ভারতমাতার জয়!
ভারতমাতার জয়!
ভারতমাতার জয়!
“মন্যম ভিরুডু, তেলেগু জাতি যুগপুরুষুডু, “তেলেগু বীর লেওয়ারা, দীক্ষ বুনী সাগরা” স্বতন্ত্র সংগ্রামলো, য়াবত ভারতা-বনিকে, স্পুর্তিধায়-কঙ্গা, তিলিচিন-অ, মনা নায়কুড়ু, অল্লুরী সীতারাম রাজু, পুট্টি-ন, ই নেল মীদা, মন মন্দরম, কলুসুকোভডম, মন অদ্রুষ্টম।”
এই ঐতিহাসিক কর্মসূচিতে আমাদের সঙ্গে উপস্থিত অন্ধ্রপ্রদেশের মাননীয় রাজ্যপাল শ্রী বিশ্বা ভূষণ হরিচন্দনজি, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী জগন মোহন রেড্ডিজি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগীগণ, মঞ্চে উপস্থিত অন্য সকল বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং আমার অন্ধ্রপ্রদেশের প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আপনাদের সবাইকে নমস্কার।
যে মাটির ঐতিহ্য এত মহান, আমি আজ সেই মাটিকে প্রণাম জানাতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। আজ একদিকে দেশ স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে অমৃত মহোৎসব পালন করছে, অন্যদিকে আল্লুরি সীতারাম রাজু গারুর ১২৫তম জন্ম জয়ন্তীর শুভলগ্নও উপস্থিত হয়েছে। সংযোগবশতঃ এই সময় দেশের স্বাধীনতার জন্য যে রম্পা বিপ্লব হয়েছিল তার শতবর্ষ হতে চলেছে। আমি এই ঐতিহাসিক শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে ‘মন্যম ভিরুডু’ বা মহামান্য বীর আল্লুরি সীতারাম রাজুর চরণে প্রণাম জানিয়ে গোটা দেশের পক্ষ থেকে তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছি। আজ তাঁর পরিবারের সদস্যরাও আমাদের আশীর্বাদ দেওয়ার জন্য এখানে এসেছেন, এটা আমাদের সৌভাগ্য। এই মহান পরম্পরার পরিবারের পায়ের ধুলো পাওয়ার সৌভাগ্য আমাদের সকলের হয়েছে। আমি অন্ধ্রপ্রদেশের এই পবিত্র মাটির মহান জনজাতি পরম্পরাকে, এই পরম্পরা থেকে জন্মগ্রহণ করা সকল মহান বিপ্লবীদের এবং আত্মবলিদানকারীদেরকেও সাদর প্রণাম জানাই।
বন্ধুগণ,
আল্লুরি সীতারাম রাজু গারুর ১২৫তম জন্ম জয়ন্তী আর রম্পা বিপ্লবের শতবর্ষ আমরা সারাবছর ধরে উদযাপন করবো। পণ্ডরঙ্গীতে আল্লুরি সীতারাম রাজু গারুর জন্মস্থানকে নতুন করে সাজিয়ে তোলা, মোগল্লুতে আল্লুরি ধ্যানমন্দির পুনরুদ্ধার, এই কাজগুলি আমাদের অমৃত ভাবনার প্রতীক। আমি এই সকল প্রচেষ্টার জন্য আর এই বার্ষিক উৎসবের জন্য আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। বিশেষ করে আমি সেই সকল বন্ধুদের অভিনন্দন জানাই, যাঁরা আমাদের মহান গৌরবকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উপলক্ষ্যে আমরা সবাই সংকল্প নিয়েছি যে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস আর তার প্রেরণার সঙ্গে সবার পরিচয় করাব। আজকের এই কর্মসূচি তারই একটি প্রতিবিম্ব।
বন্ধুগণ,
স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু হাতেগোনা কিছু বছরের নয়, শুধু কিছু অঞ্চলের নয় কিংবা মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের ইতিহাস শুধু নয়, এই ইতিহাস ভারতের কোণায় কোণায় এবং প্রতিটি ধূলিকণার ত্যাগ, তপস্যা এবং আত্মবলিদানের ইতিহাস, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, আমাদের বৈচিত্র্যের শক্তির ইতিহাস, আমাদের সাংস্কৃতিক শক্তির ইতিহাস। একটি দেশ রূপে আমাদের ঐক্যবদ্ধতার প্রতীক। আল্লুরি সীতারাম রাজু গারু ভারতের সাংস্কৃতিক এবং জনজাতির পরিচয়, ভারতের শৌর্য, ভারতের নানা আদর্শ এবং মূল্যবোধের প্রতীক। আল্লুরি সীতারাম রাজু গারু ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর সেই বিচারধারার প্রতীক যা হাজার হাজার বছর ধরে এই দেশকে একসূত্রে গেথে চলেছে। আল্লুরি সীতারাম রাজু গারু-র জন্ম থেকে শুরু করে তাঁর আত্মবলিদানের মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর গোটা জীবনটাই আমাদের সকলের জন্য প্রেরণাস্বরূপ। তিনি তাঁর জীবন জনজাতি সমাজের নানা অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, তাঁদের সুখ-দুঃখের জন্য আর দেশের স্বাধীনতার জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। আল্লুরি সীতারাম রাজু গারু যখন স্বাধীনতার জন্য বিপ্লবের বিউগল বাজিয়েছিলেন, তখন তাঁর জয়ঘোষ ছিল ‘মনদে রাজ্যম’, অর্থাৎ আমাদের রাজ্য। ‘বন্দে মাতরম’-এর ভাবনার সঙ্গে এই ‘মনদে রাজ্যম’ ভাবনা ওতপ্রোতভাবে জড়িত, একটি রাষ্ট্র রূপে দেশকে গড়ে তোলার জন্য আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রচেষ্টার একটি অনেক বড় উদাহরণ।
ভারতের অধ্যাত্মবাদ আল্লুরি সীতারাম রাজু গারু-কে করুণা এবং সত্যের বোধে সমৃদ্ধ করেছে, জনজাতি সমাজের জন্য তাঁর মনে সমতার ভাব এবং আপনত্ব সঞ্চার করেছে, ত্যাগ এবং সাহসে বলীয়ান করেছে। আল্লুরি সীতারাম রাজু গারু যখন বিদেশি শাসকদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২৪-২৫ বছর। মাত্র ২৭ বছর বয়সেই তিনি ভারতমাতার স্বাধীনতার জন্য শহীদ হয়েছেন। রম্পা বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী এরকম অনেক যুবক-যুবতী এই বয়সেই দেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের এই নবীন বীর-বীরাঙ্গনারা আজ অমৃতকালে আমাদের দেশের জন্য প্রাণশক্তি এবং প্রেরণার উৎস। স্বাধীনতা আন্দোলনে দেশকে স্বাধীন করতে যুব সম্প্রদায় এগিয়ে এসে নেতৃত্ব দিয়েছিল। আজ নতুন ভারতের স্বপ্নগুলিকে বাস্তবায়িত করতে আজকের নবীন প্রজন্মের এগিয়ে আসার এটা সবচাইতে ভালো সুযোগ। আজ দেশে অনেক নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, নতুন নতুন মাত্রা উন্মোচিত হয়েছে। অনেক নতুন ভাবনা, নতুন নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিচ্ছে। এই সম্ভাবনাগুলিকে বাস্তবায়িত করতে দেশের একটি বৃহৎ সংখ্যক যুব সম্প্রদায়ও তাঁদের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। অন্ধ্রপ্রদেশ চিরকালই বীর-বীরাঙ্গনা এবং দেশভক্তদের ভূমি। এখানে পিঙ্গলি ভেঙ্কাইয়ার মতো স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতৃত্ব দিয়েছেন যিনি দেশের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকা তৈরি করেছেন। এই অন্ধ্রপ্রদেশের মাটি কান্নেগন্টি হনুমন্তু, কন্দুকুড়ি ভিরেসলিঙ্গম পন্তুলু এবং পট্টি শ্রী রামলু-র মতো বীর নায়কদের মাটি। এখানে উইয়া-লাওয়াড়া নরসিমহা রেড্ডির মতো বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন। আজ স্বাধীনতার অমৃতকালে এই বীর সেনানীদের স্বপ্নগুলি বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের মতো সমস্ত দেশবাসীর নিতে হবে। ১৩০ কোটি দেশবাসীকে এই দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের নতুন ভারত যেন তাঁদের স্বপ্নের ভারতে পরিণত হয়। একটি এমন ভারত যেখানে গরীব, কৃষক, শ্রমিক, পিছিয়ে পড়া মানুষ, বিভিন্ন জনজাতির মানুষ – সকলের জন্য সমান সুযোগ থাকবে। বিগত আট বছরে দেশ এই সঙ্কল্পগুলি বাস্তবায়নের জন্য অনেক নতুন নতুন নীতি প্রণয়ন করেছে আর সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে কাজও করে চলেছে। বিশেষভাবে, দেশ শ্রী আল্লুরি সীতারাম রাজু গারু এবং অন্যান্য বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আদর্শ অনুসরণ করে জনজাতি ভাই-বোনেদের জন্য, তাঁদের কল্যাণের জন্য, তাঁদের উন্নয়নের জন্য, দিন-রাত কাজ করে চলেছে।
স্বাধীনতা সংগ্রামে জনজাতি সমাজের অপ্রতিম অবদানকে প্রত্যেক বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের সময় অসংখ্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার পর প্রথমবার দেশে আদিবাসী গৌরব এবং ঐতিহ্যকে প্রদর্শিত করার জন্য আদিবাসী সংগ্রহালয় গড়ে তোলা হচ্ছে। অন্ধ্রপ্রদেশের লম্বসিঙ্গি-তে ‘আল্লুরি সীতারাম রাজু গারু মেমোরিয়াল জনজাতীয় স্বতন্ত্রতা সেনানী সংগ্রহালয়’ও গড়ে তোলা হচ্ছে। গত বছরই দেশ ১৫ নভেম্বর তারিখটি ভগবান বীরসা মুন্ডা জয়ন্তীকে ‘রাষ্ট্রীয় জনজাতীয় গৌরব দিবস’ রূপে পালন করা শুরু করেছে। বিদেশি শাসকরা আমাদের বিভিন্ন জনজাতির মানুষের ওপর সবচাইতে বেশি অত্যাচার করেছে, তাঁদের সংস্কৃতিকে নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। এই প্রচেষ্টা সেই আত্মবলিদানকারীদের অতীতকে জীবন্ত করে তুলবে। আগামী প্রজন্মের মানুষদেরকে প্রেরণা যুগিয়ে যাবে। আল্লুরি সীতারাম রাজু গারু-র আদর্শ অনুসরণ করে আজ দেশ তার বিভিন্ন জনজাতির যুব সম্প্রদায়ের জন্য নতুন নতুন সুযোগ গড়ে তুলছে। আমাদের অরণ্য সম্পদ বিভিন্ন জনজাতি সমাজের যুবক-যুবতীদের জন্য যাতে কর্মসংস্থান এবং অন্যান্য সুযোগ তৈরির মাধ্যম হয়ে ওঠে সেজন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
‘স্কিল ইন্ডিয়া মিশন’-এর মাধ্যমে আজ জনজাতি কলা-সংস্কৃতি নতুন পরিচয়ে ঋদ্ধ হচ্ছে। ‘ভোকাল ফর লোকাল’ জনজাতি কলা-সংস্কৃতির আয়ের উৎস গড়ে তুলছে। বহু দশকের পুরনো আইন যা বিভিন্ন জনজাতির মানুষকে বাঁশের মতো অরণ্যজাত ঘাস কাটার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে উঠেছিল, আমরা সেগুলি পরিবর্তন করে অরণ্য সম্পদের ওপর জনজাতি সম্প্রদায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। আজ বিভিন্ন অরণ্য সম্পদকে তুলে ধরার জন্য সরকার অনেক নতুন নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে। আট বছর আগে পর্যন্ত মাত্র ১২টি অরণ্যজাত পণ্যকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কেনা হত, কিন্তু আজ ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ক্রয়ের তালিকায় প্রায় ৯০টি অরণ্যজাত পণ্যকে নথিভুক্ত করা হয়েছে। দেশে ‘বন ধন যোজনা’র মাধ্যমে অরণ্য সম্পদকে নানা আধুনিক সুযোগের সঙ্গে যুক্ত করার কাজও শুরু হয়েছে। দেশে ৩ হাজারেরও বেশি ‘বন ধন বিকাশ কেন্দ্র’ গড়ে তোলার পাশাপাশি ৫০ হাজারেরও বেশি ‘বন ধন স্বনির্ভর গোষ্ঠী’ও কাজ করছে। অন্ধ্রপ্রদেশেরই বিশাখাপত্তনমে ট্রাইবাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটও স্থাপন করা হয়েছে। অ্যাসপিরেশনাল ডিস্ট্রিক্টস বা উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলির উন্নয়নের জন্য দেশ যে অভিযান শুরু করেছে তার মাধ্যমেও আমাদের জনজাতি এলাকাগুলি অনেক লাভবান হচ্ছে। জনজাতি বালক সম্প্রদায়ের শিক্ষার জন্য ৭৫০টি একলব্য মডেল স্কুলও স্থাপন করা হচ্ছে। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে মাতৃভাষায় শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এই নীতি বিভিন্ন জনজাতি শিশুদের পড়াশোনায় অনেক সহায়ক হবে।
‘মন্যম ভিরুডু’ আল্লুরি সীতারাম রাজু গারু ব্রিটিশের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াইয়ের সময় বলেছিলেন, ক্ষমতা থাকলে আমাকে আটকে দেখাও। আজ দেশও তার সামনে থাকা সমস্ত প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে, সমস্ত সমস্যার সমাধানে এই সাহস নিয়ে ১৩০ কোটি দেশবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁদের সামর্থ্য নিয়ে প্রতিটি সমস্যার সমাধান করছেন। ক্ষমতা থাকলে আমাদের আটকে দেখাও। দেশের নেতৃত্ব যখন আমাদের যুব সম্প্রদায়, আমাদের বিভিন্ন জনজাতি, আমাদের মহিলা, দলিত, পীড়িত, শোষিত, বঞ্চিতদের প্রতিনিধিত্ব করবে তখন একটি নতুন ভারত গড়ে তুলতে কেউ আটকাতে পারবে না। আমার পূর্ণ বিশ্বাস, আল্লুরি সীতারাম রাজু গারু-র প্রেরণা আমাদের একটি দেশ রূপে অনন্ত উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এই মনোভাব নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের মাটি থেকে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের চরণে আরও একবার প্রণাম জানাই আর আজকের এই দৃশ্য, এই উৎসাহ, এই উদ্দীপনা, এই জনপ্লাবন বিশ্বকে বলছে, দেশবাসীকে বলছে যে আমরা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামী নায়ক-নায়িকাদের কখনও ভুলব না, কখনও ভুলিনি। তাঁদের থেকে প্রেরণা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব। আমি আরও একবার যাঁরা এত বড় সংখ্যায় এই বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদানের জন্য উপস্থিত হয়েছেন সবাইকে অভিনন্দন জানাই। আপনাদের সবাইকে অন্তর থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
ভারতমাতার জয়!
ভারতমাতার জয়!
ভারতমাতার জয়!
বন্দে মাতরম!
বন্দে মাতরম!
বন্দে মাতরম!
ধন্যবাদ।