নমস্কার,
এই ঐতিহাসিক কর্মসূচিতে আমাদের মধ্যে উপস্থিত বিহারের মাননীয় রাজ্যপাল শ্রী ফাগু চৌহানজী, রাজ্যের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী নীতিশ কুমারজী, বিধানসভার অধ্যক্ষ শ্রী বিজয় সিনহাজী, বিহার বিধান পরিষদের কার্যকারি অধ্যক্ষ শ্রী অবধেশ নারায়ণ সিং, উপ-মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী রেণু দেবীজী, তারাকিশোর প্রসাদজী, বিরোধী দলনেতা শ্রী তেজস্বী যাদবজী, উপস্থিত সকল মন্ত্রী ও বিধায়কগণ, অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,
বিহার বিধানসভা ভবনের শতবর্ষ উপলক্ষে আপনাদের সকলকে, সমস্ত বিহারবাসীকে অনেক অনেক শুভকামনা। বিহারের চরিত্র হ’ল, যাঁরা বিহারকে ভালোবাসেন, বিহার তাঁদের ভালোবাসাকে কয়েকগুণ করে ফিরিয়ে দেয়। আমার সৌভাগ্য যে আজ বিহার বিধানসভায় আমিই প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে উপস্থিত হতে পেরেছি। আমি এই ভালোবাসার জন্য বিহারের প্রত্যেক নাগরিককে আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই। মুখ্যমন্ত্রী ও অধ্যক্ষ মহোদয়কেও হৃদয় থেকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই।
বন্ধুগণ,
কিছুক্ষণ আগে শতাব্দীর স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এই স্তম্ভ বিহারের গৌরবময় অতীতের প্রতীক হয়ে থাকবে। পাশাপাশি, এটি বিহারের কোটি কোটি মানুষের আকাঙ্খাকেও প্রেরণা যোগাবে। কিছুক্ষণ আগে বিহার বিধানসভা মিউজিয়াম এবং বিধানসভা গেস্ট হাউসেরও শিলান্যাস হয়েছে। আমি এই উন্নয়নকর্মগুলির জন্য নীতিশ কুমারজী এবং বিজয় সিনহাজীকে অন্তর থেকে অভিনন্দন জানাই। আজ বিধানসভা পরিসরে শতাব্দী পারকে কল্পতরু রোপণ করারও সুন্দর অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। কল্পতরু সম্পর্কে কথিত রয়েছে যে, এটি আমাদের আশা-আকাঙ্খা বাস্তবায়নের একটি বৃক্ষ। গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে এই ভূমিকা সংসদীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে পালন করতে হয়। আমি আশা করি, বিহার বিধানসভা তার এই ভূমিকাকে একই রকমভাবে পালন করে যাবে। বিহার ও দেশের উন্নয়নে তাঁর অমূল্য অবদান রাখতে থাকবে।
বন্ধুগণ,
বিহার বিধানসভার একটি নিজস্ব ইতিহাস রয়েছে। এই বিধানসভা ভবনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার আগে এই বিধানসভা থেকেই গভর্নর সত্যেন্দ্র প্রসন্ন সিনহাজী স্বদেশী শিল্পোদ্যোগগুলিকে উৎসাহিত করতে সবাইকে স্বদেশী চরকা আপন করে নেওয়ার আবেদন করেছিলেন। স্বাধীনতার পর এই বিধানসভায় জমিদারি উন্মূলন অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। এই পরম্পরাকে এগিয়ে নিয়ে নীতিশজীর সরকার বিহার পঞ্চায়েতি রাজের মতো অধ্যাদেশ জারি করেছে। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে দেশের প্রথম রাজ্য হিসাবে বিহার তার পঞ্চায়েতি রাজে মহিলাদের জন্য ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ চালু করেছে। গণতন্ত্র থেকে শুরু করে সমাজ জীবন পর্যন্ত সমান অংশীদারিত্ব এবং সমান অধিকার নিয়ে কিভাবে কাজ করা যেতে পারে, বিহার বিধানসভা তার উদাহরণ। আজ যখন আমি এই বিধানসভা পরিসরে দাঁড়িয়ে আপনাদের সঙ্গে এই বিধানসভা ভবন নিয়ে কথা বলছি, তখন আমি একথাও ভাবছি যে, ১০০ বছরে এই ভবন কত মহান ব্যক্তিত্বের বক্তব্যের সাক্ষী রয়েছে। সকলের নাম নেওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু এই ভবনটি ইতিহাস রচয়িতাদের দেখেছে, আর নিজেও অনেক ইতিহাস রচনা করেছে। কথিত আছে যে, বাণীর প্রাণশক্তি কখনও সমাপ্ত হয় না। এই ঐতিহাসিক ভবনে এরকম অনেক কথা বলা হয়েছে, বিহারের উত্থানের সঙ্গে জড়িত এমন অনেক সঙ্কল্প নেওয়া হয়েছে, যা আজও আমাদের সকলের সামনে প্রাণশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে উপস্থিত হয়েছে। আজও যেন সেই বাণীগুলি, সেই শব্দগুলি প্রতিনিয়ত গুঞ্জরিত হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
বিহার বিধানসভা ভবনের এই শতাব্দী উৎসব এমন সময়ে হচ্ছে, যখন দেশ তার স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছে। বিধানসভা ভবনের শতবর্ষ আর দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর এটা শুধুই সময়ের সংযোগ নয়, এটি সংযোগের মিলিত অতীত-ও। আর এর মধ্যে সদর্থক বার্তাও রয়েছে। একদিকে বিহারে চম্পারণ সত্যাগ্রহের মতো আন্দোলন হয়েছে। অন্যদিকে, এই ভূমি ভারতকে গণতন্ত্রের শিষ্টাচার এবং আদর্শের পথে চলার নিশানা দেখিয়েছে। কয়েক দশক ধরে আমাদের একথা বলার চেষ্টা করা হচ্ছে যে, বিদেশি শাসক এবং বিদেশি ভাবনা থেকেই ভারতে গণতন্ত্রের উদ্ভব। এমনকি, আমাদের অনেক ভারতীয়রাও এ ধরনের কথা বলেন। কিন্তু, যে কোনও ব্যক্তি যখন এসব কথা বলেন, তখন তাঁরা বিহারের ইতিহাস ও বিহারের ঐতিহ্যের উপর পর্দা ফেলার চেষ্টা করেন। যখন বিশ্বের বড় ভূ-ভাগ সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিকে গুটি গুটি পায়ে এগোচ্ছিল, তখন ভারতের বৈশালীতে স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সঞ্চালিত হচ্ছিল। যখন বিশ্বের অন্যান্য ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক অধিকারগুলিকে বোঝা ও সচেতন হওয়া শুরু হয়েছিল, তখন ভারতের লিচ্ছবি এবং বৃজিসংঘ – এর মতো গণরাজ্য নিজের সমৃদ্ধির শীর্ষে ছিল।
বন্ধুগণ,
ভারতের গণতন্ত্রের ধারণা ততটাই প্রাচীন, যতটা প্রাচীন এই দেশ, যতটা প্রাচীন আমাদের সংস্কৃতি। হাজার হাজার বছরে আগে লেখা আমাদের বেদে বলা হয়েছে ‘ত্বাং ভিশো ভৃনতাং রাজ্যায় ত্বা – মিমাঃ প্রদীশঃ পঞ্চদেবীঃ’ অর্থাৎ, রাজাকে যেন সমস্ত প্রজা মিলিতভাবে বেছে নেন, আর বেছে নেন বিদ্বানদের সমিতিগুলি। এই কথাগুলি বেদে বলা হয়েছে। কয়েক হাজার বছর আগে গ্রন্থিত পুস্তকেও বলা হয়েছে। আজও আমাদের সংবিধানে সাংসদ ও বিধায়কদের নির্বাচন, মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করেই অনুষ্ঠিত হয়। একটি ভাবনারূপে, আমাদের দেশে গণতন্ত্র সেজন্য হাজার হাজার বছর ধরে জীবিত রয়েছে। কারণ, ভারত গণতন্ত্রকে সাম্যের মাধ্যম বলে মনে করে। ভারত সহ-অস্তিত্ব ও সৌহার্দ্যের ভাবনায় ভরসা রাখে। আমরা সৎ ব্যক্তির উপর ভরসা রাখি, সমবায়ের উপর ভরসা রাখি, সামঞ্জস্যে ভরসা রাখি এবং সমাজে সংহতি শক্তির উপর ভরসা রাখি। সেজন্য আমাদের বেদগুলি এই মন্ত্রও দিয়ে গেছে – ‘সং গচ্ছংধ্বং সং ওহদধ্বং, সং ওহ মনাংসি জানতাম’।।
এর মানে হ’ল – আমরা মিলেমিশে চলবো, সবাই মিলে বলবো, পরস্পরের মনকে, পরস্পরের ভাবনাকে জানবো ও বুঝবো। এই বেদ মন্ত্রেই একটু এগিয়ে বলা হয়েছে ‘সমানো মন্ত্রঃ সমিতিঃ সমানী। সমানং মনঃ সহ চিতমেষাং’।। এর মানে হ’ল – আমরা মিলেমিশে এক রকম ভাবনাচিন্তা করবো। আমাদের সমিতি ও সভাগুলি এবং সদন কল্যাণভাবের জন্য যেন সমভাবাপন্ন হয়। আমাদের হৃদয়ও সমতা রক্ষা করে। হৃদয় দিয়ে গণতন্ত্রকে স্বীকার করার এই বিরাট ভাবনা একটি রাষ্ট্র রূপে ভারতই প্রস্তুত করতে পেরেছে। সেজন্য আমি যখনই বিশ্বের নানা প্রান্তে ভিন্ন ভিন্ন দেশে যাই, বড় বড় আন্তর্জাতিক মঞ্চে উপস্থিত থাকি, তখন আমি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলি; কারণ, আমাদের কানে কোনও না কোনও কারণে একটি শব্দ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমাদের মনের গঠন প্রক্রিয়াকেও এক জায়গায় স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের বারংবার শোনানো হয়েছে যে, আমরা বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। আর আমরাও সেকথা বারবার শোনার ফলে সেকথা স্বীকার করে নিয়েছি। কিন্তু, একথাটি অসম্পূর্ণ। সম্পূর্ণ কথাটি হ’ল, আমি বিশ্বের যে কোনও আন্তর্জাতিক মঞ্চে যখন যাই, অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলি যে, বিশ্বে গণতন্ত্রের জননী হ’ল ভারত। সেজন্য আমাদের প্রত্যেক ভারতবাসী, বিশেষ করে বিহারের জনগণের সারা পৃথিবীতে গর্বের সঙ্গে বলা উচিৎ - বিশ্বে গণতন্ত্রের জননী হ’ল ভারত। এক্ষেত্রে বিহারের গৌরবময় ঐতিহ্য পালি ভাষায় লিখিত ঐতিহাসিক দস্তাবেজগুলি জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ। বিহারের এই বৈভবকে কেউ মুছে দিতে পারবেন না, কেউ লুকাতেও পারবেন না। এই ঐতিহাসিক ভবনটি বিহারের সেই গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে গত ১০০ বছর ধরে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। সেজন্য আমি মনে করি যে, আজ এই ভবনটিও আমাদের সকলের প্রণামের দাবিদার।
বন্ধুগণ,
এই ভবনের ইতিহাসের সঙ্গে বিহারের সেই চেতনা যুক্ত রয়েছে, যা পরাধীনতার সময়েও নিজস্ব গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সমাপ্ত হতে দেয়নি। এর নির্মাণের সঙ্গে এবং তার পরবর্তী যত ঘটনাক্রম যুক্ত হয়েছে, সেগুলি আমাদের বার বার স্মরণ করা উচিৎ। কিভাবে শ্রীকৃষ্ণ সিংজী বা শ্রী বাবু রাজেন্দ্র প্রসাদ ইংরেজদের সামনে শর্ত রেখেছিলেন যে, তাঁরা তখনই সরকার গঠন করবেন, যখন বৃটিশ শাসক নির্বাচিত সরকারের কাজকর্মে নাক গলাবে না। কিভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতের সম্মতি ছাড়াই দেশকে যুদ্ধে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। তার প্রতিবাদে শ্রী বাবুজী ও তাঁর সরকার পদত্যাগ করেছিল। এই পদক্ষেপের জন্য বিহারের প্রত্যেক মানুষ গর্ববোধ করেন। এই ঘটনা সর্বদাই এই বার্তা বহন করেছে যে, বিহার গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কখনও কোনও কিছুকে স্বীকার করতে পারে না। ভাই ও বোনেরা, আমরা সবাই দেখেছি যে, কিভাবে স্বাধীনতার পরও বিহার তার গণতান্ত্রিক নিষ্ঠা নিয়ে ততটাই অটল, ততটাই দায়বদ্ধ থেকেছে। বিহার স্বাধীন ভারতকে ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ রূপে প্রথম রাষ্ট্রপতি উপহার দিয়েছে। লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ, কর্পুরি ঠাকুর ও বাবু জগজীবন রাম – এর মতো মহান দেশ নায়কদের জন্ম এই ভূমিতেই হয়েছে। যখন দেশে সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করার চেষ্টা করা হয়েছে, তখনও তার বিরুদ্ধে বিহারই সবার আগে এগিয়ে বিরোধিতার বিউগল বাজিয়েছে। জরুরি অবস্থার সেই কালো দিনগুলিতে বিহারের ভূমি দেখিয়ে দিয়েছে যে, ভারতে গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ করার চেষ্টা কখনও সফল হতে পারে না। আর সেজন্য আমি মনে করি যে, বিহার যত সমৃদ্ধ হবে, ভারতের গণতান্ত্রিক শক্তিও ততটাই শক্তিশালী হবে। বিহার যতটা শক্তিশালী হবে, ভারতও ততটাই সামর্থ্যবান হয়ে উঠবে।
বন্ধুগণ,
স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব আর বিহার বিধানসভার শতবর্ষ পূর্তির এই ঐতিহাসিক সময়ে আমাদের সকলের জন্য, প্রত্যেক জনপ্রতিনিধির জন্য আত্মবিবেচনা ও আত্মনিরীক্ষণের বার্তাও নিয়ে আসে। আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে যতটা শক্তিশালী করবো, আমাদের স্বাধীনতাও ততটাই শক্তিশালী হবে। আমাদের অধিকারগুলিও ততটাই শক্তিশালী হবে। আজ একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্ব দ্রুতগতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে। নতুন নতুন প্রয়োজনের নিরিখে ভারতের জনগণের, আমাদের যুবসম্প্রদায়ের আশা-আকাঙ্খাও ক্রমে বাড়ছে। আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলিকে এর হিসাবে দ্রুতগতিতে কাজ ক্রতে হবে। আজ যখন আমরা স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে একটি নতুন ভারতের সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছি, তখন এই সংকল্পগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদের সংসদ এবং বিধানসভাগুলির উপরও বর্তায়। এর জন্য আমাদের সততা ও নিষ্ঠা নিয়ে দিনরাত পরিশ্রমের প্রয়োজন রয়েছে। দেশের সাংসদ রূপে, রাজ্যের বিধায়ক রূপে, আমাদের এটাও দায়িত্ব যে আমরা গণতন্ত্রের সামনে উপস্থিত হওয়া সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে মিলেমিশে দূর করবো। পক্ষ ও বিপক্ষের ব্যবধানের উপরে উঠে দেশের জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য আমাদের সমস্বরে কথা বলতে হবে। জনগণের হিতে তাঁদের স্বার্থ জড়িত বিষয়গুলি নিয়ে লোকসভা ও বিধানসভাগুলি যেন ইতিবাচক আলাপ-আলোচনার কেন্দ্র হয়ে ওঠে, বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপের জন্য আমাদের সকলের আওয়াজ যেন ততটাই জোরদার হয় – এই লক্ষ্যে আমাদের নিরন্তর এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের আচরণেও আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক পরিপক্কতা পরিস্ফূট হয়। সেজন্য বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের পাশাপাশি, আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে পরিপক্ক গণতন্ত্র রূপেও নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
বন্ধুগণ,
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আজ দেশে সেই লক্ষ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আমি যদি সংসদের কথা বলি, তা হলে বিগত কয়েক বছরে সংসদে সাংসদদের উপস্থিতি এবং সংসদের উৎপাদনশীলতায় রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি হয়েছে। একটু আগে বিজয়জী বিহার বিধানসভায় বিধায়কদের উপস্থিতি এবং বিধানসভার উৎপাদনশীলতা নিয়ে যে বর্ণনা দিয়েছেন, সেখানেও আমরা এই ইতিবাচকতার প্রমাণ পেয়েছি।
বন্ধুগণ,
এমনিতে সংসদেও বিগত বাজেট অধিবেশনেও লোকসভার উৎপাদনশীলতা ১২৯ শতাংশ ছিল। রাজ্যসভাতেও ৯৯ শতাংশ উৎপাদনশীলতা নথিভুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ, দেশ নিয়মিত নতুন নতুন সংকল্প নিয়ে কাজ করছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর আমরা সবাই জানি যে, যখন মানুষ এটা দেখেন, তাঁরা যাঁদেরকে নির্বাচন করে জনপ্রতিনিধি হিসাবে পাঠিয়েছেন, তাঁরা পরিশ্রম করছেন, আইনসভায় জনগণের কল্যাণে তাঁদের বক্তব্য অত্যন্ত সুচারুভাবে পেশ করছেন, তখন তাঁদের মনে গণতন্ত্রের উপর বিশ্বাস আরও বৃদ্ধি পায়। এই বিশ্বাস বাড়ানো আমাদের সকলের দায়িত্ব।
বন্ধুগণ,
সময়ের সঙ্গে আমাদের নতুন নতুন ভাবনা, নতুন নতুন দর্শনের প্রয়োজন হয়। সেজন্য যেভাবে সময় ও প্রজন্ম বদলায় গণতন্ত্রকেও নতুন নতুন মাত্রা যুক্ত করে যেতে হয়। এই পরিবর্তনগুলির জন্য আমাদের শুধু নতুন নতুন নীতির প্রয়োজন হয় না, পুরনো নীতি ও আইনগুলিকেও সময়ের নিরিখে বদলাতে হয়। বিগত বছরগুলিতে আমাদের দেশের সংসদ এরকম প্রায় ১ হাজার ৫০০টি আইন বাতিল করেছে। এই আইনগুলি সাধারণ মানুষের জীবনে যে সমস্যা সৃষ্টি করছিল, দেশের উন্নয়নকে যেভাবে বাধা দিচ্ছিল, এই আইনগুলি বাতিল করার ফলে সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে। আরেকটি নতুন বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে। রাজ্য স্তরেও এরকম অনেক পুরনো আইন রয়েছে, যেগুলি অনেক বছর ধরে চলছে। আমাদের সবাইকে মিলেমিশে সেগুলিকে যাচাই করার প্রয়োজন রয়েছে।
বন্ধুগণ,
বিশ্বের জন্য একবিংশ শতাব্দী ভারতের শতাব্দী। আমরা ক্রমাগত শুনে আসছি, অনেকের কাছ থেকেই শুনেছি যে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এরকম কথা বলছেন। কিন্তু, ভারতবাসীর জন্য আমি বলবো, এই শতাব্দী কর্তব্যের শতাব্দী। আমাদের এই শতাব্দীতে আগামী ২৫ বছরে নতুন ভারতের সোনালী লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে। আমাদের কর্তব্যই আমাদের এই লক্ষ্যগুলি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে। সেজন্য এই ২৫ বছর দেশের জন্য কর্তব্য পথে এগিয়ে চলার বছর। কর্তব্য ভাবনা নিয়ে নিজেদেরকে সমর্পণ করার অমৃত সময়। আমাদের নিজেদেরকে নিজেদের জন্য, নিজেদের সমাজের জন্য, নিজের দেশের জন্য কর্তব্যের কষ্ঠি পাথরে বিচার করতে হবে। আমাদের কর্তব্যের পরাকাষ্ঠাকে অতিক্রম করতে হবে। আজ ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে যত কীর্তি স্থাপন করছে, আজ ভারত যত দ্রুতগতিতে আন্তর্জাতিক শক্তি রূপে উঠে আসছে, এর পেছনে কোটি কোটি ভারতবাসীর কর্তব্য নিষ্ঠা ও কর্তব্য ভাবনা রয়েছে। গণতন্ত্রে আমাদের আইনসভা জনগণের ভাবনার প্রতিনিধিত্ব করে। সেজন্য দেশবাসীর কর্তব্য নিষ্ঠা যেন আমাদের আইনসভাগুলিতে এবং জনপ্রতিনিধিদের আচরণেও সর্বদা পরিস্ফুট হয়। আমরা আইনসভায় যেমন আচরণ করবো, যতটা কর্তব্য নিয়ে আইনসভায় নিজেদের বক্তব্য রাখবো, দেশবাসীও ততটাই প্রাণশক্তি ও প্রেরণা পাবেন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা আমাদের নিজেদের কর্তব্যগুলিকে নিজেদের অধিকারগুলি থেকে আলাদা মনে করা উচিৎ নয়। আমরা নিজেদের কর্তব্যের জন্য যতটা পরিশ্রম করবো, আমাদের অধিকারগুলিও ততটাই শক্তিশালী হয়ে উঠবে। আমাদের কর্তব্য নিষ্ঠাই আমাদের অধিকারগুলির একমাত্র গ্যারান্টি। সেজন্য আমাদের মতো সকল জনপ্রতিনিধিদের কর্তব্য পালনের সংকল্পকেও পুনরুচ্চারণ করতে হবে। এই সংকল্পই আমাদের এবং আমাদের সমাজের সাফল্যের পথকে প্রশস্ত করবে। আজ যখন আমরা দেশের অমৃত সংকল্পগুলি নিয়ে এগিয়ে চলেছি, তখন আমাদের নিজেদের কর্তব্যে, আমাদের পরিশ্রমে যেন কোনও ঘাটতি না থাকে। একটি দেশ রূপে আমাদের একতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম ব্যক্তির জীবনও যেন সহজ হয়ে ওঠে। দেশের দলিত-পীড়িত-শোষিত-বঞ্চিত, জনজাতি প্রত্যেকেই যেন সবধরনের পরিষেবা পান – তা সুনিশ্চিত করার সংকল্প আমাদের সকলকেই নিতে হবে। আজ সবাইকে পাকা বাড়ি, পানীয় জল, সবাইকে বিদ্যুৎ, সবাইকে চিকিৎসা – এরকম লক্ষ্য নিয়ে দেশ কাজ করছে। এটাই আমাদের সকলের মিলিত দায়িত্ব। বিহারের মতো সামর্থ্যবান ও প্রাণশক্তিতে ভরপুর রাজ্যে গরীব, দলিত-পীড়িত-শোষিত-বঞ্চিত, জনজাতি এবং মহিলাদের উত্থান বিহারকেও দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর বিহার যখন এগোবে, তখন ভারতও তার সোনালী অতীতকে পুনরুচ্চারণ করে উন্নয়ন ও সাফল্যের নতুন উচ্চতাকে স্পর্শ করবে। এই ভাবনা নিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক আপনারা সবাই আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন – সেজন্য আমি রাজ্য সরকারকে, অধ্যক্ষ মহোদয়কে আর উপস্থিত সমস্ত বরিষ্ঠ নাগরিকদের হৃদয় থেকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই। অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। পাশাপাশি, এটা ১০০ বছরের যাত্রা উদযাপনের অন্তিম মুহূর্ত। আগামী ১০০ বছরের জন্য এই মুহূর্ত যেন নতুন প্রাণশক্তির কেন্দ্র হয়ে ওঠে – এই প্রত্যাশা নিয়ে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
অনেক অনেক শুভকামনা।