শ্রাবণ মাসের আজ প্রথম সোমবার। এই শুভ দিনটিতে সংসদের এক গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন শুরু হচ্ছে। এই উপলক্ষে আমি সকল দেশবাসীকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
সংসদের বাদল অধিবেশনও শুরু হচ্ছে আজ। সমগ্র দেশ গভীর আগ্রহের সঙ্গে তা দেখতে ও শুনতে আগ্রহী। সকলেই আশা করছেন যে এই অধিবেশন যথেষ্ট ইতিবাচক ও গঠনমূলক হয়ে উঠবে। শুধু তাই নয়, সাধারণ মানুষের স্বপ্নের বাস্তবায়নে তা এক বলিষ্ঠ ভিত রচনা করবে।
বন্ধুগণ,
ভারতীয় গণতন্ত্রের গৌরবময় যাত্রাপথে আমি সমগ্র বিষয়টিকে একটি তাৎপর্যময় মাইলফলক বলেই মনে করি। প্রায় ৬০ বছর পর একটি সরকার উপর্যুপরি তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসীন হতে পেরেছে। শুধু তাই নয়, এই মেয়াদকালের প্রথম বাজেট পেশের সুযোগও এসেছে তার সামনে। ভারতীয় গণতন্ত্রের গৌরবময় যাত্রাপথে দেশের কাছে তা এক যথেষ্ট সম্মানজনক ঘটনা। সূচনা হতে চলেছে বাজেট অধিবেশনের। এর মধ্য দিয়ে একটি একটি করে আমাদের প্রতিশ্রুতি পালনের দিকে আমরা এগিয়ে চলব। কারণ ঐ প্রতিশ্রুতি আমি দিয়েছি আমার দেশবাসীকে। ‘অমৃতকাল’-এর লক্ষ্যে এই বাজেট কিন্তু যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। পাঁচ বছরের জন্য দেশ পরিচালনার জনমত আমরা লাভ করেছি। তাই, এই পাঁচ বছরে আমাদের কাজের ধারা কোন কোন দিকে এগোতে পারে, তারই আভাস মিলতে চলেছে আজকের এই বাজেটে। সেই অর্থে আগামী ২০৪৭ সালের মধ্যে আমাদের এক উন্নত ভারত গঠনের স্বপ্ন সফল হওয়ার পথে এ হল এক বলিষ্ঠ ভিত্তি। ২০৪৭ বছরটিতে আমরা স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন করব। ভারত যে বর্তমানে দ্রুততম গতিতে এগিয়ে চলা এক বৃহদায়তন অর্থনীতির দেশ, এই ঘটনা থেকে দেশের প্রত্যেক নাগরিক বিশেষভাবে গর্ব অনুভব করেন। গত তিন বছর ধরে দেশে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশ পর্যন্ত আমরা উন্নীত করতে পেরেছি। বর্তমান ভারতে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী, বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ ও পরিস্থিতি এবং কাজকর্মের সাফল্য রয়েছে একেবারে শীর্ষে। উন্নয়নের যাত্রাপথে এ হল আমাদের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
বন্ধুগণ,
দল-মত নির্বিশেষে সংসদের সকল সদস্যদের কাছে আমার আবেদন যে একটি বিষয় আপনারা ভেবে দেখুন গত জানুয়ারি মাস থেকে আমরা সর্বশক্তি নিয়োগ করে যাবতীয় সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে চলেছি। আমাদের বার্তা সঠিকভাবে পৌঁছে দিতে পেরেছি সাধারণ মানুষের কাছে। অনেকেই যেমন আমাদের পথের দিশা দেখিয়েছেন, অনেকেই আবার চেষ্টা করেছেন আমাদের দিগ্ভ্রষ্ট করে তুলতে। তবে, সেই সময় এখন কিন্তু অতিক্রান্ত। তাই জনসাধারণ রায় দিয়েছেন আমাদের পক্ষে। বর্তমানে নির্বাচিত সকল সাংসদের কর্তব্য এবং সকল রাজনৈতিক দলের বিশেষ দায়িত্বই হল রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে লড়াই ও দ্বন্দ্বের মানসিকতা কাটিয়ে উঠে আগামী পাঁচ বছরের জন্য দেশকে সমস্যা মোকাবিলার কাজে সাহায্য করা। আমরা অবশ্যই আরও বেশি নিষ্ঠা এবং আরও বেশি আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করে যাব। তাই, সংকীর্ণ রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এবং সংসদের মতো একটি মর্যাদার মঞ্চ ব্যবহার করে আগামী চার থেকে সাড়ে চার বছর পর্যন্ত দেশসেবার কাজে নিযুক্ত হতে আমি আবেদন জানাই সংশ্লিষ্ট সকলকেই।
২০২৯ হল আরেকটি নির্বাচনের বছর। ঐ বছরের জানুয়ারি মাসের পর থেকে পরবর্তী ছ’মাসের জন্য আপনারা আবার রাজনৈতিক লড়াই-এর খেলায় মেতে উঠতে পারেন। কিন্তু তার আগে পর্যন্ত ২০৪৭-এর স্বপ্নকে সফল করে তুলতে আমাদের সকলকেই কিন্তু সমবেতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এজন্য প্রয়োজন দরিদ্র সাধারণ মানুষ, কৃষক সম্প্রদায়, তরুণ ও যুব সমাজ এবং দেশের নারীদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জন-আন্দোলনের ভিত তৈরি করা। খুব দুঃখের সঙ্গেই আমাকে বলতে হচ্ছে যে ২০১৪ সাল থেকে কয়েকজন সাংসদ পাঁচ বছর পর্যন্ত মেয়াদকাল উত্তীর্ণ করেছেন। কারোর কারোর মেয়াদকাল আবার ছিল ১০ বছর পর্যন্ত। কিন্তু তাঁদের অনেককেই কিন্তু তাঁদের নিজের নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্র সম্পর্কে সেরকমভাবে কিছু বলতে সুযোগ দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, তাঁদের মতামত ব্যক্ত করে সংসদীয় কাজকর্মকে সমৃদ্ধ করে তোলার কোনো প্রচেষ্টাও তাঁদের মধ্যে দেখা যায়নি। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতিবাচক রাজনীতি সংসদের গুরুত্বপূর্ণ সময়কালের অপব্যবহার করেছে মাত্র। ঐ দলগুলির রাজনৈতিক ব্যর্থতাকে ঢেকে রাখার এ ছিল এক অপচেষ্টা মাত্র। তাই, আমি সকল দলের কাছেই আবেদন জানাব যে যাঁরা প্রথমবার সংসদে নির্বাচিত হয়ে এলেন, আলোচনা ও বিতর্ককালে তাঁদের অন্তত মত প্রকাশের সুযোগ করে দিন। যতজনই তাঁদের মতামত ব্যক্ত করুন না কেন, সম্ভাব্য সকল রকম উপায়ে আমরা চেষ্টা করে যাব তা আগ্রহের সঙ্গে শুনতে। নতুন সরকার গঠনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশনে অ-গণতান্ত্রিকভাবে চেষ্টা করা হয়েছিল সরকারের কন্ঠরোধ করার। অথচ এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৪০ কোটি নাগরিকের মতামত ও সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। প্রকৃত গণতন্ত্র কিন্তু আড়াই ঘন্টা ধরে কোনো প্রধানমন্ত্রীকে বলার সুযোগ না দেওয়ার ঘটনাকে সমর্থন করে না। এক কথায়, তাঁর কন্ঠরোধ করা হয়েছিল। অথচ উদ্বেগের বিষয়, যাঁরা এই চেষ্টা করেছিলেন, তাঁদের কিন্তু এই কাজের জন্য কোনভাবেই দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি।
আজ আমি এখানে বিশেষ জোর দিয়ে বলতে চাই যে দেশের নাগরিকরা দেশ সেবার জন্যই আমাদের সংসদে পাঠিয়েছেন, আমাদের দল কিন্তু আমাদের এখানে পাঠায়নি। সংসদ কাজ করে জাতি তথা দেশবাসীর স্বার্থে, কোনো সংকীর্ণ স্বার্থসিদ্ধির জন্য নয়। সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন দেশের ১৪০ কোটি মানুষ, কয়েকজন সাংসদ মাত্র নয়। আমাদের সকল মাননীয় সাংসদ যথোচিত প্রস্তুতি নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন, এই বিশ্বাস আমার রয়েছে। বিভিন্ন মতামতের মূল্য আমরা উপলব্ধি করি। কিন্তু, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী কিন্তু যথেষ্ট ক্ষতিকর। দেশের প্রয়োজন উন্নয়ন ও অগ্রগতির মতাদর্শের মধ্য দিয়ে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। তাই, নেতিবাচক চিন্তাভাবনাকে দেশ কখনই প্রশ্রয় দেয় না। অগ্রগতি ও উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা নতুন নতুন উচ্চতায় দেশকে নিয়ে যেতে পারি। আমি আন্তরিকভাবে আশা করব যে গণতন্ত্রের এই পবিত্র স্থানটিতে আমরা গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে বিচার করে ভারতের অগণিত সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার সফল রূপায়ণে চেষ্টা করে যাব।
অনেক অনেক ধন্যবাদ বন্ধুগণ!