৭০ বছরেপ্রথমবার কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ইজরায়েল আসা একটি আনন্দের বিষয়। আবার কিছুপ্রশ্নচিহ্নও তুলে ধরেছে। এটা মানুষের স্বভাব যে, আমাদের কোনও ঘনিষ্ঠ কারও সঙ্গেদীর্ঘদিন পর দেখা হলে প্রথম প্রশ্নটা হয়, কেমন আছেন? এই প্রথম বাক্যটি একপ্রকারস্বীকারোক্তির সঙ্গে যুক্ত। প্রিয়জন কেমন আছেন, প্রশ্নটির পাশাপাশি এটাও স্বীকারকরে নেওয়া যে, অনেকদিন বাদে দেখা হয়েছে! আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলা এইস্বীকারোক্তি দিয়েই শুরু করতে চাই। সত্যি অনেক দিন বলা ঠিক হবে না, অনেক বছর পরদেখা হয়েছে, ১০-২০-৫০ বছর নয়, ৭০ বছর লেগে গেছে।
দেশ স্বাধীনহওয়ার ৭০ বছর পর ভারতের কোনও প্রধানমন্ত্রী ইজরায়েলের মাটিতে পা দিয়েছে। আজআপনাদের আশীর্বাদ মাথা পেতে নেওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে আমার বন্ধুইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এসেছেন। ইজরায়েল আসার পর থেকে তিনিআমাকে যেভাবে সঙ্গ দিচ্ছেন, যে সম্মান দিয়েছেন, তা আমার মাধ্যমে ১২৫ কোটিভারতবাসীকে সম্মানিত করেছে। এহেন সম্মান, এহেন ভালবাসা এই আপনত্বকে ভুলতে পারেবিশ্বে এমন কে আছেন! আমাদের উভয়ের মধ্যে একটি মিল রয়েছে। আমরা উভয়েই নিজ নিজ দেশস্বাধীন হওয়ার পর জন্মগ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু’র একটি রুচি সমস্তভারতবাসীর হৃদয় ছুঁয়ে যাবে। তা হল, ভারতীয় খাবারের প্রতি তাঁর আসক্তি। গতকালনৈশভোজের সময় তিনি যেভাবে মহানন্দে আমার সঙ্গে ভারতীয় খাবার খেয়েছেন, তা আমারস্মৃতিতে অমলিন থাকবে।
আমাদেরদু’দেশের মধ্যে সার্বিক কূটনৈতিক সম্পর্কের বয়স মাত্র ২৫ বছর হলেও এটাই সত্য যেকয়েক শতাব্দী ধরে ভারত ও ইজরায়েল বহু শতাব্দী ধরে পরস্পরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্তরয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, মহান ভারতীয় সুফীসন্ত বাবা ফরিদ ত্রয়োদশ শতাব্দীতেজেরুজালেমের একটি গুহায় দীর্ঘকাল তপস্যারত ছিলেন। পরবর্তী সময় সেই জায়গাতীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। আজও এই জেরুজালেম আর ভারত ৮০০ বছর পুরনো সম্পর্কের একটিপ্রতীক হয়ে রয়েছে। ২০১১ সালে জেরুজালেমের কেয়ারটেকার শেখ আনসারি মহোদয়কে প্রবাসীভারতীয় সম্মান প্রদান করা হয়েছিল। আর আজ আমার তাঁর সঙ্গে দেখা করার সৌভাগ্য হয়েছে।ভারতের সঙ্গে ইজরায়েলে এই পরম্পরাগত সম্পর্কের সুতো হচ্ছে উভয় দেশের সংস্কৃতি,পরস্পরের প্রতি নির্ভরযোগ্যতা ও বন্ধুত্ব। আমাদের পালাপার্বনের মধ্যেও অনেক মিলআছে। ভারতে হোলি পালন করা হয় আর এদেশে ‘পরিম’। ভারতে দীপাবলি পালন করা হয় আর এদেশে‘হনুকা’। এগুলি জেনে আমার খুব ভাল লেগেছে যে, ইহুদিদের পুনরুত্থানের প্রতীকমেকাইবা গেমস্-এর উদ্বোধন হচ্ছে আগামীকাল আমি ইজরায়েলবাসীকে এই ক্রীড়া অনুষ্ঠানেরজন্য শুভেচ্ছা জানাই। আমি আনন্দিত যে, ভারত এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নিজেদের দলপাঠিয়েছে। আজ এখানে ভারতীয় দলের খেলোয়াড়রাও উপস্থিত আছেন। আমি তাঁদের সবাইকে অনেকঅনেক শুভেচ্ছা জানাই।
ইজরায়েলের এইবীরভূমি অনেক বীর সন্তানের আত্মবলিদানের সাক্ষী। এখানে এই অনুষ্ঠানে এমন অনেকপরিবারের সদস্যরা হয়তো রয়েছেন, যাঁদের জীবনে ঐ আত্মবলিদানের গাঁথা রয়েছে। আমিইজরায়েলের শৌর্যকে প্রণাম জানাই। এই শৌর্যই ইজরায়েলের উন্নয়নের মূল ভিত্তি। কোনওদেশের উন্নয়ন তার আকার নির্ভর হয় না, তার নাগরিকদের ইচ্ছাশক্তির নির্ভর হয়।সংখ্যার আকার যে এতটা মানে রাখে তা ইজরায়েল করে দেখিয়েছে। এই উপলক্ষে আমি সেকেন্ডলেঃ এলিস অ্যাস্টনকেও শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করতে চাই। যাঁকে ইজরায়েল সরকাররাষ্ট্রনির্মাণে তাঁর অবদানের জন্য ‘সার্টিফিকেট অফ গ্যালান্ট্রি’ সম্মানে ভূষিতকরেছে। এলিস অ্যাস্টনের আরেক নাম ছিল ‘দ্য ইন্ডিয়ান’। ব্রিটিশ শাসনকালে তিনিমারাঠা লাইট ইনফান্ট্রি’তে কাজ করেছেন। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় ইজরায়েলের হাইফাশহরকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে ভারতীয় সৈনিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আমার সৌভাগ্যযে আগামীকাল আমি সেই বীর সৈনিকদের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করতে হাইফা যাচ্ছি।
গতকাল রাতেআমি বন্ধু প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু’র বাড়িতে নৈশভোজে গিয়েছিলাম। ঘরোয়া পরিবেশেআমরা দীর্ঘক্ষণ গল্প করেছি। রাত ২টো ৩০ মিনিট পর্যন্ত গল্প করে বেরোনোর সময় তিনিআমাকে একটি ছবি উপহার দিয়েছেন, যাতে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় ভারতীয় সৈনিক দ্বারাজেরুজালেম’কে মুক্ত করানোর একটি অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী দৃশ্য অঙ্কিত রয়েছে। বন্ধুগণ,বীরত্বের এই পর্যায়েও আমি ভারতীয় সেনার লেফটেন্যান্ট জে এফ আর জ্যাকবের নাম উল্লেখকরতে চাই। ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধরতভারতীয় এই সেনা আধিকারিক ৯০ হাজার পাকিস্তানী সৈনিককে আত্মসমর্পণে বাধ্য করতেগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বন্ধুগণ, ভারতে ইহুদি সম্প্রদায়ের মানুষ অনেক কমসংখ্যক রয়েছেন। কিন্তু তাঁরা যেখানেই রয়েছেন, নিজেদের উপস্থিতি অত্যন্ত মর্যাদারসঙ্গে প্রতিষ্ঠিত করিয়েছেন। শুধু সেনাবাহিনী নয়, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্রজগতে তাঁরা নিজেদের পরিশ্রম এবং ইচ্ছাশক্তির জোরে সাফল্য অর্জন করেছেন। আমি দেখতেপাচ্ছি, আজকের এই মর্যাদাপূর্ণ অনুষ্ঠানে ইজরায়েলের অনেক শহরের মেয়ররা উপস্থিতরয়েছেন। ভারত এবং ভারতীয়দের প্রতি তাঁদের ভালবাসা তাঁদেরকে এই অনুষ্ঠানে শরিক হতেঅনুপ্রাণিত করেছে। আমার মনে পড়ে, ভারতের তথাকথিত আর্থিক রাজধানী মুম্বাই শহরেওএকজন ইহুদি নাগরিক একবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখনও দেশ স্বাধীন হয়নি, আজ থেকে৮০ বছর আগের কথা। তখন মুম্বাইকে বম্বে বলা হ’ত। ১৯৩৮ সালে সেই বম্বে শহরের মেয়রহিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন শ্রী এলিজা মজেস।
ভারতেরঅনেকেই হয়তো জানেন না যে, অল ইন্ডিয়া রেডিও’র সিগনেচার টিউন’টিও রচনা করেছেন একজনইহুদি সঙ্গীতকার শ্রী ওয়ালটার কফম্যান। তিনি ১৯৩৫ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিও বম্বেকেন্দ্রের নির্দেশক ছিলেন। ভারতে বসবাসকারী ইহুদিরা ভারতীয় সংস্কৃতিকে আপন করেনিয়েছেন কিন্তু তাঁদের ভাবনায় তাঁরা ইজরায়েলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এভাবেই তাঁরাযখনই ভারত থেকে এদেশে ফিরেছেন, ভারতীয় সংস্কৃতিকেও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন। আজওতাঁরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছেন।
আমি শুনে খুবখুশি হয়েছি যে, ইজরায়েল থেকে একটি মারাঠি ভাষার পত্রিকা ‘মাই বি ওলি’ নিয়মিতপ্রকাশিত হয়। এভাবেই কোচিন থেকে ফিরে আসা ইহুদিরা ইজরায়েলে অত্যন্ত উৎসাহ ওউদ্দীপনার সঙ্গে ‘ওনাম’ উৎসব পালন করেন। যে ইহুদিরা বাগদাদ থেকে ভারতে এসেছিলেন,সেই বাগদাদি ইহুদি সম্প্রদায়ের উত্তরসূরীদের প্রচেষ্টাতেই গত বছর ভারতে বাগদাদিইহুদিদের প্রথম আন্তর্জাতিক সিম্পোসিয়াম আয়োজন করা সম্ভব হয়েছিল। ভারত থেকে ফিরেআসা ইহুদিরা ইজরায়েলের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এর বড় উদাহরণহলেন, মোশভ নেভাতিম। ইজরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়ন এদেশের মরুঅঞ্চলকে শস্যশ্যামলা করে তোলার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা বাস্তবায়িত করতে ভারত থেকেফিরে আসা ইহুদি ভাই-বোনেরা দিনরাত এক করে কাজ করেছেন। সেজন্য প্রত্যেক ভারতীয়তাঁদের জন্য গর্ব করেন। বন্ধুগণ, তাঁরা ছাড়াও তাঁদের ভারতীয় বন্ধুরা ইজরায়েলেরকৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সেজন্য আমি মোশভ নেভাতিম, ভারতথেকে ফিরে আসা অন্য ইহুদি ভাই-বোন ও অন্যান্য ভারতীয়দের জন্য গর্ববোধ করছি। এইঅনুষ্ঠানে আসার আগে আমার প্রবাদপ্রতীম ব্যক্তিত্ব বেজালেল ইলিয়াহু’র সঙ্গে দেখাহয়েছিল। বেজালেল ইলিয়াহু’কে ২০০৫ সালে প্রবাসী ভারতীয় গ্রুপে সম্মান জানানোহয়েছিল। তিনিই প্রথম ইহুদি যিনি এই সম্মান পেয়েছেন। কৃষি ছাড়াও এদেশে ভারতীয়রানানা ক্ষেত্রে নিজেদের ছাপ রেখে গেছেন। ইজরায়েলের প্রসিদ্ধ চিকিৎসক লাইলবিস্ট আমারনিজের রাজ্য গুজরাটের মানুষ। যাঁরা আমেদাবাদ শহরকে চেনেন, তাঁরা হয়তো মণিনগরেরওয়েস্ট হাইট স্কুলের নাম শুনেছেন। এ বছর তাঁকে প্রবাসী ভারতীয় সম্মান প্রদান করাহয়েছে। ডঃ লাইলবিস্ট এদেশের অন্যতম প্রধান হৃদ-শল্য চিকিৎসক। তাঁর গোটা জীবন তিনিমানুষের সেবায় কাটিয়ে দিয়েছেন। তাঁর চিকিৎসা নিয়ে অনেক গল্প রয়েছে। আমি মিনাসেসম্প্রদায়ের নীনা সান্তা সম্পর্কে জানতে পেরেছি যে, এই নীনা মেয়েটি চোখে দেখতে পাননা কিন্তু তাঁর ইচ্ছাশক্তি ইজরাইলিদের মতো প্রখর। এ বছর ইজরায়েলে স্বাধীনতা দিবসসমারোহে উদ্বোধন করেছেন ঐ ভারতকন্যা নীনা সান্তা। তিনি এই সমারোহে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনকারীদেরঅন্যতম ছিলেন। আমি তাঁর ভবিষ্যৎ অগ্রগতির জন্য শুভেচ্ছা ও আশীর্বাদ জানাই। আজ এইউপলক্ষে আমি ইজরায়েলের ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতি মহান নেতা সিমন পেরেস’কেও শ্রদ্ধাঞ্জলিজানাতে চাই। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। তিনি শুধু নানা সামরিকউদ্ভাবনী শক্তির অগ্রদূত ছিলেন না, মানবতার স্বার্থে অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন। তিনিছিলেন, একজন মহান কূটনীতিজ্ঞ। ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশিক্ষণে গোড়া থেকেইউদ্ভাবনে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। ফলে, অনেক যুদ্ধ সমস্যার পুঙ্খানুপুঙ্খ সৃষ্টিশীলসমাধানে ঐ উদ্ভাবনগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। উদ্ভাবনে শ্রেষ্ঠত্বের জন্যইতিমধ্যেই নানা ক্ষেত্রে ১২ জন ইজরায়েলি বৈজ্ঞানিক নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। কোনওদেশের উন্নয়নে উদ্ভাবনের গুরুত্ব কতটা তা ইজরায়েল’কে দেখে বোঝা যায়। ইজরায়েল বিগতদশকগুলিতে তাদের নানা আবিষ্কারের মাধ্যমে সারা পৃথিবীকে চমকে দিয়েছে। জিও থার্মালপাওয়ার, সোলার প্যানেল, সোলার উইন্ডো, জৈব কৃষি প্রযুক্তি, নিরাপত্তা ক্ষেত্র,আধুনিক ক্যামেরা, কম্প্যুটার প্রসেসার ইত্যাদি অনেক ক্ষেত্রে নতুন নতুন আবিষ্কারেরমাধ্যমে ইজরায়েল বিশ্বের বড় বড় দেশকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। এই সাফল্যের কারণেইইজরায়েল’কে ‘স্টার্ট আপ নেশন’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ভারত আজ বিশ্বের সর্বাধিকতীব্রগতিতে উন্নয়নশীল অর্থ ব্যবস্থাগুলির মধ্যে অন্যতম। আমার সরকারের মন্ত্র হ’ল –‘রিফর্ম’, ‘পারফর্ম’ এবং ‘ট্র্যান্সফর্ম’। সম্প্রতি এ মাসের ১ তারিখে ভারতে পণ্য ওপরিষেবা কর চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত যে দীর্ঘ এক দশক ধরে এক জাতি এক কর একবাজারের স্বপ্ন দেখছিল, তার বাস্তবায়ন হয়েছে। আর আমি জিএসটি’কে নাম দিয়েছি ‘গুডঅ্যান্ড সিম্পল ট্যাক্স’। কারণ, এর মাধ্যমে সারা দেশে এখন যে কোনও জিনিসে একধরনেরই কর বসানো হবে। এর আগে দেশের কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে সকল প্রকার কর জুড়লে৫০০টিরও বেশি কর দিতে হ’ত। কর প্রক্রিয়া এমন জটিল ছিল যে, এক মাসে ১ লক্ষ টাকাথেকে ১ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যবসা যাঁরা করতেন, প্রত্যেককেই নানা সমস্যারসম্মুখীন হতে হ’ত। জিএসটি’র ফলে ভারতে আর্থিক ঐক্য স্থাপিত হয়েছে। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল যেমন স্বাধীনতার প্রাক্কালে ৫০০টিরও বেশি দেশীয় রাজ-রাজড়াদের শাসনাধীনরাজ্যকে এক করতে সফল হয়েছিলেন, তেমনই ২০১৭ সালে ভারতে আর্থিক একীকরণের দীর্ঘপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে।
ভারতের নানাপ্রাকৃতিক উপাদান যেমন - কয়লা ইত্যাদির খনি নিলাম, স্পেকট্রাম নিলাম ইত্যাদিক্ষেত্রে কিছু পুরনো কথা মনে করাতে চাই। তখন আপনারা এগুলি নিয়ে কত দুর্নীতির কথাশুনেছেন। কিন্তু বর্তমান সরকার এই নিলাম প্রক্রিয়ায় কম্প্যুটারের মাধ্যমে স্বচ্ছতাএনে সাফল্যের মুখ দেখেছে। তারপর থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসা হলেও এইপ্রক্রিয়া নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। আমরা দেশের অর্থ ব্যবস্থায় প্রথাবদ্ধ সংস্কারআনার চেষ্টা করেছি। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রয়োজনের কথাও আমরা দীর্ঘকালধরে শুনে আসছি। ভারতে সবাই ভাবতেন যে, এটা সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা তিন বছরের মধ্যেইপ্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও সংস্কার আনতে সক্ষম হয়েছি এবং ১০০ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশিবিনিয়োগের ব্যবস্থা করতে সফল হয়েছি। এখন ইজরায়েলের যে কোনও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামনির্মাণকারী ভারতে বিনিয়োগ করতে পারবেন। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে বেসরকারিকোম্পানিগুলিকে একটি কৌশলগত অংশীদার হিসাবে যুক্ত করার আইনসঙ্গত সিদ্ধান্ত আমরানিতে পেরেছি। বিগত তিন বছরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশেনির্মাণ ক্ষেত্রে মধ্যবিত্তরা গৃহ নির্মাণ করলে অনেক অভিযোগ উঠত। আমরা আইন পাশ করেএই সংস্কারের ভিত্তি স্থাপন করেছি। নির্মাণ ক্ষেত্রেও ১০০ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশিবিনিয়োগ মঞ্জুর করেছি। আমরা আলাদাভাবে রিয়েল এস্টেট রেগুলেটর গড়ে তুলেছি। সরকাররিয়েল এস্টেট সেক্টরকে শিল্পের মর্যাদা দিয়েছে, যাতে এই ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলিওঅল্প সুদে ঋণ পেতে পারে। কারণ, আমার স্বপ্ন আগামী ২০২২ সালে ভারত যখন স্বাধীনতার৭৫ বছর পূর্তি উৎসব করবে, স্বাধীনতার জন্য আত্মবলিদানকারী স্বাধীনতা সংগ্রামীরাযেমন ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেমন প্রত্যেকের মাথার ওপর ছাদ থাকবে, প্রত্যেকবাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকবে, পানীয় জল ও শৌচাগার থাকবে, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িতকরতে আমরা এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ মঞ্জুর করেছি। আমরা রিয়েল এস্টেটতথা নির্মাণ ক্ষেত্রকে পরিকাঠামোর উন্নয়নের মর্যাদা দিয়ে দরিদ্র গৃহহীনদের জন্যগৃহ নির্মাণের আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করতে চেয়েছি। আগে শুধুই সরকারি কোম্পানি বিমারদায়িত্বে ছিল। আমরা সেখানেও বেসরকারি কোম্পানিগুলিকে প্রতিযোগিতার ময়দানে নিয়েএসেছি। এই প্রতিযোগিতার পরিবেশ গড়ে তোলার ফলে সাধারণ মানুষ এখন ন্যূনতম অঙ্কেরবিমা করিয়ে অধিকতম পরিষেবা পেতে পারেন। বিমা সংস্কারের ক্ষেত্রে আমরা বিদেশিবিনিয়োগকে ২৬ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৪৯ শতাংশে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেশেরব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে সংস্কারের মাধ্যমে সুদৃঢ় করতে আমরা ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণেরলক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছি। ব্যাঙ্কে চাকরির জন্য আমরা স্বতন্ত্ররিক্রুটমেন্ট বোর্ড গড়ে তুলেছি। এতে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রভাব একদমই সমাপ্ত করেদিয়েছি।
আমরা দেশেএকটি গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন করেছি। ‘ব্যাঙ্করাপ্টসি অ্যান্ড ইনসলভেন্সি কোড’-এরমাধ্যমে সারা পৃথিবীর শিল্পপতি ও বিনিয়োগকারীদের মনে নতুন আস্থা গড়ে উঠবে এবংব্যাঙ্কগুলি নতুন শক্তিতে উজ্জীবিত হবে। এই আধুনিক দেউলিয়া ঘোষণাকারী আইনেরপ্রয়োজন ভারত কয়েক দশক ধরে অনুভব করছিল। আমরা সরকারের নিয়মেও সারল্য আনার চেষ্টা করেছি।ন্যূনতম সরকার, অধিকতম প্রশাসন – এই ভাবনা নিয়ে যাতে সাধারণ মানুষকে কোনও সমস্যায়না পড়তে হয়, বিনিয়োগকারীদের ছোটখাটো বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের জন্য দীর্ঘপ্রতীক্ষায় কালাতিপাত না করতে হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
একটা সময় ছিলযখন ভারতে কোনও নতুন কারখানা খুলতে হলে এনভায়রনমেন্ট ক্লিয়ারেন্স নিতে নিদেনপক্ষে৬০০ দিন লেগে যেত। আজ আমরা সেই সময় কমিয়ে ৬ মাসের মধ্যে এনভায়রনমেন্ট ক্লিয়ারেন্সদেওয়ার সকল ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তেমনই, ২০১৪ সালের আগে একটি কোম্পানিকেইনকর্পোরেট করতে ১৫ দিন, ১ মাস, ২ মাস এমনকি ৩ মাসও লেগে যেত। আমরা এসে সেই সময়কমিয়ে ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে করাতে সক্ষম হয়েছি। আর বর্তমানে সেই সময় আরও কমেছে। এখনমাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে সরকার ইনকর্পোরেট করতে সক্ষম হচ্ছে। যদি কোনও নবযুবক‘স্টার্ট আপ’ কারখানা শুরু করতে চান, তা হলে তিনি মাত্র একদিনের মধ্যেই তাঁরকোম্পানি নথিভুক্তিকরণ সম্পন্ন করতে পারবেন।
দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধে যে দেশগুলি সর্বস্বান্ত হয়েছে, তারাই নিজেদের নবীন প্রজন্মের দক্ষতাউন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুত নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। এখন বিশ্বেরসর্বাধিক নবীন প্রজন্মের মানুষ ভরা দেশ ভারতের সামনেও সেই সোনালী সুযোগ এসেউপস্থিত। ভারতের জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ মানুষের বয়স ৩৫ বছরের নীচে। যেদেশে এত বড়সংখ্যায় নবীন প্রজন্মের মানুষেরা থাকেন, সেদেশের স্বপ্নও আধুনিক হয়। তাঁদেরসংকল্পও নবীন থাকে, আর তাঁদের প্রয়াস হয় শক্তিপূর্ণ। ভারতে দক্ষতা উন্নয়নকেঅগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য আমরা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রথমবার একটি স্বতন্ত্রদক্ষতা উন্নয়ন মন্ত্রক গড়ে তুলেছি। তার আগে ২১টি আলাদা-আলাদা মন্ত্রকের অধীন ৫০থেকে ৫৫টি বিভাগে এই দক্ষতা উন্নয়নের ব্যবস্থা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। বর্তমান সরকার এইসকল দক্ষতা উন্নয়নের ব্যবস্থাগুলিকে এক মঞ্চে এনে সমন্বয়সাধনের মাধ্যমে দক্ষতাউন্নয়নের সার্বিক অগ্রাধিকার সুনির্দিশট করেছে। দেশের প্রায় সকল জেলা - সারা দেশে৬০০টিরও বেশি জেলায় একটি করে দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র খোলা হয়েছে। একটি নতুন কল্পনানিয়ে ‘ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ স্কিল’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ভারতের নবীন প্রজন্মেরমানুষদের বিশ্বমানের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের স্বার্থে ৫০টি ‘ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনালস্কিল সেন্টার’-এর নেটওয়ার্ক তৈরি করার কাজ সরকার দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।ইতিমধ্যে স্থাপিত এ ধরণের প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভারতীয় নবযুবক-যুবতীদের আন্তর্জাতিকমানের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের কাজ শুরু হয়ে গেছে। আধুনিক প্রয়োজন অনুসারেতাঁদেরকে প্রশিক্ষিত হতে হবে। সেজন্য সরকার ‘ন্যাশনাল অ্যাপ্রেন্টিসশিপ প্রমোশনালস্কিম’ চালু করেছে। এর মাধ্যমে সরকার ৫ লক্ষ নবযুবক-যুবতীদের অ্যাপ্রেন্টিসশিপ-এরপ্রশিক্ষণ দেওয়া। এই প্রকল্পে সরকার প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ করছে।অ্যাপ্রেন্টিস নবযুবক-যুবতীদের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি যেসব অঞ্চলে এইপ্রশিক্ষণের পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে, সেই গ্রামের মানুষ এবং স্থানীয় কোম্পানিগুলিকেওউৎসাহ যোগানো, যাতে তাঁরা এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানুষদের নিয়োগ করেন। এক্ষেত্রেসরকার নিয়োগকারীদেরও আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে। এই প্রথম কর্মসংস্থানকে কর ছাড়েরসঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। যে নিয়োগকারীরা নতুন কর্মসংস্থানের পথে হাঁটবেন, তাঁদেরজন্য কর ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মের মানুষদের মনে উদ্ভাবনকে উৎসাহযোগাতে সরকার ‘অটল ইনোভেশন মিশন (এআইএম)’ চালু করেছে। দেশের সকল বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়গুলিতে উদ্ভাবনও স্ব-উদ্যোগের ভিত গড়ে তোলার জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। এইউদ্ভাবনকে অগ্রাধিকার দিয়েই যে আজ ইজরায়েল উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছে, তা আমাদেরস্বীকার করতেই হবে। যেখানে উদ্ভাবন বন্ধ হয়, সেখানে জীবনের পথও থমকে দাঁড়ায়।নির্মাণ ক্ষেত্র, পরিবহণ, শক্তি, কৃষি এবং শৌচালয় ইত্যাদি অনেক ক্ষেত্রে উদ্ভাবনস্ব-উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে আমরা অনেকগুলি ‘অটল ইনকিউবেশন সেন্টার’ স্থাপন করেছি,আরও স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে। ‘স্টার্ট আপ’ শিল্পোদ্যোগগুলিকে আর্থিকসহায়তাদানের পাশাপাশি এই কেন্দ্রগুলি তাঁদের সঠিক পথ দেখানোর কাজ করবে।যুবসম্প্রদায় যাতে রোজগারের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হন, সেদিকে লক্ষ্য রেখে সরকারমুদ্রা যোজনা প্রকল্প চালু করেছে। কোনও ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ছাড়া স্ব-উদ্যোগীআবেদনকারীদের ব্যাঙ্ক ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই গত তিন বছরের৮ কোটিরও বেশি আবেদনকারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৩ লক্ষ কোটিরও বেশি টাকা ঋণ দেওয়াহয়েছে।
বন্ধুগণ,বিশ্বের অনেক দেশেই সংস্কারকে শ্রমের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। অনেক গালভরা কথা শোনাযায়। কিন্তু বর্তমান সরকার শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষিত রেখে উন্নয়ন যাত্রাকেত্বরান্বিত করতে একটি দীর্ঘস্থায়ী সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রম ক্ষেত্রে সংস্কারকরা হয়েছে। আর সেজন্য ব্যবসা বৃদ্ধির সমস্যা দূরীকরণে নিয়োগকারী, কর্মী এবংঅভিজ্ঞতাকে একক হিসাবে ধরে নিয়ে এই দীর্ঘস্থায়ী সার্বিক দৃষ্টিকোণ গড়ে তোলা হয়েছে।আগে ব্যবসায়ীদের শ্রম আইন অনুযায়ী ৫৬টি রেজিস্টার-এ শ্রম ও শ্রমিক সংক্রান্ত নানাতথ্য লিপিবদ্ধ করতে হ’ত। আমরা সংস্কারের মাধ্যমে এই জটিল প্রক্রিয়াকে সরল করতেপেরেছি। এখন ব্যবসায়ীদের শুধুমাত্র ৯টি শ্রম আইন মেনে কেবলমাত্র ৫টি রেজিস্টার-এবিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য লিপিবদ্ধ করতে হবে।
এভাবে সরকারশ্রম সুবিধা পোর্টাল গড়ে তুলেছে। এই পোর্টাল-এর মাধ্যমে কেবলমাত্র একটি রিপোর্টপাঠিয়ে ব্যবসায়ী ১৬টিরও বেশি শ্রম আইনের সঙ্গে যুক্ত প্রয়োজনীয়তা কয়েক মিনিটেরমধ্যে করে ফেলতে পারছে। সাধারণ দোকান, মুদিখানা এবং প্রতিষ্ঠানগুলি যাতে বছরে ৩৬৫দিন খোলা রাখা যায়, তা দেখতে রাজ্যগুলিকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ১৯৪৮ সালে প্রণীতফ্যাক্টরি অ্যাক্ট-এ পরিবর্তন এনে রাজ্যগুলিকেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতেমহিলাদের রাতে কাজ করার সুবিধা প্রদান করে। ভারতে মহিলাদের সক্রিয়তা উন্নয়নেতাঁদের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন যাত্রাকে শক্তিশালী করে তুলতেআমরা এই পদক্ষেপগুলি নিয়েছি।
বিশ্বেরউন্নত দেশগুলিতেও কর্মরত মহিলাদের ১২ সপ্তাহের বেশি মাতৃত্বকালীন সবেতন ছুটিরসুবিধা নেই। আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারাজেনে খুশি হবেন, ভারতের বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার মাতৃত্বকালীন সবেতন ছুটি বাড়িয়ে২৬ সপ্তাহ করে দিয়েছে। অর্থাৎ, সন্তান জন্মের আগে ও পরে তাঁরা প্রায় ৬ মাস সবেতনছুটিতে থাকবেন।
এতদিন দেশেঅনেক শ্রমিক এক কোম্পানির চাকরি ছেড়ে অন্য কোম্পানিতে যাওয়ার পর তাঁদের জমানো এবংআরও অনেক প্রাপ্য টাকা কোনও দিনই পেতেন না। কারণ, ঐ টাকা পেতে গেলে বিভিন্ন সরকারিদপ্তরে ঘুরে ঘুরে জুতোর শুকতলা খসাতে হ’ত। এভাবে দেশের রাজকোষে প্রায় ২৭ হাজারকোটি টাকা জমা হয়েছিল - গরিব শ্রমিকদের ইপিএফ ইত্যাদির টাকা। আমরা সংগঠিত ওঅসংগঠিত ক্ষেত্রের সকল শ্রমিকদের জন্য একটি করে ইউনিভার্সাল অ্যাকাউন্ট নম্বর জারিকরেছি। এবার চাকরি বদলালেও আপনার ইপিএফ-এর টাকা আর মার যাবে না। নতুন ব্যবস্থায়শ্রমিক যতই চাকরি বদলান না কেন, তাঁর ইপিএফ ইত্যাদির টাকা আর মার যাবে না। সময় মতোতিনি সুদ সহ তাঁর জমা টাকা তুলতে পারবেন।
সম্প্রতিভারতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সর্বাধিক বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। বিদেশি শিল্পপতিও ব্যবসায়ীরা ছাড়াও প্রবাসী ভারতীয়রাও ভারী মাত্রায় ভারতে বিনিয়োগ করছেন। বিশ্বেরসকল অগ্রগামী র্যাঙ্কিং এজেন্সি ও সংস্থাগুলি এই প্রবণতা দেখে অবাক। ‘মেক ইনইন্ডিয়া’ একটি এমন ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছে, যা গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। আর ‘ডিজিটাল’দুনিয়ায় ভারত এখন গোটা বিশ্বে নেতৃত্বের স্থান দখল করে নিয়েছে। ভারত এখন বিশ্বডিজিটাল বিপ্লবের হাব হয়ে উঠেছে। বন্ধুগণ, সংস্কারের মানে কেবল নতুন আইন প্রণয়নকরা নয়। দেশের উন্নয়নের পরিপন্থী আইনগুলিতে পরিবর্তন আনা আর যে আইনগুলি তামাদি হয়েগেছে, সেগুলিকে বাতিল করা। গত তিন বছরে আমরা এমন ১,২০০ পুরনো আইন বাতিল করতেপেরেছি। ৪০টি আরও আইন বাতিলের লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে চলেছি।
বন্ধুগণ,ভারতের কৃষক মাটি থেকে সোনা ফলানোর শক্তি রাখেন। ঐ কৃষকদেরই পরিশ্রমের ফলস্বরূপ এবছর ভারত ফসল উৎপাদনে সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন কৃষিনীতির পাশাপাশি এ বছরের ভাল বর্ষা এই সুফল এনেছে। বর্তমান সরকার ২০২২ সালের মধ্যেকৃষকদের রোজগার দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এ নিয়ে সুস্পষ্ট নীতিপ্রণয়নে বীজ বোনা থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত যে যে সমস্যার সম্মুখীন হতেহয়, প্রত্যেক সমস্যার সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রত্যেক ক্ষেতে সেচেরজল পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঁচাই যোজনা চালু করা হয়েছে। অনেক বছরধরে থমকে থাকা ৯৯টি বড় সেচ প্রকল্পকে বেছে নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেগুলিকেসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ মঞ্জুর করা হয়েছে। এই প্রকল্পগুলিরঅগ্রগতির তদারকি ও মূল্যায়নের জন্য আলাদা দেখভালের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক্ষেত্রেকৃত্রিম উপগ্রহ প্রযুক্তি বা মহাকাশ প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হচ্ছে। পাশাপাশি,ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। পরিণাম-স্বরূপ কৃষিযোগ্য জমিকে ক্ষুদ্র সেচের আওতায় আনারগতি প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের সকল কৃষক যাতে উন্নত মানের বীজ পান, তাঁরাযাতে নিজের ক্ষেতের মাটির স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানতে পারেন, তা সুনিশ্চিত করার কাজদ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যেই দেশের৮ কোটিরও বেশি কৃষককে মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া হয়েছে। একইভাবে ইউরিয়াকে ১০০শতাংশ নিম কোটিং করে দেওয়ায় ইউরিয়ার উপযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সকল পদক্ষেপেরপরিণামস্বরূপ উৎপাদন বেড়েছে। কৃষকদের বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে, তাঁদের ফসল বিক্রিরসমস্যা নিরসনে ইলেক্ট্রনিক ন্যাশনাল এগ্রিকালচার মার্কেট অর্থাৎ ই-নাম প্রকল্পদ্রুতগতিতে কাজ করছে। একটি জাতীয় অনলাইন বাজার নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এরমাধ্যমে প্রাথমিকভাবে দেশের ৪৫০টিরও বেশি কৃষি বাজারকে এই নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়েআসা সম্ভব হবে। কৃষকদের ঝুঁকির পরিমাণ হ্রাস করতে, সহজে ঋণ পেতে সাহায্য করতে আরবিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে কৃষকদের রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনাচালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার ‘রিস্ক অ্যামাউন্ট’ বৃদ্ধি করে‘প্রিমিয়াম’ হ্রাস করেছে। কৃষির সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকার বিশেষ নজরদিচ্ছে, যাতে কৃষকদের আয় বাড়ে।
গত মাসেসরকার দেশের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্ষেত্রকে মজবুত করার জন্য কিষাণ সম্পদা যোজনাচালু করেছে। আজও আমাদের দেশে ফসল উৎপাদনের পর মজবুত প্রক্রিয়াকরণ ও গুদামজাতকরণপরিকাঠামো এবং সরবরাহ শৃঙ্খল না থাকায় প্রতি বছর প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা লোকসানহয়। বিশেষ করে, ফল ও সব্জি জনগণের কাছে পৌঁছনোর আগেই নষ্ট হয়ে যায়। এই কিষাণসম্পদা যোজনার মাধ্যমে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে কৃষকদেরলোকসান কমিয়ে আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে সাফল্য আসবে।
প্রযুক্তিক্ষেত্রে ইজরায়েল-ভারত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারে। কৃষি ক্ষেত্রেইজরায়েলের সহযোগিতা ভারতে দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লব ত্বরান্বিত করতে সহায়ক হবে। এভাবেইপ্রতিরক্ষা ও মহাকাশ প্রযুক্তিতে দু’দেশের সম্পর্ক নিবিড় হলে উভয় দেশই লাভবান হবে।সেজন্য শতশত বছরের আত্মিক সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করে একবিংশ শতাব্দীরপ্রয়োজনগুলির কথা মাথায় রেখে আমাদেরকে একযোগে এগিয়ে যেতে হবে। বর্তমানে প্রায় ৬০০জন ভারতীয় ছাত্রছাত্রী ইজরায়েলে বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশুনা করছে। তাদের মধ্যে অনেকেইআজ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছে।
আমার নবীনবন্ধুগণ, আপনারা ভারত আর ইজরায়েলের মধ্যে প্রযুক্তি আর উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেসেতুবন্ধনের কাজ করছেন। আমার বন্ধু বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আর আমি উভয়ই ক্বেত সান-এরসঙ্গে সহমত যে, ভবিষ্যতে উভয় দেশের সম্পর্কের মূল ভিত্তি হবে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ওউদ্ভাবন। সেজন্য আজ আপনারা ইজরায়েল থেকে যা কিছু শিখছেন, তা আগামী দিনে ভারতকে আরওশক্তিশালী করে তুলতে কাজে লাগবে। কয়েক ঘন্টা আগে আমার মোশে হোসবার্গের সান্নিধ্যেঅনেক আলোচনা করার সৌভাগ্য হয়েছে। আলোচনার সময় শ্রদ্ধেয় মোশে হোসবার্গ আমাকেমুম্বাই হত্যাকান্ডের প্রসঙ্গ টেনে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা নিয়ে নানা কথা বলেছেন।স্থায়ীত্ব, শান্তি ও সদ্ভাবনা ভারতের জন্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ ইজরায়েলের জন্যওততটাই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। বন্ধুগণ, ইজরায়েলে বসবাসকারী ভারতীয়রা সেবা,শৌর্য ও সদ্ভাবনার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। এখানকার বয়স্কদের সেবায় হাজার হাজার ভারতীয় সাহসিকতারপরিচয় দিচ্ছেন। ব্যাঙ্গালোর, দার্জিলিং, অন্ধ্রপ্রদেশ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তথেকে এখানে এসে সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করে আপনারা ইজরায়েলবাসীর হৃদয় জয় করেনিয়েছেন। আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুগণ,ইজরায়েলে বসবাসকারী প্রবাসী ভারতীয়দের আমি একটি ভালো খবর শোনাতে চাই। ইজরায়েলেবসবাসকারী প্রবাসী ভারতীয়দের ওসিআই এবং পিআইও কার্ড নিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীনহতে হয়। আমরা একথা জানতে পেরে অনুভব করি যে সম্পর্ক হৃদয়ের, তা কোনও কাগজ কিংবাকার্ডের প্রতিবন্ধকতা মানবে কেন? ভারত আপনাদের ওসিআই কার্ড দিতে মানা করবে, এটাহতেই পারে না। সেজন্য আমি আপনাদের সুসংবাদ দিচ্ছি যে, ভারতীয় ইহুদি সম্প্রদায় ওসিআইকার্ড না পেলে এই কার্ডের উদ্দেশ্যই সম্পূর্ণ হবে না। সেজন্য ভাই ও বোনেরা,আপনাদের মধ্যে যাঁরা কম্পালসারি আর্মি সার্ভিস করেছেন, তাঁরাও এখন থেকে ওসিআইকার্ড পাবেন। আগে কম্পালসারি আর্মি সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত কিছু কারণে আপনারা পিআইওকার্ডকে ওসিআই কার্ডে রূপান্তরিত করতে পারছিলেন না। এই নিয়মকেও সরল করার সিদ্ধান্তনেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, উভয় দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে আরও বৃদ্ধি করতেবিগত কয়েক বছর ধরে ইজরায়েলে ইন্ডিয়ান কালচারাল সেন্টার খোলার কথা ভাবা হয়েছে। আমিআজ আপনাদের সামনে ঘোষণা করছি, ভারত সরকার অতিদ্রুত ইজরায়েলে ইন্ডিয়ান কালচারালসেন্টার খুলতে যাচ্ছে।
ভারত আপনাদেরহৃদয়ে। ইন্ডিয়ান কালচারাল সেন্টার আপনাদের সর্বদা ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্তকরে রাখবে। আজ এই উপলক্ষে, ইজরায়েলে বসবাসকারী প্রবাসী ভারতীয়দের পাশাপাশি আমিইজরায়েলি নবীন নাগরিকদেরও বিপুল সংখ্যায় ভারতে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। ভারত আরইজরায়েল শুধু ইতিহাস নয়, সংস্কৃতির মাধ্যমেও পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। উভয়েই মানবিকমূল্য এবং মানবিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। ঐতিহ্যের পুজো আর কঠিন পরিস্থিতিরমোকাবিলা করার সাহস ও শৌর্য উভয়েরই রয়েছে। ইজরায়েলের নবীন বন্ধুরা ভারতে এলে এরঅনেক প্রতীক দেখতে পাবেন। আসুন, এই আমার এই ঐতিহাসিক সফরের সাক্ষী হিসাবে এইআমন্ত্রণ গ্রহণ করে ভারত সফরে আসুন।
আমার দৃঢ়বিশ্বাস, অতিথিকে ঈশ্বর বলে মনে করে যে দেশ, সেই ভারতে বেড়াতে গেলে আপনারা অনেকসুখস্মৃতি নিয়ে ফিরবেন, যা আপনাদের আজীবনকে প্রেরণা জোগাবে। অবশেষে, আমি আরেকবারআমার বন্ধু বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সকল ইজরায়েলবাসীকে হৃদয় থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।অদূর ভবিষ্যতেই দিল্লি-মুম্বাই - তেল আভিভ বিমান পরিষেবা চালু হয়ে যাবে। আশা করি,আপনারা এই পরিষেবার সুযোগ নিয়ে আমার নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এগিয়ে আসবেন। আসুন,ভারতে আসুন, আমি আরেকবার ইজরায়েলের জনগণ, ইজরায়েল সরকার এবং আমার বন্ধুপ্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু’কে উষ্ণ স্বাগত সম্মানের জন্য হৃদয় থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
আপনাদেরসকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।