শ্রদ্ধেয় শ্রী সিদ্ধলিঙ্গেশ্বর স্বামীজি, কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পাজি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহকর্মী সদানন্দ গৌড়, শ্রী প্রহ্লাদ যোশি, , কর্ণাটক সরকারের মন্ত্রীগণ, শ্রদ্ধেয় সাধুসমাজ, ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রমহোদয়গণ, এখানে উপস্থিত সবাইকে নমস্কার। তুমকুরুতে ডাঃ শিবকুমার স্বামীজীর ভূমি সিদ্ধগঙ্গা মঠে এসে আমি খুব আনন্দিত। সবার আগে, আপনাদের সবার জন্য নববর্ষের শুভেচ্ছা।
আপনাদের ২০২০ সালের শুভেচ্ছা জানাই!
আমার সৌভাগ্য যে, আপনাদের সবার মাঝে ২০২০ সালটি এই পবিত্র ভূখণ্ড তুমকুরুর মাটিতে শুরু করছি। আমি আশা করি, সিদ্ধগঙ্গা মঠের এই পবিত্র শক্তি সকল দেশবাসীর জীবনকে সজীব করে তুলবে।
বন্ধুরা, আমি আজ বহু বছর পরে এখানে এসে এক আশ্চর্য শূণ্যতা অনুভব করছি। আমরা সকলেই পূজ্য স্বামী শ্রী শ্রী শিবকুমারজির শারীরিক অনুপস্থিতি অনুভব করি। তাঁকে দেখলেই জীবন কেমন প্রাণশক্তিতে ভরে উঠতো সে অভিজ্ঞতা আমার আছে। তাঁর প্রেরণাদায়ক ব্যক্তিত্ব থেকে এই পবিত্র স্থানটি অনেক দশক ধরে সমাজকে দিক-নির্দেশ করে আসছে। বিশেষ করে, একটি শিক্ষিত এবং সমান সুযোগের সমাজ গঠনের গঙ্গা এখান থেকে নিরন্তর প্রবাহিত হয়েছে। তাঁর জীবদ্দশায়, স্বামীজি তাঁর জীবনে যত মানুষকে প্রভাবিত করেছিলেন, তা খুব কমই দেখা যায়।
আমার সৌভাগ্য যে, আমি শ্রী শ্রী শিবকুমারজির স্মরণে নির্মিত যাদুঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সুযোগ পেয়েছি। এই যাদুঘরটি কেবল মানুষকেই অনুপ্রাণিত করবে না, এটি সমাজ ও জাতীয় স্তরে আমাদের পথপ্রদর্শনের কাজ করবে। আমি আবার পূজনীয় স্বামীজীকে স্মরণ করে তাঁর চরণে প্রণাম জানাই।
বন্ধুরা, আমি এখানে এমন এক সময় এসেছি যখন আর একজন বড় সাধু কর্ণাটকের মাটির মায়া ত্যাগ করে তিরোধানে গেছেন। পেজওয়ার মঠের প্রধান বিশ্বেশ তীর্থ স্বামীর মৃত্যুতে ভারতীয় সমাজে একটা শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক জীবনের স্তম্ভগুলি আমাদের কাছ থেকে চলে গেলে একটি বড় শূণ্যতা তৈরি হয়। শারীরিক জীবনের এই গতি আমরা থামাতে পারি না, তবে আমরা অবশ্যই এই সাধুদের দেখানো পথটিকে শক্তিশালী করতে পারি, মানবতার সেবা এবং মা ভারতীর সেবায় নিজেদের উত্সর্গ করতে পারি।
বন্ধুরা, এটিও গুরুত্বপূর্ণ কারণ ভারত একুশ শতকের তৃতীয় দশকে নতুন শক্তি এবং নতুন উত্সাহ নিয়ে প্রবেশ করেছে। আপনি মনে রাখবেন গত দশকটি কেমন পরিস্থিতিতে শুরু হয়েছিল। তবে একবিংশ শতাব্দীর এই তৃতীয় দশকটি প্রত্যাশা, আকাঙ্ক্ষার শক্ত ভিত্তি নিয়ে শুরু হয়েছে।
এই আকাঙ্ক্ষা নতুন ভারতের জন্য। এই আকাঙ্ক্ষা তরুণ স্বপ্নের। এটিই দেশের ভগিনী-কন্যাদের আকাঙ্ক্ষা। এই আকাঙ্ক্ষাটি দেশের দরিদ্র, নিম্নবিত্ত, বঞ্চিত, দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া, আদিবাসীদের জন্য। এই আকাঙ্ক্ষা কী? ভারতকে সমৃদ্ধশালী, সক্ষম ও সর্বহিতকারী বিশ্বশক্তি হিসাবে দেখাতে হবে। বিশ্বের মানচিত্রে ভারতকে তার প্রকৃত মর্যাদার স্থানে প্রতিস্থাপিত করতে হবে।
বন্ধুরা, এই আকাঙ্ক্ষা পূরণে, দেশের মানুষ একটি জাতি হিসাবে বড় পরিবর্তনগুলিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। এখন তা প্রত্যেক ভারতীয়ের মানসিকতায় পরিণত হয়েছে যে আমাদের উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সমস্যাগুলি সমাধান করতে হবে। সমাজ থেকে উদ্ভূত এই বার্তা আমাদের সরকারকে অনুপ্রাণিত করে, উৎসাহ দেয়। এই কারণেই ২০১৪ সাল থেকে দেশটি সাধারণ ভারতীয় জীবনে অর্থবহ পরিবর্তন আনতে নজিরবিহীন প্রচেষ্টা করেছে।
গতবছর আমাদের সেই প্রচেষ্টাগুলিতে একটি সমাজ হিসাবে, একটি জাতি হিসাবে শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে। আজ দেশটি উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্ম মুক্ত হয়েছে। দেশের দরিদ্র বোনদের ধোয়ামুক্ত করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়েছে। দেশের প্রতিটি কৃষক পরিবারকে প্রত্যক্ষ সাহায্য, কৃষক শ্রমিক, শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সামাজিক সুরক্ষা এবং পেনশন ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত করার সংকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের নীতি ও অনুশীলনের পরিবর্তনের সংকল্পও বাস্তবায়িত হচ্ছে। জম্মু ও কাশ্মীরের জীবন থেকে সন্ত্রাস ও অনিশ্চয়তা দূর করতে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করায় জম্মু ও কাশ্মীর ও লাদাখের জনগণের নেতৃত্বে উন্নয়নের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। এবং এসবের মাঝে, ভগবান রামের জন্মভূমিতে একটি সুন্দর মন্দির নির্মানের পথও সম্পূর্ণ শান্তি ও সহযোগিতার মাধ্যমে প্রশস্ত হয়েছে।
বন্ধুরা, কয়েক সপ্তাহ আগে, আমাদের সংসদ, আমাদের গণতন্ত্রের বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান, নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের ঐতিহাসিক কাজটিও করেছে। তবে কংগ্রেস ও তাঁদের সহযোগী দলগুলি, তাঁদের তৈরি রাজনৈতিক বাস্তুব্যবস্থা ভারতের সংসদের বিরুদ্ধেই উঠে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা আমাদের যেমন ঘৃণা করেন, সেই একই স্বর এখন দেশের সংসদের বিরুদ্ধে শোনা যাচ্ছে। এরা ভারতের সংসদের বিরুদ্ধেই আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে। এরা পাকিস্তান থেকে শরণার্থী হয়ে আসা দলিত-পীড়িতএবং শোষিতদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে।
বন্ধুরা, পাকিস্তানের জন্ম ধর্মের ভিত্তিতে হয়েছিল। ধর্মের ভিত্তিতে দেশবিভাগ হয়েছিল। আর দেশ বিভাগের সময় থেকেই পাকিস্তানে অন্যান্য ধর্মের লোকদের উপর অত্যাচার শুরু হয়েছিল। সময়ের সাথে সাথে পাকিস্তানে হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, পার্সী ও জৈনধর্মের মানুষদের উপর নিপীড়ন বেড়েছে। এই জাতীয় হাজার হাজার মানুষকে বাড়িঘর ছেড়ে শরণার্থী হয়ে ভারতে আসতে হয়েছিল।
পাকিস্তানে হিন্দুদের উপর অত্যাচার হয়েছে, শিখদের উপর অত্যাচার হয়েছে, জৈন ও খ্রিস্টানদের উপর অত্যাচার হয়েছে, কিন্তু কংগ্রেস ও তার সহযোগীরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কথা বলেনি। আজ প্রত্যেক দেশবাসীর মনে একটি প্রশ্ন আছে যে যারা পাকিস্তান থেকে এদেশে এসেছেন নিজেদের জীবন বাঁচাতে, তাঁদের কন্যাদের মর্যাদা বাঁচাতে এসেছেন, এখন তাঁদের বিরুদ্ধে মিছিল করা হচ্ছে, কিন্তু যে পাকিস্তানে তাঁদের উপর এই অত্যাচার হয়েছে, তার বিরুদ্ধে এদের মুখে তালা লাগানো কেন?
পাকিস্তান থেকে আসা শরণার্থীদের সহায়তা করা, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব ছিল। আমাদের দায়িত্ব পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু দলিত, নিপীড়িত এবং শোষিতদের তাঁদের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে না দিয়ে, তাদের পাশে দাঁড়ানো। আমাদের দায়িত্ব পাকিস্তান থেকে আসা শিখ নিপীড়িত এবং শোষিতদের তাঁদের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে না দিয়ে, তাদের সাহায্য করা। আমাদের দায়িত্ব পাকিস্তান থেকে আসা খ্রিস্টান, পার্সী ও জৈনধর্মের, দলিত, নিপীড়িত এবং শোষিতদের তাঁদের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে না দিয়ে, তাদের পাশে দাঁড়ানো।
বন্ধুরা, আজ যারা ভারতের পার্লামেন্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন, আমি তাদের বলতে চাই যে আজ প্রয়োজন ছিল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাকিস্তানের এই নিন্দনীয় কুকীর্তি তুলে ধরা। আপনাদের যদি আন্দোলন করতেই হয় তবে গত ৭০ বছরে সংখ্যালঘুদের উপর পাকিস্তানের শোষণের বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠান।
যদি আপনাকে স্লোগান তুলতে হয় তবে পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের উপর যেভাবে নির্যাতন চালানো হচ্ছে তার প্রতিবাদে স্লোগান দিন। যদি আপনাদের মিছিল বের করতে হয় তবে পাকিস্তান থেকে শরণার্থী হয়ে আসা হিন্দু-দলিত-নির্যাতিত-শোষিতদের সমর্থনে মিছিল করুন। যদি ধর্ণা দিতে হয় তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ধর্ণা দিন।
বন্ধুরা, আমাদের সরকার কয়েক দশক পুরানো সমস্যাগুলির মোকাবেলায় দিনরাত কাজ করে চলেছে। দেশের মানুষের জীবনকে সহজ করে তোলা আমাদের অগ্রাধিকার। দেশের প্রতিটি দরিদ্র পরিবারের মাথার উপর ছাদ সুনিশ্চিত করা, প্রতিটি বাড়িতে রান্নার গ্যাস সংযোগ, প্রতিটি বাড়িতে নলের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ, প্রত্যেক মানুষের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা, প্রত্যেক নাগরিকের বিমা সুরক্ষা, প্রতিটি গ্রামে ব্রডব্যান্ড সংযোগ, এমন অনেক লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।
২০১৪-তে যখন আমি আপনাদের স্বচ্ছ ভারত অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি, আপনারা সম্পূর্ণ সামর্থ্য দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন। আপনার মতো কোটি কোটি সহযোগীর সহযোগিতায় ভারতবাসী গান্ধীজির দেড়শতম জন্মবার্ষিকীতে উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্ম থেকে নিজেদের মুক্তি দিয়েছেন।
আজ আমি ৩টি সংকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশের সাধু সমাজের সক্রিয় সমর্থন চাই। প্রথমত, আমাদের আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রাচীন সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করতে মানুষকে সচেতন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রকৃতি এবং পরিবেশ রক্ষা করা। এবং তৃতীয়, জল সংরক্ষণ, জল সঞ্চয়ের জন্য জনসচেতনতায় সহযোগিতা।
বন্ধুরা, ভারত সর্বদা সাধু, ঋষি, গুরুদের সঠিক পথের আলোকবর্তিকা রূপে দেখেছে। নতুন ভারতেও সিদ্ধগঙ্গা মঠ, আধ্যাত্মিকতা এবং আস্থার সঙ্গে যুক্ত দেশের প্রত্যেক নেতৃত্বের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আপনাদের ও সকল সাধুগণের আশীর্বাদ আমাদের উপর বজায় থাকুক, আপনার আশীর্বাদ সঙ্গে নিয়ে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতিগুলি পালন করে যাবো, এই ইচ্ছা রেখে আমি আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি।
আপনাদের সকলকে অনেক ধন্যবাদ!
ভারত মাতার জয় হোক!
ধন্যবাদ।