মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, এই সভার সকল সদস্যের জন্য এটি অত্যন্ত আনন্দ ও গর্বের সময়। আপনাকে এই পদে আসীন হতে দেখে এই সভা আনন্দিত। এই সভার সমস্ত পুরনো সদস্যরা আপনাকে খুব ভালোভাবেই চেনেন। এর আগে আপনি বিধায়ক রূপেও রাজস্থান বিধানসভায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে যুক্ত অনেকে আপনাকে তখন থেকেই চেনেন।
আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে, আজ অধ্যক্ষ রূপে আমরা এমন একজন ব্যক্তিত্বকে সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত করেছি, যিনি ছাত্রাবস্থা থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলনে ভারতীয় জনতা পার্টির ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। তারপর তিনি প্রায় ১৫ বছর জেলা, রাজ্য ও জাতীয় স্তরে যুব মোর্চা সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমি দীর্ঘকাল দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের সূত্রে তাঁর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আজ তো রাজস্থানের কোটা দেশের শিক্ষার কাশীধাম হয়ে উঠেছে। যাঁরা জীবনে পেশাকে অগ্রাধিকার দেন, তাঁরা এখন ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার জন্য কোটা-তে পাঠাতে চান। সেখানে থেকে লেখাপড়া করে ছেলেমেয়েরা জীবনে উন্নতি করছে। রাজস্থানের এই ছোট্ট শহরটিকে এভাবেই একটি ছোট্ট ভারতে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে যাঁর উদ্যোগ ও অবদান অনস্বীকার্য, তিনি হলেন শ্রী ওম বিড়লা মহোদয়।
সাধারণত, রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে মানুষের মনে যে ধারণা গড়ে ওঠে যে, তাঁরা ২৪ ঘন্টা রাজনীতি করেন, একে অপরের সঙ্গে কলহ করেন। কিন্তু এর পেছনে আরেকটি সত্য থাকে, যা অনেক সময় সবাই জানতে পারেন না। আজ দেশবাসী অনুভব করছেন যে, কোনও নেতা রাজনৈতিক জীবনে যতটা সমাজ সেবা করেন, তত বেশি সমাজে স্বীকৃতি পান। কট্টর রাজনীতি তথা হার্ডকোর পলিটিক্সের দিনগুলি এখন অতীত হতে চলেছে। ওম বিড়লজী সেই ব্যক্তিত্ব, যাঁর রাজনৈতিক জীবনে সমাজসেবাই অগ্রাধিকার পেয়েছে। সমাজ জীবনে যেখানেই তিনি মানুষকে অসহায় হতে দেখেছেন, সেখানেই তিনি সবার আগে পৌঁছে গেছেন। আমার আজও গুজরাটের প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের কথা মনে পড়ে। সেই সময় ওমজী দীর্ঘকাল তাঁর নবীন সঙ্গীদের নিয়ে সদলবলে কচ্ছে মানুষের সেবা করেছেন। স্থানীয় কোনও ব্যবস্থার তেমন কোনও সাহায্য না নিয়েই তিনি নিজের মতো করে দীর্ঘকাল সেবা করে গেছেন। কেদারনাথে বিপর্যয়ের সময় তিনি তাঁর দলবল নিয়ে উত্তরাখন্ডে ছুটে যান এবং বিপর্যয় মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। নিজের শহর কোটা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে শীতকালে গরিবদের মধ্যে কম্বল বিতরণের জন্য তিনি সদলবলে গ্রাম ও শহরের অলিগলিতে ঘুরে সম্পন্নদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কম্বল সংগ্রহ করেন। এভাবে গণঅংশীদারিত্বের নেতৃত্ব দিয়ে জনসেবার জন্য তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়। তিনি একটি ব্রত গ্রহণ করেছিলেন, যা এই সভার সমস্ত সাংসদদের প্রেরণা যোগাতে পারে। তিনি ব্রত নিয়েছিলেন যে, কোটায় কেউ খালি পেটে ঘুমাবে না। সেজন্য তিনি ‘প্রসাদম্’ নামক একটি প্রকল্প চালু করেছিলেন, যেটি এখনও সক্রিয়। সেই ‘প্রসাদম্’ প্রকল্পের মাধ্যমে গণঅংশীদারিত্বে নেতৃত্ব দিয়ে সম্পন্নদের ঘর থেকে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে গরিবদের খাদ্য বিতরণ অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তেমনই গরিব-দুঃখীদের বস্ত্র সংস্থানের জন্য তিনি ‘পরিধান’ প্রকল্প চালু করেছেন। এই প্রকল্পকে তিনি গণঅংশীদারিত্বের মাধ্যমে আন্দোলনে পরিণত করে শীতকালে শীতবস্ত্র এবং গ্রীষ্মে যাঁদের জুতো নেই তাঁদের জন্য জুতোর ব্যবস্থা করেন। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, কারও রক্তের প্রয়োজন হলে রক্তদান করা, এই সেবাধর্মই তাঁর রাজনীতির ভিত্তি। আজ আমরা এহেন সংবেদনশীল ব্যক্তিত্বকে এই সভার অধ্যক্ষ রূপে নির্বাচিত করেছি, যিনি আমাদের অনুশাসনের পাশাপাশি অনুপ্রেরণাও যোগাবেন। তাঁর মাধ্যমে এই সভা দেশকে সর্বোচ্চ পরিষেবা দিতে পারবে। তাঁর এই সামাজিক সংবেদনাপূর্ণ জীবন অনুঘটক রূপে সঠিক পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে এই সভায় পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
এই সভাতেও আমরা তাঁকে দেখেছি যে তিনি স্মিতহাস্য, মৃদুভাষী। সেজন্য সভায় বসে আমার কখনও কখনও ভয় করে, তাঁর এই চরিত্রগত নম্রতা ও বিবেকবান উপস্থিতিকে আমরা কোনোভাবে অপব্যবহার না করে ফেলি। আগে লোকসভার অধ্যক্ষকে বেশি কড়া হতে হ’ত, রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে এতটা কড়া না হলেও চলতো। কিন্তু আজকাল দেখছি, উল্টোটা প্রয়োজন। আমরা যদি বিগত অধিবেশনের কথা মনে করি, তা হলে প্রত্যেকেই বলবেন যে, আমাদের অধ্যক্ষ মহোদয়া সবসময়েই হাসতেন, খুশি মনে থাকতেন, কাউকে বকলেও তিনি বকার পর হেসে ফেলতেন। তিনি এই সভায় একটি নতুন পরম্পরা চালু করেছেন। আমি এই সভার পক্ষ থেকে, ট্রেজারি বেঞ্চের পক্ষ থেকে এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী পরিষদের পক্ষ থেকে অধ্যক্ষ মহোদয়কে আশ্বস্ত করছি যে, আপনার কাজ সহজ করে তোলার জন্য আমাদের যেরকম ভূমিকা পালন করা উচিৎ আমরা প্রত্যেকেই ১০০ শতাংশ সেরকম চেষ্টা করব। আর এই বেঞ্চের পক্ষ থেকেও যদি কোনও নিয়ম উল্লঙ্ঘণ করা হয়, ব্যবস্থা কোনোভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়, তা হলে কড়াভাবে আমাদের শাসনের অধিকার আপনার রয়েছে। আমরা একে স্বাগত জানাবো। কারণ, এই সভার গরিমা উন্নত করার দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেকেরই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, শুরুর তিন-চার বছর বেশ ভালোই যাবে কিন্তু নির্বাচন এগিয়ে এলে একটু সমস্যা হবে। কিন্তু এখন প্রত্যেক তিন-চার মাস পরপরই কোথাও না কোথাও নির্বাচন হয় বলে সংশ্লিষ্ট দলের সাংসদরা এখান থেকে কোনও বার্তা প্রদানের চেষ্টা করেন। এহেন পরিস্থিতিতে আপনাকেও কিছুটা চাপে থাকতে হবে। তবুও এই সভায় যাতে সাধারণ মানুষের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানের পথ নিয়ে ভালোভাবে সমস্ত বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয় এবং সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় – তা আপনাকে দেখতে হবে। আশা করি, সমস্ত সাংসদরা এক্ষেত্রে আপনার সঙ্গে সহযোগিতা করবেন – এই আশা নিয়ে আমার পক্ষ থেকে, এই সভার পক্ষ থেকে, এই ট্রেজারি বেঞ্চের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
ধন্যবাদ।