রাজস্থানের রাজ্যপাল শ্রী কলরাজজি, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী অশোক গেহলটজি, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী শ্রী মনোহরলালজি, আমার মন্ত্রিসভার সহকর্মী নীতিন গড়করিজি, গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতজি, বি কে সিং-জি, অন্যান্য মন্ত্রী, সাংসদ, অভ্যাগতবৃন্দ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,
দিল্লি-মুম্বাই এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম পর্যায়কে আজ জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করতে পেরে আমি গর্ববোধ করছি। এটি দেশের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ এবং সর্বাধুনিক এক্সপ্রেসওয়ে। ভারত যে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এটা তার এক মহান চিত্রস্বরূপ। দৌসার জনগণ এবং সমগ্র দেশবাসীকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি।
ভাই ও বোনেরা,
আধুনিক রাস্তা, আধুনিক রেল স্টেশন, রেলপথ, মেট্রো রেল, বিমানবন্দর যখন গড়ে ওঠে তখন দেশের অগ্রগতিতে তা গতিসঞ্চার করে। পৃথিবীতে এরকম অনেক সমীক্ষা হয়েছে যেখানে দেখা গেছে যে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ব্যয় বাস্তবিক ক্ষেত্রে বহুগুণ ফলপ্রসূ হয়েছে। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আরও বৃহত্তর বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করে। গত ৯ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিরামহীনভাবে বৃহৎ বিনিয়োগের পথে হেঁটেছে। রাজস্থানেও বিগত কয়েক বছরে মহাসড়ক ক্ষেত্রে ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। এবারের বাজেটে আমরা পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ১০ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের সংস্থান রেখেছি। ২০১৪-র তুলনায় এটা প্রায় পাঁচগুণ। এই বৃহৎ বিনিয়োগের সুফল রাজস্থানে, এখানকার গ্রামগুলিতে, দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে পৌঁছবে।
বন্ধুগণ,
সরকার যখন মহাসড়ক, রেলপথ, বন্দর, বিমানবন্দর – এসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে, যখন অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে, ডিজিটাল সংযোগ যখন প্রসার লাভ করে, দরিদ্রদের জন্য যখন কোটি কোটি বাড়ি তৈরি হয় অথবা যখন মেডিকেল কলেজ নির্মাণ করা হয়, তখন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিল্পক্ষেত্র ও ব্যবসায়ী মহল - সকলেই সমৃদ্ধ হন। সিমেন্ট, লোহার রড, বালি, পাথরের ব্যবসা থেকে শুরু করে পরিবহণ ক্ষেত্র - প্রত্যেকেই তা থেকে উপকৃত হন। এসব শিল্প থেকে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। একটা ব্যবসা যখন প্রসার লাভ করে তাতে লোকবল ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে এর থেকে বোঝা যায় যে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে অধিক বিনিয়োগের অর্থ অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি। দিল্লি-মুম্বাই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ক্ষেত্রে বহুবিধ মানুষ অনুরূপ সুবিধা লাভ করেছেন।
বন্ধুগণ,
আধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণের আরও একটা দিক রয়েছে। পরিকাঠামো যখন প্রস্তুত হয় কৃষক থেকে শুরু করে কলেজ, অফিসযাত্রী, ট্রাক, টেম্পো ড্রাইভার, ব্যবসায়ীগণ অনেক বৃহত্তর সুবিধা লাভ করেন যার ফলে আর্থিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, দিল্লি-দৌসা-লালসট এক্সপ্রেসওয়ের ফলে জয়পুর থেকে দিল্লি যেতে আগে যেখানে ৫-৬ ঘন্টা সময় লাগত, এখন তার অর্ধেক সময়ে সেখানে পৌঁছে যাওয়া যাবে। আপনারা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারেন যে এর ফলে কতখানি সময় সাশ্রয় হল। এই এলাকার যেসব বন্ধুরা দিল্লিতে কাজ করেন অথবা যাঁরা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বা যাঁদেরকে অন্য কোনও কাজে যেতে হয়, অনায়াসেই তাঁরা এখন তাঁদের বাড়িতে সন্ধ্যার মধ্যে পৌঁছে যেতে পারবেন। ট্রাক, টেম্পো ড্রাইভাররা, যাঁরা দিল্লি থেকে পণ্য পরিবহণের কাজ করেন, রাস্তায় তাঁদের সারাদিন কাটাতে হবে না। ক্ষুদ্র চাষী ও গবাদি পশুপালক অনায়াসেই তাঁদের শাকসব্জি এবং দুধ অনেক কম খরচে দিল্লিতে পাঠাতে পারবেন। দীর্ঘ বিলম্বিত যাত্রাপথে দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে যেতে তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি এখন অনেক কমে যাবে।
ভাই ও বোনেরা,
এই এক্সপ্রেসওয়েকে ঘিরে গ্রামীণ হাট গড়ে তোলা হচ্ছে। ফলে, স্থানীয় কৃষক, তন্তুবায় এবং হস্তশিল্পীরা তাঁদের পণ্যসামগ্রী অনায়াসেই এখানে বিক্রি করতে পারবেন। রাজস্থান ছাড়াও হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জেলা দিল্লি-মুম্বাই এক্সপ্রেসওয়ের ফলে প্রভূত উপকৃত হবে। হরিয়ানার মেওয়াট জেলা এবং রাজস্থানের দৌসা জেলায় উপার্জনের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে। এই আধুনিক সংযোগ ব্যবস্থার ফলে সরিসকা ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্র, কেওলাদেও, রনথম্বোর জাতীয় পার্ক, জয়পুর এবং আজমেঢ় প্রভৃতি স্থানে যেতে পর্যটকদের অনেক সুবিধা হবে। রাজস্থান ইতিমধ্যেই দেশ ও বিদেশের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থল। এখন এর আকর্ষণ আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।
বন্ধুগণ,
এসব ছাড়াও আরও তিনটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হল আজ। এর একটি প্রকল্প এই এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে জয়পুরের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ গড়ে তুলবে। এর ফলে, জয়পুর থেকে দিল্লি যেতে তিন ঘন্টার যাত্রা আড়াই ঘন্টায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। দ্বিতীয় প্রকল্প আলোয়ারের কাছে আম্বালা-কোটপুতলি করিডরের সঙ্গে এই এক্সপ্রেসওয়েকে সরাসরি যুক্ত করবে। এর ফলে, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ এবং জম্মু ও কাশ্মীর থেকে যানবাহন পাঞ্জাব, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রে অনায়াসেই যেতে পারবে। আরও একটি প্রকল্প হল লালসোট-কারাউলি সড়কের উন্নয়ন। এই সড়ক এই অঞ্চলকে কেবলমাত্র এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গেই যুক্ত করবে না, এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেবে।
বন্ধুগণ,
দিল্লি-মুম্বাই এক্সপ্রেসওয়ে এবং পূর্বাঞ্চল ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর রাজস্থান সহ দেশের অগ্রগতির দুটি মূল স্তম্ভ হতে চলেছে। অদূর ভবিষ্যতে রাজস্থান সহ এই সমগ্র এলাকার চালচিত্রকে এই প্রকল্প বদলে দেবে। এই দুই প্রকল্প দিল্লি-মুম্বাই শিল্প করিডরকে অনেক বেশি শক্তিশালী করে তুলবে। এসব সড়ক এবং পণ্য করিডর হরিয়ানা ও রাজস্থান সহ পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিকে বন্দরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করবে। লজিস্টিক্স, পরিবহণ এবং মজুতভাণ্ডার সংক্রান্ত বিবিধ শিল্পের জন্য নতুন সম্ভাবনার ক্ষেত্র এর ফলে তৈরি হবে।
বন্ধুগণ,
পিএম গতি শক্তি জাতীয় মাস্টার প্ল্যান-এর মাধ্যমে এই এক্সপ্রেসওয়ে সমৃদ্ধ হওয়ায় আমি খুশি। গতি শক্তি মাস্টার প্ল্যানের অধীন এই এক্সপ্রেসওয়েতে একটি করিডরকে চিহ্নিত করা হয়েছে ৫জি নেটওয়ার্কের জন্য অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপনের। খানিকটা এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে ইলেক্ট্রিক ওয়্যারিং এবং গ্যাস পাইপলাইনের জন্য। অতিরিক্ত এলাকা সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং মজুতের জন্য। এইসব প্রয়াস ভবিষ্যতে কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় করবে এবং দেশের সময় বাঁচাবে।
বন্ধুগণ,
‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ রাজস্থান এবং দেশের উন্নয়নে আমাদের মন্ত্র। এই মন্ত্র অনুসরণ করে আমরা সক্ষম, সমর্থ ও সমৃদ্ধ ভারত গড়ে তুলছি। এখন আর আমি আমার ভাষণ দীর্ঘায়িত করব না। ১৫ মিনিট পর কাছাকাছি এলাকায় একটি সরকারি অনুষ্ঠানে আমার ভাষণ দেওয়ার কথা। রাজস্থান থেকে বহু মানুষ সেখানে অপেক্ষায় আছেন। ফলে, অন্য আরও বিভিন্ন বিষয় সেখানকার মানুষের কাছে আমি বলব। ফলে আরও একবার এই আধুনিক এক্সপ্রেসওয়ের জন্য আপনাদের সকলকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।