নমস্কার!
‘এনার্জি ফর সাসটেনেবল গ্রোথ’ বা ‘সুদূরপ্রসারী উন্নয়নের জন্য শক্তি উৎপাদন’ – এটা আমাদের পুরাতন পরম্পরা থেকে প্রেরণা নিয়ে শুরু করা অভিযান যা ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তা এবং আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের পথও। ভারতের স্বচ্ছ দৃষ্টিকোণ হল, সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন যা সুদূরপ্রসারী শক্তির উৎসগুলি থেকেই সম্ভব হয়ে উঠতে পারে। গ্লাসগো-তে আমরা ২০৭০ সালের মধ্যে ‘নেট জিরো’ স্তর পর্যন্ত পৌঁছনোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। আমি সিওপি-২৬-এ ‘সাসটেনেবল লাইফস্টাইল’ বা দীর্ঘস্থায়ী জীবনশৈলীকে উৎসাহ যোগানোর জন্য ‘লাইফ’ মিশনের কথা বলেছিলাম। ‘লাইফ’ মানে লাইফস্টাইল ফর এনভায়রনমেন্ট -এর দূরদৃষ্টি সামনে রেখেছিলাম। আমরা ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স বা আন্তর্জাতিক সৌর সঙ্ঘের মতো গ্লোবাল কোলাবোরেশনকেও নেতৃত্ব দিচ্ছি। নন-ফসিল এনার্জি ক্যাপাসিটির ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছি ৫০০ গিগাওয়াট। ২০৩০ পর্যন্ত আমাদের ‘ইন্সটল্ড এনার্জি ক্যাপাসিটি’বা ইন্সটল করা শক্তি ক্ষমতার ৫০ শতাংশ আমাদের নন-ফসিল এনার্জি থেকে অর্জন করতে হবে। ভারত নিজের জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে, সেটিকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিইনি ,বরং, একটি সুযোগ হিসেবে নিয়েছি। আমাদের জন্য এটিকে একটি বড় সুযোগ বলে মনে করছি। এই দৃষ্টিকোণ নিয়ে ভারত বিগত কয়েক বছর ধরে কাজ করছে আর এবারের বাজেটে এই ভাবনাকে ‘পলিসি লেভেল’ বা নীতির পর্যায়ে উন্নীত করা হয়েছে।
বন্ধুগণ,
এবারের বাজেটে সৌরশক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যে ‘হাই এফিশিয়েন্সি সোলার মডিউল ম্যানুফ্যাকচারিং’বা উচ্চ-দক্ষতাসম্পন্ন সৌর মডিউল উৎপাদননের জন্য ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ ঘোষণা করা হয়েছে। এই বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে সৌর মডিউল এবং এর সংশ্লিষ্ট পণ্যের উৎপাদন এবং গবেষণা ও উন্নয়নে ভারতকে একটি ‘গ্লোবাল হাব’ হিসেবে গড়ে তুলতে সুবিধা হবে।
বন্ধুগণ,
আমরা ‘ন্যাশনাল হাইড্রোজেন মিশন’ও ঘোষণা করেছি। ভারতের কাছে প্রচুর মাত্রায় ‘রিনিউয়েবল এনার্জি পাওয়ার’ বা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির একটি ইনহেরেন্ট অ্যাডভান্টেজ বা ফল্গুধারা রয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত বিশ্বে গ্রিন হাইড্রোজেন বা পরিবেশ-বান্ধব হাইড্রোজেন উৎপাদনের হাব হয়ে উঠতে পারে। হাইড্রোজেন ইকো-সিস্টেমে ফার্টিলাইজার, রিফাইনারিজ এবং টান্সপোর্টেশন সেক্টরের মধ্যে ইন্টার-কানেক্টেড রয়েছে। এটা একটি এমন ক্ষেত্র, যাতে বেসরকারি ক্ষেত্র দ্বারা উদ্ভাবনকে উৎসাহ যোগানো উচিৎ যাতে ভারতের সম্পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহার করা যায়।
বন্ধুগণ,
পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির পাশাপাশি শক্তি সংরক্ষণ নিয়েও একটি বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে উঠে এসেছে। সেজন্য সমাধান খোঁজার উদ্দেশে বাজেটে সংরক্ষণ ক্ষমতায় ক্রমোন্নয়নের গতি বজায় রাখার জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এ বছরের বাজেটে ‘ব্যাটারি সোয়াপিং পলিসি’ আর ‘ইন্টার-অপারেবিলিটি স্ট্যান্ডার্ডস’ সম্পর্কেও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এগুলির মাধ্যমে ভারতে ইলেক্ট্রিক ভেহিকেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যাগুলি হ্রাস পাবে। ‘প্লাগ-ইন চার্জিং’-এ বেশি সময় এবং বেশি টাকা খরচ হয় কারণ ইলেক্ট্রিক ভেহিকেলের দামের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ব্যাটারিরই হয়। সেজন্য সোয়াপিং-এর মাধ্যমে ইলেক্ট্রিক ভেহিকেলের ‘আপ-ফ্রন্ট কস্ট’ বা অগ্রিম খরচ কমে যাবে। এক্ষেত্রে মোবাইলের ব্যাটারি উৎপাদন এবং সৌরশক্তি সংরক্ষণ – এসব ক্ষেত্রেও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রেও আমি মনে করি আমরা সবাই মিলে কাজ করতে পারি।
বন্ধুগণ,
সুদূরপ্রসারী উন্নয়নের জন্য শক্তি উৎপাদনের পাশাপাশি শক্তি সংরক্ষণ প্রক্রিয়াও ততটাই প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে আরও বেশি ‘এনার্জি এফিশিয়েন্ট এ/সি’ কিভাবে উৎপাদিত হবে আর বেশি করে এনার্জি এফিশিয়েন্ট হিটার, গিজার, ওভেন ইত্যাদি কিভাবে উৎপাদিত হবে সে সম্পর্কে আমাদের অনেক কিছু করার প্রয়োজন রয়েছে বলে আমার মনে হয়। যেখানে বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়, সেখানে এনার্জি এফিশিয়েন্ট পণ্য উৎপাদনকে আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
আমি আপনাদের একটি উদাহরণ দিচ্ছি। যখন ২০১৪ সালে আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন দেশে এলইডি বাল্বের দাম ৩০০ - ৪০০ টাকা ছিল। আমাদের সরকার এলইডি বাল্বের উৎপাদন বাড়িয়েছে, আর উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে স্বাভাবিকভাবেই এর দাম কমে ৭০-৮০ টাকা হয়ে গেছে। ‘উজালা যোজনা’র মাধ্যমে আমরা দেশে প্রায় ৩৭ কোটি এলইডি বাল্ব বিতরণ করেছি। এর ফলে দেশে প্রায় ৪৮ হাজার মিলিয়ন কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়েছে। আমাদের গরীব এবং মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির বিদ্যুতের বিলে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে আর প্রতি বছর প্রায় ৪ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ হ্রাস পেয়েছে। আমরা পরম্পরাগত স্ট্রিট লাইট প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ স্মার্ট এলইডি বাল্ব দিয়ে রিপ্লেস করেছি। এতে আমাদের দেশে যে স্থানীয় প্রশাসনগুলি রয়েছে, মহানগরের পৌরসভা ও অন্যান্য শহরের পুরসভাগুলির পাশাপাশি পঞ্চায়েতগুলিতে স্ট্রিট লাইট রিপ্লেস করার ফলে তাদের বছরে বিদ্যুতের বিলে ৬ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এক্ষেত্রেও বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়েছে আর প্রায় ৫০ লক্ষ টন কার্বন নিঃসরণ হ্রাস পেয়েছে। আপনারা কল্পনা করতে পারেন, এই একটি প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা পরিবেশ দূষণ রোধে কত বড় সাফল্য পেয়েছি?
বন্ধুগণ,
কোল গ্যাসিফিকেশনকে বা কয়লার গ্যাসে রূপান্তরণকে আমরা কয়লার একটি বিকল্প রূপে ভাবতে পারি। এ বছরের বাজেটে কোল গ্যাসিফিকেশনের জন্য চারটি পাইলট প্রোজেক্ট রাখা হয়েছে যাতে প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এক্ষেত্রে আরও উদ্ভাবনের প্রয়োজন রয়েছে। আমি চাই যে এক্ষেত্রে কর্মরত সকলে কোল গ্যাসিফিকেশনকে ভারতের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে আরও নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে কিভাবে উন্নত করা যায়, সাশ্রয়ী করে তোলা যায়, তা নিয়ে চেষ্টা করে যাবে।
এমনভাবেই আপনারা দেখছেন সরকার একটি বড় মিশন মোডে ইথানল ব্লেন্ডিং বা পেট্রল ও ডিজেলে ইথানল মিশ্রণের মাত্রাকে নিরন্তর বাড়াচ্ছে এবং আরও বাড়ানোর উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। এবারের বাজেটে আনব্লেন্ডেড ফুয়েল বা অমিশ্রিত জ্বালানির ওপর এক্সট্রা ডিফারেন্সিয়াল এক্সাইজ ডিউটি বা অতিরিক্ত আবগারি শুল্ক চাপানো হয়েছে। আমাদের দেশীয় চিনি কারখানাগুলি এবং ডিস্টিলারিগুলিকে আরও বেশি আধুনিক করে তোলার প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রেও আমাদের প্রযুক্তির উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সেজন্য আমাদের এ ধরনের ডিস্টিলিং প্রসেস নিয়ে কাজ করতে হবে যাতে পটাশ এবং কম্প্রেসড বায়ো-গ্যাসের মতো অতিরিক্ত বাই-প্রোডাক্টও আমরা পাই।
কয়েক সপ্তাহ আগে আমি বারাণসীতে আর কিছুদিন আগে ইন্দোরেও গোবর্ধন প্ল্যান্টের উদ্বোধন করেছি। আমরা কি আগামী দু’বছরে দেশে ৫০০ থেকে ১ হাজারটি এরকম গোবর্ধন প্ল্যান্ট বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপন করতে পারি? আমাদের শিল্পোদ্যোগগুলি যেন এ ধরনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য ‘ইনোভেটিভ ইনভেস্টমেন্ট’ বা উদ্ভাবক বিনিয়োগ করার প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি।
বন্ধুগণ,
আমাদের শক্তির চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে। সেজন্য পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির লক্ষ্যে ‘ট্রানজিশন’ বা রূপান্তরণ ভারতের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ। একটি অনুমান অনুসারে, ভারতে ২৪ থেকে ২৫ কোটি বাড়ি রয়েছে। আমরা কিভাবে ‘ক্লিন কুকিং’ বা পরিবেশ-বান্ধব রান্নার ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে যাব? আমি মনে করি, আমাদের স্টার্ট-আপগুলি এই কাজ অনেক সহজেই এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। আপনাদের জন্য সৌর উনুনের ক্ষেত্রেও অনেক বড় বাজার অপেক্ষা করছে যা ‘ক্লিন কুকিং মুভমেন্ট’ বা পরিবেশ-বান্ধব রান্নার অভিযান চালানোর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, গুজরাটে একটি সফল প্রয়োগ হয়েছে। গুজরাটে যত জলের খাল বা নহর রয়েছে সেগুলিতে আমরা সৌর প্যানেল লাগিয়েছি। ফলে জমির খরচ বেঁচে গেছে, জলের সাশ্রয়ও হয়েছে, বিদ্যুতও উৎপাদন হয়েছে। অর্থাৎ, বহুমুখী লাভ হয়েছে। এরকমই উদ্যোগ এখন দেশের অন্যান্য অঞ্চলে প্রবাহিত নদীগুলি এবং সরোবরগুলিতে করা যেতে পারে। এই উদ্যোগকে আমাদের যথাসম্ভব বাড়াতে হবে।
আরও একটি কাজ আমরা বাড়িতে বসেই করতে পারি। আপনাদের বাড়ির চারপাশে যত বাগান রয়েছে কিংবা ব্যালকনি রয়েছে, আমাদের যে গার্ডেনিং কনসেপ্ট রয়েছে সেখানে কি আমরা ‘সোলার ট্রি’ বা সৌর বৃক্ষ লাগাতে পারি? প্রত্যেক পরিবারের একটি নিজস্ব সোলার ট্রি থাকবে। এরকম একটি নতুন ভাবনা আমরা গড়ে তুলতে পারি। যে সৌর বৃক্ষটি বাড়ির মোট প্রয়োজনের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ, কিংবা কোনও কোনও ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুতের যোগান দিতে পারবে, আর বাড়িরও একটা পরিচয় গড়ে উঠবে যে এটা সৌর বৃক্ষসম্পন্ন বাড়ি। অর্থাৎ, পরিবেশের প্রতি সচেতন নাগরিকের বাড়ি। একটি সমাজকে ‘ক্রেডিবল সোসাইটি’ বা ভরসাযোগ্য সমাজ রূপে আমরা নিজেদেরকে গড়ে তুলতে করতে পারি আর এই বিষয়টিকে অত্যন্ত সহজে ও সুন্দরভাবে গড়ে তোলা যেতে পারে। এই সৌর বৃক্ষের ভাবনাকে আমি আমাদের যে কনস্ট্রাকশন বা গৃহ নির্মাণকারী ব্যক্তিরা রয়েছেন, বিল্ডাররা রয়েছেন, আর্কিটেক্টরা রয়েছেন, তাঁদেরকেও বলব যে বাড়ি তৈরিতে একটি নতুন পদ্ধতি কি আমরা যুক্ত করতে পারি? আপনারা ভাবুন।
আমাদের দেশে মাইক্রো-হাইড্রাল প্রোজেক্টস বা ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সংখ্যা অনেক। উত্তরাখণ্ড-হিমাচল প্রদেশে আমরা দেখেছি ‘ঘরাট’ নামক একটি ‘পনচাক্কি’ বা জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের চাকা থাকে। ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে আরও গবেষণা করে আমরা এগুলির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন কিভাবে বাড়াতে পারি, তা নিয়েও চিন্তাভাবনা করা উচিৎ। বিশ্বে সব ধরনের ন্যাচারাল রিসোর্সের শর্টেজ হতে চলেছে, সব ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব অবশ্যম্ভাবী। এক্ষেত্রে সার্কুলার ইকনমি একটি সময়ের চাহিদা, আর একে জীবনের অনিবার্য অঙ্গ করে গড়ে তুলতেই হবে। আমাদের জন্য প্রত্যেক ক্ষেত্রে উদ্ভাবন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, আর নতুন নতুন পণ্য উৎপাদনও প্রয়োজনীয়। সেজন্য আমি দেশের বেসরকারি ক্ষেত্রকে ভরসা দিতে চাই যে সরকার আপনাদের সকল প্রচেষ্টায় আপনাদের সঙ্গে আজ যেভাবে দাঁড়িয়ে আছে, ভবিষ্যতেও তেমনই দাঁড়িয়ে থাকবে।
আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা শুধু যে নতুন নতুন লক্ষ্য অর্জন করব তা-ই নয়, সম্পূর্ণ মানবতাও প্রদর্শন করব।
বন্ধুগণ,
আমি একথাও বলতে চাইব যে, সাধারণতঃ বাজেট তৈরি হওয়ার অনেক আগেই অনেক আলাপ-আলোচনা হয়। আমাদের টিভি চ্যানেলগুলি সংসদের যে বাজেট কর্মসূচি সেটা দেখাতে ব্যস্ত থাকে। আমরা দেখেছি সংসদে কত ভালো চিন্তাভাবনার মন্থন হয় আর তা থেকেও বাজেটেরও সামান্য লাভ হয়। বাজেট রচনার সময় খুব ভালো ভালো ভাবনা সঙ্কলিত হয়। কিন্তু এখন আমরা অন্যদিকে গুরুত্ব দিয়েছি। চলুন, বাজেট তো তৈরি হয়ে গেছে। এখন বাজেটে আর কোনও পরিবর্তন আসবে না। এটি আমাদের সংসদের সম্পত্তি, আর এক্ষেত্রে সমস্ত সিদ্ধান্ত সংসদই ঠিক করে। আমাদের হাতে যে দু’মাস সময় থাকে, ১ এপ্রিল থেকে বাজেট বাস্তবায়িত হবে, এই দু’মাসে আমরা এভাবে বাস্তবায়নের রোডম্যাপকে সুন্দরভাবে ব্যবহার করার দিকে কিভাবে জোর দেব, আর প্রকল্পটিকে খুব ভালোভাবে কিভাবে বাস্তবায়িত করব – সেটা দেখতে হবে। বাজেটকে আমরা কত ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারি এবং কিভাবে করতে পারি – সেই চেষ্টা করতে হবে।
সরকারের ভাবনাচিন্তার প্রক্রিয়া এবং তৃণমূল স্তরে কাজ করার পদ্ধতি, আর বাণিজ্যিক জগতের পদ্ধতির মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে। আজকের সেমিনারে সেই উত্তরগুলি পুনরুচ্চারণের চেষ্টা থাকতে হবে, যা সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের, তাঁদের থিঙ্কিং প্রসেস বা চিন্তা প্রক্রিয়া আর সরকারের যত নির্ণয়, সেগুলির চিন্তা প্রবাহ। এতে অন্তর্বিরোধ থাকলে চলবে না। এক্ষেত্রে পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব রাখলেও চলবে না। যদি এমনটি সম্ভব হয়, তাহলে অনেক কিছুই দ্রুতগতিতে বাস্তবায়িত হবে। কচিৎ-কদাচিৎ দু-একটি বাক্য এমন শুনতে পাই, ফাইলগুলিতে এরকম শব্দের কথা জানা গেছে, যেগুলি সংশোধন করতে ছয় থেকে আট মাস লেগে যাবে, আর বাজেটের নির্ধারিত সময়ও ফুরিয়ে যাবে!
আমরা এই সমস্ত ভুলগুলি থেকে শিক্ষা নিয়ে সেগুলি থেকে নিজেদের বাঁচাতে চাই। সেজন্যই আমরা এই ওয়েবিনারগুলির আয়োজন করেছি। এটি আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে কোনও জ্ঞান দেওয়ার জন্য আয়োজন করিনি। আমাদের বাজেট কি তা বোঝানোর জন্যও করছি না। আমাদের থেকে বেশি করে আপনারা ইতিমধ্যেই বুঝে নিয়েছেন। আমরা আপনাদের বক্তব্য শোনার জন্যই এ ধরনের ওয়েবিনারের আয়োজন করি, আর শোনার ক্ষেত্রেও বাজেটের জন্য কোনও পরামর্শ নয়, বরং যে বাজেট তৈরি হয়ে গেছে তাকে সম্পূর্ণরূপে কিভাবে আমরা বাস্তবায়িত করতে পারি। আর এই বাস্তবায়ন অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে কিভাবে করব যাতে যত বেশি সম্ভব ফল আমরা সঙ্গে নিয়ে যেতে পারি। আমাদের যেন কোনও ব্যুহ না রচনা করতে হয় তা সুনিশ্চিত করতে এই ওয়েবিনার থেকে যত বেশি সম্ভব ফল নিয়ে আমরা কিভাবে এগিয়ে যাব –সেটা দেখতে হবে। আমাদের এমন কোনও ব্যুহ রচনা করলে চলবে না যা বিনা কারণেই সময় খারাপ করে দেয়। সেজন্যই অধিক গতি আনার জন্য আমি চাই আপনারা কংক্রিট প্র্যাক্টিক্যাল একজাম্পল, আরও সাজেশন দিয়ে এই ওয়েবিনারকে সফল করে তুলবেন।
আপনাদের সবাইকে আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভকামনা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।