নমস্কার!
গুজরাটের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্রভাই, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রীগণ, আইএফএসসিএ-র চেয়ারম্যান কে রাজারমনজি, বিভিন্ন বড় বড় আর্থিক সংস্থা এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃস্থানীয় সদস্যবৃন্দ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!
ইনফিনিটি ফোরামের দ্বিতীয় পর্যায়ের এই সমাবেশে আমি আজ সকলকে স্বাগত জানাই। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ইনফিনিটি ফোরামের উদ্বোধন পর্বে আমরা মিলিত হয়েছিলাম। সেই সময় অতিমারীর কারণে বিশ্বজুড়ে ছিল এক অনিশ্চয়তার বাতাবরণ। বিশ্বের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্পর্কে সকলেই ছিলেন তখন উদ্বিগ্ন। দুর্ভাগ্যবশতঃ সেই উৎকন্ঠার আজও অবসান ঘটেনি। ভূ-রাজনৈতিক কারণ থেকে উদ্ভূত উত্তেজনা, মুদ্রাস্ফীতির উচ্চ হার এবং ঋণের বোঝার চ্যালেঞ্জ ও সমস্যাগুলি সম্পর্কে আপনারা নিশ্চই অবগত রয়েছেন।
কিন্তু এই সময়কালে অগ্রগতি ও সহনশীলতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রূপে ভারত নিজেকে প্রতিভাত করেছে। এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গিফট সিটিতে ২১ শতকের অর্থনৈতিক বিভিন্ন নীতি সম্পর্কে আলোচনা ও মত বিনিময় গুজরাট রাজ্যটির গৌরবকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। এই রাজ্যটির আরও একটি সাফল্যের জন্য গুজরাটবাসীদের আমি অভিনন্দন জানাই। ইউনেস্কো সম্প্রতি গুজরাটের ঐতিহ্যবাহী 'গরবা' নৃত্যকে স্পর্শাতীত তথা ইন্দ্রিয়াতীত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দিয়েছে। এই ঘটনা নিঃসন্দেহে সাফল্যের আর একটি স্বীকৃতি। গুজরাটের সাফল্য তাই আজ সারা দেশেরই সাফল্য।
বন্ধুগণ,
ভারতের বর্তমান অগ্রগতির কাহিনী বিশ্ববাসীর কাছে এটাই প্রমাণ করেছে যে নীতিগত অগ্রাধিকার, সুপ্রশাসন এবং নাগরিক কল্যাণের মাধ্যমে অর্থনীতির বলিষ্ঠ ভিত তৈরি করা অসম্ভব কিছু নয়। শুধুমাত্র বর্তমান আর্থিক বছরের প্রথম ৬ মাসেই ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতির হার দাঁড়িয়েছে ৭.৭ শতাংশ। এবছর সেপ্টেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের বয়ান অনুযায়ী ২০২৩ সালে বিশ্বের অগ্রগতিতে ১৬ শতাংশ অবদান রয়েছে ভারতের। এর আগে, এবছরেরই জুলাই মাসে ভারত সম্পর্কে এক বিশেষ আশার বাণী উচ্চারণ করেছিল বিশ্ব ব্যাঙ্ক। তাদের মতে নানা ধরণের আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও ভারত এই অভাবনীয় সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আবার এবছর মার্চ মাসে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন যে ভারত এখন এমন একটি অবস্থানে রয়েছে যে সমগ্র গ্লোবাল সাউথকে নেতৃত্বদান করতে পারে। মাত্র কয়েক মাস আগে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম জানিয়েছে, দীর্ঘসূত্রিতা ভারতে এখন এক অতীত অধ্যায়। কারণ, বিনিয়োগের উপযোগী উন্নতর পরিবেশ গড়ে উঠেছে বর্তমান ভারতে।
এই সমস্ত কারণে বিশ্ববাসী এখন ভারত সম্পর্কে খুবই আশাবাদী এবং তাদের এই বিশ্বাসের পিছনে অবশ্যই সঙ্গত কারণ রয়েছে। গত ১০ বছরে রূপান্তর প্রচেষ্টার মাধ্যমে রূপায়িত সংস্কার কর্মসূচি ভারতের এই অর্থনীতিকে বলিষ্ঠতা দান করেছে। এই ধরণের সংস্কার প্রচেষ্টা দেশের অর্থনৈতিক বনিয়াদকে করে তুলেছে আরও মজবুত ও শক্তিশালী। অতিমারীকালে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ যখন অর্থনীতি ও আর্থিক পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বিগ্ন, ভারত তখন দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে।
বন্ধুগণ,
আমাদের সংস্কার প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে সংহতির মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে তোলা। কয়েকটি ক্ষেত্রে আমরা যেমন প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ সম্পর্কিত বিদেশ নীতিকে আরও উদার করে তুলতে পেরেছি, অন্যদিকে তেমনি এসম্পর্কিত বাধ্যবাধকতার বোঝাও অনেক হালকা করে দিয়েছি। আমরা ইতিমধ্যেই সম্পাদন করেছি তিনটি এফটিএ এবং আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে গেছি। গিফট আইএফএসসিএ-র গঠন আমাদের বৃহত্তর সংস্কার প্রচেষ্টারই একটি বিশেষ ধাপ। এর মধ্যদিয়ে আমরা বিশ্বের অর্থ বাজারকে ভারতের অর্থনৈতিক বিপণন ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তেলার চেষ্টা করেছি। গিফট সিটি গড়ে তোলার পেছনে যে চিন্তা-ভাবনা কাজ করেছে তা হল এক গতিশীল অর্থনৈতিক পরিবেশ চালু রাখা। সুতরাং আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থার এক নতুন সংজ্ঞা নির্ধারিত হবে আমাদের এই প্রচেষ্টার মধ্যদিয়ে। উদ্ভাবন প্রচেষ্টা, দক্ষতা বিকাশ এবং সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে সহযোগিতার নতুন নতুন মাপকাঠি নির্ধারিত হবে এর মাধ্যমে। আমাদের এই যাত্রাপথে ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস অথরিটি গঠন করা হয় এক বিশেষ নিয়ন্ত্রক সংস্থা রূপে। ২০২০ সালে আমাদের এই প্রচেষ্টা ছিল উন্নয়ন অগ্রগতির যাত্রাপথে আমাদের এক বিশেষ মাইলফলক। অর্থনৈতিক সমস্যা জর্জর বিশ্বেও আইএফএসসিএ ২৭টি নিয়ম নীতি এবং ১০টিরও বেশি কাঠামো ইতিমধ্যে গড়ে তুলেছে। ফলে, বিনিয়োগের নতুন নতুন পথ এখন প্রশস্ত হয়েছে।
আপনারা জেনে খুশি হবেন যে ইনফিনিটি ফোরামের প্রথম পর্যায়ে যে সমস্ত প্রস্তাব ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল তার সুবাদে কয়েকটি বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। যেমন ২০২২-এর এপ্রিলে তহবিল ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি সুসংবদ্ধ কাঠামো গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছিল আইএফএসসিএ। এর ফলশ্রুতিতে ৮০টির মতো তহবিল ব্যবস্থাপনা সংস্থা নথিভুক্ত হয়েছে আইএফএসসিএ-র আওতায়। এর মাধ্যমে ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো এক বিশেষ তহবিলও গড়ে উঠেছে। আগামী বছর থেকে দুটি প্রথম সারির আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় গিফট আইএফএসসিএ-তে তাদের নতুন কোর্স চালু করার অনুমোদন লাভ করেছে। আবার ২০২২-এর মে মাসে বিমান লিজ সংক্রন্ত আরও একটি খসড়া তৈরি করেছিল আইএফএসসিএ। ফলে এসম্পর্কিত ২৬টি ইউনিট ইতিমধ্যেই আইএফএসসিএ-র সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ শুরু করে দিয়েছে।
বন্ধুগণ,
ফোরামের প্রথম পর্যায়ের সাফল্য আপনাদের বিভিন্ন প্রস্তাব ও মতামতের ভিত্তিতে বিশেষ কর্মকান্ড শুরু করার সুবাদে অর্জিত হয়েছে। এখন আমাদের সামনে তাই প্রশ্ন উঠেছে যে এরপর আমাদের পদক্ষেপ হবে কোন দিকে। গিফট আইএফএসসিএ-র পরিধি কেবল কি এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে? এই প্রশ্নে আমার উত্তর হবে না। কারণ, গিফট আইএফএসসিএ-কে প্রথাগত অর্থব্যবস্থা ও উদ্যোগের আরও ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়াই হল সরকারের লক্ষ্য। নতুন যুগের উপযোগী আর্থিক তথা প্রযুক্তিগত সেবার একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র রূপে গিফট সিটিকে গড়ে তুলতে আমরা আগ্রহী। আমার স্থির বিশ্বাস যে বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের পথ দেখাতে পারে গিফট সিটি। এই প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত আপনারা সকলে। তাই, আপনাদেরও এক বিশেষ ভূমিকা রয়েছে আমাদের এই উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে।
বন্ধুগণ,
বর্তমান বিশ্বের প্রধান প্রধান সমস্যাগুলির অন্যতম হল জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা। যেহেতু ভারত বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির অন্যতম একটি দেশ তাই এই উদ্বেগ ও আশঙ্কার অংশীদার আমরাও। তবে, এই সমস্যা সম্পর্কে আমরা পূর্ণ মাত্রায় সচেতন। মাত্র কয়েক দিন আগে অনুষ্ঠিত সিওপি শীর্ষ সম্মেলনে ভারত একটি নতুন অঙ্গীকারের কথা উচ্চারণ করেছে বিশ্ববাসীর সামনে। ভারত তথা সমগ্র বিশ্বের আন্তর্জাতিক লক্ষ্য পূরণে ব্যয় সাশ্রয়ী অর্থব্যবস্থার প্রসার হবে আমাদের সকলের একান্ত কর্তব্য।
জি-২০-র সভাপতিত্বকালে ভারতের অন্যতম অগ্রাধিকার হল অর্থব্যবস্থাকে আরও নিরন্তর করে তোলা, যাতে বিশ্বের অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা যায়। কারণ আমরা মনে করি আমাদের এই প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে এক পরিবেশ বান্ধব, সহনশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থা ও অর্থনীতি গড়ে ওঠা সম্ভব। হিসাব করে দেখা গেছে যে বাতাসে কার্বন নির্গমনের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ভারতের প্রয়োজন অন্তত ১০ ট্রিলিয়ান মার্কিন ডলার। আগামী ২০৭০ সালের মধ্যে আমাদের এই লক্ষ্য পূরণের মাত্রা আমরা স্থির করেছি। এই খাতে বিনিয়োগের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ প্রয়োজন। এই কারণে অর্থব্যবস্থাকে যাতে নিরন্তর ও গতিশীল করে তোলা সম্ভব হয়, সেই লক্ষ্যে আমরা আইএফএসসিএ-কে একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র রূপে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ভারতে অনুচ্চ কার্বন অর্থনীতি গড়ে তুলতে প্রয়োজন পরিবেশ অনুকূল মূলধন। আমরা মনেকরি যে এক্ষেত্রে গিফট আইএফএসসি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। গ্রিন বন্ড, সচল বন্ড এবং এই প্রচেষ্টা সম্পর্কিত বন্ডের মতো আর্থিক উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা সমগ্র বিশ্বের পক্ষে পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে সহায়ক হবে। আপনারা নিশ্চই অবগত রয়েছেন যে সিওপি ২৮-এ ভূপ্রকৃতির পরিবেশ রক্ষার কাজে ঋণসংক্রান্ত প্রয়াস নামে এক বিশেষ উদ্যোগের কথা ঘোষণা করেছে ভারত। এই গ্রিন ক্রেডিট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিপণন সম্পর্কিত ব্যবস্থা কিভাবে গড়ে তোলা যায় সে সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তি এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শ আমি প্রার্থনা করছি।
বন্ধুগণ,
ভারত হল বর্তমানে বিশ্বের দ্রুততম গতিতে বেড়ে ওঠা ফিনটেক বাজারগুলির অন্যতম। ফিনটেকের ক্ষেত্রে ভারতের মূল শক্তি গিফট আইএফএসসি-এর লক্ষ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। ২০২২ সালে আইএফএসসিএ-র পক্ষ থেকে একটি প্রগতিশীল নিয়ন্ত্রণ কাঠামো গড়ে তোলা হয় ফিনটেককে সফল করে তুলতে। উদ্ভাবন এবং শিল্পোদ্যোগকে উৎসাহিত করতে আইএফএসসিএ-র রয়েছে একটি ফিনটেক উদ্যোগ, যা ভারতীয় এবং বিদেশের ফিনটেকগুলির কাজে সহায়তা দান করবে। বিশ্বের সমগ্র ফিনটেক ব্যবস্থায় একটি প্রবেশতোরণ হয়ে ওঠার মত সম্ভাবনা রয়েছে গিফট সিটির। এই সুযোগ সর্বোচ্চ মাত্রায় গ্রহণ করার জন্য আমি আপনাদের সকলকে অবশ্যই উৎসাহিত করবো।
বন্ধুগণ,
গিফট আইএফএসসি গঠনের কয়েক বছরের মধ্যেই তা আন্তর্জাতিক মূলধন সংগ্রহ প্রচেষ্টার একটি বিশেষ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন সমীক্ষা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, গিফট সিটির মধ্যদিয়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে এক অভিনব 'ট্রাই-সিটি' ধারণা। ঐতিহাসিক আমেদাবাদ নগরী এবং রাজধানী শহর গান্ধীনগরের মধ্যে গিফট সিটির এমন একটি চমৎকার সংযোগ গড়ে উঠেছে যা সচরাচর দেখা যায় না। গিফট আইএফএসসি-র অত্যাধুনিক ডিজিটাল পরিকাঠামো এমন একটি মঞ্চ প্রস্তুত করেছে যার মাধ্যমে গতি সঞ্চারিত হয়েছে বাণিজ্যিক প্রচেষ্টার মধ্যে। শুধু তাই নয়, বাণিজ্যিক উদ্যোগকে কিভাবে দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তারও পথ নির্দেশ করেছে গিফট আইএফএসসি। আন্তর্জাতিক সংযোগ ও যোগাযোগ বলতে কি বোঝায় সে সম্পর্কে আপনাদের সম্যক ধারণা রয়েছে। গিফট আইএফএসসি হল এমন একটি ব্যবস্থাপনা যা অর্থনৈতিক তথা প্রযুক্তিগত বিশ্বের বিশেষ বিশেষ চিন্তা-ভাবনার মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে পারে।
বর্তমানে আইএফএসসি-র আওতায় কাজ করে চলেছে ৫৮০টি সংস্থা। এর মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক বুলিয়ান এক্সচেঞ্জ সহ তিনটি এক্সচেঞ্জ, ৯টি বিদেশী ব্যাঙ্ক সহ মোট ২৫টি ব্যাঙ্ক, ২৯টি বিমা সংস্থা, দুটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৫০টিরও বেশি পেশাগত পরিষেবা সংস্থা। যার মধ্যে রয়েছে পরামর্শদান সম্পর্কিত সংস্থা, আইন বিষয়ক প্রতিষ্ঠান এবং সিএ ফার্ম। আমি বিশ্বাস করি, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বিশ্ব অর্থনীতির একটি প্রধান আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হয়ে উঠতে চলেছে ভারতের গিফট সিটি।
বন্ধুগণ,
ভারত হল এমন একটি দেশ যেখানে এক গভীর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সহাবস্থান ঘটেছে ব্যবসা-বাণিজ্যের এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের। ভারতে প্রত্যেক বিনিয়োগকারী অথবা বিনিয়োগ সংস্থার উপযোগী নানা ধরণের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে। ভারতের অগ্রগতির ইতিহাসের সঙ্গে গিফটের চিন্তা-ভাবনা সম্পৃক্ত। এবিষয়ে কয়েকটি দৃষ্টান্তের আমি উল্লেখ করতে পারি। বর্তমানে ৪ লক্ষেরও বেশি যাত্রী বিমান পরিষেবার সুযোগ গ্রহণ করে থাকেন। ২০১৪ সালে দেশে যাত্রী বিমানের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪০০। সেই সংখ্যা আজ ৭০০কে অতিক্রম করে গেছে। গত ৯ বছরে ভারতে বিমানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এক হাজারটির মতো বিমান সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে দেশের বিমান পরিবহণ সংস্থাগুলির।
এই পরিস্থিতিতে গিফট সিটির পক্ষ থেকে বিমান সংক্রান্ত বিষয়ে সুযোগ-সুবিধার যে ভাবে প্রসার ঘটানো হয়েছে, তা সত্যি সত্যিই উল্লেখ করার মতো। শুধু তাই নয়, জলপথে মাল পরিবহণ এবং দেশে উত্তরোত্তর জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি আইএফএসসিএ-র উদ্যোগ ও কর্ম প্রচেষ্টারই আরও একটি বিশেষ দৃষ্টান্ত। ঠিক এই ভাবেই ভারতের বলিষ্ঠ তথ্য প্রযুক্তি মেধা, ডেটা সুরক্ষা সম্পর্কিত আইন এবং গিফট-এর ডেটা এমব্যাসি সম্পর্কিত উদ্যোগ বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক কাজকর্মে সুরক্ষিত ডিজিটাল সংযোগ গড়ে তুলেছে। ভারতে রয়েছে অসংখ্য তরুণ মেধা। তাই, বিশ্বের বড় বড় সংস্থাগুলি ভারতের এই মেধাকে কাজে লাগাতে পারে।
বন্ধুগণ,
আর কয়েক বছরের মধ্যেই ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠতে চলেছে এবং আগামী ২০৪৭ সালের মধ্যে আত্মপ্রকাশ ঘটবে এক উন্নত ভারতের। আমাদের এই যাত্রাপথে নতুন নতুন মূলধন, ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং উন্নততর আর্থিক পরিষেবা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। গিফট সিটি তার সুদক্ষ নিয়ম-নীতি, অত্যাধুনিক পরিকাঠামো, ব্যয় সাশ্রয়ী ব্যবস্থা এবং মেধাকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধা প্রসারের পথ আরও প্রশস্ত করে তুলবে যা এক কথায় অকল্পনীয় এবং অভাবনীয়।
আসুন, গিফট আইএফএসসি-র সঙ্গে আমরাও সমান পদক্ষেপে এগিয়ে যাই বিশ্ববাসীর স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। 'ভাইব্রান্ট গুজরাট'-এর আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আর কিছু দিনের মধ্যেই। আমি সকল বিনিয়োগ কর্তাকে আমন্ত্রণ জানাই তাতে অংশগ্রহণের জন্য। আপনাদের এই প্রচেষ্টার জন্য আমার আগাম শুভেচ্ছা রইলো। বিশ্বের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সমস্যার সমাধানে উদ্ভাবনী চিন্তা-ভাবনার মধ্য দিয়ে আসুন আমরা সকলে মিলে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।
আপনাদের সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ।