একটু আগেই আপনাদের সকলের সঙ্গে কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছে। আমার খুবই ভালো লেগেছে, বারাণসী শহরে উন্নয়নের যে কাজগুলি হয়েছে, যে সিদ্ধান্তগুলি সরকার নিয়েছে, সেগুলি দ্বারা বারাণসীর জনগণ অত্যন্ত লাভবান হয়েছেন। আর এ সমস্ত কিছুই যে হচ্ছে তার পেছনে বাবা বিশ্বনাথেরই আশীর্বাদ রয়েছে। সেজন্য আজ যদিও আমি ভার্চ্যুয়ালি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, কিন্তু আমাদের কাশীর যে ঐতিহ্য, যে পরম্পরা – তা পালন করা ছাড়া আমরা এগিয়ে যেতে পারি না। সেজন্য এখন আমরা যারা এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছি, সবাই একসঙ্গে বলব – ‘হর হর মহাদেব'।
ধনতেরাস, দীপাবলি, অন্নকূট, গোবর্ধন পূজা এবং ছট পূজার জন্য আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। মা অন্নপূর্ণা আপনাদের সকলকে ধনধান্যে সমৃদ্ধ করুন এই কামনা জানাই। বাজারে বিকি-কিনি বাড়ুক, আমার কাশীর গলিগুলি উজ্জ্বল হয়ে উঠুক আর বেনারসী শাড়ির ব্যবসাও আগের মতো চলুক। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময়েও আমাদের কৃষক ভাই-বোনেরা মন দিয়ে চাষের কাজ করেছেন। শুধু বারাণসী নয়, গোটা পূর্বাঞ্চলে এবার অগ্রহায়ণের ফসল খুব ভালো হয়েছে এই খবর পেয়েছি। কৃষকদের এই পরিশ্রম শুধু নিজেদের জন্য নয়, গোটা দেশের উপকারে লাগবে। আমি আপনাদের মতো অন্ন দেবতাদের অনেক অভিনন্দন জানাই। এই অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন উত্তরপ্রদেশের যশস্বী মুখ্যমন্ত্রী শ্রী যোগী আদিত্যনাথজি, উপ-মুখ্যমন্ত্রী শ্রী কেশব প্রসাদ মৌর্যজি, উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রীগণ, বিধায়কগণ, বারাণসীর সমস্ত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ আর আমার প্রিয় বারাণসীর ভাই ও বোনেরা!
মহাদেবের আশীর্বাদে কাশী কখনও থেমে থাকে না। মা গঙ্গার মতো নিরন্তর এগিয়ে চলতে থাকে। করোনার কঠিন সময়েও কাশী তার এই স্বরূপ নিয়েই এগিয়ে চলেছে। করোনার বিরুদ্ধে বারাণসী প্রাণশক্তি নিয়ে লড়ে যাচ্ছে, এই কঠিন সময়ে যে সামাজিক ঐক্যের পরিচয় দিয়েছে তা সত্যিই অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এখন আজ এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বারাণসীর উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন এবং শিলান্যাস হচ্ছে। এমনিতে মহাদেবের আশীর্বাদে যখনই কাশীর জন্য কোনও নতুন কাজ শুরু করেছি, তখন পাশাপাশি অনেক পুরনো কিছু সঙ্কল্পও বাস্তবায়িত হয়েছে। অর্থাৎ, একদিকে শিলান্যাস, অন্যদিকে উদ্বোধন। আজও প্রায় ২২০ কোটি টাকার ১৬টি প্রকল্পের উদ্বোধনের পাশাপাশি প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে ১৪টি প্রকল্পের শিলান্যাসের মাধ্যমে কাজ শুরু হল। আমি এই সমস্ত উন্নয়নকর্মের জন্য বারাণসীর জনগণকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। কাশীতে, উত্তরপ্রদেশে ক্লান্তিহীনভাবে নিরন্তর এই ধরনের উন্নয়ন কর্মকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব আমি মুখ্যমন্ত্রী শ্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং তাঁর সম্পূর্ণ টিমকে দিতে চাই। তাঁর মন্ত্রী পরিষদের সদস্যগণ, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ, তাঁর সরকারি ব্যবস্থায় কর্মতৎপর সমস্ত আধিকারিক ও কর্মচারীদেরকেও এইসব প্রকল্পের সাফল্যের কৃতিত্ব আমি দিতে চাই। যোগীজি এবং তাঁর টিমের জনসেবার এই একনিষ্ঠ প্রচেষ্টার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা।
বন্ধুগণ,
বারাণসী শহর এবং চারপাশের গ্রামাঞ্চলে উন্নয়ন প্রকল্পে পর্যটন শিল্প থেকে শুরু করে সংস্কৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়ন, এর পাশাপাশি রয়েছে সড়কপথ, বিদ্যুৎ এবং জল সরবরাহের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলির উন্নয়ন। সব সময় এই চেষ্টাই করা হয়েছে যাতে আমরা কাশীর প্রত্যেক নাগরিকের ভাবনা অনুযায়ী উন্নয়নের চাকাগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। সেজন্য এই উন্নয়ন আজ আপনাদের সামনে একটি উদাহরণস্বরূপ হয়ে উঠছে, কিভাবে বারাণসীতে একসঙ্গে সমস্ত ক্ষেত্রে, সমস্ত দিকে দ্রুতগতিতে উন্নয়নের কাজএগিয়ে চলেছে। মা গঙ্গার পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য পরিষেবা, সড়কপথ এবং পরিকাঠামো নির্মাণ থেকে শুরু করে পর্যটন উন্নয়ন, বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে যুব সম্প্রদায়ের ক্রীড়া উন্নয়ন এবং কৃষকদের চাষের খেত থেকে শুরু করে গ্রামের গরীব মানুষের উন্নয়ন – প্রতিটি ক্ষেত্রে বারাণসী উন্নয়নের নতুন গতিতে এগিয়ে চলেছে। আজ গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান প্রকল্পের মাধ্যমে পয়ঃপ্রণালী পরিশোধন প্রকল্পের পুনরুজ্জীবনের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। পাশাপাশি, শাহী নালা থেকে অতিরিক্ত নোংরা জল যাতে গঙ্গায় না পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে ডাইভারশন লাইনের শিলান্যাসও করে দেওয়া হয়েছে। ৩৫ কোটি টাকা থেকেও বেশি বিনিয়োগে খিড়কিয়া ঘাটকেও সৌন্দর্যায়ন করা হচ্ছে। এখানে সিএনজি-চালিত নৌকাও চলবে। ফলে, গঙ্গা-দূষণ হ্রাস পাবে। এভাবে দশাশ্বমেধ ঘাটে ট্যুরিস্ট প্লাজা গড়ে তুলে আগত পর্যটকের বিভিন্ন পরিষেবা এবং আকর্ষণের কেন্দ্র করে তোলা হবে। এর ফলে ঘাটের সৌন্দর্যায়ন তো হবেই, বিভিন্ন ব্যবস্থাপনাও সুচারু হবে। এখানকার স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও এই প্লাজায় আসা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠবেন। তাঁদেরও গ্রাহক বৃদ্ধি পাবে।
বন্ধুগণ,
মা গঙ্গাকে নিয়ে এই প্রচেষ্টাগুলি, এই দায়বদ্ধতা, কাশীর সঙ্কল্প বাস্তবায়ন আর কাশীকে নিয়ে নতুন নতুন সম্ভাবনার পথ খুলে দিচ্ছে। ধীরে ধীরে এখানে ঘাটগুলির ছবি বদলে যাচ্ছে। করোনার প্রভাব হ্রাস পাওয়ার পর যখন এখানে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, তখন তাঁরা বারাণসীতে এসে আরও সুন্দর ছবি দেখে ফিরে যাবেন। গঙ্গার ঘাটগুলির পরিচ্ছন্নতা এবং সৌন্দর্যায়নের পাশাপাশি, সারনাথকেও নতুন ভাবে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। আজ সেখানে যে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড প্রোগ্রামের উদ্বোধন করা হল, তার মাধ্যমে সারনাথের আকর্ষণ আরও অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।
ভাই ও বোনেরা,
কাশীর একটি বড় সমস্যা হল এখানকার পথে ঝুলতে থাকা বিদ্যুতের তারের জালগুলি। আজ কাশীর একটি বড় এলাকা বিদ্যুতের তারের জাল থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হচ্ছে। তারগুলিকে মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি ধাপ আজ সম্পূর্ণ হচ্ছে। ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে লোহুরাবীর, ভোজুবীর থেকে মহাবীর মন্দির, কচহরি চৌরাহা থেকে ভোজুবীর তিরাহা – এমনই সাতটি পথকে বিদ্যুতের তারের জাল থেকে পুরোপুরি মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, স্মার্ট এলইডি বাল্বের মাধ্যমে গলিগুলির আলো এবং সৌন্দর্য অনেক বেশি বেড়েছে।
বন্ধুগণ,
বেনারসের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকে আমাদের সরকার শুরু থেকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে। কাশীবাসীদের এবং কাশীতে আগত প্রত্যেক পর্যটকের, প্রত্যেক ভক্তের সময় যেন যানজটে নষ্ট না হয়, সেজন্য নতুন পরিকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। বারাণসীর মানুষের জন্য আজ বিমানবন্দরের পরিষেবা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাবতপুর থেকে শহরে আসা সড়কটি এখন বেনারসের নতুন পরিচয় হয়ে উঠেছে। আজ বিমানবন্দরে দুটি প্যাসেঞ্জার বোর্ডিং ব্রিজের উদ্বোধনের পর এই পরিষেবা আরও বিস্তৃত হবে। এই বিস্তার এজন্যও অত্যন্ত জরুরি কারণ, ছয় বছর আগে যখন আপনারা আমাকে আপনাদের সেবার সুযোগ দিয়েছিলেন, তখন বেনারসে প্রতিদিন ১২টি বিমান আসা-যাওয়া করত। আজ তার থেকে চারগুণ, অর্থাৎ ৪৮টি বিমান আসা-যাওয়া করে। অর্থাৎ, বারাণসীর ক্রমবর্ধমান পরিষেবাগুলির জন্য বারাণসীতে আগত পর্যটকের সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভাই ও বোনেরা,
বারাণসীতে নির্মীয়মান আধুনিক পরিকাঠামো, এখানে বসবাসকারী ও পর্যটকদের জীবনকে সহজ করে তুলছে। বিমানবন্দরের সঙ্গে যুক্ত পথের পাশাপাশি, এই শহরকে ঘিরে রিং রোড মেহমুরগঞ্জ-মন্ডুবাদিহ ফ্লাইওভার নির্মাণ, জাতীয় মহাসড়ক ৫৬-র প্রশস্তিকরণ – এসবের মাধ্যমে বারাণসী আজ সড়ক পরিকাঠামোর কায়াকল্প দিচ্ছে। শহরের ভেতরে এবং চারপাশের এলাকায় পথঘাটের চিত্র বদলে গেছে। আজও বারাণসীর ভিন্ন ভিন্ন এলাকার জন্য বেশ কিছু সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। যেমন জাতীয় মহাসড়ক, ফুলবেড়িয়া-লেহেরতারা মার্গ, বরুণা নদীর ওপর তিনটি সেতু এবং বেশ কয়েকটি সড়ক নির্মাণ – এরকম অনেক কাজ আগামী সময়ে দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হতে চলেছে। সড়কপথের এই নেটওয়ার্কের পাশাপাশি, বেনারস এখন জলপথ পরিবহণের ক্ষেত্রে একটি মডেল হয়ে উঠেছে। আমাদের বারাণসীতে আজ দেশের প্রথম ইনল্যান্ড ওয়াটার পোর্ট বা অভ্যন্তরীণ জল বন্দর গড়ে উঠেছে।
ভাই ও বোনেরা,
বিগত ছয় বছরে বারাণসীতে চিকিৎসা পরিকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব কাজ হয়েছে। আজ শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, গোটা পূর্বাঞ্চলের জন্য কাশী একটি চিকিৎসার পরিষেবার হাব হয়ে উঠেছে। আজ রামনগরে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হাসপাতালের আধুনিকীকরণ প্রকল্পের উদ্বোধন কাশীর এই ভূমিকাকে আরও বিস্তৃত করবে। রামনগরে হাসপাতালে এখন যন্ত্রচালিত লন্ড্রি, কম্পিটারচালিত রেজিস্ট্রেশন কাউন্টার এবং কর্মচারীদের জন্য আবাসিক এলাকার পরিষেবা নির্মাণের প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। হোমি ভাবা ক্যান্সার হাসপাতাল এবং পণ্ডিত মহামনা মালব্য ক্যান্সার হাসপাতালের মতো বড় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট আগে থেকেই এখানে পরিষেবা প্রদান করছে। তেমনই, ইএসআই হাসপাতাল আর বিএইচইউ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালও এখানকার দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর বন্ধুদের জন্য, গর্ভবতী মহিলাদের উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করছে।
বন্ধুগণ,
বারাণসীর আজ যে চতুর্মুখী উন্নয়ন হচ্ছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে, তার দ্বারা পূর্বাঞ্চল সহ গোটা পূর্ব ভারত লাভবান হচ্ছে। আজ পূর্বাঞ্চলের জনগণের ছোটখাট প্রয়োজনের জন্য দিল্লি বা মুম্বাই চক্কর লাগাতে হ্য় না। বেনারস এবং পূর্বাঞ্চলের কৃষকদের জন্য স্টোরেজ থেকে শুরু করে আধুনিক যানবাহন ব্যবস্থার মতো অনেক পরিষেবা বিগত বছরগুলিতে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল রাইস ইনস্টিটিউট-এর একটি কেন্দ্র, দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প, পচনশীল পণ্য সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এ ধরনের অনেক পরিষেবা দ্বারা পূর্বাঞ্চলের কৃষকরা অত্যন্ত লাভবান হচ্ছেন। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে এ বছর প্রথমবার বারাণসী এলাকা থেকে ফল, সব্জি এবং ধান বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। কৃষকদের জন্য নির্মিত সংরক্ষণ পরিষেবার বিস্তারের মাধ্যমে আজ কপসিঠীতে ১০০ মেট্রিক টন স্টোরেজ ক্ষমতাসম্পন্ন গুদামের উদ্বোধন করা হয়েছে। তাছাড়া, জন্সাতে বহুমুখী বীজ গুদাম এবং সরবরাহ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে।
ভাই ও বোনেরা,
গ্রাম, গরীব এবং কৃষকরা আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের সবচাইতে বড় স্তম্ভ এবং এর দ্বারা সবচাইতে বেশি উপকৃতও। সম্প্রতি সরকার যে কৃষি সংস্কার করেছে, তার দ্বারা দেশের কৃষকদের অনেক প্রত্যক্ষ লাভ হবে। বাজারের সঙ্গে তাঁদের সরাসরি যোগাযোগ সুনিশ্চিত হবে। কৃষকদের নামে, কৃষকদের পরিশ্রমের ফসল থেকে যারা কৃষকদের থেকে বেশি লাভবান হত, সেই দালালদের এখন এই ব্যবস্থা থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে, উত্তরপ্রদেশের, পূর্বাঞ্চলের, বেনারসের প্রত্যেক কৃষক সরাসরি লাভবান হবেন।
বন্ধুগণ,
কৃষকদের মতোই ঠেলাওয়ালা, রেললাইনের দু'পাশে পসরা সাজিয়ে বসা বন্ধুদের জন্যও একটি অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্প শুরু করা হয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রী স্বনিধি যোজনার মাধ্যমে ঠেলাওয়ালা, রেললাইনের দু'পাশে পসরা সাজিয়ে বসা ভাই-বোনরা সহজেই ঋণ পাচ্ছেন। করোনা সংক্রমণের ফলে তাঁদের যে সমস্যা হয়েছে তা যেন দূর করা যায়, তাঁরা যেন আবার নিজেদের কাজ শুরু করতে পারেন তার জন্য মাথাপিছু ১০ হাজার টাকা ঋণ সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এভাবে গ্রামে বসবাসকারী মানুষদের গ্রামের জমি, বাড়ির আইনি অধিকার প্রদানের জন্য 'স্বামীত্ব' যোজনা চালু করা হয়েছে। গ্রামের প্রত্যেকের বাড়ি ও সম্পত্তি নিয়ে যে বিবাদ হয়, কখনও কখনও মারামারি লেগে যায়, কখনও অন্য গ্রামে বিয়ে লাগলে বাড়ির মানুষ সেখান থেকে ফিরে এসে দেখেন তাঁদের সম্পত্তি অন্য কেউ দখল করে নিয়েছে – এই সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য 'স্বামীত্ব' যোজনার মাধ্যমে প্রত্যেককে যে প্রপার্টি কার্ড দেওয়া হচ্ছে, সেটি হাতে পাওয়ার পর এ ধরনের সমস্যার অবকাশ আর থাকবে না। এখন গ্রামের বাড়ি কিংবা জমির এই প্রপার্টি কার্ড আপনাদের কাছে থাকার ফলে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেতেও খুব সুবিধা হবে। পাশাপাশি, আপনার জমিতে কারোর অবৈধ দখলদারির সঙ্কটও থাকবে না। পূর্বাঞ্চল তথা বেনারসের গ্রামের মানুষেরাও এই প্রকল্পের মাধ্যমে অত্যন্ত উপকৃত হবেন।
বন্ধুগণ,
আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে – ‘কাশ্যম্ হি কাশতে কাশী, কাশী সর্ব প্রকাশিকা’ – অর্থাৎ, কাশীকে কাশীই আলোকিত করে, আর কাশী সবাইকে আলোকিত করে। সেজন্য আজ উন্নয়নের যে আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে, যে পরিবর্তন হচ্ছে, এই সমস্ত কিছু কাশী এবং কাশীবাসীদের আশীর্বাদেরই পরিণাম। কাশীর আশীর্বাদের মাধ্যমেই আমরা সাক্ষাৎ মহাদেবের আশীর্বাদ পাই। আর যখন মহাদেবের আশীর্বাদ থাকে, তখন যে কোনও বড় কাজ সহজেই সম্পন্ন হতে পারে। আমার বিশ্বাস, কাশীর আশীর্বাদে উন্নয়নের এই গঙ্গা এইভাবেই কলকল বয়ে যাবে, অবিরাম বয়ে যাবে। এই শুভকামনার সঙ্গে আপনাদের সবাইকে আরেকবার দীপাবলি, গোবর্ধন পূজা এবং ভাই দুজের আন্তরিক শুভেচ্ছা। আপনাদের প্রতি আমার আরেকটি অনুরোধ রয়েছে। আজকাল আপনারা দেখছেন আমি সব জায়গায় 'ভোকাল ফর লোকাল'-এর কথা বলি। অর্থাৎ লোকালের জন্য ভোকাল হতে হবে। এর পাশাপাশি, ‘লোকাল ফর দিওয়ালি' এই মন্ত্রের প্রতিধ্বনিও চারিদিকে শোনা যাচ্ছে। আমাদের বেনারসের জনগণকে এবং দেশবাসীকে আমার অনুরোধ এই 'লোকাল ফর দিওয়ালি'র আবেদনকেও খুব প্রোমোট করুন, খুব প্রচার করুন। দেখবেন, কত দ্রুত আমাদের স্থানীয় পণ্যগুলির পরিচয় বিশ্বের সর্বত্র পৌঁছে যাবে। এর ফলে স্থানীয় পরিচয় মজবুত হবে। যাঁরা এই পণ্যগুলি তৈরি করেন তাঁদের দীপাবলি আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। সেজন্য আমি দেশবাসীকে দীপাবলির আগে বারবার অনুরোধ জানাচ্ছি, তাঁরা যেন স্থানীয় পণ্যের জন্য, দেশীয় পণ্যের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন, আর 'ভোকাল ফর লোকাল'-এর জন্য দীপাবলি স্থানীয় পণ্য দিয়ে পালন করেন। তাহলে আপনারা দেখবেন গোটা অর্থনীতিতে একটি নতুন চেতনা জাগ্রত হবে, একটি নতুন প্রাণশক্তি অনুভব করবেন। সেইসব পণ্য, যেগুলিতে আমাদের দেশবাসীর ঘামের গন্ধ রয়েছে, যে জিনিসগুলিতে আমার দেশের নবীন প্রজন্মের মেধার পরিচয় রয়েছে, সেই পণ্যগুলি আমার দেশের অনেক পরিবারকে নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে, নতুন সঙ্কল্প নিয়ে তাঁদের কাজ বিস্তারিত করার শক্তি জোগায়। তাঁদের সবার জন্য একজন ভারতবাসী হিসেবে দেশের প্রতি আমাদের কর্তব্য পালন করতে হবে। আমার দেশের প্রতিটি পণ্যের জন্য আমাদের দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। আসুন, এই ভাবনা নিয়ে লোকাল পণ্যের জন্য ভোকাল হই, আর দীপাবলি লোকাল পণ্য দিয়ে পালন করি। আর এক্ষেত্রে শুধু প্রদীপ নয়। অনেকে ভাবেন শুধু দেশি মাটির প্রদীপ কিনলেই বুঝি লোকাল কেনা হল। না ভাই, প্রতিটি এমন জিনিস যা আমাদের দেশে উৎপাদিত হয়, সেগুলি দেশীয় বাজার থেকে কিনুন। আমি এটা বলছি না যে আপনাদের বাড়িতে বাইরে থেকে কেউ কোনও বিদেশি জিনিস এনে উপহার দিলে সেগুলি ফেলে দিন, সেগুলি গঙ্গায় ভাসিয়ে দিন। আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই, আমার দেশের মানুষ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে পণ্য তৈরি করছে, আমার দেশের নবীন প্রজন্ম তাঁদের বুদ্ধি, শক্তি, সামর্থ্য দিয়ে যে নতুন নতুন উদ্ভাবনকে প্রয়োগের চেষ্টা করছে, তাঁদের হাত ধরা আমাদের সকলের দায়িত্ব, তাঁদের হাত ধরা আমাদের সকলের কর্তব্য। সেসব পণ্য যদি আমরা কিনি তাহলে তাঁদের উৎসাহ বাড়ে এবং তাঁদের আত্মবিশ্বাসও বাড়বে। আপনারা দেখবেন, চোখের সামনে আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ একটা সম্পূর্ণ নতুন প্রজন্ম উঠে দাঁড়াবে যাঁরা ভারতকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি নতুন শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসবে। আর সেজন্য আজ আমি আরেকবার কাশীবাসীকে অনুরোধ জানাচ্ছি, দীপাবলির শুভেচ্ছার পাশাপাশি এই অনুরোধ। কাশীর জনগণের কাছে আমি যখনই যা চেয়েছি, কাশীবাশী তখনই দু'হাত ভরে আমাকে তা দিয়েছেন, খোলা মনে দিয়েছেন। কিন্তু আমি কখনও নিজের জন্য কিছু চাইনি, আমার নিজের কোনও প্রয়োজনও নেই, আপনারা চাওয়ার মতো কিছু বাকিও রাখেননি, কিন্তু আমি কাশীর প্রতিটি প্রয়োজনসাধনের জন্য, কাশীতে উৎপাদিত প্রতিটি পণ্যের গৌরবগাঁথা গাই। সেই পণ্যগুলিকে দেশের বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কথা বলি। আমার দেশের প্রতিটি পণ্য যেন এই সুযোগ পায়, সেজন্যই আমার এই অনুরোধ। আরেকবার কাশীবাসীদের প্রণাম জানিয়ে, কাশী বিশ্বনাথের চরণে মাথানত করে, কাল ভৈরবকে প্রণাম জানিয়ে, মা অন্নপূর্ণাকে প্রণাম জানিয়ে, আগামী সমস্ত উৎসবের দিনগুলির জন্য আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।