আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার! করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিরুদ্ধে ভারতবাসীদের লড়াই অব্যাহত রয়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতোই ভারতকেও এই লড়াইয়ে যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের আত্মীয়, নিজেদের পরিজনদের হারিয়েছে। এরকম সমস্ত পরিবারদের প্রতি আমার সহমর্মিতা রয়েছে।
বন্ধুরা,
এই মহামারী বিগত ১০০ বছরের মধ্যে আসা সবথেকে বড় বিপর্যয়। আধুনিক বিশ্ব এধরনের মহামারী আগে কখনও দেখেনি, এই ধরনের কোনো অভিজ্ঞতাও ছিলো না। এতোবড় মহামারীর বিরুদ্ধে আমাদের দেশ বিভিন্ন স্তরে লড়াই চালিয়ে গেছে। কোভিড হাসপাতাল তৈরি করা থেকে আইসিইউ বেডের সংখ্যা বাড়ানো হোক, ভারতে ভেন্টিলেটর তৈরি করা থেকে নমুনা পরীক্ষার বড় নেটওয়ার্ক তৈরি করা হোক, কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গত দেড় বছরে একটি নতুন স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে এপ্রিল মে মাসে ভারতে মেডিকেল অক্সিজেনের চাহিদা অত্যাধিক মাত্রায় বেড়ে গেছিল। ভারতের ইতিহাসে কখনও এতো বেশি মাত্রায় অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়েনি। এই চাহিদা পূরণ করতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করা হয়েছে। সরকারের সমস্ত দপ্তর কাজ করেছে। অক্সিজেন রেল চালানো হয়েছে, বায়ুসেনার বিমানগুলিকে কাজে লাগানো হয়েছে, নৌসেনাকে কাজে লাগানো হয়েছে। খুব কম সময়ের মধ্যেই চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত তরল অক্সিজেনের উৎপাদন ১০গুনেরও বেশি বাড়ানো হয়েছে। পৃথিবীর যে কোনও প্রান্ত থেকে, যেকোনো জায়গা থেকে যতটুকু যা পাওয়া গেছে, তা পাওয়ার পুরো চেষ্টা করা হয়েছে, আনা হয়েছে। এইভাবেই প্রয়োজনীয় ওষুধের উৎপাদন কয়েকগুন বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেগুলিকে সেখান থেকে আনতে সবরকম চেষ্টা করা হয়েছে।
বন্ধুরা,
করোনার মতো অদৃশ্য এবং রূপ পরিবর্তনকারী শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবথেকে প্রভাবশালী অস্ত্র হলো কোভিড বিধি, মাস্ক, দু-গজের দূরত্ব এবং অন্যান্য সমস্ত সতর্কতার পালন। এই লড়াইয়ে টিকাকরণ হলো আমাদের জন্য সুরক্ষা কবচ। আজ সারা বিশ্বে টিকার যতো চাহিদা রয়েছে, সেই তুলনায় টিকা প্রস্তুতকারী দেশ এবং টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থার সংখ্যা অনেক কম, মাত্র হাতেগোনা। ভেবে দেখুন তো, এই সময়ে আমাদের কাছে ভারতে তৈরি টিকা না থাকলে, ভারতের মতো বিরাট দেশের কী অবস্থা হতো? আপনারা গত ৫০-৬০ বছরের দেখলে জানতে পারবেন যে ভারতে বিদেশ থেকে টিকা পৌছতে কয়েক দশক পেরিয়ে যেতো। বিদেশে টিকাকরণের কাজ শেষ হয়ে যেতো, তবুও আমাদের দেশে টিকাকরণের কাজ শুরুও হতো না। পোলিওর টিকা, গুটি বসন্তের টিকা, হেপাটাইটিস বি’র টিকা, এই সমস্ত টিকার জন্যে ভারতবাসীদের কয়েক দশক ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছে। ২০১৪ সালে দেশবাসী যখন আমাদের দেশ সেবার সুযোগ দিয়েছিলেন, তখন ভারতে টিকার জোগান, ২০১৪ সালে ভারতের মাত্র ৬০ শতাংশ টিকার ব্যবস্থা করা যেত, এবং আমাদের কাছে এটি অত্যন্ত চিন্তার কারন ছিল। যেই গতিতে ভারতে টিকাকরণের কাজ চলছিল, সেই গতিতে ১০০ শতাংশের টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে প্রায় ৪০ বছর লেগে যেতো। আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে ‘মিশন ইন্দ্রধনুষ’ চালু করি। আমরা ঠিক করি যে মিশন ইন্দ্রধনুষের মাধ্যমে আমরা যুদ্ধকালীন পদ্ধতিতে টিকাকরণ করব এবং দেশে যারই টিকার প্রয়োজন পড়বে, তাকেই টিকা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। আমরা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করেছি এবং মাত্র ৫-৬ বছরেই টিকাকরণের পরিমাণ ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ হয়ে যায়। ৬০ থেকে ৯০, অর্থাৎ আমরা টিকাকরণের গতিও বাড়িয়েছি এবং পরিধিও বাড়িয়ে দিয়েছি।
আমরা শিশুদের বিভিন্ন মারণ রোগ থেকে বাঁচাতে বেশ কয়েকটি নতুন টিকাকেও ভারতের টিকাকরণ অভিযানে অন্তর্ভুক্ত করেছি। আমরা এগুলি করেছি কারন আমাদের মনে দেশের শিশুদের জন্যে উদ্বেগ ছিল, দরিদ্রদের জন্যে চিন্তা ছিল, সেই দরিদ্র শিশুদের জন্যে চিন্তা ছিল যারা কখনই টিকাকরণের সুযোগ পেতো না। আমরা ১০০ শতাংশ টিকাকরণ যাতে করা যায়, সেই পথে এগোচ্ছিলাম, সেসময় করোনা ভাইরাস আমাদের ঘিরে ফেলে। শুধু দেশেই নয়, সারা বিশ্বের সামনে পুরোনো আশঙ্কা ফিরে আসে যে ভারত নিজের এতো বিশাল জনসংখ্যাকে কীভাবে বাচাবে? কিন্তু যখন উদ্দেশ্য পরিস্কার হয়, নীতি স্পষ্ট হয়, নিরন্তর পরিশ্রম হয়, তখন তার ফলও পাওয়া যায়। সমস্ত আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে ভারত এক বছরের মধ্যেই একটি নয়, দু-দুটি ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ টিকা প্রস্তুত করেছে। আমাদের দেশ, দেশের বৈজ্ঞানিকেরা দেখিয়ে দিয়েছেন যে আমাদের দেশ বড় বড় দেশগুলির থেকে কোনও অংশে পিছিয়ে নেই। আজ আমি যখন কথা বলছি তখনও পর্যন্ত দেশে ২৩ কোটিরও বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে।
বন্ধুরা,
আমাদের এখানে কথায় বলে, বিশ্বাসেনঃ সিদ্ধিঃ অর্থাৎ, আমাদের নিজেদের ওপর বিশ্বাস থাকলে তবেই সমস্ত প্রয়াস সফল হয়। আমাদের বিশ্বাস ছিল যে আমাদের বৈজ্ঞানিকরা অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে টিকা তৈরি করতে সফল হবে। সেই বিশ্বাসের জেরেই আমরা যখন গবেষণা চলছিল, তখন থেকেই লজিস্টিক এবং অন্যান্য প্রস্তুতি শুরু করে দিই। আপনারা সকলেই ভালোভাবে জানেন যে গতবছর এপ্রিলে, যখন করোনার মাত্র কয়েক হাজার সংক্রমণের খবর ছিল, আমরা তখন থেকেই টিকার টাস্ক ফোর্স গঠন করা শুরু করে দিই। ভারতে ভারতীয় টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিকে সরকারের তরফে সবরকম সাহায্য করা হয়েছে। টিকা নির্মাণকারী সংস্থাগুলিকে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের সময়ে সাহায্য করা হয়েছে, গবেষণার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য করা হয়েছে, প্রত্যেক ক্ষেত্রে সরকার তাঁদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলেছে।
আত্মনির্ভর ভারত প্যাকেজের আওতায় কোভিড সুরক্ষার মাধ্যমেও তাঁদের হাজার কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। বিগত কিছু সময় ধরে দেশ যে নিরন্তর চেষ্টা এবং পরিশ্রম করছে, এরফলে আগামীদিনে দেশে টিকার সরবরাহ আরও বৃদ্ধি পেতে চলেছে। আজ দেশে ৭টিরও বেশি সংস্থা বিভিন্ন ধরনের টিকার উৎপাদন করছে। আরও ৩টি টিকার চুড়ান্ত পর্যায়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে । টিকার সরবরাহ বাড়াতে অন্যান্য দেশের কোম্পানী থেকে টিকা কেনার প্রক্রিয়া আরও জোরদার করা হয়েছে। এদিকে, সম্প্রতি আমাদের দেশের শিশুদের নিয়েও বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই দিকেও দ্রুতগতিতে দুটি টিকার পরীক্ষানিরীক্ষার কাজ চলছে। এছাড়াও দেশে একটি নাসারন্ধ্র দিয়ে টিকা প্রয়োগের গবেষণার কাজ চলছে। এই টিকাটি সিরিঞ্জে দিয়ে নাকে স্প্রে করা হবে। দেশ এই টিকা তৈরি করতে সফল হলে ভারতের টিকাকরণ অভিযানে আরও গতি আসবে।
বন্ধুরা,
এতো কম সময়ের মধ্যে টিকা তৈরি করা, গোটা মানবজাতির জন্যে বড় সাফল্য। কিন্তু এর নিজস্ব কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। টিকা তৈরি হওয়ার পরেও পৃথিবীর খুব কম দেশেই টিকাকরণের কাজ শুরু হয়েছে, এবং বেশিরভাগক্ষেত্রেই উন্নত দেশে তা শুরু হয়েছে। হু টিকাকরণ সংক্রান্ত নির্দেশিকাও জারি করেছে। বৈজ্ঞানিকরা টিকাকরণের রূপরেখা জারি করেছে। এবং ভারতও অন্যান্য দেশের সব থেকে ভালো পদ্ধতি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশের ওপর ভিত্তি করেই পর্যায়ক্রমে টিকাকরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীদের লাগাতার বৈঠকে যে সমস্ত পরামর্শ পাওয়া গেছে, সংসদের সদস্যদের থেকে যে পরামর্শ পাওয়া গেছে, সেগুলি মাথায় রাখা হয়েছে। এরপরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে করোনার সংক্রমণ থেকে যাদের সবথেকে বেশি বিপদ, তাঁদের টিকাকরণে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সেইজন্যেই স্বাস্থ্যকর্মী, প্রথম সারির করোনাযোদ্ধা, ৬০ বছরের থেকে বেশি বয়স্ক নাগরিক, অসুস্থ ৪৫ বছরের বেশি বয়স্ক নাগরিক, এদের টিকাকরণে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। আপনারা ভাবুন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আগে আমাদের প্রথম সারির করোনাযোদ্ধাদের টিকাকরণ শুরু না হলে কী হতো? হাসপাতালের সাফাইকর্মী ভাই-বোনেদের, অ্যাম্ব্যুলেন্স চালক ভাই-বোনেদের টিকাকরণ না হয়ে থাকলে কী হতো? বেশিরভাগ স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকাকরণ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা নিশ্চিন্তে অন্যের সেবা করতে পেরেছেন, দেশবাসীর প্রাণ বাঁচাতে পেরেছেন।
কিন্তু দেশে করোনার কেস কমতে থাকার পাশাপাশি কেন্দ্র সরকারের কাছে বিভিন্ন পরামর্শ আসতে থাকে, নানা ধরনের দাবি তৈরি হতে থাকে। প্রশ্ন উঠতে থাকে সবকিছু ভারত সরকারই কেন ঠিক করবে? রাজ্য সরকারদের কেন স্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে না? রাজ্য সরকারদের লকডাউনের স্বাধীনতা কেন দেওয়া হচ্ছে না? ওয়ান সাইজ ডাজ নট ফিট অল –এর মতো কথাও বলা হতে থাকে। বলা হয় যে সংবিধানে স্বাস্থ্য, আরোগ্য যেহেতু রাজ্যের আওতায়, তাই এইসমস্ত সিদ্ধান্ত রাজ্য নিলেই ভালো হবে। সেজন্যেই এইদিকে কাজ করা হয়েছে। ভারত সরকার একটি বৃহৎ নির্দেশিকা তৈরি করে রাজ্যদের দেয় যাতে রাজ্য নিজেদের সুবিধামতো কাজ করতে পারে। স্থানীয়ভাবে কার্ফ্যু জারি করা হোক, মাইক্রো কন্টেনমেন্ট জোন তৈরি করা হোক, চিকিৎসার পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যবস্থাপনা হোক, ভারত সরকার রাজ্যদের এই সমস্ত দাবি স্বীকার করে নিয়েছিল।
বন্ধুরা,
এই বছর ১৬ই জানুয়ারি থেকে শুরু করে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত ভারতের টিকাকরণ অভিযান মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের তত্তাবধানেই চলছিল। সকলকেই বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার পথেই দেশ এগোচ্ছিল। দেশের নাগরিকরাও অনুশাসনের পালন করছিলেন। নিজের সময় এলে টিকা নিচ্ছিলেন। এর মধ্যেই বেশকিছু রাজ্য সরকার দাবি তুলতে থাকে যে টিকাকরণের কাজ কেন্দ্রের হাতে থাকা উচিত নয়, এবং রাজ্যদের হাতে ছাড়া উচিত। বিভিন্ন ধরনের দাবি ওঠে। যেমন টিকাকরণের জন্যে বয়স অনুযায়ী কেন ভাগ করা হয়েছে? কেউ প্রশ্ন তুলল টিকাকরণের বয়সসীমা কেন্দ্র সরকার কেন ঠিক করবে? অনেকেই প্রশ্ন করেছিল, বয়স্কদের আগে টিকা কেন দেওয়া হচ্ছে? বেশ চাপ তৈরি করা হয়েছিল এবং দেশের এক শ্রেণির মিডিয়া তাএ সংক্রান্ত খবর সম্প্রচার করে।
বন্ধুরা,
অনেক চিন্তাভাবনার পরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, রাজ্য সরকারগুলি যদি নিজেদের মতো চেষ্টা করতে চায় তাহলে তাতে ভারত সরকারের কোনও অসুবিধা কেন হবে? আর কেনই বা ভারত সরকার রাজি হবে না? রাজ্যদের এই দাবি মেনেই ১৬ই জানুয়ারী থেকে যে ব্যবস্থা চালু হয়েছিল, তাতে কার্যকরীভাবে কিছু পরিবর্তন করা হয়। আমরা ভাবলাম, রাজ্যরা দাবি করছে, তাঁদের যখন উৎসাহ রয়েছে, তখন চলো ২৫ শতাংশ কাজ তাঁদের দিয়ে দেওয়া হোক, তাদেরকেই দেওয়া হোক। স্বাভাবিকভাবেই ১লা মে থেকে রাজ্যদের ২৫ শতাংশ কাজের ভার দেওয়া হল এবং তাঁরা তা সম্পুর্ণ করতে নিজেদের মতো করে চেষ্টাও করে।
এতবড় কাজের ক্ষেত্রে কীধরনের সমস্যা তৈরি হয়, সেটাও তাঁরা বুঝতে শুরু করেন, তাঁরা জানতে পারেন। সারা বিশ্বে টিকাকরণের কী পরিস্থিতি, সেই সত্যও রাজ্যগুলি বুঝতে পারে। আর আমরা দেখলাম, মে মাস থেকে একদিকে দ্বিতীয় ঢেউ, অন্যদিকে টিকার জন্য সাধারন মানুষের উদ্বেগ এবং আরেকদিকে রাজ্য সরকারদের সমস্যাগুলি। মে মাসের দু-সপ্তাহ যেতে না যেতেই অনেক রাজ্য বলতে থাকে, আগের ব্যবস্থাই ভাল ছিল। ধীরে ধীরে বেশ কয়েকটি রাজ্যের সরকার এই কথায় সুর মেলাতে থাকে। টিকাকরণের কাজ রাজ্যদের হাতে দেওয়ার দাবি যারা করছিলেন, ধীরে ধীরে তাদেরও মত পরিবর্তন হতে থাকে। একটা ভাল দিক হলো, সময় থাকতেই রাজ্যগুলি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি তোলে। রাজ্যদের এই দাবি মেনেই, এবং দেশবাসীদের কথা মাথায় রেখেই, তাঁদের টিকাকরণের পথ সহজ করে তুলতে ১লা মের আগে, অর্থাৎ ১৬ই জানুয়ারি থেকে যে নিয়ম লাগু ছিল তা পুনর্বহাল করা হবে।
বন্ধুরা,
আজ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, টিকাকরণের সঙ্গে জড়িত যে ২৫ শতাংশ কাজ রাজ্যদের দেওয়া হয়েছিল, তার দায়িত্বও ভারত সরকার নেবে। এই ব্যবস্থা আসন্ন দু সপ্তাহের মধ্যে চালু করা হবে। এই দু-সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার মিলে নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রস্তুতি নেবে। কাকতালীয়ভাবে আজ থেকে দু-সপ্তাহ পরে ২১শে জুন, আন্তর্জাতিক যোগ দিবস। ২১ শে জুন,সোমবার থেকে দেশের প্রত্যেক রাজ্যে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সমস্ত নাগরিকদের সরকার বিনামূল্যে টিকাকরণ করবে। টিকা নির্মাতাদের থেকে মোট উতপাদনের ৭৫ শতাংশ কেন্দ্র সরকার কিনে তা রাজ্যদের বিনামূল্যে পাঠানো হবে। অর্থাৎ, দেশের কোনও রাজ্য সরকারকেই এরপর টিকার জন্যে কিছুই খরচ করতে হবে না। এখনও পর্যন্ত দেশের কয়েক কোটি মানুষ বিনামূল্যে টিকা পেয়েছেন।
এবার ১৮ বছরের বেশি বয়স্করাও তা পাবেন। সকল দেশবাসীদের জন্যে ভারত সরকার বিনামূল্যে টিকা প্রদান করবে। দরিদ্র হোক, নিম্ন মধ্যবিত্ত হোক, মধ্যবিত্ত হোক অথবা উচ্চবিত্ত, ভারত সরকারের এই অভিযানে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হবে। হ্যাঁ, এবং যারা বিনামূল্যে টিকা নিতে চান না, বেসরকারি হাসপাতালে টিকা নিতে চান, তাঁদের কথাও ভাবা হয়েছে। দেশে তৈরি টিকার ২৫ শতাংশ যাতে প্রাইভেট হাসপাতালগুলি সরাসরি নিতে পারে, সেই ব্যবস্থা বজায় থাকবে।প্রাইভেট হাসপাতালগুলি টিকার একটি ডোজের নির্ধারিত মূল্যের ওপর কেবল ১৫০ টাকার সার্ভিস চার্জ নিতে পারবে। এটি পরিচালনার ভার রাজ্য সরকারের ওপরেই থাকবে।
বন্ধুরা,
আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে- প্রাপ্য আপদং ন ব্যথতে কদাচিত, উদ্যোগম অনু ইচ্ছতি চা প্রমত্তঃ।। অর্থাৎ বিজয়ীরা বিপদের মুখে, সমস্যার সামনে পড়ে হার স্বীকার করে না, তাঁরা পরিশ্রম করে, উদ্যমী হয়ে ওঠে এবং পরিস্থিতি জয় করে নেন। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ১৩০ কোটি ভারতীয় এখনও পর্যন্ত পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই এগিয়ে চলেছে। আগামী দিনেও আমাদের পথ পরিশ্রম এবং সহযোগিতার মাধ্যমে আরও মজবুত হবে। আমরা টিকা পাওয়ার গতিও বাড়াবো, টিকাকরণ অভিযানের গতিও বাড়াবো। আমাদের মনে রাখতে হবে যে ভারতের টিকাকরণের গতি এখনও সারা দুনিয়ার মধ্যে বেশ দ্রুত, অনেক উন্নত দেশের থেকেও দ্রুত। আমরা যে প্রযুক্তিগত প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করেছি- কোউইন, সারা বিশ্বে এর প্রশংসা হয়েছে। অনেক দেশ ভারতের এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। আমরা দেখেছি যে টিকার প্রত্যেকটি ডোজ কত গুরুত্বপূর্ণ, প্রত্যেক ডোজের সঙ্গে এক একটি জীবন জড়িয়ে আছে। কেন্দ্র সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে রাজ্য সরকারদের দু সপ্তাহ আগেই জানিয়ে দেওয়া হবে যে তাঁদের কবে কত ডোজ সরবরাহ করা হবে। মানবিক এই কাজে তর্ক-বিতর্ক, রাজনৈতিক টানাপোড়েন, কেউই ভালোভাবে দেখে না। প্রত্যেক সরকার, প্রত্যেক জনপ্রতিনিধি, প্রত্যেক প্রশাসনের সম্মিলিত দায়িত্ব যাতে টিকার জোগান অনুযায়ী, শৃংখলাবদ্ধভাবে টিকাকরণ চলতে থাকে, এবং আমরা দেশের সমস্ত নাগরিকদের কাছে পৌঁছে যেতে পারি।
প্রিয় দেশবাসী,
টিকাকরণ ছাড়াও একটি বড় সিদ্ধান্তের বিষয়ে আপনাদের জানাতে চাই। গত বছর যখন লকডাউন জারি করা হয়, তখন প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন প্রকল্পের আওতায় ৮ মাস পর্যন্ত ৮০ কোটিরও বেশি দেশবাসীদের আমাদের সরকার বিনামূল্যে রেশন দিয়েছে। এই বছরেও দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য মে এবং জুন মাসে এই প্রকল্প শুরু করা হয়েছিল। এখন সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই প্রকল্প দীপাবলি পর্যন্ত চালু রাখা হবে। মহামারীর এই সময়ে সরকার দরিদ্রদের পাশে, তাঁদের প্রয়োজনে বন্ধু হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অর্থাৎ, নভেম্বর পর্যন্ত, প্রতি মাসে ৮০ কোটিরও বেশি দেশবাসীকে নির্ধারিত মাত্রায় বিনামূল্যে রেশন প্রদান করা হবে। আমাদের দরিদ্র ভাইবোনেদের যাতে খালি পেটে না থাকতে হয়, সেজন্যে এই সাহায্য দেওয়া হচ্ছে।
বন্ধুরা,
দেশের এই সমস্ত প্রয়াসের পাশাপাশি কয়েকটি ক্ষেত্রে টিকাকরণ সংক্রান্ত ভ্রম এবং গুজব উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে। সেই বিষয়গুলিই আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। যখন থেকে ভারতীয় টিকার ওপর কাজ শুরু হয়েছহিল, তখন থেকেই কিছু মানুষ এমন কিছু মন্তব্য করতে থাকেন, যাতে সাধারন মানুষের মনে আশঙ্কা তৈরি হয়। ভারতীয় টিকা নির্মাণকারী সংস্থাগুলির মনোবল ভেঙ্গে দেওয়ার এবং তাঁদের সামনে নানা ধরনের বাধা সৃষ্টি করা হয়। যখন ভারতীয় টিকা তৈরি হয়ে বাজারে আসে, তখনো অনেক ধরনের উপায়ে গুজব রটানো হয়েছে। টিকা না নেওয়ার ওপর জোর দিয়ে প্রচার করা হয়। দেশ সেসমস্ত দেখেছে। যারা টিকা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি করছেন, গুজব রটাচ্ছেন, তাঁরা নিরীহ ভাইবোনেদের জীবন নিয়ে খেলছেন।
এই সমস্ত গুজব থেকে সতর্ক থাকতে হবে। আমি আপনাদের সবার থেকে, সমাজের আলোকপ্রাপ্ত মানুষদের কাছে অনুরোধ করছি, আপনারা টিকাকরণের সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য ক্রুন। এখন কিছু জায়গায় কার্ফ্যু শিথিল করা হচ্ছে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে করোনা চলে গেছে। আমাদের সতর্কও থাকতে হবে এবং করোনা বিধির পালনও করতে হবে। আমার বিশ্বাস আমরা করোনার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে জিতব, ভারত করোনার বিরূদ্ধে লড়াইয়ে জিতবে। এই শুভকামনার সঙ্গে, সকল দেশবাসীকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
Prime Minister Shri Narendra Modi will distribute more than 71,000 appointment letters to newly appointed recruits on 23rd December at around 10:30 AM through video conferencing. He will also address the gathering on the occasion.
Rozgar Mela is a step towards fulfilment of the commitment of the Prime Minister to accord highest priority to employment generation. It will provide meaningful opportunities to the youth for their participation in nation building and self empowerment.
Rozgar Mela will be held at 45 locations across the country. The recruitments are taking place for various Ministries and Departments of the Central Government. The new recruits, selected from across the country will be joining various Ministries/Departments including Ministry of Home Affairs, Department of Posts, Department of Higher Education, Ministry of Health and Family Welfare, Department of Financial Services, among others.