সম্মানীয় মন্ত্রীরা, উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা, স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত পেশাদাররা এবং বিশ্বের নানা দেশ থেকে আসা বন্ধুরা,
নমস্কার !
কোউইন গ্লোবাল কনক্লেভে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এত বিপুল সংখ্যক বিশেষজ্ঞ যোগ দেওয়ায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত। প্রথমেই আমি সারা পৃথিবীতে মহামারীর জন্য যাঁদের জীবনাবসান হয়েছে তাঁদের নিকট আত্মীয়দের আমার সমবেদনা জানাই। গত ১০০ বছরে এ ধরণের মহামারী হয়নি। আমরা বুঝতে পেরেছি, যে খুব শক্তিশালী হলেও, এককভাবে কেউ এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পারবে না। কোভিড-১৯ মহামারী থেকে সব চাইতে বড় যে শিক্ষা মানবজাতি পেয়েছে তা হল আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে আর একযোগে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাছে শিখবো এবং অন্যের সবথেকে ভাল পন্থা-পদ্ধতিগুলি নিয়ে আলোচনা করবো। এই মহামারীর শুরু থেকে আমরা আমাদের সমস্ত অভিজ্ঞতা, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এবং সম্পদ মানবজাতির সঙ্গে ভাগ করে নিয়ে যুদ্ধ জয়ের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের সব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা চেষ্টা করেছি, আমাদের পক্ষে যতটা সম্ভব, ততটা সারা বিশ্বের সঙ্গে ভাগ করে নিতে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পন্থা-পদ্ধতিগুলি জানার বিষয়ে আমরা অত্যন্ত আগ্রহী।
বন্ধুগণ,
কোভিড-১৯এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রযুক্তি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত রয়েছে। সৌভাগ্যবশত সফ্টওয়্যার হল এমন একটি বিষয়, যেখানে আমাদের সম্পদের ঘাটতির কোনো সমস্যা নেই। আর তাই কোভিড সংক্রমিতদের সংস্পর্শে কেউ আসলে তাকে শনাক্ত করার জন্য আমরা ওপেন সোর্স অ্যাপ দ্রুত তৈরি করেছি। কারণ এটা ছিল প্রযুক্তিগত দিক থেকে সুবিধাজনক। ২০ কোটি মানুষ আরোগ্য সেতু অ্যাপটি ব্যবহার করছেন। যেকোন ডেভেলপার এই অ্যাপটি সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন। যেহেতু এটি ভারতে ব্যবহৃত হয়েছে তাই আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন যে এর গতি এবং কাজের ধারা যথাযথভাবে পরীক্ষিত।
বন্ধুগণ,
মহামারী থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করতে হলে টিকাকরণ হচ্ছে সবথেকে ভালো পন্থা। আর শুরু থেকেই ভারতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমাদের টিকাকরণের কৌশল সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় করা হবে। আজকের এই বিশ্বায়নের যুগে মহামারী পরবর্তী পৃথিবীকে যদি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে হয় সেক্ষেত্রে ডিজিটাল উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সকলকে দেখাতে হবে যে তিনি টিকা নিয়েছেন। এ সংক্রান্ত প্রামাণ্য নথিটি নিরাপদ, সুরক্ষিত ও ভরসাযোগ্য হতে হবে। প্রত্যেককে সেই তথ্য রাখতে হবে যে তিনি কোথায় এবং কার কাছ থেকে টিকা নিয়েছেন। টিকার এক একটি ফোঁটা অত্যন্ত মূল্যবান, তাই কোনো ডোজের যাতে অপচয় না হয় সরকার সেদিকে নজর রাখছে এবং ডোজগুলি কাদের দেওয়া হচ্ছে, সে সংক্রান্ত তথ্যও থাকছে। এর ফলে অপচয়ের সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে। এগুলি কোনটাই সম্ভব হতনা, যদি না ডিজিটাল পদ্ধতিতে সমস্ত তথ্য সঞ্চয় করে রাখা যেত।
বন্ধুগণ,
ভারতীয় সভ্যতা সারা বিশ্বকে একটি পরিবার বলে মনে করে। এই দর্শনের সারকথা যে কতটা সত্যি তা এই মহামারীর মাধ্যমে মানুষ উপলব্ধি করতে পেরেছেন। আর তাই কোভিড টিকাকরণের জন্য আমাদের প্রযুক্তিগত প্ল্যাটফর্ম- যাকে আমরা কোউইন বলছি সেটি ওপেন সোর্সে তৈরি করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই যে কোন দেশ এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারবেন। আপনাদের কাছে এই প্ল্যাটফর্মকে পরিচিত করার প্রথম ধাপ আজকের এই সম্মেলন। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভারত ৩৫ কোটি টিকার ডোজ দিয়েছে। দিন কয়েক আগে আমরা একদিনে ৯০ লক্ষ মানুষকে টিকা দিয়েছি। তারা যে টিকা নিয়েছেন সেটা বোঝানোর জন্য সব জায়গায় এক টুকরো কাগজ নিয়ে ঘোরার কোনো প্রয়োজন নেই।
এ সংক্রান্ত সব তথ্য ডিজিটাল ফরম্যাটে রয়েছে। আর সবথেকে ভালো বিষয় হল যে কেউ এই সফ্টওয়্যারটি তার স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে পারবেন। আজ এই সম্মেলন থেকে আপনারা এর কারিগরি বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় জানতে পারবেন। আমি নিশ্চিত যে আপনারা তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। আর তাই আমি আপনাদের আর বসিয়ে রাখবো না। আমার বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে আপনাদের সকলকে আবারও শুভেচ্ছা জানাই, আজকের এই আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হোক। ‘এক বিশ্ব এক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ ভাবনায় মানবজাতি এই মহামারীকে নিশ্চিতভাবে প্রতিহত করবে।
ধন্যবাদ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।