নমস্কার,
গুজরাটের রাজ্যপাল আচার্য দেবব্রতজি, লোকসভার অধ্যক্ষ শ্রী ওম বিড়লাজি, কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী শ্রী প্রহ্লাদ যোশীজি, রাজ্যসভার উপাধ্যক্ষ শ্রী হরিবংশজি, সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শ্রী অর্জুন মেঘওয়ালজি, গুজরাট বিধানসভার অধ্যক্ষ শ্রী রাজেন্দ্র ত্রিবেদীজি, বিভিন্ন আইনসভার প্রিসাইডিং অফিসারগণ, অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তি, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ।
আজ মা নর্মদার তীরে সর্দার প্যাটেলজির পদতলে, তাঁর সান্নিধ্যে দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের সঙ্গম আয়োজিত হয়েছে।
আজ সংবিধান দিবসে আমার সমস্ত সহ-নাগরিক ভারতবাসীকে শুভেচ্ছা জানাই। আজ আমরা আমাদের সংবিধান রচনার সঙ্গে জড়িত সমস্ত মহিয়সী এবং মহাপুরুষদেরও শ্রদ্ধা জানাই।
আজ যেমন সংবিধান দিবস, তেমনই সংবিধান রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী আপনাদের মতো বিভিন্ন আইনসভার অধ্যক্ষদের, দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের ও প্রিসাইডিং অফিসারদের সম্মেলনও। এ বছর প্রিসাইডিং অফিসারদের সম্মেলনের শতবর্ষ পালিত হচ্ছে। এই গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের জন্য আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
বন্ধুগণ,
আজ ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ এবং বাবাসাহেব আম্বেদকর থেকে শুরু করে সংবিধান সভার সদস্য সমস্ত মহিয়সী এবং মহাপুরুষদের প্রণাম জানানোর দিন, যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা সবাই দেশের সংবিধান পেয়েছি। আজকের দিনটি পূজ্য বাপুজির প্রেরণাকে, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের দায়বদ্ধতাকে প্রণাম জানানোর দিন। এমনই অনেক দূরদর্শী জন-নেতারা স্বাধীন ভারতের নবনির্মাণের পথ নির্ধারিত করেছিলেন। দেশবাসী যেন তাঁদের সেই প্রচেষ্টাগুলিকে মনে রাখেন, সেই উদ্দেশ্য নিয়ে পাঁচ বছর আগে থেকে আমরা ২৬ নভেম্বর দিনটিকে সংবিধান দিবস রূপে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি গোটা দেশকে আমাদের গণতন্ত্রের এই গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের জন্য শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুগণ,
আজকের তারিখটিকে দেশের সব থেকে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের জন্য মনে রাখা হয়। ২০০৮ সালে পাকিস্তান থেকে এসে পাকিস্তানের পাঠানো সন্ত্রাসবাদীরা মুম্বাইয়ে হামলা করেছিল। এই হামলায় অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। অনেক দেশের মানুষ মারা গিয়েছিলেন। আমি সেই মুম্বাই হামলায় মৃত সমস্ত মানুষদের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই। এই হামলায় আমাদের পুলিশের অনেক বীর সদস্যও শহীদ হয়েছেন। আমি তাঁদেরকেও প্রণাম জানাই। মুম্বাই হামলার এই জখম ভারত কখনও ভুলতে পারবে না। ভারত আজ নতুন নীতি ও নতুন রীতিতে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করছে। মুম্বাই হামলার মতো অনেক ষড়যন্ত্রকে বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই ব্যর্থ করে দিচ্ছে। সন্ত্রাসবাদকে যথাযোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য প্রতি মুহূর্তে ভারতের নিরাপত্তা রক্ষায় তটস্থ আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানদেরকেও আমি আজ বন্দনা করি।
বন্ধুগণ,
আমার মাননীয় প্রিসাইডিং অফিসারগণ, আমাদের গণতন্ত্রে আপনাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা প্রত্যেকেই দেশের সমস্ত আইনসভায় প্রতিনিধিত্বকারী জনপ্রতিনিধিদের সংখ্যাধিখ্যের মত নিয়ে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সংবিধান এবং দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে এক একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ রক্ষাকারীর ভূমিকা পালন করেন। বিধায়ক হওয়ার পাশাপাশি আপনারা আইনসভাগুলির অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এভাবে আপনারা আমাদের সংবিধানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ – আইনসভা, শাসন বিভাগ এবং বিচার বিভাগের মধ্যে আরও সামঞ্জস্য এবং সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় খুব বড় ভূমিকা নিতে পারেন। আপনারা সম্মেলনে এই বিষয়ে অনেক আলোচনাও করেছেন। সংবিধান রক্ষায় বিচার বিভাগের নিজস্ব ভূমিকা রয়েছে। তবে অধ্যক্ষ হলেন আইন প্রণয়নকারী সভার মুখ। সেজন্য অধ্যক্ষ একরকমভাবে সংবিধানের সুরক্ষা কবচ, সংবিধানের নিরাপত্তা বলয়ের প্রথম প্রহরীও।
বন্ধুগণ,
গণতন্ত্রের তিনটি অঙ্গের ভূমিকা থেকে শুরু করে মর্যাদা পর্যন্ত সমস্ত কিছুই সংবিধানে বর্ণিত রয়েছে। বিগত শতাব্দীর ৭০-এর দশকে আমরা দেখেছি কিভাবে এই তিনটি অঙ্গের বিচ্ছিন্ন ও বিশেষ ক্ষমতার মর্যাদা বিলুপ্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এর জবাবও দেশের সংবিধান থেকেই এসেছে। বরং জরুরি অবস্থার পরে চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্সের ব্যবস্থাটি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। আইনসভা, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ – তিনটি বিভাগই সেই কালখণ্ড থেকে অনেক কিছু শিখে এগিয়ে গিয়েছে। আজও সেই শিক্ষা ততটাই প্রাসঙ্গিক। বিগত ৬-৭ বছরে আইনসভা, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে সংহতি আরও বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
বন্ধুগণ,
এ ধরনের প্রচেষ্টা সব থেকে বেশি প্রভাব ফেলে জনগণের আস্থার ওপর। কঠিন থেকে কঠিনতর সময়েও জনতার আস্থা এই তিনটি অঙ্গের ওপর বজায় থাকে। এটা আমরা বিগত ৮-৯ মাস ধরে এই বিশ্বব্যাপী মহামারীর সময়েও খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করেছি। ভারতের ১৩০ কোটিরও বেশি জনগণ যে পরিপক্কতার পরিচয় দিয়েছেন, তার একটি বড় কারণ সমস্ত ভারতীয় নাগরিকদের সংবিধানের এই তিনটি অঙ্গের ওপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে। এই আস্থা বৃদ্ধির জন্য নিরন্তর কাজও হয়েছে।
মহামারীর এই দুর্মর সময়ে দেশের সংসদে রাষ্ট্র হিতে বেশ কিছু আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে, আত্মনির্ভর ভারতের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়নের জন্য যে তৎপরতা এবং দায়বদ্ধতা দেখা গেছে তা অভূতপূর্ব। এই সময়ে সংসদের উভয় কক্ষে প্রতিটি অধিবেশনের নির্ধারিত সময়ের থেকেও বেশি কাজ হয়েছে। সাংসদরা নিজেদের বেতন হ্রাস করে দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখিয়েছেন। অনেক রাজ্যের বিধায়করাও তাঁদের বেতনের একটা অংশ দান করে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজেদের অবদান রেখেছেন।
আমি এই সমস্ত প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাতে চাই। কোভিড সংক্রমণের কঠিন সময়ে এই পদক্ষেপগুলি জনগণের আস্থা বাড়াতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।
বন্ধুগণ,
করোনার এই কঠিন সময়ে আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়ার ক্ষমতাও বিশ্ববাসী দেখেছেন। এত বড় স্তরে নির্বাচন হওয়া, নির্ধারিত সময়ে ফলপ্রকাশ, সুচারুরূপে নতুন সরকার গঠন – এই সমস্ত কিছু এত সহজ নয়। আমরা আমাদের সংবিধান থেকে যে শক্তি পেয়েছি তা-ই আমাদের প্রত্যেক কঠিন কাজ সহজ করে তুলতে সাহায্য করে। আমাদের সংবিধান একবিংশ শতাব্দীর পরিবর্তিত সময়েও প্রতিটি সমস্যার মোকাবিলার জন্য যাতে পথ দেখাতে পারে, নতুন প্রজন্মের সঙ্গে এর সংযোগ যাতে বৃদ্ধি পায়, তা সুনিশ্চিত করার দায়িত্বও আমাদের সকলের ওপর ন্যস্ত রয়েছে।
আগামীদিনে ভারতীয় সংবিধানের ৭৫তম বর্ষ পূর্তির দিকে আমরা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছি। তেমনই স্বাধীন ভারতের ৭৫তম বর্ষ পূর্তি উৎসবও এগিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে আমাদের ব্যবস্থাগুলিকে সময়ানুকূল করে তোলার জন্য বড় পদক্ষেপ নিতে আমাদের সঙ্কল্প গ্রহণ করে কাজ করতে হবে। একটি রাষ্ট্র রূপে প্রতিটি সঙ্কল্পকে বাস্তবায়িত করার জন্য আইনসভা, শাসন বিভাগ এবং আইন বিভাগের উন্নততর সামঞ্জস্য রক্ষা করেই এ কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্তের ভিত্তি একটা দাড়ি-পাল্লায় মাপা উচিৎ। তার একটা মাপদণ্ড থাকা উচিৎ। আর সেই মাপদণ্ডটি হল রাষ্ট্র হিত। এই রাষ্ট্র হিতকেই আমাদের দাড়ি-পাল্লায় প্রতিপন্ন করা উচিৎ।
আমাদের এটা মনে রাখতে হবে, যখন কোনও দর্শনে দেশহিত এবং লোকহিত থাকে না শুধু রাজনীতি থাকে, তখন সেই দর্শন দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যখন সবাই ভিন্নভাবে ভাবেন, তখন এর পরিণাম কী হয় তার সাক্ষী … আপনারা দু'দিন ধরে এখানে রয়েছেন, এই সর্দার সরোবর বাঁধও তার একটি অত্যন্ত উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
বন্ধুগণ,
কেভডিয়াতে এসে থাকার ফলে আপনারা সবাই এই সর্দার সরোবর বাঁধের বিশালতা দেখেছেন, উন্নত কারিগরি দেখেছেন, এর শক্তি দেখেছেন। কিন্তু এই বাঁধের কাজ অনেক বছর ধরে থেমে ছিল, ঝুলে ছিল। স্বাধীনতার কয়েক বছর পরই এই বাঁধের কাজ শুরু হয়েছিল। আর কয়েক বছর আগেই মাত্র এর কাজ শেষ হয়েছে যখন আমাদের সামনে স্বাধীনতার ৭৫ বছর বর্ষ পূর্তি হতে চলেছে। কত ধরনের বাধা, কত ধরনের মানুষের তৈরি করা বাধা! কিভাবে সংবিধানকে বিরূপভাবে ব্যবহারের চেষ্টা হয়েছে এবং এতবড় প্রকল্প, জনহিতের প্রকল্পটি এত বছর ধরে ঝুলে ছিল। আজ এই বাঁধের মাধ্যমে একসঙ্গে গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং রাজস্থানের সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। এই বাঁধের মাধ্যমে গুজরাটের ১০ লক্ষ হেক্টর এবং রাজস্থানের ২.৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচ পরিষেবা সুনিশ্চিত হয়েছে। গুজরাটের ৯ হাজারেরও বেশি গ্রাম, রাজস্থান এবং গুজরাটের অনেক ছোট-বড় শহরে বাড়িতে বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল সরবরাহ এই সর্দার সরোবর বাঁধের ফলেই সম্ভব হয়েছে।
আর যখন জলের প্রসঙ্গ উঠলই, তখন আমার একটি কথা মনে পড়ছে। যখন নর্মদার জল নিয়ে অনেক বিবাদ চলছে, এই বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটি অনেক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু বাস্তবে যখন কিছু পথ বেরোয় আর রাজস্থানে জল পৌঁছয় তখন ভৈয়রো সিংজি শেখাওয়াতজি এবং যশবন্ত সিং-জি দু'জনেই গান্ধীনগরে আমার সঙ্গে বিশেষভাবে দেখা করতে এসেছিলেন। তাঁরা আসবেন খবর পেয়ে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে কেন আসছেন। তখন তাঁরা বলেছিলেন যে এসে বলব। তাঁরা এলেন এবং আমাকে অভিনন্দন জানালেন ও এত আশীর্বাদ দিলেন যে আমি অবাক। এত ভালোবাসা, এত আদর কেন? তাঁরা বলেন, আরে ইতিহাস সাক্ষী, সভ্যতার ইতিহাসে জলের এক একটি বিন্দুর জন্য যুদ্ধ হয়েছে, অসংখ্য পরিবারের মধ্যে বিভাজন হয়েছে। কিন্তু কোনও সংঘর্ষ, কোনও লড়াই ছাড়া গুজরাট থেকে নর্মদার জল যেভাবে রাজস্থানে পৌঁছে দিয়েছ, রাজস্থানের ঊষর ভূমিকে যেভাবে সিক্ত করেছ, তা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্ব এবং আনন্দের বিষয়। আর সেজন্যই আমরা তোমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। আপনারা দেখুন, এ কাজ যদি আগে হত, এই বাঁধ থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে তার দ্বারা আজ মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের মানুষই অধিকাংশ উপকৃত হচ্ছেন।
বন্ধুগণ,
এই সমস্ত কিছু অনেক বছর আগেই হতে পারত। জনকল্যাণের ভাবনার পাশাপাশি, উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে যদি কেউ কাজ করে, তার দ্বারা প্রথমদিন থেকেই লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে জনগণ এ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আর আপনারা দেখুন, যারা এরকম করেছে, তাদের মনে কোনরকম অনুশোচনাও নেই। এতবড় জাতীয় ক্ষতি হয়েছে, বাঁধ নির্মাণের খরচ কোথা থেকে কোথায় পৌঁছে গেছে, কিন্তু যারা এর জন্য দায়ী, তাদের চেহারায় অনুশোচনার বিন্দুমাত্র ছাপ নেই। আমাদের দেশকে এই প্রবৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
বন্ধুগণ,
সর্দার প্যাটেলের এই বিশাল মূর্তির সামনে গিয়ে, দর্শন করে আপনারা সকলে হয়তো নিজের মধ্যে নতুন প্রাণশক্তি অনুভব করেছেন। নতুন প্রেরণা পেয়েছেন। বিশ্বের সর্বোচ্চ মূর্তি স্ট্যাচু অফ ইউনিটি, যেটি প্রত্যেক ভারতবাসীর গৌরব বৃদ্ধি করে। আর যখন সর্দার প্যাটেলের মূর্তি তৈরি করেছি, তখন একথা ভেবে করিনি যে তিনি জনসঙ্ঘের সদস্য ছিলেন না, ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্য ছিলেন না। আমরা কোনও রাজনীতিকে এর মধ্যে আসতে দিইনি। আমাদের যে কোনও আইনসভায় যেমন একটি একাত্মভাবের প্রয়োজন হয়, তেমনই গোটা দেশেও একটি একাত্মভাবের প্রয়োজন রয়েছে। সর্দার সাহেবের এই স্মৃতিসৌধ সেই একাত্মভাবের জলজ্যান্ত উদাহরণ। এখানে কোনও রাজনৈতিক অস্পৃশ্যতাকে নাক গলাতে দেওয়া হয়নি। দেশের থেকে বড় কিছু হয় না, দেশের গৌরব থেকে বড় কিছু হয় না।
আপনারা কল্পনা করতে পারেন, ২০১৮ সালে স্ট্যাচু অফ ইউনিটি উদ্বোধনের পর থেকে প্রায় ৪৬ লক্ষ মানুষ এখানে এই সর্দার সাহেবের মূর্তি দেখতে আর প্রণাম জানাতে এসেছেন। করোনার ফলে সাত মাস ধরে এই মূর্তির দর্শন বন্ধ না থাকলে এই পরিসংখ্যান আরও অনেক বেশি হত। মা নর্মদার আশীর্বাদে এই স্ট্যাচু অফ ইউনিটি, এই গোটা কেভডিয়া শহর ভারতের উন্নততম শহরগুলির তালিকায় সামিল হওয়ার দিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। মাত্র কয়েক বছরে একটু আগেই রাজ্যপাল মাননীয় আচার্য দেবব্রতজি বিস্তারিতভাবে এর বর্ণনা করেছেন। মাত্র কয়েক বছরে এই এলাকার কায়াকল্প হয়ে গেছে। যখন উন্নয়নকে সবার ওপরে রেখে কর্তব্যভাবকে সবার ওপরে রেখে কাজ করা হয়, তার পরিণাম এমনই হয়।
আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, এই দু'দিনে আপনারা অনেক গাইডকে দেখেছেন আর এখানকার স্থানীয় অনেকের সঙ্গে হয়তো দেখা হয়েছে। এই সমস্ত নবীন ছেলেমেয়েরা এখানকার জনজাতি পরিবারগুলির সন্তান-সন্ততি। তাঁরা যখন আপনাদেরকে এইসব কিছু সম্পর্কে বর্ণনা করেন, তখন কত যথার্থ শব্দ প্রয়োগ করেন, কত সঠিক উচ্চারণে তা বলেন, এসব হয়তো আপনারা লক্ষ্য করেছেন। আমাদের দেশে এই শক্তি রয়েছে। আমাদের গ্রামে গ্রামে এই ক্ষমতা রয়েছে। শুধু সামান্য ছাই সরানোর প্রয়োজন রয়েছে। তাহলে একদম প্রজ্জ্বলিত হয়ে ওঠে। আপনাদের সামনেই এর উজ্জ্বল উদাহরণ রয়েছে বন্ধুগণ। এই উন্নয়ন যজ্ঞ এখানকার জনজাতি ভাই-বোনেদের নতুন আত্মবিশ্বাস দিয়েছে।
বন্ধুগণ,
আমরা নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে প্রত্যেক নাগরিকের আত্মসম্মান বজায় থাকে এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। ভারতের সংবিধান আমাদের কাছে এই প্রত্যাশাই করে। এটা তখনই সম্ভব যখন আমরা কর্তব্যকে নিজেদের উৎস বলে মেনে নেব। আমাদের কর্তব্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেব। ভারতের সংবিধানে কর্তব্যগুলিকে সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘকাল ধরে এই বিষয়টিকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে সরকারি কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি এমনকি বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি প্রত্যেক ব্যক্তি, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের জন্য এই কর্তব্য পালন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সংবিধানে প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য লিখিত রয়েছে। আর একটু আগেই আমাদের লোকসভার অধ্যক্ষ মাননীয় ওম বিড়লাজি কর্তব্য নিয়ে বিস্তারিতভাবে আমাদের সামনে বলেছেন।
বন্ধুগণ,
আমাদের সংবিধানের অনেকগুলি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কিন্তু একটি অত্যন্ত বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল কর্তব্যগুলি দেওয়া গুরুত্ব। মহাত্মা গান্ধী নিজেও এ সম্পর্কে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। তিনি অধিকার এবং কর্তব্যগুলির মধ্যে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অনুভব করেন। তিনি অনুভব করেন যে আমরা যদি নিষ্ঠার সঙ্গে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করি, তাহলেই আমাদের অধিকারগুলি সুরক্ষিত থাকবে।
এখন আমাদের চেষ্টা থাকা উচিৎ, সংবিধানের প্রতি সাধারণ মানুষের সচেতনতা যেন আরও বৃদ্ধি পায়। সেজন্যই সংবিধান জানা এবং বোঝা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কেওয়াইসি এটা বহুল প্রচারিত শব্দ, সবাই জানে। কিন্তু আমরা জানি কেওয়াইসি-র মানে হল 'নো ইওর কাস্টোমার'। এই শব্দটি ডিজিটাল নিরাপত্তার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা। তেমনই আমরা যদি কেওয়াইসি-র নতুন রূপ দিই – ‘নো ইওর কনস্টিটিউশন', তাহলে এটি আমাদের সাংবিধানিক সুরক্ষা কবচকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে। সেজন্য সংবিধানের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিরন্তর অভিযান চালিয়ে যাওয়াকে আমি দেশের আগামী প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করি। স্কুলে, কলেজে আমাদের ছেলেমেয়েদের এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয় করাতে হবে।
আমি আপনাদের সকলকে এমন সব উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করব যা উদ্ভাবনী পদ্ধতির মাধ্যমে আমাদের যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে ভারতের সংবিধানের বিভিন্ন দিকগুলিকে আরও জনপ্রিয় করে তুলবে।
বন্ধুগণ,
আমাদের দেশের বড় সমস্যা হল সাংবিধানিক এবং আইনের ভাষা অনেকেই বুঝতে পারেন না। যে ভাষায় আইন লেখা হয়েছে, কঠিন শব্দ, লম্বা লম্বা লাইন, বড় বড় অনুচ্ছেদ, ক্লজ, সাব-ক্লজ, অজান্তেই অনেক কঠিন জাল তৈরি করে। আমাদের আইনের ভাষা এতটাই সহজ হওয়া উচিৎ যাতে সাধারণ মানুষও সেগুলি বুঝতে পারেন। আমরা ভারতের জনগণ নিজেদেরকেই সংবিধান উপহার দিয়েছি। সেজন্য এর মাধ্যমে নেওয়া প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি আইনের সঙ্গে সাধারণ মানুষ যেন সরাসরি অনুভব করেন, এটা সুনিশ্চিত করতে হবে।
এক্ষেত্রে আপনাদের মতো দায়িত্বশীল আধিকারিকরা অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারেন। এভাবে সময়ের সঙ্গে যে আইনগুলি তাদের গুরুত্ব হারিয়েছে, সেগুলিকে বাতিল করার প্রক্রিয়াও সহজ হওয়া উচিৎ। একটু আগেই আমাদের শ্রদ্ধেয় হরিবংশজি এ বিষয়ে আমাদের সামনে অনেক সুন্দর সুন্দর উদাহরণ তুলে ধরেছেন। এ ধরনের আইনগুলি আমাদের জীবনকে সহজ করে তোলার পরিবর্তে অনেক বাধা উৎপন্ন করে। আমরা ক্ষমতায় এসে বিগত বছরগুলিতে এমন কয়েকশ' আইন বাতিল করেছি। কিন্তু আমরা কি এমন কোন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি না, যাতে পুরনো আইনগুলিতেই সংবিধানের মতোই সংশোধন করার প্রক্রিয়া প্রতিনিয়ত চলতে থাকে?
বর্তমানে কিছু আইনে 'সানসেট ক্লজ' ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এখন নির্ধারিত বরাদ্দ আইন এবং অন্যান্য কিছু আইনেও এর পরিধি বাড়ানোর জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে। আমি পরামর্শ দিচ্ছি, বিধিবদ্ধ আইন সংহিতাগুলি থেকে পুরনো অব্যবহৃত আইনগুলি অপসারণের পদ্ধতিগত প্রয়োজনীয়তা এড়াতে এই ধরনের ব্যবস্থাও রাজ্য আইনসভায় বিবেচনা করা যেতে পারে। এই ধরনের ব্যবস্থা আইনি বিভ্রান্তিকে ব্যাপকভাবে হ্রাস করবে এবং সাধারণ নাগরিকদের সহজেই সুবিচার পেতে সাহায্য করবে।
বন্ধুগণ,
আরেকটি বিষয়ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর তাহল নির্বাচন। 'এক দেশ এক নির্বাচন' নিছকই একটি আলোচনার বিষয় নয়, এটি আধুনিক ভারতের একটি প্রয়োজন। কয়েক মাস পরপরই ভারতের কোথাও না কোথাও বড় নির্বাচন হতে থাকে। এর ফলে উন্নয়নের কর্মধারা অনেক ক্ষেত্রেই প্রভাবিত হয়। কিরকম প্রভাবিত হয় তা আপনারা খুব ভালোভাবেই জানেন। সেজন্যই 'এক দেশ এক নির্বাচন' বিষয়টি নিয়ে গভীর অধ্যয়ন এবং মন্থনের প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের প্রিসাইডিং অফিসাররা পথ দেখাতে পারেন, গাইড করতে পারেন, নেতৃত্ব দিতে পারেন। এর পাশাপাশি, লোকসভা, বিধানসভা এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র ভোটার তালিকা না হয়ে যেন একটাই ভোটার তালিকা হয়, এই বিষয়টি নির্ধারিত করার পথ সবার আগে প্রস্তুত করতে হবে। আজ প্রতিটি নির্বাচনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভোটার তালিকা তৈরি করতে আমরা কেন খরচ করব? কেন সময় নষ্ট করব? প্রত্যেক ক্ষেত্রেই যেহেতু ভোটারদের ১৮ বছর বয়স হওয়া অত্যন্ত জরুরি, কাজেই এই পার্থক্য কেন থাকবে? আগে যখন বিভিন্ন পর্যায়ে বয়সের পার্থক্য ছিল, তখন পরিস্থিতি অন্যরকম ছিল। এখন আর আলাদা আলাদা ভোটার তালিকার কোনই প্রয়োজন নেই।
বন্ধুগণ,
ডিজিটাইজেশন নিয়ে আমাদের সংসদে এবং অনেক বিধানসভাতে অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এখন সর্বত্র সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশনের সময় এসে গেছে। আপনারা যদি প্রিসাইডিং অফিসার রূপে এক্ষেত্রে আরও উদ্যোগ নেন, তাহলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের বিধায়কগণ ও সাংসদগণ দ্রুতগতিতে এই প্রযুক্তিকে আত্মস্থ করে নেবেন। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপনের আগে আপনারা কি এই সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশনকে লক্ষ্য হিসেবে স্থির করতে পারেন না? এই সম্মেলন থেকেও এ ধরনের কোনও লক্ষ্য নির্ধারিত হতে পারে।
বন্ধুগণ,
আজ দেশের সমস্ত আইনসভার ডেটা শেয়ার করার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে যাতে দেশে একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেস থাকে। সমস্ত আইনসভার কর্মকাণ্ডের একটি রিয়েল টাইম ধারাবিবরণী যাতে সাধারণ নাগরিকরাও পেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা দেশের সমস্ত আইনসভার করা উচিৎ। সেজন্য 'ন্যাশনাল ই-বিধান অ্যাপ্লিকেশন' রূপে একটি আধুনিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আগেই প্রস্তুত করা হয়েছে। আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, এই প্রকল্পটিকে যত দ্রুত সম্ভব আপন করে নিন। এখন আমাদের প্রত্যেক আইনসভার কার্যপ্রণালীতে যত বেশি সম্ভব প্রযুক্তির ব্যবহার এবং পেপারলেস কর্মধারার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বন্ধুগণ,
দেশকে সংবিধান সমর্পণ করার সময় সংবিধান সভা এই বিষয়ে একমত ছিল যে আগামীদিনে ভারতে অনেক নতুন বিষয় এই পরম্পরার সঙ্গে যুক্ত হবে, প্রতিষ্ঠিত হবে। সংবিধান সভা চাইত যে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই সামর্থ্য দেখাক আর নতুন পরম্পরা এর সঙ্গে যুক্ত করতে থাকুক। আমাদের নিজস্ব সংবিধানের শিল্পীদের, স্থপতিদের এই ভাবনার কথা মনে রাখতে হবে। প্রিসাইডিং অফিসার হওয়ার সুবাদে আপনারা সবাই নতুন কী করতে পারেন, কোন নতুন নীতি যুক্ত করতে পারেন যাতে এই লক্ষ্যে প্রত্যেকেই কিছু না কিছু অবদান রাখতে পারেন, যাতে দেশের গণতন্ত্র একটি নতুন শক্তি অর্জন করে।
বিধানসভার অধিবেশনে আলোচনার সময় গণ-অংশীদারিত্ব কিভাবে বাড়ানো যায়, আজকের নবীন প্রজন্মকে কিভাবে বেশি করে যুক্ত করা যায়, এ বিষয়েও ভাবনা-চিন্তা করা যেতে পারে। এখনও লোকসভা ও বিধানসভাগুলির পেছনের গ্যালারিতে অনেকেই এসে বসেন, অধিবেশনের কর্মকাণ্ড দেখেন, কিন্তু এই প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আরও বেশি গণ-অংশীদারিত্বের দিকে ঠেলে দেওয়া যেতে পারে। যে বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, যদি সেই বিষয়ে আগ্রহী ব্যক্তি এবং বিশেষজ্ঞদের সেদিন আমন্ত্রণ জানানো হয়, তাহলে পুরো বিষয়টার প্রতি অনেক বেশি সুবিচার করা যাবে, সকলেই লাভবান হবেন। মনে করুন কোনও বিষয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের ডাকা যেতে পারে। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য বিষয় থাকলে তার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদেরও ডাকা যেতে পারে। মহিলাদের স্বার্থ সম্পর্কিত কোনও বিষয় থাকলে এই বিষয়ে যাঁরা বিশেষজ্ঞ ও আগ্রহী, তাঁদেরকে আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে।
এভাবে কলেজগুলিতে আয়োজিত মক পার্লামেন্টকে উৎসাহ জুগিয়ে আমরা এগুলিকে বড় মাত্রায় প্রচারিত করতে পারি এবং আমরা নিজেরাও তার সঙ্গে যুক্ত হতে পারি। কল্পনা করুন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে যদি মক পার্লামেন্ট হয়, আর আপনারা নিজেরাও সেটি সঞ্চালনে সাহায্য করেন, তা থেকে ছাত্রছাত্রীরা কতটা প্রেরণা পাবে। আপনাদের অভিজ্ঞতা থেকে কত কিছু শিখতে পারবে! এগুলি আমার উপদেশ মাত্র। আপনারা অনেক অভিজ্ঞ। আমার বিশ্বাস, আপনাদের এই অভিজ্ঞতা এ ধরনের অনেক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের আইনসভা এবং আমাদের ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।
আরেকবার এই কর্মসূচিতে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমি লোকসভার মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়কে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি এমনি তাঁকে কিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম, কিন্তু অধ্যক্ষ সাহেব কেভডিয়াতে এই বিশাল কর্মসূচির আয়োজন করেছেন। গুজরাটের জনগণের আতিথেয়তা খুব ভালোই হয়। এমনি আমাদের দেশের প্রত্যেক প্রান্তের মানুষের এই আতিথেয়তা অত্যন্ত সুবিদিত। এতে কারোর কোনও ত্রুটি থাকার কথা নয়। এটা আমার বিশ্বাস। কিন্তু এই অঞ্চল ঘুরে দেখার পর এবং এই সম্মেলনে অংশগ্রহণের পর আপনাদের মনে হয়তো অনেক নতুন চিন্তার উদ্রেক হয়েছে। সেই বিষয়গুলি এখানেও আলোচনা করতে পারেন। আর তা সফলভাবে করতে পারলে, এটি এই আয়োজনের উদ্দেশ্যকে আরও বেশি সদর্থক করে তুলবে। আর এখানে যা দেখেছেন ও যা অনুভব করেছেন তা নিজের নিজের আইনসভায়, নিজের নিজের এলাকার মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিলে গোটা দেশ উপকৃত হবে। একটি দেশ রূপে আমাদের যে গৌরবপূর্ণ স্থান তৈরি হয়েছে, এতে আমাদের সকলের অবদান রয়েছে। আপনারা হয়তো জানেন যে এখানে সর্দার সাহেবের এই বিশাল মূর্তি তৈরীর পেছনেও রয়েছেন ভারতের প্রত্যেক গ্রামের কৃষকরা। তাঁরা তাঁদের ফসলের ক্ষেতে যে সমস্ত সরঞ্জাম ব্যবহার করতেন, সেই পুরনো সরঞ্জামগুলি একত্রিত করে ভারতের ৬ লক্ষ গ্রাম থেকে যত লোহা এসেছে সেগুলি গলিয়ে এই মূর্তি তৈরি করার কাজে লেগেছে। অর্থাৎ, এই মূর্তির সঙ্গে ভারতের প্রত্যেক গ্রাম, প্রত্যেক কৃষকের অবদান জড়িয়ে রয়েছে। বন্ধুগণ, মা নর্মদা এবং সর্দার সাহেবের সান্নিধ্যে এই দু'দিন থেকে আপনারা যে প্রেরণা সংগ্রহ করেছেন তা আপনাদের যেন সারা জীবন প্রেরণা জোগায় – এই কামনা রেখে আপনাদের সবাইকে আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই!!
অনেক অনেক ধন্যবাদ!!
অনেক শুভকামনা।