আজকের অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে উপস্থিত পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র সিং তোমরজি, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, হরিয়ানা, অরুণাচল প্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের সকল মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীগণ, হরিয়ানার উপ-মুখ্যমন্ত্রী মহোদয়, বিভিন্ন রাজ্যের পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রীগণ, গ্রামীণ বিকাশ মন্ত্রীগণ, সারা দেশের গ্রাম পঞ্চায়েতে বসে এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া সকল জনপ্রতিনিধিগণ, আর একটু আগে নরেন্দ্র সিংজি যেমনটি বললেন, প্রায় ৫ কোটি মানুষ এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন। এত বড় সংখ্যায় গ্রামে গ্রামে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করাই দেশে গ্রাম বিকাশের লক্ষ্যে যে পদক্ষেপগুলি নেওয়া হয়েছে সেগুলিকে আরও শক্তি জোগায়। এই সকল ৫ কোটি ভাই-বোনেদের আমার সাদর নমস্কার।
ভাই ও বোনেরা,
পঞ্চায়েতি রাজ দিবসের এই দিনটি গ্রামীণ ভারতের নব-নির্মাণের সঙ্কল্পকে পুনরুচ্চারণের এক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ এনে দেয়। এই দিনে আমাদের গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির অবদান আর তাদের অসাধারণ কাজগুলিকে দেখা, বোঝা এবং সেগুলির প্রশংসা করারও দিন।
একটু আগেই আমি গ্রাম উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় কাজ করার জন্য পঞ্চায়েতগুলিকে সম্মানিত করার এবং তাদেরকে পুরস্কৃত করার সুযোগ পেয়েছি। আমি আপনাদের সবাইকে পঞ্চায়েতি রাজ দিবস উপলক্ষে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। সম্প্রতি অনেক রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে আর অনেক রাজ্যে এই নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছে। সেজন্য আজ আমাদের সঙ্গে অনেক নতুন বন্ধুরাও রয়েছেন। আমি সমস্ত নতুন জনপ্রতিনিধিদেরও অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
বন্ধুগণ,
আজ গ্রাম এবং গরীবকে তাঁদের বাড়ির আইনসম্মত দলিল প্রদানকারী অনেক বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, ‘স্বামীত্ব যোজনা’ গোটা দেশে চালু করা হয়েছে। গত বছর যে জায়গাগুলিতে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল, সেখানকার অনেক বন্ধুদের প্রপার্টি কার্ডও দেওয়া হয়েছে। সেজন্য এ কাজের সঙ্গে যুক্ত আর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা যাঁরা করছেন, সেই সকল বন্ধুদেরও আমি অনেক অনেক অভিনন্দন এবং শুভকামনা জানাই। এই ‘স্বামীত্ব যোজনা’ গ্রাম এবং গরীবের আত্মবিশ্বাসকে, পারস্পরিক বিশ্বাসকে আর উন্নয়নকে নতুন গতি প্রদান করবে। সেজন্য আমি সকল দেশবাসীকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
বন্ধুগণ,
এক বছর আগে যখন আমরা পঞ্চায়েতি রাজ দিবস উপলক্ষে মিলিত হয়েছিলাম তখন গোটা দেশ করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছিল। তখন আমি আপনাদেরকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম যে আপনারা নিজেদের গ্রামগুলিতে করোনা পৌঁছনোর আগেই প্রতিরোধের ক্ষেত্রে নিজেদের ভূমিকা পালন করুন। আপনারা সবাই অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করোনাকে দেশের গ্রামগুলিতে পৌঁছতে দেননি। শুধু তাই নয়, গ্রামে গ্রামে জনগণের মনে সচেতনতা সৃষ্টি করার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত বড় ভূমিকা পালন করেছেন। এ বছরও আমাদের সামনে যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেই চ্যালেঞ্জ আগের থেকেও একটু বেশি। আর আমাদের দেশের গ্রামগুলিতে এই সংক্রমণ কোনও পরিস্থিতিতেই পৌঁছতে দিলে চলবে না। একে আটকাতেই হবে।
গত বছর আপনারা নিজেদের পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের গ্রামে গ্রামে করোনা প্রতিরোধে যেমন নেতৃত্ব দিয়েছেন, সে কাজ এবারও অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে এবং নিয়মানুবর্তিতার সঙ্গে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে সঙ্গে নিয়ে করলে সাফল্য অবশ্যই আসবে। কারণ, আপনারা গতবার সফল হয়েছিলেন। এখন এক বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সঙ্কট সম্পর্কে অধিকাংশ তথ্য রয়েছে। সঙ্কট থেকে রক্ষার সমস্ত পথ নিয়েও তথ্য রয়েছে। আর সেজন্য আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আমার দেশের, আমার গ্রামগুলির সমস্ত মানুষ, গ্রামের নেতৃত্ব প্রদানকারী প্রত্যেকে গ্রামগুলিতে আপনারা করোনা প্রতিরোধে অবশ্যই সফল হবেন, আর অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে প্রতিরোধক ব্যবস্থাও নেবেন। যেসব গাইডলাইন্স নানা সময়ে জারি হয়, সেগুলি যেন প্রত্যেক গ্রামে ভালোভাবে পালন করা হয় - এটা আমাদের প্রত্যেককেই সুনিশ্চিত করতে হবে।
এবার তো আমাদের কাছে টিকার সুরক্ষা কবচ রয়েছে। সেজন্য আমাদের সমস্ত সাবধানতাও পালন করতে হবে, আবার এটাও সুনিশ্চিত করতে হবে যে গ্রামের প্রত্যেক ব্যক্তি যেন টিকার দুটি ডোজই নেন। ভারত সরকার এখন ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে প্রত্যেক ব্যক্তিকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। ভারতের প্রত্যেক রাজ্যে এই টিকাকরণ চালু রয়েছে। আগামী ১ মে থেকে ১৮ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদেরও টিকাকরণের প্রক্রিয়া শুরু হবে। আপনাদের মতো প্রত্যেক বন্ধুর সহযোগিতাতেই এই টিকাকরণ অভিযান সফল হবে।
বন্ধুগণ,
এই কঠিন সময়ে কোনও পরিবার যেন খালি পেটে না ঘুমোয়, দরিদ্র থেকে দরিদ্রত মানুষেরও যেন উনুন জ্বলতে থাকে এটা দেখাও আমাদের দায়িত্ব। গতকালই কেন্দ্রীয় সরকার ‘প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ যোজনা’র মাধ্যমে বিনামূল্যে রেশন প্রদানের প্রকল্পের মেয়াদ আবার বাড়িয়েছে। মে এবং জুন মাসেও দেশের প্রত্যেক গরীব বিনামূল্যে রেশন পাবেন। এর মাধ্যমে ৮০ কোটিরও বেশি দেশবাসী উপকৃত হবেন। সেজন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ২৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ হবে।
বন্ধুগণ,
এই রেশন গরীবের জন্য, দেশের জন্য। অন্নের প্রতিটি দানা যেন সেই পরিবারগুলি পর্যন্ত পৌঁছয়, দ্রুতগতিতে পৌঁছয়, ঠিক সময়ে পৌঁছয়, যাঁদের এর প্রয়োজন আছে, এটা সুনিশ্চিত করা আমাদের সকলের কাজ, আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে প্রত্যেক রাজ্য সরকার এবং প্রতিটি পঞ্চায়েতে নির্বাচিত আমাদের বন্ধুরা যথাযথভাবে এই দায়িত্ব পালন করবেন।
বন্ধুগণ,
গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির জনপ্রতিনিধি রূপে আপনাদের ভূমিকা গণতন্ত্রকে মজবুত করা আর গ্রামের আশা ও আকাঙ্ক্ষাগুলিকে পূরণ করা। আমাদের গ্রামগুলি ভারতের উন্নয়ন এবং আত্মনির্ভরতার প্রধান কেন্দ্র। পূজনীয় মহাত্মা গান্ধীজি বলতেন, “আত্মনির্ভরতা বলতে আমি বুঝি এমন সব গ্রাম যেগুলি নিজেদের মৌলিক প্রয়োজনসাধনের জন্য আত্মনির্ভর হবে। কিন্তু আত্মনির্ভরতার মানে এটা নয় যে আমরা নিজেদের সীমার মধ্যে আটকে পড়ব।” পূজনীয় বাপু’র ভাবনা কত স্পষ্ট! অর্থাৎ আমরা নতুন নতুন সুযোগগুলিকে, নতুন নতুন সম্ভাবনাগুলিকে খুঁজে নিজের নিজের গ্রামকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাব।
বন্ধুগণ,
গত বছর যে ছয়টি রাজ্যে ‘স্বামীত্ব যোজনা’ শুরু হয়েছে, সেখানে এক বছরের মধ্যে এর প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ‘স্বামীত্ব যোজনা’য় অত্যাধুনিক ড্রোনের মাধ্যমে গোটা গ্রামের সম্পত্তি সার্ভে করা হয়েছে। যাঁর যতটা জমি রয়েছে তাকে তাঁর প্রপার্টি কার্ড বা সম্পত্তিপত্র প্রদান করা হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেই ৫ হাজার গ্রামে ৪ লক্ষেরও বেশি সম্পত্তির মালিককে ‘ই-প্রপার্টি কার্ড’ দেওয়া হয়েছে। ‘স্বামীত্ব যোজনা’র ফলে আজ গ্রামগুলিতে একটি নতুন আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। একটা নিরাপত্তার ভাব জেগে উঠেছে।
গ্রামগুলিতে বাড়ির নকশা, গ্রামবাসীদের প্রত্যেকের সম্পত্তির দলিল যখন হাতে আসে তখন অনেক ধরনের আশঙ্কার অবসান হয়। এর মাধ্যমে গ্রামে জমি-সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ অনেক কমেছে। অনেক জায়গায় পরিবারের মধ্যে ঝগড়া মিটেছে। গরীব-দলিতদের মানুষদের শোষণের সম্ভাবনাও সমাপ্ত হয়েছে। দুর্নীতির একটি বড় রাস্তা বন্ধ হয়েছে। কোর্ট-কাছারিতে অনেক মামলারও নিষ্পত্তি হয়েছে। যাঁরা জমির কাগজ পেয়েছেন, তাঁরা ব্যাঙ্ক থেকে সহজেই ঋণও নিতে পারছেন।
বন্ধুগণ,
‘স্বামীত্ব যোজনা’র আরেকটি বিশেষ দিক রয়েছে। এই যোজনায় ড্রোন সার্ভের পর প্রত্যেক গ্রামের একটা সম্পূর্ণ মানচিত্র, জমির সম্পূর্ণ হিসাবনিকাশও তৈরি হয়েছে। এর ফলে, পঞ্চায়েতগুলিতে গ্রামের উন্নয়ন সম্পর্কিত কাজে একটি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ভাবনা নিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যেতে এই মানচিত্র অনেক কাজে লাগবে। আর আমি সকল গ্রাম প্রধানদের অনুরোধ করব, এই সুযোগকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজে লাগান যাতে সুপরিকল্পিতভাবে আপনাদের গ্রামগুলির উন্নয়ন হয়।
এক প্রকার গরীব মানুষের নিরাপত্তা, গ্রামের অর্থনীতি আর গ্রামগুলির পরিকল্পনামাফিক উন্নয়নে সমস্ত কিছুকে সুনিশ্চিত করে ‘স্বনিধি যোজনা’। দেশের সমস্ত রাজ্যগুলির প্রতি আমার অনুরোধ, এই ‘স্বনিধি যোজনা’র জন্য সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে মউ স্বাক্ষরের কাজ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করুন। অনেক রাজ্যে এর জন্য জমি আইনে পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। রাজ্যগুলির প্রতি আমার পরামর্শ যে গ্রামের প্রত্যেক বাড়ির জন্য দলিল তৈরি হওয়ার পর যদি কোনও ব্যক্তি ব্যাঙ্ক ঋণ চান, তাহলে তাঁরা যেন ব্যাঙ্কে গিয়ে কোনও সমস্যায় না পড়েন, সেটা সুনিশ্চিত করতে হবে। আমি ব্যাঙ্কগুলিকে অনুরোধ জানাই, তারা যেন ‘প্রপার্টি কার্ড’-এর একটি ফরম্যাট তৈরি করেন যাকে ব্যাঙ্কে ঋণের জন্য প্রামাণ্য নথি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। আপনারা সবাই আপনাদের মতো প্রত্যেক পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদেরও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা এবং গ্রামগুলিতে সঠিক তথ্য প্রদানের কাজ করতে হবে।
বন্ধুগণ,
আমার দেশের প্রগতি এবং সংস্কৃতির নেতৃত্ব সর্বদাই আমাদের গ্রামগুলিই প্রদান করেছে। সেজন্য আজ আমরাও দেশের প্রতিটি নীতি প্রণয়ন এবং প্রত্যেক প্রচেষ্টার কেন্দ্রে গ্রামগুলিকে রেখেই এগিয়ে চলেছি। আমরা চেষ্টা করছি যাতে আধুনিক ভারতের গ্রামগুলি সমর্থ হয়, আত্মনির্ভর হয়। সেজন্য পঞ্চায়েতগুলির ভূমিকা বাড়ানো হচ্ছে, পঞ্চায়েতগুলিকে নতুন নতুন অধিকার প্রদান করা হচ্ছে, পঞ্চায়েতগুলিকে ডিজিটালাইজ করে তোলার জন্য প্রত্যেক গ্রামকে অপ্টিক্যাল ফাইবার নেটের মাধ্যমে যুক্ত করার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
আজ প্রত্যেক বাড়িতে পরিশ্রুত পানীয় জল প্রদানের জন্য যে ‘জল জীবন মিশন’-এর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে তার তদারকি এবং সম্পাদনের দায়িত্বও পঞ্চায়েতগুলিকে দেওয়া হয়েছে। এটা এমন একটা বড় কাজ যা আপনাদের দায়িত্ব এবং অংশীদারিত্বকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আজ গ্রামে কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে দরিদ্রদের পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়া পর্যন্ত যে ব্যাপক অভিযান কেন্দ্রীয় সরকার শুরু করেছে, সেগুলির কাজ গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির মাধ্যমে এগিয়ে চলেছে।
গ্রামের উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকার ঠিক করতে হলে, সেগুলি সংশ্লিষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও পঞ্চায়েতগুলির ভূমিকা বাড়ানো হয়েছে। আপনারা নিজেদের গ্রামের উন্নয়নের কথা ভাবুন, গ্রামবাসীর ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী উন্নয়নে গতি আনুন। এটাই দেশবাসী আপনাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করে। আপনাদের এই দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থও দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পঞ্চায়েতগুলিকে গ্রামের উন্নয়নের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খরচ করার ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। ছোট ছোট প্রয়োজনসাধনের জন্য আপনাদের সরকারি দপ্তরগুলিতে যাতে কম যেতে হয়, সেই চিন্তা করা হচ্ছে। আজ যেমন যে নগদ পুরস্কার এখানে দেওয়া হয়েছে, সেই টাকাও সরাসরি পঞ্চায়েতগুলির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে।
বন্ধুগণ,
ভারত সরকার ২ লক্ষ ২৫ হাজার কোটিরও বেশি টাকা গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির হাতে তুলে দিয়েছে। এত বড় অঙ্কের টাকা এর আগে কখনও পঞ্চায়েতগুলিকে দেওয়া হয়নি। এত টাকা গ্রামগুলির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ যাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ, পরিশ্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নতকরণের জন্য আপনারা খরচ করবেন। কিন্তু যখন গ্রামগুলির উন্নয়নের জন্য এত টাকা দেওয়া হবে, গ্রামে গ্রামে এত কাজ হবে, তখন আমাদের গ্রামবাসীরা আপনাদের কাছ থেকে প্রতিটি কাজে দক্ষতা প্রত্যাশা করবেন। এই প্রত্যাশা আপনাদের ওপর রয়েছে। এই প্রত্যাশা পূরণের দায়িত্বও আপনাদেরই।
সেজন্য পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রক ‘ই-গ্রাম স্বরাজ’-এর মাধ্যমে অনলাইনে অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। যত আর্থিক লেনদেন হবে তা পাবলিক ফিনান্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা পিএফএমএস-এর মাধ্যমে হবে। এভাবে খরচে স্বচ্ছতা আর দায়িত্ব নির্ধারণের জন্য অনলাইন অডিটের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে বিপুল সংখ্যক পঞ্চায়েত ইতিমধ্যেই এই ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আমি দেশের সমস্ত পঞ্চায়েত প্রধানদের অনুরোধ করব, আপনার পঞ্চায়েত যদি ইতিমধ্যেই এই ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত না হয়ে থাকে, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব আপনারা এর সঙ্গে যুক্ত হন।
বন্ধুগণ,
এ বছর আমরা স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে প্রবেশ করতে চলেছি। আমাদের সামনে অনেক অনেক চ্যালেঞ্জ অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু তবুও উন্নয়নের চাকাকে আমাদের দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতেই হবে। আপনারাও নিজেদের গ্রামের উন্নয়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং নির্ধারিত সময়ে সেগুলি বাস্তবায়িত করুন। যেমন আপনারা গ্রামসভায় পরিচ্ছন্নতা নিয়ে, জল সংরক্ষণ নিয়ে, পুষ্টি নিয়ে, টিকাকরণ নিয়ে, শিক্ষা নিয়ে এক একটি স্বতন্ত্র অভিযান চালু করতে পারেন। আপনারা গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে জল সংরক্ষণ সংক্রান্ত লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন। আপনারা গ্রামে ভূগর্ভস্থ জলের উচ্চতা কিভাবে ওপরে তুলবেন, সে বিষয়ে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন। আপনাদের খেতগুলিকে কিভাবে রাসায়নিক সারমুক্ত করতে পারেন, কম জলে বেশি ফসল উৎপাদন করতে পারেন, প্রতি বিন্দুতে অধিক ফসল ফলাতে পারেন তা সুনিশ্চিত করতে আপনাদেরই কাজ করে যেতে হবে।
গ্রামের সকল শিশু এবং বিশেষ করে কন্যাসন্তানরা যেন বিদ্যালয়ে যায়! কেউ যেন মাঝপথে পড়া না ছাড়ে! আপনাদের সবাইকে মিলেমিশে এই দায়িত্ব পালন করতে হবে। অনলাইন পড়াশোনা থেকে শুরু করে নিজের স্তরে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি কিভাবে গরীব শিশুদের সাহায্য করতে পারে, এটা সুনিশ্চিত করতে আপনারা অবশ্যই নিজেদের অবদান রাখবেন। ‘মিশন অন্ত্যোদয় সর্বেক্ষণ’-এর মাধ্যমে গ্রামের সমস্ত প্রয়োজন, যত ত্রুটি সামনে আসে - প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েত সেগুলি দূর করার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েতগুলির মন্ত্র হওয়া উচিৎ ‘ওষুধও কড়াকড়িও’। আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবার আগে জয়যুক্ত হওয়া, আমার প্রিয় ভারতের প্রতিটি গ্রাম আবার বিজয়ী হবে। আমার ভারতের নেতৃত্ব বিজয়ী হবে, আমার ভারতের গ্রামের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর নাগরিক, গ্রামের সমস্ত নাগরিক মিলেমিশে বিজয়ী হবেন আর আপনাদের এই সাফল্যের মাধ্যমে দেশ এবং বিশ্বকে আপনারাই পথ দেখাবেন। আপনাদের প্রতি আমার এই ভরসা, বিশ্বাস তৈরি হয়েছে গত এক বছরের অভিজ্ঞতার ফলে। আর আমার পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে যে আপনারা এই প্রত্যাশা অবশ্যই পূরণ করবেন, আর অত্যন্ত ভালবাসাপূর্ণ আবহে এই দায়িত্ব সম্পন্ন করবেন। এটাই আপনাদের বৈশিষ্ট্য। কেউ যেন ক্ষুধার্ত না থাকেন, কারোর যেন ক্ষতি না হয়, এই ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাবেন।
আরেকবার আপনাদের এই করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দ্রুত বিজয় প্রাপ্তির শুভেচ্ছা জানিয়ে আপনাদের গ্রামগুলিকে করোনামুক্ত গ্রাম রাখার ক্ষেত্রে আপনারা যেন সফল হন এই বিশ্বাস রেখে আরেকবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই, অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!