মাননীয়রাষ্ট্রপতি ম্যাকরঁ,
মাননীয়রাষ্ট্রপতিগণ এবং প্রধানমন্ত্রীগণ,
সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, সমবেতভদ্রমন্ডলী,
নমস্কার,
আমিআপনাদের সকলকে দিল্লীতে আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক সৌরসঙ্ঘ স্হাপন সম্মেলনে আন্তরিকস্বাগত জানাই।
আজকেরএই ঐতিহাসিকটির বীজ বপন করা হয়েছিল ২০১৫ সালে প্যারিসে আয়োজিত ‘ কনফারেন্স অফ পার্টিস ’ -এ। আজ সেই বীজ থেকে সবুজ অঙ্কুর বেরিয়ে এসেছে।
এই শিশুচারাটির নতুনসম্ভাবনার ক্ষেত্রে ফ্রান্স একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আন্তর্জাতিক সৌরসঙ্ঘের এই চারাগাছ আপনাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আর ঐকান্তিকতা ছাড়া রোপণ করাসম্ভব হতো না। সেজন্য আমি ফ্রান্স এবং আপনাদের সকলের কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞ। ১২১টিসম্ভাব্য দেশের মধ্যে ৬১টি ইতিমধ্যেই এই সঙ্ঘে যোগদান করেছে। ৩২টি দেশ পরিকাঠামোচুক্তি অনুমোদন করে দিয়েছে। কিন্তু এই সবকটি সহযোগী দেশ ছাড়া আমাদের সঙ্ঘেরসবচাইতে বড় সঙ্গী হলেন সূর্যদেবতা, তিনি বাইরের প্রকৃতিকে আলোক আর আমাদেরসংকল্পকে শক্তিপ্রদান করছেন।
বন্ধুগণ,
প্রাণের বিকাশ হওয়ার কোটিকোটি বছর আগে থেকেই সূর্য এই পৃথিবীকে আলোকিত এবং অনুপ্রাণিত করে আসছে। জাপান থেকেপেরু পর্যন্ত, গ্রিস হোক কিম্বা রোম, ইজিপ্ট, ইনকা আর আদি মায়া সভ্যতা সূর্যকেগুরুত্ব দিয়েছে।
কিন্তুভারতীয় দর্শনে যেভাবে হাজার হাজার বছর ধরে সূর্যকে মধ্যমণি করে রাখা হয়েছে-তাঅদ্বিতীয় কয়েক হাজার বছর আগে ভারতে রচিত বেদে সূর্যকে বিশ্বের আত্মা রূপে স্বীকৃতিদেওয়া হয়েছে। ভারতে সূর্যকে জীবনের পোষক মানা হয়। আজ যখন আমরা আবহাওয়া পরিবর্তনেরমতো সমস্যা দূরীকরণের পথ খুঁজছি তখন আমাদের প্রাচীন দর্শনের ভারসাম্য আর সমগ্রদৃষ্টিকোণকে ফিরে দেখতেই হবে।
বন্ধুগণ,
আমরাসবাই একসঙ্গে মিলে কী করতে পারি, তার উপর আমাদের ভবিষ্যত নির্ভর করছে। আমারমহাত্মা গান্ধীর বলা একটি বাক্য মনে পড়ছে , ‘ আমরা যা করি আর যা করার সামর্থ্য রয়েছে- এর মধ্যের পরিসরেইবিশ্বের অধিকাংশ সমস্যার সমাধান নিহিত রয়েছে। ’
আজএখানে সারা বিশ্বের রাষ্ট্রনেতাদের উপস্হিতি মানুষের জ্বালানি প্রয়োজনের স্হায়ীসমাধানের জন্য বিশ্ববাসীর আকৃতি অভিব্যক্তি স্বরূপ।
বন্ধুগণ,
ভারতে আমরা বিশ্বের সর্ববৃহ ৎ পুননবীকরণযোগ্যশক্তি ব্যবহারের কর্মসূচীর রূপায়নে হাত দিয়েছি। এক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য ২০২২সালের মধ্যে পুননবীকরণযোগ্য ১৭৫ গিগাওয়াট বিদ্যু ৎ উ ৎ পাদনকরতে, তার মধ্যে ১০০ গিগাওয়াট বিদ্যু ৎ সৌরশক্তি থেকে উ ৎ পাদিতহবে।
আমরা ইতিমধ্যেই ২০ গিগাওয়াট স্হাপিত সৌরশক্তির লক্ষ্যপূরণে সফলহয়েছি। ভারতে এখন পরম্পরাগত জ্বালানি থেকে উ ৎ পাদিতবিদ্যু ৎ থেকে বেশি বিদ্যু ৎ পুনর্নবীকরণযোগ্য উ ৎ সগুলি থেকে উ ৎ পন্ন হচ্ছে।
ভারতেঅটল জ্যোতি যোজনার উদ্দেশ্য হল, অপর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ক্ষেত্রগুলিতে সৌর শক্তি নির্ভরপথবাতি স্হাপন করা। তাছাড়া এর মাধ্যমে আমরা ৭ মিলিয়ন দরিদ্র স্কুল পড়ুয়াছেলেমেয়েদের ‘ পঠন-পাঠনে সৌর আলোক ’ -এ সামিল করেছি। তারা সৌরবিদ্যুতের আলোতে পড়াশুনাকরছে।
এই সৌরবিদ্যুতের সঙ্গে আমরা অন্যান্য প্রযুক্তিকে যুক্ত করে সুফলপেয়েছি। উদাহরণস্বরূপ, বিগত তিন বছরে সরকার দ্বারা বিতরিত ২৮ কোটি এলইডি বাল্বেরমাধ্যমে প্রায় চার গিগাওয়াট বিদ্যু ৎ সাশ্রয় সম্ভব হচ্ছে, সাধারণ মানুষের ২ বিলিয়নডলারেরও বেশি সাশ্রয় হয়েছে। শুধু তাই নয়, এর ফলে ৩০ মিলিয়ন টন কম কার্বন ডাইঅক্সাইড উ ৎ পন্ন হয়েছে।
বন্ধুগণ,
আমরা শুধু ভারতেই নয়, গোটাবিশ্বে সৌর বিপ্লব চাই। একটু আগেই আপনারা ভারতে প্রশিক্ষিত ‘ সোলার মামাস্ ’ -দেরগান ও বক্তব্য শুনলেন, তাঁদের ভিডিও দেখেছেন। ইতিমধ্যেই আপনারা তাঁদের সঙ্গেপরিচিত হয়েছে। তাদের সাফল্য আমাদের প্রেরণা জোগায়।
আমরাআনন্দিত যে ‘ আইএসএ কর্পাস ফান্ড ’ -এ অর্থপ্রদান ছাড়াও আপনারা আন্তর্জাতিক সৌর সঙ্ঘেরসচিবালয় স্হাপনের জন্য ৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করেছেন। আমি আনন্দের সঙ্গেঘোষণা করছি যে আমরা ‘ আই এস এ ’ সদস্যদের প্রত্যেক বছর জ্বালানি বিষয়ক ৫০০ ‘ ট্রেনিংস্লট ’ প্রদান করবো।
আমরাগোটা বিশ্বে ১৪৩ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে ১৩টি সৌর প্রকল্প গড়ে তুলেছি অথবাতুলছি। ভারত ১৫ টি অন্য উন্নয়নশীল দেশে ১.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে আরও ২৭টিপ্রকল্পের মাধ্যমে কাজ শুরু করবে।
আমরা ‘ প্রকল্প প্রস্তুতি ব্যবস্হা ’ গড়ে তুলেছি যা ‘ ব্যাঙ্কেবল প্রজেক্টস্ ডিজাইন ’ করার ক্ষেত্রে অংশীদার দেশগুলিকে ‘ কনসালটেন্সি সাপোর্ট ’ প্রদান করবে।
আজএখানে আনন্দের সঙ্গে ঘোষনা করছি যে ভারত সৌর প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ‘ গ্যাপস্ ’ নিরসনে ‘ সোলার টেকনোলজি মিশন ’ -ওশুরু করবে। এই মিশনের ‘ ফোকাস ’ হবে আন্তর্জাতিক, আর এটি আমাদের সরকারি, কারিগরী ওঅন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে সঙ্গে নিয়ে সৌর ক্ষেত্রে গবেষনা ও উন্নয়নপ্রচেষ্টাগুলির নেতৃত্ব দেবে।
বন্ধুগণ,
বাতাসেরমতোই পর্যাপ্ত সৌরশক্তি উ ৎ পাদন প্রক্রিয়ার উন্নয়ন ও প্রয়োগ আমাদের সমৃদ্ধিসুনিশ্চিত করার পাশাপাশি বিশ্বে ক্রমবর্ধমান কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ অবশ্যইহ্রাস করবে।
বন্ধুগণ,
আমাদেরকিছু ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে। তা হল- একদিকে যেসব দেশের সারা বছরই পর্যাপ্তসূর্যালোক থাকে কিন্তু প্রযুক্তি ও ব্যবস্হাপনার অভাবে সেই শক্তির ব্যবহার সম্ভবহয় না।
দ্বিতীয়তঃআবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে নানা দেশের অসংখ্য দ্বীপ এবং দ্বীপরাষ্ট্রগুলি সরাসরিবিপদের মুখে। তৃতীয়তঃ সৌরশক্তি শুধুই রাতে আলো জ্বালানো ছাড়াও যানবাহন, নির্মলরান্না, কৃষিতে সৌর পাম্পের মাধ্যমে জলসেচ এবং স্বাস্হ্য পরিষেবার ক্ষেত্রেব্যাপকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সৌরশক্তিরব্যবহারকে উ ৎ সাহ প্রদানের জন্য সুলভ প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নয়ন,অর্থের জোগান, মূল্য হ্রাস, গুদামকরণ, প্রযুক্তির উন্নয়ন, বিপুল পরিমানে উ ৎ পাদনআর উদ্ভাবনের অনুকূল বাস্তু ব্যবস্হা গড়ে তোলার অনেক প্রয়োজন রয়েছে।
বন্ধুগণ,
আমাদেরসকলকেই সামনের পথ নিয়ে ভাবতে হবে। আমার মনে যে দশটি ‘ অ্যাকশনপয়েন্ট ’ রয়েছে তা আজ আপনাদের বলতে চাই। সবার আগে, আমাদেরসুলভে উন্নত মানের সৌর প্রয়ুক্তির জোগান বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের ‘ এনার্জি মিক্স ’ -এ সৌরশক্তিরঅনুপাত বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের উদ্ভাবনকে উ ৎ সাহজোগাতে হবে যাতে বিভিন্ন প্রয়োজনের সুলভ সমাধান হতে পারে।
আমাদেরসৌর প্রকল্পগুলির জন্য ‘ কনসেশনালফাইনান্সিং ’ আর কম ঝুঁকির অর্থসাহায্য করতেহবে। ‘ রেগুলেটরি অ্যাসপেক্টস্ ’ এবং মানক সমূহের উন্নয়ন ঘটাতে হবে যা সৌর সমাধান গ্রহণ এবং উন্নয়নকে একটি নতুন গতিপ্রদান করবে। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ‘ ব্যাঙ্কেবল ’ সৌর প্রকল্পগুলির জন্য ‘ কনসালটেন্সিসাপোর্ট ’ -এর উন্নয়ন জরুরি।
আমাদেরপ্রচেষ্টাগুলিতে সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্বে জোর দেওয়া হোক। আমাদের একটি ব্যাপক ‘ উ ৎ কর্ষ কেন্দ্র ’ -এরনেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে যা স্হানীয় পরিস্হিতি এবং কারকগুলিকে মাথায় রাখতে পারে।আমাদের সৌরশক্তি নীতিকে উন্নয়নের সমগ্রতা দিয়ে বিচার করতে হবে, যাতে ‘ এসিডিজি ’ সমূহেরপ্রাপ্তিতে এর মাধ্যমে অধিক থেকে অধিকতর অবদান থাকে। আমাদের আন্তর্জাতিক সৌর সঙ্ঘসচিবালয়কে শক্তিশালী এবং পেশাদার হয়ে উঠতে হবে।
বন্ধুগণ,
আমারদৃঢ় বিশ্বাস যে আমরা আন্তর্জাতিক সৌর সঙ্ঘের মাধ্যমে এই সমস্ত ‘ অ্যাকশন পয়েন্ট ’- গুলিরউন্নতিতে গতি আনতে পারি।
বন্ধুগণ,
আজকেরএই মুহূর্ত আমাদের যাত্রার সূত্রপাত মাত্র। আমাদের এই সঙ্ঘ আমাদের জীবনকে আরও বেশিকরে সূর্যের আলোয় ভরিয়ে দিতে পারে। এই ‘ লেটআস মেক দ্য সান ব্রাইটার ’ আহ্বানকেও সার্থক করে তুলতে পারে। চিরকালই ‘ বসুধৈবকুটুম্বকম ’ -বা ‘ সমগ্রবিশ্বই একটি পরিবার ’ -এই মন্ত্রই আমাদের ভারতীয় দর্শনেরআত্মা।
আমরাযদি গোটা পৃথিবী, সমগ্র মানবতার ভাল চাই তাহলে আমার বিশ্বাস, আমাদের অপারগতা-রগন্ডীর বাইরে বেরিয়ে একটি পরিবারের মতো উদ্দেশ্যসমূহ আর প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে ঐক্যসংহতি আনতে পারবো।
বন্ধুগণ,
এটা সেই পথ যার মাধ্যমে আমরা প্রাচীন মুনিঋষিদের প্রার্থনা- ‘ তমসো মা জ্যোতিগর্ময় ’ -অর্থা ৎ ‘ অন্ধকারথেকে আলোর পথে নিয়ে চল ’ -রআকুতিকে বাস্তবায়িত করতে পারবো।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।