ক্রিসমাসের দিনভারত সরকারের পক্ষ থেকে একটি উপহার দেওয়া শুরু হয়েছে। আগামী ১০০ দিন ধরে ‘লাকিড্র’র মাধ্যমে প্রতিদিন ১৫ হাজার মানুষকে ১০০০ টাকা করে উপহার দেওয়া হবে, যারাডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৫০ টাকার বেশি এবং ৩ হাজার টাকার কম দামেরজিনিসপত্র কিনেছেন, অর্থাৎ গরিবরাই এই উপহার পাবেন। অর্থাৎ ১০০ দিনে লক্ষাধিকপরিবারে এই টাকা যাবে। ড্র হওয়ার তিনদিন পর ব্যাঙ্কের মাধ্যমে তাঁরা এই টাকাপাবেন। ব্যাঙ্ক পুরস্কৃতদের অ্যাকাউন্ট আলাদা করে রেখে দেবে, যাতে পরবর্তী সময়েঅন্যরা এই সুযোগ পেতে পারেন। আজ এমন চারজনের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার সৌভাগ্যআমার হয়েছে।
আজ ৩০ তারিখেলাকি গ্রাহক প্রকল্পের পাশাপাশি ডিজিধন ব্যবসা প্রকল্পেরও ড্র হয়েছে। এটা সপ্তাহেএকদিন হবে। আজ থেকে শুরু হল। এটা ব্যবসায়ীদের জন্য, যাতে তাঁরা গ্রাহকদের তাঁদেরদোকান থেকে ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে লেনদেন করতে উৎসাহ দেয়। আর আগামী ১৪ এপ্রিলবাবাসাহেব আম্বেদকরের জন্মদিনে একটি মেগা ড্র হবে, সেখানে কোটি কোটি টাকারপুরস্কার দেওয়া হবে। এই লাকি ড্র’র মাধ্যমে যাঁরা পুরস্কৃত হয়েছেন, তাঁদের আমিঅভিনন্দন জানাই। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই সেই নবীন ব্যক্তিকে, যিনি ঝাড়খন্ডের একটি ছোটগ্রামের বাসিন্দা হয়েও এই প্রযুক্তিকে আপন করে নিয়েছেন। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই, সেইমহিলাদের, যাঁরা এই নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। গোটা দেশে যাঁরাই এভাবেউজ্জ্বল ভবিষ্যতের ভিত শক্ত করার কাজে এগিয়ে এসেছেন, তাঁদের সকলের প্রতি আমিকৃতজ্ঞতা জানাই।
আজ আরেকটিগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প শুরু হয়েছে। একটি নতুন অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়েছে, এর নাম রাখাহয়েছে ‘ভীম’। যে মহাপুরুষের নেতৃত্বে আমাদের সংবিধান রচিত হয়েছে, সেই ডঃ ভীমরাওআম্বেদকর-এর নামে এই অ্যাপ সূচনা করা হয়েছে। তিনি আজ থেকে প্রায় ৮০-৯০ বছর আগেভারতের মুদ্রা ব্যবস্থা নিয়ে একটি গবেষণাপত্র লিখেছিলেন। তখন দেশ ছিল ব্রিটিশশাসনাধীন। বাবাসাহেব বিশ্বের সামনে ভারতীয় মুদ্রা নীতি নিয়ে একটি নতুন ভাবনা তুলেধরেছিলেন। তাঁর গবেষণাপত্রকে ভিত্তি করেই একরকমভাবে আজকের ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কগড়ে তুলেছে। শুধু তাই নয়, আমাদের স্বাধীন ভারতের যুক্তরাজ্য ব্যবস্থায় রাজ্য ওকেন্দ্রের মধ্যে আর্থিক সম্পর্ক কেমন হবে, কিভাবে অর্থ বন্টন করা হবে – তা নির্ণয়করার জন্য যে ফিনান্স কমিশন গড়ে তোলা হয়েছে, তাও বাবাসাহেব আম্বেদকরের ভাবনারইপরিণাম।
অর্থাৎ, ভারতেরমুদ্রা ব্যবস্থায় তাঁর অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য তাঁর নামে এই ‘ভীম’অ্যাপ চালু করা হয়েছে। এর ব্যবহার অত্যন্ত সহজ। একে ডাউনলোড করার পর আপনারা শুধুস্মার্ট ফোন নয়, ১০০০-১২০০ টাকা দামের ফিচার ফোনেও ব্যবহার করতে পারবেন। ইন্টারনেটহতে হবে এমন কোনও মানে নেই। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আরেকটি ঘটনা ঘটতে চলেছে,সেটির সুরক্ষা ব্যবস্থা এখন পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেটি চালু হলে ‘ভীম’-এর শক্তি এতবেড়ে যাবে যে, মোবাইল ফোন, স্মার্ট ফোন, ফিচার ফোন কিংবা ইন্টারনেট কোনওটারইপ্রয়োজন পড়বে না। শুধু আপনার বুড়ো আঙুলের ছাপই যথেষ্ট। কেউ ভাবতে পারেন, একটা সময়েমূর্খদের ‘আঙ্গুঠা ছাপ’ বলা হ’ত। এখন সময় বদলে গেছে। আপনার বুড়ো আঙুলের ছাপ দিয়েইআপনি ব্যাঙ্কের সমস্ত লেনদেন করতে পারবেন। আপনার ব্যবসা চালাতে পারবেন।
কত বড় বিপ্লবআসতে চলেছে। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে, দু’সপ্তাহ পর এটি সাফল্যের সঙ্গে চালুকরতে পারলে এই ‘ভীম’ বিশ্বের আধুনিকতম সপ্তম আশ্চর্যের এক আশ্চর্য বলে পরিগণিতহবে।আমাদের দেশে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ আধার কার্ড পেয়েছেন। যাদের বয়স ১২-১৫ বছরেরকম, তারা এখনও পায়নি, কাজ চলছে। বাকিরা প্রায় সকলেই পেয়ে গেছেন, অল্প কয়েকজনেরবাকি রয়েছে। অন্যদিকে দেশে ১০০ কোটিরও বেশি মোবাইল ফোন রয়েছে। যে দেশের ৬৫ শতাংশনাগরিকের বয়স ৩৫ বছরের কম, আর ১০০ কোটিরও বেশি মানুষের হাতে মোবাইল ফোন রয়েছে, তারওপর বুড়ো আঙুলের ছাপ দিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করা হচ্ছে। কত বড় ইতিহাস রচিতহতে চলেছে, তা আপনারা কিছু দিনের মধ্যেই জানতে পারবেন। এখন যদি আপনারা গুগল অন করেজিজ্ঞেস করেন ‘ভীম’ কি? তাহলে গুগল জবাব দেবে মহাভারতের ভীম। তারপর দেখাবে,ভারতরত্ন ভীমরাও আম্বেদকরের জীবন কথা। এই মহাপুরুষের জীবনের মন্ত্র ছিল ‘বহুজনহিতায়, বহুজন সুখায়’। তিনি দলিত, পীড়িত, শোষিত মানুষের মসিহা ছিলেন। আজ সেইমানুষদের ক্ষমতায়নে আধুনিকতম প্রযুক্তির ব্যবহার তাঁর নামেই নামাঙ্কিত করা হয়েছে। লেখাপড়াজানা ধনীদের নয়, এই শক্তি গরিবদের ক্ষমতায়ন করবে, দেশের সর্বত্র ছোট ছোট ব্যবসায়ীও কৃষকদের আদিবাসী ও দলিত, পীড়িত, শোষিত মানুষের ক্ষমতায়নের পথ প্রশস্ত করবে।
বিশ্বের অনেকসমৃদ্ধ দেশ যাঁদের অধিকাংশ নাগরিকই লেখাপড়া জানেন। তাঁরা একথা শুনে অবাক হয়ে যানযে, ভারতের মতো দেশে কোটি কোটি মানুষ বোতাম টিপে ভোট দেন, আর যখন গণনা শুরু হয়,দু’ঘন্টার মধ্যেই ফল আসতে শুরু করে। এই ভোট প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে সেসব উন্নতদেশে সপ্তাহখানেক লেগে যায়।
কিন্তু কিছুমানুষ খুবই নেতিবাচক স্বভাবের হন। ঐ নেতির কোনও ওষুধ নেই। তাঁরা তাঁদের হতাশা নিয়েভাল থাকুন। আপনারা পুরনো দিনের সিনেমায় দেখেছেন, ভারতে একটা সময় ছিল, যখন শেয়ারমার্কেটে ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়ে চিৎকার করতে থাকতেন, আঙুল উঠিয়ে দর হাঁকতেন, তখনশেয়ার বাজারে লগ্নি করলে বড় বড় শেয়ারের শংসাপত্র ডাকযোগে আসত। সেগুলি সামলে রাখতেহ’ত। আর আজ স্টক মার্কেটে ডিম্যাট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গোটা ব্যবসাটাই অনলাইনেচলে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরাও সেখানে বিনিয়োগ করতে পারেন। আর এই কোটি কোটিটাকার লেনদেনের জন্য কোনও কাগজের টুকরো বা শংসাপত্রের প্রয়োজন হয় না। সকলেরঅজান্তেই শেয়ার মার্কেটে এই পরিবর্তন এসে গেছে। আজ আমি যখন ই-পেমেন্ট নিয়ে কথাবলি, অনেকে সন্দেহের চোখে তাকান। বড় বড় মানুষেরা, উচ্চ পদাধিকারীরা মৃদুস্বরেনরমভাবে বলেন, এই মূর্খদের দেশে এটা কেমনভাবে সম্ভব! সবার হাতে মোবাইল ফোন কোথায়?এই নেতিবাচক মানসিকতার কোনও ওষুধ নেই। কিন্তু ইতিবাচক মানুষদের জন্য আমার কাছেহাজার হাজার সু্যোগ আছে।
ভাই ও বোনেরা,আজ কোনও ধোপা কী ভাবতে পারেন যে তাঁকে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ দেওয়া হবে? তেমনই অন্যান্যক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ভাবতেই পারেন না যে, ব্যাঙ্ক তাঁদের ঋণ দিতে পারে! কারণ, আমরাসেরকম পরিবেশ বানিয়ে রেখেছি। আমি ডিজিটাল লেনদেন নিয়ে কথা বলছি। ‘ভীম’-এর মাধ্যমেদেশে কী বিপ্লব আসতে চলেছে, তা এই ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের মাধ্যমেই আপনারা বুঝতেপারবেন। মনে করুন, একজন ধোপা সারাদিন কাজ করে ৫০০-১০০০ টাকা রোজগার করেন আর খরচকরে ফেলেন। যেদিন ডিজিটাল পেমেন্ট শুরু হবে, তার পুরো ট্র্যাক রেকর্ড তৈরি হবে,তাঁর মোবাইল ফোন তাঁকে বলবে যে, ৫০০-১০০০ টাকা রোজগারের মধ্যে ১০০-২০০ টাকাবাঁচাতে পারলেই ব্যাঙ্ক তাঁকে ঋণ দেবে। ঋণ দেওয়ার আগে ব্যাঙ্ক আধিকারিকরা তাঁরমোবাইল ফোনের ট্র্যাক রেকর্ড দেখে সুনিশ্চিত হবে যে তিনি সত্যি সত্যিই দৈনিক১০০-২০০ টাকা বাঁচাতে পারেন কি না। ধোপা যদি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পান, তাহলে তিনিমহাজনের কাছ থেকে অধিক সুদে ঋণ নিতে যাবেন না। ব্যাঙ্ক তাঁর ট্র্যাক রেকর্ড দেখে ৫মিনিটের মধ্যে ৫ হাজার টাকা তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দিয়ে দেবে। এই ই-ব্যাঙ্কিংব্যবস্থা কিছুদিনের মধ্যেই সারা দেশে কোটি কোটি মানুষ সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন।তাঁদের জন্য ‘ভীম’ একটি কমন প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে। ভারতবাসীর জন্য এটা আমাদের ২০১৭সালের উপহার।
ভাই ও বোনেরা,আজ থেকে তিন বছর আগের খবরের কাগজ খুলে দেখুন, ইউটিউব খুলে দেখুন, টিভি নিউজ কিংবাক্লিপিং-এ দেখতে পাবেন, অনেক অনেক কেলেঙ্কারি নিয়ে আলোচনা চলছে। ২-জি বাবদ কতহাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে, কয়লা খনি বাবদ কত হাজার কোটি টাকা গেছে – এরকমঅসংখ্য দুর্নীতির খবরে ছয়লাপ। সময় কত বদলে গেছে। একই দেশ, একই জনসাধারণ, একই আইনব্যবস্থায় আজ মানুষ প্রতিদিনের হিসেব রাখতে পারছেন।
ভাই ও বোনেরা,গরিবদের ভালবাসলে, তাঁদের প্রতি সমর্পিত হয়ে কাজ করলে ঈশ্বর ভালো কিছু করার শক্তিদেন। একজন নেতার কথা শুনে আমি অবাক! তিনি আমার কথা শুনে বলছেন, পর্বতের মূষিকপ্রসব। আরে ভাই আমি তো ইঁদুরই বের করতে চেয়েছিলাম। কৃষকের পরিশ্রমের ফসল তো এইইঁদুররাই খেয়ে যাচ্ছিল। যে মহান নেতা এই মন্তব্য করেছেন, তাঁকে সত্য বলার জন্যঅসংখ্য ধন্যবাদ। যে ইঁদুরগুলি গরিবের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফলানো ফসল খেয়ে যেত,সেগুলিকে ধরার কাজই আমরা দ্রুত গতিতে করার চেষ্টা করছি।
ভাই ও বোনেরা,আমি সংবাদ মাধ্যমের বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, তারা আগে গাড়ির মাথায় লালবাতিজ্বালিয়ে দ্রুতগতিতে যে মহান ব্যক্তিরা চলাফেরা করতেন, তাঁদের পেছনে পড়েছেন।তাঁদের উৎসাহ লাল বাতি ওয়ালাদের ভয়ের কারণ হয়ে ওঠে। আগে সরকার থেকে বললেও অনেকেসিট বেল্ট লাগাতেন না, সংবাদ মাধ্যমের জন্য তাঁরা সিট বেল্ট লাগাতে শুরু করেন।যাঁরা স্কুটার, মোটর বাইক চালান পুলিশ তাঁদেরকে হেলমেট পড়তে বাধ্য করতে পারেননি,কিন্তু সংবাদ মাধ্যম পেরেছে। এর মানে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পুলিশ এবংসরকারকে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে বাধ্য করার ক্ষমতা রাখে এই সংবাদমাধ্যম। পরিচ্ছন্নতা অভিযানের ক্ষেত্রেও সংবাদ মাধ্যমের উৎসাহ ও উদ্দীপনা সরকারিপ্রকল্পকে দ্রুত সাফল্য এনে দিয়েছে। এই সাফল্য আমাকে আরও আশাবাদী করে তুলেছে। এইসেবার জন্য আমি সংবাদ মাধ্যমের কাছে কৃতজ্ঞ।
গত ৫০ দিন ধরেআপনারা দেখেছেন, আমি ভাষণে বলতাম, ডিজিটাল লেনদেন চালু হোক, মোবাইল ফোনের মাধ্যমেলেনদেন করুন। সংবাদ মাধ্যমের বন্ধুরা আমার ভাষণকে পাশে রেখেই কোনও রিক্শা ওয়ালাকেজিজ্ঞেস করতেন, আপনার কাছে মোবাইল ফোন আছে? তিনি জবাব দিতেন নেই।
– আপনি ক্যাশলেস কাকে বলে জানেন?
– না।
সংবাদ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে এ ধরনের প্রতিক্রিয়াদেখে সরকারকেও ভাবতে হয়েছে, কিভাবে ঐ রিক্শাচালক বা তাঁর মতো অসংখ্য মোবাইল ফোননা থাকা মানুষের কাছে ক্যাশলেস লেনদেন পৌঁছে দেওয়া যায়। কিভাবে ফিচার ফোনেরমাধ্যমেও কেনাবেচা করা যায়। সেই ভাবনার ফলস্বরূপ এই ‘ভীম’ চালু হয়েছে আর অচিরেইবুড়ো আঙুলের ছাপ দিয়ে লেনদেন সহজ হবে। এর কৃতিত্ব সংবাদ মাধ্যমের। সেজন্য আপনাদেরধন্যবাদ জানাই। আপনারা এ রকমভাবেই কাজ করে যান, সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাউকে ছেড়েকথা বলবেন না, এমনকি প্রধানমন্ত্রীকেও না। এভাবেই বিপ্লব আসে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস,বিশ্বের আধুনিক দেশগুলির তুলনায় প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে সবচেয়ে বেশিযুক্ত করার কাজ এই দেশকে দ্রুত উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ভাই ও বোনেরা, আমি খুব স্পষ্ট কথা বলতে ভালোবাসি। এমনিএমনি আমাদের দেশকে ‘সোনার পাখি’ বলা হ’ত না! এমনি এমনি আমাদের দেশ ‘সোনার পাখি’থেকে গরিব দেশ হয়ে ওঠেনি। আমাদের স্বভাবের দোষে, আমাদের গ্লানি এই দেশটিকেদারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু আজও এই দেশকে আবার সোনার পাখি করে তোলারপূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। এই স্বপ্ন এবং বিশ্বাস নিয়ে দরিদ্র জনসাধারণের অধিকারসুনিশ্চিত করতে মধ্যবিত্তদের শোষণমুক্ত করতে দেশ যেভাবে সততার পথে চলতে চায় আমরাশুধু সেটাই সুনিশ্চিত করতে চাই।
ভাই ও বোনেরা, আজ অনেকেই এই কাজের মূল্যায়ন করার হিম্মতদেখাবেন না, এর তাৎপর্য বোঝার ক্ষমতাই অনেকের নেই। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতেই এই গোটাপ্রক্রিয়ার মূল্যায়ন হবে, ইতিহাসের পাতায় এই দিনগুলি সম্পর্কে স্বর্ণাক্ষরে লেখাহবে। কখনও বলা হ’ত য়ুমান এবং মিশরের মতো দেশ তাদের গৌরব হারিয়েছে কিন্তু আমাদেরগৌরব অক্ষুণ্ন রয়েছে, এর কারণ কি?
ভাই ও বোনেরা, আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে, যখনইআমাদের দেশে কোনও বহিঃশত্রুর আক্রমণ হয়েছে, তখন গোটা দেশ এক জোট হয়ে আক্রমণকারীরবিরুদ্ধে লড়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। ইতিহাসে এরকম বেশ কিছু দৃষ্টান্ত রয়েছে।কিন্তু আজ দেশ নিজের অভ্যন্তরের দোষগুলি সমাপ্ত করার লড়াই শুরু করেছে। নিজের ওসমাজের যা কিছু খারাপ দিক রয়েছে, সেগুলিকে পরাস্ত করার জন্য ১২৫ কোটি দেশবাসীহাসিমুখে অনেক কষ্ট সহ্য করছেন।
ভাই ও বোনেরা, এটাই এ দেশের আসল শক্তি। নিজেদের ভেতরেরত্রুটি থেকে মুক্ত করতে আমরা নিজেরাই ব্যবস্থা নিতে পারি। নিজের বিরুদ্ধে লড়াই করাসহজ কথা নয়। ১২৫ কোটি দেশবাসী নিজে থেকেই এগিয়ে এসেছেন। অনেকে স্বেচ্ছায় নিজেরত্রুটি-বিচ্যুতি স্বীকার করেছেন আবার অনেকে বাধ্য হয়েছেন। অনেকের অজান্তেইদুর্নীতি ঘুণের মতো আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে ঝাঁঝরা করে দিচ্ছিল। এই ঘুণ ধরা সমাজকেবেইমানি মুক্ত করতে আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি, গত ৮ নভেম্বরের পর থেকে আমি দেখেছি,দেশের অধিকাংশ মানুষ যেন এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁরা সৎ জীবনযাপন করতে চান।সেজন্য অধিকাংশ দেশবাসী সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন আর অনেক কষ্ট সহ্য করেও সাফল্যেরপথে এগিয়ে চলেছেন।
ভাই ও বোনেরা, আমি বিশ্বাস করি, আপনাদের এই পরিশ্রম, এইকষ্ট অতুলনীয়। সারা বিশ্ব অবাক হয়ে দেখছে, একটি দেশের ৮৬ শতাংশ মুদ্রা হঠাৎ করেব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তবুও তাঁরা কেমন করে হাসিমুখে দিনযাপন করছেন। আমাদেরদেশের সাধারণ মানুষের এই শক্তিকে অতুলনীয় বলব না তো কি বলব? সেজন্যই ভাই ও বোনেরা,আমার মতে, দেশের সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে গরিব মানুষের অধিকারকে আগে প্রতিষ্ঠিতকরতে হবে। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই কেবল শ্লোগান দিয়ে হয় না। আপনারা দেখেছেন,আমি দেশবাসীর কাছে আবেদন রেখেছিলাম, যাঁদের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য আছে, তাঁরা যেনরান্নার গ্যাসে ভর্তুকি না নেন। ২০১৪-র সাধারণ নির্বাচনের আগে দেশে বছরে ৯টাসিলিন্ডার দেওয়া হবে না ১২টি সিলিন্ডার দেওয়া হবে – এই বিতর্ক নিয়ে শাসক দল বাজারগরম করছিল। আর আমরা ক্ষমতায় এসে বললাম, ভর্তুকি ত্যাগ করুন। কত বড় বৈপরীত্য। আমিআজ মাথা নত করে সেই প্রিয় দেশবাসীদের প্রণাম জানাই, আমার আবেদনে সাড়া দিয়ে দেশের ১কোটি ২০ লক্ষ সচ্ছল মানুষ স্বেচ্ছায় তাঁদের ভর্তুকি ত্যাগ করেছেন। আমি প্রতিশ্রুতিদিয়েছিলাম যে, তাঁদের ত্যাগ করা ভর্তুকি সম্বলিত রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারগুলিআমি সেই গরিব মায়েদের হাতে তুলে দেব, যাঁরা কাঠের উনুনে রান্না করেন। একদিনে প্রায়৪০০ সিগারেটের সমান বিষাক্ত ধোঁয়া তাঁদের নিজের ও সন্তানদের ফুসফুসে প্রবেশ করে,তাঁদের হাতে তুলে দেব। আপনাদের এই ত্যাগ বৃথা যায়নি, আমরাও কথা রেখেছি। ইতিমধ্যেইপ্রায় দেড় কোটি গরিব মায়ের রান্নাঘরে আমরা গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়েছি। এসবউদাহরণ দিয়ে আমি বলতে চাইছি, এখন যা কিছু হবে – সব গরিবদের স্বার্থেই হবে।
দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বন্ধুগণ। দেশের সাধারণমানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারলে তবেই দেশ এগিয়ে যাবে। আজ যখন আমরা পণ্ডিতদীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্ম শতবর্ষ পালন করতে যাচ্ছি, আগামী বছরটিকে ভারত সরকার গরিবকল্যাণ বর্ষ রূপে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন আমাদের সমস্ত প্রকল্প গরিবমানুষের কল্যাণে মধ্যবিত্তের অধিকার রক্ষার স্বার্থে সাধারণ মানুষকে শোষণমুক্তকরতে সমর্পিত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দেশের সাধারণ মানুষ যেভাবে আমাদের ওপর আশীর্বাদবর্ষণ করছেন, নিজেরা শত কষ্ট সহ্য করেও সরকারের পাশে থাকছেন, আগামী দিনে এইপরিবর্তনের সুফল তাঁরা ভোগ করবেন।
আমি আরেকবার আজ যাঁরা পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁদেরকেশুভেচ্ছা জানাই। সাধারণ মানুষের কাছে আমার আবেদন, ২০১৭ সালের প্রথম দিন থেকেইআপনারা নিজেদের মোবাইল ফোন দিয়ে নিদেনপক্ষে ৫টি লেনদেন করুন। প্রত্যেক ভারতবাসীযদি একবার তাঁদের মোবাইল ফোনে ৫ বার লেনদেন করেন, তা হলেই দেখবেন, এই দেশ একটিনতুন ডিজিটাল নেতৃত্ব প্রদান করবে। আমি আরেকবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছাজানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।