লক্ষ্ণৌ শহরে সমবেত তরুণ-তরুণীদের আমার নমস্কার। আপনাদের সবাইকে জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
আজকের এই দিন প্রত্যেক ভারতীয় যুবক-যুবতীর জন্যে বড় প্রেরণার দিন, নতুন সংকল্প গ্রহণের দিন। আজকের দিনে ভারত স্বামী বিবেকানন্দ রূপে এমন এক প্রাণশক্তি পেয়েছিল, যিনি আজও আমাদের দেশকে প্রাণপ্রাচুর্য্যে ভরপুর করে রেখেছেন। এক এমন প্রাণশক্তি, যা আমাদের নিরন্তর প্রেরণা যোগাচ্ছে, আমাদের ভবিষ্যতের পথ দেখাচ্ছে।
বন্ধুগণ, স্বামী বিবেকানন্দ ভারতের যুবসম্প্রদায়কে নিজেদের গৌরবময় অতীত আর বৈভবশালী ভবিষ্যতের মধ্যে একটি শক্তিশালী সেতুরূপে দেখতেন। স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন যে, সমস্ত শক্তি তোমাদের মধ্যেই রয়েছে, সেই শক্তিকে প্রকট করো, বিশ্বাস করতে শুরু করো যে তুমি সবকিছু করতে পারো। নিজের উপর এই বিশ্বাস, অসম্ভব মনে হওয়া সবকিছুকে সম্ভব করে তোলার এই বার্তা আজও দেশের যুবসম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, ভারতের আজকের নবীন প্রজন্ম এই বার্তা ভালভাবেই হৃদয়ঙ্গম করছেন, নিজেদের উপর আস্থা রেখে এগিয়ে চলেছেন।
আজকের ভারতে উদ্ভাবন, ইনকিউবেশন এবং স্টার্ট আপ-এর নতুন ধারার নেতৃত্ব কারা দিচ্ছেন? আপনারাই দিচ্ছেন, দেশের যুবসম্প্রদায় দিচ্ছে। আজ যখন ভারত স্টার্ট আপ বাস্তু ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিশ্বের সর্বাগ্রগণ্য তিনটি দেশের অন্যতম হয়ে উঠেছে, এর পেছনে কাদের শ্রম রয়েছে? আপনাদের, আপনাদের মতো দেশের অসংখ্য যুবক-যুবতীর শ্রম। আজ ভারত বিশ্বে ইউনিকর্নস উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি মূলধনসম্পন্ন তৃতীয় বৃহত্তম দেশ হয়ে উঠেছে। এর পেছনে কাদের শক্তি রয়েছে? আপনাদের, আপনাদের মতো দেশের অসংখ্য যুবক-যুবতীরপরিশ্রমরয়েছে।
বন্ধুগণ, ২০১৪ সালের আগে আমাদের দেশে বছরে গড়ে ৪ হাজার পেটেন্ট ছিল। এখন সেই সংখ্যা বেড়ে বছরে ১৫ হাজারের বেশি পেটেন্ট হচ্ছে, অর্থাৎ প্রায় চারগুণ। এর পেছনে কাদের পরিশ্রম রয়েছে? আপনাদের, আপনাদের মতো দেশের অসংখ্য যুবক-যুবতীর পরিশ্রম রয়েছে।
বন্ধুগণ, ২৬ হাজার নতুন স্টার্ট আপ খোলা বিশ্বের যে কোনও দেশের কাছে স্বপ্নের মতো বলে মনে হতে পারে। এই স্বপ্ন আজ ভারতে সত্যি হয়েছে। এর পেছনে ভারতেরনবীনপ্রজন্মেরশক্তি রয়েছে? তাঁদেরইস্বপ্নরয়েছে। আর এর থেকেও বড় কথা হ’ল, ভারতের নবীন বন্ধুরা তাঁদের স্বপ্নকে দেশের প্রয়োজনের সঙ্গে জুড়েছেন, দেশের আশা-আকাঙ্খার সঙ্গে জুড়েছেন। দেশ গঠনের দায়িত্ব আমার, আমাদেরই জন্য, আর আমাদেরকেই তা করতে হবে; আজ দেশের নবীন প্রজন্ম এই ভাবনায় পরিপূর্ণ।
বন্ধুগণ, আজ দেশের নবীন প্রজন্ম নতুন নতুন অ্যাপ্স তৈরি করছেন, যাতে নিজেদের জীবন সহজ হয় আর দেশবাসীরও সুবিধা হয়। আজ দেশের যুবসম্প্রদায় হ্যাকাথনের মাধ্যমে, প্রযুক্তির সফল প্রয়োগের মাধ্যমে, দেশের হাজার সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন, সহজ ও সুলভ সমাধান খুঁজছেন। আজ দেশের যুব সম্প্রদায় পরিবর্তিত কাজের প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন নতুন শিল্পোদ্যোগ গড়ে তুলছেন। নিজেরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন, ঝুঁকি নিচ্ছেন, সাহস করছেন, অন্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করছেন।
আজকের যুবসম্প্রদায় কোনও কাজে হাত দেওয়ার আগে এটা দেখছে না যে এই প্রকল্প কারা শুরু করেছে? তাঁরা নিজেরাই নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসছেন। আমি যদি স্বচ্ছ ভারত অভিযানের উদাহরণ দিই, আমাদের দেশের যুবক-যুবতীরাই তো এই অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রত্যেকের বাড়ির চারপাশে, বাড়িতে বাড়িতে, পাড়ায় পাড়ায়, গ্রামে ও শহরে, সমুদ্রতটে বর্জ্য নিষ্কাশনের কাজ, প্লাস্টিক বর্জ্য নিষ্কাশনের কাজে তো আমাদের যুবক-যুবতীরাই এগিয়ে আসছেন।
বন্ধুগণ, আজ দেশের যুবসম্প্রদায়ের সামর্থ্যে নতুন ভারত নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে। এক এমন নতুন ভারত, যেখানে ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’ও থাকবে আবার ‘ইজ অফ লিভিং’ –এর পথও সুগম হবে। এক এমন ভারত যে দেশে লালবাতি সংস্কৃতির কোনও স্থান নেই, যে দেশে সবাই সমান, যে দেশে প্রত্যেকে গুরুত্বপূর্ণ।
বন্ধুগণ, একবিংশ শতাব্দীর এই কালখণ্ড, একবিংশ শতাব্দীর এই দশক ভারতের জন্য অনেক সৌভাগ্য নিয়ে এসেছে। আমরা সৌভাগ্যবান যে আজ ভারতের নাগরিকদের অধিকাংশের বয়স ৩৫ বছরের কম। আমাদের এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে। সেজন্যে বিগত দিনগুলিতে আমাদের সরকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে, অনেক নীতি প্রণয়ন করেছে। যুবশক্তিকে প্রকৃত অর্থে রাষ্ট্রশক্তিতে রূপান্তরিত করতে আজ দেশে একটি ব্যাপক প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে। দক্ষতা উন্নয়ন থেকে শুরু করে মুদ্রা ঋণ – নানাভাবে সরকার যুবসম্প্রদায়কে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে। স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া থেকে শুরু করে স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া, ফিট ইন্ডিয়া অভিযান কিংবা খেলো ইন্ডিয়া অভিযান যুবসম্প্রদায়কে কেন্দ্রে রেখেই এগিয়ে চলেছে।
বন্ধুগণ, আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদানে যুব সম্প্রদায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণে জোর দিয়েছি। আপনারা হয়তো শুনেছেন যে সম্প্রতি ‘ডিআরডিও’-র গবেষণা সংশ্লিষ্ট পাঁচটি ‘নবীন বিজ্ঞানী গবেষনাগার’ উদ্বোধনের সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এই গবেষণাগারগুলিতে গবেষণা থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নেতৃত্বপ্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৩৫ বছরের কম বয়সী বৈজ্ঞানিকদের। আপনারা হয়তো আগে কখনও এমন শোনেননি যে এত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব৩৫বছরেরকমবয়সীবৈজ্ঞানিকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটাই আমাদের ভাবনা, এটাই আমাদের কাজ করার পদ্ধতি। আমরা এই প্রত্যেক ক্ষেত্রে এই ধরণের ফলিত প্রয়োগ ও পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়োজন অনুভব করছি, এবং সেই অনুসারে লাগাতর কাজ করে চলেছি।
বন্ধুগণ, যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে সমস্যাগুলিকেনতুনদৃষ্টিকোণথেকেসমাধানকরারএকটি অদ্ভুত ক্ষমতা থাকে। এই নবীন ভাবনাই আমাদের এই ধরণের সিদ্ধান্ত নিতে শেখায়, যেগুলি সম্পর্কে কখনও ভাবতে পারাই অসম্ভব বলে মনে হয়। নবীন ভাবনা আমাদের বলে যে, সমস্যার মোকাবিলা করো, সেগুলির সমাধান করো। এখন আমাদের দেশও এই মনোভাব নিয়েই এগিয়ে চলেছে। আজ জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করা হয়েছে, কয়েকশো বছর পুরনো রাম জন্মভূমি বিবাদ সমাপ্ত হয়েছে, তিন তালাকের বিরুদ্ধে আইন পাশ করা হয়েছে, নাগরিকত্ব সংশোধন আইন আজ একটি বাস্তব সত্য। আগে দেশে সন্ত্রাসবাসী হামলার পর সরকার নিষ্ক্রিয় থাকতো। আর আমাদের সময়ে আপনারা সার্জিকাল স্ট্রাইক দেখেছেন, বিমান হানাও দেখেছেন।
বন্ধুগণ, আমাদের সরকার যুবসম্প্রদায়ের সঙ্গে রয়েছে, যুব সাহস এবং যুব স্বপ্নের সঙ্গে রয়েছে। আপনাদের সাফল্য শক্তিশালী ভারত, সক্ষম ভারত, সমৃদ্ধ ভারতের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করবে। আজ এই উপলক্ষ্যে আমি আপনাদের সামনে একটি অনুরোধ রাখতে চাইছি। আপনাদের উপর আমার ভরসা রয়েছে বলেই এই অনুরোধ করছি। বিবেকানন্দ জয়ন্তীতে আপনারা একটি দায়িত্ব গ্রহণ করুন।
আপনারা জানেন যে ২০২২সালে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে। স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যে স্বাধীন ও সমৃদ্ধ ভারতের স্বপ্ন দেখে নিজেদের জীবন ও যৌবন দেশের জন্য আহুতি দিয়েছেন, আমি আপনাদের কাছে তাঁদের স্বপ্ন সাকার করার জন্যে আহ্বান জানিয়ে এই অনুরোধ রাখছি। আপনাদের মধ্যমে এই আন্দোলন আমি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। আপনারা দেখুন যেন আমরা সবাই ২০২২ সাল পর্যন্ত যথাসম্ভব স্থানীয় পণ্য কিনি। আপনারা স্থানীয় উৎপাদিত পণ্য কিনবেন, প্রতিবেশীদেরও উৎসাহিত করবেন। এরকম করলে আপনি নিজের অজান্তেই দেশের কোনও নবীন বন্ধুকে সাহায্য করবেন। আপনারা নিজেদের লক্ষ্যে সফল হোন, এই কামনা করেই আমি আজকের বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি।
আরেকবার জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষ্যে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানিয়ে ভারত মায়ের সুপুত্র স্বামী বিবেকানন্দের চরণে প্রণাম জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ।