নমস্কার!
মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল শ্রী ভগৎ সিং কোশিয়ারিজি, মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশজি, শ্রী সুভাষ দেশাইজি, সিম্বায়োসিস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি অধ্যাপক এস.বি.মজুমদারজি, প্রিন্সিপাল ডায়রেক্টর ডঃ বিদ্যা এরাওদেকরজি, সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ, বিশিষ্ট অতিথিগণ আর আমার নবীন বন্ধুরা।
আজ আপনারা সরস্বতীর ধাম, এমনই একটি তপভূমির সোনালী মূল্যবোধ এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনালী ইতিহাসের সাক্ষী। এর পাশাপাশি, একটি প্রতিষ্ঠানরূপে সিম্বায়োসিস তার সুবর্ণ জয়ন্তীর উজ্জ্বল মুহূর্তে পৌঁছে গেছে। একটি প্রতিষ্ঠানের এহেন যাত্রাপথে বহু মানুষের অবদান থাকে, বহু মানুষের সামগ্রিক অংশীদারিত্বের যোগফল সুফলদায়ক হয়।
যে ছাত্রছাত্রীরা এখান থেকে পড়াশোনা করে সিম্বায়োসিসের দূরদৃষ্টি এবং মূল্যবোধকে আপন করে নিয়েছিলেন, তাঁরা নিজেদের সাফল্যের মাধ্যমে সিম্বায়োসিসকে সারা পৃথিবীতে পরিচিত করে তুলেছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সোনালী সফরে তাঁদের সকলেরও ততটাই বড় অবদান রয়েছে। আমি এই উপলক্ষে সিম্বায়োসিস বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের, সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের, আর সমস্ত প্রাক্তনীদেরও অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আজ এই সোনালী মুহূর্তে আমার এই আরোগ্যধাম কমপ্লেক্সের শুভ উদ্বোধনেরও সৌভাগ্য হয়েছে। আমি এই নতুন শুভ সূচনার জন্যও গোটা সিম্বায়োসিস পরিবারকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
আমার নবীন বন্ধুরা,
আপনারা একটি এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অঙ্গ যেটি ভারতের মূল ভাবনা ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। আমাকে এটাও বলা হয়েছে যে সিম্বায়োসিস এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ বিষয়টি নিয়েও একটি স্বতন্ত্র কোর্স রয়েছে। যাতে জ্ঞানের ব্যাপক প্রসার হয়, গোটা বিশ্বে জ্ঞান যেন একটি পরিবার রূপে সবাইকে যুক্ত করার মাধ্যম হয়ে ওঠে, এটাই আমাদের পরম্পরা, এটাই আমাদের সংস্কৃতি, এটাই আমাদের শিষ্টাচার। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে এই পরম্পরা আমাদের দেশে আজও প্রাণবন্ত। আমাকে বলা হয়েছে যে শুধু সিম্বায়োসিস বিশ্ববিদ্যালয়েই বিশ্বের ৮৫টি দেশের ৪৪ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করেন। তাঁরা এখানে নিজেদের সংস্কৃতির লেনদেনও করেন। অর্থাৎ, ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্যের আধুনিক অবতার রূপে আজও এই প্রতিষ্ঠান আমাদের সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।
আমার যুব বন্ধুরা,
আজ এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা সেই প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছেন, যাঁদের সামনে ‘ইনফাইনাইট অপরচুনিটিজ’ বা অসীম সুযোগ রয়েছে। আজ আমাদের এই দেশ বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলির অন্যতম হয়ে উঠেছে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ‘হাব স্টার্ট-আপ ইকো-সিস্টেম’ আজ আমাদের দেশে রয়েছে। ‘স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া’, ‘স্ট্যান্ড-আপ ইন্ডিয়া’, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর মতো মিশন আপনাদের প্রত্যাশাগুলির প্রতিনিধিত্ব করছে। আজকের ভারত ক্রমাগতঃ উদ্ভাবন করছে, উন্নতি করছে আর গোটা বিশ্বকে প্রভাবিতও করছে।
আপনাদের মধ্যে যাঁরা পুণের বাসিন্দা তাঁরা তো খুব ভালোভাবেি জানেন যে করোনা টিকা আবিষ্কার ও উৎপাদনের মাধ্যমে ভারত কিভাবে গোটা বিশ্বের সামনে নিজের সামর্থ্যকে তুলে ধরেছে। এখন আপনারা ইউক্রেন সঙ্কটের সময়ও দেখছেন। ভারত কিভাবে ‘অপারেশন গঙ্গা’ নামক অভিযান চালিয়ে নিজের নাগরিকদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নিরাপদে বের করে আনছে। বিশ্বের বড় বড় দেশকে এই কাজ করতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে কিন্তু ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও প্রতিপত্তির জোরে আমরা ইতিমধ্যেই হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীকে সেখান থেকে আমাদের দেশে ফিরিয়ে এনেছি।
বন্ধুগণ,
বর্তমান প্রজন্ম একদিক থেকে অত্যন্ত ভাগ্যশালী যে তাঁদের প্রথমবার ‘ডিফেন্সিভ’ বা প্রতিরক্ষামূলক এবং ‘ডিপেন্ডেন্ট সাইকলজি’ বা পরনির্ভর মনস্তত্ত্বের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়নি। কিন্তু দেশে যখন এই পরিবর্তন এসেছে, তখন এর সবচাইতে বড় কৃতিত্ব আপনাদের সবাইকেই দিতে হয়। আপনাদের মতো নবীন প্রজন্মের মানুষদেরকে দিতে হয়। আমাদের যুবক-যুবতীদের দিতে হয়। এখন আপনারা দেখুন, উদাহরণস্বরূপ যে যে ক্ষেত্রে দেশ আগে নিজের পা বাড়ানোর ব্যাপারে ভাবতই না, আজ সেই ক্ষেত্রগুলিতে ভারত ‘গ্লোবাল লিডার’ আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব প্রদানের পথে এগিয়ে চলেছে।
মোবাইল ম্যানুফ্যাকচারিং বা মোবাইল ফোন উৎপাদনের উদাহরণ আমাদের সামনে রয়েছে। কয়েক বছর আগে আমাদের জন্য মোবাইল ফোন উৎপাদন আর এরকম আরও কত বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি পাওয়ার একটাই উপায় ছিল, তা হল বিদেশ থেকে আমদানি করা তা সে বিশ্বের যে কোনও দেশ থেকেই আনতে হোক না কেন। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও আমরা অনেক দশক ধরে এটাই মেনে চলছিলাম যে অন্যান্য দেশ যখন আমাদের যা কিছু দেবে, সেগুলির ভরসাতেই আমরা কিছু করতে পারব। কিন্তু আজ স্থিতি বদলেছে, পরিস্থিতিও অনেকটাই বদলেছে। মোবাইল ফোন উৎপাদনে ভারত এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হয়ে উঠেছে।
সাত বছর আগে ভারতে মাত্র দুটি মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী কোম্পানি ছিল আর আজ ২০০টিরও বেশি ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট এই কাজ করে চলেছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও বিশ্বের বৃহত্তম আমদানিকারী দেশের পরিচয় ছিল যে ভারতের, সেই দেশ এখন অনেক প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের রপ্তানিকারক হয়ে উঠেছে। আজ দেশে দুটি বড় ডিফেন্স করিডর গড়ে উঠছে যেখানে বড় বড় আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র তৈরি হবে, দেশের প্রতিরক্ষার প্রয়োজন পূর্ণ হবে।
বন্ধুগণ,
স্বাধীনতার ৭৫তম বছরে আমরা একটি নতুন ভারত নির্মাণের নতুন লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছি। এই অমৃত অভিযানের নেতৃত্ব আমাদের নবীন প্রজন্মকেই নিতে হবে। আজ সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি থেকে শুরু করে গ্রামে গ্রামে শহরে শহরে তৈরি করা হেলথ সেন্টার পর্যন্ত, এআই এবং এআর থেকে শুরু করে অটোমোবাইল এবং ইভি বা বৈদ্যুতিন যানবাহন পর্যন্ত, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং থেকে শুরু করে মেশিন লার্নিং পর্যন্ত – প্রত্যেক ক্ষেত্রে নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। দেশে জি-স্পেশিয়াল সিস্টেমস, ড্রোন প্রযুক্তি থেকে শুরু করে সেমি-কন্ডাক্টর্স এবং মহাকাশ প্রযুক্তি পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে ক্রমাগত সংস্কার করা হচ্ছে।
এই সংস্কারগুলি আমাদের সরকারের রেকর্ড তৈরি করার জন্য নয়। এই সংস্কারগুলি আপনাদের সকলের জন্য নতুন নতুন সুযোগ নিয়ে এসেছে। আর এটাই আমি বলতে পারি যে এই সংস্কারগুলি আপনাদের জন্য, আপনাদের স্বার্থে, দেশের নবীন প্রজন্মের স্বার্থে। আপনারা প্রযুক্তি ক্ষেত্রের কাজ করুন কিংবা ম্যানেজমেন্ট বা মেডিকেল ক্ষেত্রে। আমি মনে করি, যে সমস্ত সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলি শুধু এবং শুধু আপনাদের জন্যই।
আজ দেশে যে সরকার রয়েছে সেই সরকার দেশের যুব সম্প্রদায়ের সামর্থ্যের ওপর, আপনাদের সামর্থ্যের ওপর ভরসা করে। সেজন্য আমরা একের পর এক অনেক ক্ষেত্র আপনাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিচ্ছি। একের পর এক সুযোগ তৈরি করছি। আপনারা সবাই এই সুযোগগুলির সুবিধা নিন, কারোর জন্য অপেক্ষা করবেন না। আপনারা নিজেদের স্টার্ট-আপ শুরু করুন। আমাদের দেশের সামনে যত সমস্যা রয়েছে সেগুলি সমাধানের চেষ্টা করুন। যত স্থানীয় সমস্যা রয়েছে সেগুলির সমাধান দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকেই করার চেষ্টা করতে হবে। এগুলির সমাধান দেশের নবীন প্রজন্মের মস্তিষ্ক থেকে বেরিয়ে আসা উচিৎ।
আপনারা এটা সব সময় মনে রাখবেন যে আপনারা যে ক্ষেত্রেই পড়াশোনা করেন না কেন, যেভাবেই আপনারা নিজেদের কেরিয়ারকে সাজানোর জন্য ‘গোল সেট-আপ’ বা লক্ষ্য নির্ধারণ করে থাকুন না কেন, এমনভাবেই আপনাদের কিছু লক্ষ্য দেশের জন্যও নির্ধারণ করতে হবে। যদি আপনারা প্রযুক্তি ক্ষেত্র নিয়ে পড়াশোনা করে থাকেন, তাহলে আপনাদের উদ্ভাবন, আপনাদের পরিশ্রম কিভাবে দেশের কাজে লাগতে পারে, আপনারা কি কোনও এমন পণ্য সৃষ্টি করতে পারেন যার মাধ্যমে গ্রামের কৃষকদের সাহায্য হয়, দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে বসবাসকারী ছাত্রছাত্রীদেরও সাহায্য হয়।
এভাবেই যদি আপনারা মেডিকেল ফিল্ড বা চিকিৎসাক্ষেত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন, তাহলে আমাদের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে কিভাবে আরও শক্তিশালী করা যায়, কিভাবে গ্রামে গ্রামে ‘কোয়ালিটি হেলথ সার্ভিস’ বা উৎকৃষ্ট স্বাস্থ্য পরিষেবা গড়ে তোলা যায়, তা নিয়ে আপনারা নিজেদের প্রযুক্তি শিক্ষাকেন্দ্রের সহপাঠীদের সঙ্গে মিলেমিশে নতুন স্টার্ট-আপ চালু করার পরিকল্পনা করতে পারেন। সিম্বায়োসিস বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে তোলা আরোগ্যধামের মতো প্রতিষ্ঠান তৈরির উদ্যোগ যে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শুরু করেছে, এটাও সম্পূর্ণ দেশের জন্য একটি মডেল রূপে কাজে লাগতে পারে। এখন যখন আমি ‘আরোগ্য’-এর কথা বলছি, তখন আপনাদেরকে এটাও বলব যে আপনারা প্রত্যেকেই নিজেদের ফিটনেসের দিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন, প্রাণ খুলে হাসবেন, হাসি-ঠাট্টা করবেন, জোকস শোনাবেন, শুনবেন, খুব সুস্থ থাকবেন এবং দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন। আমাদের লক্ষ্য এখন ‘পার্সোনাল গ্রোথ’ বা ব্যক্তিগত উন্নতি থেকে এগিয়ে ‘ন্যাশনাল গ্রোথ’ বা জাতীয় উন্নতির জন্য এগিয়ে যাওয়া। সেজন্য দেশ ও জাতি নির্মাণের অভিযানে নিজেকে অংশীদার করে তোলার অনুভবও ক্রমবর্ধমান।
বন্ধুগণ,
আজ যখন আপনারা নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বর্ষপূর্তি উৎসব উদযাপন করছেন, তখন আমি সিম্বায়োসিস পরিবারের কাছে কিছু অনুরোধ রাখতে চাই। যাঁরা এখানে বসে আছেন তাঁদেরকেও আমি অনুরোধ জানাতেই চাই। আপনারা কি সিম্বায়োসিসে একটি পরম্পরা বিকশিত করতে পারেন? আপনারা কি প্রত্যেক বছর কোনও একটি থিম বা মূল ভাবনাকে ‘ডেডিকেট’ বা উৎসর্গ করতে পারেন? এখানে যাঁরা বসে আছেন তাঁরা যে যেক্ষেত্রে কাজ করছেন, তাঁরা কি এক বছর তাঁদের নিজস্ব কাজের বাইরে সেই থিমের জন্য কোনও না কোনও ‘ডেডিকেশন’ বা উৎসর্গ করতে পারেন? অবদান রাখতে পারেন? অংশীদারিত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে অবদান রাখতে পারেন? মনে করুন, আপনারা ঠিক করলেন যে এ বছর তো সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছেন। আগামী পাঁচ বছর এর থিম কী হবে। মনে করুন ২০২২-এর থিম কী হবে, ২০২৩-এর থিম কী হবে, ২০২৪-এর থিম কী হবে, এমন করে ২০২৭ পর্যন্ত কী কী থিম হবে, তা কি এখনই ঠিক করতে পারেন?
এখন যেমন একটি থিম আমি বলছি, তার মানে এই নয় যে এই থিম নিয়েই আপনারা চলবেন। আপনারা নিজেদের মতো পরিকল্পনা করে থিম তৈরি করুন। কিন্তু মনে করুন, ভেবে নিন যে ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’ বা বিশ্ব উষ্ণায়নকে আপনারা থিম করে নিলেন। এটা ঠিক করে নিলেন যে গোটা ২০২২ সাল ধরে আমাদের পরিবার বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রতিটি দিক নিয়ে গভীরভাবে অধ্যয়ন করব, তা নিয়ে গবেষণা করব, তা নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করব, তা নিয়ে কার্টুন তৈরি করব, এই মূল ভাবনার ওপর গল্প লিখব, এই বিষয়ে কবিতা লিখব, এই বিশ্ব উষ্ণায়নরোধী কোনও যন্ত্র তৈরি করব। অর্থাৎ, আপনাদের যার যে কাজ আছে সে কাজ তো করবেনই, তার বাইরে এই অতিরিক্ত থিম নিয়ে নিন। মানুষকেও সচেতন করুন।
তেমনই আমাদের যে ‘কোস্টাল এরিয়া’ বা সমুদ্র তটবর্তী এলাকাগুলি রয়েছে সেখানে সমুদ্রের ওপর আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব – এই থিম নিয়েও আমরা কাজ করতে পারি। এরকমই আরও একটি থিম হতে পারে, আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলির উন্নয়ন। আমাদের দেশের যত সীমান্তবর্তী গ্রাম রয়েছে, যে গ্রামগুলির বাসিন্দারা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সেনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের নিরাপত্তায় অবদান রাখছেন, এরকম প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রত্যেকেই আমাদের দেশের রক্ষক। আমরা কি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে আমাদের পরিবারে এই সীমান্ত এলাকার উন্নয়নের পরিকল্পনা রচনা করতে পারি? সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সেই এলাকাগুলি ঘুরে দেখতে হবে, সেখানকার মানুষের সুবিধা-অসুবিধা, সমস্যা বুঝতে হবে আর সেখানে গিয়ে বসে তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে, সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয় ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর ভাবনাকে শক্তিশালী করার জন্য ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর মূল ভাবনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর স্বপ্ন তখনই বাস্তবায়িত হবে, যখন আমাদের ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া একটি স্ট্রিমের ছাত্রছাত্রীরা অন্যান্য স্ট্রিমের ছাত্রছাত্রীদের থেকে কিছু শব্দ শিখুন। অন্য ভাষার ছাত্রছাত্রীদের থেকে কিছু শব্দ শিখুন। তাহলে খুব ভালো হবে। আপনারা লক্ষ্য স্থির করতে পারেন যে, যখন সিম্বায়োসিসের ছাত্রছাত্রীরা এখানে পড়াশোনা করে বৃহত্তর কর্মক্ষেত্রে যাবেন, তার আগে তখন মারাঠি সহ ভারতের অন্যান্য আরও পাঁচটি ভাষার প্রত্যেকটির কম করে ১০০টি শব্দ মুখস্থ করে নিন। দেখবেন এই ভাষা শিক্ষা আপনাদের জীবনে অনেক সুফলদায়ী হবে।
আমাদের ভারতের স্বাধীনতার আন্দোলনের ইতিহাস এতটা সমৃদ্ধ, এই ইতিহাসের যে কোনও দিককে আপনারা ডিজিটাল করার কাজও করতে পারেন। দেশের যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে এনএসএস, এনসিসি-র মতো আমরা কিভাবে আরও নতুন নতুন ‘অ্যাক্টিভিটিজ’কে উৎসাহ যোগাতে পারি তা নিয়েও গোটা পরিবার মিলেমিশে কাজ করতে পারি। যেমন ‘ওয়াটার সিকিউরিটি’ বা জল নিরাপত্তার বিষয়, কৃষিকে প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করার বিষয় ভাবা যেতে পারে। ‘সয়েল হেলথ টেস্টিং’ বা মৃত্তিকার স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক কৃষি পর্যন্ত আপনাদের কাছে গবেষণা করা ও জনগণের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধির অনেক বিষয় রয়েছে।
এই বিষয়গুলি কী হবে তার সিদ্ধান্ত আমি আপনাদের ওপর ছাড়ছি। কিন্তু আমি অবশ্যই বলব যে দেশের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে, দেশের নানা সমস্যার সমাধানকল্পে আপনারা সেই বিষয়গুলিকে নিজেদের মতো করে বেছে নিন যাতে আমাদের সমস্ত নবীন প্রজন্মের মানুষ, সমস্ত ‘ইয়ং মাইন্ড’ বা তরুণ মস্তিষ্করা মিলেমিশে কাজ করতে পারে। এখানে এত বড় পরিকাঠামো রয়েছে, এত সব ব্যবস্থা রয়েছে। এগুলি ব্যবহার করে তারা আমাদেরকে নতুন নতুন সমাধান দিক আর আমি আপনাদেরকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আপনারা নিজেদের পরামর্শগুলি এবং নিজেদের অভিজ্ঞতাও সরকারকে জানাবেন। এই মূল ভাবনাগুলি নিয়ে কাজ করার পর আপনারা নিজেদের গবেষণা, গবেষণার ফলাফল, আপনাদের ভাবনা, আপনাদের পরামর্শ, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়তেও পাঠাতে পারেন।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে যখন এখানকার অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা, এখানকার অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মিলেমিশে এই অভিযানে অংশগ্রহণ করবেন, তখন অনেক অদ্ভূত ফলাফল পাওয়া যাবে। আপনারা কল্পনা করুন, আজ আপনারা ৫০ বছর পূর্তি পালন করছেন। যখন আপনারা ৭৫ বছর পূর্তি পালন করবেন, এর মাঝের ২৫ বছর ধরে দেশের জন্য ২৫টি থিম নিয়ে ৫০ হাজার মস্তিষ্ক কাজ করবে, তখন কত বড় উপহার আপনারা দেশকে দেবেন। আমি মনে করি, এর মাধ্যমে সিম্বায়োসিসের ছাত্রছাত্রীরাও অনেক উপকৃত হবেন।
অবশেষে আমি সিম্বায়োসিসের ছাত্রছাত্রীদের আরও একটি কথা বলতে চাই। এই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করার সময় আপনারা নিজেদের অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এবং সহপাঠীদের কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখবেন। আপনাদের সকলের প্রতি আমার পরামর্শ যে আত্মসচেতনতা, উদ্ভাবন এবং ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতাকে সর্বদাই শক্তিশালী করে তুলুন। আমি আশা করব আপনারা সবাই এই ভাবনা নিয়ে নিজেদের জীবনে এগিয়ে যাবেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে প্রতিষ্ঠানের ৫০ বছর পূর্তির অভিজ্ঞতা আপনাদের এমন একটি পুঁজি, সোনালী অভিজ্ঞতার পুঁজি, অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা করতে করতে আপনারা এখানে পৌঁছেছেন। আপনাদের কাছে একটি গুপ্তধন আছে। এই গুপ্তধনও দেশের কাজে লাগবে। আপনারা ভালোভাবে পড়াশোনা করুন, পল্লবিত, পুষ্পিত হন। এখানে ভর্তি হওয়া প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী নিজেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাবেন এটাই আমার আপনাদের প্রতি শুভকামনা।
আমি আরও একবার আপনাদের এজন্য ধন্যবাদ জানাব যে আপনারা অনেকবারই আমাকে আপনাদের মাঝে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে থাকেন কিন্তু আমি আসতে পারি না। আমি যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখন একবার অবশ্যই আপনাদের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছিলাম। আজ আরও একবার এই পবিত্র মাটিতে আসার সৌভাগ্য হল। আমি আপনাদের সবার প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ কারণ আমাকে এই নতুন প্রজন্মের যুবক-যুবতীদের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন।
অনেক অনেক ধন্যবাদ, অনেক অনেক শুভকামনা!