মঞ্চে উপস্থিত ঝাড়খন্ডের রাজ্যপাল শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মু, এখানকার জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী রঘুবর দাস, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদে আমার সাথী শ্রী আর. কে সিংহ, শ্রী অশ্বিনী, শ্রী সুদর্শন ভগত, ঝাড়খন্ড সরকারের মন্ত্রী শ্রী অমরকুমার, আমাদের সাংসদ শ্রী প্রেম সিংহ, বিধায়ক ভাই ফুলচন্দ এবং ব্যাপক সংখ্যায় হাজির হওয়া আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা।
আমি সবার আগে ভগবান বীরসা মুণ্ডার বীরদের মাটিকে আমার প্রণাম জানাই।এই মাটি ত্যাগ ও বলিদানের মাটি। এ হ’ল শ্রী জয়পাল সিংহ –শ্রী মুন্ডার সংঘাতের জমিআবার এ হ’ল শ্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর স্বপ্নেরও মাটি। এখানকার খনিজ ভান্ডার কয়লা খনি সমূহ দেশের বিকাশের ইঞ্জিন হিসেবে শক্তি যোগানোর কাজ করে চলেছে।
আমাকে বলা হয়েছে, আপনারা দু-তিন ঘন্টা ধরে এখানে এসে বসে আছেন। এত ব্যাপক সংখ্যায় এত উষ্ণ-উদ্দীপনায় আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন। আশীর্বাদ প্রদান করেছেন। আপনাদের এই ভালবাসার জন্য, আপনাদের এই আশীর্বাদের জন্য আমি অনেক-অনেক কৃতজ্ঞ। যখন নির্বাচনের সময় ঝাড়খন্ডে এসেছিলাম, আমি ঝাড়খন্ডের ব্যাপারে বলেছিলাম,এর বিকাশের জন্য ডাবল ইঞ্জিনের প্রয়োজন। একটি রাঁচির জন্য ও অপরটি দিল্লির জন্য। আপনারা চার বছরে দেখে নিয়েছেন। দুই সরকারই একসঙ্গে মিলে একই লক্ষ্যে ‘সবার সঙ্গে সবার বিকাশ’ এই মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলেছে। সেই মত লক্ষ্য স্থির করে থাকে এবং লক্ষ্য পূরণের জন্য কোনও রকম চেষ্টাই বাকি রাখে না। তাতে বিকাশের কেমন ফলাফল পাওয়া যায়, সেটা ঝাড়খন্ডের মানুষ খুব ভালোভাবেই অনুভব করেছেন।
আমি বিশ্বাস করি, যখন সর্বসাধারণের জন্য আমরা কাজ করি, তার পথটা ঠিক কি ভুল,উদ্দেশ্য ভালো কি মন্দ, আমরা লোকজনের ভালোর জন্য কাজ করছি কি করছি না, গণতন্ত্রে এই সমস্ত কিছুর একটাই মানদন্ড হয়ে থাকে, আর সেটা হচ্ছে জনসমর্থন। আমি ঝাড়খন্ড সরকারের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী রঘুবর দাস ও তাঁর গোটা টিমকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। বিগত দিনে এখানকার স্থানীয় পরিচালন সংস্থাসমূহের নির্বাচন হয়ে গেল, পঞ্চায়েতগুলির নির্বাচনেও ঝাড়খন্ডের জনতা যেরকম ব্যাপকভাবে সমর্থন যুগিয়েছেন, তা ঝাড়খন্ড সরকার ও দিল্লির সরকারের কর্মকান্ডের প্রতি সাধারণ মানুষের কি ভাবনা তা-ই স্পষ্ট করেছে।
ভাই-বোনেরা, আমি যখন বিগত ২০১৪-র নির্বাচনের সময় এসেছিলাম,তখন বলেছিলাম,ঝাড়খন্ড আমাকে যে ভালবাসা দিয়েছে আমি সুদ সমেত তা ফেরৎ দেব|আরও উন্নয়নের মাধ্যমে তা ফেরৎ দেবো|আজকে আমরা যখন একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছি, এতে এটা তো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, দিল্লিতে ক্ষমতাসীন সরকার ঝাড়খন্ডের উন্নতিতে কতটা দায়বদ্ধ|দলিত হোন, পীড়িত হোন,শোষিত হোন,বঞ্চিত হোন,আমার আদিবাসী ভাই-বোনেরা, মহিলা হোন,যুবক হোন, প্রত্যেকের কল্যানের জন্য একের পর এক প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা কেবল সামনের দিকে এগিয়েই চলেছি।
আজ প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা, যা নাকি একটা রাজ্য সরকারের বাজেটের চেয়েও বড় অংকের টাকা, সেই ২৭হাজার কোটি টাকার ৫টি বড় প্রকল্পের ঝাড়খন্ডের মাটিতে শিলান্যাস হতে চলেছে। সিন্দ্রিতে সার কারখানা, পত্রাতুতে বিদ্যুত প্রকল্প, বাবা ভোলানাথের নগরী দেওঘরে বিমানবন্দর এবং এইমস, আর রাঁচিতে পাইপলাইনে গ্যাস সংযোগ পৌঁছানোর প্রকল্পের একসঙ্গে ২৭ হাজার কোটি টাকার কাজ ঝাড়খন্ডের মাটিতে শিলান্যাস হতে যাচ্ছে। প্রায় ৮০হাজার কোটি টাকার নির্ধারিত আরও কাজ হবে রাজ্যে। ৫০টিরও বেশি কাজ ইতিমধ্যেই চলছে। আপনি কল্পনা করতে পারেন ঝাড়খন্ড দেশের অন্য রাজ্যগুলির তুলনায় কতটা এগিয়ে যাবে!
আমি সবসময়ই বলে থাকি যে,ঝাড়খন্ডের জনতা হীরের ওপর বসে আছে। কালো হীরে, ব্ল্যাক ডায়মন্ড, আমাদের কয়লা যতই কালো রঙের হয়ে থাকুক না কেন, এর মধ্যে আলোর উজ্জ্বলতা ছড়ানোর শক্তি আছে,আলো সৃষ্টি করার শক্তি আছে। শক্তিতে ভরিয়ে তোলার ক্ষমতা আছেআর সেটাই মাথায় রেখে ১৮ হাজার কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে এখানকার পত্রাতুতে বিদ্যুৎ প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয়েছে। এই এখানকার কয়লা, এখানকার বিদ্যুৎ শক্তি ঝাড়খন্ডের আর্থিক শক্তি তো হয়ে উঠবেই, সেই সঙ্গে ঝাড়খন্ডের যুবকদের রোজগারও দেবে। আর বিকাশের এই নতুন দরজা খোলার কাজ পত্রাতুর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি থেকেই শুরু হচ্ছে। কয়লা খনি থেকে যাদের সরে যেতে হয়েছে, তাদের পরিবারের সদস্যরা যেন রোজগার পান, সেই পরিজনদের কথাও যেন চিন্তা করা হয়।
আমি আনন্দিত যে, আজ কয়েকজন তরুণকেও আমি রোজগারের কাগজ হাতে তুলে দেওয়ার সুযোগ পেলাম। আগামী দিনে হাজার হাজার তরুণের জন্য এর মাধ্যমে রোজগারের সুযোগ হবে।
আমাদের স্বপ্ন ছিল, ভারতের প্রত্যেক গ্রামে বিদ্যুতের আলো পৌঁছানোর। ২০১৪’তে আমি যখন দায়িত্ব নিলাম এই দেশের ১৮ হাজার গ্রাম এমন ছিল যে, শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে গিয়েও সেখানকার জনজীবন অন্ধকার থেকে বেরোতে পারেনি। বিদ্যুতের আলো চোখে পর্যন্ত দেখেনি। বিদ্যুতের খুঁটি দেখেনি। বিদ্যুতের তার পৌঁছায়নি। বিদ্যুতের আলোর বাল্ব দেখেনি। সেই কয়েক হাজার গ্রামে বিদ্যুতের আলো পৌঁছানোর কাজটা আমরা শপথ হিসেবে নিলাম। এই জায়গাগুলি দুর্গম ছিল, উপেক্ষিত ছিল। ভোটব্যাংকের রাজনীতিতে ডুবে থাকা লোকজন তো উপেক্ষিত মানুষজনকে পরোয়াও করে না। তারা তো শুধু ভোটব্যাংকেরই চিন্তা করতে অভ্যস্ত। আমরা তো ‘সবার সঙ্গে সবার বিকাশে’র মন্ত্র নিয়ে চলার লোক। আর এজন্যই ওই ১৮ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছাক, তা চাইছিলাম। সেটা যত দুর্গম জায়গায় হোক না কেন, পাহাড়ের চুড়ায় হোক, গভীর জঙ্গলে হোক,গাড়ি পৌঁছানোর জন্য যতই হাজার-লক্ষ টাকাই না হয় লেগে যাক, কিন্তু দেশের প্রত্যেক গ্রামে একবার তো বিদ্যুৎ পৌঁছে যাক।
আর আমি খুশি যে, নির্ধারিত সময়সীমার আগেই ১৮ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাচ্ছে। এদেশে এর আগে কারও কোনও রকম ভাবনার অবকাশই ছিল না যে, গিয়ে জিজ্ঞেস করবে, স্বাধীনতার ৫০-৬০ বছর পরেও কতগুলো গ্রাম আছে, যেগুলিতে বিদ্যুতের আলো পৌঁছায়নি! কিন্তু আমরা যখন একবার ঠিক করেই নিয়েছি, তো আজ লোকজন গ্রামে গ্রামে গিয়ে যাচাই করে দেখছেন,মোদী ঠিক বলছেন, কি ভুল!আমি তো একে ভালই মনে করি, কেন না, যে ১৮হাজার গ্রামে নজর ঘুরিয়ে দেখার অবকাশ কারও ছিল না, আজ সাধারণ মানুষকে বলার জন্য হলেও তো, তাদের সেই গ্রামের ধুলো গায়ে মাখতে যেতে হচ্ছে। এর চেয়ে খুশির কারণআর কি হতে পারে?আর এতে সরকারী বাবুরাও সতর্ক থাকেন,তাঁদেরও মনে হয়, বলা যখন হয়েছে,সম্পূর্ণ করে তো দেখাতেই হবে। আর সেই কারণেই কাজ হয়ে চলেছে। চাপ তৈরী হচ্ছে। যখন ঘোষণা করে কোনও কাজ শুরু হয় তখন তো চাপ থাকেই। যখন আমরা ১৮ হাজার গ্রামের কথা বলছিলাম, তখন কিছু লোক দেশকে বিভ্রান্ত করার জন্য নানা কথা বলছিলেন। কিন্তু যখন খুঁটি বসে গেল,তারও লাগানো হয়ে গেল,৫টা-২৫টা ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেও গেল,বলুন না, এটা কি কাজের কাজ কিছু হলো? তাদের এই প্রশ্নটাও কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
এমন প্রশ্নকারীদের এটা জানা থাকা জরুরি যে, স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও এই দেশের ২০ শতাংশেরও বেশি ঘরে এমন কেন?প্রায় ৪ কোটি ঘরের অবস্থা কেন এমন, যেখানে বিদ্যুতের তার পৌঁছায়নি, বিদ্যুতের আলোর বাল্ব লাগানো হয়নি। এই পরিবারগুলিও কখনো কেন আলোর মুখ দেখেনি!কিন্তু কোন ঘরে বিদ্যুতের আলো ছিল, মোদী এসে কেটে দিয়েছেন, এমনটা তো নয়! এটা সেই লোকজনের পাপ ছিল, যাদের জন্য এই মানুষদের ৬০ বছর ধরে অন্ধকারে জীবনযাপন করতে হয়েছে। আমরা তো বরং দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছি। আর সেই মতো, আগামী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৮ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কাজ সম্পূর্ণ করেছি। সৌভাগ্য যোজনায় চার কোটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে তবেই শ্বাস ফেলবো। আমরা এই শপথই গ্রহণ করেছি।
যে লোকেরা সকাল-সন্ধে ধনীদের মনে না করে ঘুমোতে যেতে পারেন না,যাদের গরিব ভক্তি দেখানোর জন্য ধনীদের গালি-গালাজের সৌখিনতা আছে। এটাই যেন এক ফ্যাশন। তাঁরা দিন-রাত খালি বলতে থাকেন,মোদী ধনীদের জন্য কাজ করেন। কিন্তু যে ১৮ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছালো সেখানে কোন ধনী লোকটা থাকেন? আমি শুধু এরকম লোকদের কাছে এই প্রশ্নটাই করতে চাই। যে চার কোটি ঘরে আজও অন্ধকার রয়েছে, যেখানে মোদী দিন-রাত বিদ্যুৎ পৌঁছানোর জন্য কাজ করে চলেছেন, সেই চার কোটি ঘরে কোন ধনী মা-বাবা অথবা ছেলে থাকে? যারা কর্মজীবী মানুষের দুঃখ-কষ্ট বুঝতে পারে না, সেই সমস্ত শুধু সুনামের কাঙ্গালদের কাছে আমি এটাই জানতে চাইব।
আর এজন্য ভাই ও বোনেরা আমি বলতে চাই,এই সমাজের শেষ প্রান্তীয় মানুষটি, তা সে দলিত হোন, পীড়িত হোন,শোষিত হোন, বঞ্চিত হোন তাকে আমরা বিকাশের এই অভিযাত্রায় সামিল করতে চাই। ঝাড়খন্ডেও এই চার কোটির মধ্যে ৩২ লক্ষ পরিবার রয়েছে। আর আমি খুশি যে,মুখ্যমন্ত্রী মশাইও ভারত সরকারের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৩২ লক্ষ ঘরেও বিদ্যুৎ পৌঁছানোর শপথ নেন এবং তিনি সফল হয়েই ছাড়বেন। এটাই আমার বিশ্বাস।
ভাই ও বোনেরা, আজ আমি সিন্দ্রিতে সার কারখানা ফের শুরু করার সুযোগ পাচ্ছি। প্রায় ১৬ বছর ধরে কারখানাটি বন্ধ ছিল। কিন্তু এই কারখানা ভারতীয় জনসংঘের প্রতিষ্ঠানে যখন ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী ছিলেন, সেই সময়কার। তিনিই সিন্দ্রিতে এই ইউরিয়া সার উৎপাদন কারখানার শিলান্যাস করেছিলেন। পরে সেটি বন্ধ হয় যায়। আর আমি ২০১৪-র নির্বাচনের সময় আপনাদের বলেছিলাম যে, ঝাড়খন্ডের সিন্দ্রিতে এই কারখানা আমরা ফের চালু করব।
ভাই ও বোনেরা, সময়ের সঙ্গে প্রযুক্তিরও পরিবর্তন হওয়া উচিৎ। সেই সূত্রেই আমরা রান্নার গ্যাসের ভিত্তিতে কাজ করার লক্ষ্যে উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী কিছুটা সময় বাদেই এই কারখানাও চালু হয়ে যাবে। পূর্ব উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরেও এমন একটি কারখানা চালু হয়ে যাবে।
ভাই ও বোনেরা, সিন্দ্রি ও ধানবাদ একদিক থেকে অ্যাঙ্কর সিটির ধ্রুবকের মত ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে। উন্নতির ব্যাপক সম্ভাবনা এর মধ্যে নিহিত আছে। ভাই-বোনেরা এই ইউরিয়ার কারখানা যেখানে সহজে গ্যাস পাওয়া যাবে। বিহারের বারৌনি হোক, পূর্ব উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর হোক কিংবা ঝাড়খন্ডের সিন্দ্রি, ইউরিয়া উৎপাদনের এই তিন কারখানায় কাজ শুরু হয়ে গেলে পূর্ব ভারতে অনেক দূরের ঠিকানা থেকে যে পরিবহণ খরচ দিয়ে ইউরিয়া সার আনাতে হতো, সেই খরচটা কম হয়ে যাবে। এখনকার তরুণদের কাজের ব্যবস্থা হবে। আর ইউরিয়া সহজলভ্য হওয়ায় পূর্ব ভারতে যে দ্বিতীয় কৃষি বিপ্লবের প্রস্তুতি চলছে, তাতেও বিশাল সুবিধে পাওয়া যাবে। আমরা তো এই কাজটাকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
আমরা নিমের প্রলেপযুক্ত ইউরিয়া সারের ব্যাপারে কাজ শুরু করেছি। আগে কৃষকদের নামে ছাড়ের সুবিধে দেওয়া হ’ত। ইউরিয়া ক্ষেতে পৌঁছাত না। ধনীদের কারখানায় পৌঁছে যেত। আর যারা ধনীদের স্বার্থে ৭০ বছর ধরে সরকার চালিয়েছে, তারা কখনো ভাবেইনি, ইউরিয়া চুরি হয়ে রাসায়নিক সারের কারখানায় চলে যেত। সরকারের কোষাগার থেকে হাজার কোটি টাকা ছাড়ের ভর্তুকি চলে যাচ্ছে, আর এই ইউরিয়া আটকানোর পথ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা এসে ১০০শতাংশ ইউরিয়ার নিম প্রলেপের ব্যবস্থা করেছি। নিম ফলের যে তেল হয়ে থাকে তার প্রলেপ দিয়ে দিলে ইউরিয়া চুরি হতে পারে না। ইউরিয়া কোন কারখানায় আর কাজে লাগানো যাবে না। ইউরিয়া একদমই শুধু কৃষির কাজে আসবে। আর এভাবেই চুরি বন্ধ হয়ে গেল।
ধনীদের জন্য বাঁচা-মরার সেই সমস্ত লোকজন এখন এই চুরি বন্ধ হয়ে যাওয়াতে বিপদে পড়েছে। কিন্তু আমার কৃষককে নিজের অধিকারের ইউরিয়া সারের জন্য এখন তো আর লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। কালোবাজারিতে আর ইউরিয়া কিনতে হয় না। ইউরিয়া পাওয়ার জন্য তখন পুলিশের লাঠি খেতে হ’ত, এখন তাঁরা এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। আজ দু’বছর হয়ে গেছে, ভারতে ইউরিয়া নেই। এমন কথা শোনা যায়নি। কেন না আমরা চুরি বন্ধ করে দিয়েছি।
ভাই ও বোনেরা, আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা মানুষ। বেইমানির বিরুদ্ধে লড়াই করা মানুষ। আর সেই লক্ষ্যেই একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। আজ আমি রাঁচির ঘরে-ঘরে পাইপলাইনে গ্যাস সংযোগের প্রকল্প শিলান্যাসের সুযোগ পাচ্ছি। একবিংশ শতাব্দীর পরিকাঠামো হচ্ছে গ্যাস গ্রীডের, অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের, জলের গ্রীডের, বিদ্যুতের গ্রীডের, সমস্ত রকমের আধুনিক ব্যবস্থা যেখানে সহজলভ্য। কি কারণে আমার ঝাড়খন্ড পিছিয়ে থাকবে!এই জন্যই ভারতের দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলা শহরগুলির সমানতালে রাঁচিও প্রতিযোগিতা চালিয়ে যেতে শুরু করবে। এই স্বপ্ন দেখেই আমরা গ্যাস গ্রীডের কাজ শুরু করেছি। এর ফলে ঘরে-ঘরে গ্যাস পৌঁছবে। পরে যা নাকি উত্তরপ্রদেশ,বিহার,পশ্চিমবঙ্গ,ওড়িশা এবং আসামের প্রায় সত্তরটি জেলায় ঘরে-ঘরে পাইপলাইনে গ্যাস পৌঁছে যাবে।
আপনারা ভাবতে পারেন,ধোঁয়া বিহীন রান্নাঘর, যা আমাদের স্বপ্ন ছিল। এই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে আমরা উজ্জ্বলা যোজনা শুরু করলাম। এখন দ্বিতীয় পদক্ষেপ হচ্ছে, ঘরে-ঘরে পাইপলাইনে গ্যাস পৌঁছে দেওয়া। তৃতীয় আরেকটি বিষয়েও কাজ চলছে, আর তা হচ্ছে, পরিচ্ছন্ন রান্নার জন্য সৌরশক্তির চুল্লি, যা নাকি গরিব মানুষ সূর্যের শক্তিতে খাবার রান্না করে অন্য শক্তি খরচ হওয়া থেকে মুক্তি দেবে। সেই লক্ষ্যে রীতিমত সংস্কারমূলক কাজকর্ম চলছে।
আজ আমার দেওঘরে এইমস নির্মান কাজের শিলান্যাস করারও সুযোগ হয়েছিল। গোটা পূর্ব ভারতের বহুল সংখ্যায় রোগীকে চিকিৎসার জন্য দিল্লির এইমস-এ আসতে হয়। গরিবের কাছে পয়সা থাকে না। সমস্যা হয়। আমরা পূর্ব ভারতে এইম্স-এরসম্প্রসারণ ঘটিয়ে দেশের গরিব থেকে গরিবতর মানুষের জন্য সর্বোচ্চ মানের সুবিধে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি। দেওঘরে আজ সেই পথেই এইমস চালু হচ্ছে, শিলান্যাস হচ্ছে। একইসঙ্গে দেওঘর এক তীর্থস্থলও বটে। বাবা ভোলানাথের পবিত্র মাটি। শক্তিপীঠও বটে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এখানে আসতে চান। পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আর এজন্যই বিমান পথে যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা কাজ করে চলেছি।
পর্যটন মন্ত্রকও এই কাজটা করে চলেছে। আর আমাদের স্বপ্ন হচ্ছে, হাওয়াই চপ্পল পরা মানুষও উড়োজাহাজে করে যেন যেতে পারে। আর এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন,গতবছর রেলওয়ের এসি কামরায় সফরকারীদের চেয়ে উড়োজাহাজে সফরকারীদের সংখ্যা বেশি ছিল। এটাই বলে দিচ্ছে, দেশে কিভাবে সাধারণ মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসছে।
ভাই ও বোনেরা, বিকাশের অনেক প্রকল্প নিয়ে আজ আমরা এগিয়ে চলেছি। এতে ২০২২-এর মধ্যে গরিবদের ঘর দেওয়ার স্বপ্নও আছে। আর ঘরও হবে, শৌচালয়ও হবে,পানীয় জলও হবে, বিদ্যুৎ-ও হবে এবং শিশুদের জন্য বাড়ির কাছাকাছি পড়াশোনার সুবিধেও হবে এমন সর্বসুবিধের আবাসনের প্রকল্প রূপায়নের কাজ খুব দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ২০২২ স্বাধীনতার ৭৫ বছর হবে, দেশের কেউ আশ্রয়হীন-আবাসহীন হবেন না, এমন স্বপ্ন নিয়েই আমরা চলেছি।
ভাই ও বোনেরা, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, চলুন আমরা দেশের অগ্রগতির অংশীদার হই। দেশ আজ সততার পথে পা বাড়িয়েছে। ভারতের সাধারণ মানুষ সততায় বাঁচেন,সততার জন্য লড়াই করছেন। আমাদের এই সরকার সৎ জীবনযাপনকারী, সততার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া সাধারণ মানুষের সঙ্গেই দাঁড়িয়ে আছে। এজন্যই ভাই ও বোনেরা, আপনাদের স্বপ্ন পূরণের এক বিশেষ দায়িত্ব নিয়েই আমরা সামনে এগিয়ে চলেছি। এত ব্যাপক সংখ্যায় এসে আপনারা আশীর্বাদ দিয়েছেন,এত বড় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আজ ঝাড়খন্ড এক নতুন উচ্চতায়, এক নতুন ঝাড়খন্ডের দিকে এগিয়ে যাবে, এই বিশ্বাসের সঙ্গে আপনাদের সবাইকে অনেক-অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি|