জয় সোমনাথ!
অনুষ্ঠানে উপস্থিত গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্রভাই প্যাটেলজি, প্রদেশ ভারতীয় জনতা পার্টির অধ্যক্ষ এবং সংসদে আমার সহকর্মী শ্রী সি.আর.পাটিলজি, গুজরাট রাজ্য সরকারের মন্ত্রী শ্রী পূর্ণেশ মোদীজি, শ্রী অরবিন্দ রয়ানিজি, শ্রী দেওয়াভাই মালমজি, জুনাগড়ের সাংসদ শ্রী রাজেশ চুড়াসমাজি, সোমনাথ মন্দিরের ট্রাস্ট এবং অন্যান্য সদস্যগণ, অন্যান্য উপস্থিত গণমান্য ব্যক্তিগণ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!
আমাদের শাস্ত্রে ভগবান সোমনাথের আরাধনায় বলা হয়েছে –
“ভক্তি প্রদানায় কৃপা অবতীর্ণম, তম সোমনাথম স্মরণম প্রপোদয়ে।।”
অর্থাৎ, ভগবান সোমনাথের কৃপা অবতীর্ণ হয়, কৃপার ভাণ্ডার খুলে যায়। বিগত কিছুকাল ধরে যেভাবে এখানে একের পর এক উন্নয়নের কাজ চলছে, এটা সোমনাথ দাদারই বিশেষ কৃপায় সম্ভব হচ্ছে। আমি একে আমার সৌভাগ্য বলে মনে করি যে সোমনাথ ট্রাস্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর আমি এতকিছু হতে দেখছি। কয়েক মাস আগে এখানে একজিবিশন গ্যালারি এবং প্রোমেনাট সমেত বেশ কিছু উন্নয়ন কর্মের উদ্বোধন হয়েছিল। পার্বতী মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করা হয়েছিল, আর আজ সোমনাথ সার্কিট হাউজের উদ্বোধনও হচ্ছে। আমি এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের জন্য গুজরাটের রাজ্য সরকারকে, সোমনাথ মন্দির ট্রাস্টকে এবং আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুগণ,
এখানে যে একটি সার্কিট হাউজের অভাব ছিল, এখানে যে একটি সার্কিট হাউজ ছিল না, বাইরে থেকে গণমান্য কেউ এলে তাঁদেরকে কিভাবে, কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে মন্দির ট্রাস্ট্রের ওপর অনেকটাই চাপ থাকত। এখন এই সার্কিট হাউজ গড়ে ওঠার পর, একটি স্বতন্ত্র ব্যবস্থা তৈরি হওয়ার পর, আর এই ব্যবস্থা মন্দির থেকে খুব একটা দূরে নয়! এটি তৈরি হওয়ার ফলে মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের ওপর যে চাপ থাকত, সেটাও হ্রাস পেল। এখন তাঁরা মন্দিরের কাজে আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারবেন। আমাকে বলা হয়েছে যে, এই ভবনটিকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে এখানে যাঁরা থাকবেন, তাঁরা ঘর থেকে সমুদ্রও দেখতে পাবেন। অর্থাৎ, মানুষ যখন এখানে শান্তিতে নিজেদের কামরায় বসবেন, তখন তাঁরা সমুদ্রের ঢেউও দেখতে পাবেন আর সোমনাথ মন্দিরের শিখরও দেখতে পাবেন। সমুদ্রের ঢেউয়ে, সোমনাথ মন্দিরের শিখরে, সেই হানাদারির সময়ে ছেয়ে যাওয়া অন্ধকার চিরে প্রকাশিত, গৌরবময় ভারতের চেতনাও দেখা যাবে, অনুভব করা যাবে। এই ক্রমবর্ধমান পরিষেবাগুলির জন্য ভবিষ্যতে দিউ থেকে শুরু করে গির অরণ্য, দ্বারকা ভূমি, ভেদ দ্বারকা ইত্যাদি দেখতে আসা মানুষেরা, এই গোটা অঞ্চলে যত পর্যটক আসবেন, প্রত্যেকের জন্যই সোমনাথ এই গোটা পর্যটন ক্ষেত্রে একটি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে, একটি অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ প্রাণশক্তির কেন্দ্রও হয়ে উঠবে।
বন্ধুগণ,
যখন আমরা নিজেদের সভ্যতার প্রতিকূল ও সংঘর্ষময় যাত্রাপথের দিকে তাকাই, তখন অনুভব করতে পারি যে ভারত হাজার বছরের দাসত্বের সময় কেমন সব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে। যে পরিস্থিতিগুলি সোমনাথ মন্দিরকে ধ্বংস করে দিয়েছিল, আর আবার যে পরিস্থিতিতে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের প্রচেষ্টায় এই মন্দিরের পুনরুদ্ধার হয়েছে – এই দুটি ঘটনাই আমাদের জন্য একটি অনেক বড় বার্তাবাহী। আজ স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে আমরা দেশের অতীত থেকে যা যা শিখতে চাই, সোমনাথের মতো আস্থা, আধ্যাত্ম ও সংস্কৃতির স্থল তার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
বন্ধুগণ,
ভিন্ন ভিন্ন রাজ্য থেকে, দেশ এবং বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে, সোমনাথ মন্দির দর্শন করতে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ভক্ত এখানে আসেন। এই ভক্তরা যখন এখান থেকে ফিরে যান, তখন নিজেদের সঙ্গে অনেক নতুন অভিজ্ঞতা, অনেক নতুন ভাবনা, একটি নতুন অনুভব সঙ্গে করে নিয়ে যান। সেজন্য একটি পর্যটন যাত্রা যতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হয় তার অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তীর্থযাত্রার সময় আমাদের ইচ্ছা থাকে যাতে আমাদের মন ঈশ্বরেই মগ্ন থাকে। তীর্থযাত্রা-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সমস্যায় পড়তে না হয়, অন্যান্য প্রতিকূলতায় জর্জরিত না হতে হয়। সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থাগুলির প্রচেষ্টায় আমরা কিভাবে দেশের অনেক তীর্থক্ষেত্রে এরকম তীর্থযাত্রীদের জন্য প্রতিকূলতা কমাতে পেরেছি, সোমনাথ মন্দির তারও একটি জীবন্ত উদাহরণ। আজ যেখানে ভক্তদের আসার পর থাকার সুব্যবস্থা গড়ে উঠছে, সড়কপথ এবং যানবাহনের পরিষেবা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনই অত্যাধুনিক প্রোমেনাট উন্নত করা হয়েছে, পার্কিং সুবিধা তৈরি করা হয়েছে, ট্যুরিস্ট ফেসিলিটেশন সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য বেস্ট ম্যানেজমেন্টের আধুনিক ব্যবস্থাও করা হয়েছে। একটি অনিন্দ্যসুন্দর ‘পিলগ্রিম প্লাজা’ আর কমপ্লেক্স-এর প্রস্তাবও বাস্তবায়নের অন্তিম পর্যায়ে রয়েছে। আমরা জানি, এখন একটু আগে আমাদের পূর্ণেশভাই এর বর্ণনাও করছিলেন। মা অম্বাজি মন্দিরেও এ ধরনের উন্নয়ন এবং যাত্রী পরিষেবা নির্মাণের ভাবনা চলছে। দ্বারিকাধীশ মন্দির, রুক্মিনী দেবী মন্দির এবং গোমতীঘাট সহ আরও এরকম অনেক উন্নয়ন কর্মের প্রক্রিয়া আমরা ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ করার পথে। এগুলি যাত্রীদের নানা পরিষেবা যেরকম সুনিশ্চিত করবে, তেমনই গুজরাটের সাংস্কৃতিক পরিচয়কেও শক্তিশালী করে তুলবে।
আমি এই সাফল্যগুলির মাঝে গুজরাটের সমস্ত ধর্মীয় এবং সামাজিক সংগঠনগুলিকে আজকের এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে অবশ্যই প্রশংসা জানাতে চাই, তাদেরকে শুভেচ্ছা জানাই। আপনারা প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত স্তরে যেভাবে উন্নয়ন এবং সেবার কাজ নিরন্তর করে যাচ্ছেন তা আমার দৃষ্টিতে আমাদের সরকারের ‘সবকা প্রয়াস’-এর ভাবনার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সোমনাথ মন্দির ট্রাস্ট করোনার কঠিন সময়ে যেভাবে যাত্রীদের দেখাশোনা করেছে, যেভাবে সমাজের নানা দায়িত্বও পালন করেছে, তাতে আমরা ‘জীবের মধ্যে শিব’ – এই ভাবনা পরিলক্ষিত হতে দেখছি।
বন্ধুগণ,
আমরা বিশ্বের অনেক দেশ সম্পর্কে শুনি যে তাঁদের অর্থনীতিতে পর্যটনের অবদান কত বড়! এটাকে তাঁরা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে খুব ভালোভাবে তুলে ধরেন। আমাদের দেশে তো প্রত্যেক রাজ্যের, প্রত্যেক অঞ্চলের কাছেই বিশ্বের অনেক দেশের থেকে অনেক বেশি পর্যটনের শক্তি রয়েছে। আমাদের এক একটা রাজ্যে এক একটা দেশের মতো পর্যটনের অনন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। আপনারা যে কোনও রাজ্যের নাম নিতে পারেন। সবার আগে মনের মধ্যে কী আসে? গুজরাটের যদি নাম নেন তাহলে সোমনাথ, দ্বারকা, স্ট্যাচু অফ ইউনিটি, ধৌলাভিরা, কচ্ছ-এর রান – এরকম অদ্ভূত সব পর্যটন স্থল মনের মধ্যে জেগে ওঠে। উত্তরপ্রদেশের নাম নিলে অযোধ্যা, মথুরা, কাশী, প্রয়াগ, কুশীনগর, বিন্ধ্যাচলের মতো অনেক নাম আপনাদের মানসপটে এক প্রকার ভেসে ওঠে। সামান্য মানুষ সব সময়েই ভাবেন যে এসব জায়গায় যেন আমি যেতে পারি। উত্তরাখণ্ডকে তো দেবভূমিই বলা হয়। সেখানেই রয়েছে বদ্রীনাথজি বা কেদারনাথজির মতো মহাতীর্থ। হিমাচল প্রদেশের নাম যদি করেন, সেখানে রয়েছেন মা জ্বালাজি দেবী, মা নয়নাজি দেবী। তেমনই গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত নানা দেব-দেবীর দৈবী ও প্রাকৃতিক আভায় পরিপূর্ণ। এভাবে রামেশ্বরম যাওয়ার জন্য তামিলনাড়ু, পুরীধামে যাওয়ার জন্য ওড়িশা, তিরুপতি বালাজি দর্শনের জন্য অন্ধ্রপ্রদেশ, সিদ্ধি বিনায়কজির পীঠস্থানে যেতে হলে মহারাষ্ট্র, পবিত্র শবরীমালায় যেতে হলে কেরালার নাম আসে। আপনারা যে রাজ্যের নামই উচ্চারণ করুন না কেন, তীর্থ ভ্রমণ এবং পর্যটনের অনেক কেন্দ্রের নাম একসঙ্গে আমাদের মনের মধ্যে ভেসে ওঠে। এই স্থানগুলি আমাদের দেশের রাষ্ট্রীয় একতার প্রতীক। এই স্থানগুলি ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ – এই ভাবনার প্রতিনিধিত্ব করে। এই স্থানগুলিতে বেড়াতে গেলে রাষ্ট্রীয় একতা বৃদ্ধি পায়। আজ দেশ এই স্থানগুলির সমৃদ্ধিকে একটি মজবুত অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে দেখছে। এগুলির উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা একটি বড় এলাকার উন্নয়নে গতি সঞ্চার করতে পারি।
বন্ধুগণ,
বিগত সাত বছরে দেশে পর্যটনের সম্ভাবনাগুলিকে বাস্তবায়নের জন্য লাগাতার অনেক কাজ চলছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলির এই উন্নয়ন আজ শুধুই সরকারি প্রকল্পের অংশ নয়, এগুলি বড় অংশীদারিত্বেরও একটি অভিযান। দেশের হেরিটেজ সাইটগুলি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলির বিকাশ এর অনেক বড় উদাহরণ। আগে যে হেরিটেজ সাইটগুলি উপেক্ষিত হয়ে থাকত, সেগুলিকে এখন ‘সবকা প্রয়াস’-এর মাধ্যমে বিকশিত করা হচ্ছে। বেসরকারি ক্ষেত্রও এতে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে এসেছে। ‘ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া’ বা অতুলনীয় ভারত আর ‘দেখো আপনা দেশ’-এর মতো অভিযান আজ দেশের গৌরবকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরছে, পর্যটনকে উৎসাহ যোগাচ্ছে।
‘স্বদেশ দর্শন’ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে ১৫টি ‘থিম বেসড ট্যুরিস্ট সার্কিট’ও বিকশিত করা হচ্ছে। এই সার্কিটগুলি দেশের ভিন্ন ভিন্ন অংশগুলিকে শুধুই পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করছে না, পর্যটনকে নতুন পরিচয় দিয়ে সুগমও করে তুলছে। রামায়ণ সার্কিটের মাধ্যমে আপনারা ভগবান রামের সঙ্গে যুক্ত যত জায়গা রয়েছে, ভগবান রামের সঙ্গে যে যে জিনিসগুলির উল্লেখ থাকে, সেই সমস্ত স্থান একের পর এক দর্শন করতে পারেন। এর জন্য ভারতীয় রেল বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে আর আমাকে বলা হয়েছে যে এই ব্যবস্থা ক্রমে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
একটি স্পেশাল ট্রেন আগামীকাল থেকে ‘দিব্য কাশী যাত্রা’র জন্যও দিল্লি থেকে চালু হতে চলেছে। বুদ্ধ সার্কিট দেশ-বিদেশের পর্যটকদের জন্য ভগবান বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সমস্ত স্থানে পৌঁছনো সহজ করে তুলছে। বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভিসা নিয়মগুলিও সহজ করে তোলা হয়েছে। এর ফলে দেশ লাভবান হবে। এখন কোভিডের জন্য কিছু সমস্যা অবশ্যই এসেছে, কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস সংক্রমণ কম হলেই পর্যটকদের সংখ্যা আবার দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাবে। সরকার যে টিকাকরণ অভিযান চালিয়েছে, সেক্ষেত্রেও এদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে যাতে আমাদের ‘ট্যুরিস্ট স্টেট’গুলিতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সবাইকে টিকা দেওয়া হয়। গোয়া, উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যগুলি এক্ষেত্রে অনেক দ্রুতগতিতে কাজ করেছে এবং সাফল্য পেয়েছে।
বন্ধুগণ,
আজ দেশ পর্যটনকে সমগ্র রূপ দিতে একটি ‘হলিস্টিক ওয়ে’তে দেখছে। আজকের সময়ে পর্যটন বৃদ্ধির জন্য চারটি বিষয় অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্রথমটি হল পরিচ্ছন্নতা। আগে আমাদের পর্যটন স্থলগুলি, এমনকি পবিত্র তীর্থস্থানগুলিও অনেক অপরিচ্ছন্ন থাকত। আজ ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ এই চিত্র বদলে দিয়েছে। পর্যটন স্থলগুলি এবং তীর্থস্থানগুলির পরিচ্ছন্নতা যত বাড়ছে, পর্যটকদের সংখ্যাও তত বাড়ছে। পর্যটক বৃদ্ধির জন্য দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, পরিষেবা। কিন্তু পরিষেবাগুলির আওতা শুধুই পর্যটন স্থলগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। পরিবহণের পরিষেবা, ইন্টারনেট পরিষেবা, সঠিক তথ্যাবলী, চিকিৎসা ব্যবস্থা – এসব কিছু উন্নতমানের হতে হবে। এই লক্ষ্যে আমাদের দেশের সরকার চতুর্মুখী কাজ করে চলেছে।
বন্ধুগণ,
পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সময়। আজকাল ২০-২০-র যুগ এসে গেছে। মানুষ ন্যূনতম সময়ে অধিকতম স্থান ঘুরে দেখতে চান। আজ দেশে যেভাবে একের পর এক হাইওয়েজ, এক্সপ্রেসওয়েজ গড়ে উঠছে, আধুনিক ট্রেন চলছে, নতুন নতুন এয়ারপোর্ট চালু করা হচ্ছে, এগুলির ফলে এই কম সময়ে বেশি জায়গা দেখার ব্যাপারটা অনেক সহজ হচ্ছে। ‘উড়ান যোজনা’র ফলে বিমান ভাড়া অনেক হ্রাস পেয়েছে। অর্থাৎ, যাতায়াতের সময় যতটা কম হচ্ছে, খরচও কম হচ্ছে, ততটাই পর্যটকদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা যদি গুজরাটের দিকে তাকাই, তাহলে আমাদের এখানে বনাসকান্তায় অম্বাজির দর্শনের জন্য, পাওয়াগড়ে কালিকা মাতার দর্শনের জন্য, গিরনারে এখন নতুন রোপওয়েও তৈরি হয়েছে, তা ওই পর্যটন স্থলের আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সাতপুরাতে সব মিলিয়ে চারটি রোপওয়ে চালু হয়েছে। এই রোপওয়েগুলি শুরু হওয়ার পর পর্যটকদের পরিষেবা অনেক বেড়েছে। ফলে, পর্যটকদের সংখ্যায়ও বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এখন করোনার প্রভাবে অনেক কিছু থেমে আছে, কিন্তু আমরা দেখেছি যে যখন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এডুকেশন ট্যুরে যায়, তখন তাদেরকেও এই ঐতিহাসিক স্থানগুলি অনেক কিছু শেখায়। যখন সারা দেশ থেকে আমাদের এই স্থানগুলিতে ছাত্রছাত্রীরা ঘুরতে আসবে, তখন ছাত্রছাত্রীদের বোঝা ও শেখা অনেক সহজ হবে, তাদের মনে দেশের ঐতিহ্যের প্রতি টান বাড়বে।
বন্ধুগণ,
পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য চতুর্থ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল আমাদের ভাবনা। আমাদের ভাবনায় উদ্ভাবক এবং আধুনিক হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু পাশাপাশি, আমরা নিজেদের প্রাচীন ঐতিহ্য নিয়ে কতটা গর্বিত, এটা অনেক মানে রাখে। আমাদের মধ্যে এই গৌরবভাব রয়েছে, সেজন্য আমরা ভারত থেকে চুরি করে নিয়ে যাওয়া মূর্তিগুলিকে, পুরনো ঐতিহ্যকে সারা পৃথিবী থেকে ফিরিয়ে আনছি। আমাদের জন্য আমাদের পূর্বজরা এত কিছু দেখে গেছেন, কিন্তু একটা সময় ছিল যখন আমাদের ধার্মিক, সাংস্কৃতিক পরিচয় নিয়ে কথা বলতে সঙ্কোচ হত। স্বাধীনতার পর দিল্লিতে কয়েকটি হাতেগোনা পরিবারের জন্যই নব-নির্মাণ শুরু হয়েছিল। কিন্তু আজ দেশ সেসব সংকীর্ণ ভাবনাকে পেছনে ফেলে নতুন গৌরব স্থলগুলি গড়ে তুলছে, সেগুলিকে অনিন্দ্যসুন্দর করে তুলছে। এটা আমাদের সরকারের আমলেই হয়েছে। যখন আমরা দিল্লিতে বাবাসাহেব মেমোরিয়াল গড়ে তুলেছি, আমাদের সরকারই রামেশ্বরমে ডঃ এ.পি.জে.আব্দুল কালাম স্মারক তৈরি করিয়েছে। এভাবেই নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু এবং শ্যামজি কৃষ্ণভার্মার মতো মহাপুরুষদের সঙ্গে যুক্ত স্থানগুলিকে সুন্দর করে তোলা হয়েছে। আমাদের আদিবাসী সমাজের গৌরবময় ইতিহাসকে সামনে তুলে ধরার জন্য সারা দেশে আদিবাসী মিউজিয়ামও গড়ে তোলা হচ্ছে। আজ কেভাড়িয়াতে তৈরি স্ট্যাচু অফ ইউনিটি গোটা দেশের গৌরব। করোনাকাল শুরু হওয়ার আগেই, অত্যন্ত কম সময়ে ৪৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’ দেখতে এসেছিলেন। করোনাকাল থাকা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত ৭৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’ দেখতে এসেছেন। আমাদের নব-নির্মিত স্থলগুলির এই সামর্থ্য রয়েছে, এই আকর্ষণ রয়েছে। আগামী সময়ে এই প্রচেষ্টা পর্যটন-সংশ্লিষ্ট আমাদের পরিচয়কেও নতুনভাবে বাড়াবে।
আর বন্ধুগণ,
যখন আমি ‘লোকাল ফর ভোকাল’-এর কথা বলি, তখন আমি দেখি যে কিছু মানুষ এই কথা ভাবেন যে মোদীর ‘ভোকাল ফর লোকাল’-এর মানে দীপাবলিতে প্রদীপ কোথায় থেকে কিনবেন! এত সীমিত অর্থ নিয়ে ভাববেন না ভাই! যখন আমরা ‘ভোকাল ফর লোকাল’ বলি, তখন আমার দৃষ্টি এই ‘মেরী দৃষ্টি সে ট্যুরিজম’ – এরকমই বুঝি। আমি সর্বদাই ভাবি যে যদি পরিবারের শিশুদের নিয়ে বিদেশ যেতে হয়, দুবাই যেতে হয়, সিঙ্গাপুর যেতে হয়, মনে অনেক ইচ্ছে, কিন্তু বিদেশ যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা করার আগে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করে নিন, আগে ভারতের ১৫ থেকে ২০টি বিখ্যাত স্থানে যাবেন, আগে ভারতকে অনুভব করবেন, দেখবেন, তারপরই বিশ্বের অন্য কোনও কিছু দেখতে নিয়ে যাবেন।
বন্ধুগণ,
‘ভোকাল ফর লোকাল’ জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে অঙ্গীকার করতে হবে। দেশকে সমৃদ্ধ করে তুলতে হবে। দেশের নবীন প্রজন্মের জন্য সব সময় সুযোগ তৈরি করতে হবে আর এই পথে চলতে হবে। আজ স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে আমরা একটি এমন ভারতের জন্য সঙ্কল্প নিচ্ছি, যে যতটা আধুনিক হবে, ততটাই নিজেদের পরম্পরার সঙ্গে যুক্ত হবে। আমাদের তীর্থস্থান, আমাদের পর্যটন স্থলগুলি এই নতুন ভারতে রং ভরার জন্য কাজে লাগবে। এটাই আমাদের ঐতিহ্য এবং উন্নয়ন - উভয়েরই প্রতীক হয়ে উঠবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সোমনাথ দাদার আশীর্বাদে দেশের উন্নয়নের এই যাত্রা এইভাবেই অনবরত জারি থাকবে।
একবার আবার নতুন সার্কিট হাউজের জন্য আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!