একটু আগেই আমার কয়েকজন সুবিধাভোগীর সঙ্গে কথা হয়েছে, যাঁরা আজ মাথার ওপর পাকা ছাদ পেলেন, তাঁদের স্বপ্নের বাড়ির মালিক হলেন, তাঁদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত হ’ল, তাঁদের আত্মপ্রত্যয় বাড়লো। এখন মধ্যপ্রদেশের এমন ১.৭৫ লক্ষ পরিবার আজ থেকে তাঁদের নিজের বাড়িতে প্রবেশ করছেন। সেই উপলক্ষ্যে এই ‘গৃহ প্রবেশম’ অনুষ্ঠান। তাঁদের সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানাই। এই সমস্ত বন্ধুরা এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে গোটা মধ্যপ্রদেশ থেকে এই অনুষ্ঠান দেখছেন। আজ আপনারা দেশের সেই ২ কোটি ২৫ লক্ষ পরিবারের তালিকায় সামিল হলেন, যাঁরা বিগত ছ’বছরে নিজস্ব বাড়ি পেয়েছেন, তাঁদের এখন আর ভাড়া বাড়িতে থাকতে হয় না, কোনও বস্তিতে, মাটির বাড়িতে থাকতে হয় না। এখন তাঁরা নিজস্ব পাকা বাড়িতে থাকেন।
বন্ধুগণ, এবার আপনারা সবাই দীপাবলী পালন করুন। এ বছর আপনাদের সবার উৎসবের আনন্দই অন্যরকম হবে। করোনা সমস্যা না থাকলে আজ আপনাদের জীবনে এতবড় আনন্দের দিনে এই উৎসবে সামিল হওয়ার জন্য আপনারা সবাই সমবেত হতেন। আর আপনাদের বাড়ির এই সদস্য আপনাদের প্রধান সেবকও নিশ্চিতভাবেই আপনাদের মাঝে থাকতো, আর আপনাদের এই আনন্দ উৎসবে অংশগ্রহণ করতো। কিন্তু, করোনার এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আজ আমাকে দূর থেকেই আপনাদের সকলকে দেখার সুযোগ করে নিতে হয়েছে। কিন্তু এই সময়ের জন্য এটাই ঠিক!
আজকের এই সমারোহে উপস্থিত মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপাল শ্রীমতী আনন্দি বেন প্যাটেলজী, রাজ্যের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী শিবরাজ সিং চৌহানজী, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী শ্রী নরেন্দ্র সিং তোমরজী, আমার বন্ধু জ্যোতিরাদিত্যজী, মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীগণ, সাংসদ ও বিধায়কগণ, গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিগণ এবং মধ্যপ্রদেশের অসংখ্য গ্রাম থেকে যাঁরা প্রযুক্তির মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন – আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা!
আজ মধ্যপ্রদেশে সামগ্রিক গৃহ প্রবেশের এই সমারোহ ১ লক্ষ ৭৫ হাজার গরিব পরিবারের জন্য যেমন তাঁদের জীবনের একটি অবিস্মরণীয় মূহুর্ত, দেশের প্রত্যেক গৃহহীনকে পাকা বাড়ি নির্মাণ অভিযানে এটি একটি বড় পদক্ষেপ। আজকের এই কর্মসূচি মধ্যপ্রদেশ সহ দেশের সমস্ত গৃহহীন বন্ধুদের একটি আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির মুহূর্তও। যাঁদের এখনও কোনও বাড়ি নেই, স্বপ্ন দেখছেন, একদিন তাঁদের পাকা বাড়ি হবে – আমরা অদূর ভবিষ্যতে তাঁদের স্বপ্নও বাস্তবায়িত করবো।
বন্ধুগণ, আজকের এই দিন কোটি কোটি দেশবাসীর আস্থাকে মজবুত করার দিন। ভালো মন নিয়ে তৈরি করা সরকারি প্রকল্পও ভালোভাবে বাস্তবায়িত হয়। আর সেগুলি দ্বারা সুবিধাভোগীরা লাভবান হন। যে বন্ধুরা আজকে নিজের বাড়ি পেয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে আমার কারও কারও সঙ্গে প্রযুক্তির মাধ্যমে কথাবার্তা হয়েছে। আর যাঁদেরকে এখন এখন স্ক্রিনে দেখতে পাচ্ছি, তাঁদের চেহারায় আনন্দ ও আত্মবিশ্বাসকে স্পষ্ট অনুভব করছি। সমস্ত বন্ধুদের এটাই বলবো যে, এই বাড়ি আপনাদের আরও উন্নত ভবিষ্যতের নতুন ভিত্তিস্বরূপ। এখন থেকে আপনারা নতুন করে জীবন শুরু করুন। আপনাদের ছেলেমেয়েদের ও পরিবারের সকল সদস্যকে এখন আপনারা নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিন। আপনারা এগিয়ে গেলে দেশও এগিয়ে যাবে।
বন্ধুগণ, করোনা সঙ্কটকালে সমস্ত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও সারা দেশে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে ১৮ লক্ষেরও বেশি গৃহ নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার বাড়ি শুধু মধ্যপ্রদেশেই সম্পূর্ণ হয়েছে। এই সঙ্কটের সময়েও যে গতিতে কাজ হয়েছে, তা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। সাধারণভাবে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে একটি গৃহ নির্মাণে গড়ে ১২৫ দিন সময় লাগে। কিন্তু এখন যা বলতে যাচ্ছি, তা দেশের জন্য, আমার সংবাদ মাধ্যমের বন্ধুদের জন্যও অত্যন্ত ইতিবাচক খবর। করোনার এই সঙ্কটকালে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ করতে আমরা ১২৫ দিন লাগাইনি। এই বাড়িগুলি মাত্র ৪৫-৬০ দিনের মধ্যেই নির্মিত হয়েছে। বিপর্যয়কে সুযোগে পরিবর্তনের এটা অত্যন্ত প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আপনারা হয়তো ভাবছেন, এটা কিভাবে সম্ভব হ’ল? আগে যেটা ১২৫ দিনে হ’ত, সেটি এখন ৪৫-৬০ দিনের কিভাবে হচ্ছে?
বন্ধুগণ, এই দ্রুতগতিতে গৃহ নির্মাণে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন, আমাদের শহরগুলি থেকে গ্রামে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিক বন্ধুরা। তাঁদের হাতে যখন দক্ষতা রয়েছে, তেমনই মনে রয়েছে প্রবল ইচ্ছাশক্তি। তাঁরা এগিয়ে এসে এই প্রকল্পে যুক্ত হওয়ায় আমরা এই অসাধারণ পরিণাম দেখতে পেয়েছি। আমাদের এই শ্রমিক বন্ধুরা প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযানের সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের পরিবারের প্রয়োজন সামলেছেন আর পাশাপাশি, গৃহহীন গরিব ভাইবোনদের জন্য ন্যূনতম সময়ে গৃহ নির্মাণ করে রেকর্ড স্থাপন করেছেন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনার মাধ্যমে মধ্যপ্রদেশ সহ দেশের অনেক রাজ্যে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এই অভিযানের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে গরিবদের জন্য যেমন বাড়ি নির্মিত হচ্ছে, তেমনই প্রত্যেক বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ, অঙ্গনওয়াড়ি ও পঞ্চায়েত ভবনগুলির নির্মাণের কাজ, গ্রামের গৃহপালিত পশুদের জন্য অত্যাধুনিক শেড নির্মাণের কাজ, পুকুর ও কূপ খননের কাজ, গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের কাজ, গ্রামের উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত এরকম অনেক কাজ দ্রুতগতিতে করা হয়েছে। এতে দুটো লাভ হয়েছে। প্রথমত, শহর থেকে গ্রামে ফিরে আসা লক্ষ লক্ষ শ্রমিক বন্ধুদের কর্মসংস্থান হয়েছে। আর দ্বিতীয়ত, ইঁট, সিমেন্ট, বালি এবং অন্যান্য নির্মাণ সরঞ্জামের ব্যবসাও অনেক বেড়েছে। এভাবে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযান এই কঠিন সময়ে গ্রামের অর্থনীতিকে সামলানোর ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে যে কাজ হচ্ছে, তাও আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে।
বন্ধুগণ, আমাকে অনেকেই কখনও কখনও জিজ্ঞেস করেন যে, সরকারের পক্ষ থেকে গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্প তো আগেও ছিল। তা হলে আপনারা কি পরিবর্তন এনেছেন? এটা ঠিক যে, দরিদ্র গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্প দেশে অনেক দশক ধরেই চালু রয়েছে। স্বাধীনতার পর প্রথম দশকেও সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মসূচির অন্তর্গত এই কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু প্রত্যেক ১০-১৫ বছরে এ ধরনের প্রকল্পে নতুন কিছু যুক্ত করে এর নাম বদলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেশের কোটি কোটি গরিব গৃহহীনদের সকলের জন্য গৃহ নির্মাণের যে লক্ষ্য ছিল, তাঁদের জীবনকে গরিমাপূর্ণ করার যে লক্ষ্য ছিল, সেই লক্ষ্য কখনও পূরণ হয়নি। কারণ আগে এই প্রকল্পগুলি যখন তৈরি হ’ত, তখন এতে সরকারের ভূমিকা ও দখলদারি অনেক বেশি ছিল। এই প্রকল্পগুলির প্রতিটি পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত দিল্লির সরকার নিত। যাঁরা এই বাড়িতে থাকবেন, তাঁদেরকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করতেন না। এখন শহরে যে ধরনের বাড়ি তৈরি হয়, একই ধরনের বাড়ি যদি আদিবাসী এলাকায় তৈরি করা হয়, গ্রাম-পাহাড়ে যদি কলোনী তৈরির চেষ্টা করা হয় – সেই বাড়িগুলি তাঁরা কেন পছন্দ করবেন! কারণ, শহরের মানুষদের থেকে গ্রামের আদিবাসী ভাইবোনেদের চলাফেরা, থাকা-খাওয়ার অভ্যাস সম্পূর্ণ আলাদা। তাঁদের প্রয়োজনগুলিও আলাদা। সেজন্য সরকার নির্মিত ঘরগুলিকে তাঁরা কখনই আপন করে নিতে পারেননি। শুধু তাই নয়, পূর্ববর্তী প্রকল্পগুলিতে স্বচ্ছতার অভাব ছিল। অনেক ধরনের দুর্নীতিও হ’ত। আমি সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে চাই না। কিন্তু সরকারি আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মিত বাড়িগুলির মান অত্যন্ত খারাপ হ’ত। তারপর তাঁদের বিদ্যুৎ সংযোগ, পানীয় জলের প্রয়োজন ইত্যাদি মেটাতে সুবিধাভোগীদের সরকারি দপ্তরে দপ্তরে ঘুরে জুতো শুকতলা খসাতে হ’ত। এর ফলস্বরূপ, পূর্ববর্তী প্রকল্পগুলির মাধ্যমে যত বাড়ি নির্মিত হয়েছে, অনেকে সেগুলিতে বসবাসই করতে পারেননি। অনেকে তো গৃহ প্রবেশই করতে পারেননি।
বন্ধুগণ, ২০১৪ সালে যখন আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন পুরনো অভিজ্ঞতাগুলি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে আগে পুরনো প্রকল্পের বাড়িগুলিকে সংস্কার করি। আর তারপর প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা রূপে সম্পূর্ণ নতুন ভাবনা নিয়ে প্রকল্প রচনা করি। এতে সুবিধাভোগীদের নির্বাচন থেকে শুরু করে গৃহ প্রবেশ পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে স্বচ্ছতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। আগে গরিবরা সরকারের পেছনে ছুটতেন, সুপারিশের জন্য জনপ্রতিনিধিদের খুঁজে বেড়াতেন। আজ আমাদের প্রকল্পের এমন যে, এখন সরকার মানুষের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে। খুঁজে পেতে যথাযথ সুবিধাভোগী নির্বাচন করছে। এখন আর কারও ইচ্ছানুসারে তালিকায় নাম তোলা বা কেটে দেওয়া যায় না। সুবিধাভোগী নির্বাচন থেকে শুরু করে নির্মাণ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক ও স্বচ্ছ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। শুধু তাই নয়, গৃহ নির্মাণ সামগ্রী থেকে শুরু করে নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় স্তরে পাওয়া এবং মজবুত সরঞ্জামকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। বাড়ির নক্শার জন্যও স্থানীয় প্রয়োজন ও নির্মাণশৈলী অনুসারে প্রস্তুত ও মঞ্জুর করা হচ্ছে। এখন সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে গৃহ নির্মাণের প্রত্যেক পর্যায়ে সম্পূর্ণ তদারকির মাধ্যমে সুবিধাভোগীরা নিজেরাই প্রয়োজন মতো তাঁদের বাড়ি তৈরি করেন। যেভাবে ধীরে ধীরে বাড়ি তৈরি হতে থাকে, তেমনই এর খরচ বাবদ টাকাও তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হতে থাকে। এখন যদি কেউ বেইমানি করার চেষ্টা করেন, এই প্রক্রিয়ায় তাঁকে ধরে ফেলার অনেক পথও রাখা হয়েছে।
বন্ধুগণ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার একটি অনেক বড় বৈশিষ্ট্য হ’ল – এটি রামধনু-স্বরূপ। রামধনুতে যেমন ভিন্ন ভিন্ন রঙ থাকে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে নির্মীয়মান বাড়িগুলিরও নিজস্ব রঙ আছে। এখন গৃহহীন গরিব মানুষদের শুধুই ঘর তৈরি করে দেওয়া হয় না। ঘরের পাশাপাশি, শৌচালয়ও থাকে। উজ্জ্বলা প্রকল্পের মাধ্যমে রান্নার গ্যাসও থাকে। সোউভাগ্য যোজনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। উজালা যোজনার মাধ্যমে বিনামূল্যে এলইডি বাল্ব দেওয়া হয়। এর সঙ্গে নলের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা – এই সবকিছু বাড়ির সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ভিত্তিতে তাঁরা একসঙ্গে অনেক প্রকল্পের সুবিধা সরাসরি পাচ্ছেন। আমি শিবরাজজীর নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারকে আরেকবার ধন্যবাদ জানাবো। কারণ, তাঁরা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার সঙ্গে আরও ২৭টি প্রকল্পকে জুড়েছেন।
বন্ধুগণ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা থেকে শুরু করে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের মাধ্যমে নির্মীয়মান শৌচালয়ের সুবিধা তো গরিবরা পাচ্ছেনই। এর সঙ্গে এই প্রকল্প কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই প্রকল্পগুলি বিশেষ করে আমাদের গ্রামীণ বোনেদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে নির্মীয়মান বাড়িগুলির রেজিস্ট্রি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গৃহকর্ত্রীর নামে করা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁদের সঙ্গে বাড়ির অন্য কারও নামও থাকছে। তেমনই আজ গ্রামে গ্রামে বহুসংখ্যক ‘রানীমিস্ত্রী’ বা মহিলা রাজমিস্ত্রীর কাজের সুযোগ বাড়ছে। শুধু মধ্যপ্রদেশেই ৫০ হাজারেরও বেশি রাজমিস্ত্রীকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। আর তাঁদের মধ্যে ৯ হাজার হলেন রানীমিস্ত্রী। এভাবে আমাদের বোনেদের আয় ও আত্মবিশ্বাস উভয় ক্ষেত্রেই অগ্রগতি হচ্ছে।
বন্ধুগণ, যখন গরিবের আয় এবং গ্রামের আয় ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়, তখন আমাদের আত্মনির্ভর ভারত নির্মাণের সংকল্পও দৃঢ়তর হয়। এই আত্মবিশ্বাসকে দৃঢ় করতে গ্রামে সবধরনের আধুনিক পরিকাঠামো বিকশিত করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের আগে ৫ বছর ধরে শৌচালয়, রান্নার গ্যাসের সংযোগ, বিদ্যুৎ সংযোগ ও সড়ক নির্মাণের মতো প্রাথমিক পরিষেবাগুলি গ্রামে গ্রামে পৌঁছনোর কাজ করা হয়েছে। এখন এই মূল পরিষেবাগুলির পাশাপাশি, আধুনিক পরিষেবার মাধ্যমেও গ্রামগুলিকে সমৃদ্ধ করে তোলা হচ্ছে। এ বছর ১৫ই অগাস্টে লালকেল্লার প্রাকার থেকে আমি বলেছিলাম, আগামী ১ হাজার দিন ধরে দেশের প্রায় ৬ লক্ষ গ্রামে অপ্টিকাল ফাইবার পাতার কাজ সম্পূর্ণ করা হবে। আগে দেশের আড়াই লক্ষ পঞ্চায়েত পর্যন্ত অপ্টিকাল ফাইবার পৌঁছনোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। এখন পঞ্চায়েতগুলি থেকে এই সংযোগ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার সংকল্প নেওয়া হয়েছে।
এই করোনা সঙ্কটকালেও প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযানের মাধ্যমে এই কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দেশের ১১৬টি জেলায় ৫ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি অপ্টিকাল ফাইবার পাতা হয়েছে। এর মাধ্যমে ১ হাজার ২৫০-এরও বেশি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় ১৫ হাজার ওয়াইফাই হটস্পট আর প্রায় ১৯ হাজার অপ্টিকাল ফাইবারের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের মধ্যপ্রদেশেও নির্বাচিত কিছু জেলায় ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি অপ্টিকাল ফাইবার পাতা হয়েছে। আর আমি আবার স্মরণ করাবো যে, এই সমস্ত কাজ করোনা সঙ্কটকালেই বাস্তবায়িত হয়েছে। এত বড় সঙ্কট মাথায় নিয়ে আমাদের কর্মীরা মিশন মোডে কাজ করে গেছেন। যখনই গ্রামে গ্রামে অপ্টিকাল ফাইবার পৌঁছে যাবে, এর ফলে নেটওয়ার্ক সমস্যাও হ্রাস পাবে। যখন গ্রামগুলিতেও উন্নত ও দ্রুত ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছুবে, স্থানে স্থানে ওয়াইফাই ও হটস্পট তৈরি হবে – তখন গ্রামের শিশুদের লেখাপড়া ও যুবসম্প্রদায়ের কর্মসংস্থানের উন্নত সুযোগ সৃষ্টি হবে। অর্থাৎ গ্রামগুলি এখন শুধু ওয়াইফাই আর হটস্পটের সঙ্গেই জুড়বে না, সমস্ত রকম আধুনিক গতিবিধি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যেরও হটস্পট হয়ে উঠবে।
বন্ধুগণ, আজ সরকারের প্রতিটি পরিষেবা, প্রত্যেক সুযোগ-সুবিধা অনলাইন করে দেওয়া হয়েছে, যাতে সুবিধাভোগীরা দ্রুতগতিতে লাভবান হন, দুর্নীতি না থাকে আর গ্রামের মানুষদের ছোট ছোট কাজের জন্য শহরে না ছুটতে হয়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, গ্রামে গ্রামে অপ্টিকাল ফাইবার পৌঁছলে এই পরিষেবাগুলি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও ত্বরান্বিত হবে। এখন আপনারা যখন নতুন বাড়িতে থাকতে শুরু করবেন, তখন ডিজিটাল ভারত অভিযান আপনাদের জীবনকে আরও সহজ করে তুলবে। গ্রাম ও গরিবদের ক্ষমতায়নের এই অভিযান এখন আরও ত্বরান্বিত হবে – এই বিশ্বাস নিয়ে আপনাদের সকলকে নিজের পাকা বাড়িতে গৃহ প্রবেশের জন্য অনেক শুভকামনা জানাই। কিন্তু মনে রাখবেন, আর একথা আমি বারবার বলি, অবশ্যই মনে রাখবেন, আমার দৃঢ়বিশ্বাস যে আপনারা মনে রাখবেন। শুধু তাই নয়, আমার কথা যদি শুনে চলেন, যতদিন পর্যন্ত কোনও ওষুধ আবিষ্কার না হয়, কোনও প্রতিষেধক না বাজারে না আসে – ততদিন পর্যন্ত কোনও অবহেলা করবেন না। ‘দো গজ কি দূরী, মাস্ক হ্যায় জরুরি’ অর্থাৎ দু’গজের দূরত্ব আর মাস্ক কিংবা মুখ ঢাকার এই মন্ত্রকে কখনই ভুলবেন না। আপনাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
এই শুভকামনার সঙ্গে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আবার বলছি, সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা।