কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আমার সহকর্মীরা, ডঃ এস জয়শঙ্করজি, শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবজি এবং শ্রী দেবুসিং চৌহানজি, আইটিইউ-র সেক্রেটারি জেনারেল, অন্য বিশিষ্ট অতিথিগণ, ভদ্রমহোদয়া ও ভদ্রমহোদয়গণ!
আজকের দিনটি বিশেষ এবং পবিত্র দিন। আজ থেকে ‘হিন্দু ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী নববর্ষের সূচনা হচ্ছে। আমি ২০৮০ বিক্রম সম্বত-এর শুভেচ্ছা জানাই আপনাদের এবং সকল দেশবাসীকে। আমাদের বিশাল এবং বৈচিত্র্যময় দেশে বহু শতাবী ধরে বিভিন্ন ক্যালেন্ডার প্রচলিত। কোল্লাম শাসনকালে মালায়লাম ক্যালেন্ডার ছিল। ছিল তামিল ক্যালেন্ডার যা কয়েকশ’ বছর ধরে ভারতে তারিখ এবং সময় দেখার জন্য ব্যবহৃত হত। বিক্রম সম্বতও ২০৮০ বছর আগে থেকে প্রচলিত। গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডারের বয়স ২০২৩, কিন্তু তারও ৫৭ বছর আগে থেকে শুরু হয়েছে বিক্রম সম্বত। আমি খুশি যে টেলিকম, আইসিটি এবং সংশ্লিষ্ট উদ্ভাবনের নতুন সূচনা হচ্ছে এই পূণ্য দিনে। আজ ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ)-এর আঞ্চলিক কার্যালয় এবং উদ্ভাবন কেন্দ্রের উদ্বোধন হয়েছে। এছাড়াও, ৬জি-র পরীক্ষারমূলক সূচনাও হয়েছে আজকে। এই প্রযুক্তি সংক্রান্ত আমাদের দৃষ্টিপত্রেরও আজ আবরণ উন্মোচন হয়েছে। এটি শুধু ডিজিটাল ইন্ডিয়ায় নতুন প্রাণসঞ্চার করবে তাই নয়, দক্ষিণ এশিয়া এবং গ্লোবাল সাউথের জন্য সমাধান ও উদ্ভাবনও করবে। এটি নতুন সুযোগের সৃষ্টি করবে বিশেষ করে, আমাদের শিক্ষাবিদ, উদ্ভাবক, স্টার্ট-আপ এবং শিল্পের জন্য।
বন্ধুগণ,
জি-২০-র সভাপতিত্বকালে ভারতের অগ্রাধিকার আঞ্চলিক বিভাজন হ্রাস করা। কয়েক সপ্তাহ আগে ভারত গ্লোবাল সাউথ শিখর সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। গ্লোবাল সাউথ-এর অনন্য প্রয়োজনের কথা ভেবে প্রযুক্তি, নকশা এবং মানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্লোবাল সাউথ এখন প্রযুক্তিগত বিভাজনের সেতুবন্ধ করতে চাইছে। আইটিইউ-এর এই আঞ্চলিক কার্যালয় ও উদ্ভাবন কেন্দ্র সেই লক্ষ্য পূরণে একটি বড়সড় পদক্ষেপ। আমার মনে হয় যে গ্লোবাল সাউথ-এ আন্তর্জাতিক যোগাযোগ গড়ে তুলতে ভারতের প্রয়াস অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক এবং গতিসম্পন্ন। এতে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলির আইসিটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং সংযোগ বৃদ্ধি পাবে। আমি এখানে উপস্থিত সকলকে বিশেষ করে, বিদেশ থেকে আগত সবাইকে অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুগণ,
প্রযুক্তিগত বিভাজনের সেতুবন্ধ করার কথা যখন ওঠে, তখন ভারতের কাছ অনেক কিছু প্রত্যাশা করাই স্বাভাবিক। ভারতের সম্ভাবনা, উদ্ভাবনী সংস্কৃতি, পরিকাঠামো, দক্ষ এবং উদ্ভাবন ক্ষমতাসম্পন্ন মানবসম্পদ ও সহায়ক নীতিগত পরিবেশ এই প্রত্যাশার ভিত্তি। এরই সঙ্গে ভারত দুটি বিষয় নিয়ে গর্ব করতে পারে। সেগুলি হল – আস্থা এবং মাত্রা। আমরা আস্থা এবং মাত্রা ব্যতিত প্রযুক্তিকে প্রতিটি কোণে পৌঁছে দিতে পারব। আমি বলব, বর্তমান প্রযুক্তির যুগে আস্থা হল পূর্বশর্ত। বর্তমানে সারা বিশ্ব ভারতের এই প্রয়াস নিয়ে আলোচনা করছে। আজকের ভারত সারা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংযুক্ত গণতন্ত্র যেখানে আছে ১০০ কোটি মোবাইল ফোন। সুলভ স্মার্টফোন এবং সস্তা ইন্টারনেট ডেটা ভারতের ডিজিটাল জগতের রূপান্তর ঘটিয়ে দিয়েছে। ভারতে প্রতি মাসে ৮০০ কোটির বেশি ইউপিআই ডিজিটাল পেমেন্ট হয়। ভারতে প্রতিদিন ৭ কোটি ই-অথেন্টিকেশন হয়। ভারতের CoWIN অ্যাপের মাধ্যমে ২২০ কোটির বেশি টিকাকরণ হয়েছে। গত কয়েক বছরে ভারত ডিবিটি-র মাধ্যমে ২৮ লক্ষ কোটির বেশি টাকা সরাসরি পৌঁছে দিয়েছে নাগরিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। আমরা জন ধন যোজনার মাধ্যমে আমেরিকার জনসংখ্যার চেয়েও বেশি মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছি। তারপর এই অ্যাকাউন্টগুলি ইউনিক ডিজিটাল আইডেন্টিটি বা আধার-এর মাধ্যমে যাচাই করা হয়েছে। তারপর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ১০০ কোটির বেশি মানুষকে সংযুক্ত করা হয়েছে। জন ধান-আধার-মোবাইল (জেএএম) – এই ত্রয়ীই এখন বিশ্বের কাছে গবেষণার বিষয়।
বন্ধুগণ,
টেলিকম প্রযুক্তি ভারতের কাছে শুধুই একটি শক্তির ধরন নয়, এটি মানুষের সশক্তিকরণের উপায়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ভারতে সর্বজনীন। সকলেই এর সুবিধা পাচ্ছে। গত কয়েক বছরে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিকরণ ভারতে ঘটছে বিশাল আকারে। যদি আমরা ব্রডব্যাঙ্ক সংযোগের কথা বলি, ২০১৪-র আগে ভারতে এটি ব্যবহার করতেন ৬ কোটি মানুষ। বর্তমানে ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮০ কোটির বেশি। ২০১৪-র আগে ভারতে ইন্টারনেট সংযোগের সংখ্যা ছিল ২৫ কোটি, আজ তা ৮৫ কোটির বেশি।
বন্ধুগণ,
বর্তমানে ভারতের গ্রামে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা শহরের থেকে বেশি। এতেই প্রমাণ ডিজিটাল শক্তি কিভাবে দেশের কোণে কোণে পৌঁছচ্ছে। সরকার এবং বেসরকারি ক্ষেত্র মিলে ভারতে ২৫ লক্ষ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার বসিয়েছে। এই ক’বছরে প্রায় ২ লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েত সংযুক্ত হয়েছে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে। বর্তমানে ৫ লক্ষের বেশি কমন সার্ভিস সেন্টার সারা দেশের গ্রামগুলিতে ডিজিটাল পরিষেবা প্রদান করছে। এই সকল পদক্ষেপের ফল আজ আমাদের ডিজিটাল অর্থনীতি দেশের সার্বিক অর্থনীতির তুলনায় আড়াইগুণ বেশি হারে এগোচ্ছে। নন-ডিজিটাল ক্ষেত্রও ডিজিটাল ইন্ডিয়া থেকে বলপ্রাপ্ত হচ্ছে। এর প্রমাণ আমাদের ‘পিএম গতি শক্তি ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান’। সব ধরনের পরিকাঠামোর তথ্যের ভাণ্ডার তৈরি করা হচ্ছে যা আনা হয়েছে মাত্র একটি প্ল্যাটফর্মে। এর লক্ষ্য পরিকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিটি সম্পদের তথ্য পাওয়া যাবে একটি জায়গায় এবং প্রত্যেকেই তা তৎক্ষণাৎ পাবে। ‘কল বিফোর ইউ ডিগ’ অ্যাপ, যার আজ সূচনা হল তা এই ভাবনারই সম্প্রসারণ। আর এই ‘কল বিফোর ইউ ডিগ’-এর মানে এই নয় যে এটা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হবে। আপনারা জানেন যে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য খোঁড়াখুঁড়ির ফলে টেলিকম নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই নতুন অ্যাপের সাহায্যে খননকারী সংস্থাগুলি এবং যে সমস্ত দপ্তরের মাটির নিচে বিভিন্ন জিনিসপত্র আছে, তাদের মধ্যে সমন্বয় ঘটানো যাবে। এর ফলে, ক্ষতি অনেক কম হবে আর মানুষকে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাও কমবে।
বন্ধুগণ,
বর্তমানে ভারত দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে ডিজিটাল বিপ্লবের পরবর্তী ধাপে। আজকে ভারত সারা বিশ্বে দ্রুততম ৫জি-র দেশ। মাত্র ১২০ দিনে ১২৫টি শহরে ৫জি চালু হয়ে গেছে। আজ ৫জি পরিষেবা পৌঁছে গেছে দেশের প্রায় ৩৫০টি জেলায়। এছাড়াও, বর্তমানে আমরা ৫জি চালু হওয়ার মাত্র ছ’মাস পরেই ৬জি নিয়ে আলোচনা করছি। এতে বোঝা যায় ভারতের আত্মবিশ্বাস কতটা। আজ আমরা দৃষ্টিপত্র প্রকাশ করলাম। এটি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ৬জি চালু করার প্রধান ভিত্তি হয়ে উঠবে।
বন্ধুগণ,
দেশজ টেলিকম প্রযুক্তি বর্তমানে বিশ্বের নানা দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। ৪জি চালু হওয়ার আগে ভারত শুধুমাত্র ছিল টেলিকম প্রযুক্তির ক্রেতা। কিন্তু এখন ভারত সারা বিশ্বে টেলিকম প্রযুক্তির বৃহত্তম রপ্তানিকারক হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। ৫জি-র শক্তির সাহায্যে ভারত সারা বিশ্বের কর্মসংস্কৃতির বদল ঘটাতে অনেক দেশের সঙ্গে কাজ করছে। খুব শীঘ্রই ভারত ১০০টি নতুন ৫জি ল্যাব স্থাপন করবে। এতে ৫জি-র সঙ্গে যুক্ত সুবিধা, বাণিজ্যিক মডেল এবং কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। এই ১০০টি নতুন ল্যাব ভারতের প্রয়োজন অনুযায়ী ৫জি প্রয়োগের ব্যবস্থা করবে। সে ৫জি স্মার্ট ক্লাসরুমই হোক, কৃষিই হোক, অত্যাধুনিক পরিবহণ ব্যবস্থাই হোক অথবা স্বাস্থ্য পরিষেবা - ভারত প্রত্যেক ক্ষেত্রেই দ্রুত কাজ করছে। ভারতের ৫জি-র মান বিশ্বের ৫জি ব্যবস্থারই অংশ। ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির মান নির্ণয়ের জন্য আমরা কাজ করব আইটিইউ-এর সঙ্গে। আজকে যে ভারতীয় আইটিইউ আঞ্চলিক কার্যালয়ের সূচনা হল তাতে ৬জি-র জন্য সঠিক পরিবেশ গড়ে তোলার সহায়ক হবে। আমি একথা ঘোষণা করতে পেরে আনন্দিত যে আইটিইউ-এর ওয়ার্ল্ড টেলি-কমিউনিকেশন্স স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন অ্যাসেম্বলি আগামী বছর অক্টোবরে আয়োজিত হবে দিল্লিতে। সারা বিশ্ব থেকে প্রতিনিধিরা আসবেন ভারতে এই সভায় যোগ দিতে। আমি আপনাদের শুভেচ্ছা জানাই। সেইসঙ্গেই আমি এই ক্ষেত্রের কৃতবিদ্যদের কাছে আবেদন রাখব যে অক্টোবরের আগেই আমাদের কিছু করা উচিত যাতে বিশ্বের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর দেশগুলি পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করতে পারে।
বন্ধুগণ,
ভারতের উন্নয়নের এই গতির দিকে লক্ষ্য রেখে এটা বলা যায় যে এই দশক ভারতের প্রযুক্তির দশক। ভারতের টেলিকম এবং ডিজিটাল মডেল সহজ, নিরাপদ, স্বচ্ছ আস্থাভাজন এবং পরীক্ষিত। দক্ষিণ এশিয়ার সকল বন্ধু দেশ এর সুযোগ নিতে পারে। আমার বিশ্বাস, আইটিইউ-এর এই কেন্দ্র এই ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। আরও একবার আমি এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে বিশ্বের নানা দেশ থেকে আগত অভ্যাগতদের স্বাগত জানাই এবং আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছা জানাই।
অনেক ধন্যবাদ!
প্রধানমন্ত্রী মূল ভাষণটি হিন্দিতে দিয়েছিলেন