ভারতের দীর্ঘতমসুড়ঙ্গপথের উদ্বোধন তো হল, আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন আমি করলেও আমার ইচ্ছা, এখানে যতনাগরিক উপস্থিত রয়েছেন, তাঁরা সবাই মিলে এই সুড়ঙ্গপথের উদ্বোধন করুন। এই উদ্বোধনেরপদ্ধতি আমি বলছি। আপনারা সবাই নিজের মোবাইল ফোন হাতে নিন, তারপর সমস্বরে ‘ভারতমাতাকি জয়’ উচ্চনাদের সঙ্গে সকলের মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশ বোতাম টিপুন। দেখুন,সংবাদমাধ্যমের সকল ক্যামেরাম্যান এখন আপনাদের ছবি তুলছেন। সবাই ফ্ল্যাশ অন করুন। এএক অদ্ভুত দৃশ্য। এই অদ্ভুত দৃশ্যের মাধ্যমে আজ এই সুড়ঙ্গের উদ্বোধন এক অনুপমমুহূর্ত সৃষ্টি করেছে। সারা ভারত এই দৃশ্য দেখছে।
ভারতমাতা কি জয়
ভারতমাতা কি জয়
ভাই ও বোনেরা,নবরাত্রির পবিত্র পরবের সময়ে মায়ের চরণে আসার এই সুযোগ পেয়ে আমি সৌভাগ্যবান।শ্রদ্ধেয় নীতিন গড়করি বলছিলেন, বিশ্বমানের পদ্ধতি ও উপাদান ব্যবহার করে এই সড়ঙ্গনির্মিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই সুড়ঙ্গ বিশ্বমানের উৎকর্ষকেওঅতিক্রম করে গেছে। এই সাফল্যের জন্য আমি নীতিন গড়করি এবং তাঁর বিভাগের গোটা টিমকেঅন্তর থেকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই, অভিনন্দন জানাই। তাঁরা আধুনিক প্রযুক্তিরব্যবহারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই এই কাজ সম্পন্ন করেছেন। ভাই ওবোনেরা, এই সুড়ঙ্গ কেবল দীর্ঘতম নয়, শুধু জম্মু ও শ্রীনগরের মাঝে দূরত্ব কম করারউপায় নয়, এটি জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি দীর্ঘ উলম্ফন, এটা আমিস্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।
ভাই ও বোনেরা,এই সুড়ঙ্গপথ এখন সারা ভারতে একটি আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। সারা পৃথিবীর যতপরিবেশবিদ রয়েছেন, যাঁরা বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকটকরেন, তাঁদের জন্যও এই সুড়ঙ্গপথ একটি নতুন আশার সঞ্চার করেছে। ভারতের অন্য যে কোনওপ্রান্তে এই সুড়ঙ্গ নির্মিত হলে পরিবেশবিদদের আকর্ষণ এতটা থাকতো না। কিন্তুহিমালয়ের কোলে এই সুরঙ্গ বিছিয়ে আমরা হিমালয়কেও রক্ষা করার কাজ করেছি।
ভাই ও বোনেরা,এই সুড়ঙ্গপথ সহস্র সহস্র কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত হয়েছে। কিন্তু আজ আমি গর্বেরসঙ্গে বলছি, এর জন্য ভারত সরকারের যত টাকাই খরচ হোক না কেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিতযে, দেশের জনগণের অর্থের পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীরের নবীন প্রজন্মেরযুবসম্প্রদায়ের শ্রমের বিনিময়ে এটি গড়ে উঠেছে। আড়াই হাজারেরও বেশি যুবক এইপ্রকল্পে কাজ করেছেন, তার ৯০ শতাংশই জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ। অর্থাৎ এই প্রকল্পএই রাজ্যের এতজন মানুষকে কর্মসংস্থান দিয়েছে।
ভাই ও বোনেরা,১,০০০ দিনের থেকেও বেশি সময় ধরে পাথর কেটে কেটে জম্মু ও কাশ্মীরের যে যুবকরা এইসুড়ঙ্গপথ গড়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, কাশ্মীর উপত্যকার জনগণকে আমি বলতে চাই যে,পাথরের কত শক্তি; একদিকে কিছু বিভ্রান্ত যুবক পাথর ছুঁড়ে মারে, অন্যদিকে সেইকাশ্মীরেরই যুবকরা পাথর কেটে রাজ্যের ভাগ্য নির্মাণ করে।
ভাই ও বোনেরা,এই সুড়ঙ্গ কাশ্মীর উপত্যকার পর্যটনের ইতিহাসে একটি নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে, একটিঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। আগে এই দুর্গম যাত্রাপথে পর্যটকদের নানা সমস্যায় পড়তেহতো, খবরের কাগজের শিরোনাম হতো পাটনিটপে তুষারপাতে পাঁচদিন ধরে পর্যটকরা আটকেপড়েছেন। ঐ খবর পেয়ে তখন অন্য যাঁরা কাশ্মীর উপত্যকায় যাচ্ছিলেন, তাঁরা যাত্রাস্থগিত রাখতেন অথবা বাতিল করে দিতেন। এখন এই সুড়ঙ্গপথ উদ্বোধনের পর থেকে পর্যটকদেরআর এই সমস্যায় পড়তে হবে না। তাঁরা নিশ্চিন্তে সরাসরি শ্রীনগর পৌঁছতে পারবেন।
আমি কাশ্মীরউপত্যকার জনগণকে বলতে চাই, উধমপুর রামবানের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী এই নতুনসুরঙ্গপথ কাশ্মীর উপত্যকার নতুন ভাগ্যরেখা হিসাবে পরিগণিত হবে। কাশ্মীর উপত্যকারকৃষক ভাইরা নানা প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও দিনরাত পরিশ্রম করে ফসল ফলান,বাগিচায় কাজ করেন । যথাযথ বর্ষা ও অনুকূল আবহাওয়ায় ফলন ভাল হলেও দিল্লির বাজারে ফল পাঠাতে মাঝেপাঁচ দিন তুষারপাতের কারণে গাড়ি আটকে গেলে অর্ধেকেরও বেশি ফল খারাপ হয়ে যেত।দিল্লি পৌঁছতে পৌঁছতে সকল পরিশ্রমের ফসল নষ্ট হয়ে যেত। এই সুড়ঙ্গ চালু হওয়ার ফলেএখন কাশ্মীরের কৃষকরা তাঁদের ফল, ফুল ও সব্জি নির্ধারিত সময়ে দিল্লির বাজারে পৌঁছেদিতে পারবেন। খরচও আগের চেয়ে কম হবে। এই সাশ্রয় কাশ্মীর উপত্যকার কৃষকদের জীবনযাপনেরস্বাচ্ছন্দ্যকে বাড়িয়ে দেবে।
ভাই ও বোনেরা,ভারতের সকল নাগরিকের মনে জীবনে অন্তত একবার কাশ্মীর ঘুরে দেখার স্বপ্ন থাকে। তাঁরাএই ভূস্বর্গ দেখতে আসেন। কাশ্মীর যাত্রাপথে এই পরিকাঠামো উন্নয়ন এখন ভারতেরনানাপ্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের উন্নততর পরিষেবা প্রদানে সহায়ক হয়ে উঠবে। কাশ্মীরএখন পর্যটকদের একটি সুনিশ্চিত ও সুপরিকল্পিত পর্যটনের ডালি সাজিয়ে দিতে পারবে। আরপর্যটন যত উন্নত হবে, জম্মু ও কাশ্মীর তত দ্রুত আর্থিক দিক দিয়ে দেশের সকল রাজ্যকেপেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
ভাই ও বোনেরা,আমি কাশ্মীর উপত্যকার নবযুবকদের বলতে চাই, আপনাদের সামনে দুটি রাস্তা খোলা রয়েছে।একদিকে পর্যটন, আরেকদিকে সন্ত্রাসবাদ। আপনারা নিজেদের ভাগ্যকে কোনদিকে নিয়ে যাবেন,সেই সিদ্ধান্ত আপনাদেরকেই নিতে হবে। বিগত ৪০ বছর ধরে এখানে অনেক মানুষের প্রাণগেছে, কারও কোনও লাভ হয়নি, শুধু রক্তাক্ত হয়েছে আমার-আপনার প্রিয় কাশ্মীর উপত্যকারমাটি। কাশ্মীরের মায়েদের কোল খালি হয়েছে। ভারত তার সুসন্তানদের হারিয়েছে।
ভাই ও বোনেরা,এই ৪০ বছর যদি আমরা পর্যটনের উন্নয়নের দিকে নজর দিতাম, তা হলে গোটা বিশ্বকে আকর্ষণকরার শক্তি আমরা অর্জন করতাম। আমাদের পর্যটনের শক্তিকে চিনে নিতে হবে। কেন্দ্রীয়সরকার কাশ্মীরের পাশে রয়েছে।
আমিমুখ্যমন্ত্রী শ্রদ্ধেয়া মেহবুবাজিকে অভিনন্দন জানাই। গত বছর কেন্দ্রীয় সরকার যে ৮০হাজার কোটি টাকা জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ ঘোষণা করেছিল,সেই টাকা সম্পূর্ণরূপে কাশ্মীরের উন্নয়নে খরচ করা হয়েছে। এটা বড় কম কথা নয়।সাধারণত আমরা দেখেছি, কাগজে-কলমে বরাদ্দ হয়, বাস্তবে মানুষের উপকারে সেই বরাদ্দপৌঁছতে বছরের পর বছর পেরিয়ে যায়। কিন্তু মেহবুবাজির নেতৃত্বে তাঁর সরকারপ্রত্যেকটি বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখে বরাদ্দকৃত অর্থকে যথাযথভাবেউন্নয়নে পরিবর্তিত করেছেন, সেজন্য আমি তাঁর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিপরিষদ ও সরকারেরসকল কর্মীদের অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
ভাই ও বোনেরা,আজ ভারতে প্রত্যেক মানুষের গড় আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবচেয়ে দ্রুত যে রাজ্যের জনগণেরগড় আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই রাজ্যের নাম জম্মু ও কাশ্মীর। আমি অনেক বছর এই রাজ্যেআমার দলের সাংগঠনিক কাজ করার জন্য থেকেছি। এখানকার মানুষের হৃদয় কত বড়, সেসম্পর্কে আমি জানি। এ রাজ্যের সুফি পরম্পরার সংস্কৃতিকে আমি জানি।
ভাই ও বোনেরা,এই অমূল্য ঐতিহ্য ভুলে গেলে বর্তমানকে আমরা হারাব আর ভবিষ্যৎকে অন্ধকারের দিকেঠেলে দেব। এই মাটি হাজার হাজার বছর ধরে গোটা ভারতকে পথ দেখিয়েছে। এই মহান ঐতিহ্যকেস্বীকার করে নিয়ে পরিশ্রমের মাধ্যমে আসুন আমরা সকলে সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধমিলিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের ভবিষ্যতকে বদলে দিই।
ভাই ও বোনেরা,জম্মু-কাশ্মীরের সর্বত্র অটল বিহারী বাজপেয়ী অত্যন্ত জনপ্রিয় নাম। কাশ্মীরেরউন্নয়নে তাঁর মূল মন্ত্র ছিল, “কাশ্মীরিয়ত, ইনসানিয়ত ও জমহুরিয়ত’। কাশ্মীর উপত্যকাজম্মু ও লাদাখে তাঁর এই মূলমন্ত্র অনুসরণ করে আমরা এই রাজ্যটিকে, এই রাজ্যের নবীনপ্রজন্মের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ’কে সুনিশ্চিত করতে কৃতসংকল্প। কোনও বাধা আমাদের থামাতেপারবে না।
ভাই ও বোনেরা,আমরা সীমান্তের ওপারে অধিকৃত কাশ্মীরের নাগরিকদেরও দেখাতে চাই যে, আমাদের কাশ্মীরকতটা উন্নত। আজ যারা আপনাদের জোর করে দাবিয়ে রেখেছে, তারা আপনাদের কত ক্ষতি করছে।আমাদের মূলমন্ত্র হ’ল উন্নয়ন, আমাদের পথ হ’ল গণঅংশীদারিত্ব নবীন প্রজন্মেরমানুষদের সঙ্গে নিয়ে আমরা ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যেতে চাই।
ভবিষ্যতে এরকমআরও ৯টি সুড়ঙ্গপথ গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। সেগুলি গড়ে উঠলে কাশ্মীরের ভাগ্যরেখাআরও উন্নত হবে, গোটা ভারতের সঙ্গে কাশ্মীরবাসীদের অন্তরের যোগাযোগ আরও নিবিড় হবে।আপনারা সরকারের এই প্রকল্পগুলি থেকে লাভবান হবেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে ও উন্নয়নেরক্ষেত্রে নতুন উচ্চতা অতিক্রম করবেন। এই মূলমন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলায় কাশ্মীরউপত্যকার পাশাপাশি জম্মু অঞ্চলের উন্নয়নও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
স্মার্টসিটিগড়ে তোলা, হৃদয় যোজনা, অমৃত যোজনা, শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন, পরিকাঠামো নির্মাণ,এখানকার সরোবরগুলির সংস্কার – তা সে জম্মু হোক কিংবা লাদাখ, একটি ভারসাম্যযুক্তউন্নয়নের ফলে উপকৃত হবে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। এই স্বপ্ন নিয়েইআমরা এগিয়ে যাব।
আমি আরেকবারনীতিনজিকে, তাঁর টিমকে, ডঃ জিতেন্দ্র সিংজিকে এবং জম্মু ও কাশ্মীর সরকারকেকৃতজ্ঞতা জানাই।
অনেক অনেকধন্যবাদ।