উত্তর প্রদেশের রাজ্যপাল আনন্দিবেন প্যাটেলজি, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথজি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহযোগী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াজি, কিরেন রিজিজুজি, কিসান রেড্ডিজি, জেনারেল ভি কে সিং জি, অর্জুনরাম মেঘওয়ালজি, শ্রীপাদ নায়েকজি, মীনাক্ষী লেখিজি, উত্তরপ্রদেশ সরকারের মন্ত্রী নন্দগোপাল নন্দীজি, সাংসদ বিজয় কুমার দুবেজি,বিধায়ক রজনীকান্ত মনি ত্রিপাঠিজি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং কূটনীতিক গণ, বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিবৃন্দ—
ভাই ও বোনেরা,
ভারত আজ গোটা বিশ্বের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষের শ্রদ্ধা এবং আস্থার কেন্দ্রবিন্দু।
আজ কুশিনগর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এই পরিষেবা তাদের শ্রদ্ধার প্রতি পুষ্পাঞ্জলি অর্পনের মত।
ভগবান বুদ্ধের বুদ্ধত্ব অর্জন থেকে মহানির্বাণ পর্যন্ত সম্পূর্ণ অভিযাত্রার সাক্ষী এই অঞ্চল সরাসরি গোটা পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেল।
আজ শ্রীলংকার বিমান সংস্থার বিমান এখানে অবতরণ করা যেন এই পূণ্যভূমিকে প্রণাম জানানোর মতো। এই বিমানে করে শ্রীলঙ্কা থেকে আসা পরম শ্রদ্ধেয় মহা সংঘ এবং অন্যান্য বিশিষ্ট মানুষেরা কুশিনগরে এসেছেন।
আজ বাল্মিকী জয়ন্তীরও সুখদায়ক উপলক্ষ। ভগবান বাল্মীকির অনুপ্রেরণাতে আজ গোটা দেশ সবার সঙ্গে সবাইকে নিয়ে বিকাশের পথে এগিয়ে চলেছে।
বন্ধুগণ,
কুশিনগরের এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অনেক দশকের আশা ও প্রতীক্ষার ফসল। আমি আজ দ্বিগুণ খুশি। আধ্যাত্মিক অভিযাত্রার অনুসন্ধানী হিসেবে মনে একটা সন্তুষ্টির ভাব আছে। একইসঙ্গে পূর্বাচল প্রতিনিধি হিসেবে একটি প্রতিশ্রুতি পূরণেরও সময় এটা।
কুশিনগর এর মানুষ, উত্তর প্রদেশের মানুষ,পূর্বাচল- পূর্ব ভারতের মানুষ, গোটা বিশ্বের ভগবান বুদ্ধের অনুসারী মানুষ, সবাইকে কুশিনগর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন!!
বন্ধুগণ,
ভগবান বুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত স্থানগুলির বিকাশের জন্য,উন্নততর যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য, শ্রদ্ধাবনত মানুষের সুবিধার্থে বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা নির্মাণে ভারত আজ বিশেষভাবে মনযোগ দিয়েছে। কুশিনগরের বিকাশ আজ উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং ভারত সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয়। ভগবান বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনী এখান থেকে খুব একটা দূরে নয়।একটু আগেই জ্যোতিরাদিত্যজি এই বিষয়ে বিস্তারীত বর্ণনা করেছেন, তবু পুনরাবৃত্তি এজন্য করতে চাইছি যে, দেশের প্রত্যেক প্রান্ত থেকে এই অঞ্চলের এটা সেন্টার পয়েন্ট কিভাবে, এটা যাতে আমরা সহজভাবে বুঝতে পারি। কপিলাবস্তুও কাছেই রয়েছে। ভগবান বুদ্ধ যেখানে প্রথম উপদেশ দিয়েছিলেন সেই সারনাথও দুই থেকে আড়াইশো কিলোমিটার পরিধির মধ্যে রয়েছে। যেখানে বুদ্ধের জ্ঞানপ্রাপ্তি হয়েছিল, সেই বৌদ্ধগয়াও মাত্র কয়েকঘন্টার দূরত্বে। সেজন্যেই এই অঞ্চল শুধুমাত্র ভারতের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্যই নয়, এমনকি শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, লাওস, কম্বোডিয়া, জাপান, কোরিয়ার মতো অনেক দেশের নাগরিকদের জন্যও বিশাল আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠতে চলেছে।
ভাই ও বোনেরা,
কুশিনগর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শুধুমাত্র আকাশপথে যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে উঠবে না, বরং এটা গড়ে ওঠায় কৃষক থেকে শুরু করে পশুপালক, দোকানদার, শ্রমিক, কিংবা এখানকার শিল্পোদ্যোগী – সকলেরই এর মাধ্যমে সরাসরি লাভ হবে। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি সম্পূর্ণ ইকোসিস্টেম এখানে বিকশিত হবে। এ থেকে এই অঞ্চলের যুবশক্তির জন্য রোজগারের অনেক নতুন সুযোগ তৈরি হবে।
ভাই ও বোনেরা,
পর্যটনের যে উদ্দেশ্যই থাকুক না কেন, পুণ্যঅর্জন কিংবা ভ্রমণের আনন্দ লাভ, আধুনিক পরিকাঠামো এর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটাই এর পূর্বশর্ত – রেল, সড়ক, বিমানপথ, জলপথ, পরিকাঠামোর এই সম্পূর্ণ কাঠামো, এর পাশাপাশি হোটেল – হসপিটাল এবং ইন্টারনেট-মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিকাঠামো – সাফাই ব্যবস্থার, সিওয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এর, এগুলির স্বতন্ত্র পরিকাঠামো – পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সুনিশ্চিত করা রিনিউয়েবল এনার্জির, এই সবকিছু পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। যে কোনও জায়গায় পর্যটনের উন্নতির জন্য এসব ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজন হয়, আর আজ একবিংশ শতাব্দীর ভারত এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই এগিয়ে চলেছে।
পর্যটনের ক্ষেত্রে এখন একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে, ভ্যাক্সিনেশন বা টিকাকরণেরর ক্ষেত্রে ভারতের দ্রুত গতির মাধ্যমে প্রগতি বিশ্বের জন্য একটি বিশ্বাস সৃষ্টি করবে, যদি পর্যটক হিসেবে ভারতে যেতে হয়, কোনও কাজের সূত্রে ভারতে যেতে হয়, সেই ভারত ব্যাপক ভাবে ‘ভ্যাক্সিনেটেড’, আর সেজন্যে ‘ভ্যাক্সিনেটেড’ দেশ হিসেবে বিশ্বের পর্যটকদের জন্য একটি আশ্বস্ত ব্যবস্থা, এটাও তাঁদের সিদ্ধান্ত নিতে একটি সুবিধার কারণ হতে পারে, তাছাড়া বিগত বছরগুলিতে এয়ার কানেক্টিভিটি বা বিমান যোগাযোগ দেশের সেই মানুষদের কাছে, সেই অঞ্চলগুলি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, যারা কখনও এসম্পর্কে ভাবেনওনি।
এই লক্ষ্য নিয়ে শুরু করা ‘উড়ান যোজনা’র চার বছর পূর্ণ হতে চলেছে। উড়ান যোজনার মাধ্যমে বিগত বছরগুলিতে ৯০০-রও বেশি নতুন রুটকে মঞ্জুর করা হয়েছে, এর মধ্যে ৩৫০ টিরও বেশি রুটে বিমান পরিষেবা চালু হয়ে গেছে। ৫০টিরও বেশি নতুন বিমানবন্দর ও অব্যবহৃত এয়ারপোর্টকে চালু করা হয়েছে। আগামী তিন - চার বছরে চেষ্টা করা হবে যাতে দেশে ২০০ টিরও বেশি এয়ারপোর্ট, হেলিপোর্ট আর সি-প্লেনের পরিষেবা প্রদানকারী ওয়াটারড্রোমের নেটওয়ার্ক দেশে তৈরি করা যায়। আপনি ও আমি এই পরিবর্তনের সাক্ষী যে এই ক্রমবর্ধমান পরিবেষার ফলে এখন বিমানবন্দরগুলিতে ভারতের সাধারণ মানুষকে বেশি দেখা যাচ্ছে। আগের থেকে বেশি মধ্যবিত্ত মানুষ আজ বিমান পরিষেবা ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। উড়ান যোজনার মাধ্যমে এখানে উত্তর প্রদেশেও কানেক্টিভিটি ক্রমাগত বাড়ছে। উত্তরপ্রদেশে আটটি বিমানবন্দরে ফ্লাইটস চালু হয়েছে। লক্ষনৌ, বারানসী এবং কুশীনগরের পর জেওয়রেও ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট তৈরির কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। তাছাড়া অযোধ্যা, আলীগড়, আজমগড়, চিত্রকূট, মুরাদাবাদ এবং শ্রাবস্তীতেও নতুন বিমানবন্দর তৈরির কাজ চলছে। অর্থাৎ, একভাবে উত্তরপ্রদেশের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা, অতি দ্রুত, অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠবে। আমাকে এটাও বলা হয়েছে যে আগামী কয়েক সপ্তাহে দিল্লি এবং কুশীনগরের মধ্যে স্পাইসজেট দ্বারা সরাসরি ফ্লাইট শুরু করা হচ্ছে। আর জ্যোতিরাদিত্যজি আরও কিছু গন্তব্য সম্পর্কে বলেছেন, এর ফলে অন্তর্দেশীয় যাত্রীদের, শ্রদ্ধাশীল মানুষদের অনেক সুবিধা হতে চলেছে।
বন্ধুগণ,
দেশের বিমান পরিবহন ক্ষেত্র যাতে পেশাদারীত্ব নিয়ে চলে, পরিষেবা এবং নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, সেজন্য সম্প্রতি এয়ার ইন্ডিয়া নিয়ে দেশ বড়ো পদক্ষেপ নিয়েছে। এই পদক্ষেপ ভারতের বিমান পরিবহন ক্ষেত্রকে নতুন প্রাণশক্তি জোগাবে। তেমনই একটি বড়ো সংস্কার ডিফেন্স এয়ারস্পেসকে অসামরিক ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করার মাধ্যমে হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে অনেক এয়াররুটে বিমান যাত্রার দূরত্ব কমেছে, সময় কমেছে। ভারতের নবীন প্রজন্ম যাতে এদেশেই উন্নত প্রশিক্ষণ পায়, সেজন্য দেশের ৫টি বিমানবন্দরে ৮টি নতুন ফ্লাইং অ্যাকাডেমি স্থাপন করার প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়েছে। প্রশিক্ষণের জন্য এয়ারপোর্টের ব্যবহার সংক্রান্ত নিয়মগুলিকেও সরল করা হয়েছে। সম্প্রতি ভারতের সংসদে প্রণয়ন করা নতুন ড্রোন নীতিও দেশে কৃষি থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য পর্যন্ত, বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা পর্যন্ত জীবনে পরিবর্তন আনতে চলেছে। ড্রোনের ম্যানুফ্যাকচারিং থেকে শুরু করে ড্রোন ফ্লাইং সংক্রান্ত প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ তৈরি করার জন্য এখন ভারতে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইকো-সিস্টেম বিকশিত করা হচ্ছে। এই সকল প্রকল্প, এসব নীতি যাতে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যায়, কোনরকম প্রতিবন্ধকতা না আসে, তা সুনিশ্চিত করতেই সম্প্রতি ‘পিএম গতি শক্তি – ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান’ও চালু করা হয়েছে। এর ফলে গভর্ন্যান্সে তো সংস্কার আসবেই, পাশাপাশি এটাও সুনিশ্চিত করা সম্ভব হবে যে সড়কপথ থেকে শুরু করে রেলপথ ও বিমান পরিবহন যেন পরস্পরকে সমর্থন করে পরস্পরের ক্ষমতা বাড়ায়। ভারতে হয়ে চলা ক্রমাগত সংস্কারের পরিণাম হল ভারতীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে আনুমানিক ১ হাজারটি নতুন বিমান যুক্ত হতে চলেছে।
বন্ধুগণ,
স্বাধীনতার অমৃতকালে ভারতের বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রটি দেশের গতি ও প্রগতির প্রতীক হয়ে উঠবে, উত্তরপ্রদেশের প্রাণশক্তিও এর মধ্যে সামিল হবে এই কামনা নিয়ে আরেকবার এখানে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট শুরু হওয়ার জন্য আপনাদের সবাইকে, সারা পৃথিবীর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী দেশগুলির নাগরিকদের অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। এখান থেকে আমি দেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাগত বৌদ্ধভিক্ষুদের আশীর্বাদ নিতে যাব আর আরেকবার উত্তরপ্রদেশের পরিকাঠামো উন্নয়নের অনেক প্রকল্প উদ্বোধন করার সৌভাগ্যও হবে।
আরেকবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।