মহারাষ্ট্রের মাননীয় রাজ্যপাল শ্রী রমেশ বাইসজি, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী একনাথ শিন্ডে, উপ-মুখ্যমন্ত্রী ভাই দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ও অজিত দাদা পাওয়ার, ইন্ডিয়ান নিউজ পেপার্স সোসাইটির সভাপতি শ্রী রাকেশ শর্মা, বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ !
প্রথমেই আমি ইন্ডিয়ান নিউজ পেপার্স সোসাইটির প্রতিটি সদস্যকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আজ মুম্বাইতে আপনাদের একটি প্রশস্ত ও আধুনিক ভবন হল। এই নতুন ভবন আপনাদের কাজের দক্ষতা বাড়াবে এবং কাজের পরিবেশ সহজ করবে বলে আমার আশা। এতে আমাদের গণতন্ত্রও শক্তিশালী হবে। ইন্ডিয়ান নিউজ পেপার্স সোসাইটি এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার সূচনা হয়েছিল স্বাধীনতার আগে, দেশের যাত্রাপথের প্রতিটি চড়াই-উৎরাই আপনারা খুব কাছ থেকে দেখেছেন এবং সাধারণ মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিয়েছেন। তাই একটি সংগঠন হিসেবে আপনাদের কাজ যত বেশি উপযোগী হবে, দেশও তত বেশি উপকৃত হবে।
বন্ধুরা,
গণমাধ্যম শুধুমাত্র দেশের পরিস্থিতির নিষ্ক্রিয় পর্যবেক্ষক নয়, আপনারা যাঁরা সংবাদমাধ্যমে রয়েছেন, তাঁরা দেশের পরিস্থিতি পরিবর্তনে এবং জাতিকে পথ দেখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আজ ভারত এমন এক সময়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে তার আগামী ২৫ বছরের যাত্রা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আগামী ২৫ বছরের মধ্যে ভারতকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা সমান তাৎপর্যপূর্ণ। গণমাধ্যমই দেশের নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ায়। গণমাধ্যম প্রতিনিয়ত নাগরিকদের তাঁদের অধিকারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং গণমাধ্যমই মানুষকে তাঁদের সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে শেখায়। দেশের নাগরিকরা যখন নিজেদের সম্ভাবনার ওপর আস্থা পোষণ করেন, তখনই তাঁরা সাফল্যের নতুন শিখর স্পর্শ করতে পারেন। আজ ভারতেও তাই হচ্ছে। আপনাদের একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই। একটা সময় ছিল যখন কিছু নেতা খোলাখুলি বলতেন যে ডিজিটাল লেনদেনে সড়গড় হওয়া ভারতবাসীর সাধ্যের বাইরে। তাঁরা ভাবতেন, এ দেশে আধুনিক প্রযুক্তি কাজ করতে পারবে না। কিন্তু বিশ্ববাসী আজ ভারতের মানুষের প্রজ্ঞা ও সামর্থ্যের সাক্ষী হচ্ছে। আজ ভারত বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল লেনদেনে একের পর এক রেকর্ড ভাঙছে।
আজ ভারতের ইউপিআই এবং আধুনিক ডিজিটাল জন-পরিকাঠামোর জন্য জীবনযাত্রার সহজতা বেড়েছে, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা পাঠানো সহজতর হয়েছে। আজ ভারতীয়রা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে, বিশেষত উপসাগরীয় দেশগুলি থেকে অনেক কম খরচে নিজের দেশে অর্থ পাঠাতে পারেন। এর আংশিক কৃতিত্ব এই ডিজিটাল বিপ্লব দাবি করতে পারে। বিশ্বের বড় বড় দেশগুলি আমাদের এই প্রযুক্তি এবং তার বাস্তবায়নের মডেল বোঝার চেষ্টা করছে। এই বিশাল সাফল্য শুধুমাত্র সরকারের একার জন্য আসেনি। এই সাফল্যে সংবাদমাধ্যমে থাকা আপনাদের সবার অবদান রয়েছে। আর তাই, এর জন্য আপনাদেরও অভিনন্দন জানানো উচিত।
বন্ধুরা,
সংবাদমাধ্যমের স্বাভাবিক ভূমিকাই হল বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা ও মতবিনিময়ের পরিসর সৃষ্টি করা। সংবাদমাধ্যমে কী নিয়ে আলোচনা হবে তা প্রায়শই সরকারি নীতির ওপর নির্ভর করে। আপনারা জানেন, সাধারণত সরকারের যে কোন কাজ করার আগে ভোটের অঙ্ক কষে নেওয়া হয়। কিন্তু আমরা এই মানসিকতার বদল ঘটিয়েছি। আপনাদের মনে আছে যে কয়েক দশক আগে আমাদের দেশে ব্যাঙ্কের জাতীয়করণ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃত সত্য হল, দেশের ৪০ থেকে ৫০ কোটি গরীব মানুষের ২০১৪ সাল পর্যন্ত কোনো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টই ছিল না। ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ যখন হয়েছিল তখন কী বলা হয়েছিল, আর ২০১৪ সালের বাস্তবতাই বা কী বলছিল? দেশের অর্ধেকই ছিল ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার বাইরে। এই বিষয়টি নিয়ে কি কখনও আমাদের দেশে আলোচনা হয়েছে? কিন্তু আমরা ‘জন ধন যোজনা’কে একটি আন্দোলন হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম। আমরা প্রায় ৫০ কোটি মানুষকে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করেছি। এটাই ডিজিটাল ইন্ডিয়া এবং দুর্নীতি দমনের প্রয়াসে আমাদের সবথেকে বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। একইভাবে আমরা যদি ‘স্বচ্ছতা অভিযান’, ‘স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া’ এবং ‘স্ট্যান্ড-আপ ইন্ডিয়া’র দিকে তাকাই, তাহলে দেখব এগুলির সঙ্গে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির কোনো সংযোগ নেই। কিন্তু পরিবর্তনশীল ভারতে দেশের সংবাদমাধ্যম এগুলিকে জাতীয় আলোচনার বিষয়বস্তু করে তুলেছে। ‘স্টার্ট-আপ’ শব্দটি ২০১৪ সালের আগে বেশিরভাগ মানুষ শোনেনইনি, সংবাদমাধ্যমের আলোচনার সূত্রেই আজ এই শব্দটি ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে।
বন্ধুরা,
আপনারা সবাই দীর্ঘদিন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত, খুবই অভিজ্ঞ। আপনাদের সিদ্ধান্ত দেশের সংবাদমাধ্যমকে পথ দেখায়। তাই, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি আপনাদের কাছে কয়েকটি অনুরোধ রাখছি।
বন্ধুরা,
সরকার যখন কোনো কর্মসূচি শুরু করে, তখন তা কেবল সরকারের থাকে না। সরকার যদি কোনো নির্দিষ্ট আদর্শের ওপর গুরুত্ব দেয়, তখন তা কেবলমাত্র সরকারের আদর্শ হয়ে থাকে না। যেমন ধরুন, আমাদের দেশ ‘অমৃত মহোৎসব’ উদযাপন করেছে, ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ প্রচারাভিযানে যোগ দিয়েছে। সরকার এই অভিযানগুলি শুরু করেছিল বটে, কিন্তু পরে সমগ্র দেশ তা গ্রহণ করে এগুলিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। একইভাবে আজ দেশে পরিবেশের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। এটা এমন একটা বিষয় যা রাজনীতির ঊর্ধ্বে, এর সঙ্গে মানবতার ভবিষ্যৎ জড়িত। উদাহরণ হিসেবে ‘এক পেড় মা কে নাম’ বা মায়ের জন্য একটি গাছ প্রচারাভিযান সবে শুরু হয়েছে। ভারতের এই কর্মসূচি নিয়ে সারা বিশ্বে আলোচনা চলছে। আমি যখন জি-৭-এ এই বিষয়টি উত্থাপন করেছিলাম, তখন সবাই খুব কৌতুহল প্রকাশ করেছিলেন কারণ, প্রত্যেকেই তাঁদের মায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত এবং তাঁরা মনে করেছিলেন যে এই অভিযান মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলবে। দেশের যত বেশি সংবাদমাধ্যম এই প্রয়াসের সঙ্গে যুক্ত হবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মও তত বেশি উপকৃত হবে। আমি অনুরোধ করব, এই ধরনের প্রয়াসকে আপনারা দেশের প্রয়াস হিসেবে দেখুন এবং এর প্রচারের ব্যবস্থা করুন। এটা কেবলমাত্র সরকারের প্রয়াস নয়, সারা দেশের প্রয়াস। এই বছর আমরা দেশের সংবিধানের ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপন করছি। নাগরিকদের মধ্যে সংবিধানের প্রতি কর্তব্যবোধ ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে আপনারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
বন্ধুরা,
আর একটি বিষয় পর্যটনের সঙ্গে সম্পর্কিত। শুধুমাত্র সরকারি নীতির মাধ্যমে পর্যটনের বিকাশ হয় না। আমরা যখন সবাই মিলে দেশকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে তুলে ধরতে পারি, তখনই পর্যটনের বিকাশ ঘটে এবং দেশের সম্মানও বৃদ্ধি পায়। আপনারা নিজেদের মতো করেও দেশে পর্যটনের প্রচার করতে পারেন। যেমন ধরুন, যদি মহারাষ্ট্রের সমস্ত সংবাদপত্র সেপ্টেম্বর মাসে বাংলার পর্যটনের প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন মহারাষ্ট্রের বাসিন্দারা বাংলায় ঘুরতে যেতে উৎসাহিত হতে পারেন। এতে বাংলার পর্যটনের বিকাশ হবে। আবার, তিনমাস পর আপনারা সবাই মিলে তামিলনাড়ুকে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তখন দেখবেন, মহারাষ্ট্রের যেসব মানুষ বেড়ানোর পরিকল্পনা করছেন, তাঁরা ঘুরতে যাওয়ার জন্য তামিলনাড়ুকে বেছে নেবেন। এইভাবে সারা দেশের পর্যটনের বিকাশ ঘটতে পারে। আপনারা যদি এই কাজটি করেন, সেক্ষেত্রে অন্যান্য রাজ্যেও মহারাষ্ট্রের পর্যটনের বিকাশের জন্য প্রয়াস চালানো যেতে পারে। এর ফলে প্রতিটি রাজ্যের মানুষের অন্য রাজ্যের প্রতি আকর্ষণ ও কৌতুহলের সৃষ্টি হবে এবং শেষ পর্যন্ত যে রাজ্যে আপনি এই প্রয়াস শুরু করেছেন, সেই রাজ্য উপকৃত হবে।
আমি আপনাদের বিশ্বব্যাপী উপস্থিতি বাড়ানোরও অনুরোধ জানাব। আমাদের বিশ্বের নিরিখে ভাবতে হবে। আমরা ১৪০ কোটি মানুষের দেশ। এত বড় একটা দেশ, এখানে এত সামর্থ্য ও সম্ভাবনা। খুব অল্পদিনের মধ্যেই আমরা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হতে চলেছি। আপনারা ভারতের সাফল্য বিশ্বের বিভিন্ন কোণে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে পারেন। আপনারা জানেন, বিদেশে একটি জাতির ভাবমূর্তি সরাসরি তার অর্থনীতি ও বিকাশের ওপর প্রভাব ফেলে। আজ বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সামাজিক মর্যাদা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়েছে কারণ, বিশ্বজুড়ে ভারতের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বিশ্বের অগ্রগতিতে ভারত উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। আমাদের সংবাদমাধ্যম এই দৃষ্টিকোণ থেকে যত বেশি কাজ করবে, আমাদের দেশ ততই উপকৃত হবে। কাজেই আমি চাই, আপনারা আপনাদের প্রকাশনাগুলি রাষ্ট্রসঙ্ঘের যত বেশি ভাষায় পারেন, ছড়িয়ে দিন। আপনাদের মাইক্রো-সাইট, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলিও এইসব ভাষায় হতে পারে। বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় এইসব কাজ অনেক সহজ হয়ে গেছে।
বন্ধুরা,
আপনাদের আমি অনেক পরামর্শ দিলাম। আমি জানি, আপনাদের পত্র-পত্রিকায় জায়গা খুব সীমিত। কিন্তু আজকাল প্রতিটি সংবাদপত্র ও প্রকাশনারই ডিজিটাল সংস্করণ রয়েছে। সেখানে স্থানের সীমাবদ্ধতা বা বিতরণের সমস্যা নেই। আমি নিশ্চিত যে আপনারা আমার পরামর্শগুলি বিবেচনা করবেন, নতুন পরীক্ষানিরীক্ষা চালাবেন এবং গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিভিন্ন ভাষায় আপনারা যদি দুটি পৃষ্ঠার একটি ছোট্ট সংস্করণও প্রকাশ করেন, তাহলেও তা বিশ্বের বহু মানুষের কাছে পৌঁছবে, বিভিন্ন দূতাবাসেও তা পড়া হবে। আপনাদের ডিজিটাল সংস্করণগুলি ভারতের বার্তা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চমৎকার উৎস হতে পারে। আপনারা যত ভালোভাবে এই কাজ করবেন, দেশ তত এগিয়ে যাবে। এই বিশ্বাসের সঙ্গে আপনাদের সবাইকে অজস্র ধন্যবাদ জানাই! আপনাদের সবার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত। আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা। ধন্যবাদ!
প্রধানমন্ত্রী মূল ভাষণটি হিন্দিতে দিয়েছিলেন