নমস্কার!
শ্রীযুক্ত নিলেশ বিক্রমসে, অধ্যক্ষ, ইনস্টিটিউট অফ্ চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট অফ্ ইন্ডিয়ার সকল পদাধিকারী, অর্থমন্ত্রী শ্রী অরুণ জেটলি মহোদয়, কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীপরিষদের আর দেশের প্রায় ২০০ স্থানে সমবেত চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ক্ষেত্রের সকল বিশিষ্টজন, সবকটি রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, আপনাদের সকলকে দিল্লীর এই বৃষ্টির দিনে উৎসাহ ও উদ্দীপনা সহ আমার নমস্কার জানাই।
আজকের এই শুভ অনুষ্ঠানে যাকে সম্মানিত করা হয় আজ এই সভাঘরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সমাজের বিপুল সংখ্যক শিল্প ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রথী মহারথী, টি.ভি. এবং রেডিওতে যাঁরা দেখছেন ও শুনছেন- সব দেশবাসী, নতুন প্রজন্মের বন্ধুগণ, ভাই ও বোনেরা, আজ ইনস্টিটিউট অফ্ চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট অফ্ ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা দিবস। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আর এটা শুভ সংযোগ যে আজ আপনাদের প্রতিষ্ঠা দিবসেই ভারতের অর্থজগতে একটি নতুন পথের সূচনা হল। আজ থেকেই ভারত জিএসটি অর্থাৎ অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা কর ব্যবস্থার সূচনা হল।
আমার জন্যে এটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে এই ঐতিহাসিক উপলক্ষে আমি আপনাদের মাঝে উপস্থিত হতে পেরেছি। এটা আমার সৌভাগ্য। নবীন বন্ধুগণ, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট জগতের সঙ্গে অনেক বছর ধরে যুক্ত থাকা মাননীয় ব্যক্তিগণ, আপনাদেরকে দেশের সংবিধান একটি পবিত্র অধিকার দিয়েছে। তা হল সকল অ্যাকাউন্টকে ঠিক কিবা ভুল শংসাপত্র দেওয়ার, অডিট করার, এই অধিকার শুধু এবং শুধু আপনাদেরই রয়েছে। চিকিৎসকরা যেমন সমাজ আর ব্যক্তির শারীরিক স্বাস্থ্যের কথা ভাবেন আপনাদের উপর তেমন সমাজের আর্থিক স্বাস্থ্যে দায়িত্ব ন্যস্ত। আর কেউ ডাক্তার না হয়ে যদি বলেন, এটা খাও, সেটা খাও...., এটা করো, সেটা করো যাতে আপনি অসুস্থ হলে তাঁর আয় বাড়ে। ডাক্তাররা জানেন যে কেউ অসুস্থ হলে তাদের রোজগার বাড়ে কিন্তু তবুও ডাক্তাররা বলেন, সুস্থ থাকার জন্য আপনাদের এটা করতে হবে।
বন্ধুগণ,
সমাজের আর্থিক ব্যবস্থা যাতে সুস্থ থাকে, তাতে কোনও ভুল না হয়, সেটা আপনারা দেখেন। আপনারা দেশের অর্থব্যবস্থার বড় স্তম্ভ আর সেজন্যে আপনাদের মাঝে আসা আমার জন্যে একটি শিক্ষা এবং দীক্ষার বড় সুযোগ। যারা পৃথিবীতে ভারতের চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট তাদের বুদ্ধি এবং অনবদ্য ফাইনান্সিয়াল দক্ষতার জন্য সমীহ করা হয়। আজ আমার সৌভাগ্য হল একটি নতুন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি কোর্স কারিকুলাম শুরু করার। আপনাদের ডাইনামিক কোর্স আর পরীক্ষার ক্রেডিবিলিটির পরিচয় এটাই। আমার আশা যে নতুন কোর্স এই পেশায় ভবিষ্যতে যাঁরা যোগ দেবেন তাদের ফাইনান্সিয়াল দক্ষতাকে আরও পোক্ত করবে। আর এখন আমাদের প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং মানবসম্পদ উন্নয়ণে যে আন্তর্জাতিক মান রয়েছে, আন্তর্জাতিক প্রয়োজন রয়েছে সেই অনুসারে আমাদের মানবসম্পদ উন্নয়ণ করার লক্ষ্যে আমাদের নিয়মিত গতিশীল ব্যবস্থাসমূহ বিকশিত করতে হবে। আমাদের কোর্সগুলিতে অ্যাকাউন্টেন্ট ফিল্ডের প্রযুক্তিগত বিষয়গুলিকে কিভাবে প্রযুক্তিতে কেমন উদ্ভাবন হবে, অ্যাকাউন্টেন্ট ফাইলড ইনোভেশন নতুন নতুন সফটওয়্যার তৈরির জন্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বড় বাজার আপনাদের অপেক্ষায় রয়েছে।
বন্ধুগণ, আমাদের শাস্ত্রে চার প্রকার পুরুষার্থের কথা বলা হয়েছে। আমাদের শাস্ত্রে চার পুরুষার্থের চর্চা রয়েছে। ধর্ম, অর্থ, কাম, মোহ আপনারা কখনও ভেবেছেন, যেভাবে আমরা মুণি ঋষিদের ধর্মমোক্ষ নিয়ে আলোচনা করেন। তারই সমকক্ষ অর্থজগতের বিচার বিশ্লেষণ আপনাদের হাতে রয়েছে। তারই সমতূল। আর সেজন্যে, আমি যদি আপনাদের অর্থজগতের ঋষিমুণি বলে আখ্যা দিই- সেটা ভুল হবে না। যদটা গুরুত্ব সেই ঋষিমুণিদের রয়েছে যারা যোক্ষের পথ দেখান, ততটাই গুরুত্ব মানুষের জীবনে অর্থব্যবস্থার আপনারা পথ দেখান। অর্থের সঠিক আচরণ কী হবে, কোন্ পথটি সঠিক। এই পথ দেখানোর দায়িত্ব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ফিল্ডের প্রত্যেক ছোটখাট ব্যক্তিরও রয়েছে।
আমার প্রিয় সাথীরা, যে ভালবাসায় আপনারা আমাকে আপ্লুত করছেন, সেভাবে আপনারা আমার প্রত্যয় বৃদ্ধি করছেন আর আপনাদের এই ভালবাসাই আজ আমাকে মন খুলে কিছু কথা বলার প্রেরণা জোগাচ্ছে। আমার আর আপনাদের দেশভক্তিতে কোনও ফাঁক নেই। আমি যতটা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই তত আপনারাও এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু কিছু সত্য আছে যা কখনও কখনও ভেবে দেখতে বাধ্য করে। আপনাদের মধ্যে যারা পুরনো এবং অভিজ্ঞ তাঁরা শুনেছেন, কারও বাড়িতে আগুন লেগে গেলে, তাঁর সমস্ত সম্পত্তি পুড়ে গেলে, কথিত আছে সেই পরিবার নিজের ক্ষমতাতেই অত্যন্ত দ্রুত আবার বাড়ি বানায়। কষ্ট হয় কখনও কখনও কিন্তু তাঁরা আবার বসে বসে নিজের রোজগারের ব্যবস্থা করে নেয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসে। কিন্তু আমাদের বয়োবৃদ্ধরা বলেন, আগুন লাগার পর আবার বাড়ি বানানোর কাজ তো করে নেওয়া যায়। কিন্তু পরিবারের একজন সদস্যের যদি চুরি করার অভ্যাস থাকে, তাহলে সেই পরিবার তখনও আর উঠে দাঁড়াতে পারে না। ভাই ও বোনেরা, পরিবারের সবাই চুরি করে না। কিন্তু পরিবারের দু’একজন সদস্য যদি নিয়ম ভেঙ্গে অনিয়ম করে তাহলে পরিবারের সর্বনাশ হয়।
যারা হিসেবের খাতা শুধরানোর কাজে সিদ্ধহস্ত আমার সাথীরা, এভাবে যে কোনও দেশ বড় বড় সঙ্কটকালেও নিজেদের তুলে ধরতে পারে। বন্যা, ভূমিকম্প, যে কোনও সঙ্কটে দেশের জনতা জনার্দনের সামর্থ্য থাকে, শাসন ব্যবস্থা ও জনগণ মিলেমিশে সঙ্কট থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে। কিন্তু সেই দেশে কিছু মানুষের যদি চুরি করার অভ্যেস গড়ে ওঠে, তাহলে সেই উঠে না দাঁড়াতে পারা পরিবারগুলির মতো দেশ এবং সমাজ ও উঠে দাঁড়াতে পারে না। সকল স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায়, উন্নয়ণ স্তব্ধ হয়। সামান্য কয়েকজন থাকেন, যারা এই উন্নয়ণকে প্রতিহত করার কাজ করেন। এধরণের মানুষদের বিরুদ্ধে সরকার বিগত তিন বছর ধরে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। নতুন আইন প্রণয়ণ করা হয়েছে পুরনো আইনগুলিকে আরও কঠোর করা হয়েছে। অনেক দেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। পুরনো চুক্তিগুলিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিদেশে কালোটাকার লেনদেনের বিরুদ্ধে আমাদের পদক্ষেপ কতটা কার্যকরী হয়েছে তার সাক্ষী স্যুইস ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান থেকে পাওয়া যাচ্ছে।
স্যুইস ব্যাঙ্ক বলেছে যে ভারতীয়দের দ্বারা জমা ধনরাশি সর্বকালের সর্বনিম্ন মাত্রা ছুঁয়েছে। ত্রিশ বছর আগে ১৯৮৭ সালে স্যুইস ব্যাঙ্কগুলি বলা শুরু করেছে কোন্ দেশের কত নাগরিক তাদের কাছে টাকা জমা রাখছে। গতবছরের যে রিপোর্ট এসেছে সেই অনুযায়ী ভারতীয়দের যে টাকা তাদের কাছে জমা রয়েছে, তার মধ্যে নতুন নয় পুরনো গ্রাহকদের জমা টাকা ৪৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০১৪-য় যেদিন আপনারা আমার কাঁধে দায়িত্ব দিয়েছেন, সেই দিন থেকে, ২০১৪ থেকেই এই হ্রাস পাওয়া শুরু হয়েছে। হ্রাস প্রক্রিয়া আরও গতি পেয়েছে আর আপনারা শুনে দুঃখ পাবেন, আশ্চর্যও হবেন যে ২০১৩-য় স্যুইস ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান অনুসারে ৪২% বৃদ্ধি ছিল। ৪২% বৃদ্ধি ছিল। আর ভাই ও বোনেরা, আজ থেকে দু’বছর পর যখন সুইটজারল্যাণ্ড থেকে রিয়েল টাইম ডাকা পাওয়া যাবে তখন বিদেশে কালোটাকা জমা রাখা মানুষেরা আরও সমস্যায় পড়বেন। আপনার কারও এই দুর্দশা হবে না বলে আমার বিশ্বাস, কিন্তু আপনাদের প্রতি আমার ভালবাসা রয়েছে। তাই বলছি, তাদের কানে কানে বলে দিন।
বন্ধুগণ, আমি দেশে একদিকে ‘স্বচ্ছতা অভিযান’ পরিচালনা করছি আর অন্যদিকে অর্থব্যবস্থায় সাফাই অভিযান পরিচালনা করছি। এই দেশে ৮ই নভেম্বরের কথা আপনাদের সবচাইতে বেশি মনে আছে। বিমুদ্রাকরণের সিদ্ধান্ত ও কালোটাকা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি অনেক বড় পদক্ষেপ ছিল। আর আমি শুনেছি... সত্য কি মিথ্যা তা আপনারা জানেন। আমি শুনেছি যে ৮ই নভেম্বরের পর থেকে আপনাদের কাজ অনেক বেড়ে গেছে। এত কাজ করতে হচ্ছে যতটা করার সুযোগ আপনাদের কর্মজীবনে পাননি। আমি এটাও শুনেছি অনেক চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট দীপাবলীর ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন। হোটেল বুক করা ছিল, টাকা অগ্রিম দেওয়া ছিল, কিন্তু সবকিছু বাতিল করে ফিরে এসেছেন। শুনেছি কিছু চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট এর অফিস সারারাত ধরে খোলা ছিল। এখন আমি জানিনা যে আপনারা ফিরে এসে কী কাজ করেছেন। ঠিক করেছেন কি ভুল করেছেন। দেশের স্বার্থে করেছেন নাকি মক্কেলের স্বার্থে করেছেন। কিন্তু অবশ্যই করেছেন।
বন্দুগণ, কালোটাকার বিরুদ্ধে এই সাফাই অভিযান শুরু করার পর প্রথমবার কিছু কথা আজ আপনাদের কাছে মন খুলে বলছি। কারণ আপনারাই এই কথাগুলির মর্ম ভালভাবে বুঝবেন। ব্যাঙ্কগুলিতে যত টাকা জমা পড়েছে, সরকার সেগুলির ডাটা মাইনিং এর জন্য একটি বড় ব্যবস্থা চালু করেছে। লাগাতার ডাটা মাইনিং চালু রয়েছে। কোথা থেকে টাকা এসেছে, কোথায় জমা হয়েছে, অনেক কিছু বেরিয়ে আসছে। এই যে ডাটা মাইনিং চলছে, এখনও আমরা কাউকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করিনি। শুধুই পরিসংখ্যানের বিশ্লেষণ চলছে। আমার প্রিয় বন্ধুগণ, আমি আগেই বলেছি, আপনাদের দেশভক্তি আমার দেশভক্তি থেকে কোনও অংশে কম নয়। কিন্তু দেখুন, তিন লক্ষেরও বেশি...আমি আজ প্রথমবার এসব নিয়ে কথা বলছি। দেশ এই কথা শুনে চমকে উঠবে। তিন লক্ষেরও বেশি কোম্পানি, রেজিস্টার্ড কোম্পানি আমরা চিহ্নিত করেছি যাদের সমস্ত লেনদেন সন্দেহের উদ্রেক করেছে। তাদের নামের পাশে প্রশ্ন চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। আর এই যতটা মাইনিং হয়েছে তার মধ্যে অনেক মাইনিং বাকি রয়েছে। এই তিন লক্ষ বেড়ে কোথায় দাঁড়াবে আমি বলতে পারবো না। আর যখন তাদের যাচাই করে দেখা শুরু হয়েছে তখন কিছু বিষয় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। একটি পরিসংখ্যান আমি বলছি, হয়তো এর মাধ্যমে আপনারা বুঝতে পারবেন এই সরকার কী, রাজনৈতিক নেতাদের হিম্মত কতটা। একদিকে গোটা সরকার, সম্পূর্ণ সংবাদমাধ্যম, ব্যবাসায়ী সমাজের প্রত্যেকের নজর গত ত্রিশ তারিখ রাত বারোটায় কী ঘোষণা হবে তার উপর নিবদ্ধ ছিল। ১লা জুলাই কী হবে তার উপর ছিল। ৪৮ ঘন্টা আগে এক লক্ষ কোম্পানিকে কলমের এক ঝটকায় হতাহত করা হয়েছে। রেজিস্টার অফ্ কোম্পানিজ তাদের নাম কেটে দিয়েছে। এটা মামুলি সিদ্ধান্ত ছিল না বন্ধুগণ, রাজনীতির অঙ্ক কষা মানুষেরা এধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। রাষ্ট্রহিতের কথা ভেবে যাঁরা বাঁচে তাঁদেরই এমন সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা দেশভক্তির প্রেরণা থেকেই গড়ে ওঠা সম্ভব। যাঁরা দরিদ্রদের লুন্ঠন করেছেন তাদের গরিবদের ফেরৎ দিতেই হবে।
তাছাড়া ৩৭,০০০ থেকেও বেশি, ৩৮ হাজার থেকেও বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানিকে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে। কালোটাকা লুকিয়ে রাখা, হাওয়ালা করা- না জানি আরও কত অভিযোগ, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আইন ভঙ্গকারী কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে আগামীদিনে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর আমি জানি, কালোটাকার বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ, ভুয়ো কোম্পানিগুলিকে বেআইনি ঘোষণার মধ্যে কোন্ রাজনৈতিক দলের কতটা ক্ষতি হতে পারে সে সম্পর্কে আমি অবহিত। কিন্তু কাউকে না কাউকে তো দেশের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নিতেই হতো!
চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টসদের জগত থেকে সমাগত আমার বন্ধুগণ, আজ আপনাদের মধ্যে এসেছি, প্রতিষ্ঠা দিবসে এসেছি। আমি আপনাদের অনুরোধ জানাই। হিসেবের খাতাকে শুধরানোর ক্ষমতা যাঁদের হাতে রয়েছে, বিমুদ্রাকরণের পর কেউ না কেউতো নিশ্চয়ই এই দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলিকে সাহায্য করেছেন। এই চোর লুটেরা কোম্পানিগুলি নিশ্চয়ই কোনও না কোনও আর্থিক ডাক্তারের কাছে গিয়েছে। আমি ভালভাবে জানি, আপনাদের মধ্যে কারও কাছে হয়তো যায়নি। কিন্তু কোথাও তো গেছে, যাদের কাছে গেছে তাদেরকেও চিনে নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে। আর যারা এধরণের মানুষদের হাত ধরেছেন, যারা এদের সহায়তা করেছেন, যাঁরা এধরণের মানুষদের পথ দেখিয়েছেন, আপনাদের মধ্যে তাঁরা যদি থাকেন তাহলে তাদের চিনে নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে কি না? বন্ধুগণ, আমাকে বলা হয়েছে যে আমাদের দেশে দুই লক্ষ বাহাত্তর হাজারেরও বেশি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট রয়েছেন। তাদের সঙ্গে আর্টিকলড অ্যাসিস্টেন্টও রয়েছেন, তাদের সংখ্যাও দুই লক্ষের কাছাকাছি আর আমরা যদি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সস, আর্টিকলড অ্যাসিস্টেন্টস্ ও কর্মচারী সবাইকে জুড়ে দিই, তাহলে আমার মোটা দাগে অনুমান, সংখ্যাটা আট লক্ষের বেশি হবে। আমাদের পরিবার এই জগতের ৮ লক্ষ পরিবারের চেয়েও অনেক বড়। সেটাও কেবল আমাদের পেশায়। আমি আপনাদের সামনে আরও কিছু তথ্য দিচ্ছি, কারণ আপনারা এই সব তথ্যের অর্থ দ্রুত বুঝতে পারেন, বোঝাতেও পারেন।
আমাদের দেশে আনুমানিক দুই কোটির বেশি ইঞ্জিনিয়ার আর ম্যানেজমেন্ট গ্রাজুয়েট আছে। ৮ লক্ষের থেকে বেশি ডাক্তার আছেন। অর্থাৎ, যেগুলিকে ক্রিম প্রফেশন বলে দেখা হয়, খুব সম্মান দেওয়া হয়। এমন মানুষের সংখ্যাই আমাদের দেশে কোটি কোটি। যদি দেশের সবকটি বড় বড় শহরের বিশাল বিশাল অট্টালিকাগুলির সংখ্যা যোগ করা যায়, তাও কয়েক কোটিতে হবে। কেবল এটাই নয়, একটি তথ্য বলছে, প্রতিবার বিদেশে বেড়াতে যাওয়া লোকেদের তথ্য বলছে, দু কোটি ১৮ লক্ষ মানুষ বিদেশে বেড়াতে গিয়েছিল। এইসব হল তথ্য। তারপরেও কি এমন কারণ আছে যে স্রেফ ৩২ লক্ষ মানুষ বলবেন যে, তাদের করের হিসাবে তাদের রোজগার ১০ লক্ষের থেকে বেশি বলা হয়েছে। আপনাদের মধ্যে কেউ এটা বিশ্বাস করবেন কি না! করবেন? হিসাবের খাতা যারা শোধরান, আমি তাদের কাছে জানতে চাইছি। এটা কি সত্যি যে, দেশে মাত্র ৩২ লক্ষ মানুষ আছেন, যাদের রোজগার ১০ লক্ষের চেয়ে বেশি?
আমার প্রিয় বন্ধুরা, দেশের তেতো সত্যি হল এটাই। এই সংখ্যা অর্থাৎ, দেশের মাত্র ৩২ লক্ষ মানুষ বলেন যে তাদের আয় দশ লক্ষের বেশি। আমি নিজে যেটা বুঝতে পারি যে, এদের মধ্যে বেশির ভাগ হল বেতন-ভিত্তিক, তাদের নির্দিষ্ট আয় যারা মাসিক বেতন তোলেন, সরকারি বেতন নেন। এছাড়া দেশের অবস্থা কি। সেই কারণে, ভাইবোনেরা, আমি আর তথ্যের কচকচিতে যেতে যাই না। কিন্তু এ থেকেই আপনি বুঝতে পারবেন যে, দেশে প্রতি বছর কোটি কোটি গাড়ি কেনা হয়। তারপরেও যদি দেশের কোষাগারে নিজের দায়িত্বটুকু পালন না করা হয়, সেটা খুবই চিন্তার বিষয়।
আমি আরও তথ্যের বদলে নিজের কথা আপনাদের বলতে চাই। আমাদের সিএ ভাইয়েরা... কোনও ব্যক্তি বা তার ক্লায়েন্টস তখনই ট্যাক্স দেন, যখন তার চারপাশের পরিবেশ সদর্থক থাকে, তাকে সততার সাথে ট্যাক্স দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করে। তিনি যদি দেশেন যে, তার পরামর্শদাতা সত্য গোপন করার জন্য বলছে, তখন ভুল রাস্তায় চলতে গিয়ে সে ভয় পাবে না। তাই ভুল পরামর্শ দেন যারা, তাদের চেনা আর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও খুব জরুরি। আর সেইজন্য আপনাদেরও কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি এমন একটা ব্যবস্থা, যাতে মানব সম্পদ উন্নয়নের কাজও আপনারাই করেন, কারিকুলাম আপনারাই বানান, পরীক্ষা আপনারাই নেন, নিয়মনীতিও আপনারাই বানান আর অপরাধীদের সাজাও আপনাদেরই প্রতিষ্ঠান দেয়। এখন একটা প্রশ্ন উঠছে যে, ভারতের গণতন্ত্রের মন্দিরের ১২৫ কোটি দেশবাসীর সংসদ আপনাদের এতটা অধিকার দিয়েছে। তা সত্ত্বেও গত ১১ বছরে কেবলমাত্র ২৫ জন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস্ এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মাত্র ২৫ জনই গড়বড় করেছিল? আর, আমি শুনেছি, আপনাদের কাছে ১,৪০০ অভিযোগ অনেক বছর ধরে ঝুলে আছে।এক একটা মামলার সমাধান হতে বছরের পর বছর লেগে যাচ্ছে। সাথীরা, আপনারাই, যখন দেশের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন চলছিল, আজাদির আন্দোলন, দেশের অনেক নবযুবক ফাঁসির দড়ি গলায় পড়েছিলেন। দেশের অনেক মহাপুরুষ নিজেদের যৌবন জেলেই কাটিয়ে দিয়েছেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য। আর সেই সময় অনেক পেশাদাররা এগিয়ে এসে দেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে যোগ দেন। তারা ওকালতি করতেন, ব্যারিস্টার ছিলেন, বিরাট সংখ্যায় তারা স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারা আইন জানতেন, আইনের বিরুদ্ধে, আইন পেশার লোক হয়ে আইনের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য কি সাজা হতে পারে, তাদের জানা ছিল। তৎসত্ত্বেও সেই জমানায় যাদের আইন পেশা খুব ভাল চলতো, তারাও দলে দলে আদালত ছেড়ে দেশের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। কেবল মহাত্মা গান্ধী, সরদার প্যাটেল, ডাক্তার আম্বেদকর, জওহরলাল নেহরুই নয়, ডাক্তার রাজেন্দ্রপ্রসাদ, পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য, বালগঙ্গাধর তিলক, মোতিলাল নেহরু, সি রাজাগোপালাচারিয়া, মহেশচন্দ্র চৌধুরী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, সৈফুদ্দিন কিচলু, ভুলাভাই দেশাই, লালা লাজপত রায়, তেজবাহাদুর সপ্রু, আসফ আলি, গোবিন্দবল্লভ পন্থ, কৈলাশনাথ কাটজু --- গত কত নাম যারা দেশের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন – যারা ওকালতির পেশায় ছিলেন। দেশভক্তির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য তাদের গোটা জীবন ব্যয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন নেতা, যারা দেশের সংবিধান রচনায় খুবই নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছেন। আর ভাই ও বোনেরা, আমরা যেন ভুলে না যাই যে, এই মহাপুরুষদের বাদ দিলে দেশের ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
বন্ধুরা, আজ আমাদের দেশ, আজ আমাদের দেশ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। ১৯৪৭-এ স্বাধীনতার পরে, দেশের রাজনৈতিক একত্রীকরণের পর আজ দেশ আর্থিক দিক থেকে ঐক্যের পথে এক নতুন যাত্রার সূচনা করছে। এই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টদেরই। আপনারা আমার ভাবনাটাকে বুঝুন। স্বাধীনতার আন্দোলনে ওকালতি জগতের মানুষেরা, আইনপেশার লোকেরা ভারতের স্বাধীনতার অধিকারের জন্য নিজেদের প্রাণের বাজি ধরেছিলেন। সেদিনের মত আপনাদের প্রাণ বাজি রাখার কথা বলছি না। আপনাদের কারাগারের অন্তরালে যাওয়ারও দরকার নেই। এই দেশ আপনার। দেশের অনাগত ভবিষ্যত আপনাদের সন্তানেরও। আর তাই, এই নতুন যাত্রার নেতৃত্ব, সেদিন আজাদীর লড়াইয়ের নেতৃত্ব যেমন আইনজীবীরা করেছিলেন, আজ আর্থিক বিকাশের নেতৃত্ব আমার চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ফৌজকে করতে হবে। আর আপনারা দেখুন, আপনাদের থেকে ভাল আর্থিক ক্ষেত্রে উচ্চতায় পৌছানোর মজবুত রাস্তা আর কেউ দেখাতে পারবে না। কালো টাকা শেষ করার জন্য, দুর্নীতি শেষ করার জন্য মক্কেলদের ক্লায়েন্টসদের আমি আবারও বলছি। আপনাদের ক্লায়েন্টসকে সততার রাস্তায় নিয়ে চলার জন্য আপনাদেরই এগিয়ে এসে দায়িত্ব নিতে হবে।
সাথীরা, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টসরা দেশের ইকনমি সিস্টেম-এর ভরসাদায়ক দূত। আপনারা সরকার এবং করদাতা নাগরিক ও কোম্পানিগুলির সঙ্গে ইন্টারফেস-এর কাজ করে থাকেন। আপনাদের স্বাক্ষর-এর শক্তি... দেশের প্রধানমন্ত্রীরও সেই শক্তি নেই, যে শক্তি একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট-এর স্বাক্ষর-এ থাকে। কোম্পানি বড় হোক বা ছোট, আপনারা যাদের অ্যাকাউন্টের উপর স্বাক্ষর করে দেন, সরকারও তাকে বিশ্বাস করে, দেশের মানুষও তাকে বিশ্বাস করে। আপনারা কখনও ভেবেছেন, কতগুলি ব্যালান্স শিটের সাথে আপনাদের স্বাক্ষর যুক্ত হয়ে গিয়েছে। এই অ্যাকাউন্টে, ওই কোম্পানির ব্যালান্স শিট দেখে ফাইল কোথাও আটকায় না বন্ধুরা। ওই স্বাক্ষর-এর পর এক নতুন জীবন শুরু হয়ে যায়, বন্ধু। আমি সেই নতুন জীবনকেই আপনাদের দেখানোর জন্য এসেছি। আপনি সেই কোম্পানির হিসাব খাতায় স্বাক্ষর করে দিয়েছেন আর ব্যালান্স শিটে সই করে দিয়েছেন দেখলে সরকারি অফিসারও সেটা মেনে নেয়। কোম্পানি ফুলে ফলে বাড়ে, সামনে এগিয়ে যায় আর আপনিও ফুলে ফলে বাড়তে থাকেন। বিষয়টি এখানেই শেষ হয় না বন্ধু। যখন আপনারা ওই কোম্পানির হিসাবখাতায় সই করে দেন আর সেই কোম্পানির হিসাবের তথ্য মানুষের সামনে আসে, তখন বেশ কিছু প্রবীণ মানুষ তাদের পেনসনের পয়সা মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করেন। কোনও গরিব বিধবা তার সারা মাসে জমানো টাকা শেয়ার বাজারে লাগিয়ে দেন। যখন কোনও কোম্পানি সঠিক হিসাব দেয় না, বাস্তব তথ্যকে গোপন করে, আর তারপরে যখন সত্যটা সামনে চলে আসে তখন কেবল সেই কোম্পানিই ডুবে যায় না, সেই বিধবার জীবনটাও ডুবে যায়। ওইসব প্রবীণ মানুষের জীবন বরবাদ হয়ে যায়। তাঁরা তো সারা জীবনের সঞ্চয় আপনার একটি সইয়ের উপর ভরসা করে লগ্নি করেছিলেন। সেইজন্য আপনাদের কাছে আমার এই আবেদন। আপনাদের সকলের প্রতি আমার বক্তব্য, দেশের সোয়াশো কোটি দেশবাসী আপনাদের স্বাক্ষরের উপর ভরসা করেন। সেই ভরসা কখনও নষ্ট হতে দেবেন না। তাতে যেন একটি আঁচড়ও না লাগে। যদি কখনও আপনি আপনার মনের মন্দিরে অনুভব করেন যে, সেই ভরসার জায়গায় ফাটল ধরেছে, তাহলে তাকে মেরামতের জন্য তৎপর হোন।
তাকে নতুন করে তৈরি করতে এগিয়ে আসুন। চেষ্টা করুন, ২০১৭ সালের পয়লা জুলাই তারিখে আপনাদের প্রতিষ্ঠা দিবস আপনাদের জন্য এক নতুন সুযোগ নিয়ে এসেছে। আমি আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। সততার উৎসবে শরিক হওয়ার জন্য আমি আপনাদের নিমন্ত্রণ জানাতে এসেছি। আপনাদের কাজের গুরুত্ব বুঝুন, আর হিসাবের রাস্তা নির্ধারণ করে দেখুন। সমাজ আপনাদের কত গর্বের দৃষ্টিতে দেখবে। আপনারা নিজেই সেটা অনুভব করবেন।
সাথীরা, ট্যাক্স ‘রিটার্ন’ শব্দের আলাদা আলাদা পরিভাষা আছে। কিন্তু আমার মনে ভাবনা হয় যে, যে ট্যাক্স দেশের উন্নয়নে লাগার কথা, সেটা কাজে লাগছে কি না। সেটাই আমার কাছে ট্যাক্স রিটার্ন। মূল্যবৃদ্ধি রুখতে সেটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর দ্বারা এমন কোনও একজন মহিলা গ্যাস কানেকশন পেতে পারেন, যিনি সারা জীবন কাঠের আগুনে খাবার রান্না করেছেন। এই পয়সা থেকে কোনও এক বৃদ্ধ পেনসন পাবেন, যার ছেলেরা তার খরচ বহন করতে অস্বীকার করেছে। এই অর্থ থেকে নবযুবকের রোজগারের ব্যবস্থা হয়, যিনি সারা দিন এইজন্য হাড়ভাঙ্গা খাটেন যাতে সন্ধ্যারাতে ঘরে ফিরে পড়াশোনা সমাপ্ত করতে পারেন। এই পয়সায় কোনও অসুস্থ গরিব সস্তায় ওষুধ পাবেন, যাঁর কাছে ওষুধ কেনার পয়সা নেই। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেও ছুটি নিতে পারেন না। অসুস্থতা নিয়েই সারা দিন কাজ করে যান, যাতে সন্ধ্যায় তাঁর বাচ্চাদের খালি পেটে ঘুমোতে না হয়।
করের মাধ্যমে সংগৃহীত টাকা বাহাদুর সৈনিকদের কাজে লাগে। যাঁরা সীমান্তে নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে আমাদের সবাইকে রক্ষা করেন। এই টাকা সেই বাড়িগুলিতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজে লাগে যেগুলিতে দেশ স্বাধীন হওয়ার ৭০ বছর পরও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। তাঁরা অন্ধকারে ডুবে আছেন। দেশের গরিবদের প্রাপ্য অধিকার পেতে সাহায্য করার চাইতে বড় দেশসেবা আর কী হতে পারে। আপনাদের একটি ‘সই’ দেশের গরিবদের কত না কাজে লাগতে পারে। আপনারা হয়তো তা কল্পনাও করতে পারছেন না। দেশের সাধারণ মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে আপনারাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। আপনারা যখন দৃঢ়সংকল্প হয়ে পড়বেন, আমার অন্তর বলছে, ১লা জুলাই ২০১৭ আইসিএআই-এর যাত্রাপথে একটি টার্নিং পয়েন্ট হয়ে উঠবে।
বন্ধুগণ, আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনারা রুখে দাঁড়ালে এদেশে কেউ আর কর ফাঁকি দেওয়ার সাহস পাবে না। মানুষ তখনই অপরাধ করে, যখন সে জানে যে তাকে বাঁচানোর কেউ রয়েছে। বন্ধুগণ, জিএসটি আপনাদের সামনে রাষ্ট্র নির্মাণে সহযোগিতার একটি মাধ্যমরূপে উপস্থিত হয়েছে। আপনাদের কাছে যারা পৌঁছুবেন তাদের বোঝান! এখানে আসার সময় নীলেশজি আমাকে বলছিলেন, ‘ব্যবসায়ীদের যাতে সাহায্য হয়, তাঁরা যাতে ভালভাবে ব্যবস্থাটি বুঝতে পারেন, সেক্ষেত্রে আমরা সাহায্য করতে পারে!’ আমি তাদের শুভেচ্ছা জানাই, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই যাঁরা এমনটি ভেবেছেন! আপনারা মানুষের কাছে পৌঁছোন, তাদের সচেতন করুন। তাদের সততার মূখ্যধারায় আসতে প্রেরণা জোগান। এভাবেই চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট-এর জগতের মানুষদের জন্য সরকার একটি নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে। এখন থেকে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করার জন্য এই পেশার নবীন প্রজন্মের মানুষদের আহ্বান জানাই।
আসুন, সরকার বিগত দিনে যে আইন পাশ করেছে- ‘ইনসলভেন্সি অ্যাণ্ড ব্যাঙ্করাপ্টসি কোড’। একে বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট জগতের মানুষদের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। এই কোড অনুযায়ী যখনই কোনও কোম্পানি দেউলিয়া ঘোষিত হবে, আর নিয়ন্ত্রণ ইনসলভেন্সি প্র্যাকটিশনার রূপে এই একটি নতুন ক্ষেত্রে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারবেন। এটি একটি রোজগারের নতুন পথ যা সরকার আপনাদের সামনে খুলে দিয়েছে। কিন্তু আজকের পর থেকে আপনারা যে পথই বেছে নিন না কেন সিএ-র মানে হওয়া উচিত ‘চার্টার’ আর ‘অ্যাক্যুরেসি’।
বন্ধুগণ ২০২২ সালে আমাদের দেশ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি এগিয়ে চলেছে ওই বছর পালনের জন্য দেশবাসী এখন থেকেই কিছু সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে নতুন ভারত আমাদের সকলের পরিশ্রমের ফল হিসেবে গড়ে উঠবে। আপনারা একটি সামগ্রিকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানরূপে আর ব্যক্তিগতভাবে একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট রূপে এবং একজন দেশের সফল নাগরিক হিসেবে সংকল্প গ্রহণ করুন ২০০২ সালে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির ঠিক দু’বছর পর ১লা জুলাই-এ আপনাদের ইনস্টিটিউটের ৭৫ বছর পূর্তি উৎসব হবে। আপনারা এখন থেকেই ৭৫ তম বর্ষপূর্তির জন্য পরিকল্পনা করুন। আর এই প্রতিষ্ঠানকে, তার চরিত্র ও খ্যাতিকে কোন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান সেই মানচিত্র তৈরি করে ফেলুন। আর ঠিক করুন, দেশকে কী দেবেন! দেশে আশা আকাঙ্খা নিয়ে অপেক্ষমান নবীন প্রজন্মের ভবিষ্যতের জন্য কী করবেন! আপনারা কি দেশকে একটি স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত অর্থব্যবস্থা গড়ে তোলার মহাযজ্ঞে সাহায্য করতে পারবেন? আপনারা কতজনকে কর দেওয়া থেকে রেহাই দিতে পারলেন, সেটাই আপনাদের জীবনের লক্ষ্য হবে, নাকি আপনারা দেশের সৎনাগরিকরা যাতে যথাযথ কর দিয়ে সততার জীবনকে বেছে নেন সেক্ষেত্রে তাদের প্রেরণা জোগাবেন? এই সিদ্ধান্ত আপনাদেরই নিতে হবে! আপনারা নিজেদের জন্য লক্ষ্য স্থির করুন যে কত মানুষকে সততার সঙ্গে কর জমা দিতে সাহায্য করে মূলধারায় নিয়ে আসবেন! এই লক্ষ্যমাত্রা কী হবে সেই পরিসংখ্যান আপনাদের থেকে ভাল আর কে ঠিক করতে পারে। একথা ভাবুন যে আপনারা কিভাবে আপনাদের পেশায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াবেন। ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট-এর ফিল্ডে ফরেন্সিক সায়েন্সের কত বড় ভূমিকা হতে পারে। এসব মূল্য সংযোজন কিভাবে করবেন, যাতে এগুলির সঙ্গে যুক্ত হয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেন। এটা ঠিক করতে হবে।
বন্ধুগণ, আপনাদের কাছে আমার একটি দাবি আছে, কারণ আমার দৃঢ় বিশ্বাস সেই শক্তি ও সামর্থ্য আপনাদের রয়েছে। তাহলে আপনারা পিছিয়ে থাকবেন কেন, বন্ধুগণ, বিশ্বে চারটি এমন সংস্থা রয়েছে যেগুলি অত্যন্ত প্রতিষ্ঠিত। তাদেরকেই বড় বড় কোম্পানি আর প্রতিষ্ঠান অডিটের দায়িত্ব প্রদান করে। এই কোম্পানিগুলিকে বলা হয়- বিগ ফোর! এই বিগ ফোর-এ আমরা কোথাও সেই। আপনারা কি ২০২২-এ দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির আগে দেশে এমন একটি বড় সংস্থা গড়ে তুলতে পারেন যা ওই বিগ ফোরকে টেক্কা দিয়ে ‘বিগ ওয়ান’ হয়ে উঠবে, আর সারা পৃথিবীতে আপনাদের দক্ষতার চর্চা আপামর ভারতবাসীকে গর্বিত করবে! বন্ধুগণ, এই স্বপ্ন আমাদের সকলের স্বপ্ন হয়ে উঠুক।
অবশেষে আমি আপনাদের আপনাদের ক্ষেত্রের সবচাইতে প্রাচীন আর সর্বাপেক্ষা সম্মানিত অর্থনীতিবিদ চাণক্যর একটি পরামর্শ স্মরণ করাতে চাই। ‘চাণক্য নে কহা কথা হ্যায় কালাতি ক্রমাৎ কাল এব ফলম পিবতি...’ অর্থাৎ কর্তব্যের সময় পেরিয়ে গেলে সময়েই তার সাফল্যকে শেষ করে দেয়। আর সেজন্যে সময়ের এই সুযোগকে হাতছাড়া করবেন না। একটু আগেই অরুণজী আপনাদের সঙ্গে কথা বলার সময় বলছিলেন, ভারত তথা বিশ্বে এমন সুযোগ আগে আর আসেনি। আপনাদের জীবনে এমন সুযোগ আগে কখনও আসেনি। এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না! আমি আপনাদের রাষ্ট্রনির্মাণের মূলধারার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাই। আপনারা ভুলবেন না যে জীবনে এমন পেশা বেছে নিয়েছেন যে পেশা দেশের গোটা অর্থব্যবস্থাকে বাঁচিয়ে রাখার সামর্থ্য রাখে। আমি আরেকবার এই মহান প্রতিষ্ঠান, তার শিক্ষককুল এবং উপস্থিত চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টদের আইসিএআই-এর প্রতিষ্ঠা দিবসে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আর সারাদেশে এই অনুষ্ঠানকে ভিডিও মাধ্যমে যারা দেখছেন, দেশের নানা প্রান্তে বসে, বিশ্বের নানা প্রান্তে বসে আমাদের যে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টেরা এই অনুষ্ঠান দেখছেন- সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। ১লা জুলাই ২০১৭ আমাদের প্রত্যেকের জীবনে নতুন উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে নতুন গতি এনে দিক। আসুন আমরা সাধারণ মানুষের এই সততার উৎসবে সামিল হই। এই প্রত্যাশা নিয়ে আপনাদের অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ বন্ধুগণ। অনেক অনেক ধন্যবাদ।