মহামান্য,
বিশিষ্ট সহকর্মীবৃন্দ,
প্রযুক্তি এবং আর্থিক জগতের আমার সহকর্মীরা, ৭০টিরও বেশি দেশ থেকে হাজার হাজার অংশগ্রহণকারীদের,
নমস্কার!
বন্ধুগণ,
আমি এই প্রথম ‘ইনফিনিটি ফোরাম’ উদ্বোধন করতে পেরে খুবই আনন্দিত এবং আপনাদের সকলকে স্বাগত জানাচ্ছি। ‘ইনফিনিটি ফোরাম’ ভারতে ফিনটেকের অপার সম্ভাবনার দিক তুলে ধরেছে। এটি সমগ্র বিশ্বকে সুযোগ-সুবিধা প্রদান করার জন্য ভারতের ফিনটেকের বিশাল সম্ভাবনার দিকটিও উপস্থাপন করেছে।
বন্ধুগণ,
মুদ্রার ইতিহাসে অসাধারণ বিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। মানুষ যেমন বিবর্তিত হয়েছে, আমাদের লেনদেনের রূপও তেমনই হয়েছে। আজ আমরা বিনিময় ব্যবস্থা থেকে ধাতু, কয়েন থেকে নোট, চেক থেকে কার্ডে এসে পৌঁছেছি।ইতিপূর্বে উন্নয়নের বার্তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে কয়েক দশক সময় লাগতো। কিন্তু, বিশ্বায়নের এই যুগে তা এখন আর হয় না। প্রযুক্তি আর্থিক জগতে এক বড় মাত্রায় পরিবর্তন এনেছে। গত বছর এই প্রথম ভারতে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন এটিএম থেকে নগদ তোলার চেয়ে বেশি। সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল ব্যাঙ্কগুলি, কোনও প্রকৃত শাখা কার্যালয় ছাড়াই এটি সম্ভব হয়েছে এবং এক দশকেরও কম সময়ের মধ্যে এটি খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে।
বন্ধুগণ,
ভারত বিশ্বের কাছে প্রমাণ করে দিয়েছে যে, প্রযুক্তি গ্রহণ অথবা প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে কারও থেকে পিছিয়ে নেই। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার আওতায় পরিবর্তনমূলক উদ্যোগগুলি সুশাসন প্রয়োগের জন্য ফিনটেক উদ্ভাবনের দরজা খুলে দিয়েছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে প্রযুক্তি অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছে। ২০১৪ সালে ৫০ শতাংশেরও কম ভারতীয়র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল। গত ৭ বছরে প্রায় ৪৩ কোটি জন ধন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৬৯ কোটি রুপে কার্ড দেওয়া হয়েছে। গত বছর রুপে কার্ডের মাধ্যমে ১.৩ বিলিয়ন আর্থিক লেনদেন হয়েছে। শুধুমাত্র গত মাসেই ইউপিআই পদ্ধতির সাহায্যে ৪.২ মিলিয়ন আর্থিক লেনদেন হয়েছে।
জিএসটি পোর্টালের মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ কোটি ইনভয়েস আপলোড করা হয়। এমনকি, প্রতি মাসে শুধুমাত্র জিএসটি পোর্টালের সাহায্যে ১২ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যে লেনদেন করা হয়। মহামারী সত্ত্বেও প্রতিদিন অনলাইনে প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ রেলের টিকিট বুকিং হয়েছে। গত বছর ফাস্টট্যাগ পদ্ধতির মাধ্যমে ১.৩ বিলিয়ন নগদহীন লেনদেন সম্ভব হয়েছে। পিএম-স্বনিধি সারা দেশে ক্ষুদ্র বিক্রেতাদের জন্য ঋণ গ্রহণে সুযোগ করে দিয়েছে। কোনোরকম সমস্যা ছাড়াই ই-রুপে’র পরিষেবা দেওয়া গেছে। এ ধরনের একাধিক তথ্য আমি বলে যেতেই পারি। এগুলি ভারতের ফিনটেকের মাত্রা এবং সুযোগের কয়েকটি উদাহরণ মাত্র।
বন্ধুগণ,
ফিনটেক বিপ্লবের চালিকাশক্তি হ’ল আর্থিক অন্তর্ভুক্তি। ফিনটেক চারটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে; আয়, বিনিয়োগ, বিমা এবং প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ। আয় বাড়লে বিনিয়োগ সম্ভব। বিমার বৃহত্তর সুযোগ-সুবিধা ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা এবং বিনিয়োগের সুযোগ করে দেয়। প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ সম্প্রসারণের পালে হাওয়া দেয়। আমরা এই প্রতিটি স্তম্ভের উপর কাজ করছি। যখন এই সমস্ত কারণগুলি একত্রিত হয়, আপনি তখন দেখতে পাবেন যে, আর্থিক ক্ষেত্রে আরও অনেক মানুষ অংশগ্রহণ করছে। ফিনটেক উদ্ভাবনের জন্য নিখুঁত স্প্রিং বোর্ড বৃহত্তর ভিত্তি হয়ে ওঠে। ভারতের ফিনটেক শিল্প দেশের প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে আর্থিক এবং আনুষ্ঠানিক ঋণ গ্রহণের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে। এখন এই ফিনটেক ক্ষেত্রে উদ্যোগগুলিকে ফিনটেক বিপ্লবে রূপান্তর করার সময় এসেছে। এই বিপ্লব দেশের প্রতিটি নাগরিকের আর্থিক ক্ষমতা অর্জনে সাহায্য করবে।
বন্ধুগণ,
আমরা যেহেতু ফিনটেক ক্ষেত্রের প্রসারিত রূপের নাগাল পেয়েছি, তাই এখন থেকেই এ বিষয়ে বিচার-বিবেচনা করে মনোযোগ দেওয়া দরকার। ফিনটেক শিল্প বিশাল আকার ধারণ করেছে। জনসাধারণের মধ্যে ফিনটেকের গ্রহণযোগ্যতার এক অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যে বৈশিষ্ট্য সাধারণ ভারতীয়র ডিজিটাল পেমেন্ট ও এই ধরনের প্রযুক্তি গ্রহণে ফিনটেক ইকো ব্যবস্থাপনার প্রতি অগাধা আস্থা এবং বিশ্বাস দেখিয়েছে। এই বিশ্বাস এক দায়িত্বের। বিশ্বাসের অর্থ হ’ল – আপনাকে মানুষের স্বার্থ সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে হবে। ফিনটেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ছাড়া ফিনটেক উদ্ভাবন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
বন্ধুগণ,
আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা ভাগ করে নেওয়া এবং অন্যদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রেও বিশ্বাসী। আমাদের ডিজিটাল গণপরিকাঠামোগত সমাধান সারা বিশ্বের মানুষের জীবনকে উন্নত করতে পারে। ইউপিআই এবং রুপের মতো ব্যবস্থাপনা প্রতিটি দেশের জন্য এক অনন্য সুযোগ এনে দিয়েছে। ‘বাস্তব সময়-ভিত্তিক নগদ লেনদেন ব্যবস্থাপনা’ সেই সঙ্গে ‘অভ্যন্তরীণ কার্ড প্রকল্প’ ও ‘ফান্ড রেমিটেন্স সিস্টেম’ কম খরচে এবং নির্ভরযোগ্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেছে।
বন্ধুগণ,
গুজরাট আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রযুক্তি (জিআইএফটি) – শহর নিছক একটি জায়গা নয়, এটি ভারতের প্রতিশ্রুতির প্রতিনিধি। এটি ভারতের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, চাহিদা, জনসংখ্যা এবং বৈচিত্র্যের প্রতিনিধিত্ব করে। চিন্তাধারা, উদ্ভাবন এবং বিনিয়োগের প্রতি ভারতে উন্মুক্ততার প্রতিনিধিত্ব করে এটি। জিআইএফটি হ’ল গ্লোবাল ফিনটেক বিশ্বের একটি প্রবেশদ্বার। জিআইএফটি শহর এই দৃষ্টিভঙ্গী থেকে জন্ম নিয়েছিল যে, সেখানে প্রযুক্তির সঙ্গে আর্থিক সমন্বয়ে ভারতের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠবে। আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র ভারতের জন্য নয়, বিশ্বের জন্য সেরা আন্তর্জাতিক পরিষেবা প্রদান করা।
বন্ধুগণ,
অর্থ হ’ল অর্থনীতির প্রাণের রক্ত এবং প্রযুক্তি হ’ল তার বাহক। উভয়ই ‘অন্ত্যোদয়’ ও ‘সর্বোদয়’ অর্জনের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জনকল্যাণমুখী ফিনটেক ফোরাম হ’ল শিল্পের সীমাহীন ভবিষ্যৎ অন্বেষণে গ্লোবাল ফিনটেক শিল্পের সমস্ত মূল অংশীদারদের একত্রিত করার এক প্রয়াস মাত্র। মিঃ মাইক ব্লুমবার্গের সঙ্গে আমার শেষ সাক্ষাতের সময় এ বিষয়ে কথপোকথনের কথা মনে আছে। আমি ব্লুমবার্গ গোষ্ঠীকে তাঁদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানাই। ইনফিনিটি ফোরাম বিশ্বের এমন এক ফোরাম, যা উদ্ভাবনের চেতনায় বিশ্বাস ও কল্পনা শক্তি যোগায়। এমনকি, তারুণ্যের শক্তিতে বিশ্বাস ও পরিবর্তনের জন্য আবেগ এনে দেয়। আসুন, আমরা একসঙ্গে বিশ্বব্যাপী উদ্ভূত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানের জন্য ফিনটেকের উদ্ভাবনী ধারণাগুলি অন্বেষণ করি এবং সে বিষয়ে অগ্রসর হই।
ধন্যবাদ।