যে কোনও প্রকল্পের কাজ শুরু হলে কিভাবে ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’ও বৃদ্ধি পায় এবং তার সঙ্গে ‘ইজ অফ লিভিং’ও বৃদ্ধি পায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল এই প্রকল্পটি। এখানে এসে যে ৪–৫ জন ভাইবোনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি, তাঁরা যেভাবে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন, তীর্থযাত্রার কল্পনা থেকে শুরু করে যানবাহনের ন্যূনতম লোকসান, সময় সাশ্রয় কিংবা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, অপচয় হ্রাস, তাজা ফল ও সব্জি সরবরাহ দ্রুত সুরাটের মতো বড় বাজারে পৌঁছে দেওয়ার এতো ভালো ব্যবস্থা এই সমস্ত বন্ধুদের জীবনে একটি নতুন মাত্রা যোগ করায় তাঁরা খুব খুশি। তাঁরা আমাকে বলেছেন, এই প্রকল্পের ফলে কিভাবে তাঁদের ব্যবসা–বাণিজ্যের কাজ সুগম হবে, গতি বৃদ্ধি পাবে – আমার মনে হয়, এসব কারণেই আজ আপনারা এত আনন্দিত। আজ এই খুশির আবহে ব্যবসায়ী শ্রমিক, কর্মচারী, কৃষক, ছাত্রছাত্রী প্রত্যেকের জীবনে এই অভূতপূর্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যখন নিজেদের মধ্যে দূরত্ব কমে, তখন মনটাও আনন্দে ভরে ওঠে।
বন্ধুগণ,
আজ এই প্রকল্পটি গুজরাটের জনগণের জীবনে একপ্রকার দীপাবলী উৎসবের উপহার হিসাবে এসেছে। এই সর্বব্যাপী আনন্দের আবহে মঞ্চে উপস্থিত গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিজয় রূপানীজী, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য ভাই মনসুখভাই মান্ডভিয়াজী, ভারতীয় জনতা পার্টির গুজরাটের রাজ্য সভাপতি এবং সংসদ সদস্য শ্রী সি আর পাটিলজী, গুজরাট সরকারের সমস্ত মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক এবং অন্যান্য জনপ্রতিনিধিগণ আর বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল সংখ্যায় আগত আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা। আজ ঘোঘা ও হাজিরার মাঝে রো–প্যাক্স পরিষেবা শুরু হওয়ায় সৌরাষ্ট্র ও দক্ষিণ গুজরাট উভয় ক্ষেত্রের জনগণের অনেক বছরের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। হাজিরায় আজ নতুন টার্মিনাল উদ্বোধন করার মাধ্যমে ভাবনগর এবং সুরাটের মধ্যে স্থাপিত এই নতুন সামুদ্রিক যোগাযোগের জন্য আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা, অনেক অনেক শুভকামনা।
বন্ধুগণ,
ঘোঘা ও হাজিরার মধ্যে আজ সড়কপথে যে দূরত্ব প্রায় ৩৭৫ কিলোমিটার, সমুদ্রপথে তা মাত্র ৯০ কিলোমিটার। ফলে, এই পরিষেবার মাধ্যমে ১০–১২ ঘন্টার পরিবর্তে এখন ৩–৪ ঘন্টাতেই এই দূরত্ব অতিক্রম করা যাবে। এতে সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি, আপনাদের খরচও কমবে। এছাড়া, সড়কপথে ট্রাফিক কমলে দূষণের মাত্রাও হ্রাস পাবে। একটু আগেই যেমনটি বলা হয়েছে, এক বছরে প্রায় ৮০ হাজার যাত্রী অর্থাৎ ৮০ হাজার যাত্রীর গাড়ি এবং প্রায় ৩০ হাজার ট্রাক এই পরিষেবার দ্বারা উপকৃত হতে পারবে। ভাবুন, কী পরিমাণ জ্বালানী সাশ্রয় হবে!
বন্ধুগণ,
সবচেয়ে বড় কথা হল – গুজরাটের একটি বড় বাণিজ্য কেন্দ্রের সঙ্গে সৌরাষ্ট্রের এই যোগাযোগ ব্যবস্থা এই অঞ্চলের মানুষের জীবনে অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এখন সৌরাষ্ট্রের কৃষক ও পশুপালকরা অনেক সহজেই ফল–সব্জি ও দুধ নিয়ে সুরাট পৌঁছে যেতে পারবেন। আগে সড়কপথে এই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হ’ত বলে ট্রাকের ডালার ঝাঁকুনিতে অনেক কিছু নষ্ট হয়ে যেত। বিশেষ করে, ফল ও সব্জির অনেক ক্ষতি হ’ত। এখন সমুদ্রপথে পশুপালক ও কৃষকরা তাঁদের পণ্য নিয়ে তাড়াতাড়ি নিরাপদে বাজারে পৌঁছে যেতে পারবেন। এভাবে সুরাটের ব্যবসায়ী বন্ধুদের এবং শ্রমিক বন্ধুদের যাতায়াত আরও সহজ ও ব্যয় সাশ্রয়ী হবে।
বন্ধুগণ,
গুজরাটে রো–প্যাক্স ফেরির এই পরিষেবার উন্নয়ন অনেক মানুষের দিন–রাতের পরিশ্রমের ফল। এত সহজে এই সাফল্য পাওয়া যায়নি। অনেক সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়েছে। গোড়া থেকেই আমি এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। সেজন্য সমস্ত সমস্যাগুলি সম্পর্কে অবহিত ছিলাম। কিভাবে সেগুলির সমাধান করা হয়েছে, কখনও এমনও মনে হয়েছে – হয়তো এই প্রকল্প আর সফল হবে না। কিন্তু আমাদের জন্য এটা একটা দারুণ অভিজ্ঞতা। গুজরাটে আমি এরকম অনেক সাফল্যগাথা দেখেছি। কিন্তু এখানে যে পরিশ্রম করতে হয়েছে, তা অতুলনীয়। আমি সেই সমস্ত ইঞ্জিনিয়ার এবং শ্রমিকদের প্রতি আজ বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই যাঁরা সাহস করে এই কাজে লেগে থেকেছেন আর গোটা অঞ্চলের মানুষের এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে দেখিয়েছেন, তাঁদের এই পরিশ্রম ও সাহস লক্ষ লক্ষ গুজরাটবাসীর জন্য এই নতুন পরিষেবা নিয়ে এসেছে। এদের সকলকে আমি অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুগণ,
গুজরাটে সামুদ্রিক বাণিজ্যের একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে। একটু আগেই মনসুখভাই বিস্তারিতভাবে বলছিলেন, কিভাবে আমরা যুগে যুগ ধরে সামুদ্রিক বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু বিগত দু’দশক ধরে গুজরাট যেভাবে এই সামুদ্রিক সামর্থ্যকে অনুধাবন করে বন্দর–কেন্দ্রীক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, তা প্রত্যেক গুজরাটবাসীর জন্য একটি গর্বের বিষয়। এই কাজের মাধ্যমে গুজরাটের তটবর্তী অঞ্চলে পরিকাঠামো উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। রাজ্যে জাহাজ নির্মাণের নীতি–প্রণয়ন, শিপ বিল্ডিং পার্ক নির্মাণ কিংবা স্পেশালাইজড পার্ক নির্মাণের মতো প্রতিটি পরিকাঠামো উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।যেমন – দহেজ এলাকায় সলিড কার্গো, ক্যামিকেল এবং এলএনজি টার্মিনাল আর মুন্দ্রাতে কোল টার্মিনাল। পাশাপাশি, ভেসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এবং গ্রাউন্ড ব্রেকিং যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রকল্পকেও আমরা সম্পূর্ণ রূপে উৎসাহ জুগিয়েছি। এই সমস্ত উদ্যোগের ফলে গুজরাটের বন্দর ক্ষেত্র নতুন লক্ষ্য সাধন করতে পেরেছে।
বন্ধুগণ,
শুধু বন্দরে ফিজিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার নির্মাণই নয়, ঐ বন্দরগুলির আশপাশের এলাকায় বসবাসকারী জনগণের জীবনকে সহজ করে তোলার জন্য অনেক কাজ করা হয়েছে। তটবর্তী এলাকার সম্পূর্ণ বাস্তব ব্যবস্থাকে আধুনিক করে তুলতে আমরা অনেক কাজ করেছি। তা সে সাগরখেডুর মতো আমাদের মিশন মোডে গড়ে তোলা প্রকল্প হোক কিংবা জাহাজ নির্মাণ শিল্পে কাজ করার জন্য স্থানীয় যুবক–যুবতীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন করে তাঁদের কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করা হোক, এই সব উদ্যোগ গুজরাটে বন্দর–কেন্দ্রিক উন্নয়নের পরিধিকে অনেক বিস্মৃত করছে। আমাদের সরকার তটবর্তী এলাকায় সমস্ত ধরনের বুনিয়াদী পরিষেবার উন্নয়ন সুনিশ্চিত করেছে।
বন্ধুগণ,
এ ধরনের অসংখ্য প্রচেষ্টার ফলে গুজরাট আজ এক রকম ভারতের সামুদ্রিক সিংহদ্বার রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে; গেটওয়ে হয়েছে ভাই, সমৃদ্ধির সিংহ দরজা! বিগত দু’দশকে পরম্পরাগত সমুদ্র বন্দর সঞ্চালন ব্যবস্থা পাল্টে সমগ্র গুজরাটে একটি সংহত ঐক্যবদ্ধ মডেল চালু করা হয়েছে। এই মডেল আজ একটি মানদন্ড রূপে বিকশিত হয়েছে। বর্তমানে মুন্দ্রা হল ভারতের বৃহত্তম বহুমুখী বন্দর। আর সিক্কা সবচেয়ে বড় সমুদ্র ঘেরা বন্দর। এই প্রচেষ্টার ফলে গুজরাটের বন্দরগুলি আজ দেশের প্রধান সামুদ্রিক কেন্দ্র রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। গত বছর দেশের মোট সামুদ্রিক বাণিজ্যের ৪০ শতাংশেরও বেশি এই গুজরাট বন্দরগুলির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। এই তথ্য আজ আমি প্রথম গুজরাটবাসীদের বলছি।
বন্ধুগণ,
আজ গুজরাটে সামুদ্রিক বাণিজ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পরিকাঠামো এবং ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ত্বরান্বিত করার কাজ চলছে। যেমন গুজরাটের মেরিটাইম ক্লাস্টার, গুজরাট মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, ভাবনগরে বিশ্বের প্রথম সিএনজি টার্মিনাল – এ ধরনের অনেক পরিষেবা গুজরাটে তৈরি করা হচ্ছে। গিফট সিটিতে নির্মীয়মান গুজরাট মেরিটাইম ক্লাস্টার সমুদ্র বন্দর থেকে শুরু করে সমুদ্র–ভিত্তিক পণ্য পরিবহণে সমর্পিত একটি উন্নত ব্যবস্থা হয়ে উঠবে। এই ক্লাস্টার সরকার, শিল্প ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সহযোগিতাকে গুরুত্ব দেবে। এর ফলে, এই ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজনের মাধ্যমেও কাজের গতি ও উৎকর্ষ বাড়বে।
বন্ধুগণ,
বিগত বছরগুলিতে দহেজে ভারতের প্রথম রাসায়নিক টার্মিনাল গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি, গড়ে উঠেছে প্রথম এলএনজি টার্মিনালও। এখন ভাবনগর বন্দরে বিশ্বের প্রথম সিএনজি টার্মিনাল গড়ে উঠছে। সিএনজি টার্মিনাল ছাড়াও ভাবনগর বন্দরে রো রো টার্মিনাল এবং লিকুইড কার্গো টার্মিনাল এবং কন্টেনার টার্মিনালের মতো পরিষেবাও প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই সমস্ত টার্মিনাল তৈরি হয়ে গেলে ভাবনগর বন্দরের ক্ষমতা অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে।
বন্ধুগণ,
আমাদের সরকার ঘোঘা ও দহেজের মধ্যে ফেরি সার্ভিসও দ্রুত শুরু করার প্রচেষ্টায় কাজ করে চলেছে। এই প্রকল্প সম্পূর্ণ করার ক্ষেত্রে অনেক প্রাকৃতিক বাধা–বিপত্তির সম্মুখীণ হতে হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সেই বাধা–বিপত্তিকে জয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি মনে করি, অতিশীঘ্রই আমরা ঘোঘা ও দহেজের মধ্যে এই রো রো সার্ভিস চালু করতে সক্ষম হবো।
বন্ধুগণ,
সামুদ্রিক বাণিজ্যের জন্য দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ গড়ে তোলা, প্রশিক্ষিত মানবসম্পদের যোগান অব্যাহত রাখতে গুজরাটের মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি একটি বড় কেন্দ্র। এটি এ ধরনের বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণের উপযোগী দেশের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আজ এখানে সামুদ্রিক আইন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আইন–কানুন সম্পর্কে পড়াশুনা থেকে শুরু করে মেরিটাইম ম্যানেজমেন্ট, শিপিং এবং লজিস্টিক্স নিয়ে এমবিএ পর্যন্ত পড়ার সুবিধা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও মনসুখভাই একটু আগে যে লোথালের কথা বলেছেন, সেখানে দেশের সমুদ্র বাণিজ্যের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণকারী দেশের প্রথম ন্যাশনাল মিউজিয়াম গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে চলেছে।
বন্ধুগণ,
আজকের রো–প্যাক্স ফেরি পরিষেবা হোক কিংবা কয়েকদিন আগে শুরু হওয়া সী–প্ল্যান পরিষেবার মাধ্যমে জলসম্পদ–ভিত্তিক অর্থনীতি অনেক বিকশিত হয়ে উঠবে। আর আপনারা দেখছেন, কত দ্রুত গুজরাট জল–স্থল–আকাশ – এই ৩টি ক্ষেত্রে অর্থনীতিতে অনেক এগিয়ে গেছে। কয়েকদিন আগে আমার গিরনারে রোপওয়ে উদ্বোধনের সৌভাগ্য হয়েছে, যা গুজরাটে আসা পর্যটকদের পরিষেবা প্রদানের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পকে নতুন গতি দেবে। আকাশপথে পর্যটনে এটি একটি নতুন মাধ্যম। এছাড়া, সী–প্ল্যান পরিষেবা উদ্বোধনেরও সৌভাগ্য হয়েছে। এই উড়ো জাহাজগুলি এক জায়গায় জল থেকে ওড়ে আর আরেক জায়গায় গিয়ে জলেই অবতরণ করে। আজ সমুদ্রের মধ্যে অনেকটা সময় কাটানোর সুযোগ পেয়ে গুজরাটে পর্যটক আসার গতি কত বৃদ্ধি পাবে, তা আপনারা খুব ভালোভাবেই অনুমান করতে পারছেন.
বন্ধুগণ,
যখন সমুদ্রের কথা উঠেছে, জলের কথা উঠেছে – তখন আপনাদের বলি, মৎস্যচাষ থেকে শুরু করে মাছের ব্যবসা এবং সী–উইডের চাষ থেকে শুরু করে নদী ও সমুদ্রপথে পরিবহণ ব্যবস্থা এবং পর্যটন – এই সমস্ত ক্ষেত্রে বিগত বছরগুলিতে অনেক ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশের নীল অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা হয়েছে। আগে সমুদ্র অর্থনীতির কথা বলা হ’ত আর আজ আমরা নীল অর্থনীতির কথা বলছি।
বন্ধুগণ,
সমুদ্র তটবর্তী সম্পূর্ণ বাস্তুব্যবস্থা এবং মৎস্যজীবী বন্ধুদের সহায়তার জন্য বিগত বছরগুলিতে অনেক প্রকল্প শুরু করা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের আধুনিক ট্রলার প্রদান হোক কিংবা আর্থিক সহায়তা কিংবা আবহাওয়া বা সমুদ্রপথের সঠিক তথ্য প্রদানকারী নেভিগেশন সিস্টেম সেই ট্রলারগুলি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে আমরা মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। সম্প্রতি মৎস্য বাণিজ্যকে উৎসাহ প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদা যোজনা চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আগামী বছরগুলিতে মৎস্যচাষ সংশ্লিষ্ট পরিকাঠামো নির্মাণে ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হবে। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে গুজরাটের লক্ষ লক্ষ মৎস্যজীবী পরিবার লাভবান হবেন। দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।
বন্ধুগণ,
আজ সারা দেশের সমুদ্র সীমায় বন্দরগুলির ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে এবং দ্রুতগতিতে অনেক নতুন নতুন বন্দর নির্মাণের কাজও চলছে। দেশের অভ্যন্তরে যে প্রায় ২১ হাজার কিলোমিটার জলপথ রয়েছে, সেই জলপথকে দেশের উন্নয়নে কিভাবে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগানো যায়, সেজন্য সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করা হচ্ছে। সাগরমালা প্রকল্পের মাধ্যমে আজ সারা দেশে ৫০০টিরও বেশি প্রকল্পের কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই লক্ষ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে অনেকগুলি প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেছে।
বন্ধুগণ,
সামুদ্রিক জলপথ হোক কিংবা নদী জলপথ; ভারতের কাছে সম্পদ ও দক্ষতার অভাব কোনও দিন ছিল না। আর এটা সবাই জানেন যে, সড়কপথ কিংবা রেলপথের তুলনায় জলপথ পরিবহণ অনেক সস্তা ও পরিবেশের জন্য কম ক্ষতিকারক হয়। তবুও এই লক্ষ্যে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে কাজ করা ২০১৪–র পরই সম্ভব হয়েছে। এই নদীগুলি, এই সমুদ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আসেনি, এগুলি আগে থেকেই ছিল। কিন্তু সেই দৃষ্টি ছিল না। যা ২০১৪ সালের পর থেকে দেশবাসী আজ অনুভব করতে পারছেন। আজ সারা দেশে নদীগুলিতে যে অভ্যন্তরীণ জলপথ গড়ে তোলার কাজ এগিয়ে চলেছে, সেগুলির মাধ্যমে অনেক স্থল–বেষ্টিত রাজ্যকে সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। আজ বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগর এবং আরব সাগরে আমাদের ক্ষমতায় অভূতপূর্ব বিকাশ পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশের সমুদ্রিক জলসীমা যেন আত্মনির্ভর ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠে আসে, সেই লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ এগিয়ে চলেছে। সরকারের এই প্রচেষ্টাগুলিকে আরও গতি প্রদান করতে একটি বড় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। জাহাজ মন্ত্রকের নাম বদলে এখন এই মন্ত্রকের নাম রাখা হচ্ছে মিনিস্ট্রি অফ পোর্টস্, শিপিং অ্যান্ড ওয়াটারওয়েস। তার মানে এই মন্ত্রকের কাজের পরিধি বিস্তার করা হচ্ছে।
উন্নত অর্থনীতির দেশগুলির মধ্যে অধিকাংশ দেশেই জাহাজ পরিবহণ মন্ত্রকই বন্দর ও জলপথের দায়িত্ব সামলায়। ভারতেও জাহাজ মন্ত্রক বন্দর ও জলপথ উন্নয়নের অনেক কাজ করে আসছে। কিন্তু এখন নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে কাজেও অধিক স্পষ্টতা পরিলক্ষিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
বন্ধুগণ,
আত্মনির্ভর ভারতে নীল অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহণকেও শক্তিশালী করার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, আমাদের অর্থনীতিতে পণ্য পরিবহণের ব্যয় অত্যন্ত বেশি। অর্থাৎ দেশের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে খরচ অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে বেশি হয়। জলপথ পরিবহণের মাধ্যমে এই পণ্য পরিবহণের খরচ অনেকটাই কম করা যেতে পারে। সেজন্য আমরা এমন ধরনের পরিকাঠামো উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়েছি যেখানে কার্গোগুলির বাধাহীন পরিবহণ সুনিশ্চিত হবে। আজ একটি উন্নত পরিকাঠামোর পাশাপাশি, উন্নত মেরিটাইম লজিস্টিক্সের জন্য সিঙ্গল উইন্ডো সিস্টেমে কাজ করতে চলেছি, এর প্রস্তুতি নিচ্ছি।
বন্ধুগণ,
পণ্য পরিবহণে খরচ কমাতে এখন দেশে বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি সংহত দৃষ্টিভঙ্গী এবং সুদূরপ্রসারী ভাবনা নিয়ে এগিয়ে চলেছি। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে সড়কপথ, রেলপথ, আকাশপথ এবং জাহাজ পরিবহণের মতো পরিকাঠামোর পারস্পরিক যোগাযোগ আরও উন্নত করা যায় এবং তা করতে গিয়ে আমরা যে ধরনের ঢিলেমি কিংবা বাধা–বিপত্তির সম্মুখীন হই, সেগুলিকেও কিভাবে দূর করা যায় – সেই চেষ্টা চলছে। দেশে অনেকগুলি মাল্টি–মডেল লজিস্টিক পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে, যাতে শুধু অভ্যন্তরীণ পণ্য পরিবহণই নয়, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গেও বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের ক্ষেত্রে মিলেমিশে কাজ চলছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই সকল প্রচেষ্টার ফলে আমাদের ও প্রতিবেশী দেশগুলির পরিবহণ খরচ অনেক কমাতে আমরা সফল হবো। পণ্য পরিবহণে ব্যয় নিয়ন্ত্রণের জন্য এই প্রচেষ্টাগুলির মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতিতেও নতুন প্রাণ সঞ্চার হবে।
বন্ধুগণ,
উৎসবের এই দিনগুলিতে দেশে খুব ক্রয়–বিক্রয় চলছে। এই ক্রয়–বিক্রয়ের সময় আমি সুরাটের জনগণের কাছে একটি অনুরোধ রাখবো, সুরাটের মানুষ নিয়মিত সারা পৃথিবীতে তাঁদের ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য প্রসিদ্ধ। সেজন্য তাঁরা যেন এই ক্রয়–বিক্রয়ের সময় ‘ভোকাল ফর লোকাল’ – এর মন্ত্র না ভোলেন। আমি দেখেছি, অনেকে মনে করেন, মাটির প্রদীপ কেনাটাকেই নিজেদের আত্মনির্ভর হয়ে ওঠা ভাবেন। না মশাই, সমস্ত পণ্যের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা শুধুই ভারতে তৈরি প্রদীপ কিনবো – খুব ভালো কথা। কিন্তু আপনারা যা যা পরিধান করেন, বাড়িতে ও বাইরে যে সমস্ত জিনিস ব্যবহার করেন, সেগুলির অধিকাংশই আমাদের দেশের ক্ষুদ্র শিল্পীরা নির্মাণ করতে সক্ষম। আমরা কেন তাঁদেরকে সুযোগ দেবো না? দেশকে এগিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তো আমাদের সকলেরই রয়েছে বন্ধু। সেজন্য আমাদের ক্ষুদ্র শিল্পের হস্তশিল্পীদের, গ্রামের মা–বোনেদের তৈরি জিনিস ব্যবহার করে দেখুন। আর সগর্বে বিশ্ববাসীকে বলুন যে, এগুলি আমার গ্রামের মানুষ বানিয়েছেন, আমার জেলার মানুষ বানিয়েছেন, আমাদের দেশের গ্রামের মানুষ বানিয়েছেন! দেখবেন, আপনাদের বুক গর্বে ভরে উঠবে। দীপাবলী উৎসবের আনন্দই অন্যরকম হবে। সেজন্য বলছি, ‘ভোকাল ফর লোকাল’ – এর ক্ষেত্রে কোনও রকম সমঝোতা করবেন না!
দেশ স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ পালনের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। তার আগে আমাদের এই মন্ত্রকে জীবনের মূল মন্ত্র হিসাবে পালন করতে হবে। আমাদের পরিবার, বাড়ির প্রত্যেক ব্যক্তির মনে এই ভাব জাগিয়ে তুলতে হবে। সেজন্য এবারের দীপাবলী যেন আমাদের সকলের চেষ্টায় ‘ভোকাল ফর লোকাল’ – এর একটি টার্নিং পয়েন্ট হয়ে ওঠে – এই প্রার্থনা আমি আমার গুজরাটের ভাই ও বোনেদের কাছে রাখছি। আমি জানি, এই অনুরোধ রাখার অধিকার আমার আছে। আর এটাও জানি, আপনারা আমাকে হতাশ করবেন না। একটু আগেই নন্দলালজী বলছিলেন, আপনারা আমাকে যেসব অনুরোধ করেছিলেন, আমি সেগুলি অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত করেছি। আমি খুব আনন্দিত যে, আমিও একদিন নন্দলালজীকে যা বলেছলাম, তা তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। আপনারা সবাই আমার জন্য একেকজন নন্দলাল। আসুন, পরিশ্রম করি। আমরা দেশের গরিবদের জন্য কিছু করি। এমনভাবে দীপাবলী পালন করি, যাতে তাঁদের বাড়িতেও দীপাবলী উৎসব পালনের আবহ গড়ে ওঠে। এমনভাবে প্রদীপ জ্বালাই, যাতে দেশের প্রত্যেক গরিবের বাড়িতে প্রদীপ জ্বলে। ‘ভোকাল ফর লোকাল’ মন্ত্র পালনের মাধ্যমেই এটা সম্ভব। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, করোনার এই সঙ্কট সময়ে আপনারা সবাই অত্যন্ত সতর্কভাবে উৎসব পালন করবেন। আপনারা নিরাপদ থাকলে দেশও নিরাপদ থাকবে।
আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, দেশের সমস্ত ভাই ও বোনদের আমি আগামী ধনতেরাস ও দীপাবলীর শুভেচ্ছা জানাই। গুজরাটের জনগণের জন্য যে নতুন বছর আসছে, সেই নতুন বছর অত্যন্ত শুভ হোক। আপনাদের সকলকে প্রত্যেক উৎসবের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।