নমস্কার, কালিস্পেরা, সৎ শ্রী আকাল, জয় গুরুদেব! অর্থাৎ ‘ধনগুরুদেব’,
উৎসবের আবহে এবং উদযাপনের পরিবেশে আপনাদের পরিবারের একজন হয়ে ওঠার ইচ্ছা ও আগ্রহ আমাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। কারণ আমি মনে করি যে আমার পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গেই আমি মিলিত হয়েছি এখানে। এখন শ্রাবণ মাস যা কিনা ভগবান শিবের পূজার্চনার একটি বিশেষ সময়কাল। এই পবিত্র মাসটিতে আমাদের দেশ একটি নতুন মাইলফলক স্পর্শ করতে পেরেছে। বিশ্বের মধ্যে ভারতই হল প্রথম দেশ যে পদার্পণ করেছে চাঁদের অন্ধকারময় সাউথ পোলের দিকটিতে। চাঁদের ওপর উত্তোলিত হয়েছে ভারতের ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা যা সমগ্র বিশ্বের কাছে ভারতের ক্ষমতা ও দক্ষতার একটি প্রতীকচিহ্ন হয়ে থাকবে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমি অভিনন্দন বার্তা পেতে শুরু করেছি। মানুষ একের পর এক তাঁদের শুভেচ্ছা পাঠিয়ে চলেছেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে তাঁরা আপনাদেরও নিশ্চয়ই অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাই নয় কি? আপনারাও অনেক অনেক অভিনন্দনবার্তা পেতে শুরু করেছেন। সত্যি কথা বলতে কি, প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছেই পৌঁছে গেছে এই অভিনন্দনবার্তা। সবক’টি সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন অভিনন্দনের বন্যা। আমাদের সাফল্য যখন এতটাই তাৎপর্যময়, সেই সাফল্যের পেছনে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করেছে তাকেও নিরন্তর করে তোলা প্রয়োজন। আপনারা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, আপনাদের প্রত্যেকের হৃদয়েই স্পন্দিত হচ্ছে ভারতের কথা। আমি আজ আপনাদের সকলের মাঝে উপস্থিত। তাই, আমি আরও একবার চন্দ্রায়নের বিরাট সাফল্যের ঘটনাকে স্মরণ করে আপনাদের সকলকেই আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুগণ,
শৈশবকাল থেকেই আমরা চাঁদকে ‘চাঁদমামা’ বলতে শিখে এসেছি। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে অনেকেই চন্দ্রায়ন সম্পর্কে ছবি সকলের কাছে মেলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এই ছবিগুলির মধ্যে একথাই বলতে চাওয়া হয়েছে যে মা বসুন্ধরা চন্দ্রায়নকে পাঠিয়েছেন তার ভাই চাঁদের কাছে রাখি বন্ধনের মুহূর্তটিতে। চাঁদ কিভাবে সেই রাখির মর্যাদা রক্ষা করেছে তাও আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি। রাখি বন্ধন উৎসব আর কয়েকদিনের মধ্যেই আগতপ্রায়। রাখি বন্ধন উপলক্ষে আমি আপনাদের সকলকেই আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে রাখি।
আমার প্রিয় পরিবার-পরিজন,
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত আমি সফর করেছি। কিন্তু, গ্রিস তথা এথেন্সে আমার উপস্থিতির একটি বিশেষ দিক রয়েছে। প্রথমত, এথেন্স শহরটির রয়েছে হাজার হাজার বছরের এক সুপ্রাচীন ইতিহাস। দ্বিতীয়ত, আমি কাশী থেকে নির্বাচিত একজন সাংসদ হিসেবে বলতে চাই যে কাশী হল বিশ্বের প্রাচীনতম জীবন্ত নগরীগুলির মধ্যে অন্যতম। তৃতীয়ত, তাৎপর্যের আরও একটি দিক রয়েছে যা হয়তো অনেকের কাছেই অজানা। আমার জন্ম গুজরাটের ভাদনগরে। সেটিও এথেন্সের মতো প্রাণচঞ্চল একটি শহর। সেখানেও রয়েছে হাজার হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার কিছু কিছু ধ্বংসাবশেষ। তাই, এথেন্সে আমার উপস্থিতির অর্থই হল এক নতুন আবেগে পুনরায় আপ্লুত হওয়া। আপনারা দেখেছেন যে গ্রিস সরকার আমাকে গ্রিসের সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কারে সম্মানিত করেছে। তবে এই সম্মান শুধু আমার একার নয়, আপনাদের সকলের, ১৪০ কোটি ভারতবাসীর। তাই, এই সম্মান আমি উৎসর্গ করছি ভারতমাতার সকল সন্তানদের উদ্দেশে।
বন্ধুগণ,
আজ গ্রিসবাসীর কাছে আমি আমার সমবেদনার বার্তাও পৌঁছে দিতে চাই। এখানে যখন দাবানলের ঘটনা ঘটে, তখন তা ছিল এক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। বিধ্বংসী সেই বিপর্যয়ে এখানে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু সঙ্কটের মুহূর্তে ভারত বরাবরই থেকেছে গ্রিসের পাশে।
বন্ধুগণ,
ভারত ও গ্রিসের মধ্যে সম্পর্ক বহু শতাব্দী প্রাচীন এবং এই সম্পর্কের মূল প্রোথিত রয়েছে দু’দেশের সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যে। গ্রিসের ইতিহাসবিদরা ভারতীয় সভ্যতার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়ে গেছেন। এক সময় ভারতের মৌর্য সাম্রাজ্যের সঙ্গে গ্রিসের ছিল এক বিশেষ মৈত্রী সম্পর্ক। সম্রাট অশোকও গ্রিসের সঙ্গে এক বলিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। গণতন্ত্র সম্পর্কে আলোচনা বিশ্বের অন্যত্র যখন এতটা দানাবেঁধে ওঠেনি, তখন থেকেই আমাদের দু’দেশের সভ্যতার মধ্যে কাজ করত এক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিতচর্চা, শিল্পকলা, ব্যবসা-বাণিজ্য – সর্বক্ষেত্রেই আমাদের দু’দেশের সভ্যতা পরস্পরের কাছ থেকে অনেক কিছু শিক্ষা গ্রহণ করেছে এবং এইভাবে তারা একে অপরকে শিখিয়েছেও অনেক কিছু।
আমার প্রিয় পরিবার-পরিজন,
প্রতিটি সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক স্বতন্ত্র পরিচিতি রয়েছে। ভারতীয় সভ্যতার পরিচয় বিশ্বের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনের মধ্য দিয়ে স্থাপিত হয়েছে। আমাদের গুরুদেবরা এই আবেগকে আরও বেশি করে শক্তিশালী করে তুলেছেন। গুরু নানক দেবজির বিশ্ব পর্যটনকে আমরা ‘উদাসী’ বলে জানি। তাঁর এই যাত্রা ছিল সমগ্র মানবজাতির মধ্যে ঐক্যসাধন এবং তাঁদের কল্যাণের লক্ষ্যে। গ্রিসের বিভিন্ন স্থানেও পর্যটন করেছেন গুরু নানক দেবজি। তাঁর শিক্ষাদর্শ স্থান পেয়েছে ‘নানক নামচরদি কলা, তেলে ভানে সরবত দা ভালা’ – এর অর্থ হল তোমার আশীর্বাদ ও অনুগ্রহে সকলের জীবনে সমৃদ্ধি আসুক। সেই সময়কালে সকলের জন্য সার্বিক কল্যাণের চিন্তাভাবনার কোনো অভাব ছিল না এবং এই মূল্যবোধ নিয়েই ভারত ক্রমশ এগিয়ে গেছে। করোনা অতিমারীকালে ভারত কিভাবে তার ওষুধের যোগান শৃঙ্খল বিশ্ববাসীর কাছে উন্মুক্ত করে দিয়েছিল, সেই ঘটনারও সাক্ষী রয়েছেন আপনারা এবং তার মধ্যে কোনরকম ব্যাঘাত ঘটেনি। ভারতে তৈরি কোভিড ভ্যাক্সিন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের প্রাণরক্ষা করেছে। অতিমারীকালে আমাদের দেশের গুরুদ্বারগুলি আয়োজন করেছিল লঙ্গরখানার। সেখানেই অন্নের ব্যবস্থা করে মানুষের প্রাণরক্ষা করা হয়েছে। শিখ যুবক সম্প্রদায় তখন মানবতার এক উজ্জ্বল আলো রূপে প্রতিভাত ছিল। জাতি হিসেবে এবং সমাজ হিসেবে এই কর্মপ্রচেষ্টা আমাদের ভারতীয় মূল্যবোধকেই তুলে ধরেছে।
বন্ধুগণ,
এখন এক নতুন বিশ্ব শৃঙ্খলার দিকে এগিয়ে চলেছে সারা পৃথিবী। সেইসঙ্গে, ভারতের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা ও দক্ষতা তথা বিশ্বের আঙিনায় তার ভূমিকাও দ্রুত আবর্তিত হচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজিত ব্রিকস শীর্ষ বৈঠকে অংশগ্রহণের পর আমি এখানে এসে উপস্থিত হয়েছি। আর কয়েকদিনের মধ্যেই ভারতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। এই সম্মেলনের উদ্যোক্তা হিসেবে ভারত সার্বজনীন ভ্রাতৃত্বের মন্ত্রটিকে বেছে নিয়েছে। আমাদের এই মন্ত্র হল – ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’, অর্থাৎ ‘এক অভিন্ন পৃথিবী, এক অভিন্ন পরিবার তথা এক অভিন্ন ভবিষ্যৎ’। এর অর্থ হল, সমগ্র বিশ্বের ভবিষ্যৎ পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত ও সম্পর্কিত। সুতরাং, আমাদের দায়িত্ব এবং গৃহীত সিদ্ধান্ত সেই পথ অনুসরণ করেই এগিয়ে যাবে।
বন্ধুগণ,
আমাদের, অর্থাৎ ভারতীয়দের অতুলনীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আমরা যখন যেখানেই থাকি না কেন, আমরা জানি যে দুধের সঙ্গে চিনির মতো কিভাবে মিশে যেতে হয়। আপনারা দেশের অর্থনীতিতে চিনির সেই মিষ্টতা যোগ করেছেন। বিশেষ করে, গ্রিসের গ্রামীণ অর্থনীতিতে। গ্রিসের উন্নয়নকেও আপনারা জোরদার করে তুলছেন। ঠিক একইভাবে ভারতেও আপনাদের পরিবার-পরিজনরা জাতির অগ্রগতির সঙ্গে যুক্ত ও মিলিত হয়েছেন। আপনাদের পরিবার-পরিজনরা ভারতকে বিশ্বের এক নম্বর দুগ্ধোৎপাদক একটি দেশ হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছে। এমনকি, চাল, গম, আখ, ফলমূল এবং শাকসবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বিশ্বমঞ্চে ভারতকে দ্বিতীয় স্থানটি এনে দিয়েছে। আজ ভারত যে অবস্থানে নিজেকে উন্নীত করেছে তা ১০-১৫ বছর আগেও অকল্পনীয় ছিল। ভারত হল বিশ্বের এক নম্বর দেশ যেখানে স্মার্টফোন ডেটা ব্যবহারকারীর সংখ্যা হল সর্বাধিক। ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক দিয়েও ভারতের স্থান এখন বিশ্বে দ্বিতীয়। আবার, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী একটি দেশ হিসেবেও ভারত আজ বিশ্বের স্বীকৃতি আদায় করে নিতে পেরেছে। ভারতে রয়েছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্ট-আপ পরিবেশ ও পরিস্থিতি। শুধু তাই নয়, যান উৎপাদনের ক্ষেত্রেও ভারত বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশের তকমা লাভ করেছে। বিশ্ব মানচিত্রে অসামরিক বিমান পরিবহণের দিক থেকেও তৃতীয় বৃহত্তম দেশ হওয়ার সম্মান অর্জন করেছে ভারত।
বন্ধুগণ,
আজ আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার এবং বিশ্বব্যাঙ্কের মতো প্রতিষ্ঠানগুলি ভারতের বলিষ্ঠ অর্থনীতির কথা বারংবার উচ্চারণ করে। পৃথিবীর বহুজাতিক সংস্থাগুলি ভারতে বিনিয়োগের জন্য ক্রমশ আগ্রহ প্রকাশ করতে শুরু করেছে। সত্যি কথা বলতে কি, ভারত বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম একটি অর্থনৈতিক শক্তি। তাই, বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ স্থানটি দখল করতে চলেছে আমাদের ভারত।
বন্ধুগণ,
কোনো দেশের অর্থনীতি যখন দ্রুতহারে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তখন সেই দেশ অচিরেই দারিদ্র্য মুক্ত হয়। মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই ভারতে ১৩ কোটি ৫০ লক্ষ নাগরিককে আমরা দারিদ্র্যসীমার ওপরে নিয়ে আসতে পেরেছি। ভারতের অর্থনীতি যখন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তখন প্রত্যেক ভারতীয়ের এবং প্রতিটি ভারতীয় পরিবারের আয় ও উপার্জন ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। ফলে, দেশবাসীর উপার্জন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগের পথও আরও প্রশস্ত হচ্ছে। এক দশক আগে ভারতীয়রা দেশের মিচ্যুয়াল ফান্ডগুলিতে প্রায় ৮ লক্ষ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করতেন। কিন্তু বর্তমানে এই ফান্ডগুলিতে ভারতীয় নাগরিকদের বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০ লক্ষ কোটি টাকায়। আমাদের এই উপার্জন প্রচেষ্টা সম্ভব হয়েছে কারণ প্রত্যেক ভারতীয়র মনে আমরা আত্মবিশ্বাসের জন্ম দিতে পেরেছি। আর এইভাবেই দেশ হিসেবে, জাতি হিসেবে স্বনির্ভরতার পথে ভারত এখন এগিয়ে চলেছে।
বন্ধুগণ,
বিশ্বমঞ্চে ভারত এখন তার বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন প্রচেষ্টার শক্তি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। ২০১৪ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ভারত অপটিক্যাল ফাইবার বসিয়েছে ২৫ লক্ষ কিলোমিটারব্যাপী। এই সংখ্যাটা হয়তো খুবই বড় মনে হতে পারে। কিন্তু এর অর্থ হল ভূপৃষ্ঠ থেকে চাঁদের দূরত্বের থেকেও তা ছয়গুণ বেশি। ভারতই হল পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে ৫জি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে সবক’টি জেলায় এবং তাও আবার নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে, যা নিঃসন্দেহে এক রেকর্ডবিশেষ। এই ৫জি পরিষেবা আমরা বিদেশ থেকে ধার করে বা আমদানি করে নিয়ে আসিনি। এর পুরোটাই ভারতে তৈরি। ডিজিটাল লেনদেন এখন আমাদের একটি অতি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি গ্রাম এবং প্রতিটি শহরে তা এখন ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। অমৃতসর থেকে আইজল পর্যন্ত ১০ টাকার মতো ছোটখাট লেনদেনও এখন খুব সহজেই ডিজিটাল ব্যবস্থায় সম্ভব হচ্ছে। যদি আপনারা সাম্প্রতিককালে ভারত সফরে এসে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই আপনারা হাতে-কলমে সেই অভিজ্ঞতার শরিক হয়েছেন। এখন আর পকেটে নগদ টাকা নিয়ে ঘোরাফেরা করার প্রয়োজন হয় না কারণ, একটিমাত্র মোবাইলের সাহায্যেই যাবতীয় লেনদেনের কাজ সহজভাবে মিটিয়ে ফেলা সম্ভব।
বন্ধুগণ,
আজ যে গতি ও আয়তনের নিরিখে ভারত ক্রমশ অগ্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে তা প্রতিটি ভারতবাসীর হৃদয়কেই আন্দোলিত করেছে। আপনারা জেনে গর্ববোধ করবেন যে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু রেলসেতু নির্মিত হয়েছে একমাত্র ভারতেই। শুধু তাই নয়, যান চলাচলের উপযোগী বিশ্বের উচ্চতম মহাসড়কটিও এখন নির্মিত হয়েছে আমাদের দেশেই। বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম এবং দীর্ঘতম স্ট্যাচুটি নির্মিত হয়েছে ভারতেই। অন্যদিকে বিশ্বের বৃহত্তম সৌর পার্কটি গড়ে উঠতে চলেছে আমাদের দেশে। এবার আসুন আমাদের চন্দ্রাভিযানের কথায়, কারণ তা এখন সারা পৃথিবীর কাছে এক আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ৯ বছরে ভারতে শুধুমাত্র গ্রামগুলিতেই মোট যে দৈর্ঘ্যের সড়ক নির্মিত হয়েছে তা ভূপৃষ্ঠ থেকে চাঁদ পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। গত ৯ বছরে ভারতে রেলপথ নির্মিত হয়েছে ২৫ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। যখন আমি ২৫ হাজার কিলোমিটারের কথা বলি, তখন তা একটি অঙ্কের পরিসংখ্যান বলে মনে হতে পারে। গত ৯ বছরে ভারতে যে দৈর্ঘ্যের রেলপথ নির্মিত হয়েছে তা ইটালি, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইউক্রেন, পোল্যান্ড এবং ব্রিটেনের মোট রেল নেটওয়ার্কের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজে ভারতে বিনিয়োগের মাত্রা এখন এমন এক মাত্রায় উন্নীত হয়েছে সারা বিশ্বে যার নজির মেলা ভার।
বন্ধুগণ,
জয় জওয়ান, জয় কিষাণ, জয় বিজ্ঞান এবং জয় অনুসন্ধান – এই মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে ভারত এখন অগ্রগতির পথে। এই মন্ত্রকে অবলম্বন করে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রকে আমরা আরও শক্তিশালী করে তুলতে পেরেছি। গ্রিসে আমাদের অনেক বন্ধুই এসেছেন পাঞ্জাব থেকে যাঁদের মধ্যে অনেকেই আবার কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ভারতে আমরা কৃষকদের জন্য এমন একটি কর্মসূচির কাজ শুরু করেছি যেখানে কৃষি ব্যয় নির্বাহ করার জন্য কৃষকদের নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলিতে সরাসরি সরকারি সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। ‘প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি’ কর্মসূচির আওতায় কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলিতে সরাসরি হস্তান্তরিত হয়েছে ২ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা। মাত্র কয়েকদিন আগে লালকেল্লা থেকে আমি ঘোষণা করেছি যে দেশের বোনেদের আমরা সাধারণ গ্রামবাসী থেকে ড্রোন চালক হিসেবে উন্নীত করতে আগ্রহী। আপনারা একবার ভাবুন তো আমার গ্রামের বোনেরা ড্রোন চালকের দায়িত্ব পালন করে কৃষি পদ্ধতিকে কতটা আধুনিক করে তুলতে পারেন! ড্রোনের সাহায্যে তাঁরা কৃষিজমিতে কীটনাশক ছড়ানোর পাশাপাশি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা পর্যন্ত অতি দ্রুত জিনিসপত্র বন্টন করতে পারবেন।
বন্ধুগণ,
ভারতে আমরা ২০ কোটিরও বেশি মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পর্কিত কার্ড কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি। তাই, তাঁরা এখন সহজেই বুঝতে পারেন যে তাঁদের কৃষি জমির জন্য কতটা সারের প্রয়োজন এবং কোন শস্যোৎপাদন তাঁদের মাটিতে আরও ভালভাবে হওয়া সম্ভব। এই কারণে অতি অল্প সময়কালের মধ্যেই তাঁরা এখন কৃষি উৎপাদনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলতে পেরেছেন। শুধু তাই নয়, আমাদের কৃষক ভাই ও বোনেরা এখন প্রাকৃতিক কৃষি পদ্ধতির দিকে আরও বেশি করে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সরকারের আরেকটি কর্মসূচিও কৃষক ভাই-বোনদের প্রভূত উপকারে এসেছে। তা হল, ‘একটি জেলা, একটিই পণ্য’ – এই কর্মসূচিটি। আপনারা জানেন যে প্রত্যেকটি জেলার একটি নিজস্ব বিশেষত্ব রয়েছে। যেমন, কর্ণাটকের কোড়াগু কফির জন্য বিখ্যাত। আবার অমৃতসর বিখ্যাত তার আচার ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য। ভুট্টা উৎপাদনের দিক থেকে আবার অনেক এগিয়ে রয়েছে ভিলওয়ারা জেলাটি। অন্যদিকে, ফতেহগড়সাহিব, হোসিয়ারপুর এবং গুরুদাসপুর প্রসিদ্ধ দুধ উৎপাদনের জন্য। হলুদ উৎপাদনের দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে নিজামাবাদ। অর্থাৎ, প্রত্যেকটি জেলাই তার নিজস্ব এবং বিশেষ একটি পণ্য উৎপাদনের দিকে বেশি করে দৃষ্টি দিয়েছে। তাই, সেগুলি থেকে সংগৃহীত সামগ্রীগুলিকে আরও বেশি মাত্রায় আমরা রপ্তানির ব্যবস্থা করেছি। এই হল বর্তমান ভারতবর্ষের চিত্র। এক নতুন লক্ষ্যকে সামনে রেখে নতুন নতুন পন্থাপদ্ধতি আবিষ্কার করে দেশ ক্রমশ সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে।
বন্ধুগণ,
গ্রিস হল সেই দেশ যেখানে অলিম্পিক্সের জন্ম। খেলাধূলার প্রতি আগ্রহ দেশের তরুণ ও যুব সমাজের মধ্যে এখন নিরন্তরভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। দেশের ছোট ছোট শহর ও নগরগুলি থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়রা এখন অলিম্পিক্স এবং ইউনিভার্সিটি গেমস-এ উৎকর্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। নীরজ চোপড়া অলিম্পিক্সে যখন একটি পদক লাভ করেন তখন প্রত্যেকের মনেই গর্বের সঞ্চার হয়েছিল। এইতো মাত্র কয়েকদিন আগে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি গেমস-এ ভারতের তরুণ ছেলে-মেয়েরা দারুণ ফল করেছে। এই প্রতিযোগিতাগুলির সূচনাকাল থেকে ভারত আজ পর্যন্ত অনেক অনেক পদক অর্জন করতে পেরেছে। বরং, অতীতের তুলনায় বর্তমানে এই পদক জয়ের সংখ্যা এখন অনেক অনেক বেশি।
বন্ধুগণ,
আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে গ্রিসবাসী কিভাবে তাঁদের প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করে চলেছেন। ভারতও তার ঐতিহ্যকে উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করেও তার সংরক্ষণে ব্রতী হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম মিউজিয়াম ‘যুগে যুগে ভারত’ দিল্লিতে নির্মিত হচ্ছে। আপনারা নিশ্চয়ই এটা শুনে থাকবেন। সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের সাগরে সন্ত রবিদাস স্মারক প্রকল্পের এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার সুযোগ আমার হয়েছিল। সন্ত রবিদাসের শিক্ষাদর্শ অনুসরণ করে ৫০ হাজারেরও বেশি গ্রাম থেকে সংগৃহীত মাটি এবং ৩০০টিরও বেশি নদী থেকে সংগৃহীত কাদামাটির সাহায্যে এটি গড়ে তোলা হচ্ছে। সন্ত রবিদাস জন্মগ্রহণ করেছিলেন কাশীতে। তাঁর এই জন্মস্থানে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারিত হওয়ার সাক্ষী থেকেছি আমি নিজে। গত ৯ বছরে আমাদের সাধু-সন্তদের স্পর্শধন্য পবিত্র স্থানগুলির মধ্যে সংযোগ ও যোগাযোগ বাড়িয়ে তুলতে আমরা নিরলসভাবে পরিশ্রম করে গিয়েছি। এক সময় দূরদুরান্ত থেকে মানুষ বাইনোকুলারের সাহায্যে কর্তারপুর সাহিব দেখতে পেতেন। কিন্তু এখন আমরা কর্তারপুর সাহিব পর্যন্ত যাত্রাপথকে অনেক সহজ করে তুলেছি। গুরু নানক দেবজির ৫৫০তম প্রকাশ পর্ব উপলক্ষে এবং গুরু তেগ বাহাদুরজির ৪০০তম প্রকাশ পর্বকে স্মরণীয় করে তুলতে আমাদের সরকার সারা বিশ্বজুড়ে তার সফল উদযাপনে আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে গেছে। গুরু গোবিন্দ সিং-জির ৩৫০তম প্রকাশ পর্বও আমাদের এই প্রচেষ্টার অন্তর্ভুক্ত। ভারতে সাহেবজাদাদের স্মরণে আমরা প্রত্যেক বছর ২৬ ডিসেম্বর তারিখটিকে ‘বীর বাল দিবস’ রূপে পালন করে আসছি।
বন্ধুগণ,
ভারতে এখন ডিজিটাল, সাংস্কৃতিক এবং ব্যবহারিক সংযোগ ও যোগাযোগের ‘অমৃতকাল’ শুরু হয়েছে। সারা বিশ্বের মানুষ যেমন গ্রীক ঐতিহ্য পরিদর্শন করার জন্য এখানে এসে সমবেত হন, ঠিক সেইভাবেই গ্রিস সহ সমগ্র ইউরোপবাসী ভারতে এসে আমাদের কর্মযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করতে পারবেন। আমি আজ আপনাদের সামনে যে ভারতের বর্ণনা দিতে শুরু করেছি, সেই ভারতের বর্ণনা আপনারা ভারত দর্শন শেষে আপনাদের গ্রীক বন্ধুদের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন। ভারতমাতার বোধহয় এটাই বাসনা।
বন্ধুগণ,
ঐতিহাসিক স্থান ও নিদর্শনগুলি ছাড়াও ভারতে দেখার ও জানার অনেক বিষয়ই এখন রয়েছে। এখানকার মানুষ বন্যপ্রাণী সম্পর্কে খুবই উৎসুক ও আগ্রহী। তাই, পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে তাঁরা সঙ্কল্পবদ্ধ। বিশ্বের মোট জীববৈচিত্র্যের ৮ শতাংশেরও বেশির সন্ধান পাওয়া যায় আমাদের ভারতে। যদিও জমির পরিমাপ ও আয়তনের দিক থেকে আমরা ২.৫ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছি। বিশ্বের ৭৫ শতাংশেরও বেশি বাঘের আবাসভূমি হল ভারত। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাঘ, এশিয়াটিক হাতি এবং একশৃঙ্গ গণ্ডারের দেখা মেলে একমাত্র আমাদের দেশেই। শুধু তাই নয়, ভারতই হল একমাত্র দেশ যেখানে এশিয়াটিক সিংহেরও খোঁজ পাওয়া গেছে। ভারতে বর্তমানে রয়েছে ১০০টিরও বেশি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এছাড়া রয়েছে ৪০০টি জাতীয় উদ্যান এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র।
আমার প্রিয় পরিবার-পরিজন,
ভারত বিশ্ববাসীর প্রয়োজনে এবং তাঁদের সাহায্যে সর্বদাই এগিয়ে এসেছে। এই কারণেই আপনারা সকলেই আমার এবং আমাদের একান্তই পরিবার-পরিজন। আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে ইউক্রেন যখন সংঘাতদীর্ণ হয়ে পড়েছিল, তখন হাজার হাজার শিশুকে আমরা সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসতে পেরেছি। হিংসার তাণ্ডবে আফগানিস্তান যখন বিপর্যস্ত, তখন ভারত তার নাগরিকদের নিরাপদে অনেক দূরে সরিয়ে আনতে পেরেছে। এমনকি, বহু শিখ ভাই-বোনদেরও আমরা সেই দেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। শুধু তাই নয়, গুরু গ্রন্থ সাহিবের ‘স্বরূপ’কেও আমরা পরম শ্রদ্ধা ভরে নিয়ে এসে রেখেছি আমাদের দেশে। বিশ্বের সর্বত্র যে ভারতীয় মিশনগুলি ছড়িয়ে রয়েছে তারা শুধু সরকারি কার্যালয় মাত্র নয়, একইসঙ্গে তারা আপনাদের খুবই কাছের আপনজন হয়ে উঠেছে। এমনকি গ্রিসেও ভারতীয় মিশন ২৪ ঘন্টাই আপনাদের সেবায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এইভাবেই ভারত ও গ্রিসের মধ্যে বন্ধন যত নিবিড়তর হয়ে উঠবে, ততই পরস্পরের দেশে যাতায়াত এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের পারস্পরিক প্রসার আরও সহজ ও সুবিধাজনক হয়ে উঠবে। তাই এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও জোরদার করে তুলতে আমাদের অবশ্যই সর্বতোভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
বন্ধুগণ,
গ্রিসে আপনাদের এই ব্যাপক ও প্রবল উপস্থিতি প্রত্যেকটি ভারতবাসীর হৃদয়েই প্রতি মুহূর্তেই অনুভূত হচ্ছে। এখানে আমার যে সমস্ত সহকর্মী রয়েছেন তাঁদের সকলকেই আমি আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাই কারণ, তাঁরা সকলেই কঠোরভাবে পরিশ্রম করে চলেছেন দু’দেশের মানুষের মধ্যে মেলবন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে। এত ভালবাসা, এত স্নেহ আপনাদের কাছ থেকে পেয়েছি যে আমি সেজন্য আপ্লুত। তাই আমি আপনাদের সকলের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আসুন, আমরা আজ একসঙ্গে মিলিতভাবে উচ্চারণ করি – ‘ভারতমাতার জয়’। এই ধ্বনি এখান থেকে গিয়ে পৌঁছবে ভারতবর্ষ পর্যন্ত। ‘ভারতমাতার জয়, ভারতমাতার জয়, ভারতমাতার জয়,’, ‘বন্দে মাতরম্, বন্দে মাতরম্, বন্দে মাতরম্, বন্দে মাতরম্, বন্দে মাতরম্’। আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।