পরমশ্রদ্ধেয় মোরারী বাপুজি, বিবেকানন্দ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ শ্রী পি পরমেশ্বরনজি, আমারমন্ত্রিসভার সদস্য পন রাধাকৃষ্ণনজি, বিবেকানন্দ আশ্রমের স্বামীজি, চিত্তানন্দজি,বালাকৃষ্ণজি, ভানুদাসজি, বিবেকানন্দ কেন্দ্রের সহ-অধ্যক্ষ নিবেদিতাজি এবং আমারপ্রিয় বন্ধুগণ!
আমিআজ আপনাদের আসতে পারলে খুব খুশি হতাম। কিন্তু প্রযুক্তির শক্তিকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমিসশরীরে না এলেও এর মাধ্যমে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হতে পেরেছি। আর যাই হোক, আমি কোনঅতিথি নই, আমি এই পরিবারেরই সদস্য। আপনাদের অত্যন্ত আপনজন।
১২জানুয়ারি কোন সাধারণ দিন নয়। এটি ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন । এদিন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ, একজন পথপ্রদর্শকযিনি বিশ্বের কাছে ভারতাত্মার বাণীকে পৌঁছে দিয়েছিলেন, তাঁর জন্মদিন। আমি পরমপুজনীয় স্বামী বিবেকানন্দকে আমার অন্তরের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করি। এই মহাপুরুষ তাঁরশক্তিশালী দর্শনের মাধ্যমে আজও অনেক মানুষের মনকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সক্ষম।
আজবিবেকানন্দপুরম-এ রামায়ণ দর্শনম, ভারতমাতা সদনম জাতির উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত হচ্ছে।পাশাপাশি, হনুমানজির একটি ২৭ ফুট উঁচু মূর্তি, যা একটিমাত্র পাথর খোদাই করে গড়েতোলা হয়েছে সেটিরও আজ উদ্বোধন হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনারা আমাকে সমস্ত ভিডিও পাঠিয়েছেন।এগুলি দেখে আমি বলতে পারি যে আজ যা লোকার্পিত হচ্ছে, সেগুলির মধ্যে দিব্যতা যেমনরয়েছে, ভব্যতাও তেমনই রয়েছে।
আজইএই বিবেকানন্দ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় একনাথ রাণাডেজির প্রতিকৃতিওউন্মোচিত হচ্ছে। এই মহা আয়োজনের জন্য আমি আপনাদের সবাইকে অন্তর থেকে অনেক অনেককৃতজ্ঞতা জানাই।
ভাইও বোনেরা, আজ আপনারা যেখানে রয়েছেন সেটি কোন সাধারণ স্থান নয়। এই ভূমি রাষ্ট্রের তপোভূমিরমতো পবিত্র। হনুমানজি এই মাটিতেই নিজের জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পেয়েছিলেন। এখানেইজামবন্ত তাঁকে বলেছিলেন, “তোমার জন্মই হয়েছে ভগবান শ্রীরামের সেবা করার জন্য।” এইমাটিতেই মা পার্বতীর কন্যাকুমারী তাঁর জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পেয়েছিলেন। এই মাটিতেইমহান সমাজ সংস্কারক সন্ত থিরুবল্লুবর আজ থেকে দু’হাজার বছর আগে জ্ঞানের অমৃত খুঁজেপেয়েছিলেন। এই মাটিতেই স্বামী বিবেকানন্দও তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছিলেন।এই মাটিতে বসেই তপস্যা করে তিনি জীবনের লক্ষ্য এবং লক্ষ্য প্রাপ্তির পথ খুঁজেপেয়েছিলেন। আর এখানেই একনাথ রাণাডেজি তাঁর জীবনপথে নতুন মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছিলেন।তারপর বাকি জীবন তিনি ‘এক জীবন এক লক্ষ্য’ নিয়ে এগিয়ে গেছেন । এই পবিত্র ভূমিকে, এই তপোভূমিকে আমার শত শতপ্রণাম।
বিগত২০১৪ সালে আমরা যখন একনাথ রাণাডেজির জন্মশতবার্ষিকী পালন করছিলাম, তখন আমিবলেছিলাম, এই সুযোগে আমরা দেশের যুব সম্প্রদায়ের মনকে জাগিয়ে তোলার কাজে ঝাঁপিয়েপড়ব। আমাদের দেশের যুব সম্প্রদায় দিব্য এবং ভব্যগুনসম্পন্ন হয়ে উঠুক। আজ বিশ্বভারত থেকে দিব্যতার অনুভূতি প্রত্যাশা করে, আর ভারতের গরিব, দলিত, পীড়িত, শোষিত,বঞ্চিত মানুষ ভব্যতার প্রতীক্ষায় থাকেন। এই দুইয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমেই আমাদেররাষ্ট্র নির্মাণের পথে এগিয়ে যেতে হবে।
ভাইও বোনেরা, আজ ভারত বিশ্বের সর্বাধিক নবীন দেশ। ৮০ কোটিরও বেশি মানুষের বয়স ৩৫বছরের নিচে। আজ আমাদের মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দ নেই, অর্থাৎ আমি বলতে চাইছি তিনিসাক্ষাৎ রূপে নেই, কিন্তু তাঁর দর্শনে এত শক্তি রয়েছে, এত প্রেরণা রয়েছে যে দেশেরযুব সম্প্রদায়কে সংগঠিত করে প্রতিনিয়ত রাষ্ট্র গঠনের পথ প্রদর্শন করছে।
একনাথরাণাডেজি যুব সম্প্রদায়ের এই শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে এই বিবেকানন্দ কেন্দ্র এবংস্বামী বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল-এর স্থাপন করেছিলেন। তিনি বলতেন, স্বামীবিবেকানন্দকে ভালো লাগে, এইটুকু দিয়ে আমাদের চলবে না। তাঁর স্বপ্নগুলিকে সফল করারমাধ্যমেই আমরা রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারি।
স্বামীবিবেকানন্দের স্বপ্নকে সফল করার লক্ষ্য নিয়ে, যুব সম্প্রদায়কে গড়ে তোলার লক্ষ্যনিয়ে একনাথজি তাঁর জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন। বিবেকানন্দের শিষ্টাচার ও মূল্যবোধেরআদর্শ তিনি প্রচার করতেন। আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান যে আমি দীর্ঘ সময় একনাথজিরঘনিষ্ঠ সঙ্গী রূপে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এই মাটিতে এসে তাঁর সান্নিধ্যে নিজেরজীবনকে উজ্জ্বল করে তোলার সৌভাগ্য আমার হয়েছে।
একনাথজিরজন্ম শতবার্ষিকীতে আমরা ঠিক করেছিলাম যে আমাদের সংস্কৃতি এবং ভাবনা প্রক্রিয়ায়রামায়ণের প্রভাব প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে একটি প্রদর্শনী গড়ে তুলব। আজ সেই পরিকল্পনা সফলহচ্ছে রামায়ণ দর্শনম নামে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দেশ ও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকেযে পর্যটক ও তীর্থযাত্রীরা রক মেমোরিয়াল দেখতে আসেন, এই রামায়ণ দর্শনম তাঁদেরকেঅনেক প্রেরণা যোগাবে, প্রভাবিত করবে। ভারতের প্রতিটি অণু পরমাণুতে শ্রীরাম রয়েছেন।প্রতিটি মানুষের মনে শ্রীরামচন্দ্র রয়েছেন। তাঁকে শুধু আমরা একজন আদর্শ পুত্র,ভাই, মিত্র এবং আদর্শ রাজা হিসেবে জানি না, তিনি অযোধ্যার মতো একটি আদর্শ নগরেরামরাজ্য নামক আদর্শ শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। যুগ যুগ ধরে তাঁর এই শাসনব্যবস্থা এ দেশের শাসকদের সামনে প্রেরণাস্বরূপ। এখন রামায়ণ দর্শনমে সেই শাসনব্যবস্থার ব্যাখ্যা স্পষ্টভাবে প্রদর্শিত হবে।
মহাকবিকম্বন তাঁর ‘কম্ব রামায়ণম’-এ কৌশল রাজ্যকে একটি সুশাসিত রাজ্য হিসেবে বর্ণনাকরেছেন। তিনি তামিল ভাষায় যা লিখে গেছেন তার ইংরেজি অনুবাদ করলে দাঁড়ায় –
Nonewere generous in that land as
Nonewere needy;
Noneseemed brave as none defied;
Truthwas unnoticed as there were no liars;
Nolearning stood out as all were learned.
Sinceno one in that City ever stopped learning
Nonewas ignorant and none fully learned;
Sinceall alike had all the wealth
Nonewas poor and none was rich.
এভাবেই কম্বন রামরাজ্যেরবর্ণনা করেছেন। এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই মহাত্মা গান্ধীও রামরাজ্যের স্বপ্ন দেখতেন।নিশ্চিতরূপে এটি ছিল এমন শাসনব্যবস্থা যেখানে ব্যক্তি ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না,আদর্শই ছিল বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
গোস্বামী তুলসীদাসওরামচরিতমানসে বিস্তারিতভাবে রামরাজ্যের বর্ণনা করেছিলেন, যেখানে কোন গরিব থাকবেনা, দুঃখী থাকবে না, কেউ কাউকে ঘৃণা করবে না, যেখানে সবাই স্বাস্থ্যবান আরসুশিক্ষিত। যে দেশে প্রকৃতি আর মানুষের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তিনি লিখেছেন –
দৈহিক দৈবিক ভৌতিক তাপা,রামরাজ নহিঁ কাহুহি ব্যাপা।
সব নর করহিঁ পরস্পর প্রীতী,চলহিঁ স্বধর্ম নিরত শ্রুতি নীতি।।
অল্পমৃত্যু নহিঁ কবনিউপীড়া, সবসুন্দর সব বিরুজ সরীরা।
নহিঁ দরিদ্র কউ দুখী ন দীনা,নহিঁ কউ অবুধ ন লচ্ছন হীনা।।
রাম রাবনকে হারিয়ে বড় হননি।সর্বহারা মানুষদের নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমেই রাম রাম হয়ে উঠেছিলেন। তিনি সেইকপর্দকহীন মানুষদের আত্মগৌরব প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তাঁদের মনে বিজয়ের আত্মবিশ্বাসঅঙ্কুরিত করেছিলেন। ভগবান রামের জীবনে তাঁর বংশ মর্যাদার ভূমিকা এত বড় ছিল না।তিনি একবার অযোধ্যা থেকে বাইরে বেরিয়ে ছিলেন। নগরের সীমা অতিক্রম করার আগেই তিনিগোটা বিশ্বকে, গোটা মানবতাকে নিজের মধ্যে সমাহিত করে আদর্শ এবং মূল্যবোধপ্রতিস্থাপন করেছিলেন। তাঁর জীবন ছিল দৃষ্টান্তস্বরূপ। সেজন্য এই রামায়ণ দর্শনমবিবেকানন্দ পুরমে একটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক প্রদর্শনশালা হয়ে উঠবে, আর দেশ ও জাতিরঅগ্রগতির পথে একটি প্রেরণা ক্ষেত্র হয়ে উঠবে। ভগবান শ্রীরামের মধ্যে আমরা ব্যক্তিরবিকাশ এবং ব্যবস্থার বিকাশ সহজভাবে দেখতে পাই।
ভাই ও বোনেরা, একনাথজিও সবসময়চাইতেন যে দেশের আধ্যাত্মিক শক্তিকে জাগ্রত করে দেশের কর্মশক্তিকে গঠনমূলক কাজে প্রয়োগকরতে হবে। আজ যখন এই বিবেকানন্দ কেন্দ্রে হনুমানজির মূর্তি স্থাপিত হচ্ছে, তখনতাঁর এই বক্তব্যের প্রেরণাকেও আমরা অনুভব করতে পারছি।
হনুমানজি মানেই সেবা, হনুমানজিমানে সমর্পণ, ভক্তির স্বরূপ। তাঁর মূলমন্ত্র সেবা হি পরম ধর্ম। তিনি যখন সমুদ্রপার করছিলেন, মাঝপথে মৈনাক পর্বত তাঁকে বিশ্রাম দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সঙ্কল্পসিদ্ধির আগে হনুমানজি শিথিলতাকে প্রশ্রয় দেননি। লক্ষ্যে পৌঁছনোর আগে পর্যন্ত তিনিকোন বিশ্রাম নেননি।
হনুমানজির সেবাভাব নিয়েভারতরত্ন শ্রী রাজাগোপালচারীজিও তাঁর সৃষ্ট রামায়ণে লিখেছেন – যখন হনুমানজি সীতামায়ের সঙ্গে দেখা করে ফিরে এসে, ভগবান রামকে সীতা মায়ের সম্পর্কে বিস্তারিত বলেন,তখন রামজি বলেন, “এই হনুমান ছাড়া বিশ্বের আর কেউ এভাবে সমুদ্র পার করে রাবন এবংতার ভয়ঙ্কর সেনাবাহিনী দ্বারা সুরক্ষিত লঙ্কায় প্রবেশ করে এভাবে উদ্দেশ্যসাধন করতেপারত না। তাঁর এই সাফল্য দৃষ্টান্তমূলক এবং সকলের পক্ষেই আশাপ্রদ।”
রাজাগোপালাচারীজি লিখেছেন,হনুমানজি এমন অপ্রত্যাশিত কাজ করেছেন, কাঠিন্যের সমুদ্র পার করেছেন যা কেউ কল্পনাওকরতে পারে নি!
আর সেজন্যেই ভাই ও বোনেরা,আমরাও, ‘সবার সঙ্গে সবার উন্নয়ন’-কে আদর্শকরে এগিয়ে চলেছি। দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর মানুষের জন্যে জন-ধন-যোজনা চালু করেতাদেরকে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করেছি। বিমা প্রকল্পের বিকল্প তাঁদেরসামনে উন্মুক্ত করেছি। কৃষকরা এর দ্বারা লাভবান হয়েছেন। সবচেয়ে কম প্রিমিয়াম জমাকরে এই ফসল বিমা যোজনার সুবিধা পাওয়া যায়। কন্যাভ্রূণ হত্যা বন্ধ করার লক্ষ্যে স্ত্রীশিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ অভিযান শুরু করেছি। গর্ভবতীমহিলাদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সারা দেশে প্রকল্প চালু করেছি। দেশের ৫কোটি পরিবার কাঠের উনুনে রান্না করত। ৪০০ সিগারেটের সমান বিষাক্ত ধোঁয়া প্রতিদিনমায়েদের ফুসফুসে প্রবেশ করত। সেই ৫ কোটি পরিবারে আমরা রান্নার গ্যাস সংযোগেরপ্রচেষ্টা চালাচ্ছি। ইতিমধ্যেই এ ধরনের দেড় কোটি পরিবারে আমরা রান্নার গ্যাস পৌঁছেদিতে পেরেছি।
এই দলিত, পীড়িত, বঞ্চিতদেরসেবার মন্ত্রইতো আমাদের আসল প্রেরণা। সেজন্য দেশের দলিত যুব সম্প্রদায়েরক্ষমতায়নের জন্য ‘স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া, স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া’ প্রকল্প চালু করেছি।ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যাতে কম সুদে ঋণ পেতে পারেন, সেদিকে লক্ষ্য রেখে সারা দেশে‘মুদ্রা যোজনা’ চালু করা হয়েছে। গরিব মানুষের দারিদ্র্য দূর করার একমাত্র উপায় হলতাঁদের ক্ষমতায়ন। তবেই গরিবরা নিজেরাই নিজেদের দারিদ্র্য দূর করতে পারবেন। আরদারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেলে তাঁরা যে আনন্দ পাবেন সেটি দেশের অগ্রগতির পক্ষে একটিনতুন শক্তি হয়ে উঠবে।
রামায়ণে ভগবান রাম ও ভরতেরমধ্যে প্রশাসন নিয়ে আলাপ-আলোচনার সময় ভগবান রাম বলেছিলেন –
“কচ্চিদ্ অর্থম্ বিনিশ্চত্যলঘু মূলম্ মহা উদয়ম্।
ক্ষিপ্রম আরভসে কর্তুম্ নদীর্ঘয়সি রাঘব ।। ”
হে ভরত এমন প্রকল্প চালু করযাতে ন্যূনতম খরচে অধিক মানুষের লাভ হয়। এই প্রকল্পগুলি চালু করতে বিন্দুমাত্রবিলম্ব কোর না।
“আয়ঃ তে বিপুলঃ কচ্চিত্কচ্চিদ্ অল্পতরো ব্যয়ঃ।
অপাত্রেষু ন তে কচ্চিত্ কোশগগচ্ছতি রাঘব।।”
অর্থাৎ, ভরত লক্ষ্য রাখবে যেনআয় বেশি হয় আর ব্যয় কম হয়। এদিকেও লক্ষ্য রেখ, অপাত্রে রাজকোষের লাভ যেন বর্ষিত নাহয়।
অপাত্র থেকে সরকারি অর্থকেরক্ষা করাও সরকারের কর্মসংস্কৃতির অংশ হয়ে ওঠা উচিৎ। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেনআমরা আধার কার্ডের সঙ্গে সকলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টকে লিঙ্ক করে সরাসরি প্রত্যেকেরঅ্যাকাউন্টে ভর্তুকির অর্থ প্রদান করা শুরু করেছি। ভুয়ো রেশন কার্ড এবং ভুতুড়েরান্নার গ্যাস সংযোগ থেকে ব্যবস্থাকে মুক্ত করা, ভুয়ো শিক্ষক ও পেনশনভোগীদেরসরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে যে দুর্নীতি চলছিল তা থেকে দেশকে মুক্ত করেছি।
ভাই ও বোনেরা, আজই ভারতমাতাসদনে পঞ্চ লৌহ দিয়ে গড়ে তোলা ‘মা ভারতী’র প্রতিমা অনাবৃত হচ্ছে। মা ভারতীর এইপ্রতীক সৌভাগ্যের প্রতীক। যাঁরা ব্যক্তিগতভাবে এই বিশেষ যজ্ঞের সঙ্গে যুক্তরয়েছেন, তাঁদের সকলকে আমি এই পূণ্য কাজের জন্য অভিবাদন জানাই।
বন্ধুগণ, আমি বিবেকানন্দ রকমেমোরিয়ালের কাছেই প্রতিষ্ঠিত সন্ত থিরুবল্লুবর-এর মূর্তিকেও প্রণাম জানাই।থিরুবল্লুবর যে সূত্র-বাক্য, যে মন্ত্র দিয়ে গেছেন তা আজও প্রাসঙ্গিক। যুবসম্প্রদায়ের জন্য তাঁর শিক্ষা ছিল –
“বালুকাবেলায় তুমি যত খননকরবে, তত বেশি জলস্রোতের কাছাকাছি পৌঁছবে; তুমি যত শিখবে, ততই প্রজ্ঞাধারাপ্রবাহিত হবে।”
আজ যুব দিবসে আমার দেশের নবীনপ্রজন্মকে আহ্বান জানাই এই শিক্ষা প্রক্রিয়া, এই প্রবাহকে থামতে দেবেন না। নিজেরঅন্তরে জ্ঞানপিপাসাকে বাঁচিয়ে রাখুন। যত শিখবেন, ততই আপনার আধ্যাত্মিক উন্নতি হবে।যত দক্ষ হয়ে উঠবেন, ততই আপনার উন্নয়ন হবে, দেশেরও উন্নয়ন হবে।
অনেকে আধ্যাত্মিক উন্নয়নের কথাউঠলেই একে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভাবেন। কিন্তু আধ্যাত্মিক শক্তি যে কোন বন্ধনেরঊর্ধ্বে, যে কোন রাজনৈতিক ও ধার্মিক মতবাদের ঊর্ধ্বে। এর সরাসরি সম্পর্ক রয়েছেদৈবিক শক্তির সঙ্গে। আমাদের ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতি, এই ভূমিরই সুসন্তান, ডঃ এ পি জেআব্দুল কালাম বলতেন –
“আমার কাছে আধ্যাত্মিকতা হলঈশ্বর এবং পরমাত্মার মধ্যে যোগসূত্র। আধ্যাত্মিক জীবনের সঙ্গে যুক্ত থাকলে আমরামাটিতে পা রেখে চলতে পারি এবং জীবনে সততা, প্রতিবেশিকে ভালোবাসা, সহানুভূতিশীলতারমতো গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে। এর মাধ্যমে আমাদের কর্মক্ষেত্রএকটি ইতিবাচকতাপূর্ণ পরিবেশে পরিণত হয়।”
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে বিগতকয়েক দশক ধরে বিবেকানন্দ কেন্দ্র একই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে। আজ বিবেকানন্দকেন্দ্রের ২০০টিরও বেশি শাখা রয়েছে। সারা দেশে ৮০০টিরও বেশি স্থানে এই কেন্দ্রেরপরিচালনায় নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্প চালু রয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গ্রামীণ ভারতএবং সংস্কৃতির মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। পাটনা থেকে শুরুকরে পোর্ট ব্লেয়ার। অরুণাচল প্রদেশ থেকে শুরু করে কাশ্মীরের অনন্তনাগ পর্যন্ত।রামেশ্বরম থেকে রাজকোট পর্যন্ত এই কেন্দ্র কাজ করে চলেছে। এই কেন্দ্রের মাধ্যমেদেশের দূর-দূরান্তের ২৮ হাজার ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে।
আমি বিশেষভাবে উত্তর-পূর্বভারতের রাজ্যগুলিতে বিবেকানন্দ কেন্দ্রের সাফল্যের কথা উল্লেখ করতে চাই। একনাথজিরসময়েই অরুণাচল প্রদেশে সাতটি আবাসিক বিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল। আজ উত্তর-পূর্ব ভারতে৫০টিরও বেশি অঞ্চলে বিবেকানন্দ কেন্দ্র নানা সামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্তরয়েছে। অসংখ্য ছাত্র, আইআইটি ছাত্র, ডাক্তারি এবং অন্যান্য পেশার মানুষ এইবিবেকানন্দ কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করেন। তাঁরা কোনরকম বেতন না নিয়েনিঃস্বার্থভাবে সমাজ সেবা করেন। সাধারণ মানুষের সামনে এই যুবক-যুবতীরাদৃষ্টান্তমূলক কাজ করেছেন।
বিবেকানন্দ কেন্দ্রের সঙ্গেযুক্ত থাকা এই সেবাব্রতী মানুষরা রাষ্ট্র নির্মাণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাপালন করছেন। আশা করি এই কেন্দ্র আগামী প্রজন্মের মানুষদের মধ্যেও অনেক নতুনবিবেকানন্দ গড়ে তুলবেন।
আজ যাঁরা রাষ্ট্র নির্মাণেরজন্য নিঃস্বার্থ সেবা করছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই আমার কাছে এক একজন বিবেকানন্দ।যাঁরা দলিত, পীড়িত, শোষিত, বঞ্চিতদের উন্নয়নের জন্য লড়াই করছেন তাঁরা প্রত্যেকেইআমার কাছে বিবেকানন্দ। যাঁরা নিজেদের কায়িক শক্তি, নিজেদের ভাবনাচিন্তা এবংসৃষ্টিশীলতা সমাজের হিতে প্রয়োগ করছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই আমার কাছে বিবেকানন্দ।
আপনারা সবাই যে মিশন নিয়েএগিয়ে চলেছেন, মানবতার জন্য, সমাজের জন্য, দেশের জন্য তপস্যা করছেন, তাঁদেরকে আমিশ্রদ্ধা জানাই।
বিবেকানন্দের জন্মদিনে, এই যুবদিবসে আমি আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। বাপুজিকে জানাই জয় শ্রীরাম।আর ওখানে পরমেশ্বরমজি এবং অন্যান্য শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিরা যাঁরা রয়েছেন সকলকে প্রণামজানিয়ে আমি আমার বাণীকে বিরাম দিচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, আপনারা আমাকে কন্যাকুমারীআসার নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, আসতে পারিনি বলে ক্ষমা করবেন। আমি তো ঘরের ছেলে।যেদিন সুযোগ পাব ছুটতে ছুটতে চলে আসব। ঐ মাটিতে কপাল ঠেকাব । আপনাদের মাঝে কিছুক্ষণ সময় কাটাব। এবার আপনাদের কাছে যেতে না পারলেও দূর থেকে এইবক্তব্য রাখছি। আপনাদের ওখানে এখন গরম আর দিল্লিতে বেশ শীত। এই দুইয়ের মধ্যে আমরানতুন শক্তি এবং উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে যাব। এই বিশ্বাস নিয়েই আপনাদের সবাইকে এই পবিত্রউৎসবে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ।