এবারের বাজেট প্রস্তাব যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, তা দেশকে উন্নয়নের এক নতুন মাত্রায় উন্নীত করতে পারবে। এর জন্য আমি সকল দেশবাসীকে জানাই আমার অভিনন্দন। একইসঙ্গে, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারমনজি এবং তাঁর টিমের সকল সদস্যের জন্যও রইল আমার বিশেষ অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
বন্ধুগণ,
এই বাজেট সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেরই ক্ষমতায়নের পক্ষে যথেষ্ট বলে আমি মনে করি। দেশের গ্রামগুলিতে সমৃদ্ধি এবং সেইসঙ্গে দরিদ্র ও কৃষক সাধারণের অবস্থার উন্নয়নও ঘটাবে এবারের এই বাজেট প্রস্তাব। গত ১০ বছরে ২৫ কোটি মানুষকে আমরা দারিদ্র্যসীমার বাইরে নিয়ে আসতে পেরেছি। নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ক্ষমতায়ন প্রচেষ্টায় এবারের বাজেট বিশেষভাবে সহায়ক হবে বলেই আমার আশা। কারণ, তা শিক্ষা এবং দক্ষতা বিকাশের ওপরও বিশেষ জোর দিয়ে নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধা প্রসারের ওপর গুরুত্বদান করেছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে তা নতুন করে শক্তিও যোগাবে। এমনকি, আদিবাসী সমাজের ক্ষমতায়নেও তা এক বলিষ্ঠ পরিকল্পনার সূত্র হয়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস। সেইসঙ্গে উপকৃত হবেন দলিত জনসাধারণ এবং অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষরা। অর্থনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টায় মহিলাদেরও উৎসাহিত করা হবে এই বাজেট প্রস্তাবগুলির মাধ্যমে এবং তা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অণু শিল্পক্ষেত্রগুলির অগ্রগতির রাস্তা খুলে দেবে। নির্মাণ ও উৎপাদন এবং পরিকাঠামোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এই বাজেট দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে যেমন উৎসাহিত করবে, অন্যদিকে তেমনই তার ধারা নিরন্তর করে তোলার কাজেও তা সহায়ক হয়ে উঠবে।
বন্ধুগণ,
কর্মসংস্থান এবং স্বনিযুক্তির নজিরবিহীন সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে আমাদের সরকার এক বিশেষ দিকচিহ্ন নির্ধারণ করে দিয়েছে। আজকের এই বাজেট আমাদের সেই প্রতিশ্রুতি পালনের অঙ্গীকারকেও আরও উৎসাহিত করবে। পিএলআই কর্মসূচির সাফল্য দেশ তথা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করছেন। বর্তমানে এই বাজেটে কর্মসংস্থান-ভিত্তিক সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ কর্মসূচির কথা সরকার ঘোষণা করেছে যা সারা দেশে কোটি কোটি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ উন্মুক্ত করে দেবে। এই কর্মসূচির আওতায় এই প্রথম যে সমস্ত তরুণ ও যুবকরা কর্মে নিযুক্ত হবেন, তাঁদের প্রথম বেতনটি দেওয়া হবে সরকারের পক্ষ থেকে। দক্ষতা বিকাশের জন্য সহায়তাই হোক কিংবা উচ্চতর শিক্ষালাভের জন্য অথবা ইন্টার্নশিপের জন্য কর্মসূচিই হোক, তাতে উপকৃত হবেন ১ কোটি তরুণ ও যুবক। এর ফলে, গ্রাম-ভারতের তরুণ ও যুবকরা দেশের শীর্ষ সংস্থাগুলিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ লাভ করবেন এবং সেইসঙ্গে আরও নতুন নতুন সুযোগের দ্বারও উন্মুক্ত হবে তাঁদের সামনে। দেশের প্রতিটি শহর, গ্রাম এবং পরিবারে শিল্পোদ্যোগ প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করতে আমরা আগ্রহী। এই লক্ষ্যে ‘মুদ্রা’ ঋণের আওতায় ঋণদানের মাত্রা ১০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ লক্ষ টাকা করা হবে। ফলে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বিশেষত মহিলা, দলিত এবং অনগ্রসর শ্রেণী ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষরা তাঁদের স্বনিযুক্তি প্রচেষ্টায় বিশেষভাবে উৎসাহিত হবেন।
বন্ধুগণ,
একইসঙ্গে ভারতকে আমরা বিশ্বের একটি উৎপাদন গন্তব্য রূপে গড়ে তুলতে পারব। দেশের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অণু শিল্প সংস্থাগুলির সঙ্গে সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে। শুধু তাই নয়, দরিদ্র সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের যথেষ্ট সুযোগও সম্প্রসারিত হয় এই সংস্থাগুলিতে। এই লক্ষ্যে ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও শক্তিশালী করে তোলা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।
বন্ধুগণ,
স্টার্ট-আপ এবং উদ্ভাবনের উপযোগী পরিবেশ ও পরিস্থিতি গড়ে তুলতে নতুন নতুন সুযোগ সম্প্রসারণের কথাও বলা হয়েছে এ বছরের বাজেট প্রস্তাবে। ১ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনই হোক বা ‘অ্যাঞ্জেল কর’ অবলুপ্তির সিদ্ধান্তই হোক, সবকিছুই কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে আমি মনে করি।
বন্ধুগণ,
মূলধনী খাতে রেকর্ড সংখ্যক বিনিয়োগ দেশের অর্থনীতিকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে বলেই আমার বিশ্বাস। নতুন নতুন অর্থনৈতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে সারা দেশজুড়ে। ফলে সম্প্রসারিত হবে নতুন নতুন কাজের সুযোগও।
বন্ধুগণ,
প্রতিরক্ষা সাজসরঞ্জাম রপ্তানির মাত্রাও দেশে এখন এক রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রকে স্বনির্ভর করে তুলতে এবারের বাজেট প্রস্তাবে বেশ কিছু ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে বিশ্বের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নানাভাবে যুক্ত। যার ফলে পর্যটন ক্ষেত্রেও সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন সম্ভাবনার। দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্য পর্যটন সম্পর্কিত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারিত হয়েছে। তাই, পর্যটন কেন্দ্রকে আরও উন্নত করে তোলার ওপরও এবারের বাজেটে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।
বন্ধুগণ,
গত ১০ বছরে এনডিএ সরকার দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কর লাঘবের জন্য নিরন্তরভাবে চেষ্টা চালিয়ে গেছে। এবারের বাজেটে আয়করের মাত্রা কমিয়ে আনা এবং স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন বৃদ্ধির ওপরও বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, টিডিএস সম্পর্কিত নিয়মনীতিকেও আরও সরল করে তোলা হয়েছে যার ফলে করদাতারা আরও বেশি করে অর্থ সঞ্চয় করতে পারবেন।
বন্ধুগণ,
দেশের সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির জন্য পূর্ব ভারতের সুসংবদ্ধ উন্নয়ন একান্তই জরুরি। আমাদের এই অভিযান পূর্ব ভারতের উন্নয়ন থেকে নতুন উৎসাহ ও শক্তি অর্জন করবে বলেই আমার বিশ্বাস। কারণ, আমাদের অন্যতম চিন্তাদর্শ হল ‘পূর্বোদয়’। মহাসড়ক নির্মাণ, জল প্রকল্পগুলির বাস্তবায়ন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোকে আমরা আরও সম্প্রসারিত করব পূর্ব ভারতে এবং এর মধ্য দিয়েই আমাদের উন্নয়নের গতি আরও ত্বরান্বিত হবে।
বন্ধুগণ,
দেশের কৃষক সাধারণের স্বার্থ রক্ষার ওপরও এবারের বাজেটে যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম খাদ্যশস্য মজুত প্রকল্পের আওতায় আমরা এখন গুচ্ছ সবজি উৎপাদনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। আমাদের এই উদ্যোগের ফলে ক্ষুদ্র কৃষকরা যাতে উৎপাদিত ফল, শাক-সবজি এবং তাঁদের অন্যান্য পণ্যও বাজারজাত করে আরও ভালো মূল্য পেতে পারেন, তার সুযোগ সম্প্রসারিত হবে। শুধু তাই নয়, এর ফলে পরিবারের সকল মানুষের পুষ্টিবিধানের কাজেও তা সহায়ক হয়ে উঠবে। কৃষিক্ষেত্রে স্বনির্ভর হয়ে ওঠা বর্তমান ভারতের পক্ষে একান্ত জরুরি একটি বিষয়। তাই, ডাল ও তৈলবীজের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করতে সহায়তার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে এবারের বাজেট প্রস্তাবে।
বন্ধুগণ,
দারিদ্র্য নির্মূলকরণের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের ক্ষমতায়ন প্রচেষ্টার ওপর বিশেষ জোর দিয়েছে এবারের বাজেট। প্রস্তাব করা হয়েছে দরিদ্র সাধারণ মানুষের জন্য ৩ কোটি নতুন বাসস্থান নির্মাণের। জনজাতীয় উন্নত গ্রাম অভিযানের আওতায় ৫ কোটি আদিবাসী পরিবারে সম্প্রসারিত হবে প্রাথমিক সুযোগ-সুবিধা। এছাড়াও, গ্রাম সড়ক যোজনার বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২৫ হাজার নতুন গ্রামকে সকল আবহাওয়ার উপযোগী সড়ক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করা হবে। যার ফলে উপকৃত হবে দেশের প্রতিটি রাজ্যের দূরদুরান্তের গ্রামগুলিও।
বন্ধুগণ,
আজকের এই বাজেট নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধার দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়ার পাশাপাশি আমাদের কর্মপ্রচেষ্টায় নতুনভাবে শক্তি যোগাবে যা থেকে সৃষ্টি হবে অসংখ্য কর্মসংস্থানের এবং সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হবে স্বনিযুক্তি প্রচেষ্টারও। এর ফলে একদিকে যেমন দেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে দেশবাসীর জন্য গড়ে উঠবে এক উজ্জ্বলতর ভবিষ্যৎ। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক একটি শক্তি রূপে ভারতকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এবারের বাজেট এক অনুঘটকের ভূমিকা পালন করবে বলেই আমার বিশ্বাস। এক কথায় বলতে গেলে, এক উন্নত দেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তা হয়ে উঠবে এক নতুন ভিত্তিভূমি।
সকল দেশবাসীকে জানাই আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা!
প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি ছিল হিন্দিতে