আমার প্রিয় দেশবাসী, দেশের মধ্যবিত্তরাদ্রুত নতুন অভিব্যক্তি, নতুন স্বপ্ন, নতুন সঙ্কল্প নিয়ে কিছু করার সাহস অনুভবকরছেন। মধ্যবিত্ত এমন একটি শ্রেণী যাঁরা সুযোগ পেলে উন্নয়নকে কল্পনাতীত সাফল্য এনেদিতে পারেন।
বিশেষ করে, নবীন প্রজন্ম, প্রথমপ্রজন্মের শিক্ষিতদের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা সবচাইতে বেশি। এই যুবক-যুবতীরা সুযোগপেলে দেশের ভাগ্যও বদলে দেবেন। গোটা বিশ্বে এখন বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে উন্নতির নিরিখেসর্বাধিক সম্ভাবনাময় দেশ হল ভারত। আগে আমরা ভাবতাম, বিমানযাত্রা তোরাজা-মহারাজাদের ব্যাপার। আর সেজন্যই হয়তো আমাদের সরকারি এয়ারলাইনের লোগো ঠিকহয়েছিল ‘মহারাজা’। তারপর যখন শ্রদ্ধেয় অটলজির সরকার ক্ষমতায় এলো, আসামরিক বিমানপরিবহণ মন্ত্রী হলেন শ্রদ্ধেয় রাজীব প্রতাপ রুডি, আমি তখন এই হিমাচল প্রদেশেইপার্টির কাজ করতাম। একবার তাঁর সঙ্গে দেখা হলে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ভাইসাহেব, এইলোগো পরিবর্তন করা যায় না?
তিনি প্রশ্ন করেন, কেন?
আমি বলি, এই লোগো দেখে মনে হয় শুধুসমাজের উচ্চবর্গের মানুষদের জন্যই বুঝি এই বিমানযাত্রা!
তিনি জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে কী করবো?
আমি বলি, তেমন কঠিন কিছু না, কার্টুনশিল্পী লক্ষ্মণের আঁকা ‘কমন ম্যান’কে ‘লোগো’ করতে পারেন! তাঁর কাছ থেকে অনুমতিনিয়ে নিন।
আমি অত্যন্ত আনন্দিত হই, যখন শুনি যেঅটলজির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার ‘কমন ম্যান’কে লোগো করে নিয়েছে।
সে সময় আমি কোনও রাজনৈতিক পদে ছিলাম না,সংগঠনের কাজ করতাম। কিন্তু এটা বুঝতে পারতাম যে রাজা-মহারাজার সঙ্গে যুক্তচিন্তাভাবনা বদলাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আমাদের অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রককে বলি, আমাদের দেশে কোন বিমান পরিবহণ নীতি নেই। এত বড় দেশ, এত সম্ভাবনা,গোটা বিশ্ব আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে, বিমান পরিবহণ নীতি প্রণয়ন করলে আমরাওপ্রতিযোগিতায় সামিল হতে পারব। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের আস্থা অর্জন করে নীতিরভিত্তিতে এই সম্ভাবনার বিস্তৃতির নকশা আঁকতে হবে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যেস্বাধীনতার পর দেশের প্রথম বিমান পরিবহণ নীতি প্রণয়নের সৌভাগ্য হয়েছে আমাদের।
আমাদের দেশের বিমান পরিবহণকে কেমন দেখতেচাই, তা স্পষ্ট করে এই প্রক্রিয়ার প্রথম মিটিং-এ বলেছিলাম যে আমাদের দেশের গরিবমানুষ হাওয়াই চপ্পল পরেন, আমি চাই দেশের ভাবী পরিবহণ ব্যবস্থা এমন হবে যাতে দেশেরবিমানগুলিতে চপ্পল পরিহিত মানুষদের যাতায়াত করতে দেখা যাবে। আর আজ তা বাস্তবেসম্ভব হচ্ছে। আজ সিমলা আর দিল্লির মধ্যে ‘উড়ান’ চালু হচ্ছে, আর চালু হচ্ছে নান্দেদআর হায়দরাবাদের মধ্যে। আমাদের নাড্ডাজি এখানে রয়েছেন, তিনি হিমাচলের মানুষ, সেজন্যসিমলার সঙ্গে বিমান সংযোগ তাঁকে আনন্দ দিয়েছে। আর আমি দিল্লি থেকে এসেছি, আমি আরওবেশি খুশি।
আজ আমরা সড়কপথে ট্যাক্সিতে গেলেকিলোমিটার প্রতি আট থেকে দশ টাকা লাগে। দিল্লি-সিমলা বিমানপথে খুব বেশি হলে একঘন্টা লাগে। সড়কপথে প্রায় ৯ ঘন্টার রাস্তা, আর কিলোমিটার প্রতি ১০ টাকা করে হিসেবকরলে কত দাঁড়ায়? পাহাড়ি পথে সাধারণত আরও বেশি ভাড়া লাগে। কিন্তু নতুন বিমান নীতিঅনুসারে বিমান যাত্রায় প্রতি কিলোমিটারে ৬-৭ টাকা লাগে। নান্দেদ থেকে হায়দরাবাদ‘উড়ান’ও আজ শুরু হচ্ছে। অবশ্য, এর আগেই নান্দেদ থেকে মুম্বাই ‘উড়ান’ চালু হয়েগেছে। আমি বিমান পরিবহণ সংস্থাগুলিকে কোম্পানিগুলিকে একটি পরামর্শ দিতে চাই। এইপরামর্শের জন্য আমি কোনও ‘রয়্যালটি’ দাবি করবো না। আমার নিঃশুল্ক পরামর্শ হল,বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে আপনারা ভেবে দেখতে পারেন যে নান্দেদ সাহিব, অমৃতসর সাহিবআর পাটনা সাহিব-এর মধ্যে আপনারা যদি ত্রিকোণ বিমানপথ গড়ে তোলেন তাহলে বিশ্বের সকলপ্রান্তে বসবাসকারী শিখ যাত্রীরা এই বিমান যাত্রা সবচাইতে বেশি উপভোগ করবেন।
খুব কম মানুষই জানেন, দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধের সময় দেশের সর্বত্র, বিশেষ করে পূর্ব প্রান্তে ও সীমান্তবর্তীঅঞ্চলগুলিতে অনেক জায়গায় ‘এয়ারস্ট্রিপ’ নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলির মধ্যেঅধিকাংশই কখনও ব্যবহার করা হয়নি। অনেক অরক্ষিত ‘এয়ারস্ট্রিপ’ থেকে যন্ত্রপাতি ওআসবাবপত্র স্থানীয় মানুষ উঠিয়ে নিয়ে গেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সত্তর বছর পেরিয়েগেছে কিন্তু এত বড় দেশে মাত্র ৭০-৭৫টি বিমানবন্দরই বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়।নতুন বিমান পরিবহণ নীতি অনুসারে এক বছরের মধ্যেই এর থেকে বেশি বিমানবন্দরকেবাণিজ্যিক ব্যবহারের আওতায় আনা হবে। ভারতে দ্বিতীয় সারির শহরগুলি ‘গ্রোথ ইঞ্জিন’হয়ে উঠছে। এই দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির শহরগুলি ক্রমে দেশের উন্নয়নে জ্বালানিসরবরাহের ক্ষমতা অর্জন করছে। সেই শহরগুলিতে বিমান সংযোগ হলে পুঁজি নিবেশক,ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ, শিক্ষা জগতের জন্য উ ৎ কৃষ্ট মানবসম্পদ সরবরাহ ও যাতায়াত বৃদ্ধি পেলে সেসব শহরেওউন্নয়নের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। সারা পৃথিবীতে সবচাইতে দ্রুত বিকশিত হচ্ছে পর্যটনশিল্প। পর্যটকরা পর্যটন ক্ষেত্রে পৌঁছনোর পর কষ্ট সহ্য করতে রাজি থাকেন, পরিশ্রমকরতেও পিছপা হন না। পাহাড়ে চড়তে ভালোবাসেন, ঘাম ঝড়াতে ভালোবাসেন, কিন্তু পৌঁছনোরআগে পর্যন্ত সর্বোত্তম পরিষেবা পেতে চান। বিমান সংযোগ, ইন্টারনেট পরিষেবা,ওয়াই-ফাই থাকলে সেই পর্যটনস্থলকে অগ্রাধিকার দেন। সিমলায় অনেক বছর ধরে বিমান চলাচলস্থগিত ছিল। আজ থেকে আবার শুরু হওয়ায় আমার দৃঢ় বিশ্বাস হিমাচল পর্যটনের ক্ষেত্রেঅনেকটা এগিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে সর্বাধিক মূল্যের টিকিটের দাম ধার্য হয়েছে মাথাপিছু২,৫০০ টাকা। অর্থা ৎ , ২,৫০০ টাকা থেকে কম মূল্যের টিকিটেও এই দূরত্ব অতিক্রমকরা যাবে।
উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রত্যেক রাজ্যেএত সুন্দর বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক পরিবেশ, নাচ-গান, লোকসংস্কৃতির বিবিধ উপাদানরয়েছে যে একবার যাঁরা ঘুরতে যান, তাঁরা বারবার যেতে চান। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থারঅপ্রতুলতা দেশের অন্যান্য প্রান্তের সাধারণ মানুষ থেকে ঐ বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে দূরেরেখে দেয়। এই অপরিচয় ভারতের জাতীয় সংহতিকে ব্যাহত করে। ‘উড়ান’ প্রকল্প উত্তর-পূর্বভারতকে অবশিষ্ট ভারতের সঙ্গে জুড়তে পারলে অনেক বড় সাম্বা ৎ সরিক উ ৎ সবে পরিণত হতে পারে। এতে কেবল যাতায়াতের সুবিধা বৃদ্ধি পাবে না, দুটি ভূ-ভাগ,দুটো সংস্কৃতি, দুটো ঐতিহ্য পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হতে থাকবে। আমি খুশি যে এইপ্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘উড়ান’ যা দেশের সাধারণ মানুষ, যেমন বলেছি এই বিমানযাত্রায় হাওয়াই চপ্পল পরিহিত মানুষকে দেখা যাবে। সবাই উড়বে … সবাই জুড়বে।
এর মাধ্যমে দেশের এক প্রান্তের সঙ্গেঅন্য প্রান্তকে যুক্ত করার মহাঅভিযান শুরু হয়েছে। আমি আনন্দিত এখানে আরেকটিপ্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হচ্ছে। মানবসম্পদ উন্নয়ন যত অঞ্চল-নির্দিষ্টহবে, স্থিরনিবদ্ধ হবে, ততই আমাদের দেশের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ভারতে জলবিদ্যু ৎ উ ৎ পাদনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আনুমানিক পরিসংখ্যান অনুসারেভারতে দৈনিক দেড় লক্ষ মেগাওয়াটেরও বেশি জলবিদ্যু ৎ উ ৎ পাদনের সুযোগ রয়েছে। সেজন্য প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ চাই, আর চাই উপযুক্তপ্রশিক্ষণ কেন্দ্র। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে হিমাচল প্রদেশ, হিমালয় ও তার নানাউপত্যকায় পাহাড়ের কোলে অজস্র স্রোতস্বিনীতে জলবিদ্যুতের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।এখানকার নবীন প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীরা জলবিদ্যু ৎ উ ৎ পাদন সংক্রান্ত প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করেন। হয়তো মেকানিক্যাল এবং অন্যান্যবিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। কিন্তু জলবিদ্যু ৎ কেন্দ্রিক পড়াশোনাও প্রশিক্ষণকে জোর দেওয়া হয়েছে। আজ আমার বিলাসপুরেও এমনই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সৌভাগ্য হয়েছে। আমি হিমাচলবাসী জনগণ এবং দেশের নবীনপ্রজন্মকে এই উপহার দিয়ে গর্ব অনুভব করছি। আজ দেশ হিমাচলের মাটি থেকে বায়ুশক্তিএবং জলশক্তিকে অনুভব করছে।
বায়ুশক্তি এবং জলশক্তি দেশে আজকেরউন্নয়ন কর্মযজ্ঞে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমরা যে নতুন ভারতেরস্বপ্ন দেখছি, সেখানে জন-ধনের সামর্থ্য থাকবে, বন-ধনের সামর্থ্য থাকবে, জল-ধনেরওততটাই সামর্থ্য থাকবে। সেইসব সামর্থ্য নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব। আমি আর একবারকেন্দ্রীয় সরকারের অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের অধীন সকল আধিকারিক ওকর্মীবৃন্দকে এবং তাঁদের নেতৃত্ব প্রদানকারী মন্ত্রীমশাইকে হৃদয় থেকে অনেকশুভেচ্ছা জানাই। অনেক সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা নিয়ে আপনারা এই প্রকল্পের কাজ শুরুকরেছেন। অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যেই এটি ভারতের নতুন ‘গ্রোথ সেন্টার’গুলিকে আকাশপথেসংযুক্ত করে দেশকে শক্তিশালী করে তুলবে বলে আমার বিশ্বাস।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা।