বাবাসাহেব আম্বেদকর ও রাজেন্দ্র প্রসাদকে বিনম্র শ্রদ্ধা
বাপু সহ অন্যান্য ব্যক্তি, যাঁরা স্বাধীনতা আন্দোলনে আত্মবিসর্জন দিয়েছেন, তাঁদের শ্রদ্ধা নিবেদন
২৬/১১’র ঘটনায় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি
সংবিধান দিবস উদযাপন করতে হবে কারণ আমরা যে পথে অগ্রসর হচ্ছি, তা ঠিক না ভুল, তার নিরন্তর মূল্যায়ন প্রয়োজন
পরিবার-ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলির প্রেক্ষিতে ভারত এমন এক সঙ্কটের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যা সংবিধান অনুগামীদের কাছে উদ্বেগের কারণ
কিভাবে এই দলগুলি, যারা গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে, তারা গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখবে?
স্বাধীনতার পর যদি কর্তব্য পালনের প্রতি আরও গুরুত্ব দেওয়া হ’ত, তা হলে ভালো হ’ত; আজাদি কা অমৃত মহোৎসবের এই সময়ে আমাদের দায়িত্ব পালনের পথে এগিয়ে চলা প্রয়োজন, যাতে আমাদের অধিকার সুরক্ষিত থাকে

মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়, মাননীয় উপ-রাষ্ট্রপতি মহোদয়, মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, মঞ্চে উপস্থিত সকল বরিষ্ঠ গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং সভাগৃহে উপস্থিত সংবিধানের প্রতি সমর্পিত সকল ভাই ও বোনেরা।

আজকের দিনটি বাবাসাহেব আম্বেদকর, ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের মতো দূরদর্শী মহাপুরুষদের প্রণাম জানানোর দিন। আজকের দিনটি এই সভাগৃহকে প্রণাম জানানোর দিন, কারণ এই পবিত্র জায়গায় মাসের পর মাস ধরে ভারতের শ্রেষ্ঠ মনীষারা, অ্যাক্টিভিস্টরা, দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নির্ধারিত করার জন্য চিন্তামন্থন করেছিলেন আর তা থেকে আমরা পেয়েছি সংবিধানরূপী অমৃত যা স্বাধীনতা লাভের এত দীর্ঘকাল পরেও আমাদের এই পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। আজকের দিনটি আমাদের পূজনীয় ‘বাপু’কেও প্রণাম জানানোর। স্বাধীনতা সংগ্রামে যত মানুষ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, বলিদান দিয়েছেন, তাঁদের সকলকেও প্রণাম জানানোর এই সুযোগ। আজ ২৬/১১ আমাদের জন্য একটি এমন দুঃখের দিন যখন দেশের শত্রুরা দেশের ভেতরে এসে মুম্বাইয়ে নৃশংস সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ করেছিল। ভারতের সংবিধানে সূচিত দেশের সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষার দায়িত্ব পালন করে আমাদের অনেক বীর জওয়ান সেই সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে লড়াই করতে করতে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, সর্বোচ্চ বলিদান দিয়েছেন। আমি আজ ২৬/১১ তারিখের সেই সকল আত্মবলিদানকারীদের সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই।

মাননীয় ব্যক্তিবর্গ, কখনও যদি আমরা ভাবি যে আজ যদি আমাদের সংবিধান রচনা করতে হত তাহলে কী হত? স্বাধীনতা আন্দোলনের ছায়া, দেশভক্তির আগ্নেয়গিরি, ভারত বিভাগের বিভীষিকা – এই সমস্ত কিছু সত্ত্বেও দেশভক্তিকে সবার ওপরে রাখতে হবে এই মন্ত্রটাই প্রত্যেকের হৃদয়ে ছিল। বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ এই দেশ, অনেক ভাষা, অনেক কথ্যভাষা, অনেক ধর্ম, অনেক পন্থা, অনেক দেশীয় রাজা, নবাবের শাসন – এইসব কিছু সত্ত্বেও সংবিধানের মাধ্যমে গোটা দেশকে একটি বন্ধনে বেঁধে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করাকে যদি আজকের প্রেক্ষিতে দেখি, তাহলে আমরা কি সংবিধানের একটি পাতাও সম্পূর্ণ করতে পারতাম? কারণ, ‘নেশন ফার্স্ট’এই ভাবনার বিপরীতে স্বাধীনোত্তর কালে দেশের রাজনীতি জাতির ওপর এতটাই প্রভাব সৃষ্টি করে ফেলেছে যে, কখনও কখনও দেশের কল্যাণটাই পেছনের সারিতে থেকে গেছে। আমি সেই মহান ব্যক্তিদের এজন্য প্রণাম জানাতে চাইব, কারণ তাঁদের মনেও হয়তো অনেক ভিন্ন ভিন্ন ভাবনা ছিল, তাঁদের চিন্তার অনেক নিজস্ব ধারাও নিশ্চয়ই ছিল, সেইসব ধারার নিজস্ব ভারও ছিল, কিন্তু তবুও দেশের কল্যাণকে সবার ওপরে রেখে, সবাই মিলে বসে ভারতবাসীকে একটি সংবিধান উপহার দিয়েছেন।

বন্ধুগণ,

আমাদের সংবিধান শুধুই এরকম অনেক ধারার একটি সংকলন গ্রন্থ নয়, আমাদের সংবিধান হাজার হাজার বছরের ভারতের মহান ঐতিহ্য, পরম্পরার অবিরল ধারার আধুনিক অভিব্যক্তি। আর তাই আমাদের জন্য ‘লেটার অ্যান্ড স্পিরিট’-এ সংবিধানের প্রতি সমর্পণ কাঙ্খিত, আর যখন আমরা এই সাংবিধানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি রূপেই গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে দেশের সংসদ পর্যন্ত, যিনি যে দায়িত্বই পালন করি না কেন, আমাদের নিজেদেরকে সমর্পণভাব নিয়ে সব সময় সংবিধানের ‘লেটার অ্যান্ড স্পিরিট’এর যোগ্য করে তুলতে হবে, যোগ্য করে রাখতে হবে। আমরা যখন এটা করি, তখন আমাদের কৃতকর্মে সংবিধানের কোনও ভাবনা কোনভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে কিনা সেটা দেখাও আমাদের কর্তব্য। আর সেজন্য এই সংবিধান দিবসকে আমাদের নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা উচিৎ, যাতে আমরা যা কিছু করছি তা সংবিধানের আলোতে ঠিক কি ভুল - সেটা আমরা বুঝতে পারি। আমরা যে পথে চলছি, সেটি ঠিক কি ভুল; প্রত্যেক বছর সংবিধান দিবস পালনের মাধ্যমে আমাদের নিজেদের মূল্যায়ন করা উচিৎ। সবচাইতে ভালো হত, যদি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র উৎসব শুরু হওয়ার পর থেকেই আমরা ২৬ নভেম্বর দিনটিকে সংবিধান দিবস হিসেবে পালন করার ঐতিহ্য চালু করতে পারতাম! এর ফলে আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সংবিধানের উত্তরাধিকার কিভাবে বহন করা হয়েছে, কিভাবে বিভিন্ন ধারা বিবর্তিত হয়েছে, কারা কোন ধারা বদলেছেন, কোন পরিস্থিতিতে বদলেছেন, কেন বদলেছেন, আমাদেরকে সংবিধান কোথায় নিয়ে যায়, কিভাবে নিয়ে যায়, কাদের জন্য নিয়ে যায় – এই সকল বিষয় যদি আমরা প্রত্যেক বছর আলোচনা করতাম, তাহলে ভারতের সংবিধান, যাকে বিশ্বে একটি জীবন্ত একক হিসেবে মানা হয়, একটি সামাজিক দস্তাবেজ রূপে মানা হয়, বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশের জন্য একটি অনেক বড় শক্তি রূপে যেভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জনগণের সামনে বিবিধ সুযোগের উন্মোচন করে আসছে! কিন্তু কিছু মানুষ এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছেন। অথচ যখন বাবাসাহেব আম্বেদকরের ১৫০তম জন্মজয়ন্তী পালিত হচ্ছিল,… দেশের জন্য এর থেকে পবিত্র উৎসব আর কী হতে পারে? বাবাসাহেব আম্বেদকর দেশের জন্য অনেক বড় নজরানা দিয়েছেন। তাঁকে আমরা চিরকাল এই পবিত্র গ্রন্থের রচয়িতা হিসেবে স্মরণ করে আসছি, আর এই বিষয়ে একটি কথা আমার মনে আছে, যখন সংসদের সভাকক্ষে তাঁকে নিয়ে আমি বলছিলাম, ২০১৫ সালে বাবাসাহেব আম্বেদকরের ১৫০তম জন্মজয়ন্তী ঘোষণা করার সময়েও বিরোধিতা হয়েছিল, সেদিনও বলা হয়েছিল যে ২৬ নভেম্বর দিনটি কোথা থেকে নিয়ে এসেছেন? এসব কেন করছেন? কী প্রয়োজন ছিল? বাবাসাহেব আম্বেদকরের নাম স্মরণ করা হোক আর আপনাদের মনে এই ভাব জেগে উঠুক - এটা যেন কেউ কেউ এখন শোনার জন্য প্রস্তুত নন। আর আজ এখনও বড় হৃদয় নিয়ে, খোলা মনে বাবাসাহেব আম্বেদকরের মতো মানুষ দেশকে যা দিয়ে গেছেন, তাকে পুনঃস্মরণ করার জন্য প্রস্তুত না হওয়া, এটাও একটা চিন্তার বিষয়।

বন্ধুগণ,

ভারত একটি সংবিধানিক গণতান্ত্রিক পরম্পরার দেশ। এ দেশে রাজনৈতিক দলগুলির নিজস্ব একটি গুরুত্ব রয়েছে, আর রাজনৈতিক দলগুলিও আমাদের সংবিধানের ভাবনাগুলিকে প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার একটি প্রধান মাধ্যম। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা দেখেছি, সংবিধানের ভাবনাগুলি বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। সংবিধানের এক একটি ধারাকে আহত করা হয়েছে। যখন কোনও রাজনৈতিক দল তার মধ্যে আভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চরিত্র হারিয়ে ফেলে ..., যখন কোনও রাজনৈতিক দল নিজেই গণতান্ত্রিক চরিত্র হারায়, তখন সেই দল কিভাবে গণতন্ত্রকে রক্ষা করে পারে? আজ দেশে, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, ভারতের যে কোনও প্রান্তে যান, ভারত একটি এমন সঙ্কটের দিকে এগিয়ে চলেছে যা সংবিধানের প্রতি সমর্পিত যে কোনও মানুষের জন্য চিন্তার বিষয়, গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা রাখা মানুষদের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয় আর সেগুলি হল – পারিবারিক দলগুলি, রাজনৈতিক দল, পার্টি ফর দ্য ফ্যামিলি, পার্টি বাই দ্য ফ্যামিলি আর এর থেকে বেশি কিছু বলার প্রয়োজন আমি অনুভব করি না। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলির দিকে তাকান, এই পরিবারতন্ত্র গণতান্ত্রিক ভাবনার বিরোধী। এই পরিবারতন্ত্র ভারতের সংবিধান আমাদের যে শিক্ষা দেয় তার বিপরীত। আর যখন আমি বলি যে পারিবারিক দলগুলি, তখন তার মানে এটা বলছি না যে এক পরিবার থেকে একাধিক মানুষ রাজনীতিতে না আসুক, কখনই বলছি না! যোগ্যতার ভিত্তিতে, জনগণের আশীর্বাদ নিয়ে যে কোনও পরিবারের একাধিক মানুষ রাজনীতিতে এলে সেই দল পরিবারতান্ত্রিক দল হয়ে ওঠে না। কিন্তু যে দল প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে একই পরিবারের বংশপরম্পরায় চলে, যে দলের সমস্ত ব্যবস্থা ও সঞ্চালন ক্ষমতা পরিবারের হাতেই কুক্ষিগত থাকে, সেই গণতন্ত্রহীন দল তো সুস্থ গণতন্ত্রের জন্য সঙ্কট তৈরি করবেই। আর আজ সংবিধান দিবসে সংবিধানের প্রতি বিশ্বাস রক্ষাকারী, সংবিধানকে যাঁরা বোঝেন, সংবিধানের প্রতি সমর্পিতপ্রাণ সমস্ত দেশবাসীকে আমি অনুরোধ জানাই, দেশে সংবিধান বিষয়ে একটি সচেতনতা আনা অত্যন্ত প্রয়োজন।

জাপানে একটা প্রয়োগ হয়েছিল। জাপানে দেখা গিয়েছিল যে ‘পলিটিক্যালি ফ্যামিলি’ বা হাতে গোনা কয়েকটি রাজনৈতিক পরিবারের হাতেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিল। তখন কেউ উদ্যোগ নেন যে তিনি নাগরিকদের সচেতন করবেন আর ‘পলিটিক্যালি ফ্যামিলি’র বাইরের মানুষেরা কিভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন তার চেষ্টা করবেন। এই চেষ্টা সফল হতে তাঁর ৩০-৪০ বছর লেগেছিল। গণতন্ত্রকে সমৃদ্ধ করার জন্য আমাদেরও দেশে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া এবং সংবিধান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে, এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, দেশবাসীকে সচেতন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আর এভাবেই আমাদের দেশে দুর্নীতি, তা সে সংবিধান লঙ্ঘনকারী দুর্নীতি হোক বা অন্য দুর্নীতি, তা দূর করা যাবে। আইনকানুন সবই আছে। কিন্তু দুশ্চিন্তা তখনই হয় যখন বিচারালয় নিজেই কাউকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে ঘোষণা করে দেয় এবং সেই দুর্নীতির জন্য তা শাস্তিও হয়, কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে সেই শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিরও মহিমা কীর্তন চলতে থাকে। দুর্নীতিকে না দেখে প্রমাণিত বাস্তবিকতার বিরুদ্ধে গিয়ে যখন রাজনৈতিক লাভের জন্য সমস্ত মর্যাদা লঙ্ঘন করে, লোকলজ্জা ভেঙে তাঁদের সঙ্গে ওঠা-বসা শুরু হয়ে যায়, তখন দেশের নবীন প্রজন্ম বিভ্রান্ত হতে পারে। তাঁদের মনে ভাবনা জাগতে পারে যে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদানকারী এ ধরনের দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষরাই বুঝি আদর্শ। অর্থাৎ, এই ধরনের মানুষরাও যদি মহিমান্বিতভাবে বাঁচতে পারেন, তাহলে দুর্নীতির পথে চলা বুঝি খারাপ কিছু নয়! এই ২-৪ বছর পরে সবাই তাঁদের মেনে নেয়। আমরা কি এমন সমাজ চাই? আমরা কি এমন ব্যবস্থা, এমন সমাজ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে দিয়ে যেতে চাই, যেখানে দুর্নীতির কারণে কোনও অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পরেও সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হবে? কিন্তু এই ধরনের মানুষদের সার্বজনিক জীবনে প্রতিষ্ঠা প্রদানের যে প্রতিযোগিতা চলছে, এটা আমি মনে করি নবীন প্রজন্মের মানুষদের লুন্ঠনের পথ দেখানো এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থার প্রতি আকৃষ্ট করার পথ। সেজন্য এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন রয়েছে। এটা স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ পূর্তির উৎসবের সময়, এটা স্বাধীনতার অমৃতকাল। এখন পর্যন্ত স্বাধীনতার ৭৫ বছরের মধ্যে দেশ যেসব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে আমাদের তা বুঝতে হবে। ইংরেজরা ভারতের নাগরিকদের অধিকারগুলি পদদলিত করছিল বলেই ভারতের নাগরিকরা তাঁদের অধিকার অর্জনের জন্য লড়াই করেছিলেন। এটাই স্বাভাবিক ছিল আর প্রয়োজনীয়ও।

মহাত্মা গান্ধী সহ প্রত্যেক ভারতবাসী তাঁদের অধিকার অর্জনের জন্য যে লড়াই লড়েছিলেন, সেটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এটাও সত্য যে স্বাধীনতার সংগ্রামে মহাত্মা গান্ধী যেমন অধিকারের জন্য লড়েছিলেন, তেমনই দেশবাসীকে তাঁদের কর্তব্যের জন্য প্রস্তুত করার চেষ্টাও ক্রমাগত করে গেছেন। তিনি ভারতের নাগরিকদের মনে ক্রমাগত সেই বীজ বপনের চেষ্টা করে গেছেন যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখো, বয়স্ক-শিক্ষা চালু করো, মহিলাদের সম্মান করো, নারী গৌরব-গান করো, নারী ক্ষমতায়ন করো, খাদি পরিধান করো, স্বদেশী ভাবনা নিয়ে এগিয়ে চলো, আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার ভাবনা রাখো, নিজেদের নাগরিক কর্তব্যের প্রতি সচেতন থাকো, মহাত্মা গান্ধী ক্রমাগত দেশবাসীকে এইসব কিছুর জন্য প্রস্তুত করে চলেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর মহাত্মা গান্ধী যে কর্তব্যগুলির বীজ বপন করেছিলেন তা যেরকম পল্লবিত, পুষ্পিত হয়ে বটবৃক্ষে পরিণত হওয়া উচিৎ ছিল, দুর্ভাগ্যবশত শাসন ব্যবস্থা এমন তৈরি হয় যে প্রত্যেকেই শুধু অধিকার, অধিকার আর অধিকার নিয়েই কথা বলতে থাকেন। শাসন ব্যবস্থা এমনই তৈরি হয় যে সেখানে শুধু আমাদের অধিকারগুলি পূরণ করা হবে। কিন্তু যদি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এমনটি না করে কর্তব্য সমাপনের ওপর জোর দিত, তাহলে আমার মতে অধিকারগুলি নিজে থেকেই রক্ষিত হতো। কর্তব্যগুলির মাধ্যমে মানুষের মনে যে দায়িত্ববোধ জেগে উঠত, কর্তব্যের মাধ্যমে সমাজের প্রতি যে দায়বদ্ধতা জেগে উঠত, সেটাই আমাদের অধিকার রক্ষার পথে নিয়ে যেত। শুধু অধিকার রক্ষার মনোভাবে কখনও কখনও যাচকবৃত্তি জেগে ওঠে যে, আমার অধিকার পাওয়া উচিৎ। অর্থাৎ, সমাজকে কুন্ঠিত করার চেষ্টা হয়। কর্তব্যভাব থেকে সাধারণ মানুষের জীবনে একটি মনোভাব জেগে ওঠে যে, এটা আমার দায়িত্ব, আমাকে এটা পালন করতে হবে, আর আমাকে করতেই হবে। যখন আমরা কর্তব্য পালন করি, তখন নিজে থেকেই কোনও না কোনও অধিকার সুরক্ষিত হয়ে যায়। কারোর অধিকারকে সম্মান জানানো হয়, কারোর অধিকার গৌরবান্বিত হয় আর এর ফলে কর্তব্যও পালন করা হয় আর অধিকারও সুরক্ষিত থাকে। এভাবে সুস্থ সমাজের রচনা হতে থাকে।

 

 

 

 

 

স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হল, আমরা যেন কর্তব্যগুলির মাধ্যমে অধিকারগুলি রক্ষার পথে এগিয়ে যাই। কর্তব্যের পথই হল এমন পথ যেখানে অধিকার সুনিশ্চিত হয়। কর্তব্যের পথই এমন পথ যেখানে অধিকার সম্মানের সঙ্গে অন্যকে স্বীকৃতি জানায়, আর তাঁকে তাঁর অধিকারও দেয়। সেজন্য আজ যখন আমরা সংবিধান দিবস পালন করছি, তখন আমাদের মধ্যেও এই মনোভাব নিরন্তর জেগে ওঠা উচিৎ যে, আমরা কর্তব্যের পথে এগিয়ে যেতে থাকব। কর্তব্যকে যত বেশি পরিমানে আমরা নিষ্ঠা এবং তপস্যার মাধ্যমে পালন করবো, তত বেশি মানুষের অধিকার সুরক্ষিত হবে। স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যে স্বপ্নগুলি নিয়ে ভারতকে স্বাধীন করেছিল, তাঁদের সেই স্বপ্নগুলি বাস্তবায়নের সৌভাগ্য আজ আমাদের হয়েছে। আমরা সবাই মিলে সেই স্বপ্নগুলি সফল করবো। এই উদ্যোগে কোনও খামতি থাকা উচিৎ নয়। আমি আরেকবার অধ্যক্ষ মহোদয়কে এই গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষের আয়োজনের জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই, শুভেচ্ছা জানাই। তিনি এই কর্মসূচি রচনা করেছেন। এই কর্মসূচি কোনও সরকারি কর্মসূচি ছিল না, এই কর্মসূচি কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ছিল না, এই কর্মসূচি কোনও প্রধানমন্ত্রী আয়োজন করেননি। এই সভার গর্ব এই সভার অধ্যক্ষ। সভার এই স্থানটি গৌরবের স্থান। অধ্যক্ষ পদের নিজস্ব একটি গরিমা রয়েছে। বাবাসাহেব আম্বেদকর নামটির একটি গরিমা রয়েছে। ভারতের সংবিধানের একটি গরিমা রয়েছে। আমরা সবাই যেন সেই মহান রচয়িতা পুরুষদের কাছে প্রার্থনা জানাই, তাঁরা আমাদের এমন শিক্ষা দিন যাতে আমরা সর্বদাই এই অধ্যক্ষ পদের গরিমা অক্ষুণ্ণ রাখতে পারি, বাবাসাহেব আম্বেদকরের গৌরব অক্ষুণ্ণ রাখতে পারি এবং সংবিধানের গৌরব অক্ষুণ্ণ রাখতে পারি। এই আশা নিয়ে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

 

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
India's export performance in several key product categories showing notable success

Media Coverage

India's export performance in several key product categories showing notable success
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
Prime Minister greets valiant personnel of the Indian Navy on the Navy Day
December 04, 2024

Greeting the valiant personnel of the Indian Navy on the Navy Day, the Prime Minister, Shri Narendra Modi hailed them for their commitment which ensures the safety, security and prosperity of our nation.

Shri Modi in a post on X wrote:

“On Navy Day, we salute the valiant personnel of the Indian Navy who protect our seas with unmatched courage and dedication. Their commitment ensures the safety, security and prosperity of our nation. We also take great pride in India’s rich maritime history.”