জয় গুরুদেব ! মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপাল শ্রী মঙ্গুভাই প্যাটেল, মুখ্যমন্ত্রী ভাই শিবরাজজি, সদগুরু সেবা সঙ্ঘ ট্রাস্টের সদস্যবৃন্দ, ভদ্র মহোদয় ও ভদ্র মহোদয়াগণ !
আজ আমি চিত্রকূটের এই পবিত্র স্থান আবার পরিদর্শনের সুযোগ পেয়েছি। এটি হল, ভগবান শ্রীরামের আবাসস্থল, যেখানে তিনি মা সীতা এবং লক্ষ্ণণজির সঙ্গে বসবাস করতেন। এখানে আসার আগে আমার শ্রী রঘুবীর মন্দির এবং রাম জানকী মন্দির পরিদর্শনের সৌভাগ্য হয়েছে এবং হেলিকপ্টার থেকে কামাড়গিরি পর্বতকেও শ্রদ্ধা জানিয়েছি। র্যাঞ্চোরদাসজি এবং অরবিন্দ ভাই-এর স্মৃতিসৌধে পুস্পার্ঘ্য নিবেদন করে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। সমস্ত গরিব মানুষ, শোষিত এবং আদিবাসীদের হয়ে মানব সেবায় অবদানের জন্য আজ আমি শ্রী সদগুরু সেবা সঙ্ঘের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আজ যে জানকীকুন্ড হাসপাতালের নতুন শাখার উদ্বোধন করা হযেছে, তা লক্ষ লক্ষ রোগীকে নতুন জীবন দেবে। আজ এই বিশেষ দিনে অরবিন্দ ভাই-এর স্মরণে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে একটি স্ট্যাম্পও প্রকাশ করা হয়েছে। এই মুহূর্তটি আমাদের কাছে অত্যন্ত গর্বের।
বন্ধুগণ,
যে কোনো মানুষের ভালো কাজ সবসময়ই প্রশংসিত হয়। আর যদি সেই কাজ যদি অনন্যসাধারণ হয়, তবে তাঁর মৃত্যুর পরেও তার রেশ থেকে যায়। আমি খুশি যে, অরবিন্দ ভাইয়ের পরিবার সেবামূলক কাজ অব্যাহত রেখেছেন। অরবিন্দ ভাই একজন শিল্পপতি ছিলেন। মুম্বই বা গুজরাত, যেখানেই হোক না কেন, শিল্পমহল এবং কর্পোরেট জগতের সর্বত্র তিনি তাঁর প্রভাব বিস্তার করে গেছেন। তাঁর অনন্য প্রতিভা সম্পর্কে সবাই অবহিত। অরবিন্দ ভাই এখানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। তাই এই স্থানকে তাঁর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। বিপুল সংখ্যক সন্ন্যাসী এখানে এসেছেন। তাঁর পরিবারের অনেক সদস্যও উপস্থিত রয়েছেন। চিত্রকূট সম্পর্কে বলা হয়, ভগবান রামের আশীর্বাদধন্য চিত্রকূট পর্বতের কামাড়গিরি সমস্ত সমস্যাকে দূরে সরিয়ে দেয়। শ্রী র্যাঞ্চোরদাসজির নিঃস্বার্থ কর্মযোগ আমার মতো লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। তাঁর বাণী অত্যন্ত সহজ সরল – ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দাও, দৃষ্টিহীনকে দৃষ্টি দাও। এই মন্ত্রকে সঙ্গী করে পূজনীয় গুরুদেব ১৯৪৫ সালে প্রথমবার চিত্রকূটে এসেছিলেন এবং ১৯৫০ সালে তিনি এখানে প্রথম চক্ষু শিবির করেছিলেন। শত শত রোগী এই শিবিরে অস্ত্রোপচার করে তাঁদের দৃষ্টি ফিরে পেয়েছেন।
আজ এটি আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হতে পারে। কিন্তু, ৭ দশক আগে এই জায়গাটি ছিল পুরোপুরি জঙ্গলে ঘেরা। কোনো রাস্তা ছিল না, বিদ্যুৎ ছিল না, ছিল না প্রয়োজনীয় সম্পদও। এই অরণ্যে এ ধরনের কাজের জন্য প্রয়োজন ছিল সাহস, আত্মবিশ্বাস এবং সেবার চেতনা। আজ এই পবিত্র ভূমিতে যেসব প্রকল্প মানুষের সেবা করে চলেছে, তা সম্ভব হয়েছে র্যাঞ্চোরদাসজির আত্মপ্রত্যয়ের জন্য। তিনি এখানে শ্রীরাম সংস্কৃত বিদ্যালয় স্থাপন করেছেন। তার কয়েক বছর পর শ্রী সদগুরু সেবা সঙ্ঘ ট্রাস্ট গঠন করেছেন। যখনই কোনো দুর্যোগ দেখা দিয়েছে, গুরুদেব ঢাল হয়ে তার মোকাবিলা করেছেন। ভূমিকম্প, বন্যা কিংবা খরা, যাই হোক না কেন, তাঁর উদ্যোগের ফলে বহু গরিব মানুষ নতুন জীবন পেয়েছেন।
আমার পরিবারের সদস্যবৃন্দ,
অরবিন্দজি ছিলেন একজন অত্যন্ত সাধারণ মানুষ এবং খুব সাধারণ জীবন যাপন করতেন। বিহারে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময় র্যাঞ্চোরদাসজি অরবিন্দ ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। আজ আমরা অরবিন্দ ভাইয়ের জন্মশতবর্ষ উদযাপন করছি। তিনি যখনই যে দায়িত্ব নিয়েছেন, তা ১০০ শতাংশ নিষ্ঠা নিয়ে সম্পন্ন করেছেন। তিনি বিশাল শিল্প সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন এবং মফতলাল গোষ্ঠীকে এক নতুন উচ্চ্তায় নিয়ে গিয়েছিলেন। দেশের প্রথম পেট্রো কেমিক্যাল কমপ্লেক্স গড়ে তুলেছিলেন অরবিন্দ ভাই। আজ তাঁর অনেক সংস্থা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। এমনকি কৃষি ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা উচ্চ প্রশংসিত হয়েছে। অরবিন্দ ভাই দেশ-বিদেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ খেতাব এবং সম্মান পেয়েছেন।
আমার পরিবারের সদস্যবৃন্দ,
অরবিন্দ ভাই তাঁর লক্ষ্যকে মিশনে পরিণত করেছিলেন এবং সারাজীবন ধরে তা অনুসরণ করে গেছেন। আজ শ্রী সদগুরু সেবা ট্রাস্ট, মফতলাল ফাউণ্ডেশন, রঘুবীর মন্দির ট্রাস্টের মতো বহু সংস্থা আপনাদের গোষ্ঠীর অধীনে কাজ করে চলেছে।
বন্ধুগণ,
সূচনার সময় সদগুরু চক্ষু হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ছিল ১২। আজ এখানে প্রতি বছর ১৫ লক্ষ রোগীর চিকিৎসা হয়। বিপুল সংখ্যক রোগীর অস্ত্রোপচারও হয়। কাশীতেও এই প্রতিষ্ঠান সেবা কার্য চালিয়ে যাচ্ছে।
আমার পরিবারের সদস্যবৃন্দ,
যে কোনো সেবা কাজের মূল কথা হল, নিষ্ঠা ও ত্যাগ। অরবিন্দ ভাইয়ের বিশেষ গুণ হল, অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতেও তিনি কাজ করে গেছেন। রাজকেট বা আমেদাবাদ, যেখানেই হোক না কেন, গুজরাতের সর্বত্র আমি তাঁর কাজ দেখেছি। গুজরাতের সমরকান্থা জেলার আদিবাসী প্রভাবিত এলাকা ভিলোদায় আমি অরবিন্দ ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ করি। এলাকাটি অত্যন্ত উষ্ণ। অরবিন্দ ভাই সেখানে এসেছিলেন এবং সারাদিন সেখানে থেকে সেবা কাজে অংশ নিয়েছিলেন। রঘুবীর মন্দিরে লক্ষ লক্ষ মানুষকে খাদ্যদান, রেশনের ব্যবস্থা, গুরুকুলে হাজার হাজার শিশুর শিক্ষার ব্যবস্থা, জানকীকুণ্ড হাসপাতালে লক্ষ লক্ষ রোগীর চিকিৎসা, এগুলির কোনোটিই সাধারণ কাজ নয়।
আমার পরিবারের সদস্যগণ,
চিত্রকূটের এই ভূমি আমাদের নানাজি দেশমুখের কর্মস্থল হিসেবে পরিচিত। অরবিন্দ ভাইয়ের মতো তিনিও আদিবাসী সমাজের উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আদিবাসী সমাজের কল্যাণে দেশজুড়ে ব্যাপক প্রয়াস চালানো হচ্ছে। বিরসা মুণ্ডার জন্মশতবার্ষিকীতে আদিবাসী গৌরব দিবস উদযাপন শুরু হয়েছে। আদিবাসীদের অবদান তুলে ধরতে দেশজুড়ে তৈরি করা হচ্ছে আদিবাসী সংগ্রহালয়। আদিবাসী সন্তানদের উন্নতমানের শিক্ষার জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে একলব্য আবাসিক বিদ্যালয়। অরবিন্দ ভাইয়ের জন্মশতবার্ষিকীতে আমি আবার তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তাঁর কাজ আমাদের কাছে সবসময় অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। জয় সিয়া রাম।
প্রধানমন্ত্রী মূল ভাষণটি দিয়েছেন হিন্দিতে।