দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রদ্ধেয় রাজনাথ সিংজি, হিমাচল প্রদেশের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী জয়রাম ঠাকুরজি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী, হিমাচলের সুপুত্র অনুরাগ ঠাকুর, হিমাচল সরকারের মন্ত্রীগণ, স্থানীয় জন-প্রতিনিধিগণ এবং আমার প্রিয় লাহৌল-স্পিতি-র ভাই ও বোনেরা।
দীর্ঘ সময় পর আপনাদের মাঝে আসতে পেরে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। অটল সুড়ঙ্গপথের জন্য আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানাই।
‘জুলে, দি কেনহিংগ অটল জীউ তরফে তোহফা শু’
(নমস্কার, এই সুড়ঙ্গপথ অটলজির পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য উপহার)
বন্ধুগণ,
অনেক বছর আগে যখন আমি এখানে একজন দলীয় কর্মকর্তা রূপে আপনাদের মাঝে বারবার আসতাম, তখন রোহতাং-এর পথে দীর্ঘ যাত্রা অতিক্রম করে তবেই এখানে পৌঁছতে পারতাম। আর প্রবল শীতের সময় যখন রোহতাং পাস বন্ধ হয়ে যেত তখন ওষুধপত্র, পড়াশোনা ও রোজগারের সমস্ত পথ কিভাবে বন্ধ হয়ে যেত, এটা আমি অনুভব করেছি, নিজের চোখে দেখেছি। আমার তৎকালীন অনেক সাথী আজও এখানে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন। আবার, তখনকার অনেক সাথী এখন আর আমাদের মধ্যে জীবিত নেই।
আমার স্পষ্ট মনে পড়ে, আমাদের কিন্নৌরের ঠাকুর সেন নেগিজি, তাঁর সঙ্গে আমার দীর্ঘ বার্তালাপের সুযোগ হয়েছে, তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার সুযোগ হয়েছে। নেগিজি একজন আধিকারিক রূপে এবং একজন সফল জনপ্রতিনিধি রূপে হিমাচল প্রদেশের অনেক সেবা করেছেন। হয়তো তিনি ১০০ বছর বেঁচে ছিলেন, কিংবা দু-এক বছর বাকি ছিল। কিন্তু, জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত এতটাই সক্রিয় ছিলেন, এতটাই প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন যে তাঁর উপস্থিতি সবসময় সবাইকে প্রেরণা যোগাত। আমি প্রায়ই তাঁর কাছে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করতাম, তিনি অনেক কিছু বলতেন। তিনি একটি দীর্ঘ ইতিহাসের সাক্ষী ছিলেন। আর, তিনি এই সমগ্র অঞ্চল সম্পর্কে জানা এবং বোঝার ক্ষেত্রে আমাকেও অনেক সাহায্য করেছেন।
বন্ধুগণ,
এই অঞ্চলের সমস্ত সমস্যা সম্পর্কে আমাদের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটলজি খুব ভালোভাবে পরিচিত ছিলেন। এই পর্বতমালা, এই পার্বত্য প্রদেশ সর্বদাই অটলজির অত্যন্ত প্রিয় ছিল। আপনাদের যাতে কম কষ্ট হয়, সেজন্য ২০০০ সালে যখন অটলজি কেলোংগ এসেছিলেন, তখন তিনি এই সুড়ঙ্গপথ নির্মাণের কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেই সময় এই গোটা অঞ্চলে যেরকম উৎসবের পরিবেশ গড়ে উঠেছিল, তা আমার আজও মনে পড়ে। এখানকার সুপুত্র মহান জনসেবক টশী দাওয়াজি-র সঙ্কল্পের কথা আজ আমার মনে পড়ছে। আজ তাঁর সঙ্কল্প সিদ্ধ হয়েছে। তাঁর নিজের এবং তাঁর অন্যান্য বন্ধুদের আশীর্বাদেই এই কাজ আজ সম্পন্ন হয়েছে।
বন্ধুগণ,
অটল সুড়ঙ্গপথ নির্মিত হওয়ায় লাহৌলের জনগণের জীবনে যেন নতুন প্রভাব উদয় হল। পাংগী-র জনগণের জীবনেও অনেক পরিবর্তন আসবে। এই নয় কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ চালু হওয়ার ফলে সকলের জন্য প্রায় ৪৫-৪৬ কিলোমিটার দূরত্ব কম হয়ে গেল। এই অঞ্চলের বন্ধুরা কখনও কল্পনাও করেননি যে তাঁদের জীবৎকালে এত দ্রুত এই পথ অতিক্রম করতে পারবেন। তাঁরা দীর্ঘকাল ধরে কত অসংখ্য শীতের দিনে, কত রোগী নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। বিনা চিকিৎসায় কত মৃত্যু দেখতে হয়েছে, কত যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে, আর নিজেদেরও কত না কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছে। আজ তাঁরা সন্তুষ্ট যে তাঁদের সন্তান-সন্ততিদের আর এরকম কষ্টের দিন দেখতে হবে না।
বন্ধুগণ,
এই অটল সুড়ঙ্গপথ চালু হওয়ায় লাহৌল, স্পিতি এবং পাংগী অঞ্চলের কৃষকরা, বাগিচা চাষীরা, পশুপালকরা, ছাত্রছাত্রীরা, চাকুরিজীবীরা, ব্যবসায়ীরা, প্রত্যেকেই লাভবান হবেন। এখন আর লাহৌলের কৃষকদের ফুলকপি, আলু এবং মটরের ফলন আর বাড়িতে রেখে পচে যাবে না কারণ, সেগুলি দ্রুতগতিতে বড় বড় বাজারে পৌঁছে যাবে।
লাহৌল সারা দেশে চন্দ্রমুখী আলুর জন্য পরিচিত। এর অপূর্ব স্বাদ আমি উপভোগ করেছি। চন্দ্রমুখী আলু এখন দ্রুত বাজারে বিক্রি হবে, নতুন নতুন খরিদ্দার পাবেন, নতুন নতুন বাজারে পৌঁছতে পারবেন, এখন নতুন সব্জি, নতুন ফসলের মতোই এই অঞ্চলের উন্নয়ন দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে।
লাহৌল-স্পিতি একদিক থেকে ভেষজ বৃক্ষ, গুল্ম, লতা আর অনেক মশলার চাষ হয়। যেমন, হিং, পুট, মনু, কালোজিরে, টড়ু, কেশর, পটীশ – এরকম অসংখ্য জড়িবুটির বড় উৎপাদক এই অঞ্চল। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে কাজে লাগা এই ফসল শুধু দেশ নয়, সারা বিশ্বে লাহৌল-স্পিতি হিমাচল তথা ভারতের পরিচয়কে আরও উজ্জ্বল করে তুলবে।
অটল সুড়ঙ্গপথ চালু হওয়ার আরেকটি বড় লাভ হবে যে এখন আমাদের ছেলে-মেয়েদের আর স্কুলছুট হতে হবে না। এই সুড়ঙ্গপথ তাদের আসা-যাওয়ার পথ অনেক সহজ করে দিয়েছে।
বন্ধুগণ,
এই গোটা অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে প্রকৃতি দেবীর অসীম কৃপা রয়েছে আর আধ্যাত্ম, আস্থার সঙ্গে জড়িত পর্যটনের অদ্ভূত সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যটকদের জন্য এখন আর চন্দ্রতাল দূরব্ররতী কোনও গন্তব্য নয়। স্পিতি ঘাটি পৌঁছনো এখন আর কঠিন নয়। তুপচিলিংগ গুম্ফা থেকে শুরু করে ত্রিলোকীনাথ তীর্থে দেবদর্শন এবং বৌদ্ধ দর্শনের সঙ্গমস্থল হয়ে উঠে লাহৌল-স্পিতি পর্যটকদের জন্য একটি নতুন মাত্রা নিয়ে উপস্থিত হবে। এই পথ দিয়েই বিভিন্ন শতাব্দীতে নানা অনুপম প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা অসংখ্য বৌদ্ধমঠ হয়ে, লাদাখ হয়ে, তিব্বত হয়ে ক্রমে অন্যান্য দেশে বৌদ্ধ ধর্ম বিস্তার লাভ করেছে।
স্পিতি উপত্যকায় অবস্থিত দেশের বৌদ্ধ-শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হল তাবো মঠ। এই মঠে এখন সারা বিশ্বের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, পর্যটক ও তীর্থযাত্রীদের আসা-যাওয়া অনেক সুগম হবে। অর্থাৎ, এক প্রকার এই গোটা অঞ্চল পূর্ব এশিয়া সহ বিশ্বের অনেক দেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি বড় কেন্দ্র হয়ে উঠতে চলেছে।
এই সুড়ঙ্গপথ নিশ্চিতভাবেই এই গোটা অঞ্চলের যুব সম্প্রদায়ের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অনেক নতুন নতুন সুযোগ এনে দেবে। কেউ হোম স্টে চালু করবেন, কেউ গেস্ট হাউজ বানিয়ে ব্যবসা করবেন, কেউ ধাবা খুলবেন, আবার কেউ দোকান খুলবেন। তেমনই অনেক নবীন বন্ধুরা এই অঞ্চলের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে পড়াশোনা করে পর্যটকদের জন্য গাইডের কাজ করে ভালো রোজগার করবেন। এখানকার হস্তশিল্প, এখানকার ফল, ওষুধপত্র সবকিছুই ভালো বাজার পাবে।
বন্ধুগণ,
অটল সুড়ঙ্গপথ কেন্দ্রীয় সরকারের সেই সঙ্কল্পের অংশ যার মাধ্যমে দেশের প্রত্যেক ক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যক্তি পর্যন্ত উন্নয়নের লাভ পৌঁছে দেওয়ার সঙ্কল্প নিয়ে আমরা কাজ করে চলেছি। নাহলে আপনারা মনে করুন আগের পরিস্থিতি কেমন ছিল!
লাহৌল-স্পিতি-র মতো দেশের অনেক অঞ্চল এমন ছিল যেখানে অনেক সমস্যার বিরুদ্ধে সংঘর্ষ করার জন্য জনগণের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া হত। এর স্পষ্ট কারণ এটাই ছিল যে এই অঞ্চলের মানুষ এক শ্রেণীর ক্ষমতাবানদের রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধ করতেন না।
বন্ধুগণ,
বিগত বছরগুলিতে দেশ এখন নতুন ভাবনা নিয়ে উন্নয়নের কাজ করে চলেছে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে, সকলের বিশ্বাস অর্জন করে সকলের উন্নয়ন হচ্ছে। সরকারের কর্মসংস্কৃতি, কাজকর্মের পদ্ধতিতে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন প্রকল্পগুলি আর এই ভিত্তিতে রচিত হয় না যে ওই অঞ্চল থেকে আমরা কতজনের ভোট পাব! এখন সেই চেষ্টা করা হয় যাতে কোনও ভারতীয় উন্নয়নের আওতা থেকে বাদ না পড়েন, পিছিয়ে না পড়েন।
এই পরিবর্তনের অনেক বড় উদাহরণ হল লাহৌল-স্পিতি। এই জেলাটি দেশের সেই প্রথম জেলাগুলির অন্যতম, যেখানে প্রত্যেক বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। জল জীবন মিশন কিভাবে জনগণের জীবনকে সহজ করে তুলেছে এই জেলা তার মূর্ত প্রতীক।
বন্ধুগণ,
আমাদের সরকার দলিত, পীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত, আদিবাসী – সবাইকে মূল পরিষেবাগুলি দেওয়ার সঙ্কল্প নিয়ে কাজ করছে। আজ দেশের ১৫ কোটিরও বেশি মানুষের বাড়িতে নলের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার বড় অভিযান চলছে।
স্বাধীনতার এত বছর পরও দেশের ১৮ হাজারেরও বেশি গ্রামের মানুষ অন্ধকারে বেঁচে থাকার জন্য বাধ্য ছিলেন। আজ সেই গ্রামগুলিতে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে গেছে।
স্বাধীনতার অনেক দশক পরও এই অঞ্চলগুলিতে শৌচাগারের পরিষেবা ছিল না। শুধু তাই নয়, রান্না করার জন্য এলপিজি গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থাও ছিল না।
এখন এই চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে দেশের দূর-দুরান্তের প্রতিটি অঞ্চলের মানুষ খুব ভালো চিকিৎসা পান। আয়ুষ্মান ভারত যোজনার মাধ্যমে দরিদ্র মানুষদের ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবাও দেওয়া হচ্ছে।
এখানে হিমাচল প্রদেশের ২২ লক্ষেরও বেশি গরীব ভাই-বোনেদের এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হওয়া সুনিশ্চিত হয়েছে। এই সমস্ত অভিযানের মাধ্যমে দেশের দূর প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণের কর্মসংস্থানের জন্যও অনেক সুযোগ গড়ে উঠেছে। নবীন প্রজন্মের অনেক লাভ হয়েছে।
বন্ধুগণ,
আরেকবার অটল সুড়ঙ্গপথ রূপে বিকশিত এই নতুন দ্বারের উদ্বোধনের জন্য লাহৌল-স্পিতি এবং পাংগী উপত্যকার সমস্ত ভাই-বোনেদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আর আমি অনুরোধ জানাই, একথা দেশের প্রত্যেক নাগরিকদের জন্য বলছি, করোনার এই কঠিন সময়ে নিজের এবং নিজের পরিবারের সদস্যদের প্রতি লক্ষ্য রাখবেন, মাস্ক অবশ্যই ব্যবহার করবেন, হাত বারবার সাবান দিয়ে ধুয়ে নিয়মিত পরিষ্কার রাখার দিকে লক্ষ্য রাখবেন।
আজ আমাকে এই ঐতিহাসিক কর্মসূচির অংশ করে তোলার জন্য আমি আরেকবার আপনাদের সবাইকে অন্তর থেকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই।
ধন্যবাদ।