মঞ্চে উপস্থিত প্রফেসর জগদীশ মুখীজি, আসামের মুখ্যমন্ত্রী ভাই সর্বানন্দ সোনোয়ালজি, অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী প্রেমা খণ্ডুজি, আসামের মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ভাই হেমন্ত বিশ্বশর্মাজি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য ভাই রাজন গোহাঁইজি্ মঞ্চে উপস্থিত অন্যান্য সকল সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ এবং আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা।
আপনারা এত বিপুল সংখ্যায় আমাকে আশীর্বাদ দেওয়ার জন্য এসেছেন বলে আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাই। আজ উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিবস। আপনাদের সবাইকে দেশের দীর্ঘতম রোড-রেল ব্রিজের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
আমি এখন এই ব্রিজের ওপর দিয়েই আপনাদের মাঝে এসে পৌঁছেছি। মন আনন্দে ভরে গেছে।
বন্ধুগণ, আজ গোটা বিশ্ব ক্রিসমাস পালন করছে। আসাম সহ উত্তর-পূর্ব ভারত তথা সমগ্র দেশের নাগরিকদের ক্রিসমাসের শুভেচ্ছা জানাই। বন্ধুগণ, আমি অসমিয়া সমাজের জন্য সমর্পিত স্বর্গদেও সাঙলুঙ্গ সু-কা-ফা-কে প্রণাম জানাই। পাশাপাশি, বীরত্ব ও আত্মত্যাগের প্রতীক লাসিত বরফুকন, বীর শিলারাই, স্বর্গদেও সর্বানন্দ সিংহ, বীরাঙ্গনা হাঁতি সাধিনী, বোদৌসা, বীর রাঘব মোরান, মানিক রজা, হাঁতি জয়মতি, হাঁতি রাধিকা সহ সকলকে শ্রদ্ধা জানাই। অনেকেই স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে পরবর্তীকালে আসাম তথা দেশের নবনির্মাণে অংশগ্রহণ করেছেন। রাজনীতি থেকে শুরু করে সমাজ সেবা, জ্ঞানবিজ্ঞান, খেলাধূলা – প্রত্যেক ক্ষেত্রে আসাম তথা দেশকে গর্বিত করা প্রত্যেক ব্যক্তিত্বকে আমার কর্মাঞ্জলি সমর্পণ করছি।
আমি আসামের কোকিল কন্ঠী গায়িকা পদ্মশ্রী দীপালি বোস ঠাকুরজিকেও শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর প্রয়াণে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জেলায় তাঁর অসংখ্য অনুরাগী তাঁদের প্রিয় শিল্পীকে হারিয়েছেন।
বন্ধুগণ, আজ সুশাসনের জন্য সমর্পিতপ্রাণ দেশের মহানতম সুপুত্রদের অন্যতম আমাদের সকলের হৃদয়ের রাজা অটলবিহারী বাজপেয়ীজিরও জন্মদিন। অটলজির জন্মজয়ন্তীকে দেশ আজ সুশাসন দিবস রূপে পালন করছে। ভাই ও বোনেরা, সুশাসনের অর্থ হল জনগণের প্রকৃত সেবা, সাধারণ মানুষের জীবন উন্নত করার সংস্কার। আপন-পর, তুমি-আমি – এগুলির ওপরে উঠে যখন দেশ ও সমাজের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জীবনকে সহজ করার জন্য ব্যবস্থা এবং সম্পদ নির্মাণ করা হয়, তখন সুশাসন স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যায়। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’কে মাথায় রেখে দেশের ভারসাম্যযুক্ত উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিলে তবেই দেশ সর্বক্ষেত্রে স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। বন্ধুগণ, বিগত সাড়ে চার বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার আর এখন আসাম এবং অরুণাচল রাজ্য সরকার নিরন্তর এভাবে কাজ করে চলেছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আজকের এই পবিত্র দিনে সুশাসনের একটি বড় প্রতীক ঐতিহাসিক দেশের দীর্ঘতম বোগিবিল রেল-সড়ক সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমরা সকলে উপস্থিত হতে পেরেছি। ৩০ মিটার থেকেও অধিক উচ্চতায় নির্মিত এই সেতু আমাদের বাস্তুবিদ্যা এবং প্রযুক্তির সামর্থ্যেরও উদাহরণ। একসঙ্গে গাড়ির সারি এবং রেল যাতায়াতের ভার বহনের এই ক্ষমতা দেশের সামরিক শক্তিকেও অনেকগুণ সুদৃঢ় করবে।
ভাই ও বোনেরা, এটি নিছকই একটি সেতু নয়, এই অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনের জীবনরেখায় পরিণত হবে, আসাম এবং অরুণাচল প্রদেশের মধ্যে দূরত্বকে অনেক হ্রাস করবে। ইটানগর থেকে ডিব্রুগড়ের মধ্যে দূরত্ব রেলপথে ৭০০ কিলোমিটার থেকে হ্রাস পেয়ে এখন মাত্র ২০০ কিলোমিটারে পরিণত হয়েছে। এই দূরত্ব অতিক্রম করতে আগে যেখানে ২৪ ঘন্টা লাগতো, এখন তা ৫-৬ ঘন্টাতেই সম্ভব হবে। প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু আসামের তিনসুকিয়া এবং অরুণাচল প্রদেশের নাহর লাগুর মধ্যে সংযোগসাধনের মাধ্যমে উভয় রাজ্যের জনগণের জীবনকে সুগম করবে।
আমাকে বলা হয়েছে যে আগে ধেমাজি লখিমপুর থেকে অরুণাচলের অনেক জেলায় ব্রহ্মপুত্রের বুকে নৌ-পথে যাতায়াত করতে হত, অথবা কয়েকবার বাস কিংবা ট্রেন বদলে যেতে হত। ভাই ও বোনেরা, আজ যে ট্রেনটিকে সবুজ পতাকা দেখানো হয়েছে, এই ১৪ কোচের ট্রেনটি এই গোটা এলাকায় অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনতে চলেছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ব্রহ্মপুত্রের দুই পাড়ের মানুষ যে স্বপ্ন দেখে এসেছেন, আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। এখন আর দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা কিংবা বেঙ্গালুরু যেতে হলে গুয়াহাটি হয়ে যেতে হবে না। স্বাস্থ্য পরিষেবা, পড়াশোনা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কর্মসংস্থানের জন্য ডিব্রুগড় এখন উত্তর-পূর্ব ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
বন্ধুগণ, এখন নদীর উত্তর পাড়ের মানুষ কয়েক মিনিটে সেতু পেরিয়ে ডিব্রুগড়ে মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল, ডিব্রুগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসতে পারবেন। এই সাফল্যের জন্য আমি উত্তর-পূর্ব ভারত তথা দেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানাই।
এই সেতু নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত সকল বাস্তুকার, প্রযুক্তিবিদ ও শ্রমিক বন্ধুদের প্রশংসা করি, তাঁরা কঠিক পরিস্থিতির মোকাবিলা করে দিন-রাত পরিশ্রমের মাধ্যমে এই সাফল্য পেয়েছেন। সেজন্য তাঁদের শুভেচ্ছা। এটি আমার ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের সৌভাগ্য যে আমরা দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নে এমনই অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ আমাদের শাসনকালেই সম্পূর্ণ করতে পেরেছি।
গত বছর মে মাসে সাদিয়াতে ভুপেন হাজারিকা সেতু উদ্বোধনে এসেছিলাম। আর আজ উদ্বোধন করলাম বোগিলিল সেতু। ভাই ও বোনেরা, বিগত সাড়ে চার বছরে এটি ব্রহ্মপুত্রের ওপর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ করলাম। এর আগে বিগত ৬০-৭০ বছরে ব্রহ্মপুত্রের ওপর মোট তিনটি সেতু নির্মিত হয়েছিল। আর আমরা সাড়ে চার বছরেই তিনটি সেতু নির্মাণ করলাম, আরও পাঁচটির কাজ চলছে। এগুলি সম্পূর্ণ হলে ব্রহ্মপুত্রের উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ের সমস্ত অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা দৃঢ়তম হবে। শিল্পোদ্যোগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও নতুন অধ্যায় লেখা সম্ভব হবে। তখনই সত্যিকারের সুশাসন স্থাপিত হবে।
ভাই ও বোনেরা, হয়তো আজ এখানে তেমন কিছু মানুষ আছেন যাঁরা ১৬ বছর আগে যখন শ্রদ্ধেয় অটলজি এই অঞ্চল সফরে এসেছিলেন, তারপর থেকে এক প্রজন্ম পেরিয়ে গেছে। আপনারা দীর্ঘ প্রতীক্ষার মাধ্যমে ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিয়েছেন। দু’দশক আগে অটলজির উদ্যোগে আপনাদের এই দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু মাঝে অনেক বছর পেরিয়ে গেছে। ২০০৪ সালে সরকার পরিবর্তনের পর এই কাজ থেমে গিয়েছিল।
ভাই ও বোনেরা, আপনারা সকলেই সাক্ষী আছেন যে ২০১৪ পর্যন্ত এখানে কয়েকটি অসম্পূর্ণ স্তম্ভ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এতে কোনও সন্দেহ নেই যে অটলজি সুযোগ পেলে ২০০৭-০৮ সালের মধ্যেই এই সেতুগুলির উদ্বোধন হয়ে যেত। কিন্তু এতদিন যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তাদের অগ্রাধিকার ভিন্ন ছিল।
২০১৪ সালে আমরা সরকারে এসে নতুন অগ্রাধিকার স্থির করে প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজে গতি আনা হয়েছে। এভাবেই আজ আমরা প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে নির্মিত বোগিবিল সেতু উদ্বোধন করতে পেরেছি। অটলজির জন্মদিনে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে এটিই তাঁর প্রতি শ্রেষ্ঠ উপহার। আজ উত্তর-পূর্ব ভারতের জনগণের মুখের হাসি দেখে তাঁর আত্মা যেখানেই থাকুক না কেন, অত্যন্ত আনন্দিত হবে, শান্তি পাবে।
বন্ধুগণ, পূর্ববর্তী সরকারের পরিচয় ছিল নানা প্রকল্পকে থামিয়ে রাখা, ঝুলিয়ে রাখা। আর আমাদের সরকারের পরিচয় হল, পরিবহণের মাধ্যমে রূপান্তরণ। আমরা দায়িত্ব নিয়ে পূর্ববর্তী সরকারের আমলে শুরু হওয়া কিংবা ঝুলে থাকা এমনই প্রায় ১২ লক্ষ কোটি টাকার অসম্পূর্ণ পরিকাঠামো প্রকল্প খুঁজে বের করে কাজ শুরু করেছি। এভাবে, দেশে পরবর্তী প্রজন্মের পরিকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে দেশকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে চলেছি। দেশের কর্মসংস্কৃতিতে পরিবর্তন না এলে এই দ্রুতগতি এবং সময় নির্দিষ্ট সম্পাদন সম্ভব হত না।
গত বছর এমনই দীর্ঘকাল ঝুলে থাকা মিজোরামের দ্বিরাল জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং কয়েক মাস আগে সিকিমে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বিমানবন্দর উদ্বোধন করতে পেরেছি। এমনই আরও অনেক প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
বন্ধুগণ, আমরা নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার কর্মসংস্কৃতি চালু করেছি। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে সোনোয়ালজির নেতৃত্বে আসাম সরকারও এখন সেই সংস্কৃতি রপ্ত করে নিয়েছে। সেজন্য আমি তাঁকে এবং আসাম সরকারের পুরো টিমকে শুভেচ্ছা জানাই। ফলে, আসামেও দীর্ঘদিনের অসমাপ্ত এমন অনেক প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ হয়েছে কিংবা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এ রাজ্যে বিগত সাড়ে চার বছরে ৩ হাজার কোটি টাকারও অধিক অর্থ বিনিয়োগে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক নির্মিত হয়েছে এবং প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে এক ডজনেরও বেশি জাতীয় মহাসড়কের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। তাছাড়া, নতুন নতুন বিমানবন্দর টার্মিনাল, রেল লাইনে বৈদ্যুতিকীকরণ এবং প্রশস্ত করার কাজ, গুয়াহাটি-তিনসুকিয়া গ্যাস পাইপলাইন, গুয়াহাটিতে এইম্স হাসপাতাল নির্মাণ, ধেমাজিতে জাতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন – এমনই অনেক প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছে কিংবা দ্রুতগতিতে সম্পূর্ণ হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে। দ্রুতগতিতে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী আন্তর্জাতিক সাবমেরিন কেবল ইতিমধ্যেই ত্রিপুরায় প্রবেশ করেছে। খুব শীঘ্রই আসামেও প্রবেশ করবে। তখন ডিজিটাল পরিষেবা আরও মজবুত হবে।
বন্ধুগণ, আমি বিশ্বাস করি যে পূর্ব ভারতের উন্নতি হলে দেশেরও উন্নতি হবে। এই বিশ্বাস নিয়ে গোটা পূর্ব ভারতের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতেও পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এখন শুধু উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এর মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ সড়কপথ ‘ইন্টারন্যাশনাল কানেক্টিভিটি অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’ তথা পুবের দিকে তাকিয়ে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় আটশো কিলোমিটারের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির প্রত্যেক রাজধানীকে ব্রডগেজ রেললাইনের মাধ্যমে যুক্ত করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে। প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে ১৫টি নতুন রেললাইন নির্মিত হচ্ছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রায় এক হাজার কিলোমিটার রেললাইন ব্রডগেজে পরিবর্তনের কাজ চলছে। আগের সরকারের সময় উত্তর-পূর্ব ভারতে বছরে গড়ে ১০০ কিলোমিটার রেললাইন পাতা হত কিংবা প্রশস্ত করার কাজ হত। আমরা বিগত সাড়ে চার বছরে এই গড়, বছরে ৩৫০ কিলোমিটারে পৌঁছে দিতে পেরেছি। শুধু তাই নয়, ১৯টি জলপথ উন্নয়নের কাজ চলছে। আসামে ব্রহ্মপুত্র এবং বরাক নদীর মাধ্যমে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং মঙ্গলা বন্দর পর্যন্ত জলপথ পরিবহণের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে।
ভাই ও বোনেরা, পরিকাঠামো উন্নয়ন ছাড়াও দেশের সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যে প্রকল্পগুলি চালু করেছে, এ রাজ্যে আগামী সরকার সেগুলির অগ্রগতিতে গতি প্রদান করেছে। ফলস্বরূপ, ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা, যুবসম্প্রদায়ের কর্মসংস্থান, বয়স্কদের ওষুধ এবং প্রত্যেকের অভাব-অভিযোগ শোনা সুনিশ্চিত হচ্ছে। ‘উজ্জ্বলা’ যোজনার মাধ্যমে আসামের প্রায় ২৪ লক্ষ দরিদ্র বোনেদের রান্নাঘরে রান্নার গ্যাস পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সাড়ে চার বছর আগে আসামের ৪০ শতাংশ বাড়িতে রান্নার গ্যাস সংযোগ ছিল, এখন তা প্রায় ৮০ শতাংশে পরিণত হয়েছে। ‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযানের মাধ্যমে আসামে প্রায় ৩২ লক্ষ শৌচালয় নির্মিত হয়েছে। ফলে আসামে পরিচ্ছন্নতার মাত্রা বিগত সাড়ে চার বছরে ৩৮ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৯৮ শতাংশে পৌঁছে গেছে। সৌভাগ্য যোজনার মাধ্যমে বিগত এক বছরে আসামের ১২ লক্ষেরও বেশি পরিবারকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। ফলে, আসামে বৈদ্যুতিকীকরণের পরিধি প্রায় ৫০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৯০ শতাংশে পৌঁছে গেছে। আপনারা সেদিনের কথা ভাবুন, যখন চা বাগানে কর্মরত শ্রমিকদের কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল না। আমরা জন-ধন যোজনার মাধ্যমে এরকম ৭ লক্ষ চা-শ্রমিক ভাই-বোনেদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলিয়েছি। সমগ্র আসামে প্রায় দেড় কোটি দরিদ্র মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। আমাদের সরকারের এই সকল প্রকল্প আমাদের কর্মসংস্কৃতি এবং আপনাদের সকলের সহযোগিতা ও আশীর্বাদে সাফল্যের পথে এগিয়ে চলেছে।
বন্ধুগণ, গরিব, শোষিত ও বঞ্চিত মানুষদের সবচাইতে বড় শত্রু হল দুর্নীতি। দুর্নীতি মধ্যবিত্ত পরিবারেও সর্বাধিক অর্থনৈতিক বঞ্চনার কারণ হয়ে ওঠে। দুর্নীতি দেশের উন্নয়ন যাত্রার কোমর ভেঙে দেয়, দুর্নীতি দরিদ্র মানুষের অধিকার হরণ করে, জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলে। সেজন্য বিগত সাড়ে চার বছরে আমাদের সরকার একদিকে গরিব মানুষের অধিকার প্রদানের জন্য আর অন্যদিকে কালো টাকা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
ভাই ও বোনেরা, আমাদের সরকার একদিকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে ১ কোটি ২৫ লক্ষেরও বেশি দরিদ্র গৃহহীনের জন্য গৃহ নির্মাণ করে তাঁদের হস্তান্তর করেছে, তেমনই বেনামি সম্পত্তি আইনের মাধ্যমে দুর্নীতির মাধ্যমে ৫ হাজার কোটি টাকা মূল্যের বাংলো এবং দামি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে। একদিকে আমাদের সরকার নব যুবক-যুবতীদের মাত্র একদিনের মধ্যে নতুন কোম্পানি নথিভুক্তিকরণের সুবিধা দিচ্ছে, আর অন্যদিকে দুর্নীতির শিকড় খুঁজে সওয়া তিন লক্ষেরও বেশি সন্দিগ্ধ কোম্পানি বন্ধ করার কাজও আমরা করেছি। একদিকে আমাদের সরকার মহিলাদের, নব যুবক-যুবতীদের স্বরোজগারের জন্য ‘মুদ্রা’ যোজনার মাধ্যমে কোনরকম ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ছাড়াই ৭ লক্ষ কোটি টাকা ধার দিয়েছে, তেমনই অন্যদিকে পূর্ববর্তী সরকারের আমলে ব্যাঙ্কগুলির যে অনাদায়ী ঋণের পাহাড় তৈরি হয়েছিল, তা থেকে ৩ লক্ষ কোটি টাকা ফেরত এনেছে। একদিকে আমাদের সরকার ‘আয়ুষ্মান ভারত’ যোজনার মাধ্যমে গরিবদের বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা দিচ্ছে, আর অন্যদিকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে দুর্নীতি নিরসনে কঠিন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বন্ধুগণ, সাড়ে চার বছর আগে কেউ ভাবতে পারেনি যে হেলিকপ্টার কেলেঙ্কারিতে মূল ষড়যন্ত্রীকে একদিন ভারতের কারাগারে নিয়ে আসা যায়! কিন্তু আমরা তা করার ক্ষমতা রাখি, করে দেখিয়েছি। এমনই আমাদের কর্মসংস্কৃতি।
ভাই ও বোনেরা, যখন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আসে, দুর্নীতি দূর হয়, যথাযথ পরিষেবা পাওয়া যায়, জনগণের জীবন সহজ হয়, তার প্রভাব সমস্ত ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হতে শুরু করে। আজ আসাম সহ দেশের দূর-দূরান্তের গ্রাম, মফঃস্বল এবং ছোট ছোট শহরে বসবাসকারী সাধারণ পরিবারের যুবক-যুবতীরাও দেশের নাম উজ্জ্বল করছে। আসামের গর্ব হিমা দাসের মতো আমাদের অনেক কন্যা, অনেক যুবক আজ নতুন ভারতের নতুন আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
বন্ধুগণ, আমরা সবাই ব্যবস্থা পরিবর্তন, ব্যবহার পরিবর্তন এবং উন্নত পরিকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে দেশকে শক্তিশালী করে তোলার কাজ করছি। ভবিষ্যতে দেশের প্রয়োজন অনুযায়ী আজ যথেষ্ট সড়কপথ, বিদ্যালয়, কৃষিক্ষেত্রে যথেষ্ট সেচের ব্যবস্থা, শহর ও গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছনোর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এভাবেই আগামীদিনে এই সকল ব্যবস্থা সুচারুভাবে চালু করার মাধ্যমে ‘নতুন ভারত’ গড়ে উঠবে।
বন্ধুগণ, অটলজি যেমন একবিংশ শতাব্দীর গোড়াতেই দেশের ভিত্তি গড়ে তুলেছিলেন, আমরা সেই ভিত্তির ওপর একটি সুরম্য, শক্তিশালী নতুন ভারত গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।
ভাই ও বোনেরা, আসাম তথা ভারতের জনগণ আমাদেরকে যে সেবার সৌভাগ্য দিয়েছেন, তাকে আমাদের সরকার সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা ব্যক্তিগত সম্পর্কের খাতিরে নয়, দেশ ও সমাজের স্বার্থে উৎসর্গীকৃত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনাদের আশীর্বাদ আমরা সবাই মিলে আসাম তথা ভারতকে উন্নয়নের নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারব। আপনাদের সবাইকে আরেকবার বোগিবিল সেতুর মতো বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তির জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আপনারা এখানে এত বিপুল সংখ্যায় উপস্থিত হয়েছেন, আশীর্বাদ দিয়েছেন, সেজন্য আমি মাথা নত করে প্রণাম জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
দুই হাত ওপরে তুলে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে বলেন –
ভারত মাতা কি জয়!
ভারত মাতা কি জয়!
ভারত মাতা কি জয়!
ভারত মাতা কি জয়!