নমস্কার!
কেম ছো! আপনারা সবাই কেমন আছেন?
মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী মাননীয় শ্রী প্রবীন্দ কুমার জগন্নাথজি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডায়রেক্টর জেনারেল ডা. টেড্রস, গুজরাটের জনপ্রিয়, কর্মঠ এবং প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্র ভাই প্যাটলজি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী শ্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালজি, শ্রী মনসুখ ভাই মাণ্ডব্যজি, শ্রী মহেন্দ্র ভাই মুঞ্জপরাজি আর দেশ-বিদেশ থেকে আসা সমস্ত কূটনীতিক, বৈজ্ঞানিক, আন্ত্রেপ্রেনার্স ও বিশেষজ্ঞগণ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!
গ্লোবাল আয়ুষ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ইনোভেশন সামিটে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক স্বাগত জানাই। আমরা প্রায়ই দেখেছি যে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য এরকম ইনভেস্টমেন্ট সামিট আয়োজিত হয়ে আসছে আর গুজরাটে বিশেষভাবেই এই ধরনের সামিট আয়োজনের ব্যাপক রূপে একটি পরম্পরা তৈরি হয়েছে আর এই পরম্পরাকেসুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই প্রথমবার এখানে আয়ুষ ক্ষেত্রের জন্য এই ধরনের ইনভেস্টমেন্ট সামিট আয়োজিত হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
গ্লোবাল আয়ুষ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ইনোভেশন সামিটের মতো একটি ইনভেস্টমেন্ট সামিটের ভাবনা আমার মনে তখনই এসেছিল যখন করোনার ফলে গোটা বিশ্ব থরহরিকম্পমান হয়ে উঠেছিল। আমরা সবাই দেখছিলাম যে, সেই সময় কিভাবে আয়ুর্বেদিক ওষুধপত্র, আয়ুষ কারা, আর এ ধরনের অনেক প্রোডাক্টস বা পণ্য সাধারণ মানুষের ইমিউনিটি বা প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অনেক কার্যকর ভূমিকা পালন করছে, আর তার পরিণামস্বরূপ যখন এই করোনার কঠিন সময় চলছিল, তখন ভারত থেকে হলুদের রপ্তানি অনেকগুণ বেড়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ, এই হলুদের রপ্তানি বৃদ্ধি এর প্রমাণ, সেই সময় আমরা দেখেছি কিভাবে আধুনিক ফার্মা কোম্পানিগুলি, ভ্যাক্সিন ম্যানুফ্যাকচারার্স বা টিকা উৎপাদনকারীরা, যথা সময়ে সঠিক বিনিয়োগ পেতেই তারা কত বড় সাফল্য এনে দেখিয়েছে। কে কল্পনা করতে পেরেছিল যে এত দ্রুত আমরা করোনার টিকা বাজারে আনতে পারব, তাও ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’। ইনোভেশন অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট বা উদ্ভাবন ও বিনিয়োগ যে কোনও ক্ষেত্রের সামর্থ্য অনেকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এখন সময় এসেছে যে আয়ুষ ক্ষেত্রে বিনিয়োগকে যত বেশি সম্ভব বাড়ানো যায় তার চেষ্টা করা। আজকের এই সুযোগ, এই শীর্ষ সম্মেলন, এরই একটি অসাধারণ সূত্রপাত।
বন্ধুগণ,
আয়ুষের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনের সম্ভাবনা সীমাহীন। আয়ুষ ঔষধি সাপলিমেন্টস এবং কসমেটিক্স-এর উৎপাদনে আমরা আগেই অভূতপূর্ব বৃদ্ধি লক্ষ্য করেছি। আপনারা জেনে খুশি হবেন, ২০১৪ সালের আগে যেখানে আয়ুষ ক্ষেত্রে ৩ বিলিয়ন ডলারের থেকেও কম বাণিজ্য হয়েছিল, এখন সেই ক্ষেত্রে বাণিজ্য ১৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। যেভাবে গোটা বিশ্বে আয়ুষ পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা থেকে এই গ্রোথ আগামী বছরগুলিতে আরও বেশি বাড়বে। নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্টস থেকে শুরু করে ওষুধ উৎপাদন এবং সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা ও আয়ুষ-ভিত্তিক ডায়াগনস্টিক টুলস কিংবা টেলি-মেডিসিন – প্রত্যেক ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনের নতুন নতুন সম্ভাবনা রয়েছে।
বন্ধুগণ,
আয়ুষ মন্ত্রক পরম্পরাগত ওষুধের ক্ষেত্রে স্টার্ট-আপ সংস্কৃতিকে উৎসাহ প্রদানের জন্য বেশ কিছু বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। কিছুদিন আগেই ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ আয়ুর্বেদা’র মাধ্যমে একটি ইনকিউবেশন সেন্টারের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। যে স্টার্ট-আপ চ্যালেঞ্জের আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানেও যেরকম উৎসাহ যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে দেখা গেছে - তা অত্যন্ত উৎসাহব্যাঞ্জক আর আপনারা সবাই, আমার সমস্ত নব যুবক-যুবতী বন্ধুরা এটা খুব ভালোভাবেই জানেন যে একভাবে ভারতের স্টার্ট-আপ-এর এই স্বর্ণযুগ শুরু হয়ে গেছে। এক প্রকার ভারতে আজ ইউনিকর্নগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। ২০২২ সালে ইতিমধ্যেই ১৪টি স্টার্ট-আপ ইউনিকর্ন ক্লাবে যুক্ত হয়েছে। ২০২২-এর এখনও চার মাসও সম্পূর্ণ হয়নি। আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে যে অতি দ্রুত আমাদের আয়ুষের স্টার্ট-আপগুলি থেকে কেউ কেউ ইউনিকর্ন হয়ে উঠে আসবে।
বন্ধুগণ,
ভারতে ঔষধি বৃক্ষ-গুল্মের ভাণ্ডার রয়েছে, আর হিমালয় তো এ ধরনের বৃক্ষ-গুল্মের জন্য অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। এটি একভাবে আমাদের ‘গ্রিন গোল্ড’। আমাদের দেশে একথাও বলা হয় –
“অ মন্ত্রং অপ্সরং নাস্তি, মূলং অনৌষধং”
অর্থাৎ, কোনও একটি অক্ষর এমন নেই যা কোনও মন্ত্র দিয়ে শুরু হয়, কেউ এমন জড় নয়, জড়িবুটিও নয়, এমন কোনও বৃক্ষ-গুল্ম নেই যা থেকে কোনও না কোনও ঔষধি তৈরি হয় না। এই প্রাকৃতিক সম্পদগুলিকে মানবতার হিতে ব্যবহার করার জন্য আমাদের সরকার ভেষজ এবং ঔষধি বৃক্ষ-গুল্মের উৎপাদনকে নিরন্তর উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছে।
বন্ধুগণ,
হার্বস এবং মেডিসিনাল প্ল্যান্টের উৎপাদন কৃষকদের আয় এবং পেশা বৃদ্ধির খুব ভালো উপায় হয়ে উঠতে পারে। এতে এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন বা কর্মসংস্থান সৃষ্টির অনেক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমরা দেখেছি যে এ ধরনের গুল্ম এবং পণ্যের বাজার অত্যন্ত সীমাবদ্ধ এবং সেখানে পেশাদারদের চাহিদা রয়েছে। সেজন্য সরকার আয়ুষ ই-মার্কেট প্লেস-এর আধুনিকীকরণ এবং তার সম্প্রসারণের ওপরও অত্যন্ত দ্রুতগতিতে কাজ করছে। এই পোর্টালের মাধ্যমে হার্বস এবং মেডিসিনাল প্ল্যান্টসের উৎপাদন সংক্রান্ত কৃষকদের, সেই কোম্পানিগুলির সঙ্গেই যুক্ত রাখা হবে আর আয়ুষ পণ্য উৎপাদন করে যাবে।
বন্ধুগণ,
আয়ুষ পণ্যের রপ্তানিকে উৎসাহ যোগানোর জন্য বিগত বছরগুলিতে অভূতপূর্ব চেষ্টা চলেছে। অন্যান্য দেশগুলির সঙ্গে আয়ুষ ঔষধিগুলির পারম্পরিক মান্যতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সেজন্য আমরা বিগত বছরগুলিতে ভিন্ন ভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রায় ৫০টিরও বেশি মেমোরান্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং (মউ) বা সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর করেছি। আমাদের আয়ুষ বিশেষজ্ঞরা ব্যুরো অফ ইন্ডিয়া স্ট্যান্ডার্ডস-এর সঙ্গে মিলেমিশে আইএসও স্ট্যান্ডার্ডস বিকশিত করছেন। এর ফলে আয়ুষের জন্য ১৫০টিরও বেশি দেশে একটি বিশাল রপ্তানি বাজার খুলবে। এভাবে এফএসএসএআই-ও বিগত সপ্তাহে তাঁদের নিয়মকানুনে ‘আয়ুষ আহার’ নামক একটি নতুন ক্যাটাগরি ঘোষণা করেছে। এর ফলে হার্বাল নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্টস-এর উৎপাদনের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা পাবেন। আমি আপনাদের আরও একটি তথ্য জানাতে চাই। ভারত একটি স্পেশাল আয়ুষ মার্কও গড়ে তুলতে চায়, যাকে আমরা একটা আন্তর্জাতিক পরিচিতিও দিতে চাই। ভারতে উৎপাদিত উচ্চতম উৎকর্ষের আয়ুষ পণ্যে এই ধরনের মার্ক লাগানো হবে। এই আয়ুষ মার্ক আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারেও যুক্ত হবে। এর ফলে উন্নতমানের আয়ুষ পণ্যের ওপর সারা বিশ্বের মানুষের ভরসা বাড়বে। সম্প্রতি তৈরি হওয়া আয়ুষ এক্সপোর্টস প্রোমোশন কাউন্সিলের মাধ্যমেও রপ্তানিকে উৎসাহ যোগানো হবে, আর বিদেশি বাজার খুঁজতে সাহায্য পাওয়া যাবে।
বন্ধুগণ,
আজ আপনাদের সামনে আরও একটি ঘোষণা করতে চলেছি। সারা দেশে আয়ুষ পণ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য গবেষণা এবং উৎপাদনকে উৎসাহ যোগানোর জন্য আমাদের সরকার ‘আয়ুষ পার্কস’-এর নেটওয়ার্ক বিকশিত করে তুলবে। এই আয়ুষ পার্ক দেশে আয়ুষ উৎপাদনকে নতুন পথ দেখাবে।
বন্ধুগণ,
আমরা দেখছি যে আজ ভারত এই মেডিকেল ট্যুরিজম বা স্বাস্থ্য পর্যটনের জন্য সারা বিশ্বের অনেক দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, এবং অনেক দেশের মানুষ ভারতকে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে। সেই দিকটি মাথায় রেখে মেডিকেল ট্যুরিজমকে আমরা এমন একটি ক্ষেত্র বলব যেখানে বিনিয়োগের অনেক বড় সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা দেখেছি যে কিভাবে কেরলের ট্যুরিজমকে বাড়াতে পরম্পরাগত ঔষধি অনেক দ্রুত কাজ করেছে। এই সামর্থ্য গোটা ভারতের রয়েছে, ভারতের প্রত্যেক প্রান্তে রয়েছে। এই দশকের অনেক বড় একটি ব্র্যান্ড হয়ে উঠতে পারে ‘হিল ইন ইন্ডিয়া’। আয়ুর্বেদ, ইউনানি, সিদ্ধ ইত্যাদি বিদ্যার ভিত্তিতে ওয়েলনেস সেন্টারগুলি অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে। আমাদের দেশে দ্রুতগতিতে বিকশিত হওয়া আধুনিক পরিকাঠামো এই প্রক্রিয়াকে আরও সাহায্য করবে। যেমনটি আমি বলেছি, যত বিদেশি নাগরিক আজ স্বাস্থ্য পর্যটনের জন্য ভারতে আসবেন। ভারত আজ একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠছে, তখন যখন বিদেশি নাগরিকরা ভারতে এসে আয়ুষ চিকিৎসার দ্বারা উপকৃত হন, তাঁদের জন্য সরকার আরও একটি উদ্যোগ শুরু করতে চলেছে। শীঘ্রই ভারত একটি বিশেষ ‘আয়ুষ বীজ’ ক্যাটাগরি শুরু করতে চলেছে। এর ফলে মানুষের আয়ুষ চিকিৎসার জন্য ভারতে আসা-যাওয়া আরও সহজ এবং কার্যকর হবে।
বন্ধুগণ,
যখন আমরা আয়ুর্বেদের কথা বলছি তখন আজ আপনাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানাতে চাই। আমি আমার বন্ধু এবং কেনিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রাইলা ওডিঙ্গাজি এবং তাঁর কন্যা রোজমেরীর কথাও উল্লেখ করতে চাই। রোজমেরী আর ইউ হিয়ার? ইয়েস, শি ইজ দেয়ার। রোজমেরী, ওয়েলকাম টু গুজরাট। রোজমেরী আপনাকে গুজরাটে স্বাগত জানাচ্ছি। রোজমেরীর অভিজ্ঞতা অত্যন্ত চমৎকার। আমি অবশ্যই আপনাদেরকে জানাতে চাই। কিছুদিন আগে তাঁর বাবা, যিনি আমার খুব ভালো বন্ধু, সেই ওডিঙ্গাজি আমার সঙ্গে দেখা করতে দিল্লি এসেছিলেন। দিনটি ছিল রবিবার, আর আমরা অনেকক্ষণ একসঙ্গে কথা বলার প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছিলাম। দীর্ঘদিন পর আমাদের দু’জনের দেখা হয়েছিল। তখন তিনি আমাকে বলেন যে রোজমেরীর জীবনে একটি বড় সমস্যা এসেছে। এত বড় সমস্যা যে তিনি বলতে বলতে অশ্রুসজল হয়ে ওঠেন, আর রোজমেরীর সেই সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি আমাকে বলেন যে, রোজমেরী চোখের সমস্যা হয়েছিল, সার্জারি হয়েছিল, হয়তো তাঁর ব্রেনে কোনও টিউমারের সমস্যা ছিল। সেজন্যই সার্জারি হয়েছিল আর সেই সার্জারির পর রোজমেরী তাঁর দৃষ্টিশক্তি হারায়। সে একদমই দেখতে পাচ্ছিল না। আপনারা কল্পনা করতে পারেন, জীবনের এই পর্যায়ে দৃষ্টিশক্তি চলে যাওয়া যে কোনও মানুষকে হতাশ করে দেয়, নিরাশ করে দেয়, আর একজন পিতা হিসেবে আমার বন্ধু ওডিঙ্গাজি গোটা বিশ্বে এর চিকিৎসার জন্য খোঁজখবর করেন। তিনি কেনিয়ার অনেক বড় নেতা। বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে পৌঁছে যাওয়া তাঁর পক্ষে কোনও কঠিন কাজ ছিল না। ফলে, বিশ্বের এমন কোনও বড় দেশ ছিল না যেখানে রোজমেরীর চিকিৎসা হয়নি। কিন্তু, রোজমেরীর দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসেনি। অবশেষে, তিনি ভারতে এসে আয়ুর্বেদ পদ্ধতিতে দীর্ঘকাল চিকিৎসা করান আর সাফল্য পান। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় রোজমেরীর দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসে। সে এখন দেখতে পাচ্ছে। যখন সে প্রথমবার নিজের ছেলে-মেয়েদের আবার দেখতে পায়, তখন যে দৃশ্য তৈরি হয়েছিল, আমাকে ওডিঙ্গাজি বলছিলেন, সেই মুহূর্তটি রোজমেরীর জীবনের সবচাইতে সোনালী মুহূর্ত ছিল। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে রোজমেরীও আজ এই শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছে। তাঁর বোনও সঙ্গে এসেছে। তাঁর বোন তো এখন পরম্পরাগত ঔষধি নিয়েই পড়াশোনা করছে আর পড়াচ্ছেও। আগামীকাল সম্ভবত সে আপনাদের সামনে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরবে।
বন্ধুগণ,
একবিংশ শতাব্দীর ভারত বিশ্ববাসীর সঙ্গে তার অভিজ্ঞতা, তার জ্ঞান, তার তথ্য ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চায়। আমাদের ঐতিহ্য সমগ্র মানবতার জন্যই ঐতিহ্যস্বরূপ। আমরা ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর নীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা বিশ্বের দুঃখ-যন্ত্রণা দূর করার জন্য কৃতসঙ্কল্প মানুষ। আমাদের জীবনের মন্ত্র হল – ‘সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ’। আমাদের আয়ুর্বেদ, আমাদের হাজার হাজার বছরের পরম্পরা, হাজার হাজার বছরের তপস্যার প্রতীক। আর আমরা তো রামায়ণ-এ যা শুনে এসেছি, লক্ষ্মণজি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। তখন হনুমানজি হিমালয়ে যান আর সেখান থেকে জড়িবুটি নিয়ে আসেন। তখনও আত্মনির্ভর ভারত ছিল। আয়ুর্বেদের সমৃদ্ধির পেছনে একটি মুখ্য কারণ ছিল তার ওপেন সোর্স মডেল। আজ ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে ওপেন সোর্স মডেলের অনেক চর্চা হয়, আলাপ-আলোচনা হয়, অনেকে মনে করেন যে এটা তাঁদের আবিষ্কার। তাঁরা জানেন না যে এই মাটিতে হাজার হাজার বছর আগে এই ওপেন সোর্সের পরম্পরা ছিল আর আয়ুর্বেদ সেই ওপেন সোর্স পরম্পরাতেই বিকশিত হতে পেরেছে। যে যুগে যিনি যেটা আবিষ্কার করেছেন, যা আবিষ্কার করেছেন, তাই জ্ঞানের ভাণ্ডারে যুক্ত হতে থেকেছে। অর্থাৎ, এক প্রকার আয়ুর্বেদ বিকাশ এবং এর গবেষণা হাজার হাজার বছর ধরে চলছে। নতুন নতুন আবিষ্কার যুক্ত হয়ে চলেছে। এর কোনও বন্ধন ছিল না। নতুন ভাবনাগুলিকে সেখানে সব সময়ই স্বাগত জানানো হয়েছে। সময়ের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন বিদ্বানদের অভিজ্ঞতা, তাঁদের অনুভব, তাঁদের অধ্যয়ন আয়ুর্বেদকে আরও মজবুত করেছে। আজকের সময়েও আমরা আমাদের পূর্বজদের থেকে শিক্ষা নিয়ে এই ইন্টেলেকচ্যুয়াল ওপেননেস-এর ভাবনা নিয়ে কাজ করছি। পরম্পরাগত ওষুধের সঙ্গে যুক্ত জ্ঞানের বিকাশ এবং বিস্তার তখনই সম্ভব যখন আমরা সেগুলিকে সায়েন্টিফিক স্পিরিট দিয়ে দেখব। সেগুলিকে দেশ, কাল, পরিস্থিতি অনুসারে প্রয়োগ করব।
বন্ধুগণ,
গতকালই জামনগরে ডব্লিউএইচও – গ্লোবাল সেন্টার ফর ট্র্যাডিশনাল মেডিসিনের উদ্বোধন হয়েছে। অর্থাৎ, গুজরাটের মাটিতে জামনগরে বিশ্বের পরম্পরাগত ওষধি কেন্দ্র তৈরি হওয়া, প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য, প্রত্যেক গুজরাটবাসীর জন্য এটি অত্যন্ত গর্বের বিষয়। তারপর আজ আমরা প্রথম আয়ুষ ইনোভেশন অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিটে অংশগ্রহণ করছি। এটিও একটি শুভ সূত্রপাত। এটা এমন একটা সময়ে আয়োজিত হচ্ছে যখন ভারত তার স্বাধীনতার ৭৫ বছরের উৎসব পালন করছে, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আমাদের এই আগামী ২৫ বছরের অমৃতকাল বিশ্বের কোণায় কোণায় পরম্পরাগত ওষুধের সোনালী কালে পরিণত হবে। আজ এক প্রকার সারা পৃথিবীতে পরম্পরাগত ওষুধের নতুন যুগ শুরু হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আজকের গ্লোবাল আয়ুষ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ইনোভেশন সামিট আয়ুষের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ, বাণিজ্য এবং উদ্ভাবনের নতুন নতুন পথ খুলবে। আজ যে বিদেশি অতিথিরা এসেছেন, আর আজ যাঁরা প্রথমবার ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে এখানে এসেছেন তাঁদেরকে আমি অনুরোধ জানাব, আপনারা এই মহাত্মা মন্দিরটি ভালো করে ঘুরে দেখবেন। এখানে একটি ডান্ডি কুটীর আছে। মহাত্মা গান্ধী এই পরম্পরাগত চিকিৎসার অন্যতম প্রণেতা ছিলেন। আমি চাইব যে সময় বের করে আপনারা অবশ্যই ডান্ডি কুটীর দেখতে যাবেন। স্বাধীনতার এই অমৃতকালে মহাত্মা গান্ধীকে অনেক কাছ থেকে জানার চেষ্টা করবেন। আরও একটি সুযোগ আপনারা কখনই হাতছাড়া করবেন না। আয়ুর্বেদের পাশাপাশি আমি আপনাদের আজ আরও একটি খুশির খবর দিতে চাই। আমাদের বিস্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ডায়রেক্টর জেনারেল ডা. টেড্রস আমার খুব ভালো বন্ধু। আমার সঙ্গে যখনই দেখা হয় তিনি একটি কথা বলেন যে “মোদীজি দেখুন, আমি আজ যা-ই হয়েছি তাঁর পেছনে ভারতের অবদান রয়েছে! আমাকে যদি ছোটবেলায় ভারতের শিক্ষকরা না পড়াতেন, তাহলে আমি কিছুই হতাম না। আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে ভারতীয় শিক্ষকদের অনেক বড় ভূমিকা ছিল। সেজন্য আমি ভারতের সঙ্গে যুক্ত হতে পারলে অত্যন্ত গর্বিত হই।” আজ সকালে যখন আমার সঙ্গে দেখা হয়, তখনও তিনি আমাকে বলেছেন যে দেখুন ভাই, আমি তো পাক্কা গুজরাটি হয়ে গিয়েছি। তিনি বলেন, যে আমার গুজরাটি নাম রাখুন। একটু আগেই তিনি আবার আমাকে মঞ্চের মধ্যেই মনে করান যে, ‘ আমার গুজরাটি নাম ঠিক করেছেন না করেননি!’ সেজন্য আমি আজ মহাত্মা গান্ধীর এই পবিত্র ভূমিতে আপনাদের সাক্ষী রেখে আমার পরম মিত্রকে ‘তুলসীভাই’ নাম দিলাম। তুলসী এমন একটি গাছ যাকে বর্তমান প্রজন্ম ভুলে গেলেও ভারতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে আমাদের পূর্বজরা বাড়ির উঠোনে কিংবা দাওয়ায় তুলসী গাছ লাগাতেন, জল দিতেন, নিয়মিত পুজো করতেন। সেই পরম্পরা আজও অনেক জায়গায় আছে। তুলসী এমন একটি গাছ যা ভারতের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, আর সেজন্য যখন আয়ুর্বেদের শীর্ষ সম্মেলন চলছে, তখন এই নামটাই আমি দিলাম। আপনারা শুনলে খুশি হবেন যে দীপাবলির পর আমাদের দেশে সেই তুলসীর বিয়ের বড় সমারোহ হয়। অর্থাৎ, আয়ুর্বেদের সঙ্গে যুক্ত যে তুলসী - তার কথা বলছি। তাঁর নাম যখন আমি তুলসী রেখেছি আর তিনি যখন নিজেকে গুজরাটি বলছেন, তখন নামের পেছনে ভাই না লাগালে তো চলবে না। সেজন্য আপনার গুজরাটের প্রতি এই আসক্তি তৈরি হয়েছে। প্রত্যেকবারই আপনি কিছু না কিছু গুজরাটিতে বলার চেষ্টা করছেন। আপনাকে যে গুরুজনেরা শিক্ষা দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আপনি ক্রমাগত শ্রদ্ধাভাব প্রকাশ করে চলেছেন। এই মহাত্মা মন্দিরের পবিত্র মাটিতে দাঁড়িয়ে আমি আপনার নাম ‘তুলসীভাই’ রেখে, এই নামে ডেকে খুব আনন্দ পাচ্ছি। আমি আরও একবার আপনাদের দু’জনকে, আমাদের দুই মহামান্য অতিথিকে এই গুরুত্বপূর্ণ সমারোহ উপলক্ষে আমাদের মধ্যে আসার জন্য অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ!