সীতাপতি শ্রী রামচন্দ্রের জয়!
আমার প্রিয় দেশবাসী, রাম রাম!
শুধুমাত্র ঐশ্বরিক আশীর্বাদের ফলেই জীবনের কিছু মুহূর্ত বাস্তবে পরিণত হয়।
আজ আমাদের সকল ভারতবাসীর জন্য এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা রাম ভক্তদের জন্য একটি পবিত্র সুযোগ এসে উপস্থিত হয়েছে। সর্বত্র ভগবান শ্রী রামের ভক্তির আবেশে একটি আশ্চর্য আবহ গড়ে উঠেছে। চার দিক থেকে রামনামের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে, রাম ভজনের অপূর্ব সৌন্দর্য, অনুপম মাধুরী অনুভূত হচ্ছে! আজ প্রত্যেকেই ২২শে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য সেই ঐতিহাসিক পবিত্র মুহূর্তটির জন্য অপেক্ষা করছে। আর অযোধ্যায় রামলালার পুজোর আর মাত্র ১১ দিন বাকি। আমি ভাগ্যবান যে আমিও এই শুভ অনুষ্ঠানটি সামনে থেকে দেখার সুযোগ পাবো।এটি আমার জন্যও অকল্পনীয় অভিজ্ঞতার সময়।
আমি আবেগাপ্লুত, ভাব-বিহ্বল! জীবনে প্রথমবার এমন অনির্বচনীয় আবেগের স্রোতে ভেসে যাচ্ছি, একটি ভিন্নরকম ভক্তির চেতনা অনুভব করছি। আমার অন্তরের এই আবেগময় যাত্রা আমার জন্য ভাবপ্রকাশের নয়, নতুন অভিজ্ঞতার সুযোগ। আমি চাইলেও এই ভাবনার গভীরতা, ব্যাপকতা এবং তীব্রতা শব্দের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারছি না। আপনারা হয়তো খুব ভালভাবেই আমার মনের অবস্থা বুঝতে পারছেন।
যে স্বপ্ন বাস্তবায়ণের সময় আমি উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য পেয়েছি, তা আমার দেশের অনেক প্রজন্মের মানুষের হৃদয়ে বছরের পর বছর ধরে একটি সংকল্পের মতো সঞ্জীবিত রয়েছে। ঈশ্বর আমাকে ভারতের সমস্ত জনগ্ণের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য একটি নিমিত্ত মাত্র করে তুলেছেন, সব্যসাচী করে তুলেছেন।
‘’নিমিত্ত মাত্রম ভব সব্য-সাচিন’’!
এটি একটি অনেক বড়ো দায়িত্ব। আমাদের শাস্ত্রে যেমন বলা আছে, ঈশ্বরের যজ্ঞ ও উপাসনার জন্য আমাদের নিজেদের অস্তিত্বে ঐশ্বরিক চেতনা জাগ্রত করতে হয়। এর জন্য নানা ধর্মগ্রন্থে উপবাস ও নানা প্রকার কঠোর নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করা হয়েছে, যা প্রাণ প্রতিষ্ঠার আগে মেনে চলতে হয়।সেজন্য আমি কয়েকজন তপস্বী মহাত্মা এবং আধ্যাত্মিক পথের মহাপুরুষদের কাছ থেকে যে দিকনির্দেশ পেয়েছি…তাঁদের দ্বারা প্রস্তাবিত যম-নিয়ম অনুসারে, আমি আজ থেকে ১১ দিনের জন্য একটি বিশেষ আচার পালনের ব্রত শুরু করছি।
এই পবিত্র অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে আমি আজ ভগবানের শ্রীচরণে প্রার্থনা করছি... আমি সমস্ত ঋষি, মুনি ও তপস্বীদের পবিত্র মনে স্মরণ করছি... এবং আমি যাঁদের সাক্ষাৎ ঈশ্বরের রূপ বলে মনে করি, সেই জনগণের কাছে, সাধারণ মানুষের কাছে প্রার্থনা করছি, আপনারা আমাকে আশীর্বাদ করুন। যাতে মনে মনে, কথায় ও কাজে আমার দিক থেকে কোনও খামতি না থাকে।
বন্ধুগণ,
এটা আমার সৌভাগ্য যে আমি নাসিক ধাম-পঞ্চবটিতে থেকে আমার এই ১১ দিনের কঠোর আচার পালনের ব্রত শুরু করছি। পঞ্চবটি হল সেই পবিত্র ভূমি যেখানে ভগবান শ্রীরাম জীবনের অনেক সময় কাটিয়েছেন।
আর আমি খুশি যে আজকের দিনটি কাকতালীয়ভাবে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মবার্ষিকী। এই স্বামী বিবেকানন্দজিই কয়েক হাজার বছর ধরে বারবার আক্রান্ত হওয়া ভারতের আত্মাকে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আজ সেই আত্মবিশ্বাসই সবার সামনে একটি বিশাল ও অনিন্দ্যসুন্দর রামমন্দিরের আকার নিয়ে আমাদের পরিচয়ের দ্যোতক হয়ে উঠেছে।
আর সোনার উপর সোহাগার মতোই, আজ মাতা জিজাবাঈজির জন্মবার্ষিকী। মা জিজাবাই, যিনি ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ রূপে একজন মহান মানবের জন্ম দিয়েছেন। আজকে আমরা আমাদের ভারতকে যে অক্ষত রূপে দেখতে পাচ্ছি তাতে মাতা জিজাবাইজির বিশাল অবদান রয়েছে।
এবং বন্ধুরা,
আমি যখন পবিত্রমনে মাতা জিজাবাইয়ের গুণাবলী স্মরণ করছি, তখন আমার নিজের মাকে স্মরণ করা আমার পক্ষে খুবই স্বাভাবিক। আমার মা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পুজোর সময় নিয়মিত সীতা-রামের নাম জপ করতেন।
বন্ধুগণ,
প্রাণ প্রতিষ্টার শুভ সময়...
অনন্ত সৃষ্টির সেই সচেতন মুহূর্ত...
আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার সেই সুযোগ...
গর্ভগৃহে সেই মুহূর্তে আরও কতকিছু যে হবে না !!!
বন্ধুগণ,
শারীরিকভাবে, আমি সেই পবিত্র মুহূর্তের সাক্ষী তো থাকবোই, কিন্তু আমার মনে, আমার হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দনে, ১৪০ কোটি ভারতবাসীও আমার সঙ্গে থাকবে। আপনারা আমার সঙ্গে থাকবেন… প্রত্যেক রামভক্ত আমার সঙ্গে থাকবেন। এবং সেই সচেতন মুহূর্তটি আমাদের সকলের জন্য একটি ভাগ করা অভিজ্ঞতা হবে। আমি আমার সঙ্গে সেই অগণিত ব্যক্তিত্বের অনুপ্রেরণা নেব যারা এই রাম মন্দিরের জন্য তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।
ত্যাগ – তপস্যার মূর্তরূপ সেই মানুষদের
৫০০ বছরের ধৈর্য...
সুদীর্ঘ ধৈর্যের সেই কাল...
অগণিত ত্যাগ ও তপস্যার ঘটনা...
দানীদের...আত্মবলিদানকারীদের… বীরগাথাগুলি...
এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁদের নাম কেউ জানে না, কিন্তু তাঁদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল একটি বিশাল অনিন্দ্যসুন্দর রাম মন্দির নির্মাণ। এমন অসংখ্য মানুষের স্মৃতি আমার সঙ্গে থাকবে।
সেই মুহূর্তে যখন ১৪০ কোটি দেশবাসী আমার সঙ্গে মানসিকভাবে যোগ দেবেন, আর আমি যখন আপনাদের সম্মিলিত শক্তি নিয়ে গর্ভগৃহে প্রবেশ করব, তখন আমিও বুঝতে পারব যে আমি একা নই, আপনারা সবাই আমার সঙ্গে আছেন।
বন্ধুগণ, এই ১১টি দিন শুধু আমার ব্যক্তিগত আচার পালনের ব্রত নয়, আমার অনুভূতির জগতে আপনারা সবাই অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। আমি প্রার্থনা করি, আপনারাও অন্তর থেকে আমার সঙ্গে যুক্ত থাকুন।
রামলালার শ্রীচরণে, আমি আপনাদের অনুভূতিগুলিকে সেই মনোভাব নিয়ে নিবেদন করবো যা আমার মনে জেগে উঠছে।
বন্ধুগণ,
আমরা সবাই এই সত্যটা জানি যে ঈশ্বর নিরাকার। কিন্তু ঈশ্বর, এমনকি সাকার রূপেও আমাদের আধ্যাত্মিক যাত্রাকে শক্তিশালী করেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি এবং অনুভব করেছি যে মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের একটি রূপ রয়েছে। কিন্তু যখন সাক্ষাৎ ঈশ্বরের রূপ সাধারণ মানুষ তাঁদের অনুভূতি কথায় প্রকাশ করে আশীর্বাদ জানায়, তখন আমার মনেও নতুন শক্তি সঞ্চারিত হয়। আজ, আমার আপনাদের আশীর্বাদ প্রয়োজন. সেজন্য, আমি আপনাদেরকে নিজেদের অনুভূতি নিজের মুখে বা লিখিতভাবে প্রকাশ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। অনুগ্রহ করে আমাকে আশীর্বাদ করুন। আপনাদের আশীর্বাদের প্রতিটি শব্দ আমার কাছে একটি শব্দ নয় বরং একেকটি মন্ত্রের মতো। এই আশীর্বাদ আমার জন্য অবশ্যই মন্ত্রশক্তির মতো কাজ করবে। আপনারা নিজেদের কথা, নিজেদের আন্তরিক অনুভূতি আমাকে সরাসরি নমো অ্যাপের মাধ্যমে পাঠাতে পারেন।
আসুন বন্ধুগণ,
আসুন আমরা সবাই ভগবান শ্রী রামের ভক্তিতে নিমগ্ন হয়ে পড়ি। এই আন্তরিক অনুভূতি নিয়ে আমি আপনাদের মতো সকল রামভক্তদের কোটি কোটি প্রণাম জানাই।
জয় সিয়া রাম
জয় সিয়া রাম
জয় সিয়া রাম
ধন্যবাদ।