বন্ধুগণ,
চারিদিকে হোলি উৎসবের প্রতিধ্বনি গুঞ্জরিত হচ্ছে। আমিও আপনাদের সবাইকে হোলির শুভেচ্ছা জানাই। হোলির আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের আয়োজন হাজার হাজার পরিবারের আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের গুজরাটে এত অল্প সময়ের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো কর্মসংস্থান মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এই উদ্যোগের জন্য আমি আমাদের জনপ্রিয় ও কর্মতৎপর মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্রভাই এবং তাঁর গোটা টিমকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুগণ,
এটি দেশের যুবসম্প্রদায়কে কাজের সুযোগ দেওয়া এবং দেশের উন্নয়নে তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর প্রতি ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকার এবং আমাদের সকলের অঙ্গীকারের প্রমাণ। আমি খুশি যে কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত বিভাগ এবং ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন এনডিএ শাসিত রাজ্য সরকারগুলি সর্বাধিক সংখ্যক চাকরি দেওয়ার জন্য অবিরাম কাজ করে চলেছে। কেন্দ্রীয় সরকার ছাড়াও, এনডিএ শাসিত ১৪টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে ধারাবাহিকভাবে কর্মসংস্থান মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। যে যুবকদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য এবং তাঁদের পরিবারের সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য নিয়োগপত্র দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের আমি আমার শুভেচ্ছা জানাই। আমি নিশ্চিত যে নতুন দায়িত্ব গ্রহণকারী যুবকরা অমৃতকালের সংকল্প বাস্তবায়নে পূর্ণ নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে অবদান রাখবে।
বন্ধুগণ,
গুজরাটে ইতিমধ্যেই দেড় লক্ষেরও বেশি যুবক রাজ্য সরকারি চাকরি পেয়েছে। সরকারি চাকরি ছাড়াও, এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিগত বছরগুলিতে গুজরাটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রায় ১৮ লক্ষ যুবক-যুবতিদের কর্মসংস্থান প্রদান করা হয়েছে। গুজরাট সরকার একটি নিয়োগ ক্যালেন্ডার তৈরি করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যুবক-যুবতীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে। আমাকে বলা হয়েছে যে, এই বছর গুজরাট রাজ্য সরকারের নানা বিভাগে ২৫ হাজারেরও বেশি যুবক- যুবতীকে চাকরি দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গুজরাট সরকার প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করেছে। এ জন্য বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, মোবাইল অ্যাপস এবং ওয়েব পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে।
বন্ধুগণ,
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিজেপি সরকারের নানা প্রচেষ্টা তরুণদের জন্য নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করছে। আমাদের কেন্দ্রীয় সরকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য একটি সুনির্দিষ্ট কৌশল নিয়ে কাজ করে চলেছে। আমরা দেশে পরিকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে সর্বোচ্চ কর্মসংস্থান বাড়ানোর ওপর অগ্রাধিকার দিয়েছি। আমরা শিল্প উৎপাদনকে উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ গড়ে তোলাকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। দেশে স্বনির্ভর কর্মসংস্থানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি এবং গ্যারান্টি ছাড়াই যুবকদের আর্থিক সহায়তা প্রদানকে আমরা অগ্রাধিকার দিয়েছি। চাকরির পরিবর্তিত প্রকৃতি অনুযায়ী তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নকে আমরা অগ্রাধিকার দিয়েছি।
বন্ধু্গণ,
উন্নয়নের চাকা যখন দ্রুতগতিতে ঘোরে, তখন প্রতিটি ক্ষেত্রে অবলীলায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে থাকে। বর্তমানে দেশে পরিকাঠামো নির্মাণ, তথ্য প্রযুক্তি সহ অন্যান্য খাতে উন্নয়ন প্রকল্পে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। শুধু আমাদের গুজরাটেই ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এই বছরের বাজেটে পরিকাঠামো খাতে ১০ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার এই বিনিয়োগ নিঃসন্দেহে লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করছে।
বন্ধু্গণ,
সারা বিশ্বের বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে ভারত আগামী বছরগুলিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে উঠবে। আর এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রয়েছে গুজরাটের। আপনাদের মতো যুবক-যুবতীরাই ভারতে এই বিপ্লবের নেতৃত্ব দেবেন। এখন আমাদের গুজরাটের দাহোদের জনজাতি এলাকার মতো একভাবে পিছিয়ে পড়া এলাকায় ২০৯ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে একটি রেল ইঞ্জিন কারখানা তৈরি হচ্ছে। আমাদের গুজরাট অদূর ভবিষ্যতে সেমি-কন্ডাক্টরের একটি বড় হাব হয়ে উঠতে চলেছে। এই সমস্ত প্রচেষ্টা গুজরাটে হাজার হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।
বন্ধুগণ,
আমাদের ডবল ইঞ্জিন সরকার আজ যে সংহত দৃষ্টিকোণ নিয়ে কাজ করছে, তা থেকে বৃহত্তর পরিসরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। নীতিগত স্তরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। এই নতুন পরিবর্তনগুলি একটি নতুন বাস্তু ব্যবস্থা গড়ে তুলছে, যেখানে নতুন নতুন স্টার্টআপ-গুলি অনুকূল পরিবেশ পেয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। আজ দেশে ৯০ হাজারেরও বেশি স্টার্টআপ কাজ করছে। দেশের টিয়ার-২ ও টিয়ার-৩ শহরেও নতুন নতুন স্টার্টআপ গড়ে উঠছে। এর ফলে, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি, লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতী স্বনির্ভর কর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। আমাদের সরকার কোনও রকম ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ছাড়াই তাঁদের আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। মুদ্রা যোজনা এবং স্টান্ডআপ ইন্ডিয়া প্রকল্প থেকেও দেশে স্বনির্ভর কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে। কোটি কোটি মহিলা আজ স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে যোগ দিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। এভাবে তাঁরা নিজেদের পরিবারের আর্থিক ব্যবস্থাপনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সরকারও এই মহিলাদের শত শত কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।
বন্ধুগণ,
দেশে যে নতুন নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে, তার নিরিখে বড় পরিসরে দক্ষ মানবসম্পদ প্রস্তুত রাখতে হবে। শুধুমাত্র যুবক-যুবতীদের দক্ষতার জোরেই ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। আমরা চেষ্টা করছি, এমন আবহ গড়ে তুলতে যাতে সমাজের প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষ তাঁদের দক্ষতা উন্নয়নের সুবিধা পান। আমাদের দলিত ভাই-বোন, আমাদের বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীর ভাই-বোন, আমাদের বঞ্চিত শ্রেণীর মানুষেরা, আমাদের মা ও বোনেরা সকলেই এগিয়ে যাওয়ার সমান সুযোগ পাবেন। এই বিষয়টি মাথায় রেখে নবীনদের দক্ষতা উন্নয়নকেও অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনার অধীনে দেশে ৩০টি দক্ষ ভারত আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এই কেন্দ্রগুলিতে দেশের যুবক-যুবতীদের ‘নিউ এজ টেকনোলজি’ বা ‘অত্যাধুনিক প্রযুক্তি’র মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনার মাধ্যমে ক্ষুদ্র কারিগরদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের পাশাপাশি, তাঁদের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্বল্প পুঁজির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদেরকেও বিশ্ব বাজারে প্রবেশ করতে বা আমদানি-রপ্তানি করতে সাহায্য করা হবে। আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের যুবক-যুবতীদের কর্মের পরিবর্তনশীল প্রকৃতির জন্য প্রস্তুত করছি। এই কাজে আমাদের আইটিআই-গুলি বড় ভূমিকা পালন করছে। সেজন্য গুজরাটে প্রতিটি আইটিআই ক্রমাগত তাঁদের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে। আজ শুধু গুজরাটের প্রায় ৬০০টি আইটিআই – এ ২ লক্ষ আসনে বিভিন্ন দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। দেশের শিল্পোদ্যোগগুলির চাহিদা অনুযায়ী, এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিকে সমায়ানুগ করে তোলা হয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, গুজরাটে আইআইটি-গুলির ‘প্লেসমেন্ট’ খুব ভালো হয়েছে।
বন্ধুগণ,
আমরা দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিটি সুযোগকে বিকশিত করার উপর গুরুত্ব দিয়েছি। এই অগ্রাধিকার স্বাধীনতার পর থেকে যেভাবে দেওয়া উচিৎ ছিল, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হয়নি। এই বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে দেশে ৫০টি নতুন পর্যটন কেন্দ্র বিকশিত করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন আমাদের রাজ্যে টেওরিয়া একতা নগরে ইউনিটি মল গড়ে উঠেছে, তেমনভাবেই প্রত্যেক রাজ্যে সেই রাজ্যের বৈশিষ্ট্য অনুসারে ইউনিটি মল গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এই ইউনিটি মলগুলিতে সারা দেশের বিভিন্ন এলাকার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন স্থানীয় পণ্যগুলিকে বাণিজ্যিকভাবে তুলে ধরা হবে। এই প্রচেষ্টাগুলির মাধ্যমে আরও লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ গড়ে উঠবে। এছাড়া, সারা দেশে একলব্য বিদ্যালয়গুলিতেও প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষক নিযুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বন্ধুগণ,
আপনারা সবাই গুজরাট সরকারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মিলেমিশে পরিষেবা প্রদানের সুযোগ পাচ্ছেন। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক যে, আজকের দিনটি আপনাদের ও আপনাদের পরিবারের জন্য একটি আনন্দের মুহূর্ত নিয়ে এসেছে, যাতে আপনাদের উৎসব আরও রঙিন হয়ে ওঠে। কিন্তু বন্ধুগণ, আপনারা অবশ্যই একটা কথা মনে রাখবেন যে, এটা সূত্রপাত মাত্র। এটা আপনাদের জীবনের একট নতুন যাত্রাপথের সূচনা লগ্ন। যদি আপনারা সরকারি চাকরি পাওয়াকে নিজেদের জীবনের লক্ষ্য মনে করে ঘরে বসে পড়েন, তা হলে আপনাদের নিজেদেরই উন্নতি থেমে যাবে। যে পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা আপনাদেরকে এখানে পৌঁছে দিয়েছে, এটিকে কখনও বিরামের সুযোগ দেবেন না, আপনাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ভবিষ্যতেও একে জারিই রাখতে হবে। প্রতিদিন নতুন কিছু শেখার আগ্রহ আপনাদের সারা জীবন ধরে এগিয়ে যাওয়ার পথকে মসৃণ করে তুলবে। আপনার পোস্টিং যেখানেই হোক না কেন, সেখানে নিজস্ব সামর্থ্য বৃদ্ধির জন্য, নিজেদের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য, নিজস্ব জ্ঞান বর্ধনের জন্য আপনারা যতটা পরিশ্রম করবেন, আত্মোন্নতিকে যতটা গুরুত্ব দেবেন, ততটাই আপনারা লাভবান হবেন। আপনারা যে যেক্ষেত্রে নিয়োজিত রয়েছেন, সেই ক্ষেত্রটিও লাভবান হবে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে প্রত্যেক সরকারি কর্মচারী উন্নত প্রশিক্ষণ পান। এই লক্ষ্যে আমরা ‘কর্মযোগী ভারত’ অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সূচনা করেছি। এই প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন অনলাইন পাঠক্রমের মাধ্যমে আপনারা যথাসম্ভব উপকৃত হন, আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, নিরন্তর অধ্যয়নের মাধ্যমে আপনাদের এই প্রগতি একটি বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
বন্ধুগণ,
আরেকবার আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছা জানাই। এই শুভ সূত্রপাতের জন্য আপনাদের পরিবারের সকলকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আপনাদের সবাইকে, আমার গুজরাটের সমস্ত ভাই ও বোনেদের রঙের উৎসব হোলির জন্য অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।