্ত্রণা সহ্য করা। ক্যান্সার রোগটাই এমন, যার নাম শুনলে গরীব এবং মধ্যবিত্ত মানুষ মনের জোর হারাতে শুরু করেন। দেশের গরীবদের এই চড় সুদে ঋণের কুচক্র থেকে, এই দুশ্চিন্তা থেকে বের করে আনার জন্য দেশের সরকার সস্তা এবং সুলভ চিকিৎসার জন্য ক্রমাগত পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে। বিগত বছরগুলিতে ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম অনেকটাই হ্রাস করা হয়েছে। একটু আগেই আমাদের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখভাই বিস্তারিতভাবে এই পদক্ষেপগুলি নিয়ে বলছিলেন। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা দেশে যে ৮ হাজারেরও বেশি ‘জন ঔষধি কেন্দ্র’ স্থাপন করা হয়েছে, সেগুলিতে অত্যন্ত সস্তা দামে ওষুধ এবং শল্যচিকিৎসার বিভিন্ন সরঞ্জাম পাওয়া যাচ্ছে। এই স্টোরগুলিতে ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ৫০টিরও বেশি ওষুধ অত্যন্ত কম দামে পাওয়া যায়। ক্যান্সারের সস্তা ওষুধ রোগীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিশেষ ‘অমৃত স্টোর’ও সারা দেশে চালু রয়েছে। সরকারের এই সেবাভাব, এই সংবেদনশীলতা, গরীবদের সস্তায় চিকিৎসা সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক হয়ে উঠছে। সরকার ৫০০টিরও বেশি ওষুধের দাম যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে তা প্রতি বছর রোগীদের ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি সাশ্রয় করছে। নাগরিকদের এই অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। করোনারি স্টেন্টস-এর দামও বেঁধে দেওয়ার ফলে হার্টের রোগীদের প্রতি বছর ৪,৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। একইভাবে সরকার, ‘নি ইমপ্ল্যান্টেশন’-এর খরচও কম করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার দ্বারা আমাদের সিনিয়র সিটিজেনরা বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছেন, আমাদের বয়স্ক মা, বোন ও বাড়ির অগ্রজ পুরুষেরা উপকৃত হচ্ছেন। এর ফলে, বয়স্ক রোগীদের বছরে ১,৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। সরকার যে ‘প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল ডায়ালিসিস প্রোগ্রাম’ চালু করেছে, তার সাহায্যে ইতিমধ্যেই ১২ লক্ষ গরীব রোগী বিনামূল্যে ডায়ালিসিসের পরিষেবা পেয়েছেন। এর ফলে তাঁদের ৫২০ কোটিরও বেশি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
বন্ধুগণ,
‘আয়ুষ্মান ভারত যোজনা’ আজ অ্যাফোর্ডেবল এবং ইনক্লুসিভ হেলথকেয়ার-এর ক্ষেত্রে একটি গ্লোবাল বেঞ্চমার্ক হয়ে উঠছে, অনেক নতুন নতুন উদাহরণ স্থাপন করছে। পিএমজিএ-এর মাধ্যমে সারা দেশের ২ কোটি ৬০ লক্ষেরও বেশি রোগী হাসপাতালগুলিতে বিনামূল্যে চিকিৎসা করাচ্ছেন। এই প্রকল্প না থাকলে এই রোগীদের চিকিৎসার জন্য আরও ৫০ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হত।
বন্ধুগণ,
‘আয়ুষ্মান ভারত যোজনা’-র মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ভারতের ১৭ লক্ষেরও বেশি ক্যান্সার রোগী উপকৃত হয়েছেন। সরকারি হাসপাতালেই কেমো থেরাপি থেকে শুরু করে রেডিও থেরাপি এবং বিভিন্ন সার্জারির সুবিধা তাঁরা বিনামূল্যে পাচ্ছেন। আপনারা কল্পনা করুন, সরকারের এই প্রচেষ্টা না থাকলে , কত না গরীবের জীবন সঙ্কটাকীর্ণ হত, আর কতো না পরিবার ঋণের ভারে জর্জরিত হতেন।
বন্ধুগণ,
‘আয়ুষ্মান ভারত যোজনা’ কেবলই বিনামূল্যে চিকিৎসার মাধ্যম নয়, এটি ‘আর্লি ডিটেকশন, আর্লি ট্রিটমেন্ট’-এর ক্ষেত্রেও অত্যন্ত কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। এই প্রকল্প ক্যান্সারের মতো সমস্ত কঠিন রোগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, না হলে আমাদের দেশে তো অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্যান্সার সম্পর্কে শেষ মুহূর্তে জানা যায়। ততদিনে রোগ ডাল-পালা গজিয়ে চিকিৎসার আওতার বাইরে চলে যায়। এই সমস্যা দূর করার জন্য ৩০ বছরের বেশি বয়সী সমস্ত নাগরিক বন্ধুদের ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন এবং ক্যান্সারের স্ক্রিনিং-এর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ‘আয়ুষ্মান ভারত যোজনা’র মাধ্যমে দেশের গ্রামে গ্রামে গড়ে তোলা বা নির্মীয়মান হাজার হাজার হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার এক্ষেত্রে আজ অত্যন্ত সহায়ক প্রমাণিত হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গেও ইতিমধ্যে এরকম ৫ হাজারেরও বেশি হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার চালু করা হয়েছে। সারা দেশের প্রায় ১৫ কোটি মানুষকে ওরাল, ব্রেস্ট, এবং সার্ভাইকেল ক্যান্সারের জন্য স্ক্রিন করা হয়েছে। স্ক্রিনিং-এর পর যাঁদের মধ্যে লক্ষণ দেখা গেছে, তাঁদের চিকিৎসার জন্য গ্রামস্তরেই হাজার হাজার স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
বন্ধুগণ,
আরও একটি বড় সমস্যা আমাদের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছিল। সেটি হল, ‘ডিম্যান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই’ বা চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে অনেক বড় ব্যবধান। চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর অপ্রতুলতা, অপ্রতুল স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, এই চাহিদা ও সরবাহের মধ্যে ব্যবধানকে ক্রমে বাড়িয়ে তুলছিল। এই ব্যবধান কমানোর জন্য আজ সারা দেশে মিশন মোডে কাজ চলছে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশে আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট এবং পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল আসনের সংখ্যা ৯০ হাজারের কাছাকাছি ছিল। বিগত সাত বছরে এর সঙ্গে আরও ৬০ হাজার নতুন আসন যুক্ত করা হয়েছে। ২০১৪ সালে আমাদের দেশে মাত্র ছয়টি এইমস হাসপাতাল ছিল। আজ দেশে ২২টি এইমস হাসপাতালের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার দিকে আমরা এগিয়ে চলেছি। ভারতের প্রত্যেক জেলায় যেন কমপক্ষে একটি মেডিকেল কলেজ অবশ্যই থাকে, সেই লক্ষ্যেও কাজ করা হচ্ছে। এই সকল প্রতিষ্ঠানে ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগের চিকিৎসার পরিষেবা যুক্ত করা হচ্ছে। দেশে ক্যান্সার কেয়ার ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য ১৯টি রাজ্যে ক্যান্সার ইনস্টিটিউট এবং ২২টি টার্শিয়ারি কেয়ার ক্যান্সার সেন্টার মঞ্জুর করা হয়েছে। ৩০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানে দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। পশ্চিমবঙ্গেও কলকাতা, মুর্শিদাবাদ এবং বর্ধমান মেডিকেল কলেজে এখন ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা আরও সহজে করা সম্ভব হবে। আমাদের আরোগ্য মন্ত্রী মনসুখভাই এ ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। এই সমস্ত প্রচেষ্টার একটি বড় প্রভাব আমাদের দেশের ডাক্তারদের সাফল্যের ওপর পড়বে। বিগত ৭০ বছরে আমাদের দেশে যত ডাক্তার হয়েছে, তত ডাক্তার আমাদের দেশে আগামী ১০ বছরেই তৈরি হতে চলেছে।
বন্ধুগণ,
গত বছর দেশে যে দুটি বড় জাতীয় অভিযান চালু করা হয়েছে সেগুলিও ভারতের স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে আধুনিক স্বরূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক। ‘আয়ুষ্মান ভারত-ডিজিটাল হেলথ মিশন’ চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেশবাসীর সুবিধা দ্রুত বাড়াবে। মেডিকেল হিস্ট্রির ডিজিটাল রেকর্ড থেকে চিকিৎসা ক্রমে সহজতর এবং কার্যকরী হয়ে উঠবে। ছোটখাটো রোগের ক্ষেত্রে হাসপাতালে যাওয়ার ঝামেলা ক্রমে হ্রাস পাবে আর চিকিৎসা-বাবদ অতিরিক্ত খরচ থেকেও নাগরিকরা মুক্তি পাবেন। এভাবে ‘আয়ুষ্মান ভারত ইনফ্রাস্ট্রাকচার মিশন’-এর মাধ্যমে ক্রিটিক্যাল হেলথ কেয়ার-এর জন্য প্রয়োজনীয় মেডিকেল ইনফ্রাস্ট্রাকচার এখন বড় বড় শহরগুলির পাশাপাশি সমস্ত জেলা এবং ব্লকস্তরেও সুলভ করে তোলা হবে। এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গেরও পাঁচ বছরে ২,৫০০ কোটি টাকারও বেশি সহায়তা পাওয়া সুনিশ্চিত হয়েছে। এর ফলে গোটা রাজ্যে আরও কয়েকশ’ হেলথ সাব-সেন্টার তৈরি হবে। প্রায় ১ হাজার আর্বান হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার কাজ করতে শুরু করবে। কয়েক ডজন ডিস্ট্রিক্ট ইন্টিগ্রেটেড পাবলিক হেলথ ল্যাব গড়ে উঠবে, আর জেলা হাসপাতালগুলির কয়েকশ’ ক্রিটিক্যাল কেয়ার শয্যাকে নতুন পরিকাঠামোর সঙ্গে যুক্ত করা হবে। এহেন প্রচেষ্টার ফলে আমরা ভবিষ্যতে করোনার মতো মহামারীকেও আরও উন্নত পদ্ধতিতে মোকাবিলা করতে পারব। ভারতকে সুস্থ এবং সমর্থ করে তোলার এই অভিযান এভাবেই চালু থাকবে। আমাদের সকল নাগরিকদের প্রতি আমার অনুরোধ যে আপনারা সবাই সতর্ক থাকুন, সব ধরনের প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করুন। আমি আরও একবার এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রত্যেককে হৃদয় থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।